লামিয়া
লামিয়া, দুই ভাইয়ের একমাএ আদরের বোন। বড় ভাই বিয়ের পর বউয়ের চাকরির সূত্রে বউয়ের সাথে আলাদা থাকে। মোজো ভাই আরমিতে ট্রেনিং নিচ্ছে। আর এদিকে সোহাগি কেবল ইন্টারে পরছে।
বড় ভাই ব্যবসায় প্রচন্ড লস খেয়েছে। আর এই ব্যবসা আগানো ভাইয়ের পক্ষে সম্ভব নয়। কোন টাকাই হাতে পুজি নেই!��
পরিবারের অবস্থা রাস্তায় নেমে আসার মতো। বাড়িতে বাবা-মার সাথে একমাএ সোহাগি। ভেতরের অবস্থা একমাএ ওই বুঝতে পারছে। বড় ভাইয়ের কিছু করার নেই, মেজো ভাইকে কিছু বলা সম্ভব না।
- নোমান, কি করি বলো তো? কিছু তো বুঝতে পারছি না!
- এক কাজ করছো না কেন, তোমার তো কিছু সেভিংস আছে বলেছিলে। ছোটখাটো কোন ব্যবসা শুরু করছো না কেন?
- ওহ্, তাই তো! আমি তো ব্যাপারটা ভুলেই গিয়েছিলাম। কিন্তু কি করবো নোমান, টাকাটা খরচার জন্য বাড়িতে দিয়ে দিই। অতটুকুতে কি বা করবো!
নোমান, সোহাগিকে অনেক ভাবেই বোজালো। শেষ অব্দি সোহাগি ব্যাপারটা বুঝতেও পারলো।
নোমান হলো সোহাগির ছোটবেলার খেলার সাথী। গত সাত বছর দরে তারা সম্পর্কে আছে।
সোহাগিদের অল্প কিছু খালি জায়গা পড়েছিল কাজ শুরু হল সেখান থেকে। ছোট্ট একটা বিজনেস "মুরগির ফার্ম"। যে পরিমান পুজি ছিল তাতে এর থেকে বেশি কিছু করা সম্ভব ছিল না। তাই এখান থেকেই শুরু হলো।
মুরগির ফার্ম, ব্যাপারটা নিয়ে সোহাগের তেমন কিছুই জানা নেই। তবে নোমানের কথায় সম্পূর্ণভাবে কাজ শুরু করলো সোহাগি। নোমানের সর্বোচ্চ সাহা্য্য ছিল সব সময় সোহাগীর পাশে তাই কোন রকম সমস্যা ছাড়াই সামনে এগোতে থাকলো সোহাগি।
বর্তমানে পুরো ব্যাপারটাই অনেক সুন্দর চলছে। সেই ছোট্ট ফার্ম থেকে শুরু করে এখন বিশাল বড় কয়েকটা ফার্মের মালিক সোহাগি নিজে একাই। এখন বাবার সাথে বড় ভাইও যুক্ত হয়েছে ব্যবসায়। গ্রামে নাম ডাক হয়েছে প্রচুর, মাসে লাখ টাকার উপরে আয়, আর কি প্রয়োজন!
নোমান আর সোহাগির সম্পর্ক ভালই চলছিল। তবে দিন কয়েক হয়েছে নোমান কেমন যেন মন মরা হয়ে থাকে। সোহাগি কোন কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। নোমানের বাড়ির লোকজনের সাথে কথা ও বলেছে সোহাগি। তবে তারাও কিছু বলতে নারাজ!
নোমানের হঠাৎ এমন পরিবর্তনে সোহাগি দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
এতকিছু দেখে নোমান শেষ অব্দি ঠিক করল যে সে সোহাগির সাথে কথা বলবে।
সোহাগি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে,
- নোমান!
- সোহাগি, একটু ধর্য ধর। আমাকে একটু গোছাতে সময় দাও!
নোমানের এমন কথা সোহাগি কে ভয় দিচ্ছিল। সে নোমানের হাত শক্ত করে চেপে ধরলো। তবে নোমানের পুরো শরীর যেন হীম হয়ে আছে।
- সোহাগি, আমাদের মধ্যে সম্পর্কের এখানেই ইতি। সামনে আর আমাদের কোন কিছুই বাকি নেই!
সোহাগি নিঃশব্দতায় কেঁদে ওঠে নিজের চোখ দিয়ে নোমানকে জিজ্ঞেস করল, কেন নোমান? কি হয়েছে আমি কি কিছু করেছি? এমন তো হবার কথা না!
- সোহাগি, একটু থাম আমাকে বলে নিতে দাও, না হলে আমি আর বলতে পারব না!
আই'ম এইচআইভি পজিটিভ সোহাগি!
- কি হয়েছে? কি ভাবছো জানালার পাশে দাড়িয়ে? মাজেমধ্যেই তোমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখি। কি ভাব বলো তো!
- কই না তো, তেমন কিছু না দুপুরে খেয়েছিলে আজকে?
- নাহ্, সময় পাই নি। কাজের জন্য বাইরে যেতে হয়েছিলো। আমার বেবিটা কিছু খেয়েছে?
সোহাগি প্রেগন্যান্ট! সেদিনের কথা বিশ্বাস করতে না পারলেও নোমানের জোরাজুরিতেই সোহাগি অনেক কিছু সামলে আজ এখানে। সে ��ময়ের পর সোহাগি এসে ঢাকাতে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়। তারপর একজনের সাথে পরিচয়, প্রেম আর বিয়ে! আজ সুখী জীবন পার করছে সোহাগি।
আর সে নোমান সে তো আছে। সোহাগির হৃদয় অন্তরালে।
- লামিয়া!
- হ্যাঁ, বল। কি হয়েছে?
- নোমান আর নেই!
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে সোহাগি। কিছু সময় পর খবর এলো সোহাগের ছেলে হয়েছে। সোহাগি সেই আত্মার টুকরোকে কোলে নিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বলে উঠল, "নোমান"!
- ৩ জুন, ২০২৩
- মোনালিসা মিতু।
0 notes