Don't wanna be here? Send us removal request.
Text
আগামীকাল.
১০ই জুন , ২০২৫
অরিত্র খুবই বিধি ব্যাস্ত হয়ে লিফট এ না উঠে সিড়ি থেকে উঠছে । কলিংবেল দিতে যেয়ে দেখলো দরজা ভিড়ানো । ঘরে ঢুকতেই বেলকুনির ময়নাটা ডেকে উঠছে ' প্রীতি অরিত্র আসছে .. প্রীতি অরিত্র আসছে ..' । ময়নাটার পাশে বেলকুনিতে রাস্তার দিকে মুখ করে প্রীতি দাঁড়িয়ে আছে । অরিত্রর দেওয়া চাপা সবুজ রংয়ের শাড়ি টা পড়া । রাস্তায় ছেলেরা বাজি ফুটাচ্ছে , হুল্লোড় করছে , আজ ছিলো হলি । অরিত্র বেসিনে হাত ধুচ্ছে এক নাগাড়ে বলছে , আরে সেই আজকেই স��� কাজ পড়তে হলো , লোকেশন রেকিটা ও যেতে পারলাম না । আগামীকাল করতে হবে । টাওয়াল নিয়ে হাত পরিষ্কার করতে করতে ল্যাপটপ টা চালু করে ব্যাগটা রেখে গুটি গুটি পায়ে বেলকুনির দিকে আগায় অরিত্র ।
পিছন থেকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে প্রীতি কে ।
আলতো ঝারা দিয়ে ছাড়িয়ে দেয় অরিত্র কে ।
- দূরে দাঁড়াও । কয়টা বাজে ?
- আরে সেই তো হইলো আজকের লোকেশন রেকিটা আগামীকাল করতে হবে ।
এই প্রীতি দিন ২৪ ঘন্টা কেন ??
দিন ২৮ ঘন্টা হইলে ভালো হইতো ।
- একটুও আহ্লাদ করবা । তোমার দিন ৩৬ ঘন্টায় ও পোষাইবো না ।
- " পথ বেঁধেছে বন্ধনহীন গ্রন্থী , আমরা দুজন চলতি হাওয়ার পন্থী " । বলে অরিত্র প্রীতি কে ধরে ঘরে নিয়ে আসে ।
- আজকে কয় তারিখ ?
- জানি তো বাবা আজ ১০ই জুন । বিগত দশ না থুক্কু পনের বছর আগে আমাদের এই দিনে দেখা হয়েছিলো ।তারপর থেকে প্রতিবছর আমরা এইদিনে বাহিরে ডিনারে যাই। এখন হয় নায় আজকে । এখন কি করবো আমি রাস্তার নিচে মাথা দিবো ..??
- এই অরিত্র একদম বাচ্চামি করবা না । একদম সবকিছু বুঝে না বোঝার অভিনয় করবা না ।
- কি করছি আমি কি করছি ?? তুমি আমার মতো সহজ , সরল , নিরিহ মানুষের সাথে রাগ কেনো করো ?? ঝগড়া কেন করো ??
বেলকুনির ময়নাটা ডেকে উঠে ' প্রীতি রাগ করে না ..
প্রীতি রাগ করে না ..' ।
ময়নাকে এই ডাক টা অরিত্র শিখাইছে । ময়না কিনে দিপুর বাসায় রেখে ডাক শিখিয়ে তারপর বাসায় এনে প্রীতি কে অভিভূত করেছে অরিত্র ।
ময়নার ডাকে রাগ পড়ে প্রীতির । ঘড়িতে রাত সাড়ে এগারোটা । বাহিরে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীন ।
- কি এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন ??
- আমার সুন্দরী পরী দেখি ।
- হইছে বলে একটা মুখ ভেংচি কাটে প্রীতি । বাহিরে ডিনারে যাওয়ার কথা ছিলো বলে রান্না করি নায় । এখন কি খাবা ??
- এইটা তো কোনো সমস্যাই না। তুরি মেরে সমাধান করে দিবো । তুমি চুপচাপ করে বসে থাকো । আমি আমার সুন্দরী পরী কে দেখতে দেখতে চট করে রান্না করে ফেলছি । " তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে হৃদয় কোটরে রাখবো " গানটার অন্তরা গেয়ে রান্না ঘরের দিকে রায় অরিত্র ।
আর এই পাগলের উপর কিভাবে রাগ করে থাকবে , বা কি করে এই পাগল কে ছাড়া থাকবে প্রীতি তার উত্তর খুঁজে না পেয়ে ভালোবাসার তৃপ্তির হতাশায় বসে থাকে প্রীতি ।
মালিবাগ বাস টার্মিনাল এ প্রীতির একটা ছবি নিয়ে অরিত্র এই বাস কাউন্টার থেকে ঐ বাস কাউন্টার , চায়ের দোকান , কাঁচা বাজারে সবাই কে প্রীতির ছবি দেখিয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে অরিত্র । খুবই উদ্বাস্তু ও প���গলপ্রায় লাগে অরিত্র কে ।
- ভাই এরে দেখছেন । ভাই আমার বউ । আমি সোহাগের টিকিট কাটছি , এই টিকিট । আমাদের বাস সোয়া দশটায় যাবো খুলনায় , আমরা মহানগর প্রজেক্ট নিবাসী । ভাই দেখছেন আমার বউরে । এই তো কাউন্টারে সামনেই ছিলো । ভাই দেখছেন ..
পাগলের মতো একনাগাড়ে বলে যায় অরিত্র । ছুটে যায় এই দোকান থেকে ঐ দোকান , গলা শুকাইয়ে যায় অরিত্রর , হাতে পানির বোতল থাকা সত্ত্বেও পানি খাওয়ার সিগন্যাল পায় না অরিত্র । তার সমগ্র মস্তিষ্ক জুড়ে শুধু প্রীতি । বাস চলে যায় , বাসের বক্সে অরিত্রর জিনিসপত্র । অরিত্রর গলাবুক শুকিয়ে উদ্বাস্তু নিঃস্ব হয়ে বসে পড়ে ।
হাঁপিয়ে উঠে অরিত্র । সকাল ৭ টা । পাশে ঘুমিয়ে আছে প্রীতি। অরিত্রর আগামীকালের সাথে আরেকটা ইনসিকিউর রোগ ও আছে তার সবসময়ই মনে হয়, তার এই টেনেটুনে মানিয়ে নেওয়ার চলায় ।হয়তো প্রীতি তাকে ছেড়ে চলে যাবে ।
প্রীতিকে হারানোর একটা ভয় কাজ করে সবসময়।
নিচে লোকেশন রেকিতে যাওয়ার গাড়ি আসে, অরিত্রর সহকারী রাতুল ফোন দেয় অরিত্র কে ।
অরিত্র নামছি বলে ফোন রেখে দিয়ে ওয়াশ রুমে যায়।
ডকুমেন্টারি বানানোর পাশাপাশি অরিত্র একটা প্রাইভেট কোম্পানি তে চাকরি করে । ব্যস্ত অফিস, মানুষের হুলুস্থুলুস । অরিত্রর ডেস্কে তার ইমিডিয়েট বস আছে ।
- আপনার আগামীকাল কি রাঙা শুক্রবার।
- সোহাগ সাহেব বসেন । ঠান্ডা হন । আগামীকাল কনফার্ম বিল ও ইস্টিমেট সহ সাবমিট করে দিবো।
- আপনে কি শুধরাবেন না অরিত্র সাহেব ..??
- ভাইজান একটু চিপায় আছি । জীবনের প্রথম সিনেমায় হাত দিছি । গতকাল গেছিলাম লোকেশন রেকি তে , নারিন্দা হয়ে আবার গাজিপুর ময়মনসিংহ ।
- বলেন তো ঘটনা পিওন রাসেল ও বলতেছিলো আমাদের অরিত্র সাহেব সিনেমা বানাইবো। আমরা দলে বলে তার সিনেমা দেখুম।
- চলেন সোহাগ সাহেব নিচে যাই রুহুলের দোকানে চা খেয়ে আসি আর বুদ্ধির গোড়ায় ধুঁয়া দেই ।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সোহাগ সাহেবের সাথে নিচে চা খেতে যায় অরিত্র ।
এই এক অপরিসীম ক্ষমতা রয়েছে অরিত্রর ।
সবকিছু তে আগামীকাল করেও কিভাবে যেনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিতে পারে অরিত্র ।
প্রথম সিনেমার শুটিং এ যায় অরিত্র । শুটিং নারিন্দায় । এক লটে ৫ দিন শুটিং। দ্বিতীয় দিনের শুটিং এ অসুস্থ হয়ে পড়ে অরিত্র । অরিত্র কে ধরে বাসায় নিয়ে আসে ওর সহকারী রাতুল । তীব্র মাথা যন্ত্রনা ও বমি । সমস্যা টা অরিত্রর অনেকদিনের । প্রীতি কয়েকবার বললেও , আগামীকাল যাবো , আগামীকাল যাবো বলে আর ডাক্তারের কাছে যাওয়া হয়নি অরিত্রর । মাথা যন্ত্রনা উঠলে ফার্মাসী থেকে টাফনিল খেয়ে আপত উপশম ��রে।
আজকে অবস্থা গুরুতর , যেমন যন্ত্রনা , তেমন বমি ।
চোখ টকটকে লাল । প্রীতি প্রথমে অরিত্রর এই অবহেলার জন্য বকা দিলেও পরমূহুর্তে যে গাড়িতে অরিত্রকে নিয়ে আসছে , ঐ গাড়িতেই রাতুল কে নিয়ে অরিত্রকে নিয়ে হসপিটালে যায়। হসপিটালের ইমার্জেন্সি ডাক্তার অরিত্র কে দেখে সিসিইউ তে ভর্তি লেখে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরন হয় অরিত্রর। সিসিইউর সামনে বসে থাকে প্রীতি।টানা ১৭ দিন সিসিইউ তে থাকার পর মারা যায় অরিত্র।সিসিইউর সামনে ঠাঁয় বসে পরে প্রীতি।অরিত্রর বন্ধ চোখের অন্ধকারের মতো পৃথিবী অন্ধকার হয়ে আসে প্রীতির ..
১০ই জুন ২০১০
ক্রিং ক্রিং সাইকেলের বেলের শব্দ । অন্ধকার পৃথিবীতে আলো ফোটে । ভোর ৭ টা । বন্ধ জানালা নক করতে থাকে দিপু । দিপুর সাইকেলের ক্যারিয়ারে ইন্টারমিডিয়েটের রসায়ন প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের সরোজ কান্তি সিংহ ও হরাধন নাগের বই বাঁধানো। অরিত্র কে ডাকে দিপু , এই অরিত্র ওঠ ব্যাচ পড়তে যাবি না , সাতটা বাজে । জানলা খুলে অরিত্র বলে বের হচ্ছি । বাহিরের ডিপটিউবয়েলে মুখ ধোয়ার সময় অরিত্র আবিষ্কার করে যে সে এতোক্ষন স্বপ্ন দেখছে।
সাইকেল টান দিয়ে বের হয় অরিত্র । দিপু , অরিত্র দুই বন্ধু সাইকেল নিয়ে রসায়নের ব্যাচ পড়তে যায় ।
কলেজ মোড় থেকে বায়ে মোড় নেওয়ার সময় অরিত্র দেখতে পায় সামনে রিক্সায় দুইটা মেয়ে আসছে , তার ভিতর একজন প্রীতি যাকে সে স্বপ্ন দেখেছে রাতে। অবাক হয়ে সাইকেল থেকে হড়মড়িয়ে পড়ে যেতে যায় অরিত্র । সাইকেল থেকে পড়তে যাওয়া অরিত্র কে দেখে প্রীতি । একটু মুচকি হাসি দেয় । প্রীতির রিক্সা অরিত্রর সাইকেল অতিক্রম করে চলে যায় । রিক্সা থেকে পিছনে ফিরে অরিত্র কে দেখে প্রীতি ।অরিত্রও দেখে হাসি দিয়ে সাইকেল টান দিয়ে চলে যায় ।
0 notes
Text
- সুকর্ণ বন্ধু একা লাগে .. প্রচুর একা লাগে
- বন্ধু একা লাগতাছে ..।তাহলে ১৪ নাম্বার দৃশ্য টা আরেকবার লিখবি ..?
- হুম রাত গভীর হোক। দুনিয়ায় কোন কিছু এক বারে হয় না । চিত্রনাট্য ও তৃতীয় ও চতুর্থ ড্রাফটে যেয়ে একটা ভাব আসে ।এর আগে যা হয় সবই পাইনসা।
- আজাদ ট্রিলজির দ্বিতীয় গল্পটার লাইন আপ টা দাড়াইছে।
- অর্ডার দিছি দাড়াইয়া যাবে । জীবনে কিছু পাইতে হলে তোমাকে অবশ্যাই কিছু দিয়ে আসতে হবে ।ঘাম , ক্লেদ , পাওয়ার ভিতর না পাওয়ার গ্লানী ..।তাই না হিমু ভাই ..
- হুম আজাদ ।একজন শিল্পীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয় তাহলো তাকে হতে হয় অবজারভার। প্রেমকাহিনী লিখতে হলে তোমাকে প্রেম করতে হবে বিষয়টা কিন্তু তেমন না । কিন্তু আমরা কতোটা দেখি
- হিমু ভাই এই অফিসের কাপ ঝাঁপ আর এই দালান কোঠা দেখতে দেখতে চোখ পুড়ে যাচ্ছে ।চলেন না মিঠা মইন যাই..।আজাদ চল ঘুরে আসি ..।
- হুম সুকর্ণ বের হওয়া উচিত এই ইট , কাঁচের শহর থেকে । কোনদিন আয়তুল কুরসী পড়ে চিক্কুর দিয়া বাসা থেকে বের হয়ে যাবো ..।তারপর থেকে আজাদ মাহমুদ নিঁখোজ ।
- আজাদ ভাই এইটা না আমারও মনে হয় মাঝে মাঝে । আসলে নিখোঁজ হওয়াই কি আমাদের এইম ইন লাইফ ..?
- আমরা সবাইতো নিখোঁজ ।আমারা যে বানোয়াট জীবন টা বয়ে বেরাচ্ছি এর ঠিকানা কি আমরা জানি।
- আজাদ আগুনটা দে। আচ্ছা তোর সব কিছু কেন বানোয়াট মনে হয় ?? তোর কাছে সময় বানোয়াট , প্রেম বানোয়াট , সম্পর্ক বানোয়াট ..।কেন রে ভাই ??
- আজাদ এইটা কি হতাশা থেকে আসে নাকি তীব্র একাকীত্বে র ফলাফল ..?
- হিমু ভাই আপনেও মজা নিতাছেন। এই পৃথিবীতে মুক্তি নাই আবার মুক্তিছাড়া উপায়ও নাই ..।তাই আমরা সবাই উপায়হীন ভাবে বেঁচে আছি । যেমন আমি কখনও বুঝে পাইনা একজন দার্শনিক বা শিল্পীর কেন ক্ষুদার বা বেঁচে থাকা নিয়ে ক্লান্তি থাকবে ??
- উপায়হীন ভাবে বেঁচে থাকা কে কি জীবন বলা যায় ? আমরা কি জীবিত নাকি মৃত?
- মৃত ....
0 notes
Text
আমরা সবসময় দুষ্প্রাপ্য জিনিসই খুঁজে ফিরি যেমন- মুক্তি ।
একটা জীবনভ্রমন শেষ হয় যার লাগিয়া...
1 note
·
View note