Text
প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৯০৮)

"শুনবে? তবে সখী, শোনো। চঞ্চলচকিতচিত্তচকোরচৌরচঞ্চুচুম্বিতচারু- চন্দ্রিকরুচিরুচির চিরচন্দ্রমা।"
একটি জামাতা, তাহার পত্নী, তিন শ্যালিকা - একজন বিধবা ও দুইজন বিবাহযোগ্যা, এবং একটি চিরকুমার সভা। মোটামুটি এই প্রেক্ষাপটে চমৎকার হাস্যরস পূর্ণ একটি উপন্যাস। এতটুকু বললে হয়তো বুঝতে পারা যায় ঘটনা কোনদিকে গড়াতে পারে।
বাংলা সাহিত্যের প্রেক্ষাপটে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিচরণ সমস্ত ক্ষেত্রে। নক্ষত্র মন্ডলের মতো বঙ্গীয় সাহিত্যের আকাশের এক বৃহদাংশ একান্তই তাঁর। ১৯০৮ সালে তাঁর এই হাস্যরসাত্মক উপন্যাস প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে এটি "চিরকুমার সভা" নামে একটি 'প্রহসন' বা হাসির নাটকে রূপান্তরিতও হয়।
নব্য সমাজের অক্ষয় তার শ্যালিকাদের লেখাপড়ায় নিবৃত্ত করে উন্নয়নে মনোযোগী, কিন্তু শাশুড়ি জগত্তারিণী বিবাহ দিয়ে কন্যার প্রতি কর্তব্য সমাপনে উদ্যোগী। সেই উদ্যোগটি সঠিক পথে প্রবাহের উদ্দেশ্যে বুদ্ধিদীপ্ত অক্ষয়ের সাথে যুক্ত হয় বিধবা শ্যালিকা শৈল এবং রসিক খুড়ো। শৈল যেনো অক্ষয়ের না পাওয়া ভাই, এবং রসিক দাদা তার নামকরণে সম্পূর্ণ রূপে সার্থক। নানা রূপে, নানা কৌশলে দুটি কৌমার্য ব্রত পালনরত উপযুক্ত পাত্রকে সঠিক পথে নিয়ে আসা তাঁদের পরিকল্পনার অংশ। বলা বাহুল্য, প্রহসন অবশ্যম্ভাবী।
রবী ঠাকুরের এই রচনা এক প্রকার চিরায়ত বা টাইমলেস বলা যায়। কারণ, এর প্রেক্ষাপটে হালের মিডিয়া প্রোডাকশনও চমৎকার হবার সম্ভাবনা আছে - সেটা হতে পারে চলচিত্র, মঞ্চায়ন থেকে শুরু করে ওটিটি পর্যন্ত - অবশ্যই যদি সঠিক অভিনয়শিল্পীদের বেছে নেয়া হয়। আছে চমৎকার সংলাপ, আছে কাহিনীর মোচড়, আছে রসিকের শ্লোক আওড়ানো, আছে গান - রাগ/তাল সহ, এবং আছে ভরপুর বিনোদনের উপাদান।
উপন্যাসের সমস্ত চরিত্রের হয়তো সমস্ত চারিত্রিক চিত্র ফুটে ওঠেনা - কিন্তু চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্টগুলোর চিত্রায়ণ ঠিকই হয়েছে। কার মতি গতি, চিন্তাধারা কী রকম - তা পরিষ্কার বুঝতে পারা যায়। বড়জোর দু'শ পাতার উপন্যাসে এতগুলো ঘটনা সহ চরিত্রেরও সঠিক চিত্র দিতে পারাটাও একটা উদাহরণ হয়ে থাকে। চমৎকার শব্দ চয়ন, পুরো উপন্যাস মূলতঃ সংলাপ আকারে হওয়া সত্ত্বেও ঘটনাপ্রবাহের পরিষ্কার উপস্থিতি, ভরপুর উপমা ও কাব্যরস, এবং তাতেও কম হয়ে গেলে আছে রসিকের শ্লোক ও কাব্যোক্তি - প্রাঞ্জল অনুবাদসহ (এই অনুবাদটুকু না থাকলে এই আধুনিক পাঠকের কাছে রসিকের রসিকতা সম্পূর্ণ মাঠে মারা যেতো)।
আমি লেখক নই, হবার চেষ্টাও করবোনা কারণ উপরোক্ত চার প্যারাগ্রাফ লিখতে লিখতে আমি ঘর্মাক্ত হয়ে গেছি। রিকমেন্ডেশন রেখে গেলাম। বিশেষত শব্দখেলা (wordplay এর সুন্দর বাংলা আমি জানিনা) অথবা শেকস্পীয়র এট. আল. রচিত কমেডি যাদের পছন্দ, তারা আমোদ পেতে পারেন।
শেষ করবার আগে সবার ওপরের উক্তির কন্টেক্সট: অক্ষয় তার পত্নীকে চিঠি লেখার সময় শ্যালিকাদ্বয়ের টিজিং পর্ব চলছে, এবং এক পর্যায়ে একজন জিজ্ঞেস করেছিলো যে তাদের দিদিকে কী বলে সম্বোধন করা হয়েছে। তাতেই সেই জবাব।
ব্যক্তিগত তারকা মূল্যায়ন: ৫/৫ সূত্র: Tagoreweb অথবা উইকি সংকলন
0 notes
Text
আক্কেল সেলামী - শ্রী ললিতমোহন চট্টোপাধ্যায় (১৯০০)

১৯০০ সালে প্রকাশিত একটি ক্ষুদ্র নাটিকা, Chatterjee's Dramatic Series এর দ্বিতীয় বই। অবশ্য গোটা পঞ্চাশেক পাতার এই রম্য প্রহসনকে বই বলতেও কেমন যেন লাগে। গল্প মোটামুটি মামুলি, নাট্যাঙ্কসমূহের চিত্রায়ণ সরল। গল্পের চরিত্রদের কথা বলায় কিছু মূদ্রাদোষ আছে - সেগুলোর ব্যবহার কিঞ্চিৎ বাড়াবাড়ি রকমের বিধায় বিরক্তি ঘটায়। না পড়লেও হয়তো দোষের কিছু নেই।
তারকা মূল্যায়ন - ২/৫
সূত্র: উইকি সংকলনের পাতা
0 notes