Tumgik
#গৌতম দেব
24x7newsbengal · 6 months
Link
0 notes
khabarsamay · 1 year
Text
0 notes
bartapost · 2 years
Text
কাপ্তাইয়ে ট্রাফিক পুলিশের আয়োজনে পরিবহন চালক ও সহকারীদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা।
কাপ্তাইয়ে ট্রাফিক পুলিশের আয়োজনে পরিবহন চালক ও সহকারীদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা।
  অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই প্রতিনিধি:- কাপ্তাইয়ে ট্রাফিক পুলিশ বিভাগের আয়োজনে পরিবহন চালক ও সহকারীদের সচেতনতামুলক এক প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে কাপ্তাইয়ের রেশম বাগান চেকপোস্টে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কাপ্তাই ট্রাফিক পুলিশ ইনচার্জ (টিআই) জয় দেব গোপাল নাথ। উক্ত কর্মশালায় আরো উপস্থিত ছিলেন কাপ্তাই ট্রাফিক সার্জন মোঃ নোমান, এটিএসআই গৌতম…
Tumblr media
View On WordPress
0 notes
khabarsamay · 1 year
Text
0 notes
mytista · 4 years
Video
undefined
tumblr
দ্বিতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধ হবে বাংলায়, মানুষই শেষ কথা বলবে - গৌতম দেব | এক ঝলক News বাংলা - https://www.youtube.com/watch?v=H933gbN6LUQ
0 notes
bdtodays · 4 years
Text
New Post on BDTodays.com
ঠাকুরগাঁওয়ে ট্রলির ধাক্কায় কৃষক নিহত
Tumblr media
গৌতম চন্দ্র বর্মন, ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ে ট্রলির ধাক্কায় ধন দেব রায় (৩৮) নামে এক কৃষক নিহত হয়েছে। রোববার (২৮ জুন) দুপুরে সদর উপজেলার ১০ নং জামালপুর ইউনিয়নের ভোকদগাজী নাওডোবা এলাকায় এ দূর্ঘটনা ঘটে। নিহত কৃষক ধন দেব রায় ঠাকুরগাঁও সদর উপজলার বিশ্বাসপুর গ্রামের কটকু রায়ের ছেলে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানা...
বিস্তারিত এখানেঃ https://bdtodays.net/%e0%a6%a0%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a6%97%e0%a6%be%e0%a6%81%e0%a6%93%e0%a7%9f%e0%a7%87-%e0%a6%9f%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%b2%e0%a6%bf%e0%a6%b0-%e0%a6%a7%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%95/
0 notes
mega-bhalochele · 5 years
Text
ভাষা দিবসঃ বর্তমান প্রেক্ষাপটে দাবি ও সংকল্প
Tumblr media Tumblr media
চিত্র সৌজন্য: ইউ টিউব
গৌতম গুহ, আগামী কলরব: ভাষা মানে শুধু কিছু শব্দের যোগফল নয়। ভাষা একটা স্বতন্ত্র এবং নির্দিষ্ট সংস্কৃতির প্রকাশ। সংস্কৃতি পাল্টে গেলে ভাষাও রূপ পাল্টায়, ভাষার পরিচয় পাল্টায়। ১৪০০ বছরের কিছু আগে আরব দেশটা ছিল বহুত্ববাদী। হিন্দু সংস্কৃতির অনুরূপ ছিল সেই সংস্কৃতি। কাবা-র মন্দিরে ছিল প্রায় ৩৬০ জন দেব-দেবীর মূর্তি। ছিলেন দেবী লাত-মানত-উজ্জা, সসম্ভ্রমে পূজা পেতেন হুবাল দেব। তখন…
View On WordPress
0 notes
sentoornetwork · 4 years
Text
তৃণমূলে ব্যাপক রদবদল
New Post has been published on https://sentoornetwork.com/%e0%a6%a4%e0%a7%83%e0%a6%a3%e0%a6%ae%e0%a7%82%e0%a6%b2%e0%a7%87-%e0%a6%ac%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%aa%e0%a6%95-%e0%a6%b0%e0%a6%a6%e0%a6%ac%e0%a6%a6%e0%a6%b2/
তৃণমূলে ব্যাপক রদবদল
নিজস্ব সংবাদদাতা: ক’দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল দলের সংগঠনে ব্যাপক রদবদল করতে চলেছে তৃণমূল। আজই দেখা গেল সেই পরিবর্তন। লক্ষ্য সেই ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচন। আর নির্বাচনকে পাখির চোখ বানিয়ে দলের অভ্যন্তরে বেশ বড়সড় বিপ্লব ঘটালেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একুশের নির্বাচন মাথায় রেখে গঠিত হল আটজনের একটি কোর কমিটি। সেই কমিটিতে আছেন শুভেন্দু অধিকারী, ফিরহাদ হাকিম, গৌতম দেব, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সি, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শান্তা ছেত্রী। অরূপ রায়কে সরিয়ে হাওড়া জেলা শহর তৃণমূলের সভাপতি করা হয়েছে লক্ষ্মীরতন শুক্লাকে। এটি একটি বড় রকমের পরিবর্তন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কিছুদিন আগে দুর্নীতি নিয়ে মুখ খুলেছিলেন রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্থান হয়েছে এবার দলের রাজ্য কমিটিতে।
অন্যদিকে কোচবিহারে মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের বদলে সভাপতি করা হয়েছে তরুণ পার্থপ্রতিম রায়কে। দক্ষিণ দিনাজপুরে অর্পিতা ঘোষের জায়গায় সভাপতি হলেন গৌতম দাস। পশ্চিম বর্ধমানে জিতেন তেওয়ারি এবং পূর্ব বর্ধমানে জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ। এছাড়া নদিয়ায় জেলা সভাপতি করা হয়েছে সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে।
ছত্রধর মাহাতোকে নিয়ে আসা হয়েছে তৃণমূলের রাজ্য কমিটিতে। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একুশের নির্বাচনের জন্য এখন থেকেই তৈরি হতে চাইছেন।
দলের সংগঠনকে আরও শক্ত জমির ওপর খাড়া করতে চাইছেন তা বোঝা গেল আজকে দলের রদবদলে। দলে নবীন-প্রবীণের সংমিশ্রণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিয়েছেন দল নিয়ে যথেষ্ট সচেতন।
0 notes
24x7newsbengal · 6 months
Link
0 notes
khabarsamay · 2 years
Link
0 notes
few-favorite-things · 4 years
Text
coronavirus: সুরক্ষার শর্ত মেনে সোমবার থেকে খুলছে ৫ সরকারি ট্যুরিস্ট লজ, বুকিং চালু - govt tourist lodges to reopen from 8 june in west bengal
coronavirus: সুরক্ষার শর্ত মেনে সোমবার থেকে খুলছে ৫ সরকারি ট্যুরিস্ট লজ, বুকিং চালু – govt tourist lodges to reopen from 8 june in west bengal
এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক:রাজ্যের বেশ কয়েকটি পর্যটনস্থলে প্রায় আড়াই মাস পর ৮ জুন থেকে খুলতে চলেছে সরকারি লজ। পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব জানিয়েছেন, আপাতত পাঁচটি–টিলাবাড়ি, রাঙাবিতান, মাইথন, ডায়মন্ড হারবার ও বিষ্ণুপুরে সরকারি ট্যুরিস্ট লজে অনলাইন বুকিং চালু হবে। করোনার বিপদ এড়াতে পর্যটক এবং লজের কর্মীদের স্বাস্থ্য-বিধি মেনে চলতে হবে। নিজের রুমের বাইরে অতিথিদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। কর্মীদেরও সর্বক্ষণ…
View On WordPress
0 notes
alauddinvuian · 4 years
Text
মহাভারত মহাকাব্যের সহজপাঠ- চরিত্রাভিধান
মহাভারত মহাকাব্যের চরিত্র চিত্রণ মহাভারত ও রামায়ণ মহাকাব্যের মতো হিন্দু পুরাণগুলোতে দুটি শক্তিশালী রাজবংশের পরিচয় পাওয়া যায়- সূর্য বংশ ও চন্দ্র বংশ। সূর্য বংশকে ঘিরে রামায়ণ আর চন্দ্র বংশকে ঘিরে মহাভারত মহাকাব্যের চরিত্রাবিধান তৈরী হয়েছে। তাই রামায়ণ ও মহাভারত মহাকাব্যের চরিত্রগুলো বোঝার জন্য সূর্যবংশ ও চন্দ্রবংশ সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন। তবে সূর্য ও চন্দ্র বংশ সম্পর্কে জানার আগে হিন্দু ধর্মের প্রাচীন দেব-দেবী ও সৃষ্ট অন্যান্য জীব সম্পর্কে জানতে হবে। মানচিত্রে মহাভারত মহাকাব্যের স্থানসমূহ ত্রিমূর্তি হিন্দুধর্মের তিন প্রধান দেবতা-ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব। ব্রহ্মা সৃষ্টি, বিষ্ণু লালন ও শিব প্রলয়ের দেবতা। শিব সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়কর্তা- পরমেশ্বর (বা মহেশ্বর) হিসেবেও স্বীকৃত। এই তিন দেবতাকে- ব্রহ্মা (পৃথিবী)  সৃষ্টি, বিষ্ণু (জল) লালন ও শিব (আগুন) এক সঙ্গে ত্রিমূর্তি বলে। ব্রহ্মার মানসপুত্র ব্রহ্মার মন থেকে যাদের জন্ম হয়েছে তাদেরকে ব্রহ্মার মানসপুত্র বলে। মানসপুত্ররা প্রজাপতি (বা ঋষি, মহর্ষি, মহামুনি ) নামে পরিচিত। ব্রহ্মার মানসপুত্রদের মধ্যে  মরীচি, অত্রি, পুলস্ত্য, পুলহ, ক্রতু, অঙ্গিরা, বশিষ্ঠ, দক্ষ, ভৃগু, কশ্যপ, গৌতম, অগস্ত্য, জমদগ্নি, ভরদ্বাজ, নারদ, চিত্রগুপ্ত ও বিশ্বামিত্র উল্লেখ্যযোগ্য। এসব প্রজাপতিরা ব্রহ্মাকে পৃথিবী সৃষ্টির কাজে সহায়তা করেছিলো। স্বয়ম্ভূ মনু ও শতরূপা ব্রহ্মা দেহ হতে জন্ম নেয় দুই মানুষ। মানুষ দুই জন হলো প্রথম পুরুষ স্বয়ম্ভূ মনু ও নারী শতরূপা। স্বয়ম্ভূ মনু ও শতরূপার দুই পুত্র- প্রিয়ব্রতা ও উত্তনাপদ এবং দুই কন্যা- প্রসূতি ও আকূতি। স্বয়ম্ভূ মনু হলো প্রথম মনু। হিন্দু ধর্ম মতে, বর্তমানে বৈবস্বত মনুর (সপ্তম মনু) সময়কাল চলছে। বিষ্ণুপুরাণ ও পদ্মপুরাণ মতে, স্বয়ম্ভূ মনুর কন্যা প্রসূতি ও মানসপুত্র দক্ষের ২৪ জন কন্যা ছিল। এদের মধ্যে ১৩ জনকে (শ্রদ্ধা, ধৃতি, ভক্তি, তুষ্টি, পুষ্টি, মেধা, ক্রিয়া, বুদ্ধি, লজ্জা, বপু, সিদ্ধি, কীর্তি, শান্তি) দক্ষ ধর্মদেবের সাথে বিয়ে দেয়। বাকী ১১ জনের মধ্যে খ্যাতির সাথে ভৃগু, শিবের সাথে সতী, সম্ভুতির সাথে মরীচি, স্মৃতির সাথে অঙ্গিরা, প্রীতির সাথে পুলস্ত্য, ক্ষমার সাথে পুলহ, সন্নতির সাথে ক্রাতু, অনুসূয়ার সাথে অত্রি, উরজ্জার সাথে বশিষ্ঠ, স্বহার সাথে অগ্নি এবং স্বধার সাধে পিতৃর (পূর্ব পুরুষের আত্মা) বিয়ে হয়। ৩৩ কোটি/প্রকার দেবতা মৎস্যপুরাণ মতে, মানসপুত্র দক্ষ ও স্ত্রী পঞ্চযানির ৬২ জন কন্যা ছিলো। এদের ১৩ জনকে কন্যাকে (অদিতি, দিতি, দনু প্রভৃতি) কশ্যপ বিয়ে করেছিল। অদিতি ও কশ্যপের ৩৩ পুত্র হিন্দু ধর্মের ৩৩ প্রকার/কোটি দেবতা। এগুলো হলো (ক) দ্বাদশ আদিত্য, (খ) একাদশ রুদ্র, (গ) অষ্টবসু ও (ঘ) অশ্বিনীকুমারদ্বয়। দ্বাদশ আদিত্য হলো- বিবস্বান, অর্যমা, পূষা, ত্বষ্টা, সবিতা, ভগ, ধাতা, বরুণ, মিত্র, অংশুমান, ইন্দ্র ও বিষ্ণু। একাদশ রুদ্র হলো দেবতা শিবের বিভিন্ন রূপ- মন্যু, মনু, মহিনস, মহান, শিব, ঋতুধ্বজ, উগ্ররেতা, ভব, কাল, বামদেব ও ধুতব্রত। বৃহদারন্যক উপনিষদে একাদশ রুদ্র হলো প্রাণ (নিঃশ্বাস), অপান (প্রশ্বাস), ব্যন, সমান, উদাম, নাগ, কুর্ম্ম, কৃকল, দেবদত্ত, ধনঞ্জয় ও আত্মা। অষ্টবসু হলো- ধরা/পৃথিবী, অনল/অগ্নি, অনিল/বায়ু, আদিত্য/প্রত্যুষ (সূর্য), চন্দ্র/সোম, ধ্রুব/নক্ষত্র,  বরুণ/অপ (জল), প্রভাষ/আকাশ (মহাভারতের ভীষ্ম চরিত্র)। অশ্বিনীকুমারদ্বয় হলো নাসত্য ও দস্র। এই ৩৩ দেবতার প্রধান ইন্দ্রকে দেবরাজ ইন্দ্র বলে। অসুর- দৈত্য, দানব, রাক্ষস হিন্দু পুরাণে দৈত্য, দানব ও রাক্ষসেরা অসুর (যারা সুর বা দেবতা নয়) নামে পরিচিত। দিতি ও কস্যপের সন্তানরা দৈত্য ও দনু ও কস্যপের সন্তানরা দানব নামে পরিচিত। রাক্ষসরা (বা রাক্ষসীরা) জন্মেছিলো ঘুমন্ত ব্রহ্মার নিঃশ্বাস হতে। হিন্দু পুরাণের উল্লেখযোগ্য কিছু অসুরেরা হলো হিরণ্যকশিপু, প্রহ্লাদ, হিরণ্যাক্ষ, হোলিকা, বাণাসুর, বালী, রাবণ, লবণাসুর, বকাসুর, হিড়িম্বা, ঘটোৎকোচ, কৈকেশী প্রভৃতি। সূর্যবংশ ও চন্দ্রবংশ অদিতির গর্ভের দ্বাদশ আদিত্যের এক জনের নাম বিবস্বান। দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার কন্যা সরনুর গর্ভে বিবস্বানের পুত্রের নাম বৈবস্বত মনু। বৈবস্বত মুনির পুত্রের নাম ইক্ষ্বাকু (ইক্ষবাকু)। তিনি ইক্ষবাকু রাজবংশ তথা সূর্যবংশের প্রথম রাজা। অন্যদিকে, ঋষি অত্রি ও অনসূয়ার পুত্র দেবতা চন্দ্র। চন্দ্রের নামে সপ্তাহের সোমবারের নামকরণ করা হয়েছে। চন্দ্র জন্মের পরই ত্রিচক্র রথে চড়ে পৃথিবী পরিক্রমা ও আলোকদান করতে থাকে। সে দক্ষের (পঞ্চযানির গর্ভের) সাতাশজন কন্যাকে বিবাহ করে। তাদের মধ্যে চন্দ্র রোহিনীকে সর্বাপেক্ষা বেশী ভালবাসতো। ফলে অন্যান্য স্ত্রীগণ চন্দ্রের বিরুদ্ধে দক্ষের কাছে অভিযোগ করে। দক্ষ জামাতাকে বুঝাতে ব্যর্থ হয়ে অভিশাপ দেয় যে, চন্দ্র পুত্রকন্যাহীন হবে এবং যক্ষ্মারোগগ্রস্ত হবে। কন্যারা ভীত হয়ে তার অভিশাপ প্রত্যাহারের জন্য প্রার্থনা করলে দক্ষপ্রজাপতি শাপ দেন যে যক্ষ্মারোগে চন্দ্র মাসের মধ্যে এক পক্ষে ক্ষয়প্রাপ্ত হবেন ও  অন্য পক্ষে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হবেন। এ দুই পক্ষই কৃষ্ণপক্ষ ও শুক্লপক্ষ নামে প্রসিদ্ধ। সপ্তাহের আরেক দিনের নাম বৃহস্পতি। দেবতা বৃহস্পতি বা গ্রহ বৃহস্পতি ছিল চন্দ্র তথা সব দেবতাদের গুরু। চন্দ্র গুরুপত্নী তথা বৃহস্পতির স্ত্রী তারাকে ধর্ষণ করে। এর ফলে তারা দেবতা বুধের (বা বুধ গ্রহের) জন্ম দেয়। এই বুধের নামের একটি দিনের নামকরণ করা হয়েছে। চন্দ্রের এই সন্তান বুধকে নিয়েই চন্দ্র বংশের যাত্রা শুরু। বুধ বিয়ে করেছিল ইক্ষবাকুর বোন দেবী ইলাকে। ইলা ছিল উভয়লিঙ্গ, অর্থাৎ তার পুরুষ ও মহিলা উভয় রূপ ছিলো। বুধ ও ইলার পুত্র পুরুরভা। এই পুরুরবা চন্দ্র বংশের প্রথম রাজা। সে পাইথানের (বর্তমান মহারাষ্ট্রের আওরঙ্গবাদ জেলা অন্তর্গত গোদাভরী নদীর দক্ষিণ তীরের কোন অঞ্চল) রাজা ছিলো। চন্দ্রবংশ- যদু ও পুরু বংশ পুরুরবা অপ্সরা উর্বশীকে বিয়ে করেছিলো। পুরাণ মতে, অপ্সরা (বা জলপরী)হলো  মেঘ এবং জল থেকে উদ্ভুদ্ধ নারী আত্মা। ধারণা করা হয়, অপ্সরাদের সংখ্যা মোটামুটি ৬০ কোটি। উর্বশী, মেনকা, রম্ভা, শর্মিষ্ঠা, তিলোত্তমা- এরা সবাই খ্যাতনামা অপ্সরা। হিন্দু পুরাণের মতো গ্রিক পুরাণেও অসংখ্য অপ্সরা রয়েছে।  একদিন ইন্দ্রসভায় রাজা পুরূরবার সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হলে উর্বশী’র নৃত্যে তাল ভঙ্গ হয়। এতে ইন্দ্র উর্বশীর প্রতি ক্রোধান্বিত হয়ে মর্ত্যলোকে জন্ম গ্রহণের অভিশাপ দেয়। উর্বশী মর্ত্যলোকে এসে পুরূরবার স্ত্রী হয়। উর্বশী ও পুরুরব��র সাত পুত্রের একজন পুত্র আয়ুস বা আয়ু। আয়ুস ও ইদুমাতির/প্রভার পুত্র নহুস। মুনি অগস্ত্যের মাথায় পা স্পর্শ করার ফলে মুনির অভিশাপে নহুষ বিশাখযুপ বনের অজগর সাপ হয়ে যায়। নহুষের ক্ষমা প্রার্থনায় মুনি বলেন যে, যুধিষ্ঠির (মহাভারতের পঞ্চপাণ্ডবের একজন) তাকে স্পর্শ করলে সে শাপমুক্ত হবে।  দেবযানী-শর্মিষ্ঠা-জ্ঞাতি নহুস ও দেবী অশোকসুন্দরীর (বা দেবতা শিব ও পার্বতীর কন্যা, দেবতা কার্তিক ও গনেশের বোন) ছয় পুত্রের একজন সম্রাট জ্ঞাতি (বা যযাতি)। তাকে সমগ্র বিশ্বের রাজা বলে মনে করা হয়। জ্ঞাতির দুই স্ত্রী- দেবযানী ও শর্মিষ্ঠা। দেবযানী দেবতা ও দৈত্যগুরু শুক্রের (শুক্রাচার্য্য, যার নামে শুক্র গ্রহ ও সপ্তাহের শুক্রবারের নামকরণ করা হয়েছে) কন্যা। শর্মিষ্ঠা দেবযানীর বান্ধবী ও দৈত্যরাজ বিষপর্বার কন্যা। দেবযানী ও জ্ঞাতির দুই পুত্র- যদু ও তুর্বসু। শর্মিষ্ঠার গর্ভে জ্ঞাতির দ্রুহ্য, অনু ও পুরু নামে তিন পুত্রের জন্ম হয়। এই যদু ও পুরু হতে মহাভারত কাহিনীর দুই গুরুত্বপূর্ণ বংশ- যাদব ও পুরু বংশের উৎপত্তি। অন্যদিকে, তুর্বসু হতে যবন, দ্রুহ্য হতে ত্বিপ্র ও অনু হতে ম্লেচ্ছ বংশ উৎপত্তি হয়। যাদব বংশে জন্ম নেয় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ; পুরু বংশ থেকে জন্ম নেয় দুই রাজবংশ- কৌরব ও পাণ্ডব। এই দুই রাজবংশের অন্তর্দ্বন্দ্ব মহাভারত মহাকাব্যের প্রধান উপজীব্য।   যদু বংশ যদু হতে শ্রীকৃষ্ণের বংশ পরম্পরায়- যদু, ক্রসতু, ধ্বজনিবান, স্বতি, রুশাঙ্কু, চিত্রারথ, শশীবিন্দু, প্রিথুশ্রবা, প্রিথুতম, উসানা, শিতাপু, রুখমোকবচ, পরাব্রিত, জয়মাঘ, বিদর্ভ, ক্রথ, কুন্তি, ধৃষ্টি, নিদৃতি, দশাই, বিওমা, জিমুত, বিকৃতি, ভীমরত, নবরথ, দশরথ, শকুনি, করম্ভি, দেবরাত, দেবক্ষেত্র, মধু, কুমারবংশ, অনু, পুরুমিত্রা, অংশু, সাতবাত ও অন্ধক।   অন্ধকের পুত্রদের মধ্যে দুই জন হলো কুকুর ও ভজমান। কুকুরের বংশে দেবকী ও ভজমানের বংশে বাসুদেবের জন্ম হয়। কুকুর থেকে দেবকী পর্যন্ত বংশধারা বর্ণিত হলো- কুকুর, ধৃষ্ট, কাপতরোমা, বিলোমা, অনু, অনকদুন্দুভি, অভিজিৎ, পুনর্বাসু ও আহুক। আহুকের দুই পুত্র- দেবক ও উগ্রসেন। দেবকের কন্যা দেবকী আর উগ্রসেনের পুত্র কংস। ভজমান থেকে বাসুদেব পর্যন্ত বংশধারা হলো-ভজমান, বিদুরথ, শূর, শামিন, প্রতিক্ষেত্র, স্বয়ম্ভুজ, হৃদিক, দেবগর্ভা ও শুরসেন। শুরসেন ও মারিশার পুত্র বাসুদেব। তাদের অন্যতম দুই কন্যা- পৃথ্বা বা কুন্তি ও শ্রুতশ্রবা। কুন্তীর সাথে পাণ্ডু (পঞ্চপাণ্ডবদের পিতা) আর শ্রুতশ্রবার সাথে চেদীরাজ দমঘোষের বিয়ে হয়। শ্রুতশ্রবার ও চেদীরাজ দমঘোষের পুত্র শিশুপাল। বাসুদেব ও দেবকীর সন্তান শ্রীকৃষ্ণ। কংস সম্পর্কে কৃষ্ণের মামা। মামা হওয়া সত্ত্বেও কংস কৃষ্ণকে হত্যার জন্য ষড়যন্ত্র করেছিলো। এ জন্য বাংলা বাগধারায় ‘কংস মামা’ বলতে ‘নির্মম আত্মীয়’ বোঝায়। উগ্রসেনের স্ত্রী পদ্মাবতী আর রাক্ষস দ্রুমিলের অবৈধ সহবাসের ফলে জন্ম নেয় এই কংস। কংস মগধের রাজা জরাসন্ধের দুই কন্যা অস্তি ও প্রাপ্তিকে বিবাহ করে। জরাসন্ধ ছিল মগধরাজ বৃহদ্রথের পুত্র। বৃহদ্রথ কাশীর রাজার যমজ দুই কন্যাকে বিয়ে করেছিল। সন্তানের জন্য একটি মন্ত্রপড়া আম সে দুই স্ত্রীকে ভাগ করে দেয়। ফলে দুই স্ত্রী অর্ধেক বাচ্চার জন্ম দিলো। জরা নামক এক রাক্ষসী এই দুই অংশকে জুড়ে দিয়ে ছিলো বলে তার নাম জরাসন্ধ। এই জরাসন্ধের সহায়তায় বৃদ্ধ পিতা রাজা উগ্রসেনকে বন্দি করে কংস মথুরার রাজা হয়েছিলো। পাণ্ডবদের মাতা কুন্তি কৃষ্ণের ফুফু, আর তাই কর্ণসহ পঞ্চপাণ্ডবরা তার ফুফাত ভাই ছিলো। এদের মতো শিশুপালও তার ফুফাত ভাই। শিশুপালের জন্মের সময় অস্বাভাবিকভাবে তার তিনটি চক্ষু ও চার হাত ছিলো৷ কৃষ্ণের স্পর্শে শিশুপালের তৃতীয় নয়ন ও অতিরিক্ত দুটি হাত অবলুপ্ত হয়। পরে ঘটনাচক্রে কৃষ্ণের হাতেই শিশুপাল নিহত হয়। শিশুপালের সাথে বিদর্ভ অঞ্চলের ভীষ্মকের কন্যা রুক্মিণীর বিয়ের আয়োজন চলছিল। সে সময় কৃষ্ণ রুক্মিণীকে অপহরণ করে বিয়ে করে। রুক্মিণীকে কখনো রাধা, কখনো লক্ষ্মীর অবতার মনে করা হয়। পুরু বংশ রাজা জ্ঞাতি শুক্রাচার্যের অগোচরে শর্মিষ্ঠাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করে। ফলে শুক্রাচার্যের অভিশাপে জ্ঞাতি জরাগ্রস্ত প্রাপ্ত হন। শাপ মুক্তির জন্য শুক্রাচার্য বলে যে, যদি অন্য কেউ  ইচ্ছায় জ্ঞাতির জরাগ্রস্ত গ্রহণ করে তবেই সে নিজের জরাগ্রস্ত সংক্রামিত করে শাপ মুক্ত হতে পারবে। জ্ঞাতি একে একে সকল পুত্রকে তার জরা গ্রহণ করতে বলে। শুধু সর্বকনিষ্ঠ পুরু পিতার জরাগ্রস্ত গ্রহণ করতে সম্মত হন। জ্ঞাতি তার জরা পুরুর দেহে সংক্রামিত করে। পিতৃআজ্ঞা পালন করায় জ্ঞাতি পুরুকে রাজা করেন। পুরুর স্ত্রীর নাম কৌশল্যা। এখানে জেনে রাখা ভালো যে, রামায়ণ মহাকাব্যে রাজা দশরথের স্ত্রী, রামের মায়ের নামও কৌশল্যা। তবে এ দুইজন ভিন্ন চরিত্র। পুরু ও কৌশল্যার পুত্র জন্মেজয়া (১ম), জন্মেজয়া (১ম) ও অনন্তার পুত্র প্রাচিনবান, প্রাচিনবান ও আস্মাকির পুত্র সঞ্জাতি, সঞ্জাতি ও বারঙ্গির পুত্র আহমতি, আহমতি ও ভানুমতির পুত্র সার্বভৌম, সার্বভৌম ও সুনন্দার পুত্র জয়ৎসেন, জয়ৎসেন ও সুশ্রবার পুত্র অর্বাচীন, অর্বাচীন ও মারিয়াদার পুত্র আরিহান, আরিহান ও অগ্নির পুত্র মহাভৌমা, মহাভৌমা ও সুয়াজনার পুত্র আয়ুতানইন, আয়ুতানইন ও কামার পুত্র অক্রোধন, অক্রোধন ও কারামভার পুত্র দেবতিথী, দেবতিথী ও মারিয়াদা (২য়) এর পুত্র আরিহান (২য়), আরিহান (২য়) ও সুদেবার পুত্র রক্ষা, রক্ষা ও জাবালার পুত্র মতিনারা, মতিনারা ও সরস্বতীর (দেবী নয়) পুত্র তংসু, তংসু ও কালিন্দীর পুত্র নিলীল/ইলিন। নিলীলের ঔরসে রাথানতরীর গর্ভে জন্ম নেয় দুষ্মন্ত। রাজা দুষ্মন্ত, শকুন্তলা ও হস্তিনাপুর দুষ্মন্ত ছিল হস্তিনাপুরের রাজা। এটি বর্তমান ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের মিরাট জেলার একটি শহর। হস্তিনাপুরকে কেন্দ্র করে মহাভারত মহাকাব্যের পটভূমি রচিত। এটি ছিল কুরুরাজ্যের রাজধানী। ব্রহ্মার মানসপুত্র ঋষি বিশ্বামিত্রের ঔরসে অপ্সরা মেনকার গর্ভে এক কন্যা শিশুর জন্ম হয়। জন্মের পরে বিশ্বামিত্র ও মেনকা দু’জনেই শিশুটিকে পরিত্যাগ করে চলে যায়। কন্ব নামের এক ঋষি সেই কন্যাটিকে পক্ষীপরিবৃত অবস্থায় উদ্ধার করে, নাম দেয় শকুন্তলা।  রাজা দুষ্মন্ত হরিণ শিকারে এসে শকুন্তলাতে দেখে প্রেমে পড়ে। তাদের গান্ধর্ব বিবাহ (প্রকৃতিকে সাক্ষী রেখে মালাবদল করে বিবাহ) হয়। শকুন্তলাকে একটি রাজকীয় আংটি দিয়ে দুষ্মন্ত হস্তিনাপুর ফিরে যায়। শকুন্তলা এক পুত্রের জন্ম দেয়, নাম ভরত। অনেক ঘটনা পেরিয়ে দুষ্মন্ত ও শকুন্তলার মিলন হয়, ভরত ফিরে পায় তার পিতাকে। কথিত আছে, ভরত সমগ্র ভারতীয় ভূখণ্ড জয় করে। এই কারণে তার রাজত্ব ‘ভারতবর্ষ’ নামে পরিচিত হয়। রাজা রবি ভার্মার শিল্পকর্মে ভরত ভরতের বংশগতির ধারায় জন্ম নেয় রাজা কুরু।  ভরত ও সুনন্দার পুত্র ভূমন্যু, ভূমন্যু ও বিজয়ার পুত্র সুহত্রা, সুহত্রা ও সুবর্ণার পুত্র হস্তি, হস্তি ও যশোধরার পুত্র বিকুণ্ঠন, বিকুণ্ঠন ও সুদেবার পুত্র আজমিদ, আজমিদ ও কৈকয়ীর পুত্র সম্বরণ, সম্বরণ ও তপতীর পুত্র কুরু। কুরু রাজবংশ মহারাজ সম্বরণ এবং সূর্য দেব (দ্বাদশ আদিত্যগণের অন্যতম; কশ্যপ ও অদিতির পুত্র; যার নামে রবিবারের নামকরণ করা হয়েছে; দেবতা রবির পুত্র শনি, যার নামে শনিবার, শনি গ্রহ) ও ছায়ার কন্যা দেবী তপতীর (যার নামে তপতী নদীর নামকরণ করা হয়েছে) পুত্র ছিলেন কুরু। এ রাজার বংশধরদের কৌরব বলা হয়। এই বংশের পরম্পরায় ধৃতরাষ্ট্র ও পাণ্ডু দুই ভাই জন্ম নেয়। কিন্তু মহাভারতে কেবল রাজা ধৃতরাষ্ট্রের সন্তানগণকে কৌরব বলা হয়েছে; পক্ষান্তরে কৌরব বংশের পাণ্ডর সন্তানগণ পাণ্ডব হিস��বে বর্ণিত হয়েছে। হস্তিনাপুরের রাজা কুরুর নাতির নাম প্রতীপ। রাজা প্রতীপ ও সুনন্দার তিন পুত্র- দেবাপি, শান্তনু ও বাহ্লীক। দেবাপি সন্ন্যাস গ্রহণ করে ও ছোট ভাই বাহ্লীক কুরুরাজ্যের বাইরে বাহ্লীকপ্রদেশের রাজা হওয়ায় শান্তনু হস্তিনাপুরের রাজা হয়। শান্তনুর প্রথম স্ত্রী জাহ্নু মুনির কন্যা দেবী গঙ্গা (যার নামে গঙ্গা নদী)। জাহ্নুর কন্যা বলে গঙ্গাকে ‘জাহ্নবী’ও বলে।  অন্য মতে, ব্রহ্মার কমণ্ডলু (জলপাত্রবিশেষ) হতে গঙ্গার জন্ম। তৃতীয় একটি মত অনুযায়ী, গঙ্গা পর্বতরাজ হিমালয় ও মেনকার কন্যা এবং পার্বতীর বোন। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অনুসারে, বিষ্ণুর তিন স্ত্রী ছিলেন – লক্ষ্মী, গঙ্গা ও সরস্বতী। তারা সবসময় পরস্পর কলহ করতেন বলে বিষ্ণু লক্ষ্মীকে নিজের কাছে রেখে শিবকে গঙ্গা ও ব্রহ্মাকে সরস্বতী দান করেন। শান্তনু ও গঙ্গার সন্তান ভীষ্ম বা দেবব্রত মহাভারতের অন্যতম প্রধান চরিত্র। পাণ্ডব এবং কৌরব, উভয় বংশের পিতামহ বলে ইনি ‘পিতামহ ভীষ্ম’ নামেও পরিচিত। সে পণ করেছিলো যে সে কোনদিন রাজা হবে না ও বিয়ে করবে না। আমৃত্যু ভীষ্ম তার পণ  ধরে রাখে। এ জন্য কঠিন কোন প্রতিজ্ঞা বোঝাতে বাংলায় ‘ভীষ্মের পণ’ বাগধারা ব্যবহৃত হয়। ভীষ্ম ছিল ইচ্ছামৃত্যুর বরপ্রাপ্ত; অর্থাৎ, যতক্ষণ না তিনি স্বেচ্ছায় মৃত্যুকে গ্রহণ না করবে, ততক্ষণ তার মৃত্যু হবে না। ভীষ্ম দেবগুরু বৃহস্পতির কাছে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, বশিষ্ঠ মুনির কাছে বেদ ও বেদাঙ্গ এবং পরশুরাম মুনির কাছে ধনুর্বিদ্যা শিখেছিল। এই পরশুরাম দেবতা বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার। পরশুরাম ব্রহ্মার মানসপুত্র ঋষি জমদগ্নি ও দেবী রেণুকার সন্তান। কঠোর তপস্যা করে তিনি শিবের নিকট হতে পরশু (বা কুঠার) লাভ করে। শান্তনুর দ্বিতীয় স্ত্রী সত্যবতী। সত্যবতী চেদীরাজ (কুরু রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্বে চেদীরাজ্য) উপরিচর বসু এবং মৎস্যরূপিণী অপ্সরা অদ্রিকার কন্যা। সত্যবতীর সৎ ভাইয়ের (মাতা গিরিকার গর্ভে) নাম বৃহদ্রথ। এই বৃহদ্রথ ছিল মগধের (প্রাচীন ভারতের ষোলটি মহাজনপদ বা অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম; বিহারের পাটনা, গয়া আর বাংলার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত) রাজা। বৃহদ্রথের পুত্র জরাসন্ধ।  বৃহদ্রথ ও জরাসন্ধ উভয়ই মহাভারতের উল্লেখযোগ্য চরিত্র। জেলেদের রাজা দাশ সত্যবতী ও তার সহোদর মৎস্যরাজকে অদ্রিকার পেট থেকে উদ্ধার করে। রাজা দাশ সত্যাবতীর পালক পিতা। শান্তনুর ঔরসে সত্যবতীর গর্ভে জন্ম নেয় দুই পুত্র- চিত্রাঙ্গদ ও বিচিত্রবীর্য। শান্তনুর মৃত্যুর পরে চিত্রাঙ্গদ হস্তিনাপুরের রাজা হয়। দেবতাদের গায়করা গন্ধর্ব নামে পরিচিত ছিল। হিরন্মতী নদীর তীরে কুরুক্ষেত্রে (ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের একটি অঞ্চল) গন্ধর্বদের রাজার সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে চিত্রাঙ্গদের মৃত্যু হয়। উল্লেখ্য যে, এই কুরুক্ষেত্রেই মহাভারতের যুদ্ধ হয়েছিল। চিত্রাঙ্গদের মৃত্যুর পরে বিচিত্রবীর্য রাজার আসনে বসে। শান্তনুর সাথে বিয়ের আগে সত্যবতীর সাথে ঋষি পরাশরের মিলন হয়েছিল। পরাশর হলো ব্রহ্মার সপ্তর্ষি মানসপুত্র বশিষ্ঠ ও অরুন্ধুতির পুত্র শক্তি মহর্ষির পুত্র। পরাশর ও সত্যবতীর মিলনে ব্যাসের জন্ম। এই ব্যাস বা ব্যাসদেব মহাভারতের রচয়িতা। গায়ের রঙ কালো আর দ্বীপে জন্ম বলে তাকে কৃষ্ণ দ্বৈপায়নও বলে । সে বেদকে চার ভাগে ভাগ করে বেদব্যাস নাম প্রাপ্ত হন। বেদব্যাস- মহাভারতের রচয়িতা অম্বা, অম্বিকা ও অম্বালিকা- কাশী রাজ্যের রাজা কস্যের তিন কন্যা। স্বয়ম্বর (স্বামী নির্বাচন) সভা থেকে ভীষ্ম বিচিত্রবীর্যের জন্য এই ‍তিন জনকে অপহরণ করে নিয়ে আসে। বিচিত্রবীর্যের সাথে অম্বিকা ও অম্বালিকার সাথে বিয়ে হয়। অম্বা আরেকজনের বাগদত্তা ছিল। তবে অপহৃত হওয়ায় সে সেখানে গৃহীত হয়নি। তাই অম্বা ভীষ্মকে বিয়ে করতে চেয়েছিলো। ভীষ্ম তা করেনি। এমনকি গুরু পরশুরামের সাথে এ নিয়ে ভীষ্মের যুদ্ধও হয়েছিলো। ভীষ্মকে বিয়ে করতে ব্যর্থ হয়ে অম্বা ভীষ্মকে হত্যার পণ করে আত্মত্যাগ করে। ভীষ্ম ও অম্বা-অম্বিকা-অম্বালিকা অম্বার পরজন্মের নাম শিখণ্ডী। সে নারী হিসেবে জন্মেছিলো, পরে স্থুণাকর্ণ নামে এক যক্ষের কাছ থেকে সে পুরুষত্ব লাভ করে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে শিখণ্ডী পুরুষ যোদ্ধা হিসেবে অংশগ্রহণ করে। ভীষ্মবধের জন্য অর্জুন শ্রীকৃষ্ণের পরামর্শমত শিখণ্ডীকে নিজের রথের সামনে রেখে ভীষ্মের সম্মুখীন হয়। ভীষ্মের সাথে যুদ্ধের সময় ভীষ্ম যখন জানতে পারে যে শিখণ্ডী আসলে মেয়ে, তখন সে নারীর বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণের অপরাধবোধ হতে অস্ত্র ত্যাগ করে। শিখণ্ডীর বোনের নাম দ্রৌপদী, ভাইয়ের নাম ধৃষ্টদ্যুম্ন। এই দ্রৌপদী মহাভারতের অন্যতম প্রধান নারী চরিত্র। দ্রৌপদীর পিতা দ্রৌপদ ছিল পাঞ্চাল অঞ্চলের রাজা। দ্রৌপদ নামের সাথে আরেকটি নাম যুক্ত হয়ে আছে- দ্রোণাচার্য। ঋষি ভরদ্বাজ ব্রহ্মার একজন মানস সন্তান। অন্যদিকে, ভরদ্বাজকে আবার দেবতাগুরু বৃহস্পতিরও সন্তান মনে করা হয়। এই ভরদ্বাজের পুত্র দ্রোণাচার্য কৌরব এবং পাণ্ডবদের অস্ত্রশিক্ষার গুরু ছিলো।  দ্রোণাচার্য ও দ্রৌপদ একসাথে ঋষি ভরদ্বাজের কাছে শিক্ষা গ্রহণ করতো। দুই জন বেশ ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলো। কিন্তু দ্রৌপদ পাঞ্চালরাজা হবার পরে সে দ্রোণাচার্যের বন্ধুত্বকে অস্বীকার করে। ফলে দ্রোণাচার্য ও দ্রৌপদের মধ্যে চরম শত্রুতা তৈরী হয়। নিজের অপমানের শোধ নিতে দ্রোণাচার্য অর্জুনকে (পঞ্চপাণ্ডবদের একজন) দিয়ে দ্রৌপদকে পরাজিত করে। দ্রৌপদও কম যায় না। সে দ্রোণাচার্যকে হত্যার জন্য যজ্ঞ করে ধৃষ্টদ্যুম্ন নামে এক পুত্রের জন্ম দেয়। তবে ধৃষ্টদ্যুম্নের সাথে যমজ হিসেবে দ্রৌপদীরও জন্ম হয়। অন্যদিকে, দ্রোনাচার্য ও তার স্ত্রী কৃপির পুত্র হিসেবে জন্ম নেয় অশ্বত্থামা। সে দ্রোপদীর পাঁচ সন্তানকে হত্যা করেছিল। কুরুক্ষেত্রে দ্রৌপদ পরিবার পাণ্ডব এবং দ্রোণাচার্য ও তার পুত্র কৌরবদের হয়ে যুদ্ধ করে। দ্রোণাচার্যের সাথে জড়িয়ে আছে একলব্য-এর নাম। গুরুর প্রতি শিষ্যের একনিষ্ঠ ভক্তির উদাহরণ একলব্য। গুরুদক্ষিণা হিসেবে দ্রোণাচার্যকে সে হাতের বুড়ো আঙ্গুল দাবি কেটে দিয়েছিল । বিবাহের সাত বছর পরে নিঃসন্তান বিচিত্রবীর্য যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। বংশরক্ষার জন্য সত্যবতীর পুত্র বেদব্যাস প্রথমে অম্বিকার সাথে সহবাস করে । কিন্তু সহবাসের সময় বেদব্যাসের আলুথালু বেশ দেখে সে দুই চোখ বন্ধ করে ফেলে । এজন্য তার সন্তান ধৃতরাষ্ট্র জন্মান্ধ হয়ে জন্মায়। এবার অম্বালিকার পালা। বেদব্যাসের সাথে সহবাসকালে সে ভয়ে পাণ্ডুবর্ণ হয়ে যায় । এজন্য তার পুত্র পাণ্ডু পাণ্ডুবর্ণ হয়ে জন্মায় । অন্ধপুত্র ও পাণ্ডুবর্ণ পুত্রের জন্ম হলে সত্যবতী আবারও বিচলিত হয়। পুনরায় সে অম্বিকার সাথে বেদব্যাসের সহবাসের আয়োজন করে। তবে এবার অম্বিকার নিজে না গিয়ে শূদ্রা দাসীকে পাঠালো। এ দাসীর ঘরে জন্ম নেয় জ্ঞানী ও সূক্ষদর্শী বিদুর। মহাভারতে রাজা ধৃতরাষ্ট্রের সন্তানগণকে কৌরব ও পাণ্ডুর সন্তানগণ পাণ্ডব হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। এই দুই রাজবংশের যুদ্ধই কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ নামে পরিচিত। কৌরবগণ ধৃতরাষ্ট্র অন্ধ হওয়ার কারণে ছোট ভাই পাণ্ডু হস্তিনাপুরের রাজা হয়েছিল। কিন্তু পাণ্ডুর অকাল মৃত্যুতে ধৃতরাষ্ট্র হস্তিনাপুরের সিংহাসনে বসে। গান্ধারের (আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের কাবুল ও সোয়াত নদীর তীরে অবস্থিত একটি প্রাচীন রাজ্য) রাজা সুবলের কন্যা গান্ধারীকে ধৃতরাষ্ট্র বিয়ে করে। বোনের সাথে গান্ধারের রাজকুমার শকুনীও হস্তিনাপুরে থেকে যায়। এই শকুনী মহাভারতের অন্যতম প্রধান চরিত্র। তার কুবুদ্ধির জন্য ‘কুচক্রী’ বোঝাতে বাংলা বাগধারায় ‘শকুনী মামা’ ব্যবহৃত হয়। গান্ধারী তার অন্ধস্বামীকে শ্রদ্ধা জানাতে সারা জীবন নিজের দুই চোখ বেঁধে রেখেছিলো । ব্যাসদেবের বরে গান্ধারী শতপুত্রের জননী হয় । এদের মধ্যে দুর্যোধন, দুঃশাসন, বিকর্ণ উল্লেখ্য। শত ভাইয়ের সাথে এক বোনও জন্মেছিল- নাম দুঃশলা। এছাড়া, দাসীর গর্ভে ধৃতরাষ্ট্রের এক পুত্র সন্তান জন্মে, নাম যুযুৎসু। দুর্যোধন ও দুঃশাসন মহাভারতের অন্যতম প্রধান চরিত্র। দুঃশলা সিন্ধুরাজ জয়দ্রথকে বিয়ে করে। এদের পুত্রের নাম সুরথ। জয়দ্রথ একবার দ্রৌপদীকে অপহরণ করেছিলো। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুন তাকে হত্যা করে। ধৃতরাষ্ট্র-এর রথের সারথির নাম সঞ্জয়। ব্যাসদেবের কৃপায় যুদ্ধ ক্ষেত্রে উপস্থিত না-থেকেও দিব্য চোখে সে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সবকিছু সে দেখতো পারতো আর ধৃতরাষ্ট্রকে জানাতো। পাণ্ডবগণ হস্তিনাপুরের রাজা পাণ্ডু নিঃসন্তান ছিল। তার প্রথমা স্ত্রী যাদব বংশের কন্যা কুন্তী। হরিণ শিকারে গিয়ে পাণ্ডু শাপগ্রস্ত হয়। ফলে দ্বিতীয় স্ত্রী মদ্র দেশের (জম্মু-কাশ্মীর অঞ্চলের) রাজকন্যা মাদ্রীর সাথে সহবাস করতে গিয়ে মারা যায়। মাদ্রী তার সাথে সহমরণে যায়। তবে মৃত্যুর আগে অশ্বিনীকুমারদ্বয় মাদ্রীকে যমজ পুত্র দান করে। এরা নকুল ও সহদেব নামে পরিচিত। ঋষি দূর্বাসার (ঋষি অত্রি ও অনসূয়ার পুত্র) বরে কুন্তী পাণ্ডুর সাথে বিয়ের আগে সূর্যদেবের কাছ থেকে কর্ণ, বিয়ের পরে ধর্মদেবের কাছ হতে যুধিষ্ঠির, বায়ুদেবের কাছ থেকে ভীম, ইন্দ্রদেবের কাছ থেকে অর্জুনকে সন্তান হিসেবে লাভ করে। সমাজের ভয়ে কর্ণকে কুন্তী পরিত্যাগ করে।  যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জুন ও মাদ্রীর দুই সন্তানকে (নকুল ও সহদেব) নিয়ে মহাভারতের পঞ্চপাণ্ডব গঠিত। অঙ্গদেশের (��র্তমান ভাগলপুর ও ��ুঙ্গের)) রাজা কর্ণ মহাভারত মহাকাব্য অন্যতম কেন্দ্রীয় কিন্তু হতভাগ্য চরিত্র। পাণ্ডবদের সহোদর হওয়া সত্ত্বেও কর্ণ কৌরবদের সাথে ছিলো। এমনকি নিজের মায়ের পরিচয় জানার পরেও সে দূর্যোধনের বন্ধুত্বের মর্যাদা রক্ষা করেছে। দুর্ভাগ্য যে, অর্জুনের সাথে যুদ্ধের সময় তার রথের চাকা মাটিতে বসে যায় এবং সে ব্রহ্মাস্ত্র মারার মন্ত্রও ভুলে যায়। কর্ণ অর্জুনকে ধর্মের দোহাই দিয়ে যুদ্ধ বন্ধ করতে বলেছিলো, কৃষ্ণের প্ররোচনায় অর্জুন তা না করে কর্ণকে বধ করে। কর্ণের পুত্রের নাম বৃষসেন। কর্ণকে বাদ দিলে পঞ্চপাণ্ডবদের বয়োজ্যেষ্ঠ ভাই যুধিষ্ঠির। সে শকুনীর সাথে পাশা খেলায় হেরে গেলে  কর্ণের পরামর্শে প্রকাশ্য সভায় দুঃশাসন দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শেষে সে হস্তিনাপুরের রাজা হয়। যদুবংশ ধ্বংসের পর সে অভিমন্যুর (অর্জুনের পুত্র, কৃষ্ণের ভাগিনা) পুত্র পরীক্ষিৎ-কে রাজ্যে অভিষিক্ত করেন এবং যুযুৎসু'র (দাসীর গর্ভে ধৃতরাষ্ট্র পুত্র) উপর রাজ্যের ভার অর্পণ করে। রাজা পরীক্ষিত ও রাণী মদ্রবতীর জ্যেষ্ঠপুত্র জন্মেজয়। পরীক্ষিতের পরে সে রাজা হয়েছিল। তার নামে বাংলায় ‘ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির’ বাগধারা চাল আছে। এর অর্থ ভীষণ সত্যবাদী। পঞ্চপাণ্ডব ও দ্রৌপদী পঞ্চপাণ্ডবদের দ্বিতীয় ভাই ভীমসেন বা ভীম। ভীম হিড়িম্বা নামের রাক্ষসীকে বিয়ে করে। তাদের ঘটোৎকচ নামের একটি পুত্র সন্তান হয়। জন্মমাত্রই ঘটোৎকচ যৌবন প্রাপ্ত হয় এবং স্মরণ করলেই পিতৃগণকে দেখা দেবে বলে বিদায় নেয়।  কৃষ্ণের নির্দেশে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে ঘটোৎকচ কর্ণকে আক্রমণ করে ও তার হাতে প্রাণ হারায়। ঘটোৎকচের পুত্র অঞ্জনপর্বন। পঞ্চপাণ্ডবদের তৃতীয় ভাই অর্জুন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কৃষ্ণ অর্জুনের রথ পরিচালনা করে। অর্জুনকে নারায়ণের কনিষ্ঠ ভ্রাতা নর-নারায়ণের অবতার মনে করা হয়। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সূচনাপর্বে কৃষ্ণ তাকে যে উপদেশাবলি প্রদান করে তাই ভগবদ্গীতা নামে পরিচিত।  চক্রমধ্য-মৎস্যকে বিদ্ধ করে স্বয়ম্বরসভা হয়ে অর্জুন দ্রৌপদীকে জয় করে এনেছিলো। মৎস্যরাজ বিরাটের রাজসভায় অজ্ঞাতবাসকালে সে বৃহন্নলা (হিজড়া, নপুংসক) সেজে বিরাটরাজের কন্যাকে নৃত্য, গীত ইত্যাদি শিক্ষা দিয়েছিল। এই বিরাটের শ্যালক ও প্রধান সেনাপতি ছিল কীচক। সে দ্রৌপদীকে (অজ্ঞাতবাসকালের নাম সৌরন্ধ্রী) ধর্ষণের চেষ্টা করেছিলো। এমনকি সে দ্রৌপদীর চুল ধরে তাকে লাথিও মারে। এই ক্ষোভে ভীম কীচককে হত্যা করে। দ্রৌপদী ছাড়া অর্জুন আরও তিনজনকে বিয়ে করেছিলো। এরা হলো কৌরব্যনাগের কন্যা উলূপী, মণিপুররাজ চিত্রবাহনের কন্যা চিত্রাঙ্গদা এবং বলরামের সহোদরা ও কৃষ্ণ বৈমাত্রেয় ভগিনী সুভদ্রা (রোহিণীর গর্ভজাত)। তার পুত্ররা হলো ইরাবান (উলুপী), বভ্রুবাহন (চিত্রাঙ্গদা) ও অভিমন্যু (সুভদ্রা)। অভিমন্যু মৎস্যরাজ কন্যা উত্তরাকে বিয়ে করে। তাদের পুত্রের নাম পরীক্ষিৎ। পঞ্চপাণ্ডবের বাকী দুইজন নকুল ও সহদেব। মহাভারত মহাকাব্যে তাদের ভুমিকা অন্যান্য পাণ্ডবদের তুলনায় বেশ কম। পঞ্চপাণ্ডবের ঔরসে দ্রৌপদী পাঁচ সন্তানের জন্ম দেয়। এরা হলো প্রতিবিন্ধ্য (যুধিষ্ঠির), সুতসোম (ভীম), শ্রুতকীর্তি (অর্জুন),শতানীক (নকুল) এবং শ্রুতসেন (সহদেব)। (উল্লেখ্য, রামায়ণ মহাকাব্যে রাজা কুশধ্বজ ও তার স্ত্রী রাণী চন্দ্রভাগার কনিষ্ঠ কন্যা ছিলেন শ্রুতকীর্তি।) ধৃতরাষ্ট্র পঞ্চপাণ্ডবদেরকে কুরু-রাজধানী হস্তিনাপুর থেকে কিছু দূরবর্তী যমুনাতীরবর্তী একটি বনাঞ্চলে বসবাস করতে বলে। এ স্থানটির নাম খাণ্ডবপ্রস্থ। যুধিষ্ঠির তার ভাইদের সঙ্গে খাণ্ডবপ্রস্থে যায়। সেখানে সে সৌধমালাশোভিত পরিখাপ্রাকারবেষ্টিত উপবন-সরোবর-ভূষিত স্বর্গধামতুল্য এক নগর স্থাপন করে। এর নাম ইন্দ্রপ্রস্থ।   শ্রীকৃষ্ণ মহাভারত মহাকাব্যের একক পরিচালকের নাম শ্রীকৃষ্ণ। যদু বংশের বাসুদেব ও দেবকীর অষ্টম সন্তান কৃষ্ণ মথুরার রাজ পরিবারের সন্তান। বাসুদেবের আরেক স্ত্রী রোহিনীর গর্ভে তার ভাই বলরাম ও বোন সুভদ্রা জন্ম নেয়। তাকে অথবা তার ভাই বলরামকে দেবতা বিষ্ণুর ৮ম অবতার মনে করা হয়। তার জন্মদিনটি (সম্ভবত, ৩২২৮ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ১৮ অথবা ২১ আগস্ট, বুধবার) জন্মাষ্টমী নামে পালিত হয়। গোকুলে (ভারতের  উত্তরপ্রদেশ  রাজ্যের মথুরা জেলার অন্তর্গত একটি স্থান) পালক মাতাপিতা যশোদা ও নন্দ তাকে লালন-পালন করে। নন্দ ছিলেন গোপালক সম্প্রদায়ের প্রধান। নন্দের নিবাস ছিল বৃন্দাবনে।  বর্তমান গুজরাতের প্রথম রাজধানী দ্বারকায় কৃষ্ণ তার রাজ্য গড়ে তুলেছিল।  হিন্দু  ধর্মাবলম্বীদের কাছে চারধাম নামে পরিচিত চার প্রধান তীর্থস্থানের একটি হল দ্বারকা। বাকী তিনটি হলো বদ্রীনাথ, জগন্নাথপুরী ও রামেশ্বর। দ্বারকা সপ্তপুরী নামে পরিচিত ভারতের সাতটি প্রাচীনতম শহরের একটি। কৃষ্ণের মৃত্যুর পর গোটা দ্বারকা নগরী এক বিশাল বন্যায় সমুদ্রের গভীরে হারিয়ে যায়। সমুদ্রের নিচের অভিযান করে প্রত্নতত্ত্ববিদরা এখানে খুঁজে পেয়েছেন বহু প্রাচীন এক নগরীর ধ্বংসাবশেষ, যা আনুমানিক প্রায় পঞ্চদশ শতাব্দীরও পূর্বের। কৃষ্ণের ১৬১০৮ জন স্ত্রী ছিল। এর মধ্যে কৃষ্ণ ১৬১০০ নারীকে নরকাসুর নামক অসুরের কারাগার থেকে উদ্ধার করে তাদের সম্মান রক্ষার্থে তাদের বিবাহ করে। এছাড়া কৃষ্ণের গোপিনীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠার নাম রাধা। তত্ত্বগতভাবে, রাধাকৃষ্ণ হলো পুরুষ সত্ত্বা ও প্রকৃতি সত্ত্বার যুগলরূপ। অনেকে মনে করে, কৃষ্ণের ৮ জন প্রধান স্ত্রীর একজন রুক্মিণীই রাধা। বাকী সাত স্ত্রী হলো সত্যভামা, জাম্ববতী, নগ্নজিতি, কালিন্দী, মাদ্রী, মিত্রাবিন্দা ও ভদ্রা। এই আটজনকে একত্রে অষ্টভার্যা বলে। কৃষ্ণ ও অষ্টভার্যা প্রতিটি নারীর গর্ভে কৃষ্ণের ১০ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। এ জন্য তার মোট সন্তানের সংখ্যা ১,৭৭,১৮৮ জন। কৃষ্ণের সাথে শিবের এক ভয়াবহ যুদ্ধ হয়েছিল। এ যুদ্ধ হরি-হর যুদ্ধ নামে পরিচিত। কশ্যপের পুত্র হিরণ্যকশিপু, তার পুত্র প্রহ্লাদ, তার পুত্র বিরোচন, তার পুত্র বলি, বলির পুত্র বাণাসুর। একসময় ভারতের অসম রাজ্যের শোণিতপুর জেলার প্রধান শহর তেজপুরে/ শোণিতপুরে সহস্রবাহুওয়ালা বাণাসুর রাজত্ব করিতেন। শিবভক্ত এ অসুর কৃষ্ণের নাতি অনিরূদ্ধকে অপহরণ করে। এ নিয়ে কৃষ্ণ বাণাসুরকে আক্রমণ করলে শিব তাকে বাঁচাতে এলে কৃষ্ণ ও শিবের মধ্যে যুদ্ধ হয়। ব্রহ্মার হস্তক্ষেপে কৃষ্ণ এবং শিব‌ যুদ্ধ বন্ধ করে। তবে কৃষ্ণ বাণাসুরের দুটি হাত রেখে বাকী ৯৯৮-টি হাত কেটে ফেলে। (মহাভারত মহাকাব্যের চরিত্রসমূহ নিয়ে কোন ভিন্ন কোন মতামত থাকলে বা কোন চরিত্র নিয়ে প্রদত্ত তথ্যে বিভ্রান্ত হলে ফেসবুক মেসেজে লেখককে সরাসরি জানাতে পারেন।) পুরাণ গাঁথা গ্রিক পুরাণের সহজপাঠ: দেব-দেবীদের কুণ্ডলী- আদিম দেব-দেবীগণডেলফির ওরাকল- সত্য না কি পৌরাণিক গল্প?রামায়ণ মহাকাব্যের সহজপাঠ- চরিত্র অভিধান Read the full article
0 notes
mytista · 5 years
Video
youtube
দ্বিতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধ হবে বাংলায়, মানুষই শেষ কথা বলবে - গৌতম দেব | এক ঝলক News বাংলা https://youtu.be/H933gbN6LUQ
0 notes
24x7newsbengal · 6 months
Link
0 notes
khabarsamay · 2 years
Link
0 notes
sentoornetwork · 5 years
Text
সুষমা, তুমি যতই এগিয়ে যাও, আমি খুব তাড়াতাড়িই তোমার কাছে আসছি
New Post has been published on https://sentoornetwork.com/96th-birth-anniversary-of-renowned-poet-nirendra-nath-chakraborty/
সুষমা, তুমি যতই এগিয়ে যাও, আমি খুব তাড়াতাড়িই তোমার কাছে আসছি
সিদ্ধার্থ সিংহ একদিন নীরেনদার সঙ্গে কী নিয়ে যেন কথা বলছি, হঠাৎ দেখি সংযুক্তা বিড়বিড় করতে করতে এসে নীরেনদার সামনে এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে আচমকা কী মনে পড়তেও, যে দিক দিয়ে এসেছিল, সে দিকেই হাঁটা দিয়েছিল। ওকে যেতে দেখে নীরেনদা বললেন, কী হল, চলে যাচ্ছ যে! সংযুক্তা আমাদের বন্ধু। ওর বাবা একটানা আঠেরো বছর রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছেন। ওর স্বামী বাংলা ছায়াছবির প্রবাদপ্রতিম শিল্প নির্দেশক— গৌতম বসু। ওর মেয়ে চিকি, মানে অন্নপূর্ণা অন্তত দশটা সফল বাংলা ছায়াছবি বানিয়েছে। কিন্তু ওকে আমরা পাগলি বলেই ডাকি। সেই সংযুক্তা বলল, না, আসলে একটা বানান জানতে এসেছিলাম। আপনার কাছে আসতেই মনে পড়ে গেল। নীরেনদা বললেন, এসো এসো, বসো। ও নীরেনদার সামনের চেয়ারে এসে বসতেই নীরেনদা বললেন, তোমার আর কোনও বানান জানার থাকলে জিজ্ঞেস করতে পারো। এই অবকাশে একজন সুন্দরী মহিলার বানানের কৌতুহল মেটানোর সুযোগ তো পাব। এই হচ্ছেন নীরেনদা। মানে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, ছড়াকার, সাংবাদিক, রহস্য রোমাঞ্চকার, গল্পকার, শিশুসাহিত্যিক, বাংলা ভাষায় প্রথম টিনটিন-এর অনুবাদক এবং অবশ্যই দক্ষ সম্পাদক। তবুও তাঁর মধ্যে ছিল এ রকমই সূক্ষ রসবোধ। বাংলাদেশের ফরিদপুরের চান্দ্রাগ্রামে ১৯২৪ সালের ১৯ অক্টোবর তিনি জন্মগ্রহন করেন। বাবা জিতেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। মা প্রফুল্লনলিনী দেবী। ওখানকার গ্রামের পাঠশালাতেই তাঁর শিক্ষার হাতেখড়ি। পরে ১৯৩০ সালে কলকাতায় এসে ভর্তি হন বঙ্গবাসী স্কুলে। তার পরে মিত্র ইনস্টিটিউশনে। আনন্দবাজারে আমি যে ঘরে বসতাম, সে ঘরে আরও তিন জন বসতেন। তিন জনই বিখ্যাত সাহিত্যিক। একজনের নাম দিব্যেন্দু পালিত। অন্য দু’জন হলেন রমাপদ চৌধুরী আর নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। এঁদের দু’জনের মাঝখানে বসতাম আমি। সেই সুবাদে এঁদের দু’জনের বন্ধুত্ব আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। একদিন হঠাৎ শুনি রমাপদবাবুর দিকে তাকিয়ে নীরেনদা বলছেন, হ্যাঁরে, সুষমা নামের বউগুলো বুঝি খুব ভোগায়, না? আমার ডান দিকে বসা রমাপদবাবু মাথা নেড়ে নীরেনদাকে ইঙ্গিকে কী বলেছিলেন, আমি দেখিনি। আমি তখন কাজে ব্যস্ত ছিলাম। তবে উনি কেন রমাপদবাবুকে এটা জিজ্ঞেস করেছিলেন, সেটা বেশ বুঝতে পেরেছিলাম। কারণ, আমি জানতাম, নীরেনদার মতো রমাপদবাবুর স্ত্রীর নামও সুষমা। সে সময় নীরেনদার স্ত্রী খুব ভুগছিলেন। যখন কোনও দুটি মানুষের বন্ধুত্ব একটা ‘জুটি’ হয়ে দাঁড়ায়, বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ ধরে সেই বন্ধুত্ব অটুট থাকে, তার পিছনে অনেকগুলো কারণ থাকে। আর সব থেকে বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায় অনেকগুলো কাকতালীয় মিল। মিল মানে, তাঁরা যে দু’জনেই ঝর্না কলমে লিখতেন, দু’জনেরই যে প্রিয় রং ছিল কালো আর লাল কালি, দু’জনেই কলম বিগরোলে যে ধর্মতলার মোড়ে ‘পেন হসপিটাল’-এ ছুটতেন, দু’জনেই যে একই রকম দক্ষ সম্পাদক ছিলেন, শুধু তা-ই নয়, আমরা যারা এই দু’জনকে সহকর্মী হিসেবে পেয়েছিলাম বা খুব কাছ থেকে দেখেছি, তাঁরা জানি, দু’জনের মধ্যে কত মিল ছিল। সিগারেট খেলে দু’জনে একসঙ্গে খেতেন। আগুন লা��ার পরে যখন অফিসের মধ্যে ক্যান্টিন তো দূরস্থ, সামান্য দেশলাই বা লাইটার জ্বালানোও নিষিদ্ধ হয়ে গেল, তখনও এই দু’জন একসঙ্গে লিফটে করে নীচে নেমে অফিসের গেটের কাছে দাঁড়িয়ে সিগারেট খেতেন। শুধু একজনকে কেউ কখনও একা একা সিগারেট খেতে দেখেছে বলে আমি কখনও শুনিনি। তবে নীচে নামলে উল্টো দিকের গাছতলার চায়ের দোকান থেকে চা না খেয়ে কেউই ওপরে উঠতেন না। এমনকী, টয়লেটে গেলেও দু’জনে একসঙ্গেই যেতেন। যখন ওঁরা আনন্দবাজার পত্রিকায় যোগ দেন, তখনকার সময়ে প্রায় সমস্ত পত্রপত্রিকাতেই দু’জন করে সম্পাদক রাখার একটা রীতি ছিল। সে বিভাগীয় সম্পাদনার ক্ষেত্রেও। একজন অসুস্থ হলে বা ছুটিতে গেলে যাতে অন্য জন চালিয়ে নিতে পারেন। পাকাপাকি ভাবে ‘আনন্দমেলা’র সম্পাদক হওয়ার আগে এঁরা দু’জনেই ছিলেন ‘রবিবাসরীয়’র দুই সম্পাদক। খেলা নিয়ে দু’জনেরই ছিল তুমুল উৎসাহ। কখনও কখনও দু’জনের মধ্যে তুমুল কথা কাটাকাটিও হত। সেই ঝগড়া দেখলে কে বলবে, ওঁরা ওই পদমর্যাদার দুই দিকপাল কবি আর লেখক। তবে তাঁদের ঝগড়া কখনও দীর্ঘস্থায়ী তো হতই না, তিক্ততা পর্যন্তও গড়াত না। পরে বুঝতে পারতাম, ওটা ছিল পুরোটাই কপট ঝগড়া। সে বার বইমেলায় আমার একটা ছোটদের বই বেরোবে। নাম— মায়া কাজল। নাম শুনেই রমাপদবাবু বললেন, নাম দুটোর মাঝখানে একটা হাইফেন দিয়ে দেবেন। রমাপদবাবু কথাটা শেষ করেছেন কি করেননি, নীরেনদা ও পাশ থেকে বলে উঠলেন, না না, হাইফেন দিয়ো না। ওটা সবাই দেয়। তুমি বরং ওই দুটো নামের মাঝখানে একটা ‘এস’ বসিয়ে দাও। আমি তো অবাক। ইংরেজির এস? সে তো সাপের ফনার মতো লাগবে! নীরেনদা বললেন, তুমি যে ভাবে ভাবছ, সে ভাবে নয়, দেখে যাও, এই ভাবে ‘এস’টা লিখবে। বলেই ‘মায়া’ লেখার পর ‘কাজল’ লেখার আগেই একটা শোয়ানো এস এঁকে দিলেন। কিন্তু নীরেনদা বললে কী হবে! আমার বস তো রমাপদ চৌধুরী। তাই বাধ্য হয়েই আমি ‘এস’ না লিখে রমাপদবাবুর কথা মতো হাইফেনটাই ব্যবহার করেছিলাম। ফলে সে বই দেওয়া তো দূরের কথা, নীরেনদাকে কোনও দিন দেখাতেও পারিনি সেই বই। যতই খুনসুটি হোক, তাঁদের কাকতালীয় মিল ছিল অভাবনীয়। নীরেনদার থেকে নীরেনদার স্ত্রী ছিলেন ঠিক এক বছর আট মাসের বড়। আবার রমাপদবাবুও ছিলেন নীরেনদার থেকে ঠিক ওই এক বছর আট মাসেরই বড়। মানে, নীরেনদার জীবনসঙ্গিনী এবং জীবনের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু— দু’জনেই ছিলেন কাকতালীয় ভাবে একেবারে একই বয়সি। রমাপদবাবু সারা বছরে মাত্র একটা উপন্যাস লিখতেন। নীরেনদাও লিখতেন খুব কম। এত বছরে লিখেছিলেন মাত্র ২৯টি কবিতার বই। ১৪টি রহস্য কাহিনি। ৬টি আলোচনাগ্রন্থ। ৩টি ভ্রমণ কাহিনি। একটি করে উপন্যাস, আত্মস্মৃতি, কাব্যনাট্য। এ ছাড়া ছোটদের জন্য সতেরোটি ছড়া-কবিতার বই। সৃষ্টি করেছেন অনবদ্য গোয়েন্দা চরিত্র— ডিটেকটিভ ভাদুড়ী মশাই। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তিনি কবিতা লিখেছিলেন। কিন্তু সেটা কোথাও ছাপা হয়নি। ১৬ বছর বয়স থেকে তাঁর লেখা কবিতা সেই যে বেরোনো শুরু হয়, তা ‘নীলনির্জন’ নামে সিগনেট প্রেস থেকে প্রথম বই হয়ে বেরোয় ১৯৫৪ সালে। তিনি চাকরি করেছেন দৈনিক প্রত্যহ, সত্যযুগ, মাতৃভূমি, স্বরাজ, ভারত, ইউনাইটেড প্রেস অব ইন্ডিয়ায়। ১৯৫১ সালে যোগ দেন আনন্দবাজার পত্রিকায়। আনন্দমেলার সম্পাদক হন ১৯৭৬ সালে। আনন্দবাজারে আসার পরে রমাপদবাবুর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়ে। নীরেনদা যে রমাপদবাবুর কত বড় বন্ধু ছিলেন, তার প্রমাণ, তিনি যখন বানানবিধি লিখছেন সেই ‘কী লিখবেন, কেন লিখবেন’ বইটিতে তিনি স্পষ্ট করে লিখে দিয়েছিলেন, পদবি হিসেবে ‘চৌধুরী’তে আর দীর্ঘ ঈ-কার ব্যবহার করা যাবে না। হবে ই-কার। একমাত্র রমাপদ চৌধুরীর ক্ষেত্রেই পুরনো বানান বলবৎ থাকবে। এ নিয়ে নানা জন নানা কথা বললেও উনি কিন্তু নিজের সিদ্ধান্ত থেকে এক পা-ও সরে আসেননি। এ ভাবে স্বীকৃতি বুঝি একজন যথার্থ বন্ধুই দিতে পারেন তাঁর প্রিয় বন্ধুকে। নীরেনদা সব চেয়ে বেশি ঘৃণা করতেন মেকি দেশপ্রেমকে। আর সব চেয়ে বেশি ভালবাসতেন শিশুদের। তাই বড়দের জন্য অজস্র লেখা লিখলেও ছোটদের জন্যও কম লেখেননি। লিখেছিলেন, সাদা বাঘ, বিবির ছড়া, ও কলকাতা, ডাইনোসর, ভোরের পাখি, ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি, রাত পাহারা, পাঁচ বছরের আমি’র মতো এক-একটা হীরকখণ্ড। আর এই লেখালিখির জন্যই তিনি পেয়েছিলেন, সাহিত্য আকাদেমি, তারাশঙ্কর, আনন্দ শিরোমণি, বিদ্যাসাগর, উল্টোরথ, স্বর্ণাঞ্জল, জীবনকৃতি এবং বঙ্গবিভূষণ। পাঠকের ভালবাসার পুরস্কার তো বহু আগেই পেয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির এই প্রাক্তন সভাপতি। আমি তখন একের পর এক সংকলন সম্পাদনা করছি। একদিন রমাপদবাবুকে বললাম, এ বার বইমেলাতেও কয়েকটা সংকলন সম্পাদনা করছি। আমি কিন্তু যৌথ সম্পাদক হিসেবে আপনার নামটা রাখব। উনি বললেন, কীসের বই? আমি যখন বললাম, ছোটদের গল্পের বই। তখন সঙ্গে সঙ্গে তিনি আড়চোখে নীরেনদাকে দেখিয়ে বললেন, ওকে বলুন। ও তো ছোটদের গল্প লেখে। কথাটা শুনে নীরেনদা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, কী হয়েছে? আমি ব্যাপারটা বলতেই উনি বললেন, আমার নাম তুমি রাখতেই পারো। তবে আগেই বলে রাখি, আমি কিন্তু ভূমিকা-টুমিকা লিখতে পারব না। তুমি লিখে নিয়ে আসবে, আমি সই করে দেব। আমি চমকে উঠলাম। বিখ্যাত সমস্ত সাহিত্যিকই কি একই রকম হন! লীলা মজুমদার, শংকর, মহাশ্বেতা দেবী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, সুচিত্রা ভট্টাচার্য, নবনীতা দেবসেন, রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়— যাঁদের সঙ্গেই যৌথ ভাবে সম্পাদনা করেছি, তাঁরা প্রত্যেকেই এই একই কথা বলেছেন এবং কেউই কখনও আমার কাছে কোনও দিন জানতে চাননি, ওই সংকলনে কে কে লিখছেন? বুঝতে পেরেছিলাম, অন্যান্যদের মতো নীরেনদারও পূর্ণ আস্থা আছে আমার ওপরে। ফলে সে বার আমাদের দু’জনের যৌথ সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছিল— ছোটদের সেরা ৫১। মাসখানেক আগে আমি যখন নীরেনদার ছোট মেয়ে শিউলির ম্যান্ডেভিলা গার্ডেন্সের বাড়িতে গিয়েছিলাম, নীরেনদা তখন খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন। ওঁর ছেলের বউ মিলুদি বলেছিলেন, দিনে পাঁচবার করে নেবুলাইজেশন চলছে। হ্যাঁ, এখানেও রমাপদবাবুর সঙ্গে নীরেনদার হুবহু মিল। দু’জনেই ভেন্টিলেশনে ছিলেন। দু’জনেই ঠান্ডায় কাবু হয়ে পড়েছিলেন। উনি সে দিন বারবারই বলছিলেন, আমি এ বার ভাইয়ের কাছে যাব। ভাই মানে, রমাপদ চৌধুরী। সে দিন উনি এমন এমন কথা বলেছিলেন, আমি বুঝতে পেরেছিলাম রমাপদবাবুর মতো তাঁরও স্মৃতিশক্তি এতটুকুও দুর্বল হয়নি। জ্ঞানের নাড়ি একেবাবে টনটনে। না, সে দিন নীরেনদার চোখ-মুখ দেখে আমার একদমই ভাল লাগেনি। তারও কয়েক মাস আগে নীরেনদার সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য কবি অমৃতা চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে নীরেনদার বাঙুরের বাড়িতে গিয়েছিলাম। তখনও এ রকম লাগেনি। সে দিনই প্রথম মনে হয়েছিল, নীরেনদার বয়স বয়ে গেছে। কিন্তু ওঁর কি এত বয়স হয়েছিল যে, চলে যেতে হবে! নাকি জানুয়ারিতে স্ত্রী বিয়োগের পর শববাহী গাড়ির পেছনে যেতে যেতে তাঁর গাড়ি হঠাৎ রেড সিগন্যালে আটকে পড়ায় উনি যেহেতু বলেছিলেন, ‘সুষমা, তুমি যতই এগিয়ে যাও, আমি খুব তাড়াতাড়িই তোমার কাছে আসছি।‘ সেই কথা রাখার জন্যই কি বছর ঘোরার আগেই উনি এই ভাবে চলে গেলেন! নাকি সেটা কোনও রকমে সামলে নিলেও, আর একজন দীর্ঘদিনের প্রিয় মানুষ— রমাপদ চৌধুরীর মৃত্যু তিনি মেনে নিতে পারেননি! তাই রমাপদবাবু চলে যাওয়ার মাত্র পাঁচ মাসের মাথাতেই তিনিও চলে গেলেন! কে জানে!
0 notes