মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর ২০২২
আগন্তুক ও প্রেম-ভাবনা
এ বছর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস শিখলাম লাভ লাইফ সম্পর্কে। বলতে গেলে একটা গরু রচনা লিখে ফেললাম এসব ব্যাপারে।
১। একটা ছেলেরই আসলে বেশি করে ভালোবাসা লাগে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে। ছেলেটা পছন্দ না করলে বা মেয়েটাকে বেশি ভালো না বাসলে সেই প্রেম টিকে না অথবা খুব কমই টিকে, মেয়েটা যত কিছুই করুক না কেন। আবার ছেলেটা যদি সত্যিই মেয়েটাকে বেশি ভালোবেসে থাকে তখন মেয়েটারও সায় থাকা আর এফোর্ট দেয়া জরুরি। না হলে সম্পর্কের ইতি সেখানেই ঘটে।
এমনও দেখেছি যেখানে একটা মেয়ে ছেলেটাকে অনেক ভালোবাসে কিন্তু ছেলেটা আরেকটা মেয়েকে ভালোবাসে যে মেয়েটা তাকে একসময় ভালোবাসতো এখন আর বাসে না। শেষমেশ দেখা যায় এরা তিনজনই কেও কাওকে পায় না জীবনে। এটা আবার ভিন্নরকম বা হেরফেরও হতে পারে। তবে আজকাল ত্রিভুজ প্রেম/অপ্রকাশিত অথবা সুপ্ত প্রেমের আবির্ভাবই বেশি দেখা যায়।
২। যোগাযোগের মধ্যে থাকা খুবই জরুরি। ধৈর্য, স্যাক্রিফাইসের মনোভাব থাকা দরকার। আর মিস-আন্ডারস্ট্যান্ডিং দুইজনের মধ্যে থাকবেই, সেটাকে কোপ আপ করে প্রত্যেকবার আন্ডারস্ট্যান্ডিং এ আসতে পারাটাই সম্পর্কের ম্যাচুরিটি প্রকাশ করে।
সবকিছুর ঊর্ধ্বে দুইজনের দিক থেকে মানসিক শান্তি পাওয়াটাই আসল। এসব বাহ্যিক সৌন্দর্য, নানা গুণ, হেনতেন এসব একটা সম্পর্কের জন্য কখনোই জরুরি না। ও আমাকে বুঝে কিনা, আমি ওকে বুঝে মানসিক শান্তি দিতে পারতেছি কিনা, দুইজন দুইজনকে সম্মান করি কিনা সেটাই ম্যাটার করে আসলে। এটাই একটা জটিলতা ছাড়া, সহজ-সরল সম্পর্কের উদাহরণ।
আর ভালোবাসার মানুষটার জন্য যে অপেক্ষা করতে পারে, তার সবকিছু জানার পরও একটুও ভালোবাসা কমাতে পারে না, উল্টো বেড়ে যায়, আমার মতে সেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। এই গানের লাইনটার মতনঃ
“I loved you for so long, sometimes it’s hard to bear
But after all this time, I hope you wait and see”
৩। একটু দেখা করা, ফোন কলে কথা বলা, সরাসরি কথা বলা, একটু হাঁটাহাঁটি করা, আশেপাশে কোথাও ঘুরতে যাওয়া, একটা ছোট্ট ডেটে যাওয়া, কথা-হাসি-আড্ডা বিনিময় করা, মনের কথা শেয়ার করা, হাত ধরা (আমার হাত ধরা খুব বেশি প্রিয়), কাঁধে মাথা রাখা, ঊর্ধে একটু জড়ায় ধরা, ঠোঁটে-গালে-কপালে চুমু খাওয়াও জরুরি। একেকজনের লাভ ল্যাঙ্গুয়েজ একেকরকম। আমি কোথায় আছি, কি করতেছি, খাওয়া-দাওয়া করছি কিনা, দিন কেমন গেলো, এসব টুকটাক জিনিস জানতে চাওয়া আবার একে অপরকে রোস্টিং করাটাও এক প্রকার লাভ ল্যাঙ্গুয়েজ। এমনকি কামড় দেয়াও। :3
আর সামসামনি দেখা করা, মেলা-মেশা মাস্ট, কারণ এগুলোর মাধ্যমে একজন আরেকজনকে আরো ভালোভাবে বুঝতে পারে। মানুষটা কেমন, তার চিন্তাধারা, মন-মানসিকতা সব বুঝা যায় ধীরে ধীরে।
৪। তখন তার একটা ইমোজি দেয়া টেক্সটও ভাল্লাগবে। তার ভুল টাইপিং, ভুল উচ্চারণের কথা শুনতেও মধুর মনে হবে। মানে যাকে একবার মন থেকে সত্যিকারের ভালোবাসবেন তার সবকিছুই আপনার ভাল্লাগবে। তাকে খুব প্রিয় আর আপন মনে হতে থাকবে, তার সাথে বেশ কমফোর্টেবল আর ভালোবাসার বাটারফ্লাই ফিল করতে থাকবেন। তার মায়ায় পড়ে যাবেন, যেই মায়া আপনি জীবনেও কাটাতে চাইবেন না।
তার ভালো লাগাগুলোও আপনার ভালো লাগা হয়ে যেতে থাকবে। এই যেমন ধরুন, আপনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “বলো তো আমার প্রিয় রং কি?” তখন সে কিছুক্ষণ ভেবে জোরে বলে উঠলো, “নীল।” (মনে করি অনেকটা সজোরেই, নজরকাড়া ভাবেই বললো)। আপনি তখন নিজের অজান্তেই বলে ফেললেন, “হ্যাঁ, নীল রং আমার খুব ভালো লাগে।” আসলে আপনার নীল ভালো লাগতো না। কিন্তু প্রেমিক/প্রেমিকার কাছ থেকে রেসপন্সটা এমনভাবে পেয়েছেন যে এরপর থেকে আপনার নীল রং ভালো লাগতে শুরু করলো আর আপনি এই রং টাকেই বেশ আলাদাভাবে দেখা শুরু করলেন। আসলে সবই এখানে সাইকোলজিকাল-হরমোনাল ব্যাপার-স্যাপার।
ঐদিকে আরেকজন আপনাকে যতই ইমপ্রেস করার চেষ্টা করুক না কেন, তার এফোর্ট আপনি বরাবরই ইগনোর করতে থাকবেন (এমনকি ক্রাশ টেক্সট দিলেও)। তার সাথে আর কারো কোন তুলনাই হবে না। কারণ সেই মানুষটাই হবে সবার প্রথম প্রায়োরিটি। আর এটাই স্বাভাবিক।
তার কথা বলা, হাসি, লজ্জা পাওয়া, রাগ করা সবকিছুই এত ভাল্লাগবে যে মনের মধ্যে গেঁথে থাকবে। তাকে একটু দেখার ইচ্ছা আর কথা বলার জন্য কি যে ছটফট করবেন সেটা একবার প্রেমে পড়লেই বুঝতে পারবেন। সে এখন কি করতেছে এসব ভাবনা আসবে আর তার নিত্যদিনকার রুটিন আপনার মুখস্ত হয়ে যাবে। সে আপনার একটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে সুনার অর লেটার।
আর কেও তার প্রথম প্রেম জীবনেও ভুলতে পারে না, বিশেষ করে ছেলেরা। প্রথম প্রেমের প্রতি তাদের আলাদা আবেগ আর বিশেষ অনুভূতি কাজ করে যা পরের প্রেমগুলোতে আগের সেই ফিলিংসটা দেয় না।
৫। প্রেমিক/প্রেমিকার মন রক্ষা করা, তার আবদার পূরণ করা। এক্সট্রিম লেভেলের ইচ্ছা না। যেগুলো পূরণ করা যায় আরকি। মানে প্রেমে মত্ত হও ঠিক আছে, কিন্তু কিছু জিনিস হার্ট দিয়ে ডিল না করে ব্রেইন দিয়েও বুঝে-শুনে চিন্তা করে চলা উচিত।
৬। আর যা কিছু লিখলাম, এই সব কিছু কখনোই ভুলা যায় না। জীবনে যত এসব প্রেম-টেম, ভালোবাসা ঘটবে সেগুলো মনের মধ্যে দাগ কেটেই থাকবে। থেকে থেকে, মাঝে-মধ্যে মনে আসবে খুব, সেসব কাটানো দিন, মুহূর্ত, কথা-বার্তা, আর এত এত স্মৃতির। সেই দেখা করা, কথা বলা জীবনের একটা দিনের জন্য হলেও খুব মনে পড়বে।
৭। আর ব্রেকআপ হয়ে গেলে তো কথাই নাই। সেটার কষ্ট থেকে মুভ অন করাটাও বেশ টাফ। আর খুব দুঃসহনীয় মুহূর্তের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। ঘুম থেকে উঠতেই সেই মানুষটার কথা মনে পড়ে, দিনের প্রত্যেকটা মুহূর্তে মাথার মধ্যে শুধু তার চিন্তাই ঘুরপাক খায়, রাতে বেশি মনে পড়ে বিধায় ঘুম আসতে সমস্যা হয় আর ঘুমের আগ পর্যন্ত তার কথা ভাবা নিত্যদিনের কাজ হয়ে যায়।
একটা জিনিস দেখবেন, একটা পরিস্থিতে পরবেন, দেখবেন যে ওই জিনিসটা তার স্মৃতি মনে করায় দিচ্ছে, শুধু তার কথাই মনে হবে আর খুব শূন্য লাগবে নিজেকে। তাকে স্বপ্নে দেখবেন হাজারবার। তার কথা ভাবতে ভাবতে নিঃশেষ হয়ে যাবে ভেতরটা।
৮। মনে হবে যে ওকে একটু নক দেই, একটু কথা বলি, ওর ছবিটা একটু দেখি, একটু স্মৃতিগুলো ঘেঁটে দেখি, আগের মেসেজগুলো পড়ি, নানা ধরনের হেনতেন জিনিস। কারণ হলো এটাচমেন্ট আর অভ্যাস। এই দুইটা জিনিস খুবই ভয়ানক। একবার বিল্ড আপ করলে, সেটার থেকে বের হওয়া খুবই মুশকিল। বিশেষ করে প্রেম-ভালোবাসার ক্ষেত্রে।
৯। এরপর মনে হবে আমার সাথেই কেন এমন হলো! সে আমাকে এত ভালোবেসে বলে চলে গেলো কেন? আমাকে এভাবে বুঝ দিয়ে কেটে পড়লো কেন? আমার বিশ্বাস ভাঙ্গলো কেন? আমি এখন কি নিয়ে বাঁচবো? কিভাবে চলবে আমার জীবন? ওর সাথে আমার বিয়ের স্বপ্ন, খুঁটিনাটি ইচ্ছা সব ভেঙে গেলো কেন? আমি ওকে ভুলতে পারবো না, ওকে ছেড়ে থাকবো কিভাবে? আরো যা কিছু চিন্তা-ভাবনা আছে হেনতেন। মাথাটায় ভারী ভারী সব চিন্তা আসবে আর বুকটাতে চিনচিন ব্যথা করতে থাকবে।
এক কথায়, মাথার উপর আকাশ ভেঙে পড়বে আর পায়ের নিচের মাটি সরে যাবে এমন অবস্থা হবে। জীবনটা তছনছ টাইপ মনে হতে থাকবে তখন। মনটা দুমড়ে-মুচড়ে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যেতে চাইবে। জগতের আর কিছুই ভালো লাগবে না।
১০। তবে এ হার্টব্রেকের সময় নিজেকে স্থির রেখে, খুব যত্ন নিয়ে নিজেকে নিজেরই এই মনভাঙ্গা পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করতে হবে। নিজেকে তখন অনেক সময় দিতে হবে। নানা কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়া জরুরি সেই মুহূর্তে। কারণ তখনই নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করা যায়। বিভিন্ন মানুষ, বন্ধুর সাথে পরিচিতি বাড়িয়ে মনটাকে ডাইভার্ট করার চেষ্টাটা কিন্তু ফেলনা না। বরং বেশ কাজেই দেয় কিন্তু।
এত দুশ্চিন্তা না করে, নতুন করে সব শুরু করা খুব ভালো সিদ্ধান্ত। হার্টব্রোকেন মানুষটার এটা ভেবে খুশি হওয়া উচিত যে অপর মানুষটা তার আসল রঙ দেখায় ফেলছে সেটা কয়েকমাস বা কয়েক বছরের ভালবাসার পরিচয়ই হোক না কেন। নিজেকে একদিক দিয়ে ভাগ্যবানও ভাবতে পারেন যে বেঁচে গেলেন এই ফেক রঙের ভালবাসার থেকে।
সবচেয়ে অপটিমিসটীক চিন্তাধারা হলো, সৃষ্টিকর্তার সিদ্ধান্তের উপর আস্থা রাখা, কারণ যা কিছু ঘটলো সবই আমাদের ভালোর জন্যই। কখনোই মনে করা উচিত না যে “আমি ঠকে গেলাম, বরং ভাবতে হবে যে আমার একটা শিক্ষা হলো। একদিক দিয়ে আমিই জিতে গেলাম।”
এটা ভাবা উচিত যে “জীবন কখনো কারোর জন্য থেমে থাকেনা।” নিজের উপর ভরসা রেখে , পরিবারকে আঁকড়ে থেকে, পরিবারকে ভালোবাসে, আশা কম রেখে, নিজের জায়গা তৈরী করে, লাইফ যেই পরিস্থিতি দেয় তার সাথে তাল মিলায়ে চলা উচিত।
আর তখনই দেখা যায়, সেই হার্টব্রোকেন মানুষটা জীবনে বেশ ভালো করে। তাই তখন নিজের যত ইন্টারেস্টের কাজ আছে, যতটুকু সম্ভব শুরু করা উচিত। একটা না একটা রাস্তা বের হয়েই যায় মনটাকে ভালো রাখার আর হার্টে যে ক্ষত পড়ছে সেটা হয়তো কখনোই যায় না কিন্তু ক্ষতটা নিয়ে জীবনে অন্তত আগায় যাওয়া যায়। ক্ষত হয়তো শুকায় না, কিন্তু সময় আর যত্নে সেটায় ধৈর্যের আর পরিস্থিতি মেনে নেয়ার ফুল ফোটে।
১১। এরপর যখন জীবনে আরেকজন নতুন মানুষ আসে বা আসতে চায় তাকে নিয়ে আবার নতুন দ্বিধা শুরু হয়ে যায়। কারণ আগেরজনের কথা খুব মনে পড়ে। আবার যদি মন দিয়ে এমন বাজে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তখন কি হবে! তাই তারা নতুন সম্পর্কে জড়াতে ভয় পায়। এরপর দেখে তারা ওই প্রথমজন/আগেরজনকেই আসলে এখনো ভালোবাসে অথবা বেশি ভালোবাসে।
এইসবগুলো পর্যায়ে নিজেকে খুব একলা, অসহায় মনে হয়। মেমোরি থেকে যেতেই চাইবে না। আর স্বপ্নে যে তাকে কতবার দেখবেন তার কোন ইয়ত্তা নাই।
কিন্তু আমার এটা মনে হয় যে, জীবনে সেই সঠিক মানুষটার কাছে পৌঁছানোর আগে বেশ কিছু ভুল মানুষের সাথে আমাদের পরিচয় ঘটে যেতেই পারে, অনেক কিছু হতেই পারে, এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার।
একদম শেষে যেই মানুষটা আমরা পাবো, যে আমাদের হাতটা আঁকড়ে ধরে থাকবে, কখনোই কোনরকম এক্সকিউজ দিয়ে ছেড়ে যাবে না, তার প্রতি আমাদের ভালবাসা আর কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। সে একটা অমূল্য গিফটের মতনই হবে, যে সারাটা জীবন বন্ধুর মত পাশে থেকে যাবে।
১২। যখন নতুন মানুষটার সাথে একটা ফ্রেন্ডলি, মানসিক শান্তির, কমফোর্টের সম্পর্ক তৈরি হয় তখন ব্যাপারটা আগায় আর টিকেও। এরপর বিয়ে করলে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে যায়। তখন আগের সম্পর্ক নিয়ে তেমন কোন ফিলিংস কাজ করে না আর করলেও সেটা বিয়ে করা জামাই/বউয়ের ভালোবাসায় কমে যায় হয়তো। (আমার অভিজ্ঞতা নাই, তবুও আশেপাশের বিয়ে করা মানুষদের যাদের এমন পরিস্থিতি হইছিলো তাদের দেখে বুঝি কিছুটা)।
এই লাভ লাইফ, প্রেম-ভালোবাসা, সম্পর্কে থাকা, টিকিয়ে রাখা খুবই কমপ্লেক্স আর বেশ লম্বা একটা প্রসেস যেখানে আপনাকে প্রচুর সময় আর মানসিক শ্রম দিতে হবে, ধৈর্যের আর অপেক্ষা করার পরিচয় দিতে হবে।
মুখে বলা বা ফোনে টাইপ করার চেয়ে কাজে করে দেখানোর মন-মানসিকতা থাকতে হবে। অপরজনের চাওয়া-পাওয়া বুঝতে হবে, এমন যেন হয় যে চোখ-মুখ দেখেই বুঝে ফেললাম ও কিছু একটা চাচ্ছে, কিছু বলতে চায় কিন্তু পারতেছে না অথবা মন খারাপ কিনা এমন আরকি। তার হঠাৎ চুপ হয়ে যাওয়া, মুড অফ দেখা আর নীরব থাকাকেও বুঝতে হবে, বুঝার চেষ্টা করতে হবে। মনে হলো যে ও একটু হারায়-টারায় যাচ্ছে তখন তাকে এই গানটা সেন্ড করে দেওয়াই যায়, https://youtu.be/lee7ftNjGWw. আমাকে কেও পাঠালে আমি কি যে খুশি হবো সেটা বলার মতন না।
১৩। লাস্ট বাট নট লিস্ট পয়েন্ট, যেটা লিখেই ফেললাম সেটা হলো,
“ছেড়ে তো যেকোনো একজন গেলেই হয়, ধরে রাখতে জানতে হয় দুজনকেই।“
আমার মতো ইমম্যাচিউর, কমফোর্ট জোন থেকে বের না হওয়া, ইন্ট্রোভার্ট প্রকৃতির আর চেহারা-কথাবার্তা নিয়ে সমস্যায় ভোগা মেয়ের জন্য ভালোবাসা জিনিসটা খুবই টাফ আসলে। আর জীবনে ভালোবাসা আসলেও সেটা ৭ নং পর্যায়ে চলে যায় বা সম্পর্কে না গেলেও এসব কথা-বার্তা চালানো আর সম্ভব না এমন দিকে ব্যাপারটা গড়ায় যায়।
তখন ৭-১২ প্রসেসে যেতে হয়। কিন্তু আমিও চাই আমার এসব কিছু মেনে নিয়ে কেউ অন্তত আসুক আমার জীবনে, আমার সমস্যাগুলো বুঝুক, আমাকে একটু কমফোর্ট দিক। কিন্তু বাস্তবে এটা সম্ভব না। তাই কারো কাছ থেকে কখনোই কিছু আশা করি না। কারোই করা উচিত না আসলে। এতেই মানসিক শান্তি।
আর আমাদের মন জিনিসটা যেহেতু আছে, সেখানে একটু তো কষ্ট পেতেই হবে আর কষ্ট যেহেতু পেতেই হবে সেটা মেনে নিয়ে জীবনে আগায় যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। আগে কি হইছে, পরে কি হবে এসব ভেবে, ওভারথিংকিং করে, দিনশেষে কোন লাভই হয় না আসলে। বর্তমানটাই আসল আর বাস্তব।
আমার মতে, আজকেই, এ মুহূর্তেই, ছোট ছোট আনন্দ নিয়ে, ব্যস্ত থেকে, কাজ-টাজ করে, একটু সুন্দর করে, যা আছে তাই নিয়েই বাঁচি না, ক্ষতি কি!
কাফকার একটা সুন্দর কথা দিয়ে শেষ করি।
“তুমি যা যা ভালোবাসবে, সবকিছুই হয়তো একদিন হারিয়ে ফেলবে। কিন্তু তুমি যেই ভালোবাসা দিয়েছো সেই ভালোবাসা কোনো একদিন তোমার কাছে ফিরে আসবে – অন্য কোনো রূপে কিংবা অন্য কোনো আলোয়।“
4 notes
·
View notes
বিয়ে!
জীবনের সাথে জড়িত অতি পরিচিত একটি শব্দ আছে।জীবনের অর্ধেকের চেয়েও বেশি সময় যেন এই শব্দের সাথে কেটে যায়। ওহ্ দুঃখিত, আজকাল তো আবার কাটে না! চারপাশে কত রকমের বিয়ে কন্ট্রাক্টের বিয়ে, পালিয়ে গিয়ে বিয়ে, উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে বিয়ে, জোর করে বিয়ে, দু'দিনের বিয়ে কত রকমের বিয়ের ছড়াছড়ি! আগের দিনের মত নানী, দাদিদের এরেঞ্জ ম্যারেজের ভালোবাসার গল্প কয় জনি বা শুনতে পাই!
"ঙ্গান" আরো একটি বিশাল শব্দ যা আমরা একে অন্যকে না দিলেই পারি! তাই চুপ করছি!
যাই হোক এবার আসি গল্পের মূল চরিত্রে নাম, "নাদিয়া"। কিছু কথক এর মত বলছিনা যে বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে বরং বাবা- মায়ের সব থেকে বড় মেয়ে আরো দুই বোন আছে নাদিয়ার। তবে নাদিয়াকেই সব থেকে সুন্দর ও শুভ্র স্বভাবের মেয় বলা হয়। অত্যন্ত শান্ত ও অবুঝ প্রকৃতির মেয়ে নাদিয়া।
গল্প বলার জন্য এগিয়ে যাচ্ছি কয়েক বছর আগে। নাদিয়া, বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে, অনেক ছোট খুব বেশী বড় বলা যায় না। সবার আদরের সবার চোখের মনি।
এবার আসি গল্পের নায়ক চরিত্রে। যে কিনা গল্পের নায়ক হতে হতে থেকে যাওয়া একটি চরিত্র! কিভাবে?
আশরাফ, নাদিয়ার খালাতো ভাই। সে খালার কোন মেয়ে নেই। মেয়ের প্রচন্ড সখ তবে দুটই ছেলে। একটি নাদিয়ার বয়সী আর বড় ছেলে আশারাফ। খালার চোখে নাদিয়া তার মেয়ের মত বরং তার থেকেও বেশি।
খালার সাথে নাদিয়ার একটি মজার গল্প আছে। নাদিয়া তখন ছোট্ট ক্লাস টু'তে পড়ে হয়তো। এমনই সময় নাদিয়াদের বাসায় খালা বেড়াতে আসে। নাদিয়া স্কুলে যাবে ভেবে খালআ ভাবলো যে আজকে মেয়েটাকে আমি রান্না করে খাওয়াই । নাদিয়ার সুজি খুব পছন্দ ছিলো।
খালা নাদিয়াকে সুজি বানিয়ে খেতে দিল। নাদিয়া সুজি টা দেখেই কেমন যেন মুখ করে ফেলল,
- আম্মু এটা এমন দেখতে কেন! আমি খাব না!
- তোর খালা খুব আদর করে বানিয়েছে মা খেয়ে যা। একটু মুখে দে। জানিস তো তোর খালা খুব ভালো রান্না করে।
নাদিয়া মায়ের কথায় সুজি ���ুখে দিল।
- মা, মিথ্যা কথা বল কেন? এটাকে ভালো রান্না বলে!
নাদিয়া না খেয়ে চলে যেতে লাগল এমন সময় খালা এসে বলল,
- কি হয়েছে মা খেলি না যে?
- কিভাবে খাব!
- ভাল হয়নি মা সুজি?
- হ্যাঁ, ভাল হয়না এজন্য খাব না!
ইশ্, এভাবে যদি ভার্সিটির টিচার দের বলতে পারতাম, আপনার দেয়া এসাইনমেন্ট পছন্দ হয়নি তাই করতে পারব না! কত মজাটাই না হত।
নাদিয়া ও আসরাফের মধ্যে তখন থেকেই প্রেম প্রেম ভাব। প্রেম কি নাদিয়ার তখন তা বোঝার কথা নয় তবে লক্ষণ সব প্রেমেরি বলা চলে। মজার বিষয়টা ছিল আসরাফের ছোট ভাইকে নিয়ে। আসরাফ ও নাদিয়া সবসময় একসাথে লেগে থাকত আর এই আশরাফ ও নাদিয়া এক হলেই তার মাঝখানে থাকা চাই! ওই আমাদের বড় বেলার প্রেমে কাজিনদের নিয়ে যেমনটা হয়!
নাদিয়ার বড় হয়েছে। ছোটবেলার স্মৃতি হাফসা হাফসা অনেকটাই মনে। নাদিয়ার প্রখর বিশ্বাস আসারফ তাকে এখনো ভালোবাসে তাই নাদিয়ার মনে প্রেম শব্দটুকু বলতে আশরাফ।
এদিকে নাদিয়ার বাবার নাদিয়ার জন্য পছন্দ হয় আরেক ছেলেকে। তড়িঘড়ি করে নাদিয়ার বিয়ে! বিয়ের খবর আসরাফ পেতেই,
- খালা, নাদিয়ার বিয়ে হয়নি তাই না? আপনারা মিথ্যা বলছেন!
- এত বড় কথা কি মিথ্যা বলা যায় বাবা বল?
- আমি জানি খালা আপনারা মিথ্যা বলছেন! আপনি বলেন নাদিয়ার বিয়ে হয় নাই, আমি জানি খালা নাদিয়ার বিয়ে হয় নাই! আমি নাদিয়াকে বিয়ে করবো খালা! আপনি ওকে আর কোথাও বিয়ে দিবেন না, আমি ওকে বিয়ে করবো!
কেন ভাই, বিয়ে কি হাতের মোয়া তুমি যখন বলবে আর তোমাকে দিয়ে দিবে!
এই কাজিনদের সমস্যায় এটা, চোখের সামনে প্রেমিক প্রেমিকার বিয়ে হতে দেখবে তারপরে দেবদাস হয়ে ঘুরবে। তার কিছুদিন পর ত্যাগের মহিমা ছড়াবে আর সব শেষে কাজিন বলে চালিয়ে দেবে!
মোট কথা তো বলায় হলো না, সে কাজিনের বিয়েতে ''চান্না মেরে আ" ও গাইবে!
- ৩০ মার্চ, ২০২৪
- মোনালিসা মিতু
0 notes