Tumgik
#সিয়াম পরিত্যাগ করা
israfil625 · 5 years
Photo
Tumblr media
বিদ’আতের অর্থ এবং তার কুপ্রভাব বিদ’আতের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে: “নযীরহীনভাবে কিছু নব আবিস্কার করা ।” যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেছেন : “তিনি (নযীরবিহীন) আসমান ও যমীনের স্রষ্টা” (সূরা বাকারাহ /১১৭)পারিভাষিক অর্থে বিদ’আত বলা হয় : “ধর্মের মধ্যে যে নবাবিস্কৃত ইবাদাত , বিশ্বাস ও কথার সমর্থনে কুরআন ও সুন্নাহের মধ্যে কোন দলীল মিলে না অথচ তা ছাওয়াবের উদ্দেশ্যে করা হয় তাকেই বিদ’আত বলা হয় ।”ব্যক্তি , সমাজ , ধর্মীয় মাসআলা মাসায়েলের উপর বিদ’আতের কুপ্রভাব অত্যন্ত ভয়ানক । তবে বিদ’আতের স্তর রয়েছে । স্তরভেদে বিদ’আতের ক্ষতিকর কুপ্রভাবগুলো প্রযোজ্য । একটি কথা মনে রাখতে হবে ক্ষেত্র বিশেষে বিদ’আতকে যত ছোটই ভাবা হোক , তা রাসূল (সাঃ) এর এ (শরী’আতের মাঝে প্রত্যেক নবাবিস্কারই বিদ’আত আর প্রত্যেক বিদ’আত ভ্রষ্টতা আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম) বাণীর আওতা হতে কোন অবস্থাতেই বের হবে না । অতএব বিদ’আতের ভয়ানক ক্ষতিকর কুপ্রভাবগুলো আমাদের জানা দরকার । এ করণেই নিম্নে সংক্ষেপে সেগুলো উল্লেখ করা হলঃ• আল্লামাহ শাতেবী (রহঃ) সহ অন্যান্য ইসলামী বিশেষজ্ঞগণ বিদ’আতের যে সব কুপ্রভাব উল্লেখ করেছেন সেগুলো নিম্নরুপঃ১. বিদ’আতীর কোন আমল কবুল করা হবে না : রাসূল (সাঃ) বলেছেন : “যে ব্যক্তি দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু আবিষ্কার  করবে বা কোন নবাবিষ্কারকারীকে আশ্রয় দিবে তার উপর আল্লাহ এবং সকল ফেরেশতা ও মানুষের অভিশাপ……. তার ফরয ইবাদাত বা তাওবাহ , নফল ইবাদাত বা ফিদইয়া কবুল করা হবে না ….।” (বুখারী , কিতাবুল জিযিয়াহ , হা/৩১৮০ )।ইমাম আওযা’ঈ বলেন কোন কোন বিশেষজ্ঞ আলেম বলেছেন : বিদ’আতীর সালাত , সিয়াম , সাদাকাহ , জিহাদ , হাজ্জ , উমরাহ , কোন ফরয ইবাদাত বা তাওবাহ , নফল ইবাদাত বা ফিদইয়া গ্রহণযোগ্য হবে না । অনুরুপ কথা হিশাম ইবনু হাস্সানও বলেছেন ।আইউব আস-সুখতিয়ানী বলেন : বিদ’আতী তার প্রচেষ্টা যতই বৃদ্ধি করবে আল্লাহর নিকট হতে তার দূরত্ব ততই বৃদ্ধি পাবে ।এছাড়া যে বিদ’আতকে পছন্দ করে তার ধারনা শরীয়ত পূর্ণ নয় , অথচ আল্লাহ তা’আলা বলেছেন :“আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করে দিয়েছি” (সূরা মায়েদা/২ ) কারণ তার নিকট যদি দ্বীন পরিপূর্ণ হয়ে যেয়েই থাকে তাহলে সে শরীয়তের মধ্যে নতুন কিছুর প্রবেশ ঢুকাবে কেন বা তাকে অবহিত করার পরেও কেনই বা বিদ’আতের উপর আমল করবে ।২. বিদ’আত পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত বিদ’আতীর কোন প্রকার তওবাহ করার সুযোগ জুটবে না : “আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক বিদ’আতির বিদ’আতকে পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তওবার পথ রুদ্ধ করে দিয়েছেন” – (সহীহ আত তারগীব ওয়াত তারহীব ১/১৩০পৃ হাদীস নং ৫৪ )।৩. বিদ’আতী নবী (সাঃ) এর হাওযে কাওসারের পানি পান করা হতে বঞ্চিত হবে : আবু হাসেম হতে বর্ণিত , তিনি বলেন আমি সাহালকে বলতে শুনেছি তিনি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছেন , “আমি তোমাদের পূর্বেই হাওযে কাওসারের নিকট পৌঁছে যাব । যে ব্যক্তি সেখানে নামবে এবং তার পানি পান করবে সে আর কখনও পিপাসিত হবে না । কতিপয় লোক আমার নিকট আসতে চাইবে , আমি তাদেরকে চিনি আর তারাও আমাকে চেনে । অতঃপর আমার ও তাদের মধ্যে পর্দা পড়ে যাবে । রাসূল (সাঃ) বলবেন : তারা তো আমার উম্মাতের অন্তর্ভুক্ত । তাকে বলা হবে আপনি জানেন না আপনার পরে তারা কি আমল করেছে । তখন যে ব্যক্তি আমার পরে (দ্বীনকে) পরিবর্তন করেছে তাকে আমি বলবো : দূর হয়ে যা , দূর হয়ে যা”। (সহীহ মুসলিম হা/৪২৪৩ )।৪. বিদ’আতী অভিশপ্ত : কারণ রাসূল (সাঃ) বলেছেন : “যে ব্যক্তি দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু আবিস্কার করবে বা কোন নবাবিস্কারকারীকে আশ্রয় দিবে তার উপর আল্লাহ এবং সকল ফেরেশতা ও মানুষের অভিশাপ ।” (বুখারী , কিতাবুল জিযিয়াহ , হা/৩১৮০ )।৫. বিদ’আতীর নিকট যাওয়া ও তাকে সম্মান করা ইসলামকে ধ্বংস করার শামিল : পূর্বোল্লিখিত হাদীসটিই এ দলীল হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে । ( যদিও আল্লামাহ শাতেবী (রহঃ) একটি দূর্বল হাদীস দ্বারা দলীল দিয়েছেন ।) কারণ বিদআতীকে আশ্রয় দিলেই তাকে সম্মান করা হয় । আর যখন এ কারণে ইবাদাতগুলো কবুল করা হয় না , তখন আশ্রয়দানকারী তার ইসলামকে যে ধ্বংস করে দিল তাতে কোন সন্দেহ নেই ।বিশিষ্ট তাবে’ঈ হাসসান ইবনু আতিয়াহ (রহঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন : “কোন সম্প্রদায় যখন তাদের দ্বীনের মধ্যে কোন বিদ’আত চালু করে তখন আল্লাহ তা’য়ালা তাদের থেকে অনুরুপ একটি সুন্নাতকে উঠিয়ে নেন । অতঃপর কিয়ামাত পর্যন্ত তাদের নিকট সুন্নাতটি আর ফিরিয়ে দেন না” । -মুকাদ্দিমা দারেমী ।আরো এসেছে যে , “কোন ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোন প্রকার বিদ’আত চালু করলেই সে তার চেয়ে উত্তম সুন্নাতকে পরিত্যাগ করে” । - আল ইতিসাম ১/১৫৩ ।ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন : “প্রত্যেক বছরই লোকেরা একটি করে বিদ’আত চালু করবে আর একটি করে সুন্নাতকে মেরে ফেলবে । শেষ পর্যন্ত বিদ’আত জীবিত হবে আর সুন্নাতগুলো মারা যাবে” । -আল ইতিসাম ১/১৫৩ ।৬. আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট হতে বিদ’আতীর দূরত্ব বাড়তেই থাকবে : হাসান বছরী হতে বর্ণিত , তিনি বলেন : বিদ’আতী সালাত , সিয়াম ও ইবাদাতে যতই তার প্রচেষ্টা বৃদ্ধি করবে ততই আল্লাহর নিকট হতে তার দূরত্ব বৃদ্ধি পাবে ।আইউব আস-সুখতিয়ানী বলেন : বিদ’আতী তার প্রচেষ্টা যতই বৃদ্ধি করবে আল্লাহর নিকট হতে তার দূরত্ব ততই বৃদ্ধি পাবে ।রাসূল (সাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসেও এ অর্থের ইঙ্গিত বহন করছে । তিনি খারেজিদের সম্পর্কে বলেছেন :“…… তারা দ্বীনের মধ্য হতে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে যেমনভাবে তীর ধনুক হতে বেরিয়ে যায় ।” (বুখারী , মুসলিম) ।এ বেরিয়ে যাওয়া তাদের বিদ’আতের কারণেই । এ হাদীসের মধ্যেই বলা হয়েছে “অথচ তাদের সালাত ও সিয়ামের তুলনায় তোমাদের সালাত ও সিয়ামগুলোকে তোমরা তু���্ছ মনে করবে” ।৭. বিদ’আত ইসলামী লোকদের মাঝে দুশমনী , ঘৃণা , বিভেদ ও বিভক্তি সৃষ্টি করে : কারণ বিদ’আত লোকদেরকে বিভক্তির দিকে আহবান করে , কুরআন তারই প্রমাণ দিচ্ছে । আর এ থেকেই দুশমনী ও ঘৃণার সৃষ্টি হয় । আল্লাহ তা’য়ালা বলেন : “তোমরা সেই সব লোকদের মত হয়ো না যারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণাদি আসার পরেও মতভেদ করেছে , তাদের জন্য রয়েছে ভয়ংকর আযাব” – (সূরা আলে-ইমরান : ১০৫ )।তিনি আরও বলেন : “নিশ্চয় এটিই আমার সোজা সরল পথ তোমরা তারই অনুসরণ কর , তোমরা বহু পথের অনুসরণ করো না , কারণ তা তোমাদেরকে তাঁর এক পথ হতে বিচ্ছিন্ন করে দিবে” – (সূরা আন’আম : ১৫৩ )।তিনি আরও বলেন : “নিশ্চয় যারা তাদের দ্বীনকে খন্ড-বিখন্ড করেছে এবং তারা দলে দলে বিভক্ত হয়ে গেছে আপনি তাদের কোন কিছুতেই অংশীদার নন” – (সূরা আন’আম : ১৫৯ )।হাসান বছরী (রহঃ) বলেন : তুমি বিদ’আতীর নিকট বসবে না , কারণ সে তোমার হৃদয়কে রোগাক্রান্ত করে দিবে ।অতএব দ্বীন পরিপূর্ণরুপে ও সুস্পষ্টভাবে আসার পরেও যদি কোন ব্যক্তি তাতে সন্তুষ্ট না হতে পেরে নতুন কিছুর অনুপ্রবেশ ঘটায় , তা ইসলামের মধ্যে বিভক্তির কারণ এতে কোন সন্দেহ নেই । আর এ বিভক্তিই পরস্পরের মাঝে দুশমনী সৃষ্টি করে । যার জলন্ত প্রমাণ আমরা সমাজের মাঝে দিবালোকের ন্যায় প্রত্যক্ষ করছি । অতএব বাস্তবতাও তার বিরাট একটি দলীল ।৮. বিদ’আত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর শাফা’আত প্রাপ্তি হতে বাধা প্রদান করবে : কারণ হাদীসের মধ্যে বলা হয়েছে যে , বিদ’আতীকে হাওযে কাওছারের পানি পান করা হতে বঞ্চিত করা হবে । তিনি তাদের দূর হয়ে যেতে বলবেন । এটি প্রমাণ করছে যে তারা তাঁর শাফা’আত হতেও বঞ্চিত হবে ।এখানে শাতেবী (রহঃ) একটি দূর্বল হাদীস দিয়ে দলীল গ্রহণ করে , সেটির অর্থকে সহীহ আখ্যা দিয়েছেন । সেটি হচ্ছে ‘বিদ’আতী ছাড়া আমার উম্মাতের সবাই আমার শাফা’আত পাবে’ (আল-ইতিসাম ১/১৫৯) ।৯. বিদ’আত সহীহ সুন্নাহকে বিতাড়িত করে তার স্থলাভিষিক্ত হয় : বাস্তব নমুনায় এর বিরাট প্রমাণ । সালাত শেষে জামা’বদ্ধ হয়ে হাত তুলে দো’আ করলে , সালাতের পরে পঠিতব্য মুতাওয়াতির সূত্রের সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত দো’আ ও যিকিরগুলো পড়া হয় না । এছাড়া ইসলামের বিভিন্ন ইবাদাতের মধ্যে দূর্বল হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এরুপ বহু আমল আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে যা সরাসরি সহীহ হাদীসর বিপরীত আমল । বিজ্ঞ পাঠকবৃন্দে নিকট এর চেয়ে আর বেশী কিছু বলা প্রয়োজন মনে করছি না । অতএব দূর্বল বা জাল হাদীসের উপর আমল করলে সহীহ সুন্নাহ বিতাড়িত হবেই ।  সালাফদের ভাষ্য উল্লেখ করে পূর্বে (৫) এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে ।১০. বিদ’আত সৃষ্টিকারী তার নিজের ও তার অনুসরণকারী বিদ’আতের সাথে জড়িত প্রত্যেক ব্যক্তির সমপরিমাণ গুনাহের অংশীদার হবে : রাসূল (সাঃ) বলেছেন : “যে ব্যক্তি ভ্রষ্টতার দিকে আহবান করবে সে তার গুণাহ ও তার অনুসাররি গুণাগ বহন করবে । অনুসরণকারীদের গুণাহ সমূহে সামান্য পরিমাণ ঘাটতি না করেই” (বুখারী ও মুসলিম)কোন সন্দেহ নেই বিদ’আতের দিকে আহবান করা বা তার উপর আমল করা পথভ্রষ্টতারই একটি অংশ । কারণ রাসূল (সাঃ) বলেছেন : ‘সব বিদ’আতই ভ্রষ্টতা’ ।১১. বিদ’আতীর অমঙ্গলজনক শেষ পরিণতির ভয় রয়েছে : কারণ বিদ’আতী গুণাহের সাথে জড়িত , আল্লাহর অবাধ্য । আল্লাহ যা হতে নিষেধ করেছেন সে তার সাথে জড়িত । তার সে অবস্থায় মৃত্যু হলে অমঙ্গলজনক মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে । এছাড়া কিয়ামত দিবসে তাকে অমঙ্গলজনক পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে । এর প্রমাণ তিন নম্বরে বর্ণিত হাদীস , যা পড়লে সহজেই বঝা সম্ভব ।১২. বিদ’আতীর উপর দুনিয়াতে বেইজ্জতী আর আখেরাতে আল্লাহর ক্রোধ চাপিয়ে দেয়া হবে :(আখেরাতেও বেইজ্জতী হতে হেব তার প্রমাণ তিন নম্বরে বর্ণিত হাদীস)  আল্লাহ তা’আলা বলেন :“অবশ্যই যারা গাভীর বাচ্চাকে উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে তাদের উপর তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে দুনিয়াতেই ক্রোধ ও লাঞ্ছনা এসে পড়বে । মিথ্যারোপকারীদেরকে আমি অনুরুপ শাস্তি দিয়ে থাকি” (সূরা আরাফ:১৫২) ।সামেরীর প্ররোচনায় গাভীর বাচ্চা দ্বারা তারা পথভ্রষ্ট হয়েছিল এমনকি তারা তার ইবাদাতও করেছিল । আল্লাহ তা’আলা আয়াতের শেষে বলেছেন : “মিথ্যারোপকারীদেরকে আমি অনুরুপ শাস্তি দিয়ে থাকি এটি ব্যাপকভিত্তিক কথা । এর সাথে বিদ’আতেরও সাদৃশ্যতা আছে । কারণ সকল প্রকার বিদ’আতও আল্লাহর উপর মিথ্যারোপের শামিল । যেমনটি আল্লাহ তা’আলা বলেছেন :“নিশ্চয় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে , যারা নিজ সন্তানদেরকে নির্বুদ্ধিতাবশতঃ বিনা জ্ঞানে হত্যা করেছে এবং আল্লাহ তাদেরকে যেসব রিযিক দিয়েছিলেন , সেগুলোকে আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে হারাম করে দিয়েছে । নিশ্চয় তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং সুপথগামী হয়নি” (সূরা আন’আম : ১৪০)।অতএব আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে যে ব্যক্তিই বিদ’আত সৃষ্টি করবে তাকেই তার বিদ’আতের কারণে লজ্জিত ও লাঞ্ছিত হতে হবে । তাবেঈ’দের যুগে বাস্তবে বিদ’আতীদের ভাগ্যে এমনটিই ঘটেছিল । তাদেরকে তাদের বিদ’আত নিয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে ।১৩. সুন্নাতের বিরোধীতা করার কারণে বিদ’আতী নিজেকে ফিতনার মধ্যে নিক্ষেপ করে : সুফিয়ান ইবনু ওয়াইনাহ বলেন : আমি ইমাম মালেক (রহঃ) কে যে ব্যক্তি মদীনার মীকাতে পৌঁছার পূর্বেই ইহরাম বাঁধলো তার সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলাম । তিনি উত্তরে বললেন : সে আল্লাহ ও তার রাসূল (সাঃ) এর বিরুদ্ধাচারণকারী । তার উপর দুনিয়াতে ফিতনার তার আখিরাতে পীড়াদায়ক শাস্তির আশঙ্কা করছি । তুমি কি আল্লাহ তায়ালার বাণী শুননি ।“যারা তাঁর নির্দেশের বিরোধীতা করবে তারা যেন সতর্ক হয় তাদেরকে ফিতনা পেয়ে যাওয়া বা তাদেরকে পীড়াদায়ক শাস্তি গ্রাস করা থেকে” (সূরা আন-নূর : ৬৩ ।)১৪. বিদ’আতের অন্যতম ভয়াবহতা কারণ এই যে: সহীহ সুন্নাহ , তার ধারক – বাহক ও তার উপর আমলকারীকে বিদ’আতী ঘৃণা করবে এবং তাকে মন্দ জানবে ।১৫. বিদ’আতী নিজেকে শরী’আতের মধ্যে কিছু সংযোজনকরী হিসাবে প্রকাশ করে : অথচ আল্লাহ তা’আলা তাঁর দ্বীনকে তাঁর বান্দাদের জন্য পূর্ণ করে দিয়েছেন । “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামাতকে সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে ধর্ম হিসাবে পছন্দ করলাম ।” (সূরা মায়েদা /৩)১৬. বিদ’আত হচ্ছে জ্ঞান ছাড়া আল্লাহর ব্যাপারে কথা বলা : শরী’আতের মধ্যে নিজের পক্ষ থেকে কিছু বানিয়ে বললে তা যে কতই ভয়ানক সেটি অনুধাবন করা যায় আল্লাহ কর্তৃক তাঁর নবী (সাঃ) কে সম্বোধন করে বলা নিম্নোক্ত কঠোর ভাষার আয়াতগুলিতে :“সে যদি আমার নামে কোন কিছু রচনা করতো , তাহলে আমি তার ডান হাত ধরে ফেলতাম , অতঃপর তার গ্রীবা কেটে দিতাম তোমাদের কেউ তাকে রক্ষা করতে পারতো না” (সূরা আল-হাক্কাহ : ৪৪-৪৭) ।রাসূল (সাঃ) কেও নিজের পক্ষ হতে কিছু বনিয়ে বলার অনুমতি দেয়া হয়নি , এ আয়াত তার জাজ্বল্য প্রমাণ । তেমন তিনি তাঁর নিজের পক্ষ থেকে কিছু বলতেন না । আল্লাহ তা’আলা বলেন :“আর তিনি নিজ ইচ্ছায় কিছু বলেন না , যতক্ষণ না তাঁর নিকট ওহী নাযিল হয়” (সূরা আন-নাজম:৩-৫) ।১৭. বিদ’আতীর জ্ঞান উলট-পালট হয়ে তার নিকট সব কিছুই গোলমেলে হয়ে যায় : ফলে সে বিদ’আতকে সুন্নাত আর সুন্নাতকে বিদ’আত মনে করে ।অতএব বিদ’আতের ভয়াবহতা হতে রক্ষা পেতে হলে , আমাদের মাঝে প্রচলিত বিদ’আতগুলো হতে সতর্ক হয়ে সেগুলোকে পরিত্যাগ করে সহীহ সুন্নাহ মাফিক আমল করা ছাড়া আখেরাতে মুক্তির জন্য আমাদের সামনে আর কোন বিকল্প পথ খোলা নেই । আসুন আমরা দুর্বল ও বানোয়াট হাদীসগুলো জেনে সেগুলো পরিত্যাগ করি এবং সহীহ হাদীসের উপর ভিত্তি করে আমাদের জীবন গড়ি ।• বিদ’আতের সাথে জড়িত হওয়ার কারণগুলো নিম্নরুপ :১. কুরআন , সুন্নাহ ও আরবী ভাষা সম্পর্কে অজ্ঞ���া ।২. অতীতের সত্যানুসারী ব্যক্তিগণের মত ও পথের অনুসরণ না করা ।৩. প্রবৃত্তি বা মনোবৃত্তির অনুসরণ করা ।৪. সন্দেহমূলক বস্তুর সাথে জড়িত থাকা ।৫. শুধুমাত্র স্বীয় বুদ্ধির উপর নির্ভর করা ।৬. বড় বড় আলেমের উদ্ধৃতি দিয়ে তার অন্ধ অনুসরণ করা , যা গোঁড়ামির দিকে নিয়ে যায় । আর তখনই সে ��ুরআন ও সুন্নাতের দলীলগুলোকে অমান্য করে ।৭. মন্দ লোকদের সংস্পর্শে থাকা ও চলা । পাঠক ভাই ও বোনেরা ! যে ব্যক্তি উপরোক্ত আলোচনা বুঝতে সক্ষম হবেন , আমার মনে হয় সে ব্যক্তি নিজেকে বিদ’আত ও তার ভয়াবহত হতে রক্ষার্থে এখন থেকে যাচাই – বাছাই করে পথ চলবেন । যাতে করে অসতর্কতা বশতঃ বিদ’আতের মধ্যে জড়িয়ে না যান । যে আমলই আমরা করি না কেন তা যাচাই – বাছাই করেই করা উচিত । কারণ হতে পারে বহু আমল আমার , আপনার জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে যেগুলো দুর্বল বা বানোয়াট হাদীসের উপর নির্ভরশীল ।রসূল (সাঃ) এর নিম্নোক্ত বাণী কোন ব্যক্তির ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না : “আমার এ নির্দেশের মাঝে যে ব্যক্তি এমন কিছু নবাবিষ্কার করবে যা তার অন্তর্ভুক্ত ছিল না , তা পরিত্যজ্য ।” (বুখারী হা/২৬৯৭ ; মুসলিম হা/৩২৪২ ; আবু দাউদ হা/৩৯৯০ ; ইবনু মাজাহ হা/১৪)তিনি আরও বলেন : “যে ব্যক্তি এমন আমল করল যার উপর আমার কোন নির্দেশ নেই সে আমলটি অগ্রহণযোগ্য ।” (মুত্তাফাকুন আলাইহি হা/৩২৪৩ )।অতএব আমরা কার স্বার্থ রক্ষার্তে তথাকথিত হুজুরদের ধোঁকায় পড়ে নবী (সাঃ) হতে সহীহ সনদে বর্ণিত হাদীসগুলো ছেড়ে দিয়ে নিজেদেরকে বিপদগামী করব ?আসুন ! আমরা রাসূল (সাঃ) এ শাফায়াত প্রাপ্তির প্রত্যাশায় নিজেদেরকে তাঁর সহীহ সুন্নাহমুখী করি । আর অনুধাবন করি নিম্নোক্ত হাদীসটি । কারণ একমাত্র তাঁর সহীহ সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার বিষয়টি যে কত বড় গুরুত্বপূর্ণ এটি তারই প্রমাণ বহন করছে :রাসূল (সাঃ) বলেছেন : “সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার আত্মা যদি মূসা (আঃ) জীবিত থাকতেন তাহলে আমার অনুসরণ করা ছাড়া তার আর কোন সুযোগ ছিল না ।” (মুসনাদ ইমাম আহমাদ হা/১৪৬২৩ )।অতএব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের সার্বিক কল্যাণ একমাত্র রাসূল (সাঃ) এর আদর্শের মধ্যেই আমাদেরকে খুঁজে নিতে হবে ।আসুন ! আমরা জাল ও য’ঈফ হাদীসগুলো জানি এবং তথাকথিত হুজুরদের জাল ও য’ঈফ হাদীস নির্ভর ফতোয়া ও আক্বীদাহ হতে নিজেদেরকে মুক্ত করি । আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর ও তাঁর নবীর যথাযথ অনুসরণ করার তাওফীক দান করুন । আমীন ।সূত্র: কুর'আনের আলো
0 notes
bartatv-blog · 6 years
Photo
Tumblr media
রোজার মূল উদ্দেশ্য কী মহান রাব্বুল আলামিন তার পবিত্রগ্রন্থ আল-কুরআনে এরশাদ করেছেন- ‘ও মানুষেরা তোমরা যারা ঈমান এনেছ, রোজা অর্থাৎ রমজান মাসের রোজা তোমাদের ওপর ফরজ করা হয়েছে, যেমনটা ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির লোকদের ওপর; যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার বা মোত্তাকি হতে পার’। ‘আস-সউম’ শব্দের অর্থ হলো- রোজা বা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিরত থাকা। এটা হলো সাধারণ অর্থ। বাহ্যিক অর্থ এবং এই বাহ্যিক শব্দের মধ্যে তাকওয়া খুঁজে পাওয়া যাবে না, শুধু রোজা রাখা হবে, ক্ষুদার্ত ও তৃষ্ণার্ত থাকা হবে। কিন্তু এই শব্দের আরেকটি অর্থ আছে, যাকে বলে অভ্যন্তরীণ বা ভেতরের অর্থ অথবা বলা যায় কুরআনিক অর্থ। যার মানে হলো- আল্লাহর জন্য রমজানের ফরজ রোজার নিয়তে সেহরি খাবেন। তারপর, ফজরের আজান থেকে নিয়ে মাগরিবের আজান পযর্š— কোনো প্রকার খাদ্য গ্রহণ না করা, স্ত্রীর কাছে না যাওয়া, খারাপ কথা না বলার নাম হলো রোজা। সেই তাকওয়া অর্জন করার জন্য রোজা রাখার নিয়ম আল্লাহর রাসূল সা: এভাবে বলেছেন, যে রোজা আমাদের তাকওয়া দিবে, সংশোধন করবে, পরহেজগার বানাবে ও সম্মানের সাথে পৃথক দরজা দিয়ে জান্নাতে যাওয়ার সুযোগ করে দেবে; সেই ধরনের রোজা রাখতে হলে প্রথমে আমাদের রোজা রাখার নিয়তে সেহরির সময়ে সেহরি খেতে হবে। আল্লাহর রাসূল সা: বলেছেন- ‘তোমরা সেহরি খাও, কেননা সেহরি খাওয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে’(বুখারি-মুসলিম)। সেহরি না খেলে আপনার রোজা হয়ে যাবে কিন্তু সেহরির সওয়াব থেকে আপনি বঞ্চিত হবেন। সুতরাং, সেহরির সময় সেহরি খেয়ে আপনি নিয়ত করেন। ফজর পড়েন এবং জামায়াতে পড়তে চেষ্টা করেন। তারপর হাতে বেশি সময় থাকলে একটু ঘুমুতে যান। আর কম সময় থাকলে কিছু সময় কুরআন তিলাওয়াত করেন। বাজে ও মিথ্যা কথা, ধোঁকাবাজী এবং এই ধরনের যাবতীয় গুনাহের কাজ থেকে আপনাকে বেঁচে থাকতে হবে। আপনার চোখ, হাত পাসহ আপনার শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কিন্তু রোজা রেখেছে, সেটা আপনার মাথায় থাকতে হবে। তাই আপনি অফিস আদালতে এমন কোনো কাজ করতে পারবেন না, যা হালাল নয় বা যা অন্যের ক্ষতি করে। ইসলামি শরিয়তে রোজা রাখা মানে সমস্ত শরীরের রোজা রাখা। ইফতারির আগমুহূর্তে দোয়া কবুল হয়। এভাবে যখন আপনি-আমি পূর্ণ একমাস রোজার হক আদায় করে রোজা রাখব, তখন দেখবেন ইন’শা আল্লাহ আমাদের মধ্যে পরিবর্তন আসবে। এই পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা আগামী ১১ মাস তাকওয়ার সাথে জীবনযাপন করতে পারব। ইসলামের এত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদাত রমজান মাসের রোজাগুলো যাতে সঠিকভাবে রোজার হক আদায় করে পালন করা যায়, সেজন্য আল্লাহর রাসূল সা: একটি হাদিসের মাধ্যমে আমাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছেন। হুজুর সা: বলেছেন- ‘যখন তোমাদের মধ্যে কেউ কোনো দিন রোজা রাখে, তখন রোজা অবস্থায় সে যেন কখনো খারাপ ভাষা, চিৎকার, গালিগালাজ, অপ্রয়োজনীয় তর্কে জড়িয়ে না পড়ে। কেউ যদি তার সাথে গায়ে পড়ে ঝগড়া করতে চায় বা তর্কে লিপ্ত করতে চায় তাহলে সে যেন বলে, ভাই আমাকে ক্ষমা করবেন, আমি রোজা রেখেছি। (বুখারি -মুসলিম) রোজার উদ্দেশ্য হলো- তাকওয়া অর্জন। যেটার জন্য আল্লাহ রোজাকে ফরজ করেছেন। তাই রমজান মাসের সব আমল- সেহরি, ইফতার, তারাবিহ, খতমে কুরআন, তাহাজ্জুদ, সদাকাতুল ফিতর ও ঈদের আনন্দ এ সব ইবাদাতের আগে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে, এগুলো করার পেছনে উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জন করা। সুতরাং, রোজা অবস্থায় আমাদের কোনো অহেতুক কথা বা ঝগড়ায় জড়ানো মোটেই ঠিক নয়। এভাবে আমরা রোজা রাখার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করতে পারব ইন’শা আল্লাহ। লেখক : প্রবাসী, ভার্জিনিয়া, ইউএসএ আরো পড়ুন : রমজান মানুষকে কল্যাণের পথে নিয়ে যায় সালমা সাহলি ইসলামের পাঁচটি রোকনের মধ্যে সাওম চতুর্থ এবং অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি রোকন বা স্তম্ভ। যা ফরজ করা হয়েছে মুসলমানের জন্য। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যাতে তোমরা পরহেজগারিতা অর্জন করতে পারো।’ (সূরা বাকারা-১৮৩)। মহান আল্লাহ তার সৃষ্টি মানবজাতির পথপ্রদর্শনের জন্য এই মাসেই পবিত্র কুরআন নাজিল করেন। এই মাসের শেষ দশকে রয়েছে এক মহিমা¤িœত রাত, যা হাজার মাসের (ইবাদতের) থেকে উত্তম; আল্লাহ তায়ালা যাকে লাইলাতুল কদর বলেছেন। পূর্ণ মর্যাদাসম্পন্ন এই মাসের গুরুত্ব সম্পর্কে কুরআনে বেশ কয়েকটি আয়াত অবতীর্ণের পাশাপাশি অনেক হাদিসও বর্ণিত হয়েছে। যেমন, হজরত আবু হুরায়রা রা: হতে বর্ণিত- আল্লাহর রাসূল সা: বলেন, সিয়াম ঢাল স্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না, মূর্খের মতো কাজ করবে না। যদি কেউ তার সাথে ঝগড়া করতে চায়, তাকে গালি দেয় তবে সে যেনো বলে, আমি রোজাদার। ওই সত্তার শপথ; যার হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই সাওম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিসকের সুগন্ধির চাইতেও উৎকৃষ্ট। আল্লাহ বলেন, সে আমার জন্য পানাহার ও কামাচার পরিত্যাগ করে, সিয়াম আমারই জন্য, আমি নিজেই এর পুরস্কার দান করব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশগুন, (বুখারি, মুসলিম, আহমেদ)। ১) পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে আল্লাহমুখী হয়ে রমজান মাসের রোজা পালন এবং একনিষ্ঠ ইবাদতের নিয়ত করা। ২) এই মাসে বেশি বেশি ইবাদতের জন্য সময় বের করার লক্ষ্যে দুনিয়াবি ব্যস্ততা কমিয়ে ফেলা। এ জন্য যতটুকু সম্ভব রোজা শুরু হওয়ার পূর্বেই দফতরিক কাজসহ প্রত্যেকে তার নিজ পেশা অনুযায়ী কিছু কাজ সেরে রাখা উচিত। রোজার সময় অনেক পরিবারে মহিলাদের কাজ বেশি থাকে। কিছু কাজ তারা সংক্ষিপ্ত করতে পারেন। ৩) আগের সব গুনার জন্য লজ্জিত হয়ে তাওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমে তা থেকে ফিরে আসা। খাঁটি দিলে তাওবাহকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন। ইচ্ছা এবং অনিচ্ছাকৃত করা সব পাপ থেকে নিজেকে সরিয়ে এনে তার বদলে বেশি করে নফল ইবাদত করা। কেননা হাদিসে এসেছে, ভুলে কেউ একটি পাপ করে ফেললে সে যেনো একটি পুণ্য করে নেয়। বেশি ইবাদত পাপকে মিটিয়ে দেয়। ৪) পুরুষেরা পাঁচ ওয়াক্ত সলাত মাসজিদে জামাতে আদায় করা এবং মহিলারা আওয়াল সময় খুসুখুজর সাথে সলাত পড়া। আমাদের আরো বেশি সচেতন এবং যতœবান হতে হবে সলাতের ব্যাপারে। প্রত্যেকটা রোকন পালন করে ধীর-স্থিরতার সাথে সলাত আদায় করা খুবই জরুরি। হাদিসে দ্রুত সলাতকে মোরগের ঠোকর দেয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে। এমন সলাতকে তার মুখে ছুড়ে মারা হবে এমন সাবধানবাণীও এসেছে। ৫) রমজান মাস কুরআন অবতীর্ণের মাস। নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত, কুরআন শিক্ষা করা, শিক্ষা দেয়া খুবই মর্যাদাপূর্ণ একটি আমল। কুরআন বুঝে পড়ে আমল করার মর্তবা অপরিসীম। এ বিষয়ে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা স্বয়ং বেশ কিছু আয়াত নাযিল করেছেন। যেমন, (ক) শুদ্ধ ও যথাযথভাবে কুরআন তিলাওয়াত প্রসঙ্গে, আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি, তারা তা যথার্থভাবে পাঠ করে। তারাই তার প্রতি ঈমান আনে। আর যে তা অস্বীকার করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত’ (সূরা বাকারাহ, আয়াত- ১২১)। (খ) কুরআন নিয়ে চিন্তা গবেষণা করা প্রসঙ্গেÑ ‘আমি তোমার প্রতি নাজিল করেছি এক বরকতময় কিতাব, যাতে তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে এবং যাতে বুদ্ধিমানগণ তা অনুধাবন করে’ (সূরা সোয়াদ, আয়াত- ২৯)। ৬) কিয়ামুল লাইল বা তারাবির সলাত পড়া। তাড়াহুড়া করে বা যেনোতেনোভাবে অনেক বেশি সালাত পড়ার থেকে শুদ্ধ ও তারতিলের সাথে দীর্ঘ সূরা পড়ে কবুলযোগ্য আট-দশ রাকাত সলাত পড়া অনেক উত্তম। সলাতের প্রতি সবার বিশেষভাবে যতœবান হওয়া জরুরি, হোক তা জামাতের সাথে ফরজ সলাত কিংবা ঘরে একাকী সুন্নত বা নফল সলাত। ৭) সময়মতো নিয়ত করা, সেহরি খাওয়া এবং সময়মতো ইফতার করা। ফরজ সিয়ামে নিয়ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সময়মতো এবং অন্তর থেকে নিয়াত করা শর্ত। শেষ রাতে সেহরি খাওয়া উত্তম এবং এতে বরকত রয়েছে। সূর্য অস্তমিত হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করার নির্দেশ এসেছে হাদিসে। সবাই একসাথে ইফতার করা উচিত। ৮) জাকাতুল মাল ও বেশি বেশি সদাকা করা। নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তার যাকাত বের করে সময়মতো পরিশোধ করা ফরজ। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে যাকাতের স্থান তৃতীয়। যাকাত অন্যের হক। কুরআনে বার বার সলাতের পর যাকাতের প্রসঙ্গটি এসেছে। রমজান মাসে যেহেতু সব ভালো কর্মের প্রতিদান বেশি, তাই এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে বেশি বেশি দান করা উচিত। ৯) কল্যাণকর কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা। রামাদানের প্রত্যেকটি মুহূর্তকে ফলদায়ক করাতে নিজেকে সচেষ্ট হতে হবে। আল্লাহর শুকরিয়া আদায়, দ্বীনের দাওয়াতি কাজসহ অন্যের প্রয়োজনে এগিয়ে যাওয়া এবং সর্বক্ষণ জিকিরের মাঝে নিজেকে নিয়োজিত রাখুন। পরিবারের বয়সীদের সেবাযতœ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সহজ, বিশেষ করে পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং জান্নাত পাওয়া সহজ হয়। ১০) লাইলাতুল কদর সন্ধান করা।‘সূরা কদর, আয়াত ১-৫। এ ছাড়া সূরা দুখানের তিন নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন- ‘নিশ্চয় আমি একে (কুরআান) এক বরকতময় রাতে নাজিল করেছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী’। এ থেকে বুঝা যয়, এই রাতটি কতটা মহিমান্বিত। এই রাত যেনো হারিয়ে না যায় সেই জন্যে এই রাতের সন্ধানে ইতিকাফ করা উচিত এবং তা করা সুন্নত।. ১১) ওমরা করা। এই মাসে উমরা পালন করার কথা হাদিসে এসেছে যা গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদাত। ১২) রোজা রাখা অবস্থায় সব রকম পাপ থেকে বেঁচে থাকা। আমাদের সমাজে কিছু অন্যায় অহরহ করা হয়। অনেকে রোজা অবস্থায়ও এসব থেকে মুক্ত হতে পারে না। বিশেষ করে জিহবা দ্বারা সংঘটিত পাপ। উল্লিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করে এবং বাস্তবায়িত করতে পারলে আশা করা যায়, রামজান মাসটিকে আমরা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে সক্ষম হবো ইন’শা আল্লাহ। রাসূল সা: বলেন, যে রমজান মাস পেলো অথচ নিজের গুনাহ মাফ করিয়ে নিতে পারল না, সে সব কল্যাণ থেকে বঞ্চিত। তাহলে আসুন আমরা সচেষ্ট হই রমজানের আদব রক্ষা করে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত এবং তাওবাহ ইস্তেগফারের মাধ্যমে গুনাহ মাফ করিয়ে তার নৈকট্য অর্জনে কামিয়াব হতে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমিন।
0 notes
Photo
Tumblr media
সিয়ামের একটা গুরুত্বপূর্ণ দাবি। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :— من لم يدع قول الزور والعمل به والجهل، فليس لله حاجة أن يدع طعامه وشرابه . رواه البخاري যে মিথ্যা কথা ও কাজ এবং মূর্খতা পরিত্যাগ করতে পারল না তার পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। বর্ণনায় : বোখারি হাদিসটি দ্বারা স্পষ্ট বুঝে আসে যদি মূর্খতা পরিহার না করা হয় তবে সিয়াম আল্লাহর কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। আর মূর্খতা ত্যাগ করা যাবে শুধু শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে।
0 notes