Don't wanna be here? Send us removal request.
Text
উন্নয়ন এর জোয়ারে দেশ ও দশ।
আব্বু ফোনে জানালো বারান্দা পর্যন্ত পানি উঠছে, এখনো রুমে ঢুকে নাই। কণ্ঠে বিরক্তি স্পস্ট। আমাদের বাড়ি আশপাশের সব বাড়ি থেকে উঁচু, নতুন করে ঘর তোলার সময় বেশি উঁচু হয়ে যাচ্ছে বলে আমি বিরক্ত হইছিলাম। সেই বাড়ির বারান্দায় পানি উঠা মানে ভয়াবহ অবস্থা।
বাট এই অবস্থার সাথে আমাদের পরিচয় আছে, ছোট বেলায় দেখছি দুই চার বছর পর পর বড় বন্যা হতো। নৌকা থেকে ডাইরেক্ট বিছানায় উঠে বসার অভিজ্ঞতা আছে আমার। বিছানায় বসে মাছ ধরারও। তবে আব্বুকে বিরক্ত হইতে দেখি নাই। সেইসব বন্যা নিয়ে তেমন অভিযোগও শুনি নাই। স্কুলে বন্যা নিয়ে লেখা রচনায় বন্যার উপকারিতা লেখছি, জমি উর্বর হয়, ময়লা পরিষ্কার করে আর অনেক মাছ খাওয়া যায়। সেই বন্যা এমন অভিশাপ হয়ে দেখা দিলো কিভাবে? গল্পটা সবার জানা, তাও লিখি আবার;
নদী পাড়ের আর নিচু এলাকার মানুষ বন্যাকে কখনো সমস্যা হিসাবে দেখে নাই কখনো, তারে নিয়ন্ত্রণ বা উন্নয়ন করার চিন্তা করে নাই (পানি উন্নয়ন বোর্ড ? সিরিয়াসলি? পানির কেমনে উন্নয়ন হয় ভাই)। বন্যার সাথে, পানির সাথে কিভাবে আডাপ্ট করা যায় সেই চেষ্টা করতো।বর্ষা শুরুর আগেই গ্রামে বাড়ি বাড়ি বন্যার প্রস্তুতি শুরু হতো। চৈত্র, বৈশাখ মাসে মা চাচিরা কাদা মাটি দিয়ে পোটেবল চুলা বানাতো, চৈত্রের কড়া রোঁদে সেগুলা ইটের মত শক্ত হয়ে থাকতো। ধান মাড়াইয়ের কাজ শেষ হলে কিছুটা অবসর মিলত, সেই সময় টা শুকনা খাবার, ধানের চিড়া, মুড়ি, চালের চিড়া এইসব করে টিনের কৌটা ভরে রাখতো। প্রায় সব বাড়িতে নৌকা ছিল, বর্ষার শুরুতে পুরানা নৌকা নামিয়ে ঠিক ঠাক করা, জাল বোনা ছিল খুব পরিচিত দৃশ্য। বাঁশ দিয়ে উঁচু মাচা বানানো, ধানের গোলা ঠিক ঠাক করা এইসব ছিল বন্যার প্রস্তুতি। তারপর পানির জন্য অপেক্ষা। পানি আসতো স্বাভাবিক নিয়মে, বাড়তও স্বাভাবিক ভাবে। এই পর্যায়ের প্রস্তুতি নির্ভর করতো পানির মতিগতির উপর। পানি দ্রুত বাড়ছে তারমানে ঘরে চলে আসার চান্স বেশি, মূল্যবান জিনিস পত্র যা আছে সেগুলো সরাতে হবে, উঁচু এলাকার আত্মীয়ের বাড়ি। ধানের গোলায় পানি যাওয়ার চান্স আছে সবাই মিলে গোলার ধান বস্তা ভরে নৌকা বাজারে পাঠায়ে দেয়া। আমাদের তখন সারাদিন ঈদ। কলা গাছে ভেলা তো আছেই, নজর বাড়ির সামনে ঘাটার দিকে, কেউ কি নৌকা নিয়ে আসলো? নৌকা রেখে গেছে? এই তাইলে সুযোগ একটু পাশের পাড়া থেকে ঘুরি আসি নৌকা নিয়ে।
পানি কমা শুরু হলে শুরু হতো মাছ ধরা। মুঠ জাল, কারেন্ট জাল, চটকা জাল, দারকি, ধিয়াল, ল্যাটা, বড়শি, হেন কোন মাছ মারার উপায় নাই যেটা আমরা করতাম না। মাছ ধরে বাড়ি নিয়ে এসে মাঝে মাঝে মাইর ও খাইতাম মায়ের হাঁতে। এত মাছ কাটা, পরিষ্কার করা, রান্না করা সবথেকে বড় কথা এত মাছ খাবে কে? ছোট বেলায় যে পরিমাণ ও ধরণের মাছ ধরছি ঢাকার কোন ছেলে মেয়ে ওঃই পরিমাণ মাছ সারা জীবনেও দেখবে না। গ্রামের মানুষের সারা বছরের আমিষের ৮০ ভাগ পূরণ হতো এই দুই মাসে। বন্যা ছিল একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। সুবিধা আর অসুবিধা দুইটাই ছিল স্বভাবিক, মানুষের চিন্তার ভিতর, আয়ত্ত এর ভিতর।
এরপর আসলো পানি উন্নয়ন বোর্ড, তারা পানির ব্যাপক উন্নয়ন করলো। এমন উন্নয়ন করলো যে হুট করে বন্যা হওয়া বন্ধ হয়ে গেলো। যে বিলে বন্যার সময় ১০ ফিট পানি থাকতো সেই বিলে আমরা ফুটবল খেলি। পানি নাই, মাছ নাই, বন্যা নাই। এক বছর, দুই বছর। পোটেবল চুলা পরে থাকে, নৌকায় ঘুণ ধরে নষ্ট হয়ে যায়, জাল ফেলার পানি নাই। চারদিকে নতুন নতুন রাস্তা। পানি ঢোকার, বেরোনোর উপায় নাই। মানুষের মনে ধীরে ধীরে বিশ্বাস তৈরি হয় বন্যা খারাপ জিনিস, এটারে বন্ধ করা গেছে। আপ�� গেছে। আপদ যখন গেছে তখন আপদ কালীন প্রস্তুতির আর কি দরকার।
কারো বাড়িতে আর নৌকা নাই। জাল নাই।শুকনা খাবার বানানোর দরকার নাই। দুই চার বছর এমনি গেলো। তারপর শুরু হলো খেলা, প্রতিবছর বাঁধ ভাঙ্গে, এই এলাকা হুট করে ঢুবে যায়, ওই এলাকার মানুষ ভাবে আমরা সেইফ, নাক ডেকে ঘুমায় রাতে, সকালে উঠে দেখে হাঁটু পানি ঘরের ভিতর। মানুষের কোন প্রস্তুতি নাই। ফলে হুট করে ঢুবে গেলে কুল কিনারা পায় না। ক্ষয়ক্ষতি মারাত্মক। সামাস্য দুটা চিড়া মুড়ির জন্য হাত পাততে হয়।
হাজার বছর ধরে মানুষের অভিজ্ঞতা লব্ধ জ্ঞান কোন চ্যাংড়া ইঞ্জিনিয়ার যখন এক কথায় বাতিল করে দেয় তখন ঝামেলা লাগে।
মানুষের মনে ' আর বন্যা হবে না' এমন ফলস কনফিডেন্স যারা তৈরি করছে, বন্যার ক্ষয়ক্ষতির জন্য তারা প্রথমে দায়ী। কয়েকদিন আগে এক ভদ্রলোকের কথা খুব মনে ধরছে ' বন্যার জন্য পানি দায়ী না, দায়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড'।
সংগৃহীত

#Banglasesh #new #old #us #development #knowledge #is #power
1 note
·
View note