nabeelonusurjo-blog
nabeelonusurjo-blog
নাবীল অনুসূর্য
98 posts
প্রেম ও প্রগতির প্রদীপ প্রজ্বলনে প্রয়াসী
Don't wanna be here? Send us removal request.
nabeelonusurjo-blog · 8 years ago
Text
সবচেয়ে উঁচু গাছ কোনটা? কিংবা সবচেয়ে মোটা গাছ? প্রশ্ন দুটো শুনতে বেশ নিরীহ মনে হলেও, এর উত্তর দেয়াটা কিন্তু অতটাও সহজ নয়। কারণ আর কিছুই নয়, হিসেবের গোলমাল।
আগে মানুষ গাছের উচ্চতা নির্ণয় করতে যে সব পদ্ধতি ব্যবহার করতো, সেগুলো এখনকার মতো নিখুঁত ছিলো না। তাই বেশিরভাগ সময়েই উচ্চতা মাপতে গিয়ে একটু বেশি-ই মাপা হয়ে যেতো। পরে আধুনিক পদ্ধতিতে মাপার পর, আগেকার হিসেবের সঙ্গে মেলাতে গেলে, প্রায়ই দেখা যায়, হিসেব মিলছে না। নতুন হিসেবে গাছের উচ্চতা কমে গেছে!
গাছের একদম উপরে উঠে ফিতা ঝুলিয়ে উচ্চতা মাপা
লেজার রশ্মি ব্যবহার করে গাছের উচ্চতা মাপা
লেজার রশ্মি ব্যবহার করে গাছের উচ্চতা মাপার যন্ত্র
সব গাছের ক্ষেত্রেই যখন এই সমস্যা দেখা গেল, তখন বিজ্ঞানীরা একটা গড় হিসাব বের করলেন। দেখা গেল, আগে প্রায়ই গাছের উচ্চতা ৫-১৫% বেশি নির্ণয় করা হতো। আর এসব কারণেই সবচেয়ে উঁচু গাছ কোনটা, সে ব্যাপারে কোনো নিশ্চিত সিদ্ধান্ত নেয়া আর সম্ভব না। আগেকার যে সব উঁচু গাছের কথা জানা যায়, সেগুলো যে আসলেও অতো উঁচু ছিলো, নাকি হিসাবে ভুল ছিলো, নাকি মানুষ আবেগের বশবর্তী হয়ে বাড়িয়ে বলতো, তা নিশ্চিত করে বলবে কে?
এখন গাছের উচ্চতা মাপার বেশ কয়েকটা পদ্ধতি চালু আছে। একটা সহজ পদ্ধতি হচ্ছে, গাছের একদম উপরে উঠে ফিতা ঝুলিয়ে দেয়া। কিন্তু অমন উঁচু উঁচু গাছে ওঠা কি আর সহজ কথা! এগুলোর ক্ষেত্রে সাধারণত লেজার রশ্মি ব্যবহার করে গাছের উচ্চতা মাপা হয়। আর গাছের পুরুত্ব, মানে গাছটা কতখানি মোটা, সেটা নির্ণয় করা তো আর তেমন কঠিন নয়।
প্রথমে জটিল প্রশ্নটার মীমাংসা করা যাক- সবচেয়ে উঁচু গাছ কোনটা? সবচেয়ে উঁচু গাছের নাম কোস্ট রেডউড। বৈজ্ঞানিক নাম Sequoia sempervirens। এই গাছের আরও কিছু প্রচলিত নাম আছে- ক্যালিফোর্নিয়া রেডউড, জায়ান্ট রেডউড। নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে, এই গাছ প্রধানত আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়াতে জন্মে। গাছগুলো প্রায় ৩৭৯ ফুট বা ১১৫.৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। দৈত্যাকৃতির এই গাছ বাঁচেও দীর্ঘদিন। এই গাছগুলো বেশি লম্বা, নাকি এদের জীবনকাল বেশি লম্বা, তাই নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতাও হতে পারে। কারণ, ওরা বাঁচে সাধারণত ১২০০-১৮০০ বছর! এটা অবশ্য বিজ্ঞানীদের অনুমান। ওদের জীবনকাল এরচেয়ে লম্বাও হতে পারে।
এতো গেল সবচেয়ে উঁচু গাছের গল্প। কিন্তু সবচেয়ে মোটা গাছ কোনটা? কোস্ট রেডউড এই তালিকাতেও সামনের সারিতেই আছে- দুই নম্বরে। আর তিনে আছে ওরই আরেক আত্মীয়; নাম সিয়েরা রেডউড। বৈজ্ঞানিক নাম Sequoiadendron giganteum। এই সিয়েরা রেডউড আরো একটা নামেও বেশ পরিচিত- জায়ান্ট সিকোয়া। আর এই তালিকার এ�� নম্বরে আছে, মানে পৃথিবীর সবচেয়ে মোটা গাছের তকমার অধিকারী মন্টেজুমা সাইপ্রেস। জন্মে আমেরিকা, মেক্সিকো আর গুয়েতেমালাতে। গাছটির প্রচলিত অন্যান্য নাম- স্যাবিনো, আহুয়েহুয়েতে; আর বৈজ্ঞানিক নাম- Taxodium mucronatum। কতো মোটা হয় গাছটা? স্বাভাবিকভাবেই ১-৩ মিটার! তবে এরচেয়েও মোটা মন্টেজুমা সাইপ্রেসও নাকি দেখা যায়!
এখন তাহলে উচ্চতা আর মোটাপন- দুই হিসাব মিলিয়ে সবচেয়ে বড়ো গাছের তকমা জুটেছে কোন গাছের কপালে? এই তালিকাতে আবার সবার শীর্ষে সিয়েরা রেডউড। দুইয়ে কোস্ট রেডউড, আর তিনে মন্টেজুমা সাইপ্রেস। মানে যাকে বলে, ঘুরে-ফিরে এই তিনটা গাছই দানব গাছের তালিকার সেরা তিন স্থান দখল করে আছে।
সবচেয়ে উঁচু গাছ কোনটা? কিংবা সবচেয়ে মোটা গাছ? শুনতে নিরীহ মনে হলেও, উত্তর দেয়াটা মোটেও সহজ নয়। সবচেয়ে উঁচু গাছ কোনটা? কিংবা সবচেয়ে মোটা গাছ? প্রশ্ন দুটো শুনতে বেশ নিরীহ মনে হলেও, এর উত্তর দেয়াটা কিন্তু অতটাও সহজ নয়। কারণ আর কিছুই নয়, হিসেবের গোলমাল।
0 notes
nabeelonusurjo-blog · 8 years ago
Text
সুষম খাবারের তালিকায় দুধের পরেই আছে ডিম। তাই সবার বাসার খাবার তালিকাতেই মুরগির ডিম থাকে। কিন্তু যদি কাউকে কালো কুচকুচে ডিম খেতে দেয়া হয়, সেটা খাওয়া কি বুদ্ধিমানের কাজ হবে?
এই কালো ডিমটা যদি জাপানের হাকুনে গ্রামের হয়, তাহলে বোধহয় না খাওয়াটাই হবে বোকামি। হাকুনের লোকদের মতে, ওদের গ্রামের এই কালো ডিম খেলে নাকি মানুষের আয়ু বেড়ে যায় সাত বছর। আর দুটো খেলে চৌদ্দ বছর।
হাকুনে গ্রামটি মূলত হাকুনে পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত। এই হাকুনে পর্বত আবার একটা জীবন্ত আগ্নেয়গিরি। আগ্নেয়গিরিটা যে জীবন্ত, তার প্রমাণ ওয়াকুদানি নামের উপত্যকা। তিন হাজার বছর আগে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে উপত্যকাটির সৃষ্টি হয়। আর উপত্যকাটি এখনও রীতিমতো ফুটছে। ওখানকার যতো ঝরনা আর জলাশয় আছে, সব জায়গায় পানি ফুটছে, আর ধোঁয়া উঠছে। পর্যটনের জন্য মোটেও আদর্শ জায়গা নয়। তবু ওখানে নিত্যদিন পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে।
ওখানে পর্যটকরা ভিড় করেন মূলত দুটি কারণে। প্রথমত, পাশেই আছে আরেক আগ্নেয় পর্বত, বিখ্যাত ফুজি। ওয়াকুদানি থেকে ফুজি পর্বত পরিস্কার দেখা যায়। তবে মূল কারণ অন্যটি- কুচকুচে কালো ডিম সিদ্ধ। সিদ্ধ করা হয় ওই ফুটন্ত পানির ঝরনা-জলাশয়গুলোতেই, প্রাকৃতিকভাবে।
এই ডিমগুলো আসলে বিশেষ কোনো ধরনের ডিম না। এগুলো সাধারণ মুরগির সাধারণ ডিমই। সিদ্ধ করার আগে এগুলোর রং সাদাই থাকে। কিন্তু ওয়াকুদানি উপত্যকার ওই ফুটন্ত ঝরনাগুলোতে ফোটালেই হয়ে যায় কুচকুচে কালো। কারণ, ওই আগ্নেয় উপত্যকার পানিতে খনিজ পদার্থের আধিক্য। ওয়াকুদানিতে গেলেই সবার চোখে পরে চারপাশের পানি থেকে উঠতে থাকা ধোঁয়ার আস্তরণ। আর নাকে এসে লাগে পঁচা ডিমের ঝাঁঝালো গন্ধ।
না, ওটা আসলে ডিমের গন্ধ না। সালফারের গন্ধ। ওখানকার আগ্নেয় বাতাসে প্রচুর পরিমাণে থাকে হাইড্রোজেন সালফাইড এবং সালফার ডাইঅক্সাইড। আর ওখানকার আগ্নেয় পানিতে প্রচুর পরিমাণে থাকে সালফার। এই সালফারের কারণেই ওখানকার বাতাসে ঝাঁঝালো পঁচা ডিমের গন্ধ পাওয়া যায়। আর এই সালফারের কারণেই ওখানকার পানিতে সিদ্ধ করা ডিমগুলোর রং হয় কুচকুচে কালো। সাথে একটা অদ্ভুত গন্ধও অবশ্য হয়।
এই ডিমগুলোকে বলা হয় কুরো-তামাগো। আর যেই ওয়াকুদানিতে ডিমগুলো সিদ্ধ করা হয়, সেটা হাকুনে পর্বতের একটা চূড়ায় অবস্থিত। সেখানে যেতে হলে হাকুনে পর্বত বেয়ে পাড়ি দিতে হয় এক কিলোমিটার পথ। এখন অবশ্য একটা রোপওয়েও বানানো হয়েছে। যে ঝরনায় ডিম সিদ্ধ করা হয়, তার পাশেই ডিম খাওয়ার বন্দোবস্ত করা আছে। ডিমের খোসা ছাড়ানোর জন্য আছে কাঠের কতগুলো টেবিল।
সালফার সমৃদ্ধ এই ডিম খেতে যে ওয়াকুদানিতেই যেতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। এই কালো ডিম পুরো হাকুনেতেই জনপ্রিয়। পাওয়া যায় হাকুনের বেশ কিছু দোকানেই। আধা ডজন কালো ডিম বিক্রি হয় ৫০০ ইয়েনে। মানে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সোয়া তিনশ টাকা। মানে প্রতিটা ডিম ৫৫ টাকার মতো।
এই দামকে অবশ্য বেশি বলা যায় না। কারণ একেকটা ডিম মানে তো অতিরিক্ত সাত বছরের আয়ু। সাত বছরের বিনিময় মূল্য হিসেবে পঞ্চান্ন টাকা তো একেবারেই কম, যাকে বলে জলের দর।
কালো কুচকুচে ডিম সিদ্ধ সুষম খাবারের তালিকায় দুধের পরেই আছে ডিম। তাই সবার বাসার খাবার তালিকাতেই মুরগির ডিম থাকে। কিন্তু যদি কাউকে কালো কুচকুচে ডিম খেতে দেয়া হয়, সেটা খাওয়া কি বুদ্ধিমানের কাজ হবে? এই কালো ডিমটা যদি জাপানের হাকুনে গ্রামের হয়, তাহলে বোধহয় না খাওয়াটাই হবে বোকামি। হাকুনের লোকদের মতে, ওদের গ্রামের এই কালো ডিম খেলে নাকি মানুষের আয়ু বেড়ে যায় সাত বছর। আর দুটো খেলে চৌদ্দ বছর। হাকুনে গ্রামটি মূলত হাকুনে পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত। এই হাকুনে পর্বত আবার একটা জীবন্ত আগ্নেয়গিরি। আগ্নেয়গিরিটা যে জীবন্ত, তার প্রমাণ ওয়াকুদানি নামের উপত্যকা। তিন হাজার বছর আগে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে উপত্যকাটির সৃষ্টি হয়। আর উপত্যকাটি এখনও রীতিমতো ফুটছে। ওখানকার যতো ঝরনা আর জলাশয় আছে, সব জায়গায় পানি ফুটছে, আর ধোঁয়া উঠছে। পর্যটনের জন্য মোটেও আদর্শ জায়গা নয়। তবু ওখানে নিত্যদিন পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে। ওখানে পর্যটকরা ভিড় করেন মূলত দুটি কারণে। প্রথমত, পাশেই আছে আরেক আগ্নেয় পর্বত, বিখ্যাত ফুজি। ওয়াকুদানি থেকে ফুজি পর্বত পরিস্কার দেখা যায়। তবে মূল কারণ অন্যটি- কুচকুচে কালো ডিম সিদ্ধ। সিদ্ধ করা হয় ওই ফুটন্ত পানির ঝরনা-জলাশয়গুলোতেই, প্রাকৃতিকভাবে। এই ডিমগুলো আসলে বিশেষ কোনো ধরনের ডিম না। এগুলো সাধারণ মুরগির সাধারণ ডিমই। সিদ্ধ করার আগে এগুলোর রং সাদাই থাকে। কিন্তু ওয়াকুদানি উপত্যকার ওই ফুটন্ত ঝরনাগুলোতে ফোটালেই হয়ে যায় কুচকুচে কালো। কারণ, ওই আগ্নেয় উপত্যকার পানিতে খনিজ পদার্থের আধিক্য। ওয়াকুদানিতে গেলেই সবার চোখে পরে চারপাশের পানি থেকে উঠতে থাকা ধোঁয়ার আস্তরণ। আর নাকে এসে লাগে পঁচা ডিমের ঝাঁঝালো গন্ধ। না, ওটা আসলে ডিমের গন্ধ না। সালফারের গন্ধ। ওখানকার আগ্নেয় বাতাসে প্রচুর পরিমাণে থাকে হাইড্রোজেন সালফাইড এবং সালফার ডাইঅক্সাইড। আর ওখানকার আগ্নেয় পানিতে প্রচুর পরিমাণে থাকে সালফার। এই সালফারের কারণেই ওখানকার বাতাসে ঝাঁঝালো পঁচা ডিমের গন্ধ পাওয়া যায়। আর এই সালফারের কারণেই ওখানকার পানিতে সিদ্ধ করা ডিমগুলোর রং হয় কুচকুচে কালো। সাথে একটা অদ্ভুত গন্ধও অবশ্য হয়। এই ডিমগুলোকে বলা হয় কুরো-তামাগো। আর যেই ওয়াকুদানিতে ডিমগুলো সিদ্ধ করা হয়, সেটা হাকুনে পর্বতের একটা চূড়ায় অবস্থিত। সেখানে যেতে হলে হাকুনে পর্বত বেয়ে পাড়ি দিতে হয় এক কিলোমিটার পথ। এখন অবশ্য একটা রোপওয়েও বানানো হয়েছে। যে ঝরনায় ডিম সিদ্ধ করা হয়, তার পাশেই ডিম খাওয়ার বন্দোবস্ত করা আছে। ডিমের খোসা ছাড়ানোর জন্য আছে কাঠের কতগুলো টেবিল। সালফার সমৃদ্ধ এই ডিম খেতে যে ওয়াকুদানিতেই যেতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। এই কালো ডিম পুরো হাকুনেতেই জনপ্রিয়। পাওয়া যায় হাকুনের বেশ কিছু দোকানেই। আধা ডজন কালো ডিম বিক্রি হয় ৫০০ ইয়েনে। মানে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সোয়া তিনশ টাকা। মানে প্রতিটা ডিম ৫৫ টাকার মতো। এই দামকে অবশ্য বেশি বলা যায় না। কারণ একেকটা ডিম মানে তো অতিরিক্ত সাত বছরের আয়ু। সাত বছরের বিনিময় মূল্য হিসেবে পঞ্চান্ন টাকা তো একেবারেই কম, যাকে বলে জলের দর।
0 notes
nabeelonusurjo-blog · 8 years ago
Text
চর্যাপদ নিয়ে প্রথম এবং চরমতম কথা হলো, এটা বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম, এবং বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনযুগের একমাত্র নিদর্শন। বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনযুগের এই একটাই নিদর্শন পাওয়া গেছে। তবে তার মানে এই নয়, সে যুগে বাংলায় আর কিছু লেখা হয়নি। হয়তো লেখা হয়েছিল, কিন্তু সংরক্ষিত হয়নি। কেন হয়নি, সেটা পরের আলোচনা।
Tumblr media
আমাদের চর্যাপদ
চর্যাপদ রচিত হয় ৮ম থেকে ১২শ শতকের মধ্যে। এর মধ্যে ঠিক কোন সময়ে চর্যাপদ রচিত হয়, তা নিয়ে বেশ বিতর্ক আছে। একেকজন একেক সময়কালের কথা বলেছেন। অনেক দাবি করেছেন, এর রচনাকাল আরও আগে। তবে মোটামুটি গ্রহণযোগ্য মত এটাই।
চর্যাপদ মূলত বৌদ্ধ সহজিয়া বা বৌদ্ধ তান্ত্রিক সাধকদের সাধন সঙ্গীত। বইটিতে মোট চর্যা বা পদ বা গান আছে ৫১টি। এর মধ্যে ১টি পদের টীকা বা ব্যাখ্যা দেয়া নেই। ৫১টি পদের মধ্যে পাওয়া গেছে সাড়ে ৪৬টি; একটি পদের অর্ধেক পাওয়া গেছে। বাকি ৪টি পাওয়া যায়নি।
চর্যাপদের মোট কবি ২৩ জন। এ নিয়েও বিতর্ক আছে; যেমন অনেকেই বলেন দারিক পা আর দাড়িম্ব পা আলাদা ব্যক্তি। কিন্তু অধিক গ্রহণযোগ্য মত হলো, এই দুইজন একই ব্যক্তি। এভাবে একেকজনের গণনায় কবির সংখ্যা একেকরকম। তবে অধিক গ্রহণযোগ্য মত অনুযায়ী ২৩ জন।
চর্যাপদের প্রাচীনতম কবি সরহ পা। অনেকে দাবি করেন, লুই পা সবচেয়ে পুরনো। তাদের এই ধারণার পক্ষে প্রমাণ, চর্যার প্রথম পদটি তার রচিত। এই প্রমাণের ভিত্তিতে তাকে আদিকবি-ও বলা হয়। কিন্তু পরে এটা প্রমাণিত হয়েছে, চর্যাপদের কবিদের মধ্যে প্রাচীনতম কবি সরহ পা-ই। আর সবচেয়ে বেশি পদ লিখেছেন কাহ্নু পা, ১৩টি। সরহ পা লিখেছেন ৪টি পদ। ভুসুক পা লিখেছেন ৮টি আর কুক্কুরী পা ৩টি। লুই পা, শান্তি পা আর সবর পা লিখেছেন ২টি করে। বাকি সবাই ১টি করে পদ লিখেছেন।
সরহ পা-র ব্রোঞ্জ নির্মিত প্রতিমূর্তি (আনুমানিক)
কুক্কুরী পা-র ছবি (আনুমানিক)
চর্যাপদ কি বাংলায় লেখা?
চর্যাপদ নিয়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় বিতর্ক হল, এটি কোন ভাষায় রচিত। ব্যাপারটা নিয়ে আসলেই বিতর্কের অবকাশ আছে। তবে এই বিতর্কের শেষ হবে বলে ভাবার অবকাশ নেই। আমরা বাংলাভাষীরা যেমন দাবি করি এর ভাষা বাংলা, তেমনি অসমিয়ারাও দাবি করে এর ভাষা অসমিয়া, মৈথিলিরাও দাবি করে এর ভাষা মৈথিলি, উড়িয়ারাও দাবি করে এর ভাষা উড়িয়া। এমনি দাবি করে মগহি, ভোজপুরিয়া আর নেওয়ারিরাও। কেবল হিন্দিভাষীদের দাবিই উড়িয়ে দেয়া যেতে পারে।
সমস্যাটা বুঝতে হলে এই অঞ্চলের ভাষার বিবর্তনের দিকে একটু দৃষ্টিপাত করা জরুরি। যে সময়ে চর্যাপদের পদ বা গানগুলো রচিত হচ্ছে, তখনো বাংলা ভাষা বিবর্তিত হয়ে, এখানকার অন্যান্য ভাষাগুলোর থেকে পুরোপুরি আলাদা হয়ে ওঠেনি। মানে তখনো বাংলা স্বতন্ত্র কোনো ভাষা হয়ে ওঠেনি, বরং স্বতন্ত্র একটি ভাষা হয়ে উঠছে। এর কেবলই কিছু আগে বাংলা ভাষা থেকে আলাদা হয়েছে উড়িয়া ভাষা। তখনো মৈথিলি আর অসমিয়া বাংলা থেকে পুরোপুরি আলাদা হয়ে স্বতন্ত্র ভাষা হয়ে ওঠেনি; মৈথিলি পুরোপুরি আলাদা হয়েছে তের শতকে এসে। অসমিয়া আলাদা হয়েছে ষোল শতকে। এই অঞ্চলের অন্যান্য ভাষাগুলোও বাংলা থেকে পুরোপুরি পৃথক হয়েছে, তখনো খুব বেশিদিন হয়নি। ফলে চর্যার ভাষায় এই সব ভাষারই কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। আর উড়িয়া, মৈথিলি আর অসমিয়া, বিশেষ করে শেষ দুটি ভাষার বৈশিষ্ট্য তো চর্যাপদে বেশ ভালোভাবেই বিদ্যমান। ফলে চর্যাপদের উপর এই ভাষাগুলোর দাবি কোনো ভাবেই নস্যাৎ করে দেয়া যাবে না। তবে এ ব্যাপারে কোনোই সন্দেহ নেই, চর্যাপদ বাংলা ভাষারই সম্পদ।
চর্যাপদের ভাষা সম্পর্কে বেশ ভাল একটা উপসংহার টেনেছেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। তিনি এর ভাষার নাম দিয়েছেন বঙ্গ-কামরূপী, বা প্রত্ন-বাংলা-আসামি-উড়িয়া-মৈথিলি ভাষা।
সন্ধ্যা ভাষা, সন্ধা ভাষা বা আলো-আঁধারির ভাষা
ভাষার প্রসঙ্গ গেল, এখন প্রশ্ন হলো, চর্যাপদ রচনার কারণ কী। এটা আগেই বলা হয়েছে, চর্যাপদ মূলত বৌদ্ধ সহজিয়াদের বা তান্ত্রিকদের সাধন সঙ্গীত। কিন্তু এই বৌদ্ধ সহজিয়া কারা? সেটা বোঝার জন্য এই অঞ্চলের মানুষের বিশ্বাসের বা ধর্মের ইতিহাসের প্রতি আলোকপাত করতে হবে।
এই অঞ্চলের প্রাচীন অধিবাসীদের নিজস্ব ধর্ম বা বিশ্বাস ছিল। সেই বিশ্বাসে প্রথম পরিবর্তন আসে আর্যদের আগমনের ফলে। কিন্তু তখনো বাংলা ভাষার উদ্ভব হয়নি। বাংলা ভাষার উদ্ভবের অনেক আগেই বুদ্ধ এসেছেন, বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তন করেছেন। এই অঞ্চলের মানুষ তখন ছিল মূলত বৌদ্ধ। বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের মোটমাট ১০টি শাখায় বিভক্ত করা হয়, এই শাখাগুলোকে বলা হয় যান। বৌদ্ধ ধর্মের মোট যান দশটি হলেও, মোটা দাগে ধরলে, যান বা শাখা দুটি- মহাযান ও হীনযান বা সহজযান। মহাযানীরা মূলত চীন, জাপান, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়ার অধিবাসী। আর ভারতীয় উপমহাদেশের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা মূলত হীনযানী বা সহজযানী। এই হীনযান বা সহজযানের এক ধারার বৌদ্ধ সাধকরাই আলোচ্য সহজিয়া সাধক বা সহজিয়া তান্ত্রিক।
এই সহজিয়া তান্ত্রিকদের নিজস্ব সাধন সঙ্গীত ছিল, যেগুলোতে গুরুরা তাদের তন্ত্রসাধনার মন্ত্র গোপনে বেঁধে রাখতেন। কেবল যারা তান্ত্রিক সাধনা করে, তারাই সেই মন্ত্র বুঝতে পারবে, অন্যদের কাছে সেটা সাধারণ গানের মতোই অর্থবহ মনে হবে। এই রকম গানেরই উদাহরণ চর্যাপদের পদ বা গানগুলো। গানগুলোর দুটো অর্থ থাকে, একটি সবাই বুঝলেও আসল যে অর্থ, তান্ত্রিক সাধনার গোপন মন্ত্র, সেটা তান্ত্রিকরা ছাড়া অন্যদের পক্ষে বোঝা মুশকিল। অন্তত বুঝতে হলে তান্ত্রিক সাধনা সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান থাকা দরকার। অর্থের এরকম দুর্বোধ্যতা, বোঝা গিয়েও বুঝতে না পারার এই বৈশিষ্ট্যের কারণে এর ভাষাকে বলা হয় সন্ধ্যা ভাষা বা সন্ধা ভাষা। অনেকে একে বলেছেন আলো-আঁধারির ভাষা।
বাংলার পুঁথি নেপালে কেন?
এই রকম আরো গানের দেখা পাওয়া যায় নেপালে-তিব্বতে। ওখানে এগুলো বজ্রা গান নামে পরিচিত। কেন বাংলায় এই গানগুলোর অস্তিত্ব আর নেই, অথচ নেপালে-তিব্বতে এখনো টিকে আছে, তারও একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।
একাদশ শতকের শেষে বাংলায় পাল সাম্রাজ্যের পতন হয় সেনদের হাতে। মানে, বৌদ্ধরাজের পতন হয়, হিন্দুরাজ শুরু হয়। ফলে স্বভাবতই, দেশের বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিধর্মী সম্রাটের প্রতি ভয় কাজ করতে শুরু করে। আর মধ্যযুগে (আধুনিক যুগেও নয় কী?) স্বভাবতই রাজধর্মের বেশ প্রভাব ছিল। ফলে অপেক্ষাকৃত ধনী বৌদ্ধরা চলে যায় উত্তরে, নেপাল-ভূটান-তিব্বতে। আর যাদের সেই সামর্থ্য নেই, তাদের বড়ো অংশই হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে যায়। এদের একটা বড়ো অংশই আবার পরবর্তীতে মুসলিম শাসনামলে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়। বর্তমান বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীর অধিকাংশেরই উত্তরসূরী এই ধর্মান্তরিত শ্রেণী। তো এই ধর্মান্তর ও দেশান্তরের ফলে বাংলায় এই গানগুলোর প্রয়োজনও ফুরোতে থাকে। আর দেশান্তরিত বৌদ্ধদের সাথে বৌদ্ধ তান্ত্রিকদের গানগুলোও চলে যায় নেপালে তিব্বতে। সেখানে যে আগে এই গানগুলোর চর্চা ছিল না, তা নয়। তবে তখন বৌদ্ধদের মূল শিক্ষাকেন্দ্র ছিল বাংলা ও এর আশেপাশের অঞ্চলগুলোতে, এখানকার বৌদ্ধবিহারগুলো। কিন্তু এই পালাবদলের ফলে এই ধারার গানগুলোর স্থানান্তর ঘটল। ফলে বাহন ভাষারও পরিবর্তন ঘটল। এই অঞ্চলের ভাষায় এ ধারার গান রচনা বা গীত হওয়াও বন্ধ হয়ে গেল। এ ধারার গানের বাহন হয়ে উঠল মূলত তিব্বতি ভাষা।
এই একই কারণে চর্যাপদের পুঁথিটি পাওয়া গেছে নেপালে, বাংলায় বা বাংলার আশেপাশে নয়। এবং একই কারণে বাংলায় এ ধরনের আর কোনো পুঁথিও পাওয়া যায়নি। এটা ধারণা করা অমূলক নয় যে, সেই সময়ে বাংলায় এই ধরনের আরও পদ বা গান রচিত হয়েছিল, সেগুলোর বই বা পুঁথিও ছিল। বিশেষ করে মনে রাখা জরুরি, চর্যাপদ কিন্তু একটা সংকলন গ্রন্থের মতো, বাছাই করা পদ বা গানের পুঁথি। মানে সেই সময়ে এই ধরনের আরো পদ বা গান এবং বই বা পুঁথি অবশ্যই ছিল। হয়তো দেশান্তর হওয়ার সময় বৌদ্ধরা সেগুলোও নেপালে-ভূটানে-তিব্বতে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পরে ব্যবহারের ভাষার পরিবর্তন হওয়ায়, বাংলা পুঁথিগুলোও তিব্বতিতে অনুবাদ করা হয়। এরপর আর বাংলা পুঁথি সংরক্ষণ করার প্রয়োজন পরেনি। অন্য দিকে বাংলা ও এই অঞ্চলে হিন্দুরাজ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায়, বৌদ্ধধর্মের আর তেমন চর্চাও হয়নি। ফলে এই অঞ্চলেও সে সব পুঁথি সংরক্ষণ করা হয়নি।
চর্যাপদের যে পুঁথিটি পাওয়া গিয়েছিল, তাতে পদ ছিল সাড়ে ৪৬টি, কিন্তু জানা গেছে চর্যাপদের মোট পদ ৫১টি। এমনকি একটি পদের টীকা করা হয়নি, সেটিও জানা গেছে। কিন্তু কীভাবে? চর্যাপদের তিব্বতি সংস্করণের মাধ্যমে। সেখান থেকেই জানা গেছে টীকাকারের নাম মুনিদত্ত। তিনি সম্ভবত প্রচলিত চর্যাগানগুলো থেকে এই ৫১টি গান বা পদ বাছাই করেছিলেন। এবং সেগুলোর টীকাও করেছিলেন। টীকা করার সময় একটি পদের টীকা করার প্রয়োজন বোধ করেননি।
চর্যাপদ আবিষ্কার
তো সুদূর নেপাল থেকে বাংলা ভাষার এই প্রাচীনতম নিদর্শনটি কীভাবে খুঁজে পাওয়া গেল? সেই আবিষ্কারের কাহিনি শোনার আগে আবিষ্কারের পটভূমি জানা দরকার।
প্রথম যখন স্কুলগুলোতে বাংলা পড়ানো শুরু হলো, পড়ানোর জন্য তখন সম্বল কেবল বিদ্যাসাগর। তার রচিত বর্ণ পরিচয়, বোধোদয়, চরিতাবলী, কথামালা এইসব। তখনো চর্যাপদ কিংবা অন্য কোনো প্রাচীন বাংলা সাহিত্যই আবিষ্কৃত হয়নি। কেবল বিদ্যাসাগর, ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পণ্ডিতদের অনুবাদ গ্রন্থ, কিছু ইংরেজি হতে অনুবাদ- বাংলা সাহিত্য বলতে তখন এগুলোই ভরসা। পরে রামগতি ন্যায়রত্ন প্রথম বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের উপর একটি বই লিখলেন। জানা গেল, বাংলা সাহিত্যে আরো উপাদান আছে- কাশীরাম দাস, কৃত্তিবাস, কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম, এমনি অনেক প্রাচীন সাহিত্যিক বাংলায় লিখেছেন। সেগুলো একেকটি এমনকি ৩শ বছরেরও বেশি পুরাতন। তবে সেগুলোরও বেশিরভাগই অনুবাদ। মূলত সংস্কৃতের অনুবাদ।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য সম্পর্কে কোলকাতার শিক্ষিত বাঙালি সমাজের এমন ধারণা ছিল উনিশ শতকের শেষার্ধ পর্যন্তও। সেই সময়টা আবার ছিল বাঙালির বিকাশের যুগ। বাঙালি তখন ইংরেজিতে শিক্ষিত হচ্ছে। ইংরেজির মাধ্যমে বিশ্বসাহিত্য ও জ্ঞানের নানা শাখায় বিচরণ করতে শুরু করছে। নানা কৌতূহল, জীবন-জিজ্ঞাসা তাকে পেয়ে বসেছে। সে তার অতীত ইতিহাসের ঐতিহ্য ও নানা উপকরণের অনুসন্ধান করতে শুরু করেছে। এই অনুসন্ধানের অংশ হিসেবেই শুরু হয় বৌদ্ধধর্মের ইতিহাস ও সাহিত্য সম্পর্কে অনুসন্ধান।
বাংলার বৌদ্ধরা হিন্দুরাজার আবির্ভাবে বাংলা থেকে পালিয়ে মূলত নেপালে আর তিব্বতে গিয়েছিল। আর তাই বৌদ্ধধর্মের ইতিহাস ও সাহিত্যের অনুসন্ধানও শুরু হলো নেপাল থেকেই। এই উদ্দেশ্যে প্রথম নেপালে যান রাজা রাজেন্দ্র লাল মিত্র। তিনি নেপালে গিয়ে সংস্কৃত ভাষায় রচিত অনেকগুলি বৌদ্ধ ধর্ম ও সাহিত্যের পুঁথি খুঁজে পান। ১৮৮২ সালে তিনি Sanskrit Buddhist Literature in Nepal নামে তার আবিষ্কৃত পুঁথিগুলোর একটি তালিকা প্রকাশ করেন।
কিছুদিন পরেই রাজেন্দ্র লাল মিত্রের পদাঙ্ক অনুসরণ করেন মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। তার ধারণা ছিল, ভারতেই জন্ম নেয়া ও বেড়ে ওঠা বৌদ্ধধর্ম কোনো না কোনো ভাবে এখনো হিন্দু ধর্মের ভেতর থেকে গেছে। বিশেষ করে, তার ধারণা ছিল হিন্দুদের ধর্মঠাকুর এসেছে বৌদ্ধধর্ম থেকেই। কারণ ধর্মঠাকুরের কোনো মূর্তি নেই, বদলে তার মন্দিরে একখণ্ড পাথর থাকে।
তার এই ধারণার সপক্ষে প্রমাণ জোগাড়ের উদ্দেশ্যে তিনি ১৮৯৭-৯৮ সালে দুইবার, আর ১৯০৭ সালে একবার নেপালে যান। তার এই যাত্রাগুলোয় তার মূল উদ্দেশ্য সিদ্ধ হোক বা না হোক, তার শেষ নেপাল যাত্রায় বাংলা সাহিত্যের এক বিশাল উপকার হয়ে যায়। তিনি নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরি থেকে চারটি প্রাচীন পুঁথি আবিষ্কার করেন-
চর্যাপদ
সরোজবজের দোহাকোষ
কৃষ্ণাচার্যের দোহাকোষ
ডাকার্ণব
এইভাবে বাংলাভাষীদের থেকে বহু মাইল দূরের এক অঞ্চল ���েকে আবিষ্কৃত হলো বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন। এই চর্যাপদ আবিষ্কার সম্পর্কে শাস্ত্রী মশাই লিখেছেন- ১৯০৭ সালে আবার নেপালে গিয়া আমি কয়েকখানি পুঁথি দেখিতে পাইলাম। একখানির নাম চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়, উহাতে কতকগুলি কীর্ত্তনের গান আছে ও তাহার সংস্কৃত টীকা আছে। গানগুলি বৈষ্ণবদের কীর্ত্তনের মত, গানের নাম চর্যাপদ।
১৯১৬ সালে তিনি এই চারটি পুঁথি বই আকারে প্রকাশ করেন, হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধ গান ও দোহা নামে, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ থেকে।
নাম কি আসলেই চর্যাপদ?
বইটি প্রকাশের পর এর ভাষা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। সেটার পাশাপাশি শুরু হয় আরেকটি বিতর্ক- বইটার নাম আসলে কী? বিভিন্ন পণ্ডিত বইটির বিভিন্ন নাম বলেছেন। একেকটি নামের জন্য একেকটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সব মিলিয়ে বইটির রচনাকাল, ভাষা ইত্যাদির মতো নাম নিয়েও কোনো  স্থির সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। বইটির প্রস্তাবিত নামগুলোর মধ্যে আছে-
চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়
আশ্চর্য্যচর্য্যাচয়
চর্য্যাশ্চর্য্যবিনিশ্চয়
চর্য্যাগীতিকোষ
এখন, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবিষ্কৃত পুঁথিটির নাম ছিল সম্ভবত চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়। কিন্তু সেটি মূল গ্রন্থ ছিল না। সম্ভবত, শাস্ত্রী আবিষ্কৃত পুঁথিটির লিপিকর মূল গ্রন্থ থেকে পদগুলো, আর টীকাকৃত গ্রন্থ থেকে টীকা নকল করেছিলেন। ফলে মূল গ্রন্থটির নাম এখানে রক্ষিত হয়েছিল, সে স্থির সিদ্ধান্তে আসা যায় না।
আবার অনেকে দাবি করেছেন, চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয় নয়, নামটি ছিল চর্য্যাশ্চর্য্যবিনিশ্চয়। কিন্তু লিপিকরের প্রমাদে তা হয়ে গেছে চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়। কিন্তু চর্য্যাশ্চর্য্যবিনিশ্চয় নামের পক্ষেও কোনো সুনির্দিষ্ট যুক্তি দেখানো যায়নি, যার প্রেক্ষিতে নিশ্চিত করে বলা যায়, বইটির নাম চর্য্যাশ্চর্য্যবিনিশ্চয়-ই ছিল।
আশ্চর্য্যচর্য্যাচয় শব্দটি পুঁথিতে পাওয়া গেলেও, সেটিকে ঠিক নাম হিসেবে গ্রহণ করা যায় না। চর্যাচয় মানে চর্যাসমূহ; এ�� আগে আশ্চর্য বিশেষণ হিসেবে যোগ করে আশ্চর্য্যচর্য্যাচয় শব্দটি গঠন করা হয়েছে। মানে এটি মূলত একটি বিশেষ্য পদ, যেখানে বইটিতে সংকলিত পদ বা গানগুলোর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এটি ঠিক বইয়ের নাম নয়। এটিকে বইয়ের নাম হিসেবে বিবেচনা করলে, পুঁথিটির আরো অনেক শব্দকেই এর নাম হিসেবে বিবেচনা করতে হয়।
অন্যদিকে, চর্যাপদের যেই তিব্বতি অনুবাদ পাওয়া গেছে, এবং তিব্বতি ভাষার অন্যান্য যে সব গ্রন্থে এই বইটির উল্লেখ পাওয়া গেছে, সেগুলোতে গ্রন্থটির নাম বলা হয়েছে চর্যাগীতিকোষ। কাজেই এই নামটিকেই অধিক গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।
তবে বাঙালির কাছে এই খটোমটো নামগুলোর কোনোটিই নয়, বইটি চর্যাপদ নামেই পরিচিত। এই নামেই বইটি বাঙালির হৃদয়ে স্থান পেয়েছে।
নামটি যে কারণেই প্রচলিত হয়ে থাকুক না কেন, এখন মনে হয় বইটির জন্য এই নামটিও কম যথার্থ নয়। কী সহজ একটি নাম, অথচ সে নামে কেমন একটা প্রাচীনত্বের গন্ধও আছে। কেমন আপন মনে হয়, কিন্তু নামটির যে কী অর্থ তা পরিস্কার বোঝা যায় না। ঠিক যেমন চর্যাপদের পদ বা গানগুলো, পড়লে বা শুনলে ভীষণ আপন মনে হয়, মনে হয় আমাদেরই ভাষায় লেখা। কিন্তু ভাষায় কেমন একটা প্রাচীনত্বের আবরণ পড়ানো, বুঝি বুঝি ঠেকলেও মানেটা পরিস্কার বোঝা যায় না।
* প্রবন্ধটিতে চর্যাপদ বিষয়ে অত্যন্ত সহজ ভাষায় একটি সরলীকৃত আলোচনা করা হয়েছে। প্রাচীন এই সাহিত্যকর্ম নিয়ে নানা ধরনের বিতর্ক আছে। সে সব বিষয়ের ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব অধিক গ্রহণযোগ্য মতটিই উল্লেখ করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে মনে রাখা জরুরি, এটি কোনো গবেষণা প্রবন্ধ বা চর্যাপদের উপরে কোনো গভীর আলোচনার প্রয়াসে লিখিত প্রবন্ধ নয়। নিতান্তই সাধারণ পাঠকদের উদ্দেশ্যে লিখিত একটি সরলীকৃত আলোচনা। প্রবন্ধটি পাঠ করার সময় বিষয়টি বিবেচনায় রাখার জন্য পাঠকদের প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ করা হলো।
** ব্যবহৃত ছবি তিনটি wikipedia.org হতে গৃহীত। ছবি সংক্রান্ত সকল কৃতিত্ব ও দায় যুগপৎভাবে এই অনলাইন এনসাইক্লোপিডিয়াটির। তবে যেহেতু ওয়েবসাইটটি যে কেউ এডিট করতে পারে, তাই উৎস হিসেবে ওয়েবসাইটটি নির্ভরযোগ্য নয়। সে কারণেই ছবি তিনটির উৎস পৃথকভাবে উল্লেখ করা হলো।
বাংলা ভাষার প্রাচীনতম এই নিদর্শনটি চর্যাপদ নামেই বাঙালির হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। চর্যাপদ নিয়ে প্রথম এবং চরমতম কথা হলো, এটা বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম, এবং বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনযুগের একমাত্র নিদর্শন। বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনযুগের এই একটাই নিদর্শন পাওয়া গেছে। তবে তার মানে এই নয়, সে যুগে বাংলায় আর কিছু লেখা হয়নি। হয়তো লেখা হয়েছিল, কিন্তু সংরক্ষিত হয়নি। কেন হয়নি, সেটা পরের আলোচনা।
0 notes
nabeelonusurjo-blog · 8 years ago
Text
আমাদের পরিবেশ ও প্রকৃতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হলো গাছেরা। গাছেদের কেন্দ্র করেই প্রাণের ও প্রাণীর সমাবেশ ঘটে। তাই যেখানে গাছ বেশি, বন গভীর, সেখানে প্রাণীদের সংখ্যাও বেশি, বৈচিত্র্যও প্রচুর। তবে গাছেদের নিজেদের মধ্যেও বৈচিত্র্য কম নেই। পৃথিবীতে এমন সব গাছও আছে, যেগুলোকে এমনকি সামনা-সামনি দেখলেও সত্যি বলে বিশ্বাস হতে চায় না। কোনোটা দেখতে এত অদ্ভুত, আবার কোনোটা এমন বিস্ময়করভাবে বেঁচে আছে, আবার কোনোটা এমন অবিশ্বাস্য রকম বড় কিংবা বুড়ো, রীতিমতো পিলে চমকে দেয়ার মতো।
পিরাঙ্গি কাজুবাদাম গাছ (ব্রাজিল)
এই কাজুবাদাম গাছটা বিশ্বের সবচেয়ে বড় কাজুবাদাম গাছ। তবে গাছ না বলে, এটাকে বন বলাই ভালো। বনের মতোই গাছটা শিকড় আর ঝোপঝাড় ছড়িয়ে রেখেছে বিশাল এলাকা জুড়ে। পুরোটা মিলে একটাই মাত্র গাছ। একাই দখল করে আছে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার বর্গমিটার এলাকা! শুধু গাছটার আকার হিসাব করলেও, কমপক্ষে ৩০০×৩০০ ফুট তো হবেই। বছরে এই গাছটায় প্রায় ৮ হাজার কাজুবাদাম ফলে। সেই কাজুবাদামগুলোর আকারও হয় বিশাল বিশাল। ব্রাজিলের নাতালে অবস্থিত এই গাছটাকে কেন্দ্র করে এখন একটা আস্ত পার্কই গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে এমনকি বিদেশিদের জন্য মাইনে করা দোভাষীও আছে।
চ্যাপেল-ওয়ালা ওক গাছ (ফ্রান্স)
অদ্ভুতূড়ে স্থাপত্য গড়তে ফরাসিদের জুড়ি নেই। তারই এক অনন্য নিদর্শন এই প্রার্থণাসভা বা চ্যাপেলটি। ফ্রান্সের বিখ্যাত সিন নদীর তীরের এক ছোট্ট বসতি অ্যালুভিলে-বেলফসে। পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো ওক গাছটিও এখানেই অবস্থিত। গাছটির বয়স কম-বেশি হাজার খানেক বছর। অনেক আগে কোনো এক সময় বজ্রপাতে গাছটি দুভাগ হয়ে গিয়েছিল। পরে সেই গাছটিতেই এক চ্যাপেল তৈরি করেন দুই ফরাসি ভদ্রলোক। তখন থেকেই সেই চ্যাপেল সমেত ওক গাছটি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে। ইদানিং অবশ্য গাছটি মরতে শুরু করেছে। গাছের চূড়াটা দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। বাকলও ঝরতে শুরু করেছে। কিন্তু ঐতিহাসিক স্থাপনা বলে কথা! মরা বাকলের জায়গায় কৃত্তিম বাকল লাগানো হচ্ছে, অন্তত যদ্দিন গাছটা খাড়া আছে, ততদিন যাতে চ্যাপেলটাকে ঠিকঠাক দেখায়, সেই চেষ্টায়।
তা প্রোম মন্দিরের শিমুল গাছ (কম্বোডিয়া)
কম্বোডিয়ার খেমার সভ্যতার শেষ রাজধানী অ্যাংকর থম। এর পাশেই বিখ্যাত অ্যাংকর ভাট মন্দির। এই অ্যাংকর থমের বিখ্যাত স্থাপনাগুলোর একটি তা প্রোম মন্দির। অবশ্য এটা এখন জাঙ্গল টেম্পল নামেই বেশি পরিচিত। কয়েক শ বছর এই মন্দির তো বটেই, পুরো শহরটাই জঙ্গলের অন্তরালে ঢাকা পরে ছিল। আর সেই সুযোগে তা প্রোম মন্দিরকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে বেড়ে উঠেছে এক বিশাল শিমুল গাছ। গাছটার ইয়া মোটা-মোটা শিকড়গুলো মন্দিরটাকে এমনভাবে জড়িয়ে রেখেছে, মনে হয় কোনো বিশাল পৌরাণিক সরীসৃপ মন্দিরটাকে গিলে খাচ্ছে। ব্যাপারটা আসলে বর্ণনা দিয়ে তো নয়ই, ছবি দেখিয়েও বোঝানো অসম্ভব। সম্প্রতি এই গাছ তো বটেই, এই প্রাচীন শহরের পুরোটাকেই অ্যাংকর আর্কেওলোজিক্যাল পার্কের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
ওয়ালেমাই পাইন (অস্ট্রেলিয়া)
না, এই গাছটা দেখতে খুব একটা অদ্ভুত নয়। সুন্দর গাছের তালিকায় আসার তো প্রশ্নই ওঠে না। তবু গাছটা পৃথিবীর সবচেয়ে আগ্রহোদ্দীপক গাছের তালিকার একদম উপরের দিকে থাকবেই। কারণ, গাছটার ইতিহাস। কিছুদিন আগেও বিজ্ঞানীদের হিসেবে ওয়ালেমাই পাইন ছিল ডাইনোসর যুগে বিলুপ্ত হওয়া একটা গাছ। সবচেয়ে নতুন ওয়ালেমাই পাইনের যে ফসিল পাওয়া গিয়েছিল, সেটার বয়সও অন্তত ১২ কোটি বছর! আর তাই ১৯৯৪ সালে যখন সিডনির একটা ন্যাশনাল ফরেস্টে এই জাতের একটা গাছ আবিষ্কৃত হয়, রীতিমতো সাড়া পরে যায়। পরে মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয় ঘটা করে তাদের ক্যাম্পাসে ওয়ালেমাই পাইনের কলম রোপণ করে। গাছটি এখন বেশ বড়সড়ও হয়েছে। আর ডাইনোসরদের চেয়েও পুরনো জাতের এই গাছটাকে নিয়ে দিন দিন বৃক্ষপ্রেমীদের উদ্দীপনাও বেড়েই চলেছে।
রংধনু ইউক্যালিপ্টাস (ফিলিপাইন)
হ্যাঁ, এই জাতের ইউক্যালিপ্টাসদের দেখলে রংধনুর কথাই মনে হবে। কারণ গাছগুলোর কাণ্ডের উজ্জ্বল সব বর্ণের সমারোহ। রীতিমতো চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়ার জোগাড় আরকি। মনে হয় যেন, কোনো খেয়ালি শিল্পী রং করে দিয়েছে। আর এই রঙের ছড়াছড়ির জন্য দায়ী এর বাকলগুলো। এর বাকলগুলো প্রথমে সবুজ হয়েই গজায়। তারপর যত দিন যেতে থাকে, এর রংও বদলাতে থাকে। প্রথমে সবুজ থেকে নীল, তারপর বেগুনী, তারপর কমলা হয়ে শেষে খয়েরি রং ধারণ করে। আর তারপর একদিন টুপ করে ঝরে পরে। এরই মধ্যে নিচে আরেকটা সবুজ বাকল প্রস্তুত হয়ে ওঠে, রঙের খেলা দেখানোর জন্য। এই ভীষণ খেয়ালি আর অদ্ভুত গাছগুলো অবশ্য ফিলিপাইনে স্রেফ শোভাবর্ধনের জন্য লাগানো হয় না। ওখানে এই গাছগুলো ঘটা করে লাগানো হয় মূলত কাগজ শিল্পের প্রয়োজনে।
বাওবাব গাছ (মাদাগাস্কার, অস্ট্রেলিয়া)
সব জাতের বাওবাব গাছই খানিকটা অদ্ভুত। তার মধ্যে মাদাগাস্কার আর অস্ট্রেলিয়ায় কাছাকাছি ধরনের দুই জাতের বাওবাব গাছ আছে, যেগুলো একটু বেশিই অদ্ভুত। একে তো দেখতে কিম্ভূত আকৃতির। ঠিক যেন বিশালাকারের একেকটা চায়ের পাত্র। মাদাগাস্কারের বাওবাব গাছগুলোর তো ডাকনামই হয়ে গেছে টি-পট বাওবাব। তার উপর স্বভাব-প্রকৃতিও ভীষণই অদ্ভুত। বছরের বেশিরভাগ সময়ে এদের পাতা থাকে না। শুকনো সময়ে তো থাকার প্রশ্নই ওঠে না। আর ওদের অদ্ভুত ঘটনাটাও সে সময়েই ঘটে। শুকনো মৌসুমে ওরা ওদের কাণ্ডে পানি জমিয়ে রাখতে পারে।
ওদের এই কাণ্ডগুলো আবার ভীষণই মোটা। দেখলে মনে হয় কারো থলথলে ভুড়ি। এই কাণ্ডগুলো আবার আগুন-প্রতিরোধীও। কোনো কোনো বাওবাব গাছের কাণ্ড এত মোটা, যে মাদাগাস্কারে সেগুলোর কোটরে সত্যি-সত্যিই স্থানীয় আদিবাসীরা বসবাস করতো। অস্ট্রেলিয়াতে অবশ্য ওগুলো বাসা-বাড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হতো না, ওখানে বাওবাব গাছের কোটরে বন্দিদের আটকে রাখা হতো। সোজা বাংলায় যাকে বলে জেলখানা। ৩০ জন বন্দিকে একসাথে আটকে রাখা যেত, এমন বাওবাব গাছও নাকি ছিল। তাই ওখানে এই গাছগুলোর ডাকনাম বাওবাব প্রিজন ট্রি। অস্ট্রেলিয়াতে এই বাওবাব গাছের জেলখানার দেখা মেলে উইন্ডহ্যাম অঞ্চলে। এখন অবশ্য ওগুলো আর জেলখানা নয়, বরং দর্শনীয় বস্তু হয়েই দাঁড়িয়ে আছে।
পৃথিবীতে এমন সব গাছও আছে, যেগুলোকে এমনকি সামনা-সামনি দেখলেও সত্যি বলে বিশ্বাস হতে চায় না। আমাদের পরিবেশ ও প্রকৃতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হলো গাছেরা। গাছেদের কেন্দ্র করেই প্রাণের ও প্রাণীর সমাবেশ ঘটে। তাই যেখানে গাছ বেশি, বন গভীর, সেখানে প্রাণীদের সংখ্যাও বেশি, বৈচিত্র্যও প্রচুর। তবে গাছেদের নিজেদের মধ্যেও বৈচিত্র্য কম নেই। পৃথিবীতে এমন সব গাছও আছে, যেগুলোকে এমনকি সামনা-সামনি দেখলেও সত্যি বলে বিশ্বাস হতে চায় না। কোনোটা দেখতে এত অদ্ভুত, আবার কোনোটা এমন বিস্ময়করভাবে বেঁচে আছে, আবার কোনোটা এমন অবিশ্বাস্য রকম বড় কিংবা বুড়ো, রীতিমতো পিলে চমকে দেয়ার মতো।
0 notes
nabeelonusurjo-blog · 8 years ago
Text
হলিউডের অনেক বিখ্যাত পরিচালককেই ক্যারিয়ারের শুরুতে নানা কারণে ধুঁকতে হয়েছে। কাউকে ধুঁকতে হয়েছে অভাবের তাড়নায়, কাউকে ভুগতে হয়েছে সুযোগের অভাবে। আর সে সব কারণে অনেকেরই প্রথম সিনেমা বেশ বিব্রতকর। তাদের অন্যান্য সিনেমার তুলনায় বেশ দুর্বল। অনেককেই ক্যারিয়ারের শুরুতে বানাতে হয়েছে বি-গ্রেডের সিনেমা। যে ‍সিনেমাগুলোর মূল বৈশিষ্ট্যই হল কম বাজেটের, স্থূল কৌতুকের আদিরসাত্মক সিনেমা। যেগুলোতে প্রায়ই কাহিনির চেয়ে বেশি মনোযোগ দেয়া হয় মেয়েদের শরীর আর যৌন-ইঙ্গিতের প্রতি।
ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলার মিট মি টুনাইট ফর শিওর এবং দ্য বেলবয় এন্ড দ্য প্লেগার্লস
ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা বিখ্যাত তার গডফাদার ট্রিলজির জন্য। এই ট্রিলজি সিনেমা জগতের অনেক হিসাব-নিকাশই উল্টেপাল্টে দিয়েছে। কেবল উল্টেপাল্টে দিতে পারেনি কপোলার অতীতকে। ক্যারিয়ারের শুরুতে কপোলা প্রায়-পর্নোগ্রাফিক সিনেমাও বানিয়েছিলেন। তাও একাধিক। ছাত্র থাকাকালীন বানান দ্য পিপার। ১৯৬২ সালে বানান তখন বেশ প্রচলিত নিউডি-কিউটি ঘরানার বি-গ্রেডের সিনেমা মিট মি টুনাইট ফর শিওর। সে বছরই বানান ওই ধরনের আরেকটি সিনেমা দ্য বেলবয় এন্ড দ্য প্লেগার্লস।
অলিভার স্টোনের সেইজার
Tumblr media
অলিভার স্টোনের খ্যাতি মূলত যুদ্ধভিত্তিক, খানিকটা রাজনৈতিক থিমের সিনেমার জন্য। তার প্রায় সব সিনেমাতেই এই অনুষঙ্গগুলো ঘুরেফিরে আসে। প্লাটুন-এর জন্য ১৯৮৬ সালে এবং বর্ন অন দ্য ফোর্থ অফ জুলাই-এর জন্য ১৯৮৯ সালে অস্কার জিতেন তিনি। এছাড়াও তার বিখ্যাত সিনেমাগুলোর মধ্যে আছে ওয়াল স্ট্রিট, ন্যাচারাল বর্ন কিলার, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, ওয়াল স্ট্রিট: মানি নেভার স্লিপস ইত্যাদি। তবে তার এসব অসাধারণ সিনেমার পাশে তার পরিচালিত দ্বিতীয় সিনেমাটি রীতিমতো বিবর্ণ। সেইজার (১৯৭৪) নামের হরর সিনেমাটি রীতিমতো হাস্যকরই বলা চলে।
রন হাওয়ার্ডের গ্র্যান্ড থেফট অটো
Tumblr media
২০০১ সালে মুক্তি পাওয়া এ বিউটিফুল মাইন্ড-এর জন্য রন হাওয়ার্ড অস্কার জিতেন। তার অন্যান্য বিখ্যাত সিনেমাগুলোর মধ্যে আছে স্প্ল্যাশ, অ্যাপোলো ১৩, দ্য ডা ভিঞ্চি কোড, এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস ইত্যাদি। এই রন হাওয়ার্ডের সিনেমায় হাতে খড়ি হয় আরেক পরিচালক রজার করম্যানের হাত ধরে। করম্যান তাকে দ্বিতীয় সারির একটি সিনেমার পরিচালনার কাজ জুটিয়ে দেন। হাওয়ার্ড করম্যানের কার-চেজ কমেডি ইট মাই ডাস্ট-এ অভিনয় করেন। বিনিময়ে করম্যান তাকে জুটিয়ে দেন গ্র্যান্ড থেফট অটো-র পরিচালনার ভার। বি-গ্রেডের এই সিনেমাটির কাহিনিও বেশ সুড়সুড়িদায়ক ছিল।
জেমস ক্যামেরনের পিরানহা টু
Tumblr media
টাইটানিক, অ্যাভাটার, টার্মিনেটর-এর যে কোনো একটি সিনেমাই জেমস ক্যামেরনকে অমর করতে যথেষ্ট। অথচ তার পরিচালনার প্রথ�� সিনেমাটির কথা ক্যামেরন পারলে ভুলেই যেতে চান। তখনও ক্যামেরন কাজ করতেন মূলত স্পেশাল ইফেক্টস ডিরেক্টর হিসেবে। পিরানহা টু: দ্য স্পনিং-এও সে হিসেবেই কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু নির্বাহী প্রযোজক ওভিডিদ আসোন্তিস সিনেমার মূল পরিচালককে সরিয়ে দেন। দায়িত্ব দেন ক্যামেরনকে। তিনিও অবশ্য সিনেমাটি শেষ করতে পারেননি। আড়াই সপ্তাহ পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপর প্রযোজকদের পক্ষ থেকে তাকেও সরে যেতে বলা হয়। পরিচালনার দায়িত্ব নেন আসোন্তিস নিজেই। পরে অবশ্য প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান পরিচালক হিসেবে বিদেশি কারও নাম দেয়ার ঝুঁকি নেয়নি। শেষ পর্যন্ত তাই পরিচালক হিসেবে ক্যামেরনের নামই থেকে যায়।
জোনাথন ড্যামের কেজড হিট
Tumblr media
হলিউডের অন্যতম সেরা সাইকোলজিক্যাল-থ্রিলার দ্য সাইলেন্স অফ দ্য ল্যাম্বস। সিনেমাটি পরিচালনার জন্য জোনাথন ড্যাম ১৯৯২ সালে অস্কার জিতেন। এই জোনাথন ড্যামেরও ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল বি-গ্রেডের প্রায়-পর্নোগ্রাফি সিনেমা পরিচালনা করে।১৯৭৪ সালে তার পরিচালনায় মুক্তি পায় কেজড হিট। তারও আগে দ্য হট বক্স (১৯৭২) এবং ব্ল্যাক মামা, হোয়াইট মামা (১৯৭৩) এর কাহিনি ও চিত্রনাট্য রচনায়ও কাজ করেন তিনি। পরে হ্যান্ডল উইথ কেয়ার (১৯৭৭), মেলভিন এন্ড হাওয়ার্ড (১৯৮০) সিনেমাগুলো তাকে হলিউডের মূল ধারায় জায়গা করে দেয়।
ওয়েস ক্র্যাভেনের দ্য ফায়ারওয়ার্কস ওম্যান
Tumblr media
ওয়েস ক্র্যাভেনকে বলা হয় মাস্টার অফ হরর। হরর সিনেমা জগতের দুই বিখ্যাত চরিত্র ফ্রেডি ক্রুগার আর কোর্টনি কক্স— দুটোরই স্রস্টা ক্র্যাভেন। অথচ এই ক্র্যাভেনই সিনেমা জগতে হাত পাকান পর্নো সিনেমা বানিয়ে। প্রথমে তিনি পর্নো সিনেমায় স্টোরি-রাইটার ও এডিটর হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে ১৯৭৫ সালে এব স্নেক ছদ্মনামে একটি পর্নো সিনেমা পরিচালনা করেন। তখন বেশ জনপ্রিয় পর্নো চিক ধারার সিনেমাটির নাম ছিল দ্য ফায়ারওয়ার্কস ওম্যান।
হলিউডের অনেক বিখ্যাত পরিচালককেই ক্যারিয়ারের শুরুতে বানাতে হয়েছে বি-গ্রেডের আদিরসাত্মক সিনেমা। হলিউডের অনেক বিখ্যাত পরিচালককেই ক্যারিয়ারের শুরুতে নানা কারণে ধুঁকতে হয়েছে। কাউকে ধুঁকতে হয়েছে অভাবের তাড়নায়, কাউকে ভুগতে হয়েছে সুযোগের অভাবে। আর সে সব কারণে অনেকেরই প্রথম সিনেমা বেশ বিব্রতকর। তাদের অন্যান্য সিনেমার তুলনায় বেশ দুর্বল। অনেককেই ক্যারিয়ারের শুরুতে বানাতে হয়েছে বি-গ্রেডের সিনেমা। যে ‍সিনেমাগুলোর মূল বৈশিষ্ট্যই হল কম বাজেটের, স্থূল কৌতুকের আদিরসাত্মক সিনেমা। যেগুলোতে প্রায়ই কাহিনির চেয়ে বেশি মনোযোগ দেয়া হয় মেয়েদের শরীর আর যৌন-ইঙ্গিতের প্রতি। ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলার মিট মি টুনাইট ফর শিওর এবং দ্য বেলবয় এন্ড দ্য প্লেগার্লস ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা বিখ্যাত তার গডফাদার ট্রিলজির জন্য। এই ট্রিলজি সিনেমা জগতের অনেক হিসাব-নিকাশই উল্টেপাল্টে দিয়েছে। কেবল উল্টেপাল্টে দিতে পারেনি কপোলার অতীতকে। ক্যারিয়ারের শুরুতে কপোলা প্রায়-পর্নোগ্রাফিক সিনেমাও বানিয়েছিলেন। তাও একাধিক। ছাত্র থাকাকালীন বানান দ্য পিপার। ১৯৬২ সালে বানান তখন বেশ প্রচলিত নিউডি-কিউটি ঘরানার বি-গ্রেডের সিনেমা মিট মি টুনাইট ফর শিওর। সে বছরই বানান ওই ধরনের আরেকটি সিনেমা দ্য বেলবয় এন্ড দ্য প্লেগার্লস। অলিভার স্টোনের সেইজার অলিভার স্টোনের খ্যাতি মূলত যুদ্ধভিত্তিক, খানিকটা রাজনৈতিক থিমের সিনেমার জন্য। তার প্রায় সব সিনেমাতেই এই অনুষঙ্গগুলো ঘুরেফিরে আসে। প্লাটুন-এর জন্য ১৯৮৬ সালে এবং বর্ন অন দ্য ফোর্থ অফ জুলাই-এর জন্য ১৯৮৯ সালে অস্কার জিতেন তিনি। এছাড়াও তার বিখ্যাত সিনেমাগুলোর মধ্যে আছে ওয়াল স্ট্রিট, ন্যাচারাল বর্ন কিলার, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, ওয়াল স্ট্রিট: মানি নেভার স্লিপস ইত্যাদি। তবে তার এসব অসাধারণ সিনেমার পাশে তার পরিচালিত দ্বিতীয় সিনেমাটি রীতিমতো বিবর্ণ। সেইজার (১৯৭৪) নামের হরর সিনেমাটি রীতিমতো হাস্যকরই বলা চলে। রন হাওয়ার্ডের গ্র্যান্ড থেফট অটো ২০০১ সালে মুক্তি পাওয়া এ বিউটিফুল মাইন্ড-এর জন্য রন হাওয়ার্ড অস্কার জিতেন। তার অন্যান্য বিখ্যাত সিনেমাগুলোর মধ্যে আছে স্প্ল্যাশ, অ্যাপোলো ১৩, দ্য ডা ভিঞ্চি কোড, এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস ইত্যাদি। এই রন হাওয়ার্ডের সিনেমায় হাতে খড়ি হয় আরেক পরিচালক রজার করম্যানের হাত ধরে। করম্যান তাকে দ্বিতীয় সারির একটি সিনেমার পরিচালনার কাজ জুটিয়ে দেন। হাওয়ার্ড করম্যানের কার-চেজ কমেডি ইট মাই ডাস্ট-এ অভিনয় করেন। বিনিময়ে করম্যান তাকে জুটিয়ে দেন গ্র্যান্ড থেফট অটো-র পরিচালনার ভার। বি-গ্রেডের এই সিনেমাটির কাহিনিও বেশ সুড়সুড়িদায়ক ছিল। জেমস ক্যামেরনের পিরানহা টু টাইটানিক, অ্যাভাটার, টার্মিনেটর-এর যে কোনো একটি সিনেমাই জেমস ক্যামেরনকে অমর করতে যথেষ্ট। অথচ তার পরিচালনার প্রথম সিনেমাটির কথা ক্যামেরন পারলে ভুলেই যেতে চান। তখনও ক্যামেরন কাজ করতেন মূলত স্পেশাল ইফেক্টস ডিরেক্টর হিসেবে। পিরানহা টু: দ্য স্পনিং-এও সে হিসেবেই কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু নির্বাহী প্রযোজক ওভিডিদ আসোন্তিস সিনেমার মূল পরিচালককে সরিয়ে দেন। দায়িত্ব দেন ক্যামেরনকে। তিনিও অবশ্য সিনেমাটি শেষ করতে পারেননি। আড়াই সপ্তাহ পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপর প্রযোজকদের পক্ষ থেকে তাকেও সরে যেতে বলা হয়। পরিচালনার দায়িত্ব নেন আসোন্তিস নিজেই। পরে অবশ্য প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান পরিচালক হিসেবে বিদেশি কারও নাম দেয়ার ঝুঁকি নেয়নি। শেষ পর্যন্ত তাই পরিচালক হিসেবে ক্যামেরনের নামই থেকে যায়। জোনাথন ড্যামের কেজড হিট হলিউডের অন্যতম সেরা সাইকোলজিক্যাল-থ্রিলার দ্য সাইলেন্স অফ দ্য ল্যাম্বস। সিনেমাটি পরিচালনার জন্য জোনাথন ড্যাম ১৯৯২ সালে অস্কার জিতেন। এই জোনাথন ড্যামেরও ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল বি-গ্রেডের প্রায়-পর্নোগ্রাফি সিনেমা পরিচালনা করে।১৯৭৪ সালে তার পরিচালনায় মুক্তি পায় কেজড হিট। তারও আগে দ্য হট বক্স (১৯৭২) এবং ব্ল্যাক মামা, হোয়াইট মামা (১৯৭৩) এর কাহিনি ও চিত্রনাট্য রচনায়ও কাজ করেন তিনি। পরে হ্যান্ডল উইথ কেয়ার (১৯৭৭), মেলভিন এন্ড হাওয়ার্ড (১৯৮০) সিনেমাগুলো তাকে হলিউডের মূল ধারায় জায়গা করে দেয়। ওয়েস ক্র্যাভেনের দ্য ফায়ারওয়ার্কস ওম্যান ওয়েস ক্র্যাভেনকে বলা হয় মাস্টার অফ হরর। হরর সিনেমা জগতের দুই বিখ্যাত চরিত্র ফ্রেডি ক্রুগার আর কোর্টনি কক্স— দুটোরই স্রস্টা ক্র্যাভেন। অথচ এই ক্র্যাভেনই সিনেমা জগতে হাত পাকান পর্নো সিনেমা বানিয়ে। প্রথমে তিনি পর্নো সিনেমায় স্টোরি-রাইটার ও এডিটর হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে ১৯৭৫ সালে এব স্নেক ছদ্মনামে একটি পর্নো সিনেমা পরিচালনা করেন। তখন বেশ জনপ্রিয় পর্নো চিক ধারার সিনেমাটির নাম ছিল দ্য ফায়ারওয়ার্কস ওম্যান।
0 notes
nabeelonusurjo-blog · 8 years ago
Text
স্পেনের বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল বা বিভাগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্যাস্টিল এন্ড লিওন। এর যে পাশে মাদ্রিদ অবস্থিত, সে পাশেই আছে পুরনো ঐতিহাসিক এক শহর। রাজধানী মাদ্রিদ থেকে মাত্র শ খানেক কিলোমিটার পশ্চিমে। আভিলা নামের ওই শহরটির পুরনো যে অংশটা, তার পুরোটাই আবার একটা বিশাল দেয়াল দিয়ে ঘেরা। যাকে বলে দেয়াল ঘেরা নগরী। এই দেয়ালটা এক সময় আভিলার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতো। এখন এটি মূলত আভিলার খ্যাতির প্রধান কারণ।
আভিলা শহরটা এক পাথুরে উপত্যকায় অবস্থিত। চারপাশে গাছপালা তেমন নেই। বরং পাথুরে প্রকৃতির। তবে চারপাশটা পাহাড়ে-পর্বতে ঘেরা বলে শহরটা নিতান্ত অরক্ষিতও ছিল না। তবু এই শহরের নিরাপত্তার জন্যই পুরো শহরকে ঘিরে বানানো হয়েছিল এই পাথুরে দেয়াল। প্রায় আড়াই হাজার মিটার লম্বা এই দেয়াল আক্ষরিক অর্থেই শহরটিকে চারপাশ দিয়ে বেষ্টন করে রেখেছে। একটুও ফাঁকা রাখা হয়নি। অবশ্য তার ঐতিহাসিক কারণও আছে।
শহরটির পত্তন হয় খ্রিষ্টের জন্মেরও ৫শ বছর আগে। তখন শহরটি ভেটনদের অধিকারে ছিল। পরে আভিলা রোমানদের অধীনে আসে। তখন শহরটি হিস্পানিক বা স্প্যানিশ লুসিতানিয়ার অন্তর্গত ছিল। প্রাচীন রোমের আবুলা, আবিলা, আবেলা, আবলা নামের যে সব শহরের উল্লেখ পাওয়া যায়, ধারণা করা হয় সবগুলোই আসলে এই আভিলা। পরে ৭১৪ খ্রিস্টাব্দে আরবরা শহরটির দখল নেয়। আভিলা আরবের মুসলিম শাসকদের অধীনস্ত থাকে এরপর প্রায় সাড়ে ৩শ বছর। উত্তরের আইবেরিয়ান-খ্রিস্টান রাজ্যগুলো আভিলা দখলে চেষ্টায় ত্রুটি করেনি। কিন্তু তাদের কোনো আক্রমণই ফলপ্রসূ হয়নি। শেষ পর্যন্ত সেই অসাধ্য সাধন করেন ক্যাস্টিল এন্ড লিওনের রাজা ষষ্ঠ আলফনসো, ১০৮৮ সালে।
অনেক সাধনায় পাওয়া এই আভিলা আরেক দফা হাতছাড়া হওয়ার কোনো ঝুঁকি নিতে রাজি ছিলেন না রাজা আলফনসো। তাই আভিলা দখল করার পরপরই তার বোন-জামাই রেমন্ডকে দায়িত্ব দেন শহরটিকে সুরক্ষিত করে গড়ে তুলতে। বার্গান্ডির যুবরাজ রেমন্ড নিজেও কম বিখ্যাত নন। তিনি দূর দেশ থেকে দুজন কারিগরকে ডাকিয়ে আনেন- কাসান্দ্রো রোমানো এবং ফ্লোরিন দ্য পিতুয়েঙ্গা। তাদের দায়িত্ব দেন শহরের চারপাশ ঘিরে শক্তিশালী পাথুরে দেয়াল তুলতে। দুই কারিগরও এক দশকের মধ্যেই পুরো আভিলাকে আয়তাকার দেয়াল দিয়ে ঘিরে ফেললেন।
আভিলার চারপাশ দিয়ে আড়াই হাজার মিটারের এই দেয়াল শহরটিকে রীতিমতো দূর্গ বানিয়ে তুলেছে। এই দেয়াল ১০ ফুট পর্যন্ত চওড়া, ৪০ ফুট পর্যন্ত লম্বা। দূর্গের প্রাচীরে যেমন চলাচলের পথ থাকে, দেয়ালের উপরে তেমনি পথও আছে। আছে ৮৮টা প্রতিরক্ষা টাওয়ার। আয়তাকার দেয়ালের বিভিন্ন দিকে মোট ৮টা প্রবেশদ্বার আছে। এই প্রবেশদ্বার ছাড়া শহরে প্রবেশ করার অন্য কোনো পথই নেই। পুরো শহরটাই যে দেয়াল দিয়ে ঘেরা। সব মিলিয়ে নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থিত এই টাওয়ারগুলো দেয়ালটাকে সত্যিই একটা দূর্গ-প্রাচীরের চেহারা দিয়েছে।
পরে অবশ্য এই দেয়ালের বাইরেও শহরের বিস্তার ঘটেছে। শহরের দেয়াল ঘেরাটা অংশটা এখন পুরনো আভিলা বা ওল্ডটাউন হিসেবে পরিচিত। আর স্বাভাবিকভাবেই শহরের সব ঐতিহাসিক স্থাপনাও এই দেয়াল-ঘেরা পুরনো আভিলায় অবস্থিত। সে সব স্থাপনার মধ্যে আছে গথিক রীতিতে বানানো পুরনো ক্যাথেড্রাল, সেন্ট থমাসের গির্জা, থমাস দ্য তরকেমাদা-র সমাধি এবং ডন জুয়ানের সমাধি। এদের মধ্যে থমাস দ্য তরকেমাদা ছিলেন সমগ্র স্পেনের প্রথম প্রধান বিচারক। আর ডন জুয়ান ছিলেন স্পেনের রাজা ফার্দিনান্দ ও রানি ইসাবেলার একমাত্র সন্তান। আরও আছে রোমান রীতিতে বানানো অনেকগুলো চার্চ।
আভিলার সেই ঐতিহাসিক দেয়াল অটুট আছে এখনো। দেয়ালের অর্ধেকটার উপরের পথে এখনো ঘুরে বেড়ানো যায়। এখন আবার পুরো দেয়াল জুড়েই হলদে-কমলা হ্যালোজেন বাতি লাগানো হয়েছে। রাত হলেই পুরো দেয়ালে হলদে-কমলা আলো জ্বলে ওঠে। আনুষ্ঠানিকভাবেই এই দেয়াল এখন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আলোকিত স্থাপনা। ১৯৮৫ সালে শুধু এই দেয়ালটাকেই না, বরং দেয়ালসমেত পুরো পুরনো আভিলাকেই ইউনেস্কো ঘোষণা করেছে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে।
দেয়াল-ঘেরা শহর আভিলা স্পেনের বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল বা বিভাগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্যাস্টিল এন্ড লিওন। এর যে পাশে মাদ্রিদ অবস্থিত, সে পাশেই আছে পুরনো ঐতিহাসিক এক শহর। রাজধানী মাদ্রিদ থেকে মাত্র শ খানেক কিলোমিটার পশ্চিমে। আভিলা নামের ওই শহরটির ��ুরনো যে অংশটা, তার পুরোটাই আবার একটা বিশাল দেয়াল দিয়ে ঘেরা। যাকে বলে দেয়াল ঘেরা নগরী। এই দেয়ালটা এক সময় আভিলার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতো। এখন এটি মূলত আভিলার খ্যাতির প্রধান কারণ। আভিলা শহরটা এক পাথুরে উপত্যকায় অবস্থিত। চারপাশে গাছপালা তেমন নেই। বরং পাথুরে প্রকৃতির। তবে চারপাশটা পাহাড়ে-পর্বতে ঘেরা বলে শহরটা নিতান্ত অরক্ষিতও ছিল না। তবু এই শহরের নিরাপত্তার জন্যই পুরো শহরকে ঘিরে বানানো হয়েছিল এই পাথুরে দেয়াল। প্রায় আড়াই হাজার মিটার লম্বা এই দেয়াল আক্ষরিক অর্থেই শহরটিকে চারপাশ দিয়ে বেষ্টন করে রেখেছে। একটুও ফাঁকা রাখা হয়নি। অবশ্য তার ঐতিহাসিক কারণও আছে। শহরটির পত্তন হয় খ্রিষ্টের জন্মেরও ৫শ বছর আগে। তখন শহরটি ভেটনদের অধিকারে ছিল। পরে আভিলা রোমানদের অধীনে আসে। তখন শহরটি হিস্পানিক বা স্প্যানিশ লুসিতানিয়ার অন্তর্গত ছিল। প্রাচীন রোমের আবুলা, আবিলা, আবেলা, আবলা নামের যে সব শহরের উল্লেখ পাওয়া যায়, ধারণা করা হয় সবগুলোই আসলে এই আভিলা। পরে ৭১৪ খ্রিস্টাব্দে আরবরা শহরটির দখল নেয়। আভিলা আরবের মুসলিম শাসকদের অধীনস্ত থাকে এরপর প্রায় সাড়ে ৩শ বছর। উত্তরের আইবেরিয়ান-খ্রিস্টান রাজ্যগুলো আভিলা দখলে চেষ্টায় ত্রুটি করেনি। কিন্তু তাদের কোনো আক্রমণই ফলপ্রসূ হয়নি। শেষ পর্যন্ত সেই অসাধ্য সাধন করেন ক্যাস্টিল এন্ড লিওনের রাজা ষষ্ঠ আলফনসো, ১০৮৮ সালে। অনেক সাধনায় পাওয়া এই আভিলা আরেক দফা হাতছাড়া হওয়ার কোনো ঝুঁকি নিতে রাজি ছিলেন না রাজা আলফনসো। তাই আভিলা দখল করার পরপরই তার বোন-জামাই রেমন্ডকে দায়িত্ব দেন শহরটিকে সুরক্ষিত করে গড়ে তুলতে। বার্গান্ডির যুবরাজ রেমন্ড নিজেও কম বিখ্যাত নন। তিনি দূর দেশ থেকে দুজন কারিগরকে ডাকিয়ে আনেন- কাসান্দ্রো রোমানো এবং ফ্লোরিন দ্য পিতুয়েঙ্গা। তাদের দায়িত্ব দেন শহরের চারপাশ ঘিরে শক্তিশালী পাথুরে দেয়াল তুলতে। দুই কারিগরও এক দশকের মধ্যেই পুরো আভিলাকে আয়তাকার দেয়াল দিয়ে ঘিরে ফেললেন। আভিলার চারপাশ দিয়ে আড়াই হাজার মিটারের এই দেয়াল শহরটিকে রীতিমতো দূর্গ বানিয়ে তুলেছে। এই দেয়াল ১০ ফুট পর্যন্ত চওড়া, ৪০ ফুট পর্যন্ত লম্বা। দূর্গের প্রাচীরে যেমন চলাচলের পথ থাকে, দেয়ালের উপরে তেমনি পথও আছে। আছে ৮৮টা প্রতিরক্ষা টাওয়ার। আয়তাকার দেয়ালের বিভিন্ন দিকে মোট ৮টা প্রবেশদ্বার আছে। এই প্রবেশদ্বার ছাড়া শহরে প্রবেশ করার অন্য কোনো পথই নেই। পুরো শহরটাই যে দেয়াল দিয়ে ঘেরা। সব মিলিয়ে নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থিত এই টাওয়ারগুলো দেয়ালটাকে সত্যিই একটা দূর্গ-প্রাচীরের চেহারা দিয়েছে। পরে অবশ্য এই দেয়ালের বাইরেও শহরের বিস্তার ঘটেছে। শহরের দেয়াল ঘেরাটা অংশটা এখন পুরনো আভিলা বা ওল্ডটাউন হিসেবে পরিচিত। আর স্বাভাবিকভাবেই শহরের সব ঐতিহাসিক স্থাপনাও এই দেয়াল-ঘেরা পুরনো আভিলায় অবস্থিত। সে সব স্থাপনার মধ্যে আছে গথিক রীতিতে বানানো পুরনো ক্যাথেড্রাল, সেন্ট থমাসের গির্জা, থমাস দ্য তরকেমাদা-র সমাধি এবং ডন জুয়ানের সমাধি। এদের মধ্যে থমাস দ্য তরকেমাদা ছিলেন সমগ্র স্পেনের প্রথম প্রধান বিচারক। আর ডন জুয়ান ছিলেন স্পেনের রাজা ফার্দিনান্দ ও রানি ইসাবেলার একমাত্র সন্তান। আরও আছে রোমান রীতিতে বানানো অনেকগুলো চার্চ। আভিলার সেই ঐতিহাসিক দেয়াল অটুট আছে এখনো। দেয়ালের অর্ধেকটার উপরের পথে এখনো ঘুরে বেড়ানো যায়। এখন আবার পুরো দেয়াল জুড়েই হলদে-কমলা হ্যালোজেন বাতি লাগানো হয়েছে। রাত হলেই পুরো দেয়ালে হলদে-কমলা আলো জ্বলে ওঠে। আনুষ্ঠানিকভাবেই এই দেয়াল এখন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আলোকিত স্থাপনা। ১৯৮৫ সালে শুধু এই দেয়ালটাকেই না, বরং দেয়ালসমেত পুরো পুরনো আভিলাকেই ইউনেস্কো ঘোষণা করেছে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে।
0 notes
nabeelonusurjo-blog · 8 years ago
Text
৭ মার্চ। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণে লুকিয়ে ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার আহ্বান। সে কী ভাষণ! সে ভাষণ শুনে যেন সবার শরীরে-মনে কী এক রোমাঞ্চের শিহরণ বয়ে গিয়েছিল। আর কত্ত লোক যে সেদিন জমায়েত হয়েছিল সেই বজ্রকণ্ঠ ভাষণ শুনতে! সোহরাওয়ার্দী উদ্যান (তখন অবশ্য নাম ছিল রেসকোর্স ময়দান) ভরে উঠেছিল মানুষে মানুষে। আর তাদের সামনে বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন বজ্রকণ্ঠ সেই ভাষণ।
তখন বঙ্গবন্ধু বাংলার অবিসংবাদিত নেতা। তার কথায় পুরো পূর্ব পাকিস্তান, মানে আমাদের বাংলাদেশ ওঠে-বসে। তিনি যা বলেন, দেশের সব মানুষ তা-ই করে। তখন আবার এখনকার মতো এত বেসরকারি টিভি-রেডিও ছিল না। সবই ছিল সরকারি। আর তখন কারো বাসাতেই এখনকার মতো টিভি ছিল না। সারা দেশের মানুষ বিপুল আগ্রহ নিয়ে রেডিও শুনত।
তো বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ পাকিস্তান সরকার রেডিওতে প্রচার করতে দেবেই না। আর এমনিতেই তখন রেডিওর বাঙালি কর্মচারিরা যাতে বিপ্লবী গান-কবিতা-অনুষ্ঠান প্রচার করতে না পারে সেজন্য ছিল কড়া বিধি-নিষেধ। এক সামরিক গোয়েন্দাই ছিল রেডিওর অনুষ্ঠান তদারকি করার জন্য, নাম তার মেজর সিদ্দিক সালেক। কিন্তু রেডিওর বাঙালি কর্মকর্তা-কর্মচারিরাও তো কম যেতেন না। তাঁরাও ঠিকই ফাঁক বুঝে চালিয়ে দিতেন দেশাত্মবোধক গান-কবিতা-অনুষ্ঠান।
কিন্তু গোল বাঁধলো বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার করা নিয়ে। বাঙালি কর্মকর্তা-কর্মচারিরা ঠিক করলেন, যেভাবেই হোক, এই ভাষণ প্রচার করতেই হবে। সেই অনুযায়ী সব ব্যবস্থাও নেওয়া হলো; ৬ মার্চ রাতেই রেডিওর ইঞ্জিনিয়াররা রমনার রেসকোর্স ময়দানে, মানে যেখানে শেখ মুজিব ভাষণ দেবেন, সেখানে ভাষণ সম্প্রচারের যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে ফেললেন।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণ দেওয়ার কথা দুপুর ২টায়। তার আগে থেকেই, বেলা ১২টা থেকে রেডিওতে ঘোষণা দেওয়া হতে থাকল- রেডিওকে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ। শেখ মুজিব ভাষণ দিতে উঠলেন একটু দেরি করে, দুপুর ২টা ২০মিনিটে। এরই মধ্যে রেডিওতে ঘটে গেল এক কাণ্ড।
মেজর সিদ্দিক সালেক টেলিফোনে বলে দিয়েছেন- আগামী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রেডিওতে শেখ মুজিবের কোনো কিছু প্রচার করা যাবে না। কিন্তু সে কথা কী আর মানা যায়! সেদিনের সেই ভাষণের জন্য গোটা জাতি অপেক্ষার প্রহর গুনে বসে আছে। কৃষক-শ্রমিক-মজুর-ছাত্র-চাকরিজীবী সবাই। রাজনীতিবিদ-ছাত্রনেতারা সবাই। সবার মধ্যে টানটান উত্তেজনা, কী বলবেন বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে। স্বাধীনতার ঘোষণা কী চলে আসবে? ছাত্ররা তো মনেপ্রাণে সেটাই চাচ্ছিল। আর সেই বহু আকাঙ্ক্ষিত ভাষণ রেডিওতে প্রচার না করলে চলে?
একদমই চলবে না। সুতরাং, বেতারের বাঙালি কর্মকর্তা-কর্মচারিরা রেডিও বয়কট করলেন। শাহবাগের রেডিও অফিস থেকে বের হয়ে সোজা চলে গেলেন রমনার রেসকোর্স ময়দানে, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনতে। আর বলে দিলেন, এই ভাষণ প্রচার না করা পর্যন্ত তারা কাজে যোগ দেবেন না।
এবার তো পাকিস্তান সরকার ভীষণ বিপদে পড়ে গেল। তাই কী আর দেশের সরকারি রেডিও বন্ধ করে রাখা যায়! শেষমেশ কর্তৃপক্ষ রাজি হলো বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সম্প্রচার করতে। ৮ মার্চ সকাল ৭টায় রেডিওতে সম্প্রচারিত হলো বঙ্গবন্ধুর সেই বজ্রকণ্ঠ ভাষণ; বেতার তরঙ্গে ভেসে ভেসে ছড়িয়ে গেল সারা বাংলায়।
ভাইয়েরা আমার,
আজ-দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা সবই জানেন এবং বুঝেন, আমরা আমাদের জীবন দিয়ে চেষ্টা করেছি। কিন্তু ঢাকা, চট্রগ্রাম, খুলনা, রংপুর ও যশোরের রাজপথ আমার ভাই-এর রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়- তারা বাঁচতে চায়। তারা অধিকার পেতে চায়। নির্বাচনে আপনারা ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়ী করেছিলেন। শাসনতন্ত্র তৈরী করবো- এবং এই শাসনতন্ত্রে মানুষ তাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি লাভ করবে। কিন্তু ২৩ বছরের ইতিহাস বাংলার মানুষের মুমূর্ষু আর্তনাদের ইতিহাস, রক্তদানের করুণ ইতিহাস, নির্যাতিত মানুষের কান্নার ইতিহাস।
১৯৫২ সালে আমরা রক্ত দিয়েছি। ১৯৫৪ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করেও আমরা গদিতে বসতে পারি নাই। ১৯৫৮ সালে দেশে সামরিক আইন জারি করে আইয়ুব খান ১০ বছর আমাদের গোলাম করে রাখলো। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা দেওয়া হলো এবং এরপর এ অপরাধে আমার বহু ভাইকে হত্যা করা হলো। ১৯৬৯ সালের গণ আন্দোলনের মুখে আইয়ুবের পতনের পর ইয়াহিয়া খান এলেন। তিনি বললেন- শাসনতন্ত্র দেবেন- আমরা মেনে নিলাম। তারপরের ঘটনা সকলেই জানেন। ইয়াহিয়া খানের সংগে আলোচনা হলো। আমরা তাকে ১৫ই ফেব্রুয়ারী জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকার অনুরোধ করলাম। কিন্তু মেজরিটি পার্টির নেতা হওয়া সত্ত্বেও তিনি আমার কথা শুনলেন না। শুনলেন সংখ্যালঘু দলের ভুট্টো সাহেবের কথা। আমি শুধু বাংলায় মেজরিটি পার্টির নেতা নই- সমগ্র পাকিস্তানের মেজরিটি পার্টির নেতা। ভুট্টো সাহেব বললেন মার্চের প্রথম সপ্তাহে এ্যাসেমব্লি ডাকতে। তিনি মার্চের তিন তারিখে অধিবেশন ডাকলেন। আমি বললাম তবুও আমরা জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যাবো এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হওয়া সত্ত্বেও কেউ যদি ন্যায্য কথা বলে আমরা তা’ মেনে নেব, এমন কি তিনি যদি একজনও হন।
জনাব ভুট্টো ঢাকা এসেছিলেন, তার সংগে আলোচনা হলো। ভুট্টো সাহেব বলে গেছেন আলোচনার দরজা বন্ধ নয়, আরো আলোচনা হবে। মাওলানা নূরানী, মাওলানা মুফতি মাহমুদসহ পশ্চিম পাকিস্তানের অন্যান্য পার্লামেন্টারী নেতা এলেন, তাদের সংগে আলোচনা হলো- উদ্দেশ্য ছিলো আলাপ আলোচনা করে শাসনতন্ত্র রচনা করবো। তবে আমি তাদের জানিয়ে দিয়েছি যে ৬-দফা পরিবর্তনের কোন অধিকার নেই- এটা জনগণের সম্পদ। কিন্তু ভুট্টো সাহেব হুমকি দিলেন। তিনি বললেন, এখানে এসে ডবল জিম্মি হতে পারবেন না। পরিষদ কসাইখানায় পরিণত হবে। তিনি পশ্চিম পাকিস্তানী সদস্যদের প্রতি হুমকি দিলেন যে, পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিলে রক্তপাত করা হবে, তাদের মাথা ভেংগে দেওয়া হবে। হত্যা করা হবে। আন্দোলন শুরু হবে পেশোয়ার থেকে করাচী পর্যন্ত। একটি দোকানও খুলতে দেওয়া হবে না।
তা সত্ত্বেও পঁয়ত্রিশ জন পশ্চিম পাকিস্তানী সদস্য এলেন। কিন্তু পয়লা মার্চ ইয়াহিয়া খান পরিষদের অধিবেশন বন্ধ করে দিলেন। দোষ দেওয়া হলো বাংলার মানুষকে, দোষ দেওয়া হলো আমাকে, বলা হলো আমার অনমনীয় মনোভাবের জন্য কিছু করা হয়নি।
এরপর বাংলার মানুষ প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠলো। আমি শান্তিপূর্ণ সংগ্রাম চালিয়ে যাবার জন্য হরতাল ডাকলাম। জনগণ আপন ইচ্ছায় পথে নেমে এলো।
কিন্তু কি পেলাম আমরা? বাংলার নিরস্ত্র জনগণের উপর অস্ত্র ব্যবহার করা হলো। আমাদের হাতে অস্ত্র নেই। কিন্তু আমরা পয়সা দিয়ে যে অস্ত্র কিনে দিয়েছি বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য, আজ সে অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে আমার নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য। আমার দুঃখী জনতার উপর চলছে গুলী। আমার বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যখনই দেশের শাসনভার গ্রহণ করতে চেয়েছে, তখনই ষড়যন্ত্র চলেছে- আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
ইয়াহিয়া খান বলেছেন, আমি নাকি দশই মার্চ তারিখে গোলটেবিল বৈঠকে যোগদান করতে চেয়েছি- তার সাথে টেলিফোনে আমার আলাপ হয়েছে। আমি তাকে বলেছি, আপনি প্রেসিডেন্ট। ঢাকায় আসুন, দেখুন, আমার গরীব জনসাধারণকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমার মায়ের কোল কিভাবে খালি করা হয়েছে। আমি আগেই বলে দিয়েছি, কোন গোলটেবিল বৈঠক হবে না, কিসের গোলটেবিল বৈঠক? যারা আমার মা-বোনের কোল শূণ্য করেছে তাদের সাথে বসবো আমি গোলটেবিল বৈঠকে?
তিন তারিখে পল্টনে আমি অসহযোগের ডাক দিলাম। বললাম, অফিস-আদালত, খাজনা-ট্যাক্স বন্ধ করুন। আপনারা মেনে নিলেন।
হঠাৎ আমার সংগে বা আমার দলের সংগে আলোচনা না করে এক জনের সাথে পাঁচ ঘণ্টা বৈঠকের পর ইয়াহিয়া খান যে বক্তৃতা করেছেন তাতে সমস্ত দোষ আমার ও বাংলার জনগণের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন, দোষ করলেন ভুট্টো, কিন্তু গুলি করা হল আমার বাংলার মানুষকে। আমরা গুলি খাই, দোষ আমাদের; আমরা বুলেট খাই, দোষ আমাদের। ইয়াহিয়া সাহেব অধিবেশন ডেকেছেন কিন্তু আমার দাবী, সামরিক আইন প্রত্যাহার করতে হবে, সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নিতে হবে, হত্যার তদন্ত করতে হবে, আর জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তারপর বিবেচনা করে দেখবো পরিষদে বসবো কি বসবো না। এ দাবী মানার আগে পরিষদে বসার কোন প্রশ্নই উঠে না, জনগণ আমাকে সে অধিকার দেয়নি। রক্তের দাগ এখনো শুকোয়নি, শহীদের রক্ত মাড়িয়ে ২৫ তারিখের পরিষদে যোগ দিতে যাবো না।
ভাইয়েরা আমার। আমার উপর বিশ্বাস আছে? (লক্ষ লক্ষ মানুষ হাত তুলে ‘হ্যাঁ’ বলে) আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না, মানুষের অধিকার চাই। প্রধানমন্ত্রিত্বের লোভ দেখিয়ে আমাকে নিতে পারেনি। ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে নিতে পারেনি। আপনারা রক্ত দিয়ে আমাকে ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্ত করে এনেছিলেন। সে দিন এই রেসকোর্সে আমি বলেছিলাম রক্তের ঋণ আমি রক্ত দিয়ে শোধ করবো: মনে আছে? আজো আমি রক্ত দিয়েই রক্তের ঋণ শোধ করতে প্রস্তুত।
আমি বলে দিতে চাই আজ থেকে কোর্ট কাচারী, হাইকোর্ট, সুপ্রীম কোর্ট, অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। কোন কর্মচারী অফিসে যাবেন না- এ আমার নির্দেশ। গরীবের যাতে কষ্ট না হয় তার জন্য রিকসা চলবে, ট্রেন চলবে আর সব চলবে। ট্রেন চলবে তবে সেনাবাহিনী আনা নেওয়া চলবে না। করলে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে আমি দায়ী থাকবো না।
সেক্রেটারীয়েট, সুপ্রীম কোর্ট, হাইকোর্ট, জজকোর্ট সহ সরকারী-আধা সরকারী এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো বন্ধ থাকবে। শুধু পূর্ব বাংলার আদান-প্রদানের জন্য ব্যাংকগুলো দু’ঘণ্টার জন্য খোলা থাকবে। পূর্ব বাংলা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে টাকা যেতে পারবে না। বাঙ্গালীরা বুঝে শুনে চলবেন। টেলিগ্রাফ টেলিফোন বাংলাদেশের মধ্যে চালু থাকবে, তবে সাংবাদিকরা বহির্বিশ্বে সংবাদ পাঠাতে পারবেন।
এ দেশের মানুষকে খতম করা হচ্ছে, বুঝে শুনে চলবেন, দরকার হলে সমস্ত চাকা বন্ধ করে দেওয়া হবে। আপনারা নির্ধারিত সময়ে বেতন নিয়ে আসবেন। বেতন যদি না দেওয়া হয়, যদি আর একটি গুলি চলে তাহলে বাংলার ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোল- যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। রাস্তাঘাট বন্ধ করে দিতে হবে। আমরা তাদের ভাতে মারবো- পানিতে মারবো। আমি যদি হুকুম দেবার না পারি, যদি আমার সহকর্মীরা না থাকেন, আপনারা সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন।
তোমরা আমার ভাই, তোমরা ব্যারাকে থাকো, কেউ কিছু বলবে না। গুলি চালালে আর ভালো হবে না। সাত কোটি মানুষকে আর দাবায়ে রাখতে পারবে না। বাঙ্গালীরা মরতে যখন শিখেছে- তখন কেউ তাদের দাবাতে পারবে না।
শহীদ ও আহতদের পরিবারের জন্য আওয়ামী লীগ সাহায্য কমিটি করেছে। আমরা সাহায্যের চেষ্টা করবো। আপনারা যে যা পারেন দিয়ে যাবেন।
সাত দিনের হরতালে যে সব শ্রমিক অংশ গ্রহণ করেছেন, কারফিউর জন্য কাজ করতে যেতে পারেননি- শিল্প মালিকেরা তাদের পুরো বেতন দিয়ে দিবেন।
সরকারী কর্মচারীদের বলি, আমি যা বলি তা মানতে হবে।  কাউকে যেন অফিসে দেখা না যায়। এদেশের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত খাজনা ট্যাক্স বন্ধ থাকবে। আপনারা আমার উপর ছেড়ে দেন- আন্দোলন কিভাবে করতে হয় তা আমি জানি।
কিন্তু হুঁশিয়ার- একটা কথা মনে রাখবেন, আমাদের মধ্যে শত্রু ঢুকেছে, ছদ্মবেশে তারা আত্মকলহের সৃষ্টি করতে চায়। বাঙ্গালী-অবাঙ্গালী, হিন্দু-মুসলমান সবাই আমাদের ভাই, তাদের রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের।
রেডিও টেলিভিশন ও সংবাদপত্রে যদি আমাদের আন্দোলনের খবর প্রচার না করে তবে কোন বাঙ্গালী রেডিও টেলিভিশনে যাবেন না।
শান্তিপূর্ণভাবে ফয়সালা করতে পারলে ভাই ভাই হিসেবে বাস করার সম্ভাবনা আছে, তা না হলে নেই। বাড়াবাড়ি করবেন না, মুখ দেখাদেখিও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
আমার অনুরোধ প্রত্যেক গ্রামে, মহল্লায়, ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম কমিটি গড়ে তুলুন। যার যা আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকুন। মনে রাখবেন- রক্ত যখন দিয়েছি, আরও দেব, তবু এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশা আল্লাহ। এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম ��্বাধীনতার সংগ্রাম। প্রস্তুত থাকবেন, ঠাণ্ডা হলে চলবে না। আন্দোলন ও বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন। আন্দোলন ঝিমিয়ে পড়লে তারা আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে- শৃংখলা বজায় রাখুন। কারণ শৃংখলা ছাড়া কোন জাতি সংগ্রামে জয়লাভ করতে পারে না। জয় বাংলা।
[বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি মেজর রফিকুল ইসলাম, পিএসসি (অবসরপ্রাপ্ত) রচিত ‘একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে’ বইটি থেকে নেওয়া হয়েছে; লিখিত ভাষণটির মূল কপি অনুযায়ী বানান রাখার চেষ্টা করা হয়েছে]
বেতারে ভাসলো বজ্রকণ্ঠ সেই ভাষণ ৭ মার্চ। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণে লুকিয়ে ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার আহ্বান। সে কী ভাষণ!
0 notes
nabeelonusurjo-blog · 9 years ago
Text
বন্ড নয়, বন্ড গার্ল...
প্লেবয় চরিত্রের জেমস বন্ডের অসংখ্য সঙ্গিনীর মধ্যে থেকে বাছাই করা সেরা সঙ্গিনীদের গল্প...
জেমস বন্ড ০০৭। পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় ফিল্ম-ফ্র্যাঞ্চাইজি। যাকে বলে বইয়ের সিরিজ থেকে সিনেমার ফ্র্যাঞ্চাইজি বানানোর এক ক্ল্যাসিক উদাহরণ। জেমস বন্ড কেবল সফল ফিল্ম ফ্র্যাঞ্চাইজির কেন্দ্রীয় চরিত্রই নয়, বরং গত কয়েক দশক ধরে পৌরুষের মাপকাঠিই হয়ে উঠেছে। যে পুরুষ যত বেশি বন্ডের মতো, সে যেন তত বেশি পৌরুষদীপ্ত, বিষয়টা অনেকটা এমনই হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বন্ডের সেই প্রভাব কমলেও, প্রতাপ এখনও কমেনি। আর কমেনি বন্ড…
View On WordPress
0 notes
nabeelonusurjo-blog · 9 years ago
Text
বলা হয়, এখনো যে সব উৎসব পালন করা হয়, তাদের মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো উৎসব হলো ইংরেজি নববর্ষ বা বর্ষবরণ উৎসব। এই উৎসব পালন করা শুরু হয় প্রায় ৪ হাজার বছর আগে, খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দে। সে সময় মেসোপটেমীয় সভ্যতায় প্রথম বর্ষবরণ উৎসব চালু হয়। প্রাচীন মেসোপটেমিয়ায় যে সভ্যতা গড়ে উঠেছিলো, তাকে বলা হয় মেসোপটেমীয় সভ্যতা। বর্তমান ইরাককে প্রাচীনকালে বলা হতো মেসোপটেমিয়া। এই মেসোপটেমিয়ান সভ্যতার আবার ৪টা আলাদা আলাদা ভাগ আছে, সুমেরীয় সভ্যতা, ব্যবিলনীয় সভ্যতা, অ্যাসিরীয় সভ্যতা ও ক্যালডীয় সভ্যতা। এদের মধ্যে বর্ষবরণ উৎসব পালন করা শুরু হয় ব্যবিলনীয় সভ্যতায়।
ব্যাবিলনীয় সভ্যতার অবস্থান
ব্যাবিলন শহরের মানচিত্র
ব্যাবিলনীয় সভ্যতায় ব্যবহৃত পঞ্জিকা বা ক্যালেন্ডার
সে সময় বেশ জাঁকজমকের সঙ্গেই পালন করা হতো বর্ষবরণ। তবে সেটা এখনকার মতো জানুয়ারির ১ তারিখে পালন করা হতো না। তখন নিউ ইয়ার পালন করা হতো বসন্তের প্রথম দিনে। বসন্তকাল এলে শীতকালের রুক্ষতা ঝেড়ে প্রকৃতি আবার নতুন করে সাজগোজ করতে শুরু করে, গাছে গাছে নতুন করে পাতা গজাতে থাকে, ফুলের কলিরা ফুটতে শুরু করে, পাখিরা ডানা ঝাপটে গান গাইতে শুরু করে। আর প্রকৃতির এই নতুন করে জেগে ওঠাকে তারা নতুন বছরের শুরু বলে চিহ্নিত করেছিলো। অবশ্য তারা তখন চাঁদ দেখে বছর গণনা করতো। তাই উৎসব শুরু হতো চাঁদ দেখে। ঈদের চাঁদ দেখার মতো তখন বর্ষবরণের চাঁদ দেখা হতো। যেদিন বসন্তের প্রথম চাঁদ উঠতো, সেদিন শুরু হতো তাদের বর্ষবরণ উৎসব। চলতো টানা ১১ দিন। এই ১১ দিনের অবশ্য আলাদা আলাদা তাৎপর্যও ছিলো।
ব্যবিলনীয় সভ্যতার পর জাঁকজমক করে নববর্ষ পালন করতো রোমানরাও। ওরা আবার ক্যালেন্ডারও তৈরি করে ফেলেছিলো। সে ক্যালেন্ডারও অবশ্য ওরা চাঁদ দেখেই বানিয়েছিলো। সেই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ওদের নববর্ষ ছিলো ১ মার্চ। কারণ প্রথম দিকে ওদের ক্যালেন্ডারে মাস ছিলো মাত্র ১০টা। জানুয়ারি আর ফেব্রুয়ারি ছিলোই না। পরে সম্রাট নুমা পম্পিলিউস জানুয়ারি আর ফেব্রুয়ারিকে ক্যালেন্ডারে যোগ করেন। সমস্যা ছিলো আরও, ওদের ক্যালেন্ডারে তারিখও ছিলো না। চাঁদের বিভিন্ন অবস্থা দিয়ে ওরা মাসের বিভিন্ন সময়কে চিহ্নিত করতো। চাঁদ ওঠার সময়কে ওরা বলতো ক্যালেন্ডস, পুরো চাঁদকে বলতো ইডেস, চাঁদের মাঝামাঝি অবস্থাকে বলতো নুনেস। পরে সম্রাট জুলিয়াস সিজার এই ক্যালেন্ডারের উন্নয়ন করেন। তিনি ক্যালেন্ডস, ইডেস, নুনেসের ঝামেলা শেষ করে বসিয়ে দেন তারিখ। ফলে বছরে মোট ৩৫৫ দিন হয়।
রোমান সভ্যতার পাথরে খোদাই করা পঞ্জিকা বা ক্যালেন্ডার
রোমান পঞ্জিকা বা ক্যালেন্ডার
রোমান সম্রাট নুমা পম্পিলিউস
রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার
কিন্তু বছর তো হওয়ার কথা ৩৬৫ দিনে। আর ১০টা দিন তাহলে গেলো কোথায়? আসলে তারা তো তখন চাঁদ দেখে বছরের হিসেব করতো। আর এখন বছরের হিসাব করা হয় সূর্য দেখে। চাঁদ দেখে হিসাব করায় বছরের কেবল ১০ দিন কমই হলো না, প্রতি বছরই হিসাব অন্য রকম হতে লাগলো। চাষীরাও পরলো সমস্যায়। এই সমস্যার সমাধান করলেন হোঞ্চাস হেডাস নামের এক রোমান। তিনি ফেব্রুয়ারির পরে আরেকটা অতিরিক্ত মাসই ঢুকিয়ে দিলেন। তখন রোমের সম্রাট জুলিয়াস সিজার। তিনি দেখলেন, অবস্থা বেগতিক। আরও লোকজন লাগিয়ে দিলেন এর সমাধান করতে। পরে চাঁদের হিসাব বাদ দিয়ে, সূর্য দেখে বছর গণনা করা শুরু হলো। ব্যস, সমস্যার সমাধান হয়ে গেলো। বছর হয়ে গেলো ৩৬৫ দিনের। তবে অনেকে বলে তার সময়ে সূর্য দেখে প্রথমে ৩৬৫ দিনের নয়, ৪৪৫ দিনের ক্যালেন্ডার বানিনো হয়েছিলো।
সব মিলিয়ে রোমান সাম্রাজ্যে এই ক্যালেন্ডার নিয়ে রাজ্যের ঝামেলা হয়েছিলো। আর তাই সে সময় কবে যে নতুন বছর শুরু হবে, সেটা ঠিকই করা যাচ্ছিলো না। একেক সময় একেক জায়গায় একেক দিন নতুন বছরের প্রথম দিন হিসেবে পালিত হতো। যীশুর জন্মের ৬০০ বছর আগে, অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দে ঠিক করা হয়েছিলো বর্ষবরণ হিসেবে পালন করা হবে ২৬ মার্চ তারিখটি। কিন্তু সেটা ঠিকভাবে মানাই হচ্ছিলো না। পরে সম্রাট নুমা পম্পিলিউস যখন জানুয়ারি আর ফেব্রুয়ারিকে ক্যালেন্ডারে ঢোকান, তিনি ঠিক করে দেন, জানুয়ারির ১ তারিখ হবে বছরের প্রথম দিন। ওই দিনই হবে বর্ষবরণ। কিন্তু সে কথাও ঠিকঠাক মানা হলো না। রোমানরা সেই আগের মতো মার্চের ১ তারিখেই বর্ষবরণ উৎসব করতে লাগলো। পরে সিজার যখন ৩৬৫ দিনের বছরের ঘোষণা দেন, তখন আবার বলে দেন, মার্চে নয়, বছর শুরু হবে জানুয়ারির ১ তারিখে। উৎসবও সেই দিনই হবে। এইবার কাজ হলো। বর্ষবরণ উৎসব মার্চ মাস থেকে চলে এলো জানুয়ারিতে।
পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি
অ্যালোসিয়াস লিলিয়াস
১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের প্রচলন হয়
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ইংরেজি নববর্ষ পালন করা হয়
এখনও ১ জানুয়ারিই বর্ষবরণ উদযাপন করা হয়। কিন্তু সিজারের আমলের রোমান ক্যালেন্ডারের ১ জানুয়ারি, আর এখনকার ১ জানুয়ারি কিন্তু একই দিন না। ওই সিজারের ক্যালেন্ডারেও সমস্যা ছিলো। সেই সমস্যা দূর করেন একজন ডাক্তার। তার নাম অ্যালোসিয়াস লিলিয়াস। কিন্তু তা�� নাম সেভাবে কেউ জানে না। ক্যালেন্ডারটির কথা সবাইকে জানান একজন পোপ। সবাই তাকেই চেনে। তিনি পোপ ত্রয়োদশ (১৩তম) গ্রেগরি। পোপ গ্রেগরির নাম অনুসারে ক্যালেন্ডারটির নামকরণও করা হয় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। এটিই ইংরেজি ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত।
এই ক্যালেন্ডারটি তৈরি করা হয় মাত্র ৪০০ বছর আগে, ১৫৮২ সালে। এটা ব্যবহার করা সুবিধাজনক বলে, আস্তে আস্তে সকল জাতিই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা শুরু করে। ফলে আগে যারা নিজ¯^ ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বর্ষবরণ উৎসব পালন করতো, তারাও এখন গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী জানুয়ারির ১ তারিখকে নববর্ষ হিসেবে পালন করতে শুরু করে দিলো। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়লো ১ জানুয়ারির বর্ষবরণ উৎসব। পৃথিবী জুড়েই সবাই নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণের পাশাপাশি পালন করে ইংরেজি নববর্ষ; আমরা যেমন পহেলা বৈশাখ-র পাশাপাশি উদযাপন করি হ্যাপি নিউ ইয়ারও।
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ও হ্যাপি নিউ ইয়ার বলা হয়, এখনো যে সব উৎসব পালন করা হয়, তাদের মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো উৎসব হলো ইংরেজি নববর্ষ বা বর্ষবরণ উৎসব। এই উৎসব পালন করা শুরু হয় প্রায় ৪ হাজার বছর আগে, খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দে। সে সময় মেসোপটেমীয় সভ্যতায় প্রথম বর্ষবরণ উৎসব চালু হয়। প্রাচীন মেসোপটেমিয়ায় যে সভ্যতা গড়ে উঠেছিলো, তাকে বলা হয় মেসোপটেমীয় সভ্যতা। বর্তমান ইরাককে প্রাচীনকালে বলা হতো মেসোপটেমিয়া। এই মেসোপটেমিয়ান সভ্যতার আবার ৪টা আলাদা আলাদা ভাগ আছে, সুমেরীয় সভ্যতা, ব্যবিলনীয় সভ্যতা, অ্যাসিরীয় সভ্যতা ও ক্যালডীয় সভ্যতা। এদের মধ্যে বর্ষবরণ উৎসব পালন করা শুরু হয় ব্যবিলনীয় সভ্যতায়। সে সময় বেশ জাঁকজমকের সঙ্গেই পালন করা হতো বর্ষবরণ। তবে সেটা এখনকার মতো জানুয়ারির ১ তারিখে পালন করা হতো না। তখন নিউ ইয়ার পালন করা হতো বসন্তের প্রথম দিনে। বসন্তকাল এলে শীতকালের রুক্ষতা ঝেড়ে প্রকৃতি আবার নতুন করে সাজগোজ করতে শুরু করে, গাছে গাছে নতুন করে পাতা গজাতে থাকে, ফুলের কলিরা ফুটতে শুরু করে, পাখিরা ডানা ঝাপটে গান গাইতে শুরু করে। আর প্রকৃতির এই নতুন করে জেগে ওঠাকে তারা নতুন বছরের শুরু বলে চিহ্নিত করেছিলো। অবশ্য তারা তখন চাঁদ দেখে বছর গণনা করতো। তাই উৎসব শুরু হতো চাঁদ দেখে। ঈদের চাঁদ দেখার মতো তখন বর্ষবরণের চাঁদ দেখা হতো। যেদিন বসন্তের প্রথম চাঁদ উঠতো, সেদিন শুরু হতো তাদের বর্ষবরণ উৎসব। চলতো টানা ১১ দিন। এই ১১ দিনের অবশ্য আলাদা আলাদা তাৎপর্যও ছিলো। ব্যবিলনীয় সভ্যতার পর জাঁকজমক করে নববর্ষ পালন করতো রোমানরাও। ওরা আবার ক্যালেন্ডারও তৈরি করে ফেলেছিলো। সে ক্যালেন্ডারও অবশ্য ওরা চাঁদ দেখেই বানিয়েছিলো। সেই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ওদের নববর্ষ ছিলো ১ মার্চ। কারণ প্রথম দিকে ওদের ক্যালেন্ডারে মাস ছিলো মাত্র ১০টা। জানুয়ারি আর ফেব্রুয়ারি ছিলোই না। পরে সম্রাট নুমা পম্পিলিউস জানুয়ারি আর ফেব্রুয়ারিকে ক্যালেন্ডারে যোগ করেন। সমস্যা ছিলো আরও, ওদের ক্যালেন্ডারে তারিখও ছিলো না। চাঁদের বিভিন্ন অবস্থা দিয়ে ওরা মাসের বিভিন্ন সময়কে চিহ্নিত করতো। চাঁদ ওঠার সময়কে ওরা বলতো ক্যালেন্ডস, পুরো চাঁদকে বলতো ইডেস, চাঁদের মাঝামাঝি অবস্থাকে বলতো নুনেস। পরে সম্রাট জুলিয়াস সিজার এই ক্যালেন্ডারের উন্নয়ন করেন। তিনি ক্যালেন্ডস, ইডেস, নুনেসের ঝামেলা শেষ করে বসিয়ে দেন তারিখ। ফলে বছরে মোট ৩৫৫ দিন হয়। কিন্তু বছর তো হওয়ার কথা ৩৬৫ দিনে। আর ১০টা দিন তাহলে গেলো কোথায়? আসলে তারা তো তখন চাঁদ দেখে বছরের হিসেব করতো। আর এখন বছরের হিসাব করা হয় সূর্য দেখে। চাঁদ দেখে হিসাব করায় বছরের কেবল ১০ দিন কমই হলো না, প্রতি বছরই হিসাব অন্য রকম হতে লাগলো। চাষীরাও পরলো সমস্যায়। এই সমস্যার সমাধান করলেন হোঞ্চাস হেডাস নামের এক রোমান। তিনি ফেব্রুয়ারির পরে আরেকটা অতিরিক্ত মাসই ঢুকিয়ে দিলেন। তখন রোমের সম্রাট জুলিয়াস সিজার। তিনি দেখলেন, অবস্থা বেগতিক। আরও লোকজন লাগিয়ে দিলেন এর সমাধান করতে। পরে চাঁদের হিসাব বাদ দিয়ে, সূর্য দেখে বছর গণনা করা শুরু হলো। ব্যস, সমস্যার সমাধান হয়ে গেলো। বছর হয়ে গেলো ৩৬৫ দিনের। তবে অনেকে বলে তার সময়ে সূর্য দেখে প্রথমে ৩৬৫ দিনের নয়, ৪৪৫ দিনের ক্যালেন্ডার বানিনো হয়েছিলো। সব মিলিয়ে রোমান সাম্রাজ্যে এই ক্যালেন্ডার নিয়ে রাজ্যের ঝামেলা হয়েছিলো। আর তাই সে সময় কবে যে নতুন বছর শুরু হবে, সেটা ঠিকই করা যাচ্ছিলো না। একেক সময় একেক জায়গায় একেক দিন নতুন বছরের প্রথম দিন হিসেবে পালিত হতো। যীশুর জন্মের ৬০০ বছর আগে, অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দে ঠিক করা হয়েছিলো বর্ষবরণ হিসেবে পালন করা হবে ২৬ মার্চ তারিখটি। কিন্তু সেটা ঠিকভাবে মানাই হচ্ছিলো না। পরে সম্রাট নুমা পম্পিলিউস যখন জানুয়ারি আর ফেব্রুয়ারিকে ক্যালেন্ডারে ঢোকান, তিনি ঠিক করে দেন, জানুয়ারির ১ তারিখ হবে বছরের প্রথম দিন। ওই দিনই হবে বর্ষবরণ। কিন্তু সে কথাও ঠিকঠাক মানা হলো না। রোমানরা সেই আগের মতো মার্চের ১ তারিখেই বর্ষবরণ উৎসব করতে লাগলো। পরে সিজার যখন ৩৬৫ দিনের বছরের ঘোষণা দেন, তখন আবার বলে দেন, মার্চে নয়, বছর শুরু হবে জানুয়ারির ১ তারিখে। উৎসবও সেই দিনই হবে। এইবার কাজ হলো। বর্ষবরণ উৎসব মার্চ মাস থেকে চলে এলো জানুয়ারিতে। এখনও ১ জানুয়ারিই বর্ষবরণ উদযাপন করা হয়। কিন্তু সিজারের আমলের রোমান ক্যালেন্ডারের ১ জানুয়ারি, আর এখনকার ১ জানুয়ারি কিন্তু একই দিন না। ওই সিজারের ক্যালেন্ডারেও সমস্যা ছিলো। সেই সমস্যা দূর করেন একজন ডাক্তার। তার নাম অ্যালোসিয়াস লিলিয়াস। কিন্তু তার নাম সেভাবে কেউ জানে না। ক্যালেন্ডারটির কথা সবাইকে জানান একজন পোপ। সবাই তাকেই চেনে। তিনি পোপ ত্রয়োদশ (১৩তম) গ্রেগরি। পোপ গ্রেগরির নাম অনুসারে ক্যালেন্ডারটির নামকরণও করা হয় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। এটিই ইংরেজি ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত। এই ক্যালেন্ডারটি তৈরি করা হয় মাত্র ৪০০ বছর আগে, ১৫৮২ সালে। এটা ব্যবহার করা সুবিধাজনক বলে, আস্তে আস্তে সকল জাতিই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা শুরু করে। ফলে আগে যারা নিজ¯^ ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বর্ষবরণ উৎসব পালন করতো, তারাও এখন গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী জানুয়ারির ১ তারিখকে নববর্ষ হিসেবে পালন করতে শুরু করে দিলো। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়লো ১ জানুয়ারির বর্ষবরণ উৎসব। পৃথিবী জুড়েই সবাই নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণের পাশাপাশি পালন করে ইংরেজি নববর্ষ; আমরা যেমন পহেলা বৈশাখ-র পাশাপাশি উদযাপন করি হ্যাপি নিউ ইয়ারও।
0 notes
nabeelonusurjo-blog · 9 years ago
Text
পৃথিবীর দুইটি বিখ্যাত জলপ্রপাত হল নায়াগ্রা আর ভিক্টোরিয়া। নায়াগ্রা জলপ্রপাতের দেশ আমেরিকার এক সময়কার রাষ্ট্রপতি রুজভেল্টের স্ত্রী একবার গিয়েছিলেন ইগুয়াজু জলপ্রপাত দেখতে। জলপ্রপাতটি দেখে তিনি এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন, আপন মনে তার মুখ দিয়ে উচ্চারিত হয়েছিল, আহারে, হতভাগা নায়াগ্রা!
হ্যাঁ, এই ইগুয়াজু জলপ্রপাত এতটাই বিশাল, আর এতটাই সুন্দর। প্রতি বছর অন্তত দশ লাখ পর্যটক স্রেফ এই জলপ্রপাত দেখতেই আসেন। অসম্ভব সুন্দর এই জলপ্রপাতের অবস্থান ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা সীমান্তের আটলান্টিক বনের ভেতর। এর একপাশে ব্রাজিলের পারানা প্রদেশ, আরেকপাশে আর্জেন্টিনার মিজোনেস প্রদেশ। স্বাভাবিকভাবেই, দুই পাশের দুইটি শহরেরই নামকরণ হয়েছে এই জলপ্রপাতের নামে। কাছের ব্রাজিলের শহরটির নাম ফোজ দে ইগুয়াচু, আর্জেন্টিনার শহরটির নাম পুয়োর্তো ইগুয়াজু।
অবশ্য ইগুয়াজু কোনো একটি জলপ্রপাত নয়। এইখানে এসে ইগুয়াজু নদীর পানি অজস্র ধারায় বিভক্ত হয়ে অসংখ্য জলপ্রপাতের সৃষ্টি করেছে। সবগুলো জলপ্রপাত মিলিয়ে একসঙ্গে বলা হয় ইগুয়াজু জলপ্রপাত। সব মিলিয়ে জলপ্রপাতের সংখ্যা অন্তত ২৭৫টি। অবশ্য ঋতুবদলের সঙ্গে সঙ্গে জলপ্রপাতের সংখ্যাও বাড়ে-কমে। সবগুলো মিলিয়ে জলপ্রপাতটি প্রায় ২.৭ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। এই হিসেবে জলপ্রপাতটি দৈর্ঘ্যে ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের চেয়েও বড়। আর নায়াগ্রার সঙ্গে তুলনায় তো তিনগুণ বড়!
Tourists viewing the falls from Isla San Martin, Iguazu Falls
ইগুয়াজুর জলপ্রপাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাতটির নাম ডেভিল’স থ্রোট। ঘোড়ার খুরের আকৃতির এই জলপ্রপাতটিও ১৪টি ধারার সমষ্টি। ইগুয়াজুর জলপ্রপাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উঁচু এই জলপ্রপাতটির উচ্চতা প্রায় ৮০ মিটার। সে হিসেবে ইগুয়াজু নায়াগ্রার চেয়ে প্রায় দুই গুণ উঁচু। এরচেয়ে উঁচু জলপ্রপাত পৃথিবীতে আছেই আর মোটে একটি- ভিক্টোরিয়া। জিম্বাবুয়ে-জাম্বিয়া সীমান্তে অবস্থিত ভিক্টোরিয়ার উচ্চতা ১০৮ মিটার।
ইগুয়াজু জলপ্রপাত দিয়ে যে পরিমাণ পানি প্রতিনিয়ত বয়ে চলেছে, তার পরিমাণও বিস্ময়কর। ওখান দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে গড়ে দেড় হাজার কিউবিক মিটার পানি প্রবাহিত হয়। এই পানির পরিমাণও ঋতুভেদে কম-বেশি হয়। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত, মানে ওখানে যখন বর্ষাকাল, তখন এই প্রবাহিত পানির পরিমাণ বেড়ে হয়ে যায় তের হাজার কিউবিক মিটার!
এই ইগুয়াজু জলপ্রপাতটির নামকরণ করা হয়েছে স্থানীয় আদিবাসী গুয়ারানিদের ভাষায়। অর্থ বিশালাকারের পানি। এই বিশাল পানির রাজ্যে যাওয়া যায় দুই দিক দিয়েই- ব্রাজিল দিয়েও, আর্জেন্টিনা দিয়েও। দুই দেশের রাজধানী থেকেই জলপ্রপাতটির দূরত্ব প্রায় সমানই, ১২ কিলোমিটারের মতোন। পার্থক্য হল, আর্জেন্টিনা দিয়ে গেলে পায়ে-চলা পথ দিয়ে একেবারে জলপ্রপাতগুলোর কাছে চলে যাওয়া যায়। এমনকি নৌকা নিয়ে চলে যাওয়া যায় ডেভিল’স থ্রোট পর্যন্ত। আবার ব্রাজিল দিয়ে গেলে পুরো ইগুয়াজু একসাথে দেখা যায়। যাকে বলে, প্যানারমিক ভিউতে দেখা। তাতে ইগুয়াজুর বিশালত্ব একদম ঠিকঠাক উপলব্ধি করা যায়।
১৯৮৪ সালে ইউনেস্কো এই ইগুয়াজু জলপ্রপাতকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করে। আর ২০১১ সালে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচন করা হলে, ইগুয়াজু সেই সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা করে নেয়।
ওখানে সব মিলিয়ে জলপ্রপাতের সংখ্যা অন্তত ২৭৫টি। সবগুলোকে একসঙ্গে বলা হয় ইগুয়াজু জলপ্রপাত। পৃথিবীর দুইটি বিখ্যাত জলপ্রপাত হল নায়াগ্রা আর ভিক্টোরিয়া। নায়াগ্রা জলপ্রপাতের দেশ আমেরিকার এক সময়কার রাষ্ট্রপতি রুজভেল্টের স্ত্রী একবার গিয়েছিলেন ইগুয়াজু জলপ্রপাত দেখতে। জলপ্রপাতটি দেখে তিনি এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন, আপন মনে তার মুখ দিয়ে উচ্চারিত হয়েছিল, আহারে, হতভাগা নায়াগ্রা! হ্যাঁ, এই ইগুয়াজু জলপ্রপাত এতটাই বিশাল, আর এতটাই সুন্দর। প্রতি বছর অন্তত দশ লাখ পর্যটক স্রেফ এই জলপ্রপাত দেখতেই আসেন। অসম্ভব সুন্দর এই জলপ্রপাতের অবস্থান ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা সীমান্তের আটলান্টিক বনের ভেতর। এর একপাশে ব্রাজিলের পারানা প্রদেশ, আরেকপাশে আর্জেন্টিনার মিজোনেস প্রদেশ। স্বাভাবিকভাবেই, দুই পাশের দুইটি শহরেরই নামকরণ হয়েছে এই জলপ্রপাতের নামে। কাছের ব্রাজিলের শহরটির নাম ফোজ দে ইগুয়াচু, আর্জেন্টিনার শহরটির নাম পুয়োর্তো ইগুয়াজু। অবশ্য ইগুয়াজু কোনো একটি জলপ্রপাত নয়। এইখানে এসে ইগুয়াজু নদীর পানি অজস্র ধারায় বিভক্ত হয়ে অসংখ্য জলপ্রপাতের সৃষ্টি করেছে। সবগুলো জলপ্রপাত মিলিয়ে একসঙ্গে বলা হয় ইগুয়াজু জলপ্রপাত। সব মিলিয়ে জলপ্রপাতের সংখ্যা অন্তত ২৭৫টি। অবশ্য ঋতুবদলের সঙ্গে সঙ্গে জলপ্রপাতের সংখ্যাও বাড়ে-কমে। সবগুলো মিলিয়ে জলপ্রপাতটি প্রায় ২.৭ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। এই হিসেবে জলপ্রপাতটি দৈর্ঘ্যে ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের চেয়েও বড়। আর নায়াগ্রার সঙ্গে তুলনায় তো তিনগুণ বড়! ইগুয়াজুর জলপ্রপাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাতটির নাম ডেভিল’স থ্রোট। ঘোড়ার খুরের আকৃতির এই জলপ্রপাতটিও ১৪টি ধারার সমষ্টি। ইগুয়াজুর জলপ্রপাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উঁচু এই জলপ্রপাতটির উচ্চতা প্রায় ৮০ মিটার। সে হিসেবে ইগুয়াজু নায়াগ্রার চেয়ে প্রায় দুই গুণ উঁচু। এরচেয়ে উঁচু জলপ্রপাত পৃথিবীতে আছেই আর মোটে একটি- ভিক্টোরিয়া। জিম্বাবুয়ে-জাম্বিয়া সীমান্তে অবস্থিত ভিক্টোরিয়ার উচ্চতা ১০৮ মিটার। ইগুয়াজু জলপ্রপাত দিয়ে যে পরিমাণ পানি প্রতিনিয়ত বয়ে চলেছে, তার পরিমাণও বিস্ময়কর। ওখান দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে গড়ে দেড় হাজার কিউবিক মিটার পানি প্রবাহিত হয়। এই পানির পরিমাণও ঋতুভেদে কম-বেশি হয়। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত, মানে ওখানে যখন বর্ষাকাল, তখন এই প্রবাহিত পানির পরিমাণ বেড়ে হয়ে যায় তের হাজার কিউবিক মিটার! এই ইগুয়াজু জলপ্রপাতটির নামকরণ করা হয়েছে স্থানীয় আদিবাসী গুয়ারানিদের ভাষায়। অর্থ বিশালাকারের পানি। এই বিশাল পানির রাজ্যে যাওয়া যায় দুই দিক দিয়েই- ব্রাজিল দিয়েও, আর্জেন্টিনা দিয়েও। দুই দেশের রাজধানী থেকেই জলপ্রপাতটির দূরত্ব প্রায় সমানই, ১২ কিলোমিটারের মতোন। পার্থক্য হল, আর্জেন্টিনা দিয়ে গেলে পায়ে-চলা পথ দিয়ে একেবারে জলপ্রপাতগুলোর কাছে চলে যাওয়া যায়। এমনকি নৌকা নিয়ে চলে যাওয়া যায় ডেভিল’স থ্রোট পর্যন্ত। আবার ব্রাজিল দিয়ে গেলে পুরো ইগুয়াজু একসাথে দেখা যায়। যাকে বলে, প্যানারমিক ভিউতে দেখা। তাতে ইগুয়াজুর বিশালত্ব একদম ঠিকঠাক উপলব্ধি করা যায়। ১৯৮৪ সালে ইউনেস্কো এই ইগুয়াজু জলপ্রপাতকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করে। আর ২০১১ সালে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচন করা হলে, ইগুয়াজু সেই সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা করে নেয়।
0 notes
nabeelonusurjo-blog · 9 years ago
Text
  চিঠির জগতে পোস্টকার্ড যেন এক বনেদি বংশ। দেখতে কেমন সুন্দর, পরিপাটি আর ঝাঁ-চকচকে। পোস্টকার্ড মানুষের এতটাই পছন্দের জিনিস, যে কেবল পোস্টকার্ডের উপর পড়াশোনার করারও ব্যবস্থা আছে। তার পোশাকি নাম ‘ডেলটিওলোজি’। কাজেই বোঝা যাচ্ছে, পোস্টকার্ড মোটেই হেলাফেলা করার জিনিস না।
পৃথিবীর প্রথম স্ট্যাম্প বা ডাকটিকিটের নাম ব্ল্যাক পেনি। ইংল্যান্ডের রানির ছবিওয়ালা এই ডাকটিকিট বসিয়েই থিওডোর হুক বলে এক লোক বানিয়েছিলেন পৃথিবীর প্রথম পোস্টকার্ড। তবে তিনি কিন্তু ওই পোস্টকার্ডটি বানিয়েছিলেন স্রেফ মজা করে। পাঠিয়েছিলেনও নিজের ঠিকানাতেই। তাতে ছবি হিসেবে ছিলো পোস্টঅফিসের একটা ক্যারিকেচার, মানে কার্টুন আরকি।
তার সেই মজা করে পাঠানো ছবি থেকেই শুরু হয় পোস্টকার্ডের চল। তখন অবশ্য এখনকার মতো আলাদা করে পোস্টকার্ড পাওয়া যেত না। খামের উপরে একটা ছবি এঁকে সেটাকেই পাঠানো হতো। বেশি আঁকা হতো কমিকস কিংবা মিউজিক্যাল ছবি। পরে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা এ রকম পোস্টকার্ড বানিয়ে বিক্রি করা শুরু করে। তারও অনেক পরে সরকারিভাবে পোস্টকার্ড বানানো শুরু হয়।
সরকারিভাবে পোস্টকার্ড বানানোর কাজ প্রথম করে হাঙ্গেরি। এরপর একে একে সব দেশেই পোস্টকার্ডের চল শুরু হতে থাকে। তখনো অবশ্য পোস্টকার্ডগুলো সাধারণত সাদাকালো হতো। নয়তো একরঙা। প্রথম রঙিন পোস্টকার্ড বের করা হয় ১৮৮৯ সালে।
এভাবে ছাপানো পোস্টকার্ডের চল শুরু হলো। সবাই সে সব পোস্টকার্ডের একপাশে অল্প করে কিছু লিখে পাঠাতেও শুরু করলো। তখন কার্ডগুলোর একপাশে শুধু ঠিকানা লেখা হতো। আরেকপাশে থাকতো ছবি। কিছু লিখতে চাইলে ছবির পাশেই লিখতে হতো। এতে না ছবিটা সুন্দর থাকতো, না কথাগুলো মনমতো লেখা যেতো। এই সমস্যা দূর করার জন্য বৃটেনে নতুন এক ধরনের পোস্টকার্ড বের করা হলো। এই কার্ডের একপাশে থাকতো সুন্দর সুন্দর ছবি। আরেকপাশে দাগ টেনে দুই ভাগ করা থাকতো। একপাশে ঠিকানার জায়গা, আরেকপাশে লেখার জায়গা। দেখাদেখি ফ্রান্স, জার্মানি, আমেরিকাসহ সব দেশই এইভাবে পোস্টকার্ড ছাপাতে শুরু করলো। নতুন এই পোস্টকার্ড ভীষণ জনপ্রিয়ও হয়ে উঠলো। তাতে যে সুন্দর সুন্দর ছবির সঙ্গে অল্প করে চিঠিও লেখা যায়।
এরপর পোস্টকার্ডের যে নতুন ধরন আসলো, সেটার একটা খুব সুন্দর নামও দেয়া হয়েছে- ‘হোয়াইট বর্ডার কার্ডস’। এ সময় থেকেই পোস্টকার্ডগুলোতে বর্ডার দেয়া শুরু হলো। সব পোস্টকার্ডের ছবিগুলোর চারপাশে সাদা রঙের বর্ডার দেয়া থাকতো। সঙ্গে ছবিগুলোও আগের চেয়ে সুন্দর হয়ে উঠলো। পোস্টকার্ডের কাগজেও পরিবর্তন আসলো। ব্যবহার করা শুরু হলো লিনেন কাগজ। ফলে পোস্টকার্ডগুলো আরো রঙিন আর উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।
চল্লিশের দশকে পোস্টকার্ডের কাগজ শেষবারের মতো পাল্টালো। এবার লিনেন কাগজের বদলে ব্যবহার করা শুরু হলো ফটোক্রোম পেপার। ফলে কার্ডগুলো যেমন সুন্দর হলো, তেমনি হলো চকচকে ঝকঝকে। পোস্টকার্ড বানাতে এখনও এই কাগজই ব্যবহার করা হচ্ছে।
পোস্টকার্ড যে শুধু কাগজ দিয়েই তৈরি হয়, তা কিন্তু নয়। অনেক পোস্টকার্ড কাঠ দিয়ে, প্লাস্টিক দিয়ে, চামড়া দিয়ে, সিল্ক দিয়ে, এমনকি বিভিন্ন ধাতু দিয়েও অনেক পোস্টকার্ড তৈরি করা হয়েছে।
চিঠির জগতে পোস্টকার্ড যেন এক বনেদি বংশ। দেখতে কেমন সুন্দর, পরিপাটি আর ঝাঁ-চকচকে। চিঠির জগতে পোস্টকার্ড যেন এক বনেদি বংশ। দেখতে কেমন সুন্দর, পরিপাটি আর ঝাঁ-চকচকে। পোস্টকার্ড মানুষের এতটাই পছন্দের জিনিস, যে কেবল পোস্টকার্ডের উপর পড়াশোনার করারও ব্যবস্থা আছে। তার পোশাকি নাম ‘ডেলটিওলোজি’। কাজেই বোঝা যাচ্ছে, পোস্টকার্ড মোটেই হেলাফেলা করার জিনিস না। পৃথিবীর প্রথম স্ট্যাম্প বা ডাকটিকিটের নাম ব্ল্যাক পেনি। ইংল্যান্ডের রানির ছবিওয়ালা এই ডাকটিকিট বসিয়েই থিওডোর হুক বলে এক লোক বানিয়েছিলেন পৃথিবীর প্রথম পোস্টকার্ড। তবে তিনি কিন্তু ওই পোস্টকার্ডটি বানিয়েছিলেন স্রেফ মজা করে। পাঠিয়েছিলেনও নিজের ঠিকানাতেই। তাতে ছবি হিসেবে ছিলো পোস্টঅফিসের একটা ক্যারিকেচার, মানে কার্টুন আরকি। তার সেই মজা করে পাঠানো ছবি থেকেই শুরু হয় পোস্টকার্ডের চল। তখন অবশ্য এখনকার মতো আলাদা করে পোস্টকার্ড পাওয়া যেত না। খামের উপরে একটা ছবি এঁকে সেটাকেই পাঠানো হতো। বেশি আঁকা হতো কমিকস কিংবা মিউজিক্যাল ছবি। পরে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা এ রকম পোস্টকার্ড বানিয়ে বিক্রি করা শুরু করে। তারও অনেক পরে সরকারিভাবে পোস্টকার্ড বানানো শুরু হয়। সরকারিভাবে পোস্টকার্ড বানানোর কাজ প্রথম করে হাঙ্গেরি। এরপর একে একে সব দেশেই পোস্টকার্ডের চল শুরু হতে থাকে। তখনো অবশ্য পোস্টকার্ডগুলো সাধারণত সাদাকালো হতো। নয়তো একরঙা। প্রথম রঙিন পোস্টকার্ড বের করা হয় ১৮৮৯ সালে। এভাবে ছাপানো পোস্টকার্ডের চল শুরু হলো। সবাই সে সব পোস্টকার্ডের একপাশে অল্প করে কিছু লিখে পাঠাতেও শুরু করলো। তখন কার্ডগুলোর একপাশে শুধু ঠিকানা লেখা হতো। আরেকপাশে থাকতো ছবি। কিছু লিখতে চাইলে ছবির পাশেই লিখতে হতো। এতে না ছবিটা সুন্দর থাকতো, না কথাগুলো মনমতো লেখা যেতো। এই সমস্যা দূর করার জন্য বৃটেনে নতুন এক ধরনের পোস্টকার্ড বের করা হলো। এই কার্ডের একপাশে থাকতো সুন্দর সুন্দর ছবি। আরেকপাশে দাগ টেনে দুই ভাগ করা থাকতো। একপাশে ঠিকানার জায়গা, আরেকপাশে লেখার জায়গা। দেখাদেখি ফ্রান্স, জার্মানি, আমেরিকাসহ সব দেশই এইভাবে পোস্টকার্ড ছাপাতে শুরু করলো। নতুন এই পোস্টকার্ড ভীষণ জনপ্রিয়ও হয়ে উঠলো। তাতে যে সুন্দর সুন্দর ছবির সঙ্গে অল্প করে চিঠিও লেখা যায়। এরপর পোস্টকার্ডের যে নতুন ধরন আসলো, সেটার একটা খুব সুন্দর নামও দেয়া হয়েছে- ‘হোয়াইট বর্ডার কার্ডস’। এ সময় থেকেই পোস্টকার্ডগুলোতে বর্ডার দেয়া শুরু হলো। সব পোস্টকার্ডের ছবিগুলোর চারপাশে সাদা রঙের বর্ডার দেয়া থাকতো। সঙ্গে ছবিগুলোও আগের চেয়ে সুন্দর হয়ে উঠলো। পোস্টকার্ডের কাগজেও পরিবর্তন আসলো। ব্যবহার করা শুরু হলো লিনেন কাগজ। ফলে পোস্টকার্ডগুলো আরো রঙিন আর উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। চল্লিশের দশকে পোস্টকার্ডের কাগজ শেষবারের মতো পাল্টালো। এবার লিনেন কাগজের বদলে ব্যবহার করা শুরু হলো ফটোক্রোম পেপার। ফলে কার্ডগুলো যেমন সুন্দর হলো, তেমনি হলো চকচকে ঝকঝকে। পোস্টকার্ড বানাতে এখনও এই কাগজই ব্যবহার করা হচ্ছে। পোস্টকার্ড যে শুধু কাগজ দিয়েই তৈরি হয়, তা কিন্তু নয়। অনেক পোস্টকার্ড কাঠ দিয়ে, প্লাস্টিক দিয়ে, চামড়া দিয়ে, সিল্ক দিয়ে, এমনকি বিভিন্ন ধাতু দিয়েও অনেক পোস্টকার্ড তৈরি করা হয়েছে।
0 notes
nabeelonusurjo-blog · 9 years ago
Text
শহরটির নাম ব্যাটম্যান হলেও, এই শহরের সঙ্গে ডিসি কমিকসের কার্টুন চরিত্র ব্যাটম্যানর কোনোই সম্পর্ক নেই। ব্যাটম্যানের রাজত্ব কল্পিত গোথাম শহরে। অন্যদিকে সত্যিকারের এই শহরটিতে সত্যিকারের মানুষরাই বাস করে। অদ্ভুত নামের এই শহরটির অবস্থান তুরস্কে। স্থানীয় উচ্চারণ বাতমান। বাতমান অবশ্য কেবল এই শহরটির নামই নয়, প্রদেশটির নামও তাই। বাতমান নামের শহরটি এই প্রদেশের রাজধানী। শহরটি দুইটি নদীর মাঝে এক মালভূমির বুকে অবস্থিত। নদী দুইটির একটি ভুবন বিখ্যাত- তাইগ্রিস। অন্য নদীটির নামও বাতমান।
এই নদীটি অবশ্য আগে পরিচিত ছিল কালাত নামে। তখন এখানে সিরিয়াক জাতির লোকজন বাস করত। তাদের ভাষায় কালাত অর্থ বৌ। গ্রিক ভাষায় যাকে বলে নিমফিয়াস। আঠার শতক পর্যন্ত নদীটি কালাত আর নিমফিয়াস নামেই পরিচিত ছিল। উনিশ শতকের কোনো এক সময়ে নদীটির নাম বদলে যায়। নদীটি বাতমান নামে পরিচিত হতে শুরু করে।
নদীটির নাম বাতমান কেন হল, সে এক রহস্য। পাশেই অবশ্য বাতি রামান নামে একটি পর্বত আছে। অনেকের ধারণা, এই পর্বতের নামটাই খানিকটা বিকৃত হয়ে বাতমান হয়েছে। কুর্দি ভাষায় বাতি অর্থ পশ্চিম, আর রামান অর্থ আনন্দ। আবার এই রামান আরবি রাহমান শব্দের বিকৃত রূপও হতে পারে।
বাতমান নদীর তীরে বাতমান শহরটির পত্তন হয়েছে, সে অবশ্য বেশিদিন আগের কথা নয়। এই কিছুদিন আগেই ওখানে কেবলই একটা গ্রাম ছিল। জনসংখ্যা ছিল সব মিলিয়ে তিন হাজারের মতো। গ্রামটি পরিচিত ছিল ইলুহ নামে। গত শতকের চল্লিশের দশকে এই ইলুহ গ্রামে তেলের খনি আবিষ্কৃত হয়। ফলে রাতারাতি এলাকার চেহারা বদলে যায়। জনসংখ্যা বাড়তে থাকে হু হু করে। কয়েক দশকেই ইলুহ গ্রাম থেকে শহর হয়ে যায়। ১৯৫৭ সালে ইলুহর নামটাও বদলে ফেলা হয়। পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর নামে রাখা হয় বাতমান।
এই বাতমান শহর প্রথম বিশ্ববাসীর আলোচনায় আসে ২০০৮ সালে। সে বছর শহরটির মেয়র এক মামলার ঘোষণা দিয়ে শহরটিকে আলোচনায় নিয়ে আসেন। তিনি মামলা করার ঘোষণা দেন ব্যাটম্যান সিনেমার প্রযোজক সংস্থা ওয়ার্নার ব্রস এবং ডার্ক নাইট সিরিজের পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলানের বিরুদ্ধে। তার বক্তব্য, পৃথিবীতে বাতমান শহর একটাই। আর মার্কিন প্রযোজকরা সেই শহরের নামেই সিনেমা বানিয়েছে। অথচ তারা শহরটির মেয়রের কাছ থেকে একবার অনুমতি নেয়ারও প্রয়োজন বোধ করেনি!
অবশ্য সে ঘোষণাটা ছিল কেবলই আলোচনায় আসার উপলক্ষ্য। আদতে তার মামলা-টামলা করার কোনো ইচ্ছাই ছিল না। যদিও-বা করতো, তাতেও প্রযোজক-পরিচালকদের কিছুই আসতো-যেত না। কারণ, ব্যাটম্যান কমিকসের আবির্ভাব এই শহরটির জন্মেরও কয়েক দশক আগে। যেখানে শহরটির এই নামকরণ করাই হয়েছে ১৯৫৭ সালে, সেখানে ব্যাটম্যান সিরিজের প্রথম কমিক স্ট্রিপ প্রকাশিত হয় ১৯৩৯ সালে।
তুরস্কে অবশ্য কেবল ওই শহর, শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী এবং সেই প্রদেশটির নামই ব্যাটম্যান বা বাতমান নয়। ওখানে এই নামে এক ধরনের ওজনের এককও প্রচলিত। ওজন মাপতে আমরা যেমন কেজি (কিলোগ্রাম) ব্যবহার করি, তেমনি একক। ওজনের এই একক তুরস্কের প্রাচীন রাজবংশ অটোমানদের আমল থেকে প্রচলিত। এখন অবশ্য এর ব্যবহার বেশ কম। আর মুশকিল হল, ওজনের একক হলেও, এই ব্যাটম্যান বা বাতমানের কোনো সুনির্দিষ্ট মাপ নেই। একেক সময়ে এর পরিমাপ তো একেক রকম হয়েছেই। এমনকি এখনও একেক অঞ্চলে এই বাতমানের ওজন কম-বেশি হয়।
শহরটির নাম ব্যাটম্যান হলেও, এর সঙ্গে ডিসি কমিকসের কার্টুন চরিত্র ব্যাটম্যানর কোনো সম্পর্ক নেই। শহরটির নাম ব্যাটম্যান হলেও, এই শহরের সঙ্গে ডিসি কমিকসের কার্টুন চরিত্র ব্যাটম্যানর কোনোই সম্পর্ক নেই। ব্যাটম্যানের রাজত্ব কল্পিত গোথাম শহরে। অন্যদিকে সত্যিকারের এই শহরটিতে সত্যিকারের মানুষরাই বাস করে। অদ্ভুত নামের এই শহরটির অবস্থান তুরস্কে। স্থানীয় উচ্চারণ বাতমান। বাতমান অবশ্য কেবল এই শহরটির নামই নয়, প্রদেশটির নামও তাই। বাতমান নামের শহরটি এই প্রদেশের রাজধানী। শহরটি দুইটি নদীর মাঝে এক মালভূমির বুকে অবস্থিত। নদী দুইটির একটি ভুবন বিখ্যাত- তাইগ্রিস। অন্য নদীটির নামও বাতমান। এই নদীটি অবশ্য আগে পরিচিত ছিল কালাত নামে। তখন এখানে সিরিয়াক জাতির লোকজন বাস করত। তাদের ভাষায় কালাত অর্থ বৌ। গ্রিক ভাষায় যাকে বলে নিমফিয়াস। আঠার শতক পর্যন্ত নদীটি কালাত আর নিমফিয়াস নামেই পরিচিত ছিল। উনিশ শতকের কোনো এক সময়ে নদীটির নাম বদলে যায়। নদীটি বাতমান নামে পরিচিত হতে শুরু করে। নদীটির নাম বাতমান কেন হল, সে এক রহস্য। পাশেই অবশ্য বাতি রামান নামে একটি পর্বত আছে। অনেকের ধারণা, এই পর্বতের নামটাই খানিকটা বিকৃত হয়ে বাতমান হয়েছে। কুর্দি ভাষায় বাতি অর্থ পশ্চিম, আর রামান অর্থ আনন্দ। আবার এই রামান আরবি রাহমান শব্দের বিকৃত রূপও হতে পারে। বাতমান নদীর তীরে বাতমান শহরটির পত্তন হয়েছে, সে অবশ্য বেশিদিন আগের কথা নয়। এই কিছুদিন আগেই ওখানে কেবলই একটা গ্রাম ছিল। জনসংখ্যা ছিল সব মিলিয়ে তিন হাজারের মতো। গ্রামটি পরিচিত ছিল ইলুহ নামে। গত শতকের চল্লিশের দশকে এই ইলুহ গ্রামে তেলের খনি আবিষ্কৃত হয়। ফলে রাতারাতি এলাকার চেহারা বদলে যায়। জনসংখ্যা বাড়তে থাকে হু হু করে। কয়েক দশকেই ইলুহ গ্রাম থেকে শহর হয়ে যায়। ১৯৫৭ সালে ইলুহর নামটাও বদলে ফেলা হয়। পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর নামে রাখা হয় বাতমান। এই বাতমান শহর প্রথম বিশ্ববাসীর আলোচনায় আসে ২০০৮ সালে। সে বছর শহরটির মেয়র এক মামলার ঘোষণা দিয়ে শহরটিকে আলোচনায় নিয়ে আসেন। তিনি মামলা করার ঘোষণা দেন ব্যাটম্যান সিনেমার প্রযোজক সংস্থা ওয়ার্নার ব্রস এবং ডার্ক নাইট সিরিজের পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলানের বিরুদ্ধে। তার বক্তব্য, পৃথিবীতে বাতমান শহর একটাই। আর মার্কিন প্রযোজকরা সেই শহরের নামেই সিনেমা বানিয়েছে। অথচ তারা শহরটির মেয়রের কাছ থেকে একবার অনুমতি নেয়ারও প্রয়োজন বোধ করেনি! অবশ্য সে ঘোষণাটা ছিল কেবলই আলোচনায় আসার উপলক্ষ্য। আদতে তার মামলা-টামলা করার কোনো ইচ্ছাই ছিল না। যদিও-বা করতো, তাতেও প্রযোজক-পরিচালকদের কিছুই আসতো-যেত না। কারণ, ব্যাটম্যান কমিকসের আবির্ভাব এই শহরটির জন্মেরও কয়েক দশক আগে। যেখানে শহরটির এই নামকরণ করাই হয়েছে ১৯৫৭ সালে, সেখানে ব্যাটম্যান সিরিজের প্রথম কমিক স্ট্রিপ প্রকাশিত হয় ১৯৩৯ সালে। তুরস্কে অবশ্য কেবল ওই শহর, শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী এবং সেই প্রদেশটির নামই ব্যাটম্যান বা বাতমান নয়। ওখানে এই নামে এক ধরনের ওজনের এককও প্রচলিত। ওজন মাপতে আমরা যেমন কেজি (কিলোগ্রাম) ব্যবহার করি, তেমনি একক। ওজনের এই একক তুরস্কের প্রাচীন রাজবংশ অটোমানদের আমল থেকে প্রচলিত। এখন অবশ্য এর ব্যবহার বেশ কম। আর মুশকিল হল, ওজনের একক হলেও, এই ব্যাটম্যান বা বাতমানের কোনো সুনির্দিষ্ট মাপ নেই। একেক সময়ে এর পরিমাপ তো একেক রকম হয়েছেই। এমনকি এখনও একেক অঞ্চলে এই বাতমানের ওজন কম-বেশি হয়।
0 notes
nabeelonusurjo-blog · 9 years ago
Text
হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাস নিয়ে প্রথম চলচ্চিত্র নির্মিত হয় ১৯৮৪ সালে, শঙ্খনীল কারাগার। প্রশংসিতও হয়। তবে চলচ্চিত্রকার হুমায়ুন আহমেদের আবির্ভাব এরও প্রায় এক যুগ পর, ১৯৯৫ সালে। এবং সে আবির্ভাবও বেশ রাজকীয়। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে কয়টি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে, সেগুলোর অন্যতম এই আগুনের পরশমণি; বিশেষ করে সিনেমার শেষের মন্তাজটি আমাদের চোখের কোণে অশ্রু চিকচিক করাবে আরও বহুদিন।
আগুনের পরশমণি দিয়ে তিনি সিনেমা জগতে প্রবেশ করলেও, এবং সে সিনেমা ৮ ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেলেও, চলচ্চিত্রকার হিসেবে হুমায়ুন আহমেদের সত্যিকার প্রতিষ্ঠা শ্রাবণ মেঘের দিন-এ। কারণ মূলত, শ্রাবণ মেঘের দিন প্রেম-ভালোবাসায় আমাদের মূলধারার চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পেরেছিল। আর এই সিনেমাটি হুমায়ুন আহমেদের পরিচালিত—এর বাইরেও বেশ কিছু তাৎপর্য বহন করে। বিশেষত সিনেমাটিতে গানের ব্যবহার বিশেষ উল্লেখযোগ্য; গানগুলো লোকজ, এবং সেগুলোর ব্যবহার সিনেমাটিকে অনেকখানিই মিউজিক্যাল করে তুলেছে। সবচেয়ে বড় কথা, সমসাময়িক চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে শ্রাবণ মেঘের দিন সেই গুটিকয়েক চলচ্চিত্রের একটি, যেগুলোর গান এখনও আমরা তন্ময় হয়ে শুনি, তন্ময় হয়ে গাই।
একই বছরে মুক্তি পাওয়া তার দুই দুয়ারী চলচ্চিত্রটি তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। বিপরীতে, ২০০৩ ও ২০০৪ সালে পিঠাপিঠি মুক্তি পাওয়া চন্দ্রকথা ও শ্যামলছায়া অবশ্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত চন্দ্রকথার আখ্যান আর শ্যামলছায়ায় মুক্তিযুদ্ধ আমাদের আকর্ষণ করে। নয় নম্বর বিপদ সংকেত সম্ভবত হুমায়ুন আহমেদের সবচেয়ে দুর্বল চলচ্চিত্র। অন্যদিকে দারুচিনি দ্বীপ ও আমার আছে জল নিতান্তই বাজারি কাজ বলেই মনে হয়। এগুলোর বিপরীতে ঘেঁটুপুত্র কমলাকে মনে হয় পরিচালক হুমায়ুন আহমেদের সবচেয়ে পরিণত কাজ। চলচ্চিত্রটি অস্কারের জন্য বাংলাদেশ থেকে মনোনীতও হয়।
হুমায়ুন আহমেদের শিল্পচর্চার অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করা যায়; একটি বৈশিষ্ট্য—‍তিনি রচনায়-চলচ্চিত্রে কিছু মেদ রাখেন, যেই মেদ তার নিজস্ব পাঠক-দর্শক বেশ উপভোগ করে। তার প্রথম সাতটি চলচ্চিত্রেই এই মেদ কিছু-না-কিছু পরিমাণে আছে। দুই দুয়া��ী, নয় নম্বর বিপদ সংকেত আর আমার আছে জল তো এই মেদে পরিপূর্ণ। ঘেঁটুপুত্র কমলা এই দিক দিয়ে বেশ ব্যতিক্রম; পুরো সিনেমাতে অতিরিক্ত অংশ প্রায় নেই বললেই চলে। সিনেমার মাঝামাঝি অংশে জমিদারের গ্রাম ঘুরে ঘুরে দেখা এবং বেশ কিছু ঔদার্যপূর্ণ কাজ করার যে দৃশ্যগুলো, সেগুলোকে আপাতদৃষ্টিতে অপ্রয়োজনীয় মনে হলেও, সেগুলোরও বিশেষ প্রয়োজন আছে; মূলত এটা বোঝাতে যে, ঘেঁটুপুত্র রাখার প্রথাটি তখন মোটেও নিন্দনীয় ছিল না, জমিদার মাত্রই ঘেঁটু রাখতেন; সে ভালো জমিদারই হোন আর খারাপ।
হুমায়ুন আহমেদের গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্রগুলোর আলোকে চলচ্চিত্রকার হুমায়ুন আহমেদের বেশ কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্যও চিহ্নিত করা যেতে পারে। যেমন, হুমায়ুন আহমেদ হাওড় অঞ্চলের কাহিনি নিয়ে সিনেমা বানাতে পছন্দ করেন; এটি সম্ভবত তার নেত্রকোণায় জন্ম ও নেত্রকোণো-সিলেটে কাটানো তার ছোটবেলার প্রভাব। তার চলচ্চিত্রে প্রায়ই জমিদার চরিত্র পাওয়া যায়, প্রায়ই আধুনিক সভ্যতার কাছে তাদের প্রাচীনপন্থিতার পতন ঘটে। পাশাপাশি তিনি যখনই সুযোগ পান, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সদর্থক দৃষ্টিতে ফিরে তাকান; এটি সুনিশ্চিতভাবেই এসেছে তার একাত্তরের প্রত্যক্ষ স্মৃতি থেকে, বিশেষ করে তার বাবার স্মৃতি থেকে।
হুমায়ুন আহমেদের ছোট ভাই আহসান হাবীব একবার বড় ভাইয়ের সিনেমা নিয়ে ভাবনার কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন, হুমায়ুন আহমেদ সিনেমা নিয়ে একটু বেশি-ই ভাবতেন। তার মাথায় এই ভাবনাগুলো না থাকলে তিনি হয়তো আরও কিছুদিন বেশি বাঁচতেন। কিন্তু বিপরীতে এ-ও তো সত্য, সিনেমা নিয়ে ঠিক ওই সময় হুমায়ুন আহমেদের ভাবনাও তো জরুরি ছিল। হুমায়ুন আহমেদ তো বাংলাদেশের সিনেমার সেই সময়েরই একজন নিষ্কলঙ্ক প্রতিনিধি, যখন বাংলাদেশের সিনেমা ক্রমশ অন্ধকার থেকে অন্ধকারের পথে যাত্রা করছিল। তিনি তো তাদেরই একজন, যাদের হাত ধরে বাংলাদেশের সিনেমা সেই অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এসেছিল।
চলচ্চিত্রকার হুমায়ুন আহমেদ হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাস নিয়ে প্রথম চলচ্চিত্র নির্মিত হয় ১৯৮৪ সালে, শঙ্খনীল কারাগার। প্রশংসিতও হয়। তবে চলচ্চিত্রকার হুমায়ুন আহমেদের আবির্ভাব এরও প্রায় এক যুগ পর, ১৯৯৫ সালে। এবং সে আবির্ভাবও বেশ রাজকীয়। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে কয়টি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে, সেগুলোর অন্যতম এই …
0 notes
nabeelonusurjo-blog · 9 years ago
Text
১৩ অক্টোবর ২০১৬। নোবেল কমিটি ঘোষণা করল এ বছরের সাহিত্যে নোবেল-বিজয়ীর নাম। প্রতি বছরের মতোই এবারও সম্ভাবনাময় হিসেবে বেশ কয়েকটি নাম উড়ে বেড়াচ্ছিল। তাদের মধ্যে ছিলেন মিলান কুন্ডেরা আর হারুকি মুরাকামির মতো হেভিওয়েট প্রার্থীরাও। কিন্তু তাদের কেউ তো নয়ই, সাহিত্যে নোবেল-বিজয়ী হিসেবে নোবেল কমিটি এমন একজনের নাম ঘোষণা করল, যার নাম শোনার জন্য কেউ-ই প্রস্তুত ছিল না। সে ঘোষণা শোনার পর সব সাহিত্য-সমঝদারকেই চমকে উঠে খানিকক্ষণের জন্য হতবুদ্ধি হতেই হয়েছে। তারপর থেকে কেউ কেউ এ সিদ্ধান্তকে প্রশংসার বৃষ্টিতে ভাসাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ব্যাপারটাকে একেবারেই মেনে নিতে পারছেন না। অনেকে তো জাত গেল, জাত গেল রবও তুলছেন।
Local Input~ April 19, 2005 – Bob Dylan from Like A Rolling Stone. Photo courtesy of Harper Collins Canada Ltd. BOOKS-Austin Request Bob Dylan’s songs still echo, but his time is gone. Bob Dylan, who is officially a senior citizen, is hotter now than he’s been since he was in his mid-30s. Check out our Dylan photo gallery, 10 essential songs, fascinating factoids about the singer/composer and a Dylan discography.
অবশ্য সাহিত্যে নোবেল প্রায়ই চমক হয়ে আসে। যেমন এসেছিল ১৯১৩ সালে। সকল সাহিত্য-সমঝদারদের চমকে দিয়ে, হেভিওয়েট সব প্রার্থীদের ভক্তদের হতাশ করে, নোবেল পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর তাই নিয়ে সে ঘোষণার পরপরই শুরু হয়েছিল রাজ্যের সমালোচনা। এমনটা হয়েছিল ১৯৮৩ সালেও। তার আগের বছরেই নোবেল পেয়েছিলেন গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ। সবার ধারণা ছিল, মার্কেজের মতো বিশ্বজুড়ে আলোচিত ও জনপ্রিয় একজনকে নোবেল দেয়ার পরের বছর, অমন না হলেও, বিশ্বজুড়ে অন্তত পরিচিতি আছে এমন কাউকে নোবেল দেয়া হবে। অথচ নোবেল দেয়া হলো উইলিয়াম গোল্ডিংকে। যার পরিচিতি মূলত তার প্রথম উপন্যাসটার জন্যই- লর্ড অফ দ্য ফ্লাইস।
নোবেল কমিটি সাহিত্যে নোবেল দিতে গিয়ে এমনিভাবে চমকে দিয়েছে প্রায়ই। কিন্তু এর আগের কোনো বারেই এমন ভয়ংকরভাবে চমকে দেয়নি। কারণ, এবার যে সাহিত্যে নোবেল জিতলেন রবার্ট অ্যালেন জিমারম্যান, ওরফে বব ডিলান। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, তিনি তো সাহিত্যিকই নন। পেশায় তিনি গায়ক। তার পরিচয় মূলত সঙ্গীত-রচয়িতা ও সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে। অর্থাৎ তিনি সঙ্গীতের লোক, সাহিত্যের নন। আর এই ঘোষণায় যারা গোস্বা করেছেন, তাদের মূল আপত্তিটাও সেখানেই। একজন সঙ্গীতের লোককে কেন সাহিত্যে নোবেল দেয়া হলো!
হ্যাঁ, তাকে সঙ্গীতের লোক হিসেবেই সাহিত্যে নোবেল দেয়া হয়েছে। নোবেল কমিটির ঘোষণায় সেটা স্পষ্ট করেই বলা আছে। সে ঘোষণায় তাকে নোবেল প্রদানের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, আমেরিকার আবহমান সঙ্গীতের ধারায় এক নতুন কাব্যিক রীতি প্রবর্তন। এখন সঙ্গীত যে সাহিত্যের অন্যতম ধারা, তা অস্বীকার করবে কে! অনেকে অবশ্য কাব্যিক শব্দটা দেখে খানিকটা বিভ্রান্ত হয়ে পরছেন। বলে বেড়াচ্ছেন, ডিলানের গানগুলোই তো একেকটা কবিতা। তাই ডিলান একজন কবি। কবি হিসেবেই তিনি নোবেল পেয়েছেন। সে কথাটি যে ঠিক নয়, তাও নোবেল কমিটির ঘোষণাতে স্পষ্ট। তিনি নোবেল পেয়েছেন গানের জন্য। তার গানের কথা, গল্প, বাজনা- সব মিলিয়েই। তাকে বলা যেতে পারে নতুন যুগের নতুন নতুন সব আবিষ্কারকে ব্যবহার করা এক চারণ কবি। চারণকবিরা যেমন তাদের গান, নাটক বা কাহিনি নিয়ে ঘুরে ঘুরে বেড়াতেন গ্রাম থেকে গঞ্জে, আর মানুষকে গেয়ে গেয়ে শোনা��েন সেসব, বব ডিলানও তো তেমনটাই করেছেন, করছেন। কেবল তাতে যুক্ত হয়েছে নতুন যুগের নতুন নতুন সব আবিষ্কার- অ্যাম্প্লিফায়ার, মাইক্রোফোন, রেকর্ডিং স্টুডিও, রেডিও। আর তার সেসব গান এমন সব কাজ করে দেখিয়েছে, যা আগে কখনো কোনো গান করতে পারেনি। তার গান যেমন রাজপথে-অলিতেগলিতে ভালোবাসার আগুন জ্বেলেছে, তেমনি জ্বেলেছে প্রতিরোধেরও আগুন।
তার গান যেন শুধু গানের কথাতেই আটকে না থাকে, তার সবচেয়ে বড় বন্দোবস্ত করে বসে আছেন ডিলান নিজেই। তার কাছে গানগুলো নির্দিষ্ট কলিতে বাঁধা নয়। বরং নাটক যেমন প্রত্যেকবারই নতুন করে করতে হয়, নতুন করে প্রত্যেকটা দৃশ্যে আবেগ ঢেলে দিতে হয়, তার কাছে গানও তেমনি। প্রত্যেকটা গান গাওয়ার সময় তিনি সে গানের ভেতরে ডুবে যান। ঠিক যেমনটা ঘটে ধ্যান করার সময়। আর তাই তার গানের কথা প্রায়ই সময়ের সাথে সাথে খানিকটা করে বদলে যায়। অনেক সময় বড় ধরনের পরিবর্তনও ঘটে। তার নতুন গানগুলোর জন্মও হয় অনেকটা এই প্রক্রিয়াতেই। হয়তো তার মাথার মধ্যে একটা গান ঘুরপাক খাচ্ছে। তখন দৃশ্যত তিনি হয়তো গাড়ি চালাচ্ছেন, বা কারো সাথে কথা বলছেন, কিন্তু তার মাথায় ওই গানটিই ঘুরতে থাকে। তিনি মনোযোগ দিয়ে তার মাথার মধ্যে বাজতে থাকা গানটি শুনতে থাকেন। আর শুনতে শুনতেই সে গানের কতগুলো শব্দ বদলাতে শুরু করে। তৈরি হতে থাকে নতুন আরেকটা গান।
হ্যাঁ, সেই ষাটের দশক থেকে যে বব ডিলানকে হা��ার হাজার সঙ্গীতশিল্পী অনুসরণ করে আসছেন, তাকে আদর্শ মেনে আসছেন, নিদেনপক্ষে শিরোধার্য মেনেছেন, সেই বব ডিলানও গানের জন্য তার অতীতের শিল্পীদের কাছে ঋণী। বিশেষ করে আমেরিকার ফোক, ব্লুজ এবং কান্ট্রিমিউজিকের কাছে। বছরখানেক আগে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন-
আমার গানগুলো তো আর বাতাস থেকে জন্মায়নি! সব গানই পরস্পর সম্পর্কিত। যে এটা অস্বীকার করে, সে বোকা, নয়তো বোকা বানানোর চেষ্টা করছে। আমি স্রেফ নতুন একটা দরজা খুলে ধরেছি, যে দরজার বাইরের দৃশ্যটা একটু অন্য ধরনের।
ডিলান মানুষের সামনে সে দরজা খুলে ধরে আছেন ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে। আর এই ছয় দশক ধরেই মানুষ সে দরজা দিয়ে যাওয়া-আসা করছে। সে দরজার বাইরের অন্য ধরনের দৃশ্যের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছে, শক্তিতে উদ্বোধিত হচ্ছে। এটাই সাহিত্যের সবচেয়ে বড় সার্থকতা। যেমনটা করতে পেরেছিলেন শেক্সপিয়ার। বাজারি নাটককে তার সাহিত্যচর্চার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েও তিনি মানুষকে নিরন্তর মুগ্ধ করে গিয়েছিলেন, উদ্বোধিত করে গিয়েছিলেন। শেক্সপিয়রের প্রতি মানুষের সে মুগ্ধতা কাটেনি আজও। বব ডিলানের প্রতি মুগ্ধতা কাটবে কিনা, সেটা সময়ই বলে দিবে। তবে মানুষের সামনে গানের জগতের এক নতুন দুয়ার খুলে দেয়ার জন্য তাকে নোবেল দেয়াটা যে একেবারেই ভুল হয়নি, সেটা এখনই বলে দেয়া যায়।
বব ডিলান: গানের জন্য নোবেল জয়ী ১৩ অক্টোবর ২০১৬। নোবেল কমিটি ঘোষণা করল এ বছরের সাহিত্যে নোবেল-বিজয়ীর নাম। প্রতি বছরের মতোই এবারও সম্ভাবনাময় হিসেবে বেশ কয়েকটি নাম উড়ে বেড়াচ্ছিল। তাদের মধ্যে ছিলেন মিলান কুন্ডেরা আর হারুকি মুরাকামির মতো হেভিওয়েট প্রার্থীরাও। কিন্তু তাদের কেউ তো নয়ই, সাহিত্যে নোবেল-বিজয়ী হিসেবে নোবেল কমিটি এমন একজনের নাম ঘোষণা করল, যার নাম শোনার জন্য কেউ-ই প্রস্তুত ছিল না। সে ঘোষণা শোনার পর সব সাহিত্য-সমঝদারকেই চমকে উঠে খানিকক্ষণের জন্য হতবুদ্ধি হতেই হয়েছে। তারপর থেকে কেউ কেউ এ সিদ্ধান্তকে প্রশংসার বৃষ্টিতে ভাসাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ব্যাপারটাকে একেবারেই মেনে নিতে পারছেন না। অনেকে তো জাত গেল, জাত গেল রবও তুলছেন। অবশ্য সাহিত্যে নোবেল প্রায়ই চমক হয়ে আসে। যেমন এসেছিল ১৯১৩ সালে। সকল সাহিত্য-সমঝদারদের চমকে দিয়ে, হেভিওয়েট সব প্রার্থীদের ভক্তদের হতাশ করে, নোবেল পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর তাই নিয়ে সে ঘোষণার পরপরই শুরু হয়েছিল রাজ্যের সমালোচনা। এমনটা হয়েছিল ১৯৮৩ সালেও। তার আগের বছরেই নোবেল পেয়েছিলেন গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ। সবার ধারণা ছিল, মার্কেজের মতো বিশ্বজুড়ে আলোচিত ও জনপ্রিয় একজনকে নোবেল দেয়ার পরের বছর, অমন না হলেও, বিশ্বজুড়ে অন্তত পরিচিতি আছে এমন কাউকে নোবেল দেয়া হবে। অথচ নোবেল দেয়া হলো উইলিয়াম গোল্ডিংকে। যার পরিচিতি মূলত তার প্রথম উপন্যাসটার জন্যই- লর্ড অফ দ্য ফ্লাইস। নোবেল কমিটি সাহিত্যে নোবেল দিতে গিয়ে এমনিভাবে চমকে দিয়েছে প্রায়ই। কিন্তু এর আগের কোনো বারেই এমন ভয়ংকরভাবে চমকে দেয়নি। কারণ, এবার যে সাহিত্যে নোবেল জিতলেন রবার্ট অ্যালেন জিমারম্যান, ওরফে বব ডিলান। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, তিনি তো সাহিত্যিকই নন। পেশায় তিনি গায়ক। তার পরিচয় মূলত সঙ্গীত-রচয়িতা ও সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে। অর্থাৎ তিনি সঙ্গীতের লোক, সাহিত্যের নন। আর এই ঘোষণায় যারা গোস্বা করেছেন, তাদের মূল আপত্তিটাও সেখানেই। একজন সঙ্গীতের লোককে কেন সাহিত্যে নোবেল দেয়া হলো! হ্যাঁ, তাকে সঙ্গীতের লোক হিসেবেই সাহিত্যে নোবেল দেয়া হয়েছে। নোবেল কমিটির ঘোষণায় সেটা স্পষ্ট করেই বলা আছে। সে ঘোষণায় তাকে নোবেল প্রদানের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, আমেরিকার আবহমান সঙ্গীতের ধারায় এক নতুন কাব্যিক রীতি প্রবর্তন। এখন সঙ্গীত যে সাহিত্যের অন্যতম ধারা, তা অস্বীকার করবে কে! অনেকে অবশ্য কাব্যিক শব্দটা দেখে খানিকটা বিভ্রান্ত হয়ে পরছেন। বলে বেড়াচ্ছেন, ডিলানের গানগুলোই তো একেকটা কবিতা। তাই ডিলান একজন কবি। কবি হিসেবেই তিনি নোবেল পেয়েছেন। সে কথাটি যে ঠিক নয়, তাও নোবেল কমিটির ঘোষণাতে স্পষ্ট। তিনি নোবেল পেয়েছেন গানের জন্য। তার গানের কথা, গল্প, বাজনা- সব মিলিয়েই। তাকে বলা যেতে পারে নতুন যুগের নতুন নতুন সব আবিষ্কারকে ব্যবহার করা এক চারণ কবি। চারণকবিরা যেমন তাদের গান, নাটক বা কাহিনি নিয়ে ঘুরে ঘুরে বেড়াতেন গ্রাম থেকে গঞ্জে, আর মানুষকে গেয়ে গেয়ে শোনাতেন সেসব, বব ডিলানও তো তেমনটাই করেছেন, করছেন। কেবল তাতে যুক্ত হয়েছে নতুন যুগের নতুন নতুন সব আবিষ্কার- অ্যাম্প্লিফায়ার, মাইক্রোফোন, রেকর্ডিং স্টুডিও, রেডিও। আর তার সেসব গান এমন সব কাজ করে দেখিয়েছে, যা আগে কখনো কোনো গান করতে পারেনি। তার গান যেমন রাজপথে-অলিতেগলিতে ভালোবাসার আগুন জ্বেলেছে, তেমনি জ্বেলেছে প্রতিরোধেরও আগুন। তার গান যেন শুধু গানের কথাতেই আটকে না থাকে, তার সবচেয়ে বড় বন্দোবস্ত করে বসে আছেন ডিলান নিজেই। তার কাছে গানগুলো নির্দিষ্ট কলিতে বাঁধা নয়। বরং নাটক যেমন প্রত্যেকবারই নতুন করে করতে হয়, নতুন করে প্রত্যেকটা দৃশ্যে আবেগ ঢেলে দিতে হয়, তার কাছে গানও তেমনি। প্রত্যেকটা গান গাওয়ার সময় তিনি সে গানের ভেতরে ডুবে যান। ঠিক যেমনটা ঘটে ধ্যান করার সময়। আর তাই তার গানের কথা প্রায়ই সময়ের সাথে সাথে খানিকটা করে বদলে যায়। অনেক সময় বড় ধরনের পরিবর্তনও ঘটে। তার নতুন গানগুলোর জন্মও হয় অনেকটা এই প্রক্রিয়াতেই। হয়তো তার মাথার মধ্যে একটা গান ঘুরপাক খাচ্ছে। তখন দৃশ্যত তিনি হয়তো গাড়ি চালাচ্ছেন, বা কারো সাথে কথা বলছেন, কিন্তু তার মাথায় ওই গানটিই ঘুরতে থাকে। তিনি মনোযোগ দিয়ে তার মাথার মধ্যে বাজতে থাকা গানটি শুনতে থাকেন। আর শুনতে শুনতেই সে গানের কতগুলো শব্দ বদলাতে শুরু করে। তৈরি হতে থাকে নতুন আরেকটা গান। হ্যাঁ, সেই ষাটের দশক থেকে যে বব ডিলানকে হাজার হাজার সঙ্গীতশিল্পী অনুসরণ করে আসছেন, তাকে আদর্শ মেনে আসছেন, নিদেনপক্ষে শিরোধার্য মেনেছেন, সেই বব ডিলানও গানের জন্য তার অতীতের শিল্পীদের কাছে ঋণী। বিশেষ করে আমেরিকার ফোক, ব্লুজ এবং কান্ট্রিমিউজিকের কাছে। বছরখানেক আগে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন- আমার গানগুলো তো আর বাতাস থেকে জন্মায়নি! সব গানই পরস্পর সম্পর্কিত। যে এটা অস্বীকার করে, সে বোকা, নয়তো বোকা বানানোর চেষ্টা করছে। আমি স্রেফ নতুন একটা দরজা খুলে ধরেছি, যে দরজার বাইরের দৃশ্যটা একটু অন্য ধরনের। ডিলান মানুষের সামনে সে দরজা খুলে ধরে আছেন ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে। আর এই ছয় দশক ধরেই মানুষ সে দরজা দিয়ে যাওয়া-আসা করছে। সে দরজার বাইরের অন্য ধরনের দৃশ্যের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছে, শক্তিতে উদ্বোধিত হচ্ছে। এটাই সাহিত্যের সবচেয়ে বড় সার্থকতা। যেমনটা করতে পেরেছিলেন শেক্সপিয়ার। বাজারি নাটককে তার সাহিত্যচর্চার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েও তিনি মানুষকে নিরন্তর মুগ্ধ করে গিয়েছিলেন, উদ্বোধিত করে গিয়েছিলেন। শেক্সপিয়রের প্রতি মানুষের সে মুগ্ধতা কাটেনি আজও। বব ডিলানের প্রতি মুগ্ধতা কাটবে কিনা, সেটা সময়ই বলে দিবে। তবে মানুষের সামনে গানের জগতের এক নতুন দুয়ার খুলে দেয়ার জন্য তাকে নোবেল দেয়াটা যে একেবারেই ভুল হয়নি, সেটা এখনই বলে দেয়া যায়।
0 notes
nabeelonusurjo-blog · 9 years ago
Text
হলিউডের সিনেমা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে অন্য ইন্ড্রাস্ট্রিগুলো সিনেমা বানায়, এমন একটা ধারণা আমাদের মধ্যে প্রচলিত আছে। ধারণাটি ঠিক ভুলও না। হলিউডের সিনেমা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সিনেমা বানায় না, এমন ইন্ড্রাস্ট্রি খুবই কম। প্রকৃতপক্ষে সকল ইন্ড্রাস্ট্রিতেই বিদেশি সিনেমা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সিনেমা বানানোর চল আছে। আছে হলিউডেও। এমনকি হলিউডে বিদেশের অনেক সিনেমা স্রেফ রিমেকও করা হয়। অর্থাৎ গল্প এক রেখে লোকেশন-চরিত্র-ভাষা বদলে দেয়া। যে রকম কেয়ামত সে কেয়ামত তাক থেকে বানানো হয়েছিল কেয়ামত থেকে কেয়ামত। অনেক রিমেক বানানোর সময় মূল সিনেমার পরিচালককেও বিভিন্ন ভাবে সিনেমাটির সঙ্গে যুক্তও করা হয়েছে। হলিউডে এরকম রিমেক করা হয়েছে অনেক জাপানি সিনেমাও। অনেক বিখ্যাত জাপানি সিনেমার যেমন হলিউডি রিমেক বানানো হয়েছে, তেমনি অনেক বিখ্যাত হলিউডি সিনেমাও আসলে কোনো জাপানি সিনেমার রিমেক।
গোজিরা থেকে গডজিলা
গোজিরা (১৯৫৪)
গডজিলা (১৯৯৮)
গডজিলা (২০১৪)
গডজিলা বলে যে বিশাল ডাইনোসর আকৃতির দানবকে আমরা চিনি, তার জাপানিজ নাম গোজিরা। শব্দটা জাপানি গরিলা আর হাঙর শব্দ দুইটির মিশ্রণ। ১৯৫৪ সালে মুক্তি পাওয়া জাপানি গোজিরা নাকি দেখতেও গরিলা আর হাঙরের মিশ্রিত রূপেরই হওয়ার কথা ছিল। শেষ পর্যন্ত গোজিরা হয়ে যায় ডাইনোসরের মতো। আর দুই বছরের মাথায় সিনেমাটি রিমেক হয় হলিউডে, গডজিলা: কিং অফ দ্য মনস্টার্স নামে। জাপান থেকে সিনেমাটির পরিচালককেও উড়িয়ে আনা হয়। কাহিনিতে পরিবর্তন বলতে কেবল এক মার্কিন সাংবাদিকের অন্তর্ভুক্তি। এর প্রায় চার দশক পরে আবারও ঘটা করে গডজিলা বানানো হয়। এবার বাজেট যেমন বেড়ে যায়, তেমনি কাহিনিও টোকিও থেকে চলে আসে নিউ ইয়র্কে। আগের লো-টেক ইফেক্ট আর রাবারের স্যুট পরা গডজিলার বদলে এবারের সিজিআই ইফেক্টের গডজিলা সিনেমাটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
কুরোশাওয়ার সেভেন সামুরাই
সেভেন সামুরাই (১৯৫৪)
দ্য ম্যাগনিফিশেন্ট সেভেন (১৯৬০)
দ্য ম্যাগনিফিশেন্ট সেভেন (২০১৬)
আকিরা কুরোশাওয়ার অন্যতম বিখ্যাত সিনেমা সেভেন সামুরাই। সিনেমাটিতে কুরোশাওয়া পুরো দুনিয়াকেই এক নতুন তত্ত্ব শেখালেন— নায়কদেরও দল হতে পারে। পরে যে ফর্মুলায় বানানো হয়েছে দ্য গানস অফ নাভারুন, ওশেন সিরিজ থেকে শুরু করে অজস্র সিনেমা। এই সিনেমাটি হলিউডে রিমেক করা হবে, তা তো খুবই স্বাভাবিক। ১৯৬০ সালে সিনেমাটির হলিউড ভার্সন মুক্তি পায় দ্য ম্যাগনিফিশেন্ট সেভেন নামে। জাপানি সামুরাই ভিত্তিক সিনেমাটি অবশ্য হলিউডে এসে ওয়েস্টার্ন হয়ে যায়। তবে সাতজনের দুইটি দলেই একজন প্রবীণ নেতা ছিল। ছিল একটি করে খ্যাপাটে চরিত্রও। পরে ২০১৬ সালে এসে সেই একই নামে হলিউডি সিনেমাটিরও আবার একটি হলিউডি রিমেক বানানো হয়।
ডলার ট্রিলজিতেও কুরোশাওয়া
ইয়োজিম্বো (১৯৬১)
এ ফিস্টফুল অফ ডলার্স (১৯৬৪)
সামুরাই-ভিত্তিক ‍কুরোশাওয়ার আরেক বিখ্যাত সিনেমা ইয়োজিম্বো। সিনেমাটিতে নায়ক সানজুরো গ্রামটির প্রতিদ্বন্দ্বি দুই সেনাপতির পক্ষেই কাজ করে। সিনেমাটির এই চরিত্র, এবং কাহিনির আরও বেশ কিছু অংশ গ্রহণ করেন বিখ্যাত ইতালিয়ান পরিচালক সার্জিও লিওন। গ্রহণ করেন তার বিখ্যাত ডলার ট্রিলজির প্রথম সিনেমা এ ফিস্টফুল অফ ডলার্স-এ। ওয়েস্টার্ন ঘরানার রাজত্ব নির্ণায়ক এই সিনেমাটির ম্যান উইথ নো নেম চরিত্রটির সঙ্গে কুরোশাওয়ার ইয়োজিম্বো-র সানজুরো চরিত্রটির মিল বিশেষভাবেই লক্ষণীয়।
শ্যাল উই ড্যান্স?
শ্যাল উই ড্যান্স? (১৯৯৬)
শ্যাল উই ড্যান্স? (২০০৪)
মাসাউকি সুয়ো-র কমেডি-ড্রামা শ্যাল উই ড্যান্স? মুক্তি পায় ১৯৯৬ সালে। পিটার চেলসন একই নামের সিনেমাটির হলিউডে রিমেক বানান ২০০৪ সালে। তবে জাপানি সিনেমাটির যে আবেদন ছিল, হলিউডি রিমেকে আর তেমন থাকেনি। তার ���ারণও অবশ্য আছে। সিনেমাটিতে এক স্ত্রী তার স্বামীর পেছনে গোয়েন্দা লাগায়। তার সন্দেহ, স্বামী অন্য কোনো নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু তদন্তে বেরিয়ে আসে অন্য কিছু। তার স্বামী লুকিয়ে লুকিয়ে ওয়েস্টার্ন নাচ শিখছে। যেটা জাপানে খুবই নিন্দনীয় এবং বিব্রতকর। কিন্তু তা আমেরিকার প্রেক্ষাপটে তো বটেই, পৃথিবীর অধিকাংশ সমাজেই অত্যন্ত স্বাভাবিক। স্বাভাবিকভাবেই তাই হলিউডি রিমেকে কাহিনি একেবারেই গড়পরতা হয়ে গেছে।
কুকুর বাঁচানোর গল্প
অ্যান্টার্কটিকা (১৯৮৩)
এইট বেলো (২০০৬)
১৯৮৩ সালে মুক্তি পায় জাপানি সিনেমা অ্যান্টার্কটিকা। সিনেমাটি বেশ ব্যবসাসফলও হয়। সিনেমাটি বানানো হয়েছিল এক সত্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে। এক বার এক দল জাপানি অভিযাত্রী যায় অ্যান্টার্কটিকায়। লক্ষ্য দক্ষিণ মেরু। কিন্তু বিরূপ আবহাওয়ার জন্য তাদের ফিরে আসতে হয়। ফেলে আসতে হয় কতগুলো কুকুরকে। ১১ মাস পরে দলটি আবার গিয়ে দেখে, কুকুরগুলো তখনও বেঁচে আছে। এই কাহিনি নিয়েই পরে বানানো হয় অ্যান্টার্কটিকা। এর ২৩ বছর পর ডিজনি সিনেমাটি রিমেক করে এইট বেলো নামে। ডিজনি অবশ্য তাদের স্বভাবসুলভ কিছু পরিবর্তন করে। তারা পঞ্চাশের দশকের এই কাহিনিকে নিয়ে আসে বর্তমানের প্রেক্ষাপটে। আর কুকুরের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয় ৩ গুণ।
রিঙ্গু থেকে দ্য রিং
রিঙ্গু (১৯৯৮)
দ্য রিং (২০০২)
১৯৯৮ সালে জাপানে মুক্তি পায় রিঙ্গু। সিনেমাটি দিয়ে জাপানে এক নতুন ধরনের হরর সিনেমার জনরার প্রবর্তন হয়। সাধারণভাবে যেগুলোকে বলা হয় জে-হরর। রিঙ্গুর সাফল্যে এরপর একের পর এক জে-হরর বানানো হতে থাকে। সিনেমাগুলো সাফল্যও পেতে থাকে। রিঙ্গু-র দুটো সিক্যুয়াল আর একটা প্রিক্যুয়ালও বানানো হয়। ২০০২ সালে হলিউডে সিনেমাটির রিমেক বানানো হয় দ্য রিং নামে। হলিউডের সিনেমাটির সিক্যুয়াল বানানোর সময় এমনকি ডেকে নেয়া হয় জাপানি সিনেমাটির পরিচালক হিদেও নাকাতা-কে। শুধু তাই না, রিঙ্গু মুক্তি পাওয়ার পর জাপানে যে সব জে-হরর সাফল্যের মুখ দেখেছিল, প্রায় সবগুলোই হলিউডে রিমেক করা হয়।
জাপান থেকে হলিউডে হলিউডের সিনেমা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে অন্য ইন্ড্রাস্ট্রিগুলো সিনেমা বানায়, এমন একটা ধারণা আমাদের মধ্যে প্রচলিত আছে। ধারণাটি ঠিক ভুলও না। হলিউডের সিনেমা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সিনেমা বানায় না, এমন ইন্ড্রাস্ট্রি খুবই কম। প্রকৃতপক্ষে সকল ইন্ড্রাস্ট্রিতেই বিদেশি সিনেমা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সিনেমা বানানোর চল আছে। আছে হলিউডেও। এমনকি হলিউডে বিদেশের অনেক সিনেমা স্রেফ রিমেকও করা হয়। অর্থাৎ গল্প এক রেখে লোকেশন-চরিত্র-ভাষা বদলে দেয়া। যে রকম …
0 notes
nabeelonusurjo-blog · 9 years ago
Text
বানানো শুরু করেও শেষ করা যায়নি, এমন সিনেমার সংখ্যা নিতান্ত কম নয়। এক রকম শেষ করা গেছে, তবু মুক্তি দেয়া যায়নি, তেমন সিনেমাও আছে প্রচুর। এমনকি রথী-মহারথী পরিচালকরাও এর ব্যতিক্রম নন। এ বাবদে আমাদের ‍ঋত্মিক কুমার ঘটক যাকে বলে চ্যাম্পিয়ন। তার এমন সিনেমার সংখ্যা নাকি তিরিশেরও বেশি। সিনেমাগুলোর এমন মুখ থুবড়ে পড়ার প্রধান কারণ টাকার অভাব। কখনও আবার কাজ আটকে যায় কোনো দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয়ে। অনেক সময় আবার স্রেফ কাহিনি নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েও সিনেমা আটকে যায়। যেমন আমাদের সত্যজিত রায়ের সিকিম নামের একটি সিনেমা দীর্ঘদিন মুক্তি পায়নি স্রেফ একটি সিকোয়েন্সের জন্য।
হিচককের ক্যালাইডোস্কোপ
১৯৬৮ সাল। হিচককের ক্যারিয়ার তখন পড়তির দিকে। তার সিনেমাগুলোও ঠিক প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। শিল্পসম্মত হওয়ার চেয়ে সেগুলোতে বাণিজ্যিক সিনেমার ঝোঁকই বেশি। তখন হিচকক তার নামের প্রতি সুবিচার করতেই শুরু করলেন ক্যালাইডোস্কোপ সিনেমার কাজ। খুন, ধর্ষণ, পেশিশক্তি, সিরিয়াল কিলিংয়ে ভরপুর এক থ্রিলার। দ্য বার্ডস-এ যেরকম, তেমনি এটাতেও নতুন কিছু ফিল্ম টেকনিক প্রয়োগের পরিকল্পনা আঁটলেন। চিন্তায় ছিল প্রাকৃতিক আলো ব্যবহার করা, স্ট্যান্ডের বদলে ক্যামেরা হাতে বয়ে শ্যুট করা, পয়েন্ট-অফ-ভিউ অ্যাঙ্গেলে শ্যুট করার মতো ভাবনাগুলো।
প্রি-প্রোডাকশনে প্রচণ্ড পরিশ্রম করার পরও, শেষ পর্যন্ত সিনেমাটা শেষ করতে পারলেন না হিচকক। টাকার বন্দোবস্ত করতে পারলেন না। প্রায় ঘণ্টাখানেকের ফুটেজ নিয়ে অসমাপ্ত পড়ে রইল ক্যালাইডোস্কোপ। এর কিছু অংশ অবশ্য তিনি পড়ে ফ্রেঞ্জি-তে (১৯৭২) ব্যবহার করেন।
কুব্রিকের না-বানানো সিনেমা
যুদ্ধের ভয়াবহতা প্রায়ই কুব্রিকের সিনেমার বিষয় হিসেবে এসেছে। তার ড. স্ট্রেঞ্জলোভ, ফুল মেটাল জ্যাকেট, পাথস অফ গ্লোরি— সিনেমাগুলো সে স্বাক্ষ্যই দেয়। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদীদের উপর চালানো ভয়াবহ অত্যাচার নিয়ে সিনেমা বানানো হয়নি তার। এ জন্য ঠিক মনমতো গল্প খুঁজে পাচ্ছিলেন না তিনি। সে গল্পের সন্ধান পান ১৯৯১ সালে। লুই বেগলি-র উপন্যাস ওয়ারটাইম লাইস। একটা জাল পরিচয়পত্রের সাহায্যে নাৎসিদের হাত থেকে এক ইহুদি ছেলে ও তার খালার বেঁচে যাওয়ার গল্প। সে উপন্যাস থেকে তিনি দ্য আরিয়ান পেপার্স নামে চিত্রনাট্য তৈরি করেন। ওয়ার্নার ব্রস সিনেমাটির প্রযোজনার দায়িত্ব নেয়। কুব্রিক চেক রিপাবলিকে ঘুরে ঘুরে সিনেমার লোকেশন ঠিক করেন। মূল চরিত্র দুটোর জন্য কাস্টও ঠিক করা হয়।
তবে শেষ মুহুর্তে সিনেমাটি বানানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে ওয়ার্নার ব্রস। তারা হিসেব করে দেখে, দ্য আরিয়ান পেপার্স মুক্তির আগেই মুক্তি পাবে স্পিলবার্গের শিন্ডলার’স লিস্ট। পরিবর্তে ওয়ার্নার ব্রসের প্রযোজনাতেই কুব্রিক বানান আইস ওয়াইড শাট (১৯৯৯)। এটিই কুব্রিকের শেষ সিনেমা।
এছাড়াও কুব্রিক নেপোলিয়ন এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এ.আই.) বানানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েও শেষ পর্যন্ত বানাননি। অবশ্য ২০০১ সালে স্পিলবার্গের হাত ধরে এ.আই. মুক্তি পায়।
রিসার্ভেয়র ডগস-এর আগের ত্যারেন্তিনো
কুয়েন্তিন ত্যারেন্তিনোর প্রথম সিনেমা হিসেবে ধরা হয় কমেডি ক্রাইম-ড্রামা রিসার্ভেয়র ডগস-কে (১৯৯২)। কিন্তু এর আগেও ত্যারেন্তিনো দুটো সিনেমা বানানোর চেষ্টা করেছিলেন। ১৯৮৩ সালে বানানো লাভ বার্ডস ইন বন্ডেজ তো শেষই করতে পারেননি। তবে মাই বেস্ট ফ্রেন্ড’স বার্থডে বানানো শেষ করেন ১৯৮৭ সালে। প্রথম সিনেমার মতো এটাতেও তিনি নিজেও অভিনয় করেন। সিনেমাটির এডিটিংও শেষ হয়। তবে সাদা-কালো এই সিনেমাটিও তিনি মুক্তি দিতে পারেননি। যে ল্যাবে সিনেমাটির কাজ হয়েছিল, সেখানে ছোটখাটো একটা অগ্নিকাণ্ড ঘটে। তাতে দুই রিলের এই সিনেমাটির শেষ রিল পুড়ে যায়। ৭০ মিনিটের সিনেমাটির তাই ৩৬ মিনিটই কেবল পাওয়া যায়। সেটুকুই দিয়েই পরে সীমিত দর্শকদের সামনে সিনেমাটির একটি প্রদর্শনী করা হয়।
অরসন ওয়েলেসের শেষ সিনেমা
সিটিজেন কেইন-খ্যাত অরসন ওয়েলেস তার শেষ সিনেমা বানানোর কাজে হাত দেন ১৯৬৯ সালে। নাম দ্য আদার সাইড অফ দ্য উইন্ড। টাকার অভাবে মাঝে মাঝেই বিরতি দিয়ে, শুটিং চলে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত। সিনেমাটি মূলত দুই প্রতিযোগী পরিচালকের গল্প। একজন বয়স্ক পরিচালক, আরেকজন তরুণ পরিচালক। বয়স্ক পরিচালকের চরিত্রে অভিনয় করেন জন হিউস্টন। আর তরুণ পরিচালকের চরিত্রে পিটার বগদানোভ।
শুটিং শুরু করার পর থেকেই সিনেমাটিকে একের পর এক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়। বরাবরের মতোই ওয়েলেসকে টাকা এবং সময়ের সমস্যায় পড়তেই হয়। বিশেষ করে ওয়েলেসের শুটিং করার যে পদ্ধতি, তাতে শুটিং কবে শেষ হবে, তার কোনো ঠিক-ঠিকানা থাকতো না। কাজেই টাকায় তো টান পড়লোই, একজন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের অভিনেতাকেও সিনেমার কাজ শেষ না করেই চলে যেতে হল। তবে সিনেমাটির মুক্তি নিয়ে সবচেয়ে বড় অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয় ১৯৭৯ সালে।
সিনেমাটির টাকার জন্য ওয়েলেস একেক সময় একেকজনের কাছে ধর্না দিয়েছিলেন। কাজেই সিনেমাটির একেক অংশের প্রযোজক একেকজন। তাদের মধ্যে একজন তৎকালিন ইরানের শাহ রাজবংশের একজন সদস্য। ১৯৭৯ সালে ইরানে রাজবংশের পতন ঘটে। ক্ষমতায় আসেন আয়াতুল্লাহ খোমিনি। তার সরকার সিনেমাটির সেই অংশের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
পরে সিনেমাটি মুক্তির আগেই, ১৯৮৫ সালে অরসন ওয়েলেস মারা যান। সিনেমাটি আজোবধি মুক্তি পায়নি। ‍মুক্তি পাবে কিনা, তাও নিশ্চিত নয়। তবে প্রযোজক ফ্র্যাঙ্ক মার্শাল এবং পিটার বগদানোভ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অরসন ওয়েলেসের শেষ সিনেমা বলে কথা!
কাজ শুরু করেও শেষ করা যায়নি, মুক্তি পায়নি, এমন সিনেমা আছে ঢের। আছে অনেক রথী-মহারথী পরিচালকেরও। বানানো শুরু করেও শেষ করা যায়নি, এমন সিনেমার সংখ্যা নিতান্ত কম নয়। এক রকম শেষ করা গেছে, তবু মুক্তি দেয়া যায়নি, তেমন সিনেমাও আছে প্রচুর। এমনকি রথী-মহারথী পরিচালকরাও এর ব্যতিক্রম নন। এ বাবদে আমাদের ‍ঋত্মিক কুমার ঘটক যাকে বলে চ্যাম্পিয়ন। তার এমন সিনেমার সংখ্যা নাকি তিরিশেরও বেশি। সিনেমাগুলোর এমন মুখ থুবড়ে পড়ার প্রধান কারণ টাকার অভাব। কখনও আবার কাজ আটকে যায় কোনো দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয়ে। অনেক সময় আবার স্রেফ কাহিনি নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েও সিনেমা আটকে যায়। যেমন আমাদের সত্যজিত রায়ের …
0 notes
nabeelonusurjo-blog · 9 years ago
Text
কচ্ছপদের নিয়ে শত শত গল্প আর চুটকি প্রচলিত আছে। তবে সে সব গল্পের বেশিরভাগই ওদের মন্থর গতি নিয়ে। ওরা না হয় একটু বেশিই আস্তে-ধীরে নড়াচড়া করে। তাই বলে খালি সেটা নিয়েই গল্প বানাতে হবে! তাই নিয়ে খেপে গিয়েই বুঝি ব্রিটিশরা এক অদ্ভুত প্রতিযোগিতার আসর বসায়। কচ্ছপদের দৌড় প্রতিযোগিতা। কেতাবি নাম ন্যাশনাল টরটয়েজ চ্যাম্পিয়নশিপ। ১৯৭৭ সালে প্রতিযোগিতাটি হয় দক্ষিণ ইয়র্কশায়ারের টিকহিলে। আর সেই প্রতিযোগিতায় জিতেছিল যেই কচ্ছপটি, এতদিন সেই ছিল পৃথিবীর দ্রুততম কচ্ছপ। ১৮ ফুট পার হতে তার লেগেছিল ৪৩.৭ সেকেন্ড।
দ্রুততম মানবের চেয়ে দ্রুততম কচ্ছপের এই রেকর্ডটি অনেক বেশিদিন টিকেছে। দ্রুততম মানবের ইতিহাস তো হাত বদল হয়েছে বার বার। তবু উসাইন বোল্ট সবার চেয়ে আলাদা। একে তো তিনি নতুন রেকর্ডটি করেছিলেন একদম হেসেখেলে। শেষ ১০ মিটার শেষ করার আগেই বোল্ট বিজয় উদযাপন করতে শুরু করে দিয়েছিলেন। তার উপর আগের বিশ্বরেকর্ডগুলো হয়েছিল মাত্র ০.০১-০.০৩ সেকেন্ডের হেরফেরে। আর আগের বিশ্বরেকর্ডের চেয়ে বোল্টের বর্তমান রেকর্ডের ব্যবধান ০.১১ সেকেন্ড!
সম্প্রতি সে রকম ঘটনা ঘটেছে কচ্ছপদের দৌড়রাজ্যেও। ঘটনাটি গত বছরের জুলাই মাসের। ততদিনে বার্টি নামের এক কচ্ছপ বেশ হৈচৈ ফেলে দিয়েছে। সে নাকি কচ্ছপদের উসাইন বোল্ট। অন্য কচ্ছপদের তুলনায় রীতিমতো বিদ্যুৎ গতিতে ছুটতে পারে। কাজেই পরীক্ষার আয়োজন করা হল। বানানো হল ১৮ ফুটের একটা ট্র্যাক। তাতে নামিয়ে দেয়া হল বার্টিকে। লক্ষ্য- ৪৩.৭ সেকেন্ডের কম সময়ে দৌড় শেষ করতে হবে। বার্টি যাকে বলে উসাইন বোল্টকেও ছাড়িয়ে গেল। দৌড় শেষ করল আগের রেকর্ডের চেয়ে ২০ সেকেন্ডেরও বেশি সময়ের ব্যবধানে। ১৮ ফুট পাড়ি দিতে বার্টির লাগে মাত্র ১৯.৫৯ সেকেন্ড! মানে এই গতিতে যদি বার্টি ১০০ মিটার পাড়ি দিত, ওর সময় লাগতো সাকুল্যে ৫ মিনিট ৫৭ সেকেন্ড। ঘণ্টায় গতিবেগ দাঁড়ায় ০.৬৩ মাইল। এমনি এমনি কী আর বার্টিকে কচ্ছপদের উসাইন বোল্ট বলা হচ্ছে!
সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস বার্টির এই রেকর্ডের অনুমোদন দিয়েছে। এ বছরের বইতে রেকর্ডটি অন্তর্ভুক্তও করা হয়েছে। মানে, কাগজে-কলমেও বার্টি এখন বিশ্বের দ্রুততম কচ্ছপ। অবশ্য ওর মালিক জেনিন কালজিনির দাবি, বার্টি চাইলে আরও জোরে দৌড়াতে পারবে। ঠিক যেমনটি বলা হয় উসাইন বোল্ট সম্পর্কেও।
বার্টির আবাস ইংল্যান্ডের ডারহাম কাউন্টির অ্যাডভেঞ্চার ভ্যালি। প্রায় বছর দশেকের বার্টির জন্ম অবশ্য এখানে হয়নি। বছর চারেক আগে ওর মালিক ইংল্যান্ড ছেড়ে বিদেশ-বিভূঁইয়ে পাড়ি জমান। তখন বার্টিকে অ্যাডভেঞ্চার ভ্যালির মালিক জেনিন কালজিনি-র হাতে তুলে দেন। তখন থেকেই এখানেই আছে বার্টি আর ওর সঙ্গিনী শেলি। বিশ্বরেকর্ড করা উপলক্ষ্যে সম্প্রতি ওদের চারণভ‚মিটাও বড় করে দেয়া হয়েছে। সেখানে বেশ খাতির-যত্নেই আছে ওরা। তবে দৌড়বিদ কচ্ছপ বলে, বার্টির খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে বেশ কড়াকড়ি আরোপ করা আছে। চাইলেই ওর প্রিয় খাবার পেটপুরে খেতে পায় না সে।
বার্টি নামের এক কচ্ছপ বেশ হৈচৈ ফেলে দিয়েছে। সে নাকি কচ্ছপদের উসাইন বোল্ট- বিদ্যুতের মতো গতি। কচ্ছপদের নিয়ে শত শত গল্প আর চুটকি প্রচলিত আছে। তবে সে সব গল্পের বেশিরভাগই ওদের মন্থর গতি নিয়ে। ওরা না হয় একটু বেশিই আস্তে-ধীরে নড়াচড়া করে। তাই বলে খালি সেটা নিয়েই গল্প বানাতে হবে! তাই নিয়ে খেপে গিয়েই বুঝি ব্রিটিশরা এক অদ্ভুত প্রতিযোগিতার আসর বসায়। কচ্ছপদের দৌড় প্রতিযোগিতা। কেতাবি নাম ন্যাশনাল টরটয়েজ চ্যাম্পিয়নশিপ। ১৯৭৭ সালে প্রতিযোগিতাটি হয় দক্ষিণ ইয়র্কশায়ারের টিকহিলে। আর সেই প্রতিযোগিতায় জিতেছিল যেই কচ্ছপটি, এতদিন সেই ছিল পৃথিবীর দ্রুততম কচ্ছপ। ১৮ ফুট পার হতে তার লেগেছিল ৪৩.৭ সেকেন্ড। দ্রুততম মানবের চেয়ে দ্রুততম কচ্ছপের এই রেকর্ডটি অনেক বেশিদিন টিকেছে। দ্রুততম মানবের ইতিহাস তো হাত বদল হয়েছে বার বার। তবু উসাইন বোল্ট সবার চেয়ে আলাদা। একে তো তিনি নতুন রেকর্ডটি করেছিলেন একদম হেসেখেলে। শেষ ১০ মিটার শেষ করার আগেই বোল্ট বিজয় উদযাপন করতে শুরু করে দিয়েছিলেন। তার উপর আগের বিশ্বরেকর্ডগুলো হয়েছিল মাত্র ০.০১-০.০৩ সেকেন্ডের হেরফেরে। আর আগের বিশ্বরেকর্ডের চেয়ে বোল্টের বর্তমান রেকর্ডের ব্যবধান ০.১১ সেকেন্ড! সম্প্রতি সে রকম ঘটনা ঘটেছে কচ্ছপদের দৌড়রাজ্যেও। ঘটনাটি গত বছরের জুলাই মাসের। ততদিনে বার্টি নামের এক কচ্ছপ বেশ হৈচৈ ফেলে দিয়েছে। সে নাকি কচ্ছপদের উসাইন বোল্ট। অন্য কচ্ছপদের তুলনায় রীতিমতো বিদ্যুৎ গতিতে ছুটতে পারে। কাজেই পরীক্ষার আয়োজন করা হল। বানানো হল ১৮ ফুটের একটা ট্র্যাক। তাতে নামিয়ে দেয়া হল বার্টিকে। লক্ষ্য- ৪৩.৭ সেকেন্ডের কম সময়ে দৌড় শেষ করতে হবে। বার্টি যাকে বলে উসাইন বোল্টকেও ছাড়িয়ে গেল। দৌড় শেষ করল আগের রেকর্ডের চেয়ে ২০ সেকেন্ডেরও বেশি সময়ের ব্যবধানে। ১৮ ফুট পাড়ি দিতে বার্টির লাগে মাত্র ১৯.৫৯ সেকেন্ড! মানে এই গতিতে যদি বার্টি ১০০ মিটার পাড়ি দিত, ওর সময় লাগতো সাকুল্যে ৫ মিনিট ৫৭ সেকেন্ড। ঘণ্টায় গতিবেগ দাঁড়ায় ০.৬৩ মাইল। এমনি এমনি কী আর বার্টিকে কচ্ছপদের উসাইন বোল্ট বলা হচ্ছে! সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস বার্টির এই রেকর্ডের অনুমোদন দিয়েছে। এ বছরের বইতে রেকর্ডটি অন্তর্ভুক্তও করা হয়েছে। মানে, কাগজে-কলমেও বার্টি এখন বিশ্বের দ্রুততম কচ্ছপ। অবশ্য ওর মালিক জেনিন কালজিনির দাবি, বার্টি চাইলে আরও জোরে দৌড়াতে পারবে। ঠিক যেমনটি বলা হয় উসাইন বোল্ট সম্পর্কেও। বার্টির আবাস ইংল্যান্ডের ডারহাম কাউন্টির অ্যাডভেঞ্চার ভ্যালি। প্রায় বছর দশেকের বার্টির জন্ম অবশ্য এখানে হয়নি। বছর চারেক আগে ওর মালিক ইংল্যান্ড ছেড়ে বিদেশ-বিভূঁইয়ে পাড়ি জমান। তখন বার্টিকে অ্যাডভেঞ্চার ভ্যালির মালিক জেনিন কালজিনি-র হাতে তুলে দেন। তখন থেকেই এখানেই আছে বার্টি আর ওর সঙ্গিনী শেলি। বিশ্বরেকর্ড করা উপলক্ষ্যে সম্প্রতি ওদের চারণভ‚মিটাও বড় করে দেয়া হয়েছে। সেখানে বেশ খাতির-যত্নেই আছে ওরা। তবে দৌড়বিদ কচ্ছপ বলে, বার্টির খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে বেশ কড়াকড়ি আরোপ করা আছে। চাইলেই ওর প্রিয় খাবার পেটপুরে খেতে পায় না সে।
0 notes