sankhaneel

[sankhaneel]

দিন যায় দিন আনি

অবশেষে আমরা এমন দিনক্ষণে এসে পৌঁছেছি। অবশেষে এমন দিনকাল যেখানে বছরের হাতে গোনা কটা সপ্তাহ বাদ দিলে বাকি সময়ে স্থান-কাল-পাত্রের কোনো তোয়াক্কা না করেই আকাশে মেঘ করে আসে। ভয়ঙ্কর গ্রীষ্মের মাঝে মাঝে এরকম আচমকা আগমন অনভিপ্রেত না ঠেকলেও, বছরের অন্য সময়ে মেঘভারাক্রান্ত হয়ে আকাশ, অবসন্ন করে দেওয়া মাথাধরাই বয়ে নিয়ে আসে। এছাড়া মার্চের মাঝামাঝি আসতে না আসতেই উষ্ণায়ন জানান দিতে থাকেন যে তিনি অনতিদূরেই রয়েছেন, ধীরে পায়ে একদিন ঠিকই গাছে গাছে ঘষে জ্বলা আগুন হয়ে ঘরে প্রবেশ করবেন, অপেক্ষা মাত্র কিছুবছর!

তবে এখনও, বলব এখনও- সেই লেলিহান ডুমস্ ডে এসে পড়ার আগে, গোটা বছরের মধ্যে একখানা সপ্তাহ প্রকৃতি এখনও বরাদ্দ করে রেখেছে যেখানে শীতের আমেজটা সম্পূর্ণ চলে যায়নি, গ্রীষ্মের তুমুল প্রখরতাও এসে পৌঁছয়নি এবং বৃষ্টিও খামখেয়ালিরকম উড়ে এসে জুড়ে বসছে না। মানে এক বিরল, অপূর্ব আনন্দদায়ক সহাবস্থান। আগেই বলেছি এই আরাম, এই আরাম ক্ষণজীবী, তবে এর দেখা পেলেই আমার দৌড়ে, সব কিছু লতাপাতার আগাপাশতলা বেষ্টনী ছিঁড়ে এক নিমেষে সমুদ্র সম্মুখে নিস্তেজ নিশ্চল দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। আর ইচ্ছে করে এমন অপরূপ এক দিনক্ষণের ভোরবেলায়, কিছুটা দূর থেকে তোকে দেখতে। দেখতে, কিভাবে কিভাবে তুই আনমনে ঢেউ দেখছিস, অথবা একমনে তাকিয়ে রয়েছিস আকাশের একটু একটু করে ফুটে চলা আলোর দিকে।

আমি কতদিন ভাবি এই সব কতশত নিখুঁত বসন্তদিন পেরিয়ে এলাম তবু ঘাসের ওপর মাথা রেখে কোনো একটা রাতেও তারা দেখা হলো না। রাতের বেলায় বেরিয়ে পড়া হলোনা ফাঁকা ট্রেনে। রাতের ফাঁকা ডাউন লোকালের জানলার ধারে, বিন্দু বিন্দু আলো আসে আবার মিলিয়ে যায়, আবার আসে আবার মিলিয়ে যায়। কত বিন্দুবৎ ঘর, কত সবিস্তার তাদের গল্প। এরকম অচেনা কোনো বাড়ির মধ্যে দূর থেকে হলদেটে আলো দেখলে (যেমন হলদে অনেকটা উত্তর কলকাতার অলিগলিতে আলো হয়ে সন্ধ্যে বেলা ছড়িয়ে পড়ে) সেই বাড়ির ভিতরটায় গিয়ে কিছুটা সময় কাটাতে ইচ্ছে করে। এত দিনকাল গেল, কোথাও বাড়ি খুঁজে পেলাম না, এই হলুদ আলো আর তাকে ঘিরে থাকা চার দেওয়ালের মধ্যে থাকা মানুষদের মধ্যে যদি খুঁজে পেয়ে যাই… এই আশাই বোধহয় আমাকে দরজা খুলিয়ে ওইসব বাড়ির ভিতরে টেনে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু আমি ফিরে আসি, বা রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে রাস্তা পাল্টে ফেলি। মনে মনে ভাবি ফাঁকা ডাউন লোকাল টেলিস্কোপ বসন্ত ইত্যাদি প্রভৃতি। তবে এবার ঠিক করেছি, যেভাবে মানুষজন সমস্ত সুখস্বপ্ন ভবিষ্যতের জন্য তুলে রাখে সেভাবে আমিও আলমারিতে সাজিয়ে গুছিয়ে, ঠিক করেছি তুলে রাখব একটা দিন বাঁচার স্বপ্ন, যেখানে আমার আগামী ইনিংসের বিপুল রানের লক্ষ্যমাত্রা কোনোক্রমে পেরিয়ে আমি ভোরের এক ট্রেনে চেপে বসেছি। গন্তব্য এক পিকনিক, এবং ওই দামড়া বয়সেও কিছুটা সতেরো-আঠারোর উত্তেজনা বুকে নিয়ে চলেছি। অনেক নতুন মানুষের সাথে দেখা হবে। তোর সাথেও দেখা হবে, হয়তো প্রথমবার। একটা সাদা শোলার পাতায় ফ্রায়েড রাইস আর এক লোভনীয় বাদামীহলুদ রঙের মাংস নিয়ে আমরা খেতে বসে গল্প করছি। আর খেয়ে উঠতে উঠতে, গল্প করতে করতে বিকেল হয়ে যাচ্ছে। বিকেলের আলো পড়ে আসা রাস্তার ধারে ঘন হয়ে ছড়িয়ে রয়েছে গোলাপি হলুদ বোগানভেলিয়া। আমরা, আমি, তুই একদল মিলে আমাদের পেরিয়ে আসা জীবনের গল্প করছি।

পেরিয়ে আসা জীবন-জগদ্দলের কথা মনে পড়লে নস্টালজিক লাগে না। ওই অতীত আর ছোটবেলার প্রতি নস্টালজিক হওয়ার মতো ক্ষমাপরায়ণ আমি এখনও হয়ে উঠতে পারিনি। আমি হয়তো আজও সেই সময়ের বিকেলে লেগে থাকা কাদার দাগ প্রাণপণে হাত-পা থেকে তোলার চে��্টা করে চলেছি, তারা উঠছে আর না। আমি চোখ বুজিয়ে ভাবার চেষ্টা করি ওই সময়ের বিকেলগুলোয় মাঠের বদলে গল্পের বই, দাবা, অঙ্ক আর অনেকটা নিঃসঙ্গতা দিয়ে ভরে উঠছে। কোনো নাছোড় ভবিষ্যৎযাপনের নেশা আমাকে পেয়ে বসছে না। আমি আমার দিগভ্রান্তিকে খোলা মনে স্বাগত জানাচ্ছি। প্রশ্ন করছি। উত্তর না পেলে ভয় পাচ্ছি না, উত্তর খোঁজার তাড়াহুড়োয় খেই হারাচ্ছি না। পাখিদের ডাক শুনছি মন দিয়ে। দেখছি কিছু পাখি কেমন একই আওয়াজ একই ভঙ্গিমায় বারবার করে চলেছে। যেমন ভাবে স্টেশনমাস্টাররা বলে - “চার নম্বর লাইন থেকে মালগাড়ি ছাড়ছে, চার নম্বর লাইন থেকে মালগাড়ি ছাড়ছে…”।

...আমি ভাবি এই বিপুলা মহাজগতের খণ্ডবিখণ্ডকে কত ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে অনুধাবন করা যায়। যেভাবে পরিযায়ী পাখি পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের পরিবর্তন অনুভব করতে পারে, আর সেই অনুযায়ী পাল্টাতে পারে নিজের অভিমুখ। যেভাবে বাদুড় রাতের বেলায় শব্দ করতে করতে ঘুরে বেড়ায়, আর ধাক্কা খেয়ে ফেরত আসা শব্দ শুনে বুঝে নেয় সামনে ঠিক কতটা দূরে রয়েছে ঘরবাড়ি গাছপালা। বুঝে নেয়, বাদুড়ের মস্তিস্ক তৈরি করে ফেলে তার আশপাশের এক নক্সা এই ফিরে আসা আসা প্রতিধ্বনি বিশ্লেষণ করে করে। আমাদের জন্যে এই কাজটাই করে থাকে দৃষ্টির বোধ। এই মহাজগৎ ধরা দেয় আমাদের প্রত্যেকের সীমিত ধারণক্ষমতার ভিতরেই। সেভাবে দেখলে, সেই অন্তিম একমেবাদ্বিতীয়মের কত অসংখ্য প্রতিকৃতি যে যার সাধ্যমতো রচনা করে চলেছে। কিন্তু আমি দেখি মানুষ হিসেবে, আমাদের সীমিত সীমাবদ্ধ দেখা নিয়ে আমরা কী ভীষণ নিশ্চিত, কী অপরিসীম দ্বিধাহীন। এহেন অন্ধ আত্মপ্রত্যয় দেখে বড় পীড়িত হই। আকার আয়তনে বয়সে বেড়ে ওঠা অপ্রাপ্তমনস্কদের সাথে দিবসরজনী নিয়ে আমাদের নিরুত্তাপ বেঁচে থাকা আমায় রাগিয়ে তোলে। অতন্ত্য ব্যক্তিগত বৃত্তেই কোথাও অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি, ঘটছেনা, কোত্থাও নেই কোনো ঠাসচাপচাপ অন্ধকার, এই ভ্রম, এই ভ্রমকে সত্য বলে আভূমি নত থাকা মানুষজনের ভিড়ে হেঁটে হেঁটে আমি ক্লান্ত।

আমি চাই, সমুদ্রের দিকে চেয়ে চেয়ে তোর পাশে বসে থাকাকালীন সব উত্তাপ হারিয়ে ফে��ুক আমার বিগত জীবনের এই সমস্ত ক্রুদ্ধ অঙ্গার। কোনো অসীম জলরাশির আশ্বাসে থেমে যাক আমার এই অনন্ত দহন, শেষ হোক এই প্রাণান্তকর প্রদাহ।

যেমন হারিয়ে গেছে প্রেম করার চিরচঞ্চল তাড়না, যেমন আর কারোর সাথে শীততাপ নিয়ন্ত্��িত ক্যাফেতে বসে গ্রিলড স্যান্ডউইচে কামড় বসাতে, পাহাড়ের কুয়াশায় কাউকে জড়িয়ে ধরে সূর্যোদয় দেখে ফেলতে, কারোর সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছেরা ক্ষয়েছে ধীরে ধীরে। যেমন বুঝতে পেরেছি, মানুষ কারোর প্রতি মুগ্ধ হয় এ কথা যেমন সত্যি, মানুষ সততই কারোর প্রতি মুগ্ধ হয়ে উঠতে চায় একথা সত্যতর। কাজেই সত্যিই ভীষণ মুগ্ধ হল, নাকি মুগ্ধ হওয়ার বাসনা তাকে সুযোগ দেখেই মুগ্ধ হওয়ার দিকে সজোরে ঠেলে দিল এই নিয়ে নিশ্চিত কোনো সিধান্তে পৌঁছই কিভাবে? মানে আমি ভ্রমে ভ্রম্রিব ভ্রমে ভ্রমিব আর শেষ পর্যন্ত বারবার বারবার হাতে থাকবে পেন্সিল- এহেন খেলা খেলে খেলে রণে ভঙ্গ দিতে ইচ্ছে হওয়া কি খুব বড় অপরাধ? একটা কয়েকশ কোটি বছর ব্যাপী খেয়ালখুশি প্রসেস যার রকমসকম হল আমাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে, যতগুলো সম্ভব আমার মতো কটা প্রতিলিপি তৈরিতে আমাকে ক্রমাগত উৎসাহিত করা। যেখানে আমার কাছে সম্পূর্ণ জৈবিক এক প্রতিবর্ত ক্রিয়ার মতো নারী প্রজাতির প্রতি আকর্ষণের অনুভবে তাড়িত না হওয়ার চয়েস নেই। সেইখানে মনেহয় এহেন ভোগবাসনা আমার কাঙ্খিত ও প্রয়োজনীয় শান্তি অনুভবের থেকে ঠিক কত যোজন দূরে? যেখানে অন্তিম পর্বে জানা যায় সমস্ত ভালোলাগালাগির ভালোবাসাবাসির বিশেষ কোনো কারণ নেই, শুধুমাত্র প্রতিলিপি ক্রিয়েশনের হেতু আমার সাথে মশকরা করে হয়েছিল খানিক। এইখানে দাঁড়িয়ে আমি কি বিবর্তনের সামান্য ফুট সোলজার হয়ে যাই না? আ মেয়ার মিন্স টু এন এন্ড? আর তাই হলে অন্তরে প্রকান্ড এক শূন্যতা লালন-পালন করতে করতেই এই সুবৃহৎ প্রেম-প্রজেক্টে অংশ নিয়ে আমার লাভ?

অবাক লাগে এই খেয়ালখুশি প্রসেসটা এতদূর এসে পড়ল যেখানে এই প্রসেস থেকে সৃষ্ট প্রোডাক্টই সেই প্রসেস নিয়ে মাথা ঘামাতে পারে, তার অন্তর্নিহিত কোনো গভীর উদ্দেশ্য রয়েছে কিনা সেই নিয়ে ভাবতে পারে। তার অভিমুখ কোনদিকে হওয়া উচিৎ সেই নিয়ে বিশ্লেষণ শুরু করতে পারে।

কিন্তু…কিন্তু ওইরকম আলো ফুটতে থাকা ভোরেরবেলায় তোর পাশে বসে সুমুদ্র দেখতে দেখতে কি এতকিছু ভাবতে ইচ্ছে করবে? নাকি আকাশী বা মৃদু গোলাপির মতো ফুরফুরে কোনো অনুভূতিতে মন নিবিষ্ট হয়ে পড়বে। লিখে প্রকাশ করে যায়না এমন এক ঝপ-ঝপাস শব্দে পাড়ে এসে ভাঙবে ঢেউ? একটা ঠাণ্ডা হাওয়া আসা যাওয়া করবে ক্রমাগত? কতদূর থেকে আসছে এই হাওয়া জানতে ইচ্ছে করবে বটে। এই বিপুল জলরাশি নিয়ে শূন্যে ভেসে থাকা এক গোলকের কোথা থেকে এক হাওয়া এসে ছুঁয়ে যাচ্ছে আমায��, তোকে? কেন তোর উপস্থিতিতে এমন অনন্ত প্রশান্তি নিয়ে সব কিছু আমার সামনে ভিড় করে আসে? যেন কোনো সফল অবসন্নতায় সমস্ত ক্লান্তি পেরিয়ে আমি নতুন কোনো দিনে জেগে উঠছি। এমন দিনে আমি আদৌ পৌঁছব কি, বল তো? এমন হাওয়া আর এসে লাগবে গালে? এমন ঠাণ্ডা? এমন নিখুঁত বসন্তদিন, বেঁচে থাকবে আরও কিছু বছর? এই সমুদ্র?

(বছর সাতাশ-আঠাশ আগে ফটো স্টুডিওতে একগালে আঙুল ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট্ট মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে -- যার সাথে আমার কোনোদিন দেখা হয়নি।)

[sankhaneel]

Here’s a polished version of your essay while keeping its raw energy and informal style intact:

On Metaphors

You’re watching a movie where an Indian guy is getting bullied by a British guy. A lot of things happen—fights, struggles, drama. By the end, the Indian guy drives the British guy out of his village, maybe even out of town. You enjoy the film. You think, What an entertaining movie! But then someone tells you: Actually, the Indian guy represents India, the British guy represents Britain, and the whole thing is an allegory for Indian independence.

And at this point, I lose my mind.

I mean, tell me—have you ever done a math problem where you didn’t explicitly state, right at the beginning, which variable represents what? You’d be getting zeroes if you skipped that step. Now imagine scribbling down a bunch of calculations without defining the variables. Then, when the teacher asks, What the hell is this?, you reveal your secrets and say, Oh, I cleverly sprinkled subtle hints about what the variables actually stand for throughout the problem.

Come on.

Look, I get it—symbolism has its place. You can’t possibly capture the full spectrum of human experience during India’s independence struggle. You can’t portray the entire British government, its civil servants, and its businessmen in all their complexity. So, you condense them into a single fictional character, using metaphor as a tool for simplification. That makes sense.

But in so many films I watch, this artistic liberty—the ability to leave out details for the sake of clarity—ends up making the work more obscure, more convoluted. Should deciphering a story really be this complicated? I can’t help but wonder if a lot of this ambiguity stems from something emotional. Is the creator insecure about their own expression? Do they feel that what they want to say isn’t significant enough, deep enough? Are they afraid that the truths they’ve extracted from their suffering aren’t profound enough to serve as the grand conclusions of their story?

Imagine someone who survives the Holocaust, endures the madness of the Nazi regime, and after all that, the one lesson they take away is: staying hydrated is important. Would they feel embarrassed to admit that? Would they, instead, make a film filled with lingering shots of water bottles and vast water bodies to mask the simplicity of their realization?