Tumgik
#সেই ফেলে আসা দিনগুলি
rick-indranil · 4 years
Text
Tumblr media
0 notes
debajitb · 3 years
Text
আনন্দেতে বাঁচো...
বছর সত্তরের ভদ্রলোকটি আমার মতোই কলকাতা থেকে ভুবনেশ্বর যাচ্ছেন , পরনে পায়জামা পাঞ্জাবি , তার উপর জহর কোট চাপানো , কম্বলটাকে পায়ের উপর জড়িয়ে বাবু হয়ে বসে এক মনে মোবাইলে টাইপ করে চলেছেন ...মাঝে মাঝে ফিক ফিক করে হাসছেন। বেশ কয়েকবার আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন দেখলেন আবার মোবাইলে মনোনিবেশ করলেন । কেন জানি না সেদিন 2nd AC ওই কামরাটি বেশ ফাঁকাই ছিল , ঠান্ডাটা একটু বেশিই লাগছিলো ।
রাত তখন এগারোটা হবে বাকিরা সবাই মোটামুটি ঘুমের দেশে পাড়ি দিয়েছে বা দেবে দেবে করছে । রাত একটার আগে আমার ঘুম  আসবে না তাই আমি চাদরটাকে সারা গায়ে জড়িয়ে মোবাইলটাকে নাড়াচাড়া করছিলাম । ভদ্রলোকটি চোখ থেকে হাই পাওয়ারের চশমাটা খুলে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন কি ঠান্ডা লাগছে my son ..? ভদ্রলোকটিকে দেখে আমার শিক্ষক বা প্রফেসর মনে হচ্ছিল .... বেশ একটা পারসোনালিটি তার সারা শরীরের ভাষায় প্রকাশ পাচ্ছিল , তার উপর ওনার মুখে my son কথাটি শুনে আমি একটু নড়েচড়ে বসলাম, বললাম তা একটু লাগছে । ভদ্রলোকটি বললেন এক্ষুনি লাস্ট কফিওয়ালা উঠবে একটু কফি খেয়ে নাও দেখবে ভালো লাগবে । ঠিক তাই দুজনেই কফি নিয়ে বসলাম , একে একে ধেয়ে এলো অতি পরিচিত কিছু প্রশ্ন ---কোথায় থাকো ?  কি করা হয় ? সন্তান কটি ? তারা কিসে পড়ে ? কথায় কথায় ভদ্রলোকটি বললেন উনি ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটির বাংলার প্রফেসর ছিলেন । কিছুক্ষন দুজনেই চুপ, তারপর ভদ্রলোকটি শান্ত গলায় জিজ্ঞাসা করলেন কেমন লাগছে জীবনের স্বাদ ? বাড়িতে সময় দেওয়া হয় ? আমি কি বলবো তা ঠিক গুছিয়ে উঠতে পারছিলাম না । ভদ্রলোকটি আমাকে একটু আস্বস্ত করে বললেন আমি জানতে চাইছি জীবনটাকে মিষ্টি লাগছে না তেতো ? আমি হাসতে হাসতে বললাম টক ঝাল মিষ্টি ... সকালে নয়টায় অফিস, তারপর  ফিরতে ফিরতে সেই রাত আটটা। বাকি সময়টুকু হয় আমার সাথে বউয়ের ঝামেলা নয়তো মেয়ের সাথে মেয়ের মায়ের ...সকালে ঘুম থেকে দেরি করে কেন ওঠা থেকে শুরু , homework কেন হয়নি ? খাবার কেন থালায় পড়ে ? স্কুলের ব্যাগ কেন গোছাওনি ? খাটের চাদর কেন লন্ড ভন্ড ? বইগুলো ঠিক জায়গায় নেই কেন ? পা না ধুয়ে কেন খাটে উঠেছ ? কত TV দেখবে ? একটা না একটা বিষয় নিয়ে লেগেই আছে , মাঝে মাঝে অতিষ্ট হয়ে মেজাজ যায় হারিয়ে ....
ভদ্রলোকটি ছোট্ট একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে কম্বলটি বুকের উপর তুলে বলল এটাই তো জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময় ...এটাকে অবহেলা কোরো না ....টক ঝাল মিষ্টির এই অতুলনীয় স্বাদটাকে কব্জি ডুবিয়ে চেটেপুটে খাও একেবারে হাতের নখ থেকে কুনুই পর্যন্ত । একটা সময় আসবে যখন ঘরে ঢুকে দেখবে চারিদিক নিঃশব্দ , বিছানার চাদরটা টান টান করে পাতা , মা-মেয়ের প্রতিদিনের খন্ডযুদ্ধ কোনো এক অলৌকিক ইশারায় চিরতরে অবসান ঘটেছে , মনে হবে চাদরটা দু হাত দিয়ে আবার লণ্ডভণ্ড করে অপূর্ণ যুদ্ধের দামামা বাজাই ...বইয়ের তাকটা পরিপাটি করে সাজানো হালকা সাদা ধুলোর আস্তরণ বইগুলোতে লেপ্টে আছে ...মনে হবে সব বইগুলো পরিষ্কার টেবিলটার উপর আছড়ে ফেলে অসমাপ্ত অঙ্ক গুলোকে ছোটো ছোটো হাত দুটো ধরে আর একবার কষাই ...সব কিছু ঠিকঠাক কিন্তু চারিদিক মরুভূমির নিঃসঙ্গতা ,  সন্তানের পরিচিত গন্ধকে একটিবার পাওয়ার আশায় এঘর ওঘর শুধু ঘুরপাক খাওয়া , বাড়ি থেকে বেরোবার সময় পেছনে নড়বে না কোনো আদুল হাতের টাটা , TVটা আপন মনেই চলতে থাকে কেউ কেড়ে নেয় না রিমোট টা অযথা বাহানায় , খাবার টেবিলেই শুকোতে থাকে এঁটো হাত, কেউ ছোবল দেয় না আর ডিমের কুসুমে , মোবাইলের ওপারে আদুরে আওয়াজ প্রতিদিন থেকে প্রতি সপ্তাহে, প্রতি সপ্তাহে থেকে প্রতি মাসে গিয়ে ঠেকবে , দুদিনের জন্য আসবে, যাবার সময় ব্যাগের ভিতর নিয়ে যাবে হাটি হাটি পা পা থেকে একটু একটু করে গড়ে তোলা সব স্বপ্ন ....দৃষ্টি শক্তি ধীরে ধীরে লোপ পাবে , বাড়বে শুধু ওষুধের সংখ্যা , অনিদ্রায় চোখ দুটো হয়ে উঠবে আরো নিশাচর ......
ভদ্রলোকটির প্রতিটি কথা ট্রেনের বিকট আওয়াজ পেরিয়ে বুকের ভিতর যেন তীরের মতো বিঁধছিল , আমি বললাম তাহলে বাঁচার উপায় ?  ভদ্রলোকটি একটু ধরা গলায় বললেন শীতের ঝরা পাতার মতো যদি ঝরে পড়ো তবে কেউ ফিরেও তাকাবে না ... উপরে সবুজ পাতার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অচিরে বিলীন হবে মাটির বুকে ...সবুজ পাতার মতো ফুটে উঠতে হবে ওই জীর্ণ বট বৃক্ষে । পুরোনো বন্ধুদের সান্নিধ্যের আগুনে মনটাকে সেকতে হবে ঠিক যেমন কনকনে শীতের রাতে কাঁপতে কাঁপতে এক টুকরো আগুনকে ঘিরে ধরে একটু ভালো লাগার উষ্ণতা সারা শরীরে মাখতে ইচ্ছা করে... একমাত্র বন্ধুই পারে তোমার ক্ষয়ে যাওয়া জীবনে অফুরন্ত হাসির ফোয়ারা প্রলেপ লাগাতে , তাইতো আমি সময় অসময় চোখ রাখি ওই মোবাইলের ছোটো জানালা��� ...তাতে ভেসে ওঠা পুরোনো বন্ধুর এক একটা শব্দ সবুজ পাতার ফাঁক দিয়ে ঠিকরে বেরিয়ে আসা এক একটি সূর্যরশ্মি। সযত্নে আগলে রেখো পুরোনো বন্ধুত্বকে । আজকের প্রতিদিনের কর্মযুদ্ধে হারিয়ে ফেলো না তাদের বন্ধুত্বের হাতছানি । আমি আজ যাচ্ছি আমাদের বন্ধুদের মিলন সমারোহে ....তিন মাস অন্তর অন্তর আমরা মিট  করি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে । গান , বাজনা , হাসির কোলাহলে ডুবে থাকি দুদিন ...খুঁজে পাই বেঁচে থাকার অক্সিজেন ....
পরদিন ভোর বেলায় যখন ভুবনেশ্বর স্টেশনে নামলাম দেখলাম গোটা পনেরো সত্তর বছরের যুবক ভদ্রলোকটিকে ঘিরে ধরেছে ....হাসতে হাসতে তারা এগিয়ে চলেছে নতুন ভুবন গড়তে ...আমাকে দেখে ভদ্রলোকটি হাত নেড়ে বললো look my son এরাই আমার এক একটি সবুজ পাতা .....
জানি না ২০ বছর পর আমাদের ভবিষ্যৎ কি হবে ? জানি না মোবাইলে টাইপ করার শক্তি হাতে মজুত থাকবে কি না ? হয়তো ধীরে ধীরে চোখের দৃষ্টি আবছা হয়ে আসবে ...গ্রুপের গানের আসর হয়তো তখনো একই রকম ভাবে জমে উঠবে কিন্তু হঠাৎ করেই বেইমান হয়ে উঠবে শ্রবণ শক্তি , আস্তে আস্তে শিথিল হবে   স্মৃতিশক্তির বাঁধন ....তবু থেমে যেন না যায় বন্ধুত্ব...
তাই বন্ধু চাই, ভাল বন্ধু, যে স্বার্থহীন ভাবে সুখে-দুখে তোমার পাশে থাকবে। এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে যেতে না চাইলেও একদিন তো চলে যেতেই হবে। তাই যতদিন বাঁচো প্রান খুলে হাসো। জীবনে চাওয়া  পাওয়ার সংকীর্ণতা ভুলে শেষের দিনগুলি আনন্দেতে বাঁচো। জীবনের হাসিকান্নার এই রঙ্গশালায়......
From Social Media - full credit goes to the respected unknown creator. Thank You.
Claimed by : টক-ঝাল-মিষ্টি   -প্রশান্ত মজুমদার  -বাটানগর।
0 notes
santanuwriteup · 4 years
Text
ক্ষণিক বসন্ত
----------------
ট্রামের সিটে গোধূলির আলোয়
আচমকা তার সাথে দেখা
জানলার দিকে ঘোরানো তার মুখ
বাতাসে চুল সামলিয়ে রাখা,
তাকে দেখে একটি নাম গুনগুনীয়ে ওঠে
সে ছিল আমার ছোটবেলার সাথী
বৈদ্যবাটির পিসির ছাদেতে
ফর্সা পায়ের মাঝে ইটের চাকতি ,
এক পায়ে চক্কর কাটে খোপে
একবার এদিক ওদিক যায়
কুঁজো হয়ে কুড়িয়ে নিয়ে ঢেলা
প্রজাপতি ডানা মেলে উড়ে যায় ,
সে ছিল আমার ছোটবেলার সাথী
দুপুরে ভাগ বসাই কঁদবেলেতে
কত গল্প তার মুখেতে শোনা
আমার মন পড়ে রয় তারই মুখেতে ,
সে ছিল আমার ছোটবেলার সাথী
নদীর পারে তারই সাথে আসা
সে আমায় চিনিয়েছিলো
বাবুই পাখির বাসা,
তার সাথে হাতে হাত রেখে ঘোরা
সাহেব বাগানে গাজনের মেলা
কেমন করে ভুলি সে দিনগুলি
ফেলে আসা সেই ছেলেবেলা।
সেই মুখের সাথে কত না মিল তার
যখন ও আমার দিকে চায়
চুলগুলো মুখের ওপর পরে
আলগোছে হাত দিয়ে তা সরায়,
প্রতিদিন কাজ শেষ করে
যখন আমার মন বাড়ির দিকে ধায়
ও তখন অফিস শেষ করে
ক্লান্তি আর অবসন্নতায়,
ইচ্ছে হলো সাহস করে বলি
তুমি কি সেই ছোটবেলার সাথী
সংকোচ আমায় ঘিরে রাখে
ইচ্ছে গুলো গোপন করে রাখি ,
একদিন হটাৎ এলো সুযোগ
গিয়ে বসলাম তার পাশটিতে
আলাপটা সেই করলে শুরু
জানলাম আছে সরকারি চাকরিতে ,
কথা বলার ছলে প্রশ্ন করলাম,
কখনো গেছেন বৈদ্যবাটিতে
তাকিয়ে থেকে বললো হেসে,
অনেক দেখা বাকি এই পৃথিবীতে ,
কথায় কথায় জানালো
স্বামী অন্য দেশে আছে
এখানে থাকে হোস্টেলে
বদলি হলেই যাবে স্বামীর কাছে ,
এইভাবে মাঝে মধ্যে দেখা
আমায় দেখে ঠোঁটের কোনে হাসি
কেন যেন সেই বিকেলটা
রঙ্গিন ঘুড়ির মতো আকাশে ভাসি ,
মনের কোণে আর নেই সন্দেহ
সে যে আমার নতুন পরিচিতা
এমনি ভাবেই কেটে যায়
বেশ কিছু মাস টা,
একদিন ঠিকানা চাইলো
আমার কার্ড দিলাম ওকে
নত মুখে খবর টা সে দিলো
বদলি হতে হচ্ছে তাকে ,
আমি বললাম, কবে যাচ্ছেন?
ও মৃদুস্বরে বললো, কাল
একটা কাগজ এগিয়ে দিলো সে
আমার নামার পরে দেখবেন
না হলে আড়ি চিরকাল।
ও নেমে যাওয়ার পর
কাগজ খুলে দেখি
মেয়েলি হাতে লেখা,
"সুজানদা তুমি আজ ও আমায়
ভোলোনি"
ইতি তোমার পাখি।
0 notes
rockgeohrik07 · 3 years
Text
লকডাউন ডায়েরি!!
পর্ব ১: সূচনা
আমার বাড়ি মুর্শিদাবাদের একটি ছোট্ট শহরে, নাম রঘুনাথগঞ্জ। আমার প্রথম কলকাতায় আসা বাবার চিকিৎসা এর জন্য ২০০৭ সালে। তারপর এলাম ২০১১ তে, আর ফেরা হয়নি। প্রথমদিকে শহরটাকে বড্ড প্রাণহীন আর রুক্ষ মনে হয়েছিল, তাই সুযোগ পেলেই এই শহর থেকে নিজের শহরে পালিয়ে যেতাম। পরবর্তী সময়ে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের চাপে আমার শহরে যাওয়ার প্রবণতা কমে গেলো। কলকাতাও এই কদিনে আমার কাছে নতুন রূপে ধরা দিলো। আস্তে আস্তে এই শহরে��� সবকিছু আমার কাছে চেনা আপন, ও নিজের হয়ে উঠতে লাগলো।
আজকে আমার চোখে দেখা এই কলকাতার পরিবর্তনের কথা বলবো এক মহা সংকটের সময়ে। যখন চারিদিক থেকে নাগপাশের মতো প্রকৃতি আমাদের জাপটে ধরেছে আষ্টে পৃষ্ঠে।প্রকৃতি যেন তার প্রতি এই সভ্য জাতির করা সমস্ত অবজ্ঞা, অন্যায়ের প্রতিবাদ করছে, যা ঘনীভূত হয়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যে আছড়ে পড়ছে আমাদের ওপর। শুধু কলকাতাবাসী এর ওপর নয়, সমস্ত মানবজাতির ওপর এই ভাবেই আগ্রাসন দেখাচ্ছে প্রকৃতি তথা, প্রকৃতি এর আদিমতম জীব। গোটা বিশ্ব এখন থমকে, তাবড় তাবড় বিজ্ঞানীরা হিমশিম খাচ্ছে পরিস্থিতি সামাল দিতে। প্রকৃতিও বুঝিয়ে দিচ্ছে নিজেদের সর্বশক্তিমান ভাবা জীবদের, যে তারাও প্রকৃতির সামনে কতটা ক্ষুদ্র, কতটা তুচ্ছ , কতটা দুর্বল। চীন দেশে প্রথম প্রাদুর্ভাব ঘটে এই আণুবীক্ষণিক জীব টির। জীব বলা ভুল, ছোটবেলায় জীবনবিজ্ঞান বইয়ের ' ইহা এক অদ্ভুত বস্তু ' যা জীব ও জড়ের মাঝামাঝি। পৃথিবী সৃষ্টির প্রাক্কালে এদের উৎপত্তি। চীন দেশে এদের এক নতুন প্রজাতির কথা জানা যায় যেটা কিনা মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ে । এতদিন বার্ডফ্লু , সোইনফ্লু এর বাহক ছিল নিরীহ প্রাণী, সেই সব প্রাণী থেকে ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করতো। মানুষ ব্যাতিত অন্য প্রাণী মূল্যহীন, তাই ওদের মেরে ফেলে রোগ মুক্তি এর পথ বাতলানো হতো। কিন্তু এক্ষত্রে মুশকিল টা হলো বাহক প্রাণীটি মানুষ, তাই তাকে মেরে ফেলে রোগমুক্তি সম্ভব নয়। অতএব ঠিক করা হলো এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রুখতে মানুষে মানুষে মেলামেশা বন্ধ করা হোক। মানুষকে করা হোক গৃহবন্দী। চীন দেশেই প্রথম এই পন্থা প্রয়োগ করা হলো, তাতে সেই দেশের সংক্রমণ কিছুটা আটকানো গেলেও পৃথিবী এর নানা প্রান্তে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়লো। মানুষের দ্রুত গতিতে একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাওয়ার পরিকল্পনা যেকোনো দিন তাদেরই জীবনে বুমেরাং হয়ে ফায়ার আসবে তা ভাবনার বাইরেই ছিল। পৃথিবীর সমস্ত বড় শহর আস্তে আস্তে চলে গেলো এই ভাইরাস এর গ্রাসে। কলকাতা, আমাদের তিলোত্তমা কলকাতায় বাকি রইলো না। একটা স্রোতস্বিনী নদীকে হঠাৎ করে বাঁধ দিয়ে আটকে দিলে যেমন হয় কলকাতা এর ও ঠিক তেমন এ অবস্থা হলো। গলা ফাটিয়ে কাঁদতে থাকা বাচ্চাকে জুজুর ভয় দেখিয়ে জোর করে কান্না থামানোর ন্যায়, কলকাতা এর ও সমস্ত চলাফেরা বন্ধ করে দেয়া হলো এক অজানা বিপদের ভয় দেখিয়ে। ২৩ মার্চের রাতে যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করলেন এবার নোট নয় দেশ বন্দি আগামী একুশ দিনের জন্য সেদিন মানুষ হঠাৎ করেই এক অজানা আতঙ্কে ঝাঁপিয়ে পড়লো বাজারে, কয়েক ঘন্টা এর মধ্যে বাজার ফাঁকা। যাদের সঞ্চিত ধন অধিক, তারা পণ্য সঞ্চয় ও করলো অধিক। সমাজের ধনবৈষম্য যে কতটা এই ঘটনা তা সকলের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো। শীত শুরুর আগে পিঁপড়েরা যেমন খাবার সংগ্রহ করে, আর সেই খাবারের পরিমান এর ওপর নির্ভর করে তাদের শীতকালে বেঁচে থাকা। একুশ দিন এর দেশবন্দি মানুষকে সেই পিঁপড়ের পর্যায়ে নিয়ে গেল. আমার বর্তমান ঠিকানাটি এমন জায়গায় প্রত্যহ যান্ত্রিক পাখিরা উড়ে যায় মাথার ওপর দিয়ে। এই বিমান এরই যান্ত্রিক আর্তনাদে অভ্যস্ত আমার কান। কখনো অবসরে আকাশের দিকে তাকিয়ে শুধু লাইন দিয়ে তাদের আনাগোনা লক্ষ্য করতাম। দেশবন্দীর সুযোগে সেই যান্ত্রিক পাখিগুলি কোথায় উধাও হয়ে গেলো। তার বদলে এলো আকাশে চিল , ফিঙে ,বকদের সারি যারা যান্ত্রিক নয়। মানুষের বন্দী দশা দেখে তারা উড়ে বেড়াতে লাগলো আকাশে। মানুষ স্থলে জলে জঙ্গলে আকাশে বাতাসে কোথাও কারোর জন্য জায়গা ছেড়ে রাখেনি। নির্বিকারে গাছ কেটেছে, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে বন , দূষিত করেছে জল, অধিকার করেছে আকাশ যান্ত্রিক দানবে। প্রকৃতি আজ সমস্ত কিছু পুনরুদ্ধার করছে। দিন যত এগোলো নিত্যনতুন ঘটনার সাক্ষী হলাম আমি। আমিও বন্দী, সেজন্য আমার অভিজ্ঞতাও বন্দী এবং সীমিত। তবুও এই সীমিত অভিজ্ঞতাই অন্যান্য সাধারণ দিনগুলি এর থেকে অনেক অংশে আলাদা। মেয়াদ বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের খাদ্যাভাব, অর্থাভাব প্রকট হয়ে উঠতে লাগলো। কেউই এই অভূতপূর্ব অবস্থার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিল না। চারিদিকে অস্ফুট হাহাকার যেন কানে আস্তে লাগলো, 'একমুঠো অন্ন চাই,বাঁচতে চাই'. বহু মানুষই জীবিকার টানে ও অন্যান্য প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে। এমতবস্থায় তাদের জীবিকা বন্দীর তালিকাভুক্ত হলো, অতয়েব তারা ফিরতে চাইলো নিজের মাটিতে, বাঁচার তাগিদে। কিন্তু সমস্ত চাকার গতি আজ স্তব্ধ, সভ্যতার শুরুতে যে চাকা চলতে শুরু করেছিল এই প্রথমবারের জন্য তা থামলো। অগত্যা শ্রমজীবী মানুষ পায়ে হেঁটেই রওনা দিলো বাড়ির উদ্দেশ্যে। অনাহার ও পায়ে হেঁটে ঘরে ফেরার ধকল সামলে উঠতে পারলো না অনেকেই, মাঝ রাস্তায় মারা গেলো তারা। ট্রেনে চাপা পড়ে , ট্রাকে চাপা পড়ে মারা গেলো আরো অনেকে। সমাজের কঙ্কালসার ভাবমূর্তি বাইরে বেরিয়ে পড়তে লাগলো ক্রমশ। ডারউইন এর ন্যাচারাল সিলেকশন বলে প্রকৃতির প্রকোপ পরীক্ষার মাধ্যমে সর্বশক্তিমান বেছে নেয়। এক্ষেত্রে মানুষ প্রকৃতির সেই পরীক্ষা পদ্ধতিকে মিথ্যে করে টাকা ও ক্ষমতার জোরে অন্য মানুষের অধিকার খর্ব করে উঠে যেতে লাগলো ওপরে।
পর্ব -২: ফিরে এসো প্রকৃতি
জানালার বাইরে তাকালে মনে হয় এ এক কাল্পনিক জগৎ। কলকাতার বায়ুকে যে আমরা দিনে দিনে কতটা বিষাক্ত করে তুলেছি বন্দীদশায় বাইরে তাকালে পার্থক্য করতে কোনও অসুবিধা হয় না। ছাদে গিয়ে দাঁড়ালে যে কংক্রিটের জঙ্গল আধো কুয়াশায় ঢাকা বলে মনে হতো, তা এখন কাঁচের মতো স্বচ্ছ দেখা যায়। উত্তর কলকাতার শহরতলি থেকে অনেক দূরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে হাওড়া ব্রিজের মাথা দেখতে পাওয়া যায়। রোজ যেমন ডুবন্ত সূর্য ঝাপসা হয়ে যেত এখন তেমন হয় না, আকাশে রং বেরঙের খেলা দেখায়। সময় আরো কিছুদিন গড়ালে পরিবর্তনটাও আরো স্পষ্ট হতে থাকে। অহরহ পায়ের চেইপ যে তৃণরাশি কখনো মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি, সেই তৃণরাশিই এখন দাঁড়িয়ে সূর্য্য প্রণাম করে,শহর গড়ে ওঠার আগে এই জনপদও একদিন প্রকৃতি এর নিরবিচ্ছিন্ন অঙ্গ ছিল।আমরা মানুষেরাই যে সেই নাড়ির টান অস্বীকার করে দূরে সরে যাচ্ছিলাম, প্রকৃতি সস্নেহে তা বুঝিয়ে দিলো। সন্তান মায়ের ওপর হাজার অত্যাচার করলেও, বিপদে পড়লে মা সন্তানকে যেভাবে আঁকড়ে ধরে বাঁচাতে চায়, তেমনি নিজেকে সন্তানের বাসোপযোগী করে তুলতে চেষ্টা করলো। নেড়া মাঠে সবুজ ঘাসদের বেড়ে ওঠা তারই একটি প্রমান.
পর্ব -৩: রাত
যখন গ্রামের বাড়িতে থাকতাম, রাতের আকাশ আমাকে খুব টানতো। সেই সময় আমাদের গ্রামে বৈদ্যুতিক আলো ছিল না, তাই আকাশের থালা ভরা তারা দেখে অনেকটা সময় কাটিয়ে দিতাম।কলকাতায় বৈদ্যুতিক আলোর আধিক্যে এবং বায়ুদূষণের সুবাদে সেই সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। হাতে গোনা কয়েকটা তারা দেখতে পাওয়া যায় কখনো কখনো কোনো বৃষ্টিস্নাত রাত্রে। আকাশটাও এই সুযোগে মুছে চকচকে করে দিয়েছে ধরিত্রী মা। এই কয়েক বছরে যা অভিজ্ঞতা হয়েছে তাতে আমাদের কলকাতা রাত্রে বেলাতেও সমান প্রানোচ্ছল থাকে। ছোট-বড়ো গাড়ির শব্দ, দূরে কোথাও মাইকের আওয়াজ, মাঝে মধ্যে আকাশে দৈত্যাকার বিমানের গর্জন প্রতি রাত্রেই শোনা যায়। কিন্তু কয়েক মাস ধরে সবই কেমন যেন নিস্তুপ, থমথমে। এই মহানগরীর এমন নিস্তব্ধ শান্তরূপ আজ অবধি আমি প্রতক্ষ্য করিনি। দিগন্ত বিস্তৃত ইট কাঠ পাথরের বাড়িঘর গুলো দাঁড়িয়ে আছে একদম চুপচাপ। মাঝে মাঝে অনেক্ষন তাকিয়ে থাকলে ভয় হয় যেন এই শব্দহীন নগরী আমাকে গ্রাস করতে আসছে। ইচ্ছে করে চিৎকার করে ঘুম ভাঙাই আমার শহরের। কিন্তু পরমুহূর্তেই ভাবাবেগ চেপে সেই ইচ্ছে দমন করে ফিরে আসি জানলার পাশ থেকে। এই কদিন যাবৎ জানলাটাই আমার বাহির জগতের সাথে একমাত্র যোগাযোগ।
পর্ব ৪: ঝড় আসার আগে
এরকম ভাবেই ��িনগুলি কেটে যাচ্ছে ,যতদিন অতিবাহিত হচ্ছে আলোয় মোড়া কলকাতা গভীর অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে। সেই অন্ধকারের ভেতর থেকে ভেসে আসছে কিছু মানুষের পায়ের শব্দ, আর বাঁচতে চেয়ে আর্তনাদ। ভাইরাস এর করাল গ্রাস আরো প্রকট হয়ে উঠলো সারাবিশ্বে। ইতালি, স্পেন আমেরিকা ,ফ্রান্স রাশিয়া এর মতো বিশ্বের প্রথম সারির উন্নত দেশ গুলি এই একুশ শতকেও এক ক্ষুদ্র ভাইরাস এর পদানত হয়ে যেতে লাগলো, মৃত্যুমিছিল থামবার নয়। আমার শহর ও আস্তে আস্তে মারণ ভাইরাস এর কবলে যেতে লাগলো। ভাইরাস এর ক্রমবর্ধমান প্রাদুর্ভাবের ফলে ২১ দিনের বন্দীদশার মেয়াদ ধাপে ধাপে বাড়ানো হলো। এতদিনে অনেকটা অভ্যেস হয়ে গিয়েছিলো এই শহরের এমন ব্যবস্থাপনা। পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য অনেক মানুষের সাহায্যের হাত ও এগিয়ে এসেছিলো। ঘরবন্দী একা জীবনেও মানুষ ছোট ছোট আনন্দের মুহূর্ত খুঁজে নিচ্ছিলো,একে অপরের পাশে দাড়াচ্ছিলো।
পর্ব ৫: ঝড়
মানুষ যখন ক্রমশ এই অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিচ্ছে কলকাতার বুকে নেমে এলো আর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঘূর্ণিঝড় আমফান। কলকাতার জেগে ওঠার মুহূর্তে পুনরায় আঘাত করে মেরুদন্ডটা দ্বিতীয়বারের জন্য ভেঙে দিয়ে গেলো। এবার সবথেকে বেশি আঘাত সহ্য করতে হলো সেই সব মানুষ কে যারা এতদিন জীবিকা হারিয়েছে, খাদ্যাভাবে দিন কাটাচ্ছে। তাদের শেষ সম্বল, মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকুও আর অবশিষ্ট থাকলো না। প্রাণটুকু সম্বল করে এসে দাঁড়ালো খোলা আকাশের নিচে। যারা ভিন রাজ্য থেকে হাজার বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে এসে পৌঁছেছিল তাদের ঠিকানায়, তারা দেখলো তাদের বাড়িঘর সমস্ত ধুয়ে মুছে গিয়েছে এই ঝড়ে।এর আগেও অনেকবার অন্য বিভিন্ন নাম নিয়ে ঘূর্ণিঝড় তান্ডব চালিয়েছে কোলকাতার বুকে, প্রতিবারই ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এই মহানগরী, কিন্তু এবারের তীব্রতা অনেকটাই বেশি ছিল। একবিংশ শতাব্দীর সমস্ত উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা কয়েক মুহূর্তের মধ্যে অকেজো করে, মানুষে মানুষে খবরাখবর বিচ্ছিন্ন করে দিলো কয়েকদিনের জন্য।বাঁধ ভেঙে বহু মানুষের বাড়ি ঘরে চলে গেলো জলের তলায়। কলকাতার অলি গলিও চলে গেলো এক কোমর ,কোথাও বা এক গলা জলের নিচে। অনেকদিন পর কোলকাতার মানুষ বিদ্যুৎ ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো। এই দীর্ঘ অবকাশে দূরভাষ যন্ত্র, গণকযন্ত্র, দূরদর্শন ছেড়ে বাইরে তাকানো এর সুযোগ পেলো, তাকালো কলকাতার দিকে।বাইরে তাকিয়ে চোখের সামনে ভেসে উঠলো কলকতার নগ্ন রূপ। সমস্ত দামী দামী পোশাক, ঝলমলে আলোর গহনা ছেড়ে ��লকাতা ধরা দিলো আগল গায়ে। প্রকৃতি মানুষকে আরো কাছাকাছি নিয়ে এলো।
পর্ব ৬: শেষ থেকে শুরু
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে কলকাতা এর আগেও অনেকবার প্রকৃতির কোপে পড়েছে, সেই বিপদ অতিক্রম করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে সময়ের সাথে সাথে এবারও ঘুরে দাঁড়াবে। আমি যখন এই প্রবন্ধ লিখছি তখন ঝড়ে ভেঙে পড়া অনেক বাড়ি ঘর আবার উঠে দাঁড়াতে শুরু করেছে। এই সময় যাবৎ যে ক্ষত সৃষ্টি হলো কলকাতার বুকে সে ক্ষত হয়তো সেরে যাবে কিন্তু এর ক্ষত চিহ্ন যেন কলকাতাকে এই সময়ের কথা বার বার মনে করিয়ে দেয় । প্রকৃতির সাথে নাড়ির যোগ সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন করার কথা যখনই মানুষের মনে আসবে এই ক্ষতচিহ্ন তাকে ভুলতে না দেয় দিনের শেষে ঘরে ফেরার রাস্তা। এই ভাবেই হয়তো আমিও মনে রাখবো আমার ঘরে ফেরার রাস্তা, একদিন হয়তো ফিরে যাবো আমার শেকড়ে, আমার বাড়িতে - মুর্শিদাবাদে।
-------উদ্দালক বিশ্বাস ১০/০৬/২০২০
0 notes