Tumgik
#গল্পাচার
50-shade · 1 year
Text
ভরসন্ধার আজানে বাড়ি ফেরার তাগাদা তুমি ছিলে। আমার গায়েবানা জানাজা আর বেওয়ারিশ লাশের একমাত্র আধিকারিক তোমারে নিযুক্ত করেছিলাম। অথচ তুমি সুখ খুঁজতে মরিয়া হলে। ক্লান্তিতে দু'চোখ বুঁজে এলো তোমার। ঠিক তখনি ফিকে হয়ে এলো আমার অভিমান। সব অধিকার বাজেয়াপ্ত করলাম তোমার।
তুমি বিদায় নিলে; রেখে গেলে হৃদপিণ্ড- পৌনঃপুনিক ছন্দময় সঙ্কোচন। ফেলে গেলে অ্যালভিওলাই ফুসফুস নিষ্কাশিত প্রবাহ। কোথায় দাঁড়িয়ে তোমারে পর্যুদস্ত করতে পারি বলতে পারো তুমি? জানা আছে তোমার?
Tumblr media
1 note · View note
Text
কাজ শেষে বাসে ঝুলে মাত্র বাড়িতে ফিরলাম আমি। রাত বাজে ৯ টা। ছেলেটা তেড়েফুঁড়ে আসছে। সে জানে বাবার সোল্ডার ক্রস ব্যাগে আজ অবশ্যই খেলনা টেনলা কিছু আছে।
ছেলেটা আজ খেলনা চাইলো না, কোলে উঠে পড়লো লাফ দিয়ে। বলল বাবা জানো ঐ মামা টা না খুব পঁচা, আমাকে খালি ব্যড টাচ করে। মা-মনিকেও করে; কিন্তু মা-মনি কিচ্ছু বলে-না, খালি হাসে।
#গল্পাচার: তিন
বনল
১৫ এপ্রিল
উত্তরা
#wasimiftekhar
Tumblr media
0 notes
50-shade · 3 years
Text
ভোররাতে রাস্তাঘাট ফাঁকা। পুলিশ আর্মি দেখা যায়না খুব একটা। সূর্য ওঠেনি এখনো। ছেলেটা আধো অন্ধকারে বাড়ি থেকে বের হল। যদি কিছু কাজ জুটে যাই! অন্তত একদিনের খাওয়া যদি পাওয়া যায়।
ঘরে ফেরার সময় হয়েছে। এখন আকাশে কড়কড়ে সূর্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারি। অতএব আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা।
সূর্য-টা ডুবে গিয়েছে। রাস্তাঘাটে প্রহরা'য় কিছুটা শিথিলতা। ছেলেটা হাঁটা শুরু করে। এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হত তুমি বলতো...
এক সময় পৌঁছে যায় বাড়িতে। দিনের শেষ আজান ভেসে আসছে মসজিদ থেকে। আল্লা হু আকবর আল্লাহ..
ঘরে ফিরা ছেলেটা দেখল বাড়ির দুয়ার খোলা। মানুষের সাড়াশব্দ নেই। ক্লান্ত হয়ে ক্ষুধা ভুলে ঘুমিয়ে গিয়েছে গেঁদা'র মা। গেঁদা'র কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না।
মা'য়ের বুকে মুখ গুঁজে শুয়া গেঁদা। হয়তো সে ক'ফোটা বুকের দুধ খেতে চেয়েছিল। দুটো শরীরই নিস্তব্ধ, স্পন্দন হীন। মা'য়ের পটল চেরা চোখের অক্ষী-পটল উল্টে গিয়েছে।।
রেডিওতে ক্রমাগত সতর্কবার্তা বাজছে #StayHome
#গল্পাচার ১
বনল
১১ এপ্রিল ২০২০
1 note · View note
50-shade · 3 years
Text
দ্যা আমেরিকান গাল
পর্বঃ ৫
আজ অফিস যাওয়া হচ্ছে না; মানতে পারছি না মন থেকে। অনেকগুলো কাজ বাকি পরে আছে। অফিসের কাজ গোল্লায় যাক। I **** you এর তারকা গুলোর অর্থ জানার জন্য হলেও যাওয়া খুব দরকার।
আমাদের অফিসটা বেশ অদ্ভুত। কাজ দিয়ে কাউরে খুশি রাখা যায় না। ভাবে আমি বোধহয় শ্রমিক স্বার্থ টানছি। শ্রমিক ভাবে ম্যনেজমেন্ট স্বার্থ উদ্ধার করছি। অথচ শ্রমিকদের ভালো থাকা আর কোম্পানিরে সুখ সূচকে এগিয়ে নেয়া যে সমান্তরালে চালানো সম্ভব একথা কেউ বুঝতে চাই না।
গতমাসে যে মেয়ে গুলো জয়েন করেছে ওদের এজ সার্টিফিকেট গুলো নিতে হবে। সামনে সপ্তাহে ডাক্তার ছুটিতে গেলে এই কাজ আটকে যাবে। এখন তো শ্রমিকের অভাব নেই; ম্যনেজমেন্ট চাই না ১৮ এর নিচে কাউরে রেখে ঝামেলায় জড়াতে। আবার ছাটাই দিতে গেলে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েগুলোর ��োখে জল টলমল করে। কাজ করলেই না তখন সংসারের চাকা চলবে, অভিজ্ঞতা হবে। তখনই না ভালো বেতনের মুখ দেখা যাবে..
চাইল্ড লেবারের আজব এক গ্যারাকলে আটকে থাকে সব কমপ্লায়েন্স। ওহ আচ্ছা আমি হচ্ছি এই কোম্পানির HR অফিসার। সেই সুবাদে একাউন্টস, কমপ্লায়েন্স, মার্চেন্ডাইডিং থেকে অনেক কিছুতেই নাক গলাতে হয় আমারে।
------
কালো ছেলেটা বলেছে মুখে সে চিরকুটের অর্থ বলবে না। বুদ্ধি থাকলে যেন বের করে নিই। মাস ছয়েকের ভেতর খুবেকটা কিছু অর্থ উদ্ধার করতে পারলাম না। ব্যস্ততার মাঝে ওরে সেভাবে কাছেও পেলাম না; তাই জানতে চাওয়া হয় নি আর। অবশ্য ভালো সংবাদ হচ্ছে আমার বেতন থেকে যাতায়াত খরচও কেটে রাখা হয় নি।
তবে এর ভেতর একটা ছোট্ট ঘটনা ঘটে গিয়েছে। ঘটনা আমি ঘটিয়েছি তা নয়। আমি আসলে বাধ্য হয়েই অনুপ্রবেশ করেছি ঘটনার চক্রে।
অফিসে তো প্রচুর মেয়েরা আসে। কেউ থাকে ড্যাম স্মার্ট আবার কেউ থাকে চরম খ্যাত। একবার এক মেয়ের বায়োডাটাতে লেখা দেখলামঃ I'm prepared to do Anything else to keep client blissful and in proper track. দেখেই মাথায় আগুন ধরে গেলো। ক্লায়েন্টের জন্য কি করবে আমার জানার দরকার নেই। কিন্তু খাজলত এমন হলে তো এই মেয়ে আমার ঐ মানুষটারেও দখলে নিয়ে নেবে!
দরখাস্তটা আমি আড়াল করে ছিড়ে বাথরুমে ফ্লাস করে দিলাম। কেন যে দিলাম কে জানে!
পরদিন অফিসে এসে দেখি ঐ রুম থেকে বেশ জোড়ে হাসাহাসির শব্দ। পিঠ খোলা গাউনে বসে আছে কেউ একজন। মেয়েটা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। দেখলেই শরীর জ্বলে ওঠে।
ভাগ্যিস কদিন আগে ডেকোরেশন চেঞ্জ হয়েছিল। আগে ছিল স্পাই গ্লাস, যে গ্লাসের বাইরে থেকে ভেতরের কিছু দেখা যাবে না। অথচ ভেতর থেকে সব কিছু ট্রান্সপারেন্ট। কাজকামে আরো স্বচ্ছতার কথা বলে আগের কাচ সব তুলে দিয়ে এখনকার স্বচ্ছ কাচ লাগানো হয়েছে। আধুনিক ম্যনেজমেন্টে নাকি ট্রান্সপারেন্সি খুব জরুরী। স্বচ্ছ কাঁচে কোম্পানির কাজকারবারও স্বচ্ছ হয়। ছেলেটার এসব বিষয় গুলো আমারে খুব পাগলা করে। পাগলা করে বলে তার রুমে অন্য মেয়ের হাসাহাসি গলাগলি সহ্য হয় না আমার।
অথচ আমি তো তার কেউ-না! আসলেই কি আমি কেউ না! না আমি অবশ্যই কেউ একজন। বিশেষ একজন। আজ না হোক; এক যুগ পরে হলেও তোমারে আমার চাই-ই চাই। তুমি আমার-ই হবে। শুধুই আমার।
আগন্তুক মেয়ের পরিচয় সন্ধান পেয়ে গিয়েছি। গেট রেজিষ্টারে নাম লেখা 'মায়োকা'। একটা নামকরা রঙ কোম্পানির সেলস ম্যানেজার।
আচ্ছা এই মায়োকা কি ওর পূর্ব পরিচিত? কোন এক্স! পুরান প্রেম কি চাগান দিয়ে উঠেছে? নয়তো ও নিজেও কেন এত উত্তেজিত! আসলে পুরুষ মাত্রই সুযোগের অপেক্ষা। বাছবিচারহীন এডভেঞ্চারাস।
আমি সিদ্ধান্ত পাকা করে ফেলেছি। যা করার আমাকেই করতে হবে। ভালোবেসে একটা ছেলে খুন করতে পারে, জেল খাটতে পারে। তো আমি পারব না কেন? আমার মেধা, সাহস তো কারো থেকে কম না। ঐ ছেমরার থেকে তো অবশ্যই বেশি।
মায়োকার ফোন বাজতে শুরু করেছে। বাইরে থেকে দেখলাম সে ফোন হাতে তুলে নিলো। আমি বললাম মায়োকা HR থেকে বলছি শিগগির বাসাতে যান; আপনার আম্মাকে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। অফিসে আজ আপনার ছুটি। মায়োকার মুখ কালো হয়েছিল কি না জানি না। তবে কাচের আড়ালে ছেলেটা মনক্ষুন্ন চেহারা বুঝতে বেগ পেতে হল না।
মায়োকা সিরি ভেঙে নেমে যাচ্ছে। আমিও পিছে পিছে নামছি। কারখানার গেট পার হবার পর পেছন থেকে ডাকলাম মায়োকা, একটু দাঁড়াবেন। মায়োকা দাঁড়িয়ে গেলো। হয়তো ভাবছে এই অচেনা জাগায় তার নাম ধরে কে আবার ডাকে…
মায়োকা আপনার আম্মা অসুস্থ নন। ফোন আমিই করেছিলাম। ভাবছেন নাম্বার পেলাম কোথায়! ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। ভবিষ্যতে আরেকবার যদি ওর কাছে ঘেষার চেষ্টা করেন না; তাহলে কিন্তু একেবারে চোখ তুলে নেবো। বলেই উল্টো ঘুরে ভেতরে চলে এলাম। একটু ভয় অবশ্য হচ্ছিল যদি ঘটনা প্রকাশ হয়ে যায় তো লজ্জার শেষ থাকবে না...
আসলে আমি সহ্য করতে পারছিলাম না। ডেস্পারেট ��াগছিল। তাই সাপ্লায়ার ফাইল দেখে ঐ কোম্পানি থেকে নাম্বার নিয়ে মায়োকার ফোন নাম্বার নিলাম। অফিসের পিয়ন কে বললাম তোমার ফোনটা দাও। আমার ফোনে চার্জ দেয়া হয় নি...
#গল্পাচার #দিশা
#wasimiftekhar
Tumblr media
1 note · View note
50-shade · 3 years
Text
Tumblr media
ঘটনা ১
সখিনা নষ্ট মানুষ, পচা মেয়ে। রাত হলে বেড়ে যায় অস্থিরতা। হাত বদলের সাথে সাথে নিস্তেজ হতে থাকে তার শরীরের তেজ। তবুও তেজ দেখিয়ে যেতে হয় তারে। তেজের আড়ালে সখিনা ডুবিয়ে দেয়নি তার ভালবাসা। এক মূহুর্তের জন্যও শয্যাসঙ্গীরে সহ্যসঙ্গী মনে হয় নি তার। ঘুনাক্ষরেও চকিত ভাবনায় সাঝের পুরুষের তরে ভাবনা ডানা মেলেনি সখিনার।
ঘটনা ২
সিলভি নিরুপদ্রব নিখাঁদ নারী। তার শরীরে হানা দিতে পারেনি এক ছাড়া কেউ। সিলভি সেই জনের অনেক দিনের বন্ধু, অন্ধের লাঠি। এইচাইভির কোন সম্ভবনা ছাড়া নিশঙ্কচিত্তে মিলে যেতে পারে তার পুরুষ। তার যৌবন নিঙড়ে নিতে এতটুকুন আড়ষ্ট হয় না তার মানুষের সর্পিল জিহ্বা।
তবুও মাঝেমধ্যে কোন রাত্রিতে ঘুমের ঘোরে কোথায় যেন চলে যাই সিলভিয়া। তার নিশুতি স্বপন আঁকড়ে ধরে; প্রশংসার পল্লবে ভাসিয়ে দেয়া কোন সূদর্শন রোমিও-রে। কারো স্বযতন ভালবাসা, তলোয়ারের কোতে বিলিয়ে যেতে মন উদগ্রীব হয়ে ওঠে সহসা…
আপনার দ্বিধাঃ
তবে কে হৃদয়ের ভগবান? জীবনের দাবীতে শরীর হারিয়ে, মন না হারানো সখিনারে ধারণ করেন? লালন করেন সিলভি-রে। শুধুই একজনের জন্য সংরক্ষিত নির্মল শুদ্ধ শরীর; যার মন মাঝেমধ্যে হুট করে হানা দেয় অন্য কারো মনের আত্তিতে? মনের হানা শুধুই কি মন নিয়ে? মনে মনে মনের হানা শরীর ছুঁয়ে দেয় না? শরীরের মিলনও কি পারে মনকে পরিপূর্ণ দূরে রাখতে?
ভাবুন, অনেক অনেক গভীরে ভাবুন! নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই ভাবুন। তারপর বলুন আপনার অবস্থান কোন পাল্লায়?
1 note · View note
50-shade · 3 years
Text
পটকা পাচক
আজ রান্নার দায়িত্ব আমার। মটরশুটি দিয়ে খিচুরি। ষ্টিমড ইলিশের ভর্তা। ফিস সালাদ উইথ ফ্রেশ ফ্���ুটস। আর একটা স্যুপ। স্যুপটা আমার স্পেশাল আইটেম। স্মোকি ফ্লেভারের স্যুপ রিদমার অতিশয় প্রিয়।
আমি ৩ তলার বারান্দায় উঁকি দিতে ধাক্কার মত খেলাম। ওপর থেকে রিদমা'র ক্লিভেজ দৃশ্যমান। শাড়ির আঁচল ছুটে মাটিতে লুটাচ্ছে। সম্ভবত তারাহুরোয় পিন খুলে গিয়েছে। গাড়িটা অপেক্ষা না করেই টান দিয়েছে। আমি গাড়িটার নাম্বার দেখতে চেষ্টা করলাম। এ ধরণের প্রেম গুলো এমনই; প্লাগ এ্যন্ড প্লে। চু_দা_ শেষ খোদা হাফেজ টাইপ..যাকে বলে আর কি। প্রতিদিন ভাবি; আর বারান্দায় অপেক্ষা করব না। যেচে পরে এমন দৃশ্য কেই বা দেখতে চাই!
ইদানীং এ ধরণের ঘটনা ডালভাতে পরিণত হয়েছে রিদমার। মা'র জন্য অপেক্ষায় থেকে বাচ্চা'টা ক্লান্ত হয়। মধ্যরাতে জননী যখন ফেরে কন্যা তখন গভীর ঘুমে মগ্ন। সকালে মেয়ে যখন স্কুলে যাবার সময়; ক্লান্ত মা তখন অতল ঘুমে। বহুদিন মা'য়ের ডাক না শুনা মেয়েটা ভেতরে পুড়ে পুড়ে ছাই হতে থাকে। মা'ডাক শুনতে না পাওয়া রিদমা'ও কি আক্ষেপে ধিকিধিকি জ্বলে?
আদতে আমি এক ব্যর্থ পুরুষ। আদর্শ স্বামী হয়ে স্ত্রী-রে বেঁধে রাখতে পারিনি। সন্তানের মাথার ওপর মায়ের আঁচল বিছিয়ে দিতে পারিনি। অবশ্য খুব যে চেষ্টা করেছি; তা নয়। আমি তো নিয়মের বেড়াজালে আঁটকে নিজের করে পাওয়া প্রেম চাইনি। আমি পিঞ্জর খুলে দেয়া মানুষ। মুক্ত আকাশে ভেসে বেড়ানো যে পাখি সন্ধা নামার মুখে আমার কাছে ফিরে আসে; সেই শুধু আমার।
এক সময় খুব রাগ হত। পান থেকে চুন খসলে অভিমানে ফেটে পরতাম রিদমার সাথে। ধীরেধীরে বুঝলাম আসলে মিছে মরিচিকার পেছনে ছুটছি। ধোঁয়ারে মেঘ ভেবে ভুলের সাগরে পা বাড়িয়ে ছিলাম। ততদিনে অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে, ফিরে যাবার পথ আঁটকে গিয়েছে।
এত এত ভালবাসা, অজস্র সোনালী ভোরে একসাথে হাঁটা, মধ্যরাতে কফি, নাক ঘষাঘষির মানুষরে কি চাইলেই ছুঁড়ে ফেলা যাই? রিদমা অবশ্য ডিভোর্স চেয়েছিল শেষ দিকে। আমি রাজি হইনি। একটা প্রচন্ড জেদ চেপে বসেছিল ভেতরে। শেষ পরিণতি দেখার জেদ। ভালবাসাহীন সংসারে সংসার সাংসার খেলার মত জেদ। ঘৃণা কাকে বলে সেই শিক্ষা দিতে মরিয়া ছিলাম আমি। অথচ আমি এমন ছিলাম না। রিদমাও এমন ছিল না। রিদমা ছিল ঘোর মফস্বলের মেয়ে শান্ত, শিষ্ট।
অবশেষে আজ আমরা চুক্তিতে পৌঁছেছি। আগামী দু মাস সে বাড়ি থেকে বের হবে না। আমিও ঘরে ফিরে আসবো সন্ধে নামার আগে। রান্নাবান্না অর্ধেক দিন আমি আর অর্ধেক দিন সে।
কিচেন থেকে স্মোকি ঘ্রাণ ছড়িয়ে গিয়েছে। রিদমা বলল যেভাবে রান্না শিখেছ ২ মাস বোধহয় ভাল কাটবে। সে শাওয়ার নিতে চলে গেলো আর আমি কিচেনে। আমি সালাদ ড্রেসিং করে স্যুপ শেষ করলাম। আজকে সালাদে স্পেশাল ফিস দেয়া হয়েছে। দ্যা ব্যলোন ফিস। দেশে যেটারে বলে পটকা মাছ। ব্যলোন ফিস রান্না করা যা তা কাজ নয়। রীতিমতো ট্রেনিং করে সার্টিফিকেট নিতে হয়। আমি সার্টিফাইড পটকা রাধক।
মাঝখান থেকে ৩ টা ব্যলোন ফিসে ছুরি চালিয়ে দু ভাগ করে ফেললাম। সাবধাণে মাছের ডিম্বাশয় আর যকৃত আলাদা করে ব্লেন্ডারে চালিয়ে দিলাম। বেশী করে গোল মরিচ, লবন আর আদা মিশিয়ে হালকা আঁচে সেই ব্লেন্ড ১০ মিনিট ওভেন বয়েল করে নামিয়ে ফেললাম। অর্ধেকটা ঢেলে দিলাম সালাদে আর অর্ধেকটা রাখলাম স্যুপের জন্য…।
মধ্যরাত; রিদমা'র এখন জমেদূতে টানাটানি অবস্থা। শ্বাসনালী ড্রাই হয়ে যাচ্ছে। যত বেশী ড্রাই হচ্ছে ততবেশি পানি চাচ্ছে সে। এম্বুলেন্সে হাসপাতালে নিলাম। পুরোটা রাস্তা হাত রাখলাম রিদমার কপালে। কি জানি কি ভাবলো সে। আমার হাতটা বুকের কাছে টেনে কয়েকবার সরি বললো সে। ডাক্তাররা ওয়াস শুরু করছে অথচ তেমন কিছুই বের হচ্ছে না। মনিটরের দিকে সতর্ক চোখ সবার। ওয়াস বন্ধ করে রিদমার বুকের খাঁচায় শক থেরাপি দিল ওরা। কিন্তু কোন নড়াচড়া হল না রিদমার।
বিষক্রিয়ায় মৃত্যু সন্দেহে পুলিশে সংবাদ দিয়েছে হাসপাতাল কতৃপক্ষ। সন্দেহজনক আসামি হিসাবে গ্রেফতার করা হয়েছে আমারে। দু'দিন লাগলো বিস্তারিত ক্যমিকাল ও ফরেনসিক রিপোর্ট আসতে। রিপোর্টে উল্লেখ করেছে টেট্রোডোটক্সিন নামক শক্তিশালী বিষাক্ত ক্যমিকেলের রি এক্সানে রোগীর এক্সাইট্যাবল সেলে মেমব্রেনের সোডিয়াম চ্যানেল বন্ধ হয়ে ত্বরিৎ মৃত্যু।
আমাদের সাধারণ মানুষের কাছে যার সাধারণ অর্থ পটকা মাছে বিষক্রিয়ায় মৃত্যু। পেপার পত্রিকায় মাঝেমধ্যে পটকা মাছের বিষক্রিয়ায় মৃত্যুর খবর আসে। ফলে চার্জসিটে আমার নাম নাই। পুলিশ অফিসার আর রিদমার আত্মিয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবরা আমারে সরি বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলছে। সরি তো হবারই কথা। আমার মত মাটির মানুষকে সন্দেহ করে তারা জেলের ভাত খাইয়েছে।
আমি জানি আমি খুনি নই; আমি সার্টিফাইড পাচক মাত্র। অতি উচ্চস্তরের পাচক।
বনল
উত্তরা
#গল্পাচার
Tumblr media
1 note · View note
50-shade · 3 years
Text
বায়োনিক চোখ
Tumblr media
আমার মস্তিষ্কে আঘাতের বেপরোয়া ঘা। সেখানে জন্ম নেয় শত সহস্র বোকা বোকা আঁকা। সময় করে একদিন উঁকি দিও আমার মজগের গ্যলারিতে। দেখতে পাবে প্রতিটা ফ্রেমে একটা করে গল্প লেখা আছে। তোমার আমার হারিয়ে যাবার গল্প। তোমারে মগডালে তুলে মই কেড়ে নেবার গল্প। তোমার মাইগ্রেনে যন্ত্রণার ভেতর ছোট্ট একটা নাক ঘষাঘষির গল্প। আমার আঁকাবুকির পাতায় কান পাতলে শুনবে ছোট্ট ট্রাঞ্জিষ্টার, টুইন ওয়ানে একটা এক্সপেডিসান গান, মার্চিং টিউনের মত বেজে চলেছে। শুনতে বেশ ভালো লাগবে তোমার; কিছুক্ষণ। এরপর একবার দুইবার তিনবার থেকে একশতবার রিয়াউন্ড হয়ে বাজতে থাকবে সেই গান। যন্ত্রণা, ব্যথায় তোমার মস্তিষ্কের কোষ গান থামানোর তীব্র ব্যকুলতায় কুকরে আসবে।
সেই ভালবাসা যদি অসীম হবে, চোখ মেলে দেখবার সাধ যদি অসীম হবে, ছুঁয়ে থাকার অভিপ্রায় যদি ইনফিনিটি-ই হবে তবে ভালবাসার গান অসীমে বাজতে থাকলে কেন যন্ত্রণা হবে?
তুমিই তো চেয়েছিল সেই অফুরন্ত ভালবাসা। আমি শুধু ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলেম ভালবাসতে। আসলে আমি ভীষণ ক্লান্তিতে শ্রান্ত হয়েছি আজ বহু যুগা। তোমার ঠোঁটের আকাশ উপুড় অভিমানে আমার বড্ড যন্ত্রণা হতো জানো তো। তাই মানবিক আবেগের উর্ধে উঠে আমার চোখ একজোড়া বায়োনিক চোখে পরিণত হয়েছিল। আমার রক্ত সেচ করা হৃদপিণ্ডটাও একটা বায়োনিক সেচ যন্ত্রে পরিণত হয়েছিল। আচ্ছা আমার বায়োনিক চোখজোড়া, তোমার মায়াবী শীতল চোখের ওয়ারেন্টি লেটার কেন হল না? কেন বায়োনিক চোখের দৃষ্টিতে তোমারে ভেদ করতে পারলাম না? কেনই বা বায়োনিকের সুপারসনিক ছেড়ে তোমার দীঘির মত টলমল স্বচ্ছ জলে নাইতে পারলাম না? উঠোনে দুলতে থাকা হারিকেন বাতির আভায় তোমারে দেখতে পেলাম না কেন আমি?
1 note · View note
50-shade · 3 years
Text
আঙ্কেল টম
Tumblr media
অনেক দিন হয় টমবয়-রে ফোনে পাচ্ছি না। ফোন দিলে ধরে ওর বাপ। সালাম দিয়ে সেদিন বললাম টম আছে? কাকা স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিল টম নামে তো কেউ থাকেনা বাসাতে। “সরি রং নাম্বার বাবা” বলে রাইখা দিলেন। দুদিন বাদে আবারো ফোন দিলাম, এবারো ফোন ধরলো ওর বাবা।
কইলাম হ্যালো আংকেল টম কে ডেকে দেবেন প্লিজ…
হোয়াট! আংকেল টম?? ইউ টোল্ড মি ‘আংকেল টম’- ফোনেই আমি কাকার ভারিক্কি নিশ্বাসের স্পন্দন টের পাচ্ছি। হার্ট এ্যটাকের প্রবল সম্ভবনা। মনে মনে সম্ভাব্য নিউজ হেডলাইন দেখে ফেললামঃ "প্রেমিকের ফোনে প্রেমিকার পিতা হত্যাঃ গোপন তথ্য জানতে রিমান্ডের আবেদন র‍্যাবের! - সর্বনাশের আলামত।
তোমার এত বড় স্পর্ধা আমাকে ‘আংকেল টম’ বল! ফাইজি পোলা কোথাকার….হু ইউ আর? তোমার বাবার ফোন নাম্বার দাও ব্লা ব্লা ব্লা...
আমি এদিকে ফোন কানে নিয়ে তব্দা খাইয়া বসে আছি, আর উনি চিল্লাইতেসেন।
চ্যামেলি এইদিক আয়, তোর বন্ধুর এত বড় সাহস আমাকে আংকেল টম বলে।… ঐ ফক্কড় ছোকড়া তোর বন্ধু?… কিসের বন্ধু ক্লাস ফ্রেন্ড না গ্লাস ফ্রেন্ড টেল মি টে-ই-ল মি… হুংকার ছাড়ছেন কাকা…
কার এতবড় স্পর্ধা আমার ড্যাডকে আংকেল টম বলে। দেখি ড্যাড ফোন টা দাও তো, ফোনটা দাও আমাকে।
হ্যালো এই আপনি কে? বাবাকে কি বলেছেন? টম জিজ্ঞেস করলো।
আরে ধূর্বাল, আমি তো আংকেলের কন্যা টমবয় কে চাইসিলাম, আংকেল টম রে না। - বললাম আমি।
নো নেভার বলতে বলতে ফোন কেটে দিল চ্যাম…
মাঝরাতে যখন আবার ফোন বাজলো, তখন আধা ঘণ্টা হাসতে হাসতেই কেটে গেলো। হাসি থামানো সহজ না। কান্নার মত হাসিও ছোঁয়াচে।
চ্যাম আর আমি.. সেই হাসা-হাসি, নাক-ঘষি আজো চলছে অবিরাম। টমবয় চ্যামের দক্ষিনা বারান্দায় ঝুলছে আমার সাদা মোজা, পাঞ্জাবী পাজামা। এমন এক আশা বুকে বেঁধে চলছে সাঁকোপারাপার...
বনল
নাইটব্রিজ
উত্তরা
0 notes
50-shade · 3 years
Text
দুপুর বেলায় টমবয় চ্যাম
Tumblr media
দুপুর ১২ টা হবে হয়তো। ঈষৎ শীতের দুপুরে নীল আকাশের নিচে, নীল গামলা। পানি উষ্ণ হচ্ছে ছাদে। কেউ একজন নিম গাছের ক'টা পাতা সেই পানিতে ছেড়ে দিয়েছে। এতে পানি বিশুদ্ধ হবে। কৃষ্ণচুড়ার একটা ডাল ছায়া ফেলেছে ছাদে। মাঝেমাঝে নীল গামলার জলে কালো চশমার ছায়া ঢেউ খেলে যাচ্ছে। জলের ওপর চশমার সাথে দুলে উঠছে Reader's Digest এর লাল কাভার। চিলেকোঠার ছাদে যে মেয়েটা লুকিয়ে লুকিয়ে Play boy পড়তো তার হাতে আজ লাল রঙা মেক্সিকান স্পেগটির রেসিপি।
দুদিন মাত্র আগে দূর্বোধ্য Mackbeth শেষে এখন ঘরকন্যা অনুশীলন চলছে চামেলির। ঘরকন্যা অনুশীলন বলে দিচ্ছে প্রেমের পালে হাওয়া লেগেছে তার। কখনো বলে কয়ে তারে চুমু দিতে পারিনি, সুদীর্ঘ চুম্বনে ঠোটের নিচে, চিবুকে দাগ বসানোর সুযোগ হয়নি। অথচ আমারে আনমনা দেখলেই কোথা থেকে যেন একছুটে এসে একটা চুমু দিয়ে পালায় সে। ওর নামের কিছুটা আর চামে চুমু দিয়ে পালায় বলে চ্যাম বলে তারে ডাকি। আসলে ডাকি না এখন আর। এক সময় ডাকতাম।
বহু বছর বাদে মোহাম্মদপুরের সেই দোতলা ছাদবাড়ির গলিতে আমি। পেরিয়ে যাচ্ছি কোলাবসিবল গেট লাগোয়া লাল বাগানবিলাস জাপ্টানো ছাদওয়ালা বাড়ির লম্বা করিডোর।
কত কিছু বদলে গিয়েছে। সাদা টিউবলাইটের বদলে রাস্তায় এসেছে সোডিয়াম বাতি। লাল ইটের ফুটপাত আভিজাত্য ছড়াচ্ছে। মতির চটপটির ভ্যান, ভিডিও গেমের জয়ষ্টিকে মোস্তফা খেলার দোকান গুলো আর নেই।
দমকা বাতাসে নড়ে-চড়ে ওঠে চামেলিদের বাড়ির নারিকেলের চিরল পাতা। বাগানবিলাসের কয়েকটা পাতা টুপ করে ঝড়ে পরে আমার গায়ে। নাকে ভেসে আসে চিরচেনা পাগলপারা শিউলী ফুলের সুবাস। ফিরে আসে আমার কৈশোরের সেই প্যালপিটিসান। এক যুগ বাদে আজো ঘামছি আমি!
অদ্ভুত একটা মাদকতা বয়ে যাই আমার শিরা-উপশিরায়। রোদ চশমা পকেটে পুরে মাথা তুলে তাকাই। প্রখর রোদে ভাবনায় ছেদ আসে। না, বারান্দায় ঝোলানো দড়ি নেই, নেই ঝুলে থাকা চাচীর শাড়ি, চ্যামের ওড়না। সেই ঝুল বারান্দা দেখা যাচ্ছে না। শিউলী ফুলের গাছটা নেই। দারোয়ানের মত দাঁড়িয়ে থাকা নারিকেল গাছ দুটোও চোখে পরছে না। আস্ত সেই দোতলা বাড়িটাই নেই। সেখানে দাঁড়িয়ে আছে নিরস, নিরাসক্ত একটা এ্যপার্টমেন্ট।
পুঁজির দুনিয়ায় হারিয়েছে আমার কৈশোরের প্রেম। হারিয়ে গিয়েছে আমার টমবয় চ্যাম। হারিয়েছে বাগানবিলাস। আমি, একা আমি শুধু দাঁড়িয়ে আছি দ্বিধাময় সেই ইকবাল রোডের রাস্তায়। বৃথা এ নরকে যে বেঁচে আছি আমি....
বনল
নাইটব্রিজ
উত্তরা
0 notes
50-shade · 3 years
Text
যৌবতী কইন্যা
মধ্য বয়সের রহিমুদ্দি' শ্বাস নিতে পারছে না, শুকনো কাশিতে প্রাণবায়ু ওষ্ঠাগত, বুক টা শুকিয়ে কাঠ। হাসপাতালে মেঝেতে জাজিম বিছিয়ে শুইয়ে রাখা হয়েছে তারে। পাশে স্ত্রী জুলেখা খাতুন বাতাস করছে পাখা হাতে। এই মূহুর্তে অক্সিজেন দিতে পারলে কষ্ট একটু কমতো।
আজ কটা ভিভিআইপি ১০ টাকার টিকিট কেটে হাসপাতালের লাইনে দাঁড়িয়েছে। টিভি পেপার, সেনা পুলিশ, আনসারের ভিড়ে তিল ধারণের জাগা নেই। তাই আজরাইল আজ রহিমুদ্দিনের কাছাকাছি ভিড়ে গিয়েছে।
জুলেখারে শেষ মূহুর্তের কিছু কথা বলতে চেষ্টা করছে রহিমুদ্দি। দক্ষিণ পাড়ার জমিন ডা বেঁচবা না বউ, লাগলে বর্গা দিবা, ফসলি জমি।
জি বেচুম না কথা দিলাম।
পোলাপানের লিখাপড়া কষ্ট হলিও চালায়ে নিবা..হাপাতে হাপাতে বলে পুরুষটি।
জি লিখাপড়া বন্ধ হবে না, আর কিছু থাকলে বলেন
একআদটু যা সম্পদ আছে, ভুলেও পুলাপানের নামে লিখে দিবা না, তুমারে কিন্তু জলে ফালায়ে দেবে তারা..
জি দিমুই তো না, আপনি চিন্তা করবেন না, আর কিছু বলেন…
জুলেখা আমার কষ্ট হচ্ছে..
বেশি কষ্ট হচ্ছে নাকি! দেখেন আর কিছু থাকলি বলি ফালান তাড়াতাড়ি..
পোলাপানের লেখাপড়া যেন কমতি না হয়..
জি হবে না কমতি, আর কিছু কন..
পারলি তুমার কবর আমার কবরের পাশে নিও..জুলেখা
আর শুনো আমি..
বলতে বলতে কাশির দামামা ছড়িয়ে যায়। বুকের ভেতর থেকে জন্তুর মত আওয়াজ বের হতে শুরু হয় রহিমুদ্দিনের…
ডাক্তার দৌড়ে আসে, তারে ট্রলি তে তুলে নেয়া হয়। বুকের খাঁচায় ইলেকট্রিক শক দেবার যন্ত্র প্রস্তুত করে ফেলে নার্সরা। রহিমুদ্দির ট্রলি এগিয়ে চলতে থাকে...
হ্যালো, শুনো অবস্থা ভালো না। তয় অনুমতি কইলাম দিসে, ৪১ দিন হলেই…বলে সস্তার লাল সিম্ফনি ফোনটার লাইন কেটে দেয় জুলেখা…টান দিয়ে খুলে ফেলে বোরখার ঢাকনা।
পেছন থেকে একটা ছেলে ডুকড়ে কেঁদে ওঠে ও মা, আমার বাপে কৈ! ছেলের গলা শুনে জুলেখার খুব করে ইচ্ছে করে ছেলেরে বুকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে। আকাশ বাতাস ছিঁড়ে কাঁদতে। একপাশে সন্তান আর মাঝ বয়সী পুরুষের লাশ, অন্য দিকে ৪০ দিন পেরোনোর মাহেন্দ্রক্ষণ। মধ্যখানে দাঁড়িয়ে যৌবতী কইন্যা জুলেখা...
#গল্পাচার
এপ্রিল ১৮, ২০২০
নাইটব্রিজ
0 notes
50-shade · 3 years
Text
ডাঙ্গর
বেনুকার দিন বেশ ভালো কাটছে। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠা ছাড়া আর সব কিছু মনের মত। ৬ টার ভেতর উঠে পরে সে। ছোট বলে গোসলের লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা'র ঝামেলা পোহাতে হয় না। স্নানঘরে যার সিরিয়াল থাকুক বেনুকা তার সাথে ঢুকে পরে। স্নান শেষে সবুজ ফ্রক-টা গায়ে চাপিয়ে নেয়। ফ্রিজের ভাত সরিসার তেল, পিয়াজ কাচামরিচে মাখিয়ে বেশ অমৃতের স্বাদ আসে। নানিজান কোন কোন দিন আগের রাতের থেকে যাওয়া চিকেন টিক্কা, চিকেন রোষ্ট দেয় ভাতের সাথে। বেনুকার জানা নেই চিকেন টিক্কা নান রুটির সাথে খেতে হয়। তার এও জানা নেই রাতের বেলা ঠিক কখন এই সব কাবাব-মাংস রান্না হয়।
বেনুকা একদিন নানীজানরে বলেছিল নানি রাতের বেলা আমিও কাবাব খেতে চাই। নানি সে কথার উত্তর না করে সপাং থাপ্পড় বসিয়ে দিয়েছিল তার গালে। থাপ্পড় খেয়ে সে রাতে ১০৩ জ্বর চলে এলো। ঔষধে কমছিল না জ্বর। পরে ফার্মেসি মামা সাপোজিটর এনে নানিরে দিল। সাপোজিটর নাকি খুব খারাপ ওষুধ। নানি অনেক কেঁদেছিল ঐ রাতে। বেনুর অবশ্য লজ্জা লাগছিল কিন্তু নানি কেন অপয়া ওষুধ বলেছিল তা বুজতে পারেনি সে।
সভ্যতা'র নামে অসভ্য দুনিয়ার বাচ্চা'রা এখন আর দল বেধে স্কুলে আসে না। তবে বেনুকা'রা যাই। ওর মত আরো ১৭ টা মেয়ে আছে, ওরা সবাই পিঠে ব্যাগ ঝুলায়। চপ়্চপে তেল মাখা চুলে দু'টো বিনি কাটে। সেই বেনি সামনের দিকে ঝুলিয়ে স্কুলে আসে ওরা।
বেনুকা খেয়াল করে দেখেছে নানিজান-কে সবাই আড়ালে মক্ষি খালা ডাকে। এ ডাক শুনতে তার ভালো লাগে-না। কান্না আসে খালি।
অথচ নানিজানের খুব সুন্দর একটা নাম আছে। শুক্কুরবার ভোরবেলা যখন নানির জন্ম তখন আকাশে তারা উঠেছিল। বড়আব্বা সেই তারার নামে নানির নাম রেখেছিল সুখতারা। পুরো নাম সুখতারা রেহনুমা। এত্ত সুন্দর নাম থাকতে কেন এমন পচা নামে ডাকা হয়- বুঝতে পারে-না বেনুকা।
আজ ওদের এলাকায় কারা যেন মাটি কাটতে এসেছে। এনিয়ে মামা-রা খুব উত্তেজিত। যারা মাটি নেবে খুবেক্টা দাম দিতে চাচ্ছে না। নানি-মামারাও কম দামে মাটি দিতে রাজি না। ছোটমামা নানি-রে বলেছে খিচ খেয়ে টাইট হয়ে বইয়া থাকো। এক পয়সা দাম কমাব না। এই মাটি নদীর এপারে আর কোথাও নেই..
মামা মাঝেমধ্যে খুব আজব কথা বলে। বেনুকার বই এ লেখা আছে এই অঞ্চলের সব মাটিই এক। পলি-বাহিত কাদা-মাটি। মামা হুদাই বলছে এই মাটি অন্য কোথাও নেই।
মাটি যারা নেবে তারা সমাজে খুব ওপর তলার জ্ঞানিগুনি মানুষ। বিরাট সম্মানিত মানুষ। ভগবানের কাছাকাছি থাকা মানুষ। তাদের কথা হল পবিত্র কাজের জন্য মাটি নেয়া হবে। এই মাটি তো বিনে পয়সায় দেয়া দরকার। প্রতিমার ওছিলায় যদি মাগীদের কোন একটা ব্যবস্থা হয়, ভগবান চাইলে স্বর্গও পেতে পারে।
বেনুকা'র প্রচন্ড রাগ হয়ে যাই, মাগী আবার কেমন কথা! মা-খালারাও খালি মাগী মাগী বলে গালাগাল করে। মামারাও মাগী মাগী বলতেই থাকে। সে জন্যে নানি আমাদের মা-খালা আর মামাদের সাথে মিশতে দেয় না। আমাদের ভাইদের সাথেও মিশতে দেয় না...ছেলেরা নাকি দাম পেলে মা-রেও বেঁচে দিতে পারে।
মামা-রা অবশ্য বলেছে তোর ভগবানের নিকুচি করি। ভগবান এ পাড়ায় যেন না আসে। যে পাড়ার মাটি ছাড়া প্রতিমা হয় না; সেই পাড়ার মেয়েদের কেন মাগী হতে হবে? টাকাই নাকি একমাত্র ভগবান..
নানি আমাদের বলেছে মাগী হতে হবে না। বড় অফিসার হব আমরা। অফিসার হলে চেয়ার টেবিলে বসে স্কুলের আপাদের মত কাজ করতে হয়। মাগী হলে কি কি করতে হয় তা অবশ্য নানি বলে নি। আমরা জিজ্ঞাসাও করি নি। জিজ্ঞাসা করতে খুব লজ্জা লাগে..
নানি দেহত্যাগ করেছে বছর দুই হল। নানি যাবার পর পর বেনুকাদের চেনা পৃথিবী পাল়্টে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। মেয়েদের যে বয়সে শৈশবের চেনা দুনিয়া উলটে যায়, তখনি বেনুকাদের পৃথিবীর আশ্রয় স্থল নানিজান চলে গেলো। স্কুলে মাত্র শিখা শুরু হয়েছে বিয়োগে বিয়োগে যোগ হয়। বিনুকা ভেবে পাই না, শৈশব আর নানির বিয়োগে ঠিক কি যোগ হতে যাচ্ছে তাদের জীবনে। ক্লাস সিক্স পেরিয়ে সেভেনে ঊঠে আসে ওরা। বীজ গনিতের বই �� নয়া ফর্মূলা হাজির হয়। নতুন জটিলতা যুক্ত হতে থাকে বেচে থাকায় নিয়মে। নয়া ফর্মুলায় জীবন জটিলতার সমাধান আসে না। যে শিক্ষা বেচে থাকার ফর্মুলা দেয় না; কি লাভ সেই শিক্ষা নিয়ে?
মা-খালারা হাসাহাসি করে ওদের নিয়ে। এখন স্কুল কামাই হয়। এটা ওটা কাজের ছুতোনাতা দিয়ে মাঝেমধ্যে বাড়িতে থাকা লাগা ওদের। রাত্রি ৯ টা বাজলে কেউ আর ঘরের আলো নিভিয়ে দেয় না। কর্কশ গলাই ঘুমিয়ে যেতে হুকুম দেয় না। ঘুমানোর আগে দাঁত মেজে নিতে বাধ্য করে না। দেয়াল ঘড়ির কাটায় রাত বাড়তে থাকে, বেনুকার ঘুম আসে না। আশেপাশের ঘরে অচেনা লোকের আগমন ঘটে, হাসি তামাশা ফুর্তির লেহাজ কানে আসে ওদের। মাঝ রাত্তির চলে আসে, বাজতে থাকে শীলা কি জাওয়ানির পেখম মেলে উড়তে থাকার গান। নিষিদ্ধ শহরের গলিতে উৎসবের আদিখ্যেতা; বেনুকার সেদিকে খেয়াল থাকে না। বেনুকা কেবল ভাবে, অদ্ভুত সব খেয়াল আসে মাথাতে। এক রাজপুত্র ঘোড়া ছুটিয়ে আসছে। তলোয়ার চক়্চকে হাতে। বলছে আমিই তোমার ডালিম-কুমার, চল আমার সাথে। কেউ বাধা দিলে উদ্ধত তলোয়ারে কচুকাটা সব..লজ্জাবতী বেনুকা উঠে পরছে পক্ষিরাজের পিঠে..
মধ্য রাতের অতিথিদের কেউ একজন এসে কড়া নাড়ে। নাম ধরে ডাকে বেনুকা আছিস! বের হয়ে আয় তো দেখি কেমন ডাঙ্গর হলি। তোর মা'র কাষ্টোমার ছিলাম আমি…
Tumblr media
#wasimiftekhar
গল্পাচার
0 notes
50-shade · 4 years
Text
ফাইনাল কাউন্ট ডাউন
জন্ম'র সময় আর দশটা দেবশিশুর মত সেও চিৎকার করে উঠেছিলো। মেনপোজ শুরুর আগে জন্ম নেয়া একমাত্র নবজাতিকার চিৎকার বাবা-মার বুকে ছন্দ'র মত বাজে। হয়তো সেই ছন্দ'র তালে মেয়েটার নাম রাখা হয়ে ছিল রিদমা। রিদমিক থেকে রিদমা।
আমার চোখেও সে একটা ছন্দ'র নাম। মালকোশ, ভৈরবী বা তিন তালের ছন্দ নয়; পাগল-পারা বৃষ্টি'র মত ছন্দ। রিদমা'র ছোট ছোট সুখ, হাসি, বেদনা আর আবদার গুলো আমার কাছে মুষলধারা বৃষ্টির ছন্দ'র মত ঠেকে। এমনকি অন্যায় আবদার গুলাও।
আজ দিন সাতেক হল আমাদের কথা বন্ধ। ভালোবাসা'র মানুষের সাথে কথা বন্ধ হলেও বার্তা বন্ধ হয় না। আমাদেরও বার্তা বন্ধ হয় না। আজ অবশ্য পরিস্থিতি গুরুতর। কথা-বার্তা সবই বন্ধ।
আজানের সুর ভেসে আসছে আজাদ মসজিদের মাস্তুল থেকে। আস সালাতু খায়রুম মিনান নাম়্… অথচ রিদমার চোখে ঘুম নেই। ঘুম অপেক্ষা নামাজ উত্তম শোনার পর শুরু হয় তার ঘুমের প্রস্তুতি। বিছানা কম্বল ঝেড়ে, হাত-মুখ ধুয়েমুছে ঘুমের প্রস্তুতি নিলেও ফাঁকে নাস্তা-টা খেয়ে নিত। সকাল ৭ টা বেজে গেলে নাশতা সেরে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ৷ রিদমা যথেষ্ট বুদ্ধিমতী মেয়ে।
প্রতিটি দিন সমান হয় না। আজকের ভোর-টা যথারীতি অন্যদিনের মত নয়। আমার ঘুম ভাঙল রিদমার গুঙানির শব্দে। কোন রকম হাতরে চশমা পেয়ে গেলাম। চোখে লাগিয়ে রিদমারে ডাকতে শুরু করলাম। না অন্যদিনের মতই সে আমার পাশে নেই। লিভিং রুমে ঢুকতেই দেখি ডিভানে শুয়ে কুকরে যাচ্ছে সে। হাত-পা শরীর ধনুকের মত কিছুটা বেঁকে আসছে। খিচিয়ে থাকা মানুষের মত চোখ মুখ। শরীরের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে গুঙরানির মত শব্দ। যেন জমদূতের সাথে টানানাটি।
আমি গিয়ে ধাক্কা দিলাম ওরে। কি হয়েছে তোমার? ততক্ষণে দু'হাত দিয়ে নিজের মাথার চুল ছিঁড়তে শুরু করেছে। হাতের যে অংশ ঠোঁট বরাবর গিয়েছে সেখানে সজোরে কাম়্ড়ে ধরছে আর ছাড়ছে। আমি আস্ত একটা পুরুষ ওর দুহাত চেপে ধরার সিদ্ধান্ত নিলাম। রিদমার দু'হাতের কব্জি মুষ্টিবদ্ধ করলাম দু'হাতে। কিন্তু তার ধাক্কা আঁটকে দেবার মত শক্তি হল না। ছিটকে গেলাম আমি। ওর হাতে মুঠো ভরা লম্বা চুল উঠে আসছে, কুনুয়ের ওপরে দাঁতাল কামুড়ে ক্ষত। দাঁত যেন চামড়া ভেদ করে মাংসপেশী স্পর্শ করেছে। গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে। উঠে গিয়ে আবার চেপে ধরলাম। আবারও ব্যর্থ আমি। যেন অসুরের শক্তি ভর করেছে শরীরে।
ইতিমধ্যে রহিমা খালা হাজির। রহিমা খালা আমাদের বহুদিনের হেল্পিং হ্যান্ড। রিদমার মা'র যখন নতুন সংসার তখন থেকেই আছে পিচ্চি রহিমা খালা। সময় পরিক্রমায় আমাদের বাসাতেও তার সারে তিন বছর পার হয়ে গিয়েছে। রিদমাকে আতুর ঘর থেকেই খালা পেলে-পুষে বড় করেছে। হাও-মাও করে কাঁদতে কাঁদতে খালা এসে আমার সাথে রিদমারে চেপে ধরেছে। যেন তারে নিবৃত করা যায়। দুজনের সম্মিলিত শক্তিও পরাজিত হল তারে থামাতে। মিনিট দুয়েক ধস্তাধস্তির পর একেবারে এলিয়ে গেলাম আমরা। তারে ধরে রাখতে যে শক্তি দরকার তার সিকিভাগও নেই আমার। দেয়ালে হেলান দিয়ে হাঁটু ভেঙে বসে পরি। অজান্তে আমার হাত চলে গেল মাথায়…
রহিমা খালা বলল বাসাত লাগছে ভায়ে। খারাপ বাসাত..
তখনি ফুটো হয়ে যাওয়া বেলুনের মত শব্দ করে চুপ়্সে যেতে শুরু করল সে। ধনুকের মত বেঁকে যাওয়া হাত-পা স্বাভাবিক হতে লাগলো। দাঁতের কামুড়ে রক্তাক্ত হাতে ব্যথার অনুভূতি ফিরে আসতে শুরু হল।
গিঁট বেঁধে যাওয়া থোকা থোকা চুল আর কামুড়ের ক্ষত দেখে যেন বিষ্ময়ের সীমা রইল না তার। অঝোর কাঁন্নায় পরিবেশ গুমোট হয়ে গেলো।
এগিয়ে গিয়ে তার কপালে হাত রাখতে চাইলাম। দুহাতে টেনে নিয়ে আমারে বুকের আলিঙ্গনে বেঁধে ফেলল সাথে সাথে। আমারও দুচোখ আদ্র হয়ে উঠল। কি যেন এক সুখ সুখ যন্ত্রণার শিস বিঁধতে শুরু হল মগজে। শিসের সুরটা খুব চেনাচেনা। অথচ কিছুতেই মনে পরছে না ঠিক কোথায় যেন শুনেছি...
ভাগ্য একদিকে সুপ্রসন্ন বলতে হয়। সম্পূর্ণ ঘটনা তিন চার মিনিটের বেশি স্থায়ী হল না।
রহিমা খালা এক-গ্লাস ঠাণ্ডা পানি নিয়ে এসেছে। তার মুখে পান। পানের রস ঠোঁট বেয়ে চুয়ে চুয়ে পরছে। খালা বলল বুজচ্ছ নি ভায়ে, ছুড়ুক বেলাত একবার পরীতে নিছিল আমাগের রিদু আফারে। আমাগের একটা কাশা'র কলস ছিল, সেই কলসের পানিতে বদ হাওয়া...
খালার কথা শেষ হবার আগেই আরো একবার গুঙরে উঠল রিদমা। আমি ছুটে গেলাম। এবার অবশ্য নিজেই নিজে-রে সামলে নিল সে...
ভেতরে ভেতরে খুব ঘাবড়ে গেলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম রিদমা-রে হাসপাতালে এডমিট করিয়ে তারপর অফিস যাবো। কানাডা থেকে সিয়ার্স এসেছে। ওদের সাথে সময় দিতে না পারলে বিপদ। মার্চেন্ডাইজিং বাদ দিয়ে বউ নিয়ে হাসপাতালে থাকলে চাকরি থাকবে না। চাকরি না থাকলে চিকিৎসা হবে-না। মধ্যবিত্ত'র শনির দশা আর কি!
ঢাকা শহরের সব বড় হাসপাতালে নক দিলাম। চেনাজানা ডাক্তারদের ফোন দিলাম। সিম্পটম শুনে সবাই বলে আমরা পাগলের চিকিৎসা করি না। রুগী-রে সোহরাওয়ার্দী নিয়ে যান, ওখানে মানসিক চিকিৎসার ইউনিট আছে। আমার বউ পাগল আমি মানতে পারছি না। যা ঘটার তা মাত্র তিন চার মিনিটের ভেতর শেষ হয়ে যাচ্ছে। বাকি সময় সে স্বাভাবিক। একেবারেই স্বাভাবিক। শুধু ঐ সময় টুকুর রেশে ক্লান্ত বিধ্বস্ত।
ইতিমধ্যে আশেপাশের ফ্লাটের ভাবী-আন্টিরা চলে এসেছে৷ তারা সবাই খুব উত্তেজিত। বাড়িতে একজন পাগল পাওয়া গিয়েছে। যে পাগল এক রাত্রি আগেও তাদের সাথে স্বাভাবিক-ভাবে কথা বলেছে। সেই পাগল সরাসরি লাইভে দেখার সুযোগ কেউ ছাড়তে চাইছে না। আগামী অন্তত এক বছর ভাবী-আন্টিদের গল্প আড্ডা আর গিবতের জন্য মুখড়চক ইস্যু পাওয়া গিয়েছে। এমন ইস্যু হাতছাড়া করা আলবত উচিৎ হবে না..
ফোন শেষ হতে রহিমা খালা আবার হাজির। এতক্ষণ সম্ভবত আড়ালে দাঁড়িয়ে আমার কথা শুনছিল। খালা আবার বলল বুজচ্ছ ভায়ে ছুড়ুক বেলাত একবার পরীতে নিছিল আমাগের রিদু আফারে। আমাগের একটা কাশা'র কলস ছিল, সেই কলসের পানিতে বদ হাওয়া…
খালার কথা শেষ হতে না হতে কলিংবেলের আওয়াজ। চড়ুই পাখি কিচিরমিচির করছে। ইয়া লম্বাচওড়া এক হুজুর এসে হাজির। কোন এক ফাঁকে খালা তারে সংবাদ দিয়েছে আসার জন্য। হুজুর আমাকে মোটেও পাত্তা-টাত্তা দিল না। দেয়ালে টাঙানো নারী পোর্টেট দেখে দাঁড়িয়ে গেলেন। দোয়া-দরুদ পরে ছবিতে ফু দিয়ে দিলেন। ফু দেয়া মাত্র ঘোষণা দিল বাড়িতে সমস্যা আছে। সমস্যাটা মূলতঃ বাড়ির দক্ষিণ দিকে। ছবিটাও দক্ষিণমুখী দেওয়ালে আছে। পোর্ট্রেট নামিয়ে ফেলার হুকুম দিলেন হুজুর। বললেন বাড়ির মেয়েছেলের ছবি রঙ করে টাঙিয়ে রাখা বেদাত। এ কারণেই বদ জিনের নজর পরেছে। জুব্বার পকেট থেকে ম্যাগনিফাইং গ্লাস বের করে পোর্টেট আরেকটু ভালো মত পরখ করে নিলেন তিনি। তারপর আমার দিকে স্মিত মুখে তাকালেন। বললেন বড্ড খতরনাক জিন। তবে আপনার স্ত্রী-কে জিন মুক্ত করে ফেলব ইনশাআল্লাহ। আমি বললাম হুজুর ইনি আমার স্ত্রী না। ইনি লিও দ্যার গার্লফ্রেন্ড, নাম মোনা। আমার কথায় হুজুরের সুরমা মাখা চোখ মোটামুটি কপালে উঠে গেলো। কিছুটা বিব্রত হয়েই বোধহয় বলল ছি ছি ছি শিগ়্গির বিবাহ করুন, গার্ল্ফ্রেন্ড নিয়ে থাকেন কেন? বেগানা মহিলা জানলে তো আমি আসতাম না। আচ্ছা এসেই যখন পরেছি নিশ্চয় ওপর ওয়ালার ইশারায় এসেছি। আপনি খেদমতের ব্যবস্থা করুন। আমার সাথে বুজরুক জিন আছে। জিনদের খান-ই-খানান।
রহিমা খালা ইতিমধ্যে সাজিতে পান নিয়ে হুজুরের সামনে হাজির। মাথার ঘোমটা আধা হাত টেনে মুখ ঢাকলো খালা। বুজচ্ছন নি মাওলানা সাপ ছুড়ুক বেলাত একবার পরীতে নিছিল আমাগের রিদু আফারে। আমাগের একটা কাশা'র কলস ছিল, সেই কলসের পানিতে বদ হাওয়া…
হুজুর বলল খামোশ! আমার মারিফতে সব সংবাদ আছে।
ফ্লাটের ক'জন মহিলা রান্নাঘরে ঢুকেছে। কি কি সব জোগান-যন্ত করে রিদমা'র ঘরে চলে গেলো। আমিও পিছু নিলাম। রিদমা বেঘোরে ঘুমচ্ছে। আমার নিষেধাজ্ঞা পরোয়া করা হল না। মুরুব্বী খালাম্মারা আমারে মোটামুটি ধাক্কা দিয়ে ঘরের বাইরে পাঠিয়ে দিল। ভেতর থেকে এখন লক।
কিছুক্ষনের ভেতর রুমের ভেতর থেকে ভারিক্কি ফাটা গলার স্বর আসতে শুরু হল। দরজার নিচের ফাঁকা দিয়ে ঝাঁঝালো গন্ধ। ভেতরে কেউ কেউ কাশছে। শুকনা মরিচ পুড়ার গন্ধে আমিও কাশতে শুরু করলাম। হুজুরের হাঁক ডাক পাওয়া যাচ্ছে, যা ভাগ ভাগ, এক্ষুণি যা, যা যা, খা খা খা পক্ষিলারে খা.. আরো অজিব শব্দমালা। হুজুরের সাথে সাথে রিদমার আওয়াজও আসছে। তবে হুজুরের ধমকের কাছে তা নিতান্তই ছেলেমানুষী।
এর ভেতরে মনে হল আমার নাম ধরে কাঁদছে রিদমা। নিজেরে সংবরণ করতে চেষ্টা করেও পারলাম না। তুমি ডাকছ আমি নিরুত্তর থাকি কিভাবে! দরজা ধাক্কা দিই কিন্তু কেউ খুলে দিচ্ছে না। সে যেন আমার আক্ষেপ বুঝতে পারল। দরজায় দু'হাত রেখে আমিও তার ডাকের উত্তর করছি। লাথি মেরে ভেঙে ফেলতে চাইছি সেগুন কাঠের দরজা। আমি বড্ড অসহায়! দরজা ভেঙে ফেলার শক্তি চেয়ে খোদার কাছে আমার চিৎকার খোদার আরশে পৌঁছুচ্ছে না…
যখন দরজা খুলা হল রিদমা বিধ্বস্ত ভাঙাচুরা এক মানুষ। এই মাত্র কিছুক্ষণ সময়ে যেন তার বয়স এক নক্ষত্র বছর বেড়ে গিয়েছে। সরু চোখে তাকাতে চেষ্টা করছে। আফসোস চোখ খুলে রাখার শক্তি নেই তার।
রহিমা খালা আর মুরুব্বিরা জানাল জিন স্যান্ডেল মুখে নিয়ে পালিয়েছে। প্রমাণ হিসাবে একপার্ট স্যান্ডেল দেখিয়ে বললো অন্য পার্ট জিনেই নিয়ে বারান্দা দিয়ে ভেগেছে। বারান্দায় উঁকি দিয়ে দেখলাম সানসেটে আঁটকে আছে ডান পা'র স্যান্ডেল। সম্ভবত পালানোর সময় সানসেটের বুগি ট্রাপে আটকা পরেছিল জিন।
দুপুরবেলা জেগে উঠলো রিদমা। স্যালাইন দেয়া হয়েছে। মাথার ওপর ষ্টান্ড। চারিদিকে হাসপাতাল টাইপ ফিনাইলের গন্ধ। ফিনাইলের গন্ধে মাদকতা আছে কিনা পরীক্ষা করে জানা দরকার। দুজন সিষ্টার এসেছে শিফট ডিউটি করবে। সিষ্টার পাঠিয়েছে কোম্পানি। তাদের কথা হল বউকে ডাক্তার সিষ্টারের হাতে ছেড়ে দাও, আর নিজেরে ছেড়ে দাও কোম্পানির জন্য। ফ্যামিলির যাবতীয় দায় কোম্পানি নিলে তুমি কেন একশ ভাগ কোম্পানি-কে দিবা না! কে তাদের বুঝাবে আমি কর্পোরেটের রোবট মার্চেন্ট নই। আমি রক্ত মাংস'র এক মানুষ! রিদমাকে টাইগার শ্রিম্পের সুপ দেয়া হয়েছে। সে অতি তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে। ওর তৃপ্তি দেখতে ভালই লাগছে।
অফিসে গিয়ে কিছুক্ষণ কষ্টিং প্রাইসিং এ মন দিলাম। কিছু আইডেন্টিটিকাল সুতাটুতা লাগবে। সেগুলোর সোর্সিং না করে উপায় নেই। এ সপ্তাহে এগুলো শেষ করে ফেললে কদিনের জন্য ঝাড়া হাত-পা হয়ে যাব। রিদমারে নিয়ে কোথাও ঘুরে আসা যাবে তখন।
দ্বিতীয় দিন কাটল ঝামেলা ছাড়া। আমিও আশ্বস্ত হলাম। তৃতীয় দিন রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি। ঝামেলা শুরু হল সেদিন। ২/১ বার নয়, ২৪ ঘণ্টায় কমসে কম সাত আটবার খিচ খেল। এবার গোঁদের ওপর বিষফোঁড়া যুক্ত হয়েছে। আগে নিজে শুধু নিজেরে আঘাত করত, এখন সামনে যারা থাকছে তাদেরকেও আঘাত করছে। ঘরের জিনিসপত্র ভাঙাচুড়াও হচ্ছে। তবে ইন্টারেষ্টিং যেটা দেখলাম আমি বাসায় উপস্থিত থাকলেই শুধু ঘটনা ঘটছে। আমি ছাড়া অন্য কাউরে আঘাত করেনি।
স্বাভাবিক কারনে নিজেরে দোষী মনে হল। সেই আঁটকে যাওয়া শিস-টা মাথার ভেতর ফিরে এলো। অফিস শেষে বাড়ি ফিরতে ভয় ভয় হয়। আমি না থাকলে যেহেতু সমস্যা হয় না তাই বাড়ি ফেরার সময় পিছিয়ে দিলাম। ফলে কাগজে কলমে উন্নতির দেখা পেয়ে নার্স তুলে নিল কোম্পানি।
এভাবে বাড়ি না ফিরে বেঁচে থাকা যায় তবে মানুষ থাকা যায় না। আমারও তাই হল। ক্লাবে, পাবে, বিলিয়ার্ডে কাটতে থাকল আমার মধ্যরাতের সময়। যত কম সময় বাড়ি থাকি তত বেশী সময় ভালো থাকে রিদমা।
সিদ্ধান্ত নিলাম ডাক্তারের চেম্বারে নিয়ে যাব তারে৷ সেখানে পরীক্ষা নিরিক্ষার সুযোগ বেশি। রিদমা'র কাছে চেম্বারের কথা পারতেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। উত্তেজিত হতে হতে আবারও ধনুকের মত বেঁকে যেতে থাকল। সারাদিন কাজ করে, বাড়ি ফিরেই ক্লান্ত দেহ বিছানায় ছেড়ে এলিয়ে যেতে ইচ্ছা হয়। এসব অশান্তি অসহ্য লাগে। আমি প্রার্থনা করলাম খোদা এরচে বরং আমারে শারীরিক অসুখ দিয়ে শায়েস্তা কর, তবু তারে উন্মাদনা থেকে মুক্ত করে দাও…
এরমাঝে একদিন বিছানার তোষকে ম্যাচ ঠুকে আগুন জ্বালিয়ে দিল সে। আমি আগুন টের পেলাম যখন তীব্র ধোঁয়া খাবার টেবিল অবধি চলে এলো। সে আগুন জ্বালিয়ে শান্ত বালিকার মত আমার কাছে এসে বসেছে। তার দু'চোখ তখন শান্ত, স্বচ্ছ মুখে পরিত��প্ত হাসি।
এদফা আর অপেক্ষা করা যাই না। এম্বুলেন্স ডেকে জোর-জবস্তি করে নিয়ে গেলাম বান্ধবীর হাসপাতালে। সমস্যা খুলে বললাম। সে অভয় দিল। না জানিয়ে ডেকে পাঠালো রিদমার বাবা-কাকাদের। আমি কিছুটা বিরক্ত হলাম বটে। আমার পছন্দ না দুজনের সমস্যা অন্য কেউ জানুক।
তার বাবা-মা আসার আগে আমারে সংবাদ পাঠালো ডাক্তার। বলল, চল সামনের কফি শপে বসি। আমি মাথার ভেতর আঁটকে থাকা সেই শিস নিয়ে গেলাম তার সাথে সাথে। আর হুম ইতিমধ্যেই কোম্পানি থেকে দু মাসের অগ্রিম বেতন চলে এসেছে একাউন্টে। সাথে ডিসচার্জ লেটার-ও।
বলল শুনো আমি যা বলি সব মন দিয়ে। প্রশ্ন করবে না কোন, বাড়তি কিছু জানতেও চাইবে না। রিদমা-রে যেভাবে ইঞ্জেকশন পুশ করা হচ্ছে তা দেখে আমার বেশী কষ্ট হচ্ছে কি না জানতে চাইলো। একটা মানুষ-রে ইঞ্জেকশন পুস করতে দুই তিনজন মিলে হাত-পা চেপেও যখন ধরে রাখা যায় না- তখন ভালো লাগবে কিভাবে? - পালটা প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম আমি।
ডাক্তার বলল লিসেন আজ তোমার পেসেন্ট সুস্থ হয়ে যাবে। বাবা-মামারা মানে তোমার শশুরবাড়ির লোকেরা চাইবে আজই রিলিজ নিতে। তুমিও হয়তো রিলিজ-ই প্রেফার করবা। তবে আজ মোটেও রিলিজ নেবে না। অন্তত আজ রাতে তো নয়-ই।
আমি ভ্রুকুঞ্চন করে জিজ্ঞেস করলাম ভেঙে বল। আমি বুঝতে পারছি না।
আমি আগেই বলেছি বাড়তি কিছু জানতে চাইবে না। সে উত্তর দিল।
শুনো রিদমা'র যে অসুখ এর কোন চিকিৎসা আসলে নেই। আবার এই অসুখের অনেক চিকিৎসা প্রচলিত আছে। সেসব ট্রিটমেন্টে কাজ হয় না, তা কিন্তু না। হুম ট্রিটমেন্ট কাজ করে কিন্তু অসুখ ভালো হয় না। বাড়িতে হুজুর এনে যে মরিচ-পুড়া চিকিৎসা দিয়েছিলে সেটাও কিন্তু কার্যকর ছিল। আবার আমার এখানে যে চিকিৎসা হচ্ছে এটাও কার্যকর।
আমি বললাম তুমি কি বলছ নিজেই কি তার মাথামুণ্ড কিছু বুঝছ?
এবার বিদ্রূপাত্মক একটা বাঁকা হাসি সে দিল আমাকে। বলল আমি যা বলছি তা কোন ডাক্তার ইথিকালি পেসেন্ট পার্টি-কে বলে না, বলবেও না। আমি বলছি কারণ আমি আগে বন্ধু তারপর ডাক্তার৷
শুনো হুজুরের মরিচ-পুড়া ট্রিটমেন্ট আরো দু-একদিন চললে হয়তো হাসপাতালে আসতে হত না তোমাদের। আমি শুধু শুকনা মরিচের বিপরীতে মাসলে ডিষ্টিল ওয়াটার পুশ করেছি। ইচ্ছা করেই বেশী বেশী ব্যথা দিতে বলে দিয়েছি ডিউটি ডাক্তারকে৷ খেয়াল করেছ নিশ্চয় কোন সিষ্টার ইঞ্জেক্ট করেনি রিদমারে।
এই রোগ ভালো করতে রোগীর চেয়ে একটু বেশী চতুর হতে হয়, একটু বেশী ধৈর্য ধরতে হয় আর শক্ত হতে হয়৷
বললাম; কিচ্ছু বুঝতে পারছি না আমি। লেডি ডাক্তার বলল, ৩৫০০০ টাকা বিল হবে কাল পর্যন্ত। ডিস্কাউন্ট করার কথা বলে দিয়েছি। থার্টি পার্সেন্ট ডিস্কাউন্ট ইজ ফেরার এনাফ আই থিংক।
তোমার আরেকটা কাজ বাকি থাকছে। রিদমারে কাল বাসায় নিয়ে যাবার আগে তুমি আজকে বাসাতে যাবা। গিয়ে উইথ ব্যাগ এন্ড ব্যগেজেস রহিমা আপারে বিদায় করবে। ইনক্লুডিং দ্যা সো কলড কাজিন। আই মিন রহিমা খালার ছেলে। তাদের ব্যবহার করা যাবতীয় যা আছে সব ধুয়েমুছে দিবা। যেন রহিমারা কেউ কোন দিন ছিলই না কোথাও।
যা বুঝার বুঝে ফেলেছি আমি। সকাল-বেলা বিল পে করে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম আমরা। আমি ড্রাইভ করছি পাশে বসেছে রিদমা। তারে আজ অপ্সরাদের মত লাগছে। তবে রহিমা খালা আর তার ছেলেকে অবশ্য বিদায় দিলাম না। কিছুই বলব না মনস্থ করলাম।
ওরে রুমে শুইয়ে দিয়ে একটা চুমু দিলাম ঠোঁটে। তার চোখের জল গড়িয়ে পরছে। আমার হাত-টা ছুঁয়ে বলল I'm sorry..
রুম থেকে বেড়িয়ে খালারে বললাম এক-জগ ঠাণ্ডা পানি দেন আপনার আপারে। তার সাথে কথাবার্তা বলেন, সময় দেন। খালা আর তার ১৮ বছরের ছেলে দু'জন মিলে রুমে ঢুকে গেলো। আমি পকেট থেকে গুনে গুনে পাঁচটা লাইটার বের করলাম। মোনালিসা পোর্ট্রেটের নিচে রাখা ওভেনের ভেতর গ্যাস লাইটগুলো রেখে টাইট করে ঢেকে দিলাম। ডিস্ট্রিবিউশন বোর্ড গুলো যতটা সম্ভব ন্যকেড করে দিলাম। কেটে দিলাম গ্যাসের পাইপ। হায়েষ্ট টেম্পারেচার সিলেক্ট করে টাইমার সেট করলাম ওভেনে। ওভেন গরম হতে শুরু করেছে।
আমার গাড়ি ষ্টার্ট নিয়ে নিয়েছে। Dohs পেরিয়ে এয়ারপোর্ট রোডে উঠে এসেছি। ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো আমার উল্টো পাশ দিয়ে ছুটে চলছে। ওদের গন্তব্য আমার জানা...
ওভার ড্রাইভ এক্টিভ করে মিউজিক সিষ্টেম প্লে করে দিলাম ...Walking Down d Street,
Distant Memories
R Buried In d Past Forever
I Follow D Moskva
Down 2 Gorky Park
Listen 2 d Wind Of Change
Take Me 2 d Magic Of d Moment
On a Glory Night
Where D Children Of Tomorrow
share Their Dreams
With U n Me..
The Future's In d Air
I Can Feel it Every Where
Blowing In D Wind of Change….
মাথার ভেতর আঁটকে যাওয়া সেই হুইসেলের সুর খুঁজে পাওয়া গেছে অবশেষে।।
#বনল
সাঁঝবাতি
১৩ই অক্টোবর
#wasimifekhar
0 notes
50-shade · 3 years
Text
ব্যারিকেড
হাবলু সাহেবের দক্ষিন বারান্দায় সকাল থেকে হট্টগোল। কাঠ মিস্ত্রী হার্ডবোর্ড লাগাচ্ছে বারান্দা বন্ধ করতে। বারান্দা বন্ধ'র সিদ্ধান্তে বাড়ির সবার মন খারাপ। তবে ভিন্ন ভিন্ন কারনে।
হাবলুর ছেলে বাড়ান্দায় বসে কাগজের প্লেন বানিয়ে আকাশে উড়ায়। বারান্দা বন্ধ হলে সে খেলবে কিভাবে?
এই বাড়ির কাজের মেয়ে শিউলি মুখে কিছু না বললেও তার মুখ কালো। ভোর বেলা রাস্তার চা'র দোকানে মজনু মিয়া চা খেতে আসে। উদাস হয়ে সিগারেটের ধোঁয়া উড়াই। শিউলির কাছে সে দৃশ্য বড্ড ভাল্লাগে। সে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে বারান্দা ছাড়া বাড়িতে আর না।
তবে সবচে বিরক্ত মানুষ হাবলুর বউ। বারান্দায় পাশের বাড়ির ফ্লাটের নয়া বউ জামায়ের ঝগড়া মারামারি দেখা যায় প্রায়। আবার সময়ে অসময়ে চিৎকার ভেসে আসে। ইংরাজিতে তারা নাকি গাইল পারে, খিল মি বিচ। ফাস্ট, হার্ড..
বারান্দা বন্ধ হলে এসব আর দেখা যাবে না- ভাবা যাই!
হাবলু পরিবার সহ পাড়া প্রতিবেশীর অভিযোগের শেষ নেই পাশের ফ্লাটে নিয়ে। সারাদিন মারামারি চলে। বাচ্চারা কি শিখবে! বাড়ি ওয়ালা নোটিস দিয়েছে রঙ্গন-সাগর দম্পতিরে। এই মাসেই বাড়ি ছাড়তে হবে। এ নিয়ে এক বছরে ৩ বার বাড়ি পাল্টানি। কাঁহাতক সহ্য করা যাই?
বাড়ি ছাড়ার নোটিসে আরেক দফা ঝগড়া মারামারি শুরু হয়েছে। চলছে টানা তিন দিন। সিনেমা হলের ইন্টারভেলের মত থেমে থেমে গ্যাঞ্জাম। অফিসের ফাঁকে ফাঁকে ঝগড়া। রান্নার ফাঁকে ফাঁকে মারামারি।
ইতিমধ্যে দু পরিবার বহু মিটিং মিছিল করেছে। আগে মিটিং হত দুজন'রে মিলিয়ে দিতে। এখন মিটিং হয় দু'জনরে ছাড়াছাড়ি করাতে। আগে তারা এক হতে চাইতো না, এখন আলাদা হতে চাই না। কৈ যাবি শালা, শেষ দেখেই ছাড়ুম। যা আছে কপালে টাইপ অবস্থা।
আজকেও মিটিং বসেছে। সিরিয়াস টাইপ মিটিং। দুজনেই আক্রমণাত্মক। বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচাগ্র মেদিনি। শুয়োরের বেবি থেকে মাম্মি ড্যাডি পর্যন্ত গালাগাল চলছে। তরুনী বধু'র কপালে কালশিটে। বরের শার্ট ছেড়া, বুকে খামচি'র দগদগে দাগ।
কন্যা কিছুক্ষণ পরপর ছুটে ছুটে যাচ্ছে জামায়ের দিকে। কলার ধরে টান দেয়া তার লক্ষ। মহিলারা টেনে ধরে আঁটকাতে পারছে না কন্যারে।
দু' পরিবারের কাছে বিচ্ছেদ এখন একমাত্র কাম্য। উকিল হাজির। সরকারি ষ্টাম্পে লেখালেখি শেষ। দুজনের সাক্ষরের অপেক্ষা।
জামাই কলম হাতে তুলে নিয়েছে। সাক্ষর দিচ্ছে। ক সেকেন্ড যেন শুনশান নীরবতা। স্ত্রী এবার সব বাঁধা ছাপিয়ে ছুটে এসে সটান থাপ্পড় বসিয়ে দিল ছেলের গালে। ছেলেটার চোখ মূহুর্তে রক্তবর্ণ। এক্ষুনি বুঝি খুনাখুনি হয়ে যাবে। থাপ্পড় খেয়ে অহমে আঘাত লাগা পুরুষ বড্ড বিপদজনক, আনপ্রেডিক্টেবল। ছেলের খতরনাক হাতটা মূহুর্তে এগিয়ে যাই চুলের মুঠির পানে। মুঠি ধরে সজোরে টান দেয় স্ত্রীকে। পটাপট চুল ছিড়ে যাবার। মেয়েটার ঘাড় মটকে বেঁকে গিয়ে মাথা আৎকা নিচের দিকে নেমে আসে।
তক্ষুনি মুচকি দিয়ে হেসে ওঠেন বিধাতা। সব রাগ ক্ষোভ পুরুষটা উগড়ে দেয় স্ত্রীর ঠোঁটে। চুলের মুঠি ধরে চুম্বকের মত ঠোঁট চুম্বনে আঁটকে দেয় মেয়েটাকে।
মুরব্বিরা ছি ছি করে ওঠে; জাত গেলো, জাত গেলো....। অপেক্ষাকৃত ছোটরা হাত তালি দিয়ে ওঠে। মেয়েটা লজ্জা পেয়ে যাই। ঠোঁট ছাড়িয়ে ঝাপিয়ে পরে স্বামীর বুকে। সবাই নিশ্চুপ; শুধু দুজনের কান্নার শব্দ। চোখের জলে ধুয়ে মুছে যাচ্ছে সব ক্ষোভ হাহাকার, বিক্ষোভ।।
0 notes
50-shade · 3 years
Text
পিতার কাটার
মধ্য রাতে হাতুড়ি পিটার শব্দ আসে এই বস্তির ঘরে। শব্দে ছেলেটার ঘুম ভেঙে যাই। মাকে জিজ্ঞাস করে মা এত রাতে হাতুড়ি পিটায় কেডা..
জানোস না তোর বাবা কামে গেসে…
বাবা কি কাম করে মা…
চুপ থাক, ঘুমা এখন ; সকালে কামে যাইতে হবে। বাপ আইলে জিগাইস কি কাম করে...
বাপ বাড়ি এসেছে। ড্রামে ধরা পানি দু বালতি ঢেলে দেয় গা'য়। বাংলা মদের গন্ধ ছাপিয়ে লাক্স সাবানের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পরে শরীরময়। নকশাদার বালিশে মাথা রেখে গভীর ঘুমে তলিয়ে যায় বাবা..
লাশ এসেছে আজো, ছোটখাটো সাইজের লাশ। হাসপাতালের দ্রুতগামী এম্বুলেন্সের তলে চাপা পড়া বেওয়ারিস টাটকা লাশ। বাপের ��শা এই লাশের আত্মীয় স্বজন পৌঁছে যাবে এখনি। হাতে থাকবে ব্যবচ্ছেদ না করার নির্দেশ পত্র। পার্টি মালদার হলে ৫শ টেকা পাওন যাইতারে বকশিশ। অবশ্য পুলাপানের লাশ কাটায় আরাম আছে। বাড়ি বেশি জোড়ে দেয়া লাগেনা..
পার্টি আর আসে না। খুব রাগ হয় ডোমের। এক বোতল বেশি বাংলা ঢেলে দেয় গলায়। জঙ ধরা বাটালি, হাতুড়ি আর কাটার হাতে এগিয়ে আসে সে। থেঁত়্লে যাওয়া মুখের লাশটার দিকে চোখ চলে যায় তার। লাশটা বড্ড চেনা চেনা লাগে। লাশ চেনা লাগা অবশ্য নতুন ঘটনা না। চেলায় মদ পেটে পরলে অনেক কিছুই ঘটে।
চেনা চেনা মুখচ্ছবি কে হাকাকারে বলে ওঠে আব্বারে তুই লাশঘরে আইসিস কেন?? চল বাছা বাড়িত যাই-গা। হোডেল থিকা গরুর মাংস দিয়ে ভাত খামু বাপ বেডা। কাম করুম না আজ..। কোলে তুলে নেয় বাচ্চাটাকে। আক্কাস ডোম হাঁটতে হাঁটতে পেড়িয়ে যায় লাশ কাটা ঘর। পা ফেলে লাশ কাটা শহরে...
ধীরে ধীরে নেশা কাটতে থাকে আক্কাসের, নিজ ছাওয়ালের ওজন একটু একটু বৃদ্ধি টের পেতে থাকে সে। পোলার মায়ে কইসিল বাপে কাজে গেলে বাড়িতে হাতুড়ি পিডার শব্দ আসে। সেই শব্দে ভয় পেয়ে চমকে ওঠে ৬ বছরের পুলাডা। সেই পুলার গলার নিচ থেকে চিরে কলিজা ছিড়ে তলপেট পর্যন্ত কিভাবে পৌঁছুবে ডোমের বাটালি হাতুড়? এই লাশের ছোট্ট শরীর মা'য়ের জঠরে সেই তো বপন করেছিল পিতা হতে..
#গল্পাচার ৫
এপ্রিল ১৯, ২০
নাইটব্রীজ
Tumblr media
0 notes
50-shade · 4 years
Text
চন্দ্রাহত
Tumblr media
মানুষ হিসেবে গুণাগুণের চেয়ে দোষের পাল্লার ওজন অনেক বেশী তার। দোষের লিষ্ট করে নিজেও সে স্তব্ধ হয়ে যাই। পেটকাটা ঘুড্ডির লম্বা লেজ হয়ে ত্রুটিগুলো তার সাথে উড়ে বেড়ায়।
জানো তো বড্ড আলসে সে। নিজের পানিটাও ঠিকঠাক খাওয়া হয় না। শেষ কবে গ্লাসে জল ঢেলেছে; মনে পরে না। একটা বোতল আছে ইয়া বড়। কেউ ঢেলে দিলে সেটাতেই চলে যায়।
শুধুই কি অলস? অকর্মাও বটে। দিন রাত সেল ফোনের স্ক্রিন আর নেশা ধরানো নতুন বই এর পাতায় মুখ গুঁজে থাকা। লেখাপড়া বিদ্যে, ধন-সম্পদ খুবেকটা বেশী নেই। আসলে ওসব টানেও না তারে। তার তো হিলারি তেঞ্জিন হবার কথা ছিল, কথা ছিল ইবনে বতুতা হবার। পৃথিবীর অলিগলির দেয়াল লিখন পড়ে জীবনকে জানার কথা ছিল। কথা ছিল সমুদ্র পারের পাহারে ছোট্ট কাঠ-বাংলো হবে। সাথে একটা কফি শপ। সেই কফিশপে বসে বই পড়বে দুনিয়ার দিকভ্রান্ত সব মানুষ।
কথা ছিল ছোট্ট একটা সাম্পান থাকবে উপকূল ঘেসে। প্রতিটি দুপুরে সেই সাম্পানে দাঁড় টেনে বেড়িয়ে পরবে। সাথে থাকবে একটা ডাইরি আর মগজ ভর্তি ভাবনা। সমুদ্র যেখানে শান্ত হয়ে আসবে; দাঁড় ছেড়ে ডাইরি তুলে নেবে হাতে। সে লিখবে, সু-বিশাল সুনীল জলদেবী'র বুকে ভাসতে ভাসতে লিখবে।
"তরঙ্গ লহর তোলে; লীলায়িত কুন্তলে"
কথা ছিল চন্দ্রাহত হব। চাঁদের আলোয় হেঁটে বেড়াবো পামির মালভূমি, পৃথিবীর ছাদ আর চেরাপুঞ্জি'র বৃষ্টিস্নাত রাতে। আমি হাঁটি ঘোর লাগা মানুষের মত মাটির পানে চেয়ে। মাথার ওপর দুলতে থাকা চাঁদের হাটে আমি চোখ তুলে তাকাই না। চাঁদের আলো মাখামাখি শরীর জুড়ে। আমার ঘোরলাগা নেশাগ্রস্ত সেসব অস্বস্তি তুমি দেখেছে। আমার চন্দ্রাহত জীবনের বারোয়ারী বাজারে তুমি ভুগেছ। অথচ তুমি জানলে না, তুমি চিনলে না তোমারেই। আমার আরাধ্য আহত হবার ঐ চাঁদখানা ব্রহ্মাণ্ড ছিল না, ছিল না রোহিনী, যোগতারা। খোঁদ তুমি ছিলে সেই চঁন্দ্র। চন্দ্রাহত হয়ে নিজেরে চঁন্দ্রজয়ী ভেবেছিলাম আমি।
আমার অযুত নিযুত দোষ ত্রুটি সীমাবদ্ধতা, অপারগতা, ছোটলোকি নিয়ে আমি ছিলাম। আমি ছিলাম চাঁদের অন্ধকার পৃষ্টে ছুটে আসা ধুমকেতুর আঘাতে ভচকে যাওয়া, চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাওয়া একটা অস্তিত্ব- চন্দ্রচূর।
আমি ছিলাম সব কমতি খামতি হয়ে। দুধ সাদা আসমানে এক টুকরো মহাকাশীয় আবর্জনা হয়ে। তবুও তো মহাকর্ষ ছিল। মধ্যাকর্ষণের বিপরীতে ধাবিত ভালবাসা হয়ে ছিল।
স্বীকার করি আমি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ছিলাম। তুমি কোনদিন বলনি আমার সেসব ক্ষুদ্রতার গল্প। আমার অক্ষম রোদনের গল্প। আমার না পারা হাহাকার, শিনাই শিনাই লাগা টানে যন্ত্রণার ছিঁড়ে যাওয়া হৃদপিন্ড'র গল্প।
তুমি প্রতারক বলেছিলে, প্রতারণার গল্প বুনেছিলে। তুমি বলেছিলে সুবিধাবাদের গল্প। তুমি হাহাকারে কাব্য শুনিয়েছিলে। অবহেলায় গ্রহান্তরী হবার অ���িযোগ হেনেছিলে। অনন্ত শূণ্যে তোমারে একা ফেলে পালিয়ে যাবার শূলে চড়িয়েছিলে।
কসম খোদার আমি প্রতারক ছিলাম না, আমি জালিম ছিলাম না, লোভী ধূর্ত ছিলাম না। আমি আবক্ষ মূর্তি ছিলেম না। 'আমি তোমায় ডেকে ছিলাম ছূটির নিমন্ত্রণে' তোমার বিচ্ছুরণ আলোর তাগিদে; আমার বেঁচে থাকার প্রার্থিব অবলম্বনের তরে নয়৷।
আর কোনদিন চুপিসারে আমার বাঁশি বেজে উঠবে না। মধ্যরাতে টিনের চালে বৃষ্টি হয়ে ঝড়ব না। চন্দ্রাহত মানুষ চন্দ্রনদের জলে চাঁদের কণা দেখে আনমনে। চন্দ্রাহত মানুষ চোখ তুলে কখনো চাঁদের পানে চাই না। চন্দ্রাহত মানুষের চাঁদের পানে চোখ মেলার অনুমতি থাকে না। চন্দ্রাহত মানুষ অনুমতি নিবেদনের তোয়াক্কা করে না। চন্দ্রাহত মানুষ; জাগতিকজ্ঞান, কামনা বাসনার উর্ধে উঠে দূর থেকে ভালবাসতে জানে। ওরা মাথা নোয়াতে জানে; কিন্তু শিরদাঁড়া নোয়াতে জানে না..
Tumblr media
#গল্পাচার #সাঁঝবাতি
#wasimiftekhar
Tumblr media
0 notes
50-shade · 4 years
Text
গোপাল সন্ত্রাস
ডান কাতে শুয়া সুন্নত। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সদ্য প্রসূতি মা। ছোট্ট পুতুলের মত গেদা বাচ্চাকে নিয়ে গুটিশুটি মেরে ডানকাতে ঘুমচ্ছেন। ঢিলেঢালা ম্যক্সি ভেদ করে বেড়িয়ে এসেছে স্তন। স্তন্যপায়ী দুদিন বয়সী শিশুর চোখ স্তনের দিকে।
আমি গোপাল; প্রসূত শিশুর সদ্য পিতা। বিমোহিত হলাম এ দৃশ্যে। সিন্দুকের ভেতর লুকিয়ে রাখা বাক্সে ভ্রমরেরর প্রাণ সন্ধান পেয়ে গেলাম। সমাধান পেয়ে গেলাম সকল সমস্যার। আমি জানি এ ফেরেস্তাতুল্য শিশু আমার ঔরসজাত নয়। শিশুর কপালে চুমু দিয়ে তারে বাম কাতে এগিয়ে দিলাম মা'র স্তন বরাবর। শিশুটা হেসে উঠল কিনা কে জানে..
ঘুমন্ত মা'র জলজমা ভারিক্কি শরীরের ততোধিক ভারি স্তনের চাপে দমবন্ধ হয়ে মরা এখন এই শিশুর ভবিতব্য।
আমি চোখ বুজে অপেক্ষা করছি কখন হুশ ফিরবে মা'র। চিৎকার চেঁচামেচিতে ভেঙে গেল আমার কাচা ঘুম। আর্তনাদে ধিক্কার দিয়ে উঠলাম আমি।
৬ মাস হল মন খারাপের বীভৎসতা। এক ঢিলে দু'পাখি কাত করতে ৬ মাস খুবেক্টা বেশী সময় তো নয়। ইচ্ছাকৃতভাবে সন্তান হত্যার দায়ে মামলা ঠুকে দিলাম আমি মা'র নামে। দায়িত্বশীল পিতা বলে কথা। নাহ্ শিশু হত্যাকারী মা তো ডাইনি মা। এমন মা'র সংসার করা চলে না....
বনল
১৬ জানুয়ারী
শীতের ছাদ
#গল্পাচার ৭
#wasimiftekhar
Tumblr media
0 notes