Dr. Rafan Ahmed is a physician, best selling author & blogger. He studies & writes about philosophy, science, evolution & comparative religion. He is currently pursuing post-grad degree in Medicine.
Don't wanna be here? Send us removal request.
Text
বিবর্তনের প্রাথমিক পাঠ । সংকলন
পর্ব ১. https://rafanofficial.tumblr.com/post/636006359561846784/evolution01
পর্ব ২. https://rafanofficial.tumblr.com/post/636006810817609728/evolution02
পর্ব ৩. https://rafanofficial.tumblr.com/post/636007090199183360/evolution03
পর্ব ৪. https://rafanofficial.tumblr.com/post/636136293305384960/evolution04
5 notes
·
View notes
Text
বিবর্তনের প্রাথমিক পাঠ | পর্ব-০৪ | তত্ত্বের রূপান্তর
১৮৯০ থেকে শুরু করে পরবর্তী প্রায় চল্লিশ বছর ডারউইনের তত্ত্ব ব্যাপকভাবে বিজ্ঞানীদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়। সে সময় প্রাণের বিকাশের বিভিন্ন স্বতন্ত্র তত্ত্ব পেশ করেন বিজ্ঞানীরা। ডারউইনবাদের পোপ-হিসেবে-খ্যাত থমাস হাক্সলি এই ক্রান্তিকালের নাম দেন—ডারউইনবাদের সংকটকাল (Eclipse of Darwinism)। অবস্থা এতটাই সঙ্গিন হয়ে পড়ে যে বিবর্তনের কড়া সমর্থক জে. বি. এস হ্যালডেন বলতে বাধ্য হয়ছিলেন—‘যত বয়ানই দেওয়া হোক না কেন, ডারউইনবাদ মরে গেছে।’ (Peter J. Bowler, 1989:246)

বিশ শতকের প্রথম অর্ধাংশে ডারউইনের তত্ত্বকে আবার বাঁচিয়ে তোলার চেষ্টা চালানো হয়। ডারউইন জেনেটিক্স বিষয়ে কিচ্ছু জানতেন না। জেনেটিক্সের চল শুরু হওয়ার পর ডারউইনের প্যানজেনেসিস ধারণা বর্জিত হয়। জুলিয়ান হাক্সলি, আর্নেস্ট মায়ার, থিওডোসিয়াস ডবঝানস্কি-সহ আরও গবেষক ডারউইনের মতের সাথে মেন্ডেলিয় জেনেটিক্স মিলিয়ে তৈরি করেন নতুন সংশ্লেষ! ডারউইনের বুলডগ থমাস হাক্সলির দৌহিত্র্য জুলিয়ান হাক্সলি এই নবতত্ত্বের নাম দেন মডার্ন সিন্থেসিস। ক্রমে জন্ম নেয় বিবর্তনের গাণিতিক শাখা পপুলেশান জেনেটিক্স। ডারউইন বিবর্তনবিদ্যাকে পেশাদার বিজ্ঞানের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পারেননি। তার অধরা স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করে মডার্ন সিন্থেসিস প্রবক্তারা। (Peter J. Bowler, 2003:338)
কিন্তু এখানেও একটা চমকপ্রদ ব্যাপার আছে। সায়েন্স জার্নালের এক প্রবন্ধে জানা যায়, মডার্ন সিন্থেসিস রচনাকারেরা শুরুতে বিবর্তন তত্ত্বের আপাত-ধর্মীয় (quasi-religious) দিকটি দেখেই আকর্ষিত হয়েছিলেন। (Michael Ruse, 2003:1523-1524) যেমন—জুলিয়ান হাক্সলি তার দাদার ধর্ম-প্রতিস্থাপনের ইচ্ছাকে সামনে এগিয়ে নিতে থাকেন। বিবর্তনকে পুঁজি করে তিনি নবধর্মের (evolutionary humanism) ছক কাটেন; আর সেই ধর্মের বাণী প্রচার করেন Religion Without Revelation বইতে! (Michael Ruse, 2011) তীব্র ধর্মবিরোধী এই ব্যক্তি UNESCO এর ১ম ডিরেক্টর-জেনারেল ছিলেন।
এ ছাড়াও বিশ শতক ও তারপরের বিবর্তন প্রচারকদের অধিকাংশই বিবর্তনকে শুধু বিজ্ঞানের গণ্ডিতে রাখেননি, বিশ্বদৃষ্টি তথা জীবনদর্শনে (worldview) টেনে এনেছেন। (John M. Lynch, 2005:1150) শয়তানের চার্চের প্রতিষ্ঠাতা এন্টন জান্দর লেভেই তো শয়তানের ধর্মের মূলনীতিই দাঁড় করিয়েছিলেন ডারউইনবাদের উপর! (Anton Szandor LaVey, The Satanic Bible; Introduction, 1969) *
“শয়তানের ধর্ম হলো নির্লজ্জরকম স্বার্থপরতা ও পাশবিকতার ধর্ম। এটি যে সকল বিশ্বাসের ওপর ভিত্তিশীল সেগুলোর মাঝে রয়েছে: মানুষ একেবারে মজ্জাগতভাবে স্বার্থপর ও হিংস্র প্রাণি; জীবন হলো ডারউইনের মতবাদ অনুযায়ী যোগ্যতমের বেঁচে থাকার সংগ্রাম ...”
গত শতাব্দীর পুরোটা জুড়ে এই মডার্ন সিন্থেসিসের জয়গান গাওয়া হয়েছে। শেখানো হয়েছে—বিবর্তনের চোখে না দেখলে জীববিজ্ঞান অর্থহীন! যারাই প্রাকৃতিক নির্বাচনের সীমাবদ্ধ��া, ব্যর্থতা নিয়ে বৈজ্ঞানিক অঙ্গনে মুখ খুলতে চেয়েছে তাদের মুখ বন্ধ করার জোর চেষ্টা চলেছে। ডারউইনকে সাধু-সন্ত নয়, বরং খোদার আসনে বসানো হয়েছে। (নিধর্মী) গবেষকের অভিজ্ঞতায় বললে—হয় খোদায় বিশ্বাস করো, না হয় ডারউইনে বিশ্বাস করো—এই বার্তা দেয়া হয়েছে! (Jerry Fodor & Piattelli-Palmarini Massimo, 2010:xiii) মলিকুলার ইভোলিউশনারি বায়োলজিস্ট (নিধর্মী) মাসাতোশি নাই-এর স্বাক্ষ্য অনুযায়ী (Gemma Tarlach, 2014):
“বিবর্তনবিদ্যায় ডারউইনকে ঈশ্বরে পরিণত করা হয়েছে। তাই ডারউইনের কোনো সমালোচনা করা যাবে না। যদি করো, তা হলে তোমাকে হঠকারী সাব্যস্ত করা হবে।”
সুতরাং বোঝা যাচ্ছে, বিবর্তন ধারনা সূচনা থেকেই একটি মতাদর্শ হিসেবে প্রচারিত হয়েছে, পুরোনো ধর্মের বদলে নতুন ধর্ম হিসেবে প্রসার পেয়েছে। (Michael Ruse, 2017) বিশ শতকে পেশাদার বিজ্ঞানে রূপ পাওয়ার পরও এই তত্ত্বের চর্চাকারীদের অধিকাংশই একে বিজ্ঞানের বাইরে নিয়ে গেছেন। কেউ কেউ এও বোঝাতে চেয়েছেন—বিবর্তন হলো একটি মিথ, যা খ্রিস্টধর্মকে (প্রকারান্তরে অন্যান্য ধর্মকেও) পরাস্ত করতে সদাপ্রস্তুত (EO Wilson)। নিজেকে গোঁড়া বিবর্তনপন্থি হিসেবে আখ্যা দেওয়া (নিধর্মী) দার্শনিক মাইকেল রুজ এই ঐতিহাসিক বাস্তবতার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন (Michael Ruse, 2011):
“বিবর্তনবাদকে এর চর্চাকারীরা শুধু বিজ্ঞান নয়, বরং এর চেয়েও বেশি কিছু হিসেবে প্রচার করেছে। বিবর্তনবাদ ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে একটি মতাদর্শ ও সেক্যুলার ধর্ম হিসেবে।”
(চলবে)
- ডা. রাফান আহমেদ - চিকিৎসক । পাঠক । ব্লগার
* পরবর্তীতে তারা আবার ডারউইনবাদকে প্রত্যাখ্যান করেছে, কারণ ডারউইনবাদ স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে না।
2 notes
·
View notes
Text
বিবর্তনের প্রাথমিক পাঠ | পর্ব-০৩ | ইতিহাস ও দর্শন
ভিক্টোরিয়ান ইউরোপে বিজ্ঞানচর্চা তখন নতুন দিকে মোড় নিচ্ছিল। প্রাকৃতিক ধর্মতত্ত্ব বা ন্যাচারাল থিওলজির চর্চা থেকে বেরিয়ে ন্যাচারালিস্টিক সাইন্স-এর দিকে বিজ্ঞানচর্চার জাহাজ ঘুরে যায়। প্রাকৃতিক ঘটনাবলির পিছে কেবল জাগতিক বা বস্তুগত ব্যাখ্যাকে বৈজ্ঞানিক বলে গণ্য করার চল জেঁকে বসে। বিজ্ঞানের সংজ্ঞা ও ��্যাখ্যার সীমাকে জগতের মাঝে বেঁধে ফেলা হয়। (Michael Ruse, 2019:130-147) মুক্তচিন্তার দ্বার রুদ্ধ করে জোরপূর্বক জগত-সংকীর্ণ ঠুলি পরিয়ে দেওয়া হতে থাকে বিজ্ঞানের চোখে। পাশাপাশি ভিক্টোরিয়ান সমাজে তখন পুনর্গঠনের শোর উঠতে থাকে। এই পুনর্গঠনের বিপক্ষে ছিলেন তখনকার ধনিকসমাজ, যারা মূলত ছিলেন খ্রিস্টান। এই দোলাচলের সময় ডারউইন অরিজিন অফ স্পিসিস বই প্রকাশ করে শত বছরের বায়োলজিক্যাল ডিজাইনের ধারণার জাগতিক ব্যাখ্যা পেশ করেন। হুলুস্থুল পড়ে যায় ইউরোপে!
শারীরিক অসুস্থতার কারণে স্বীয় তত্ত্ব নিয়ে ডারউইন মাঠ পর্যায়ে আসতে পারেননি; জনসম্মুখে কোনো বক্তব্য রাখারও সুযোগ পাননি। তার মত প্রচারের গুরুদায়িত্ব কাঁধে নেন ‘ডারউইনের বুলডগ’ বলে খ্যাত থমাস হাক্সলি। তবে হাক্সলির উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। হাক্সলি তৎকালীন সমাজ পুনর্গঠনের লক্ষ্য নিয়ে ডারউইনের মতবাদকে প্রচার শুরু করেন। যেহেতু ডারউইনের তত্ত্ব প্রজাতির বদলে যাওয়া নিয়ে, তাই সমাজ বদলের সেই ক্রান্তিকালে, প্রচলিত খ্রিস্টধর্মের বদলে প্রবল বেগে নতুন ধর্ম প্রতিষ্ঠায় মাঠে নামেন হাক্সলি।
ডারউইনবাদ শুধু ধর্মের বিকল্পই নয়, বরং ধর্মের মতো একই সুখকর অনুভূতি হাক্সলিকে দিয়েছিল। হাক্সলি এবং তার অনুসারীরা তাদের নতুন ধর্মের জন্য গির্জাও বানিয়েছে। তবে এটাকে তারা গির্জা না বলে নাম দিয়েছিল প্রাকৃতিক ইতিহাসের জাদুঘর (natural history museum)! এই জাদুঘর বানানোও হয়েছিল গির্জার আদলে। খ্রিস্টানরা গির্জায় যেত রবিবার সকালে, আর হাক্সলির ধর্মের জাদুঘরে মানুষ যেত বিকেলে। সেখানে তারা দেখত অতীত জীবন, ডায়নোসরের হাড়গোড়। পুলকিত হয়ে তারা বলে উঠত—বাহ, কী অদ্ভুত! (Micahel Ruse, 2011) হাক্সলির এই পরিকল্পনার সাথে অনেকটা সহযোগীর ভূমিকা পালন করেছিলেন তৎকালীন আর্নেস্ট হেকেল ও হার্বার্ট স্পেনসার।

প্রচলিত বইপত্রে বলা হয়, ডারউইনের তত্ত্ব বৈজ্ঞানিক প্রামাণ্যতার কারণে প্রবল বিজয় পেয়েছিল! ডারউইনের বিরোধিতা করেছিল স্রেফ কিছু কূপমণ্ডূক যাজক। কিন্তু ইতিহাস বলে ভিন্ন কথা। বৈজ্ঞানিক অবস্থান বিচারে ডারউইনের সমসাময়িক বিজ্ঞানীদের অধিকাংশই প্রাকৃতিক নির্বাচন নিয়ে তার মতকে আমলে নেননি। ঐতিহাসিকদের মতে, ডারউইন প্রাণের স্রেফ জাগতিক ব্যাখ্যার উপর জোর দিচ্ছিলেন বলেই তার তত্ত্ব এতটা আপ্যায়ন পায়। ঐতিহাসিক নিল গিলেস্পির পর্যবেক্ষণে পাওয়া যায় (Neal C. Gillespie, 1979:147):
“মাঝে মাঝে বলা হয়—বিবর্তন কীভাবে ঘটে সেই প্রক্রিয়া দেখানোর দ্বারা ডারউইন তৎকালীন বিজ্ঞানীদের মনজয় করেছিলেন। বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন। ডারউইনের সমকালিন বিজ্ঞানীরা প্রাকৃতিক নির্বাচন নিয়ে অস্বস্তিতে ভুগতেন। ১৮৯০ এর পর থেকে তো বিজ্ঞানীরা ব্যাপকহারে প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্ব বর্জন করতে থাকেন। বাস্তবতা হলো—ডারউইন প্রাণের বিকাশের স্রেফ জাগতিক ব্যাখ্যাকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন বলেই বিজ্ঞানীরা তার পক্ষ নিয়েছিলেন। তার তত্ত্বের বৈজ্ঞানিক ভিত্তির কারণে নয়।”
হাক্সলিও সে সময় এমন কিছুই চাচ্ছিলেন। ভিক্টোরিয়ান সমাজ বদলের হাওয়ায় রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে আলাদা করার প্রক্রিয়া জারি রাখতে হলে—যেসব প্রশ্নের উত্তর ধর্ম দেয়, সেসব প্রশ্নের বিকল্প উত্তর দাঁড় করাতে হবে। মানুষের-মাঝে-থাকা চিরাচরিত প্রশ্নগুলো যদি জাগতিক ব্যাখ্যা দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া যায়, তা হলে এই পৃথককরণ প্রক্রিয়ায় কোনো বাধা থাকবে না। তাই ডারউইনের তত্ত্ব নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন থমাস হাক্সলি। তবে তখনকার অধিকাংশ বিজ্ঞানী মনে করতেন বিবর্তনের পিছে কোনো বুদ্ধিমত্তা ক্রিয়াশীল। (দ্বিজেন শর্মা, ২০১৬ : ভূমিকা)
আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেসও এই মত পোষণ করতেন। তিনি মত দেন, বিবর্তন কোনো এলোপাথাড়ি খেল নয়; বরং যৌক্তিক সিদ্ধান্ত হলো, কোনো বুদ্ধিমত্তা এই বিবর্তনকে নিয়ন্ত্রণ করছে। ওয়ালেস বিবর্তন তত্ত্বের সহ-প্রতিষ্ঠাতা হওয়ায় তার এই মনোভাবে ডারউইন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। সমকালীন বিবর্তন সমর্থকদের গলার কাঁটায় পরিণত হন ওয়ালেস। (Michael A. Flannery, 2018) তাই হয়তো ডারউইনের মতো তিনি অতটা মনোযোগ পেলেন না। (চলবে)
- ডা. রাফান আহমেদ - চিকিৎসক | পাঠক | ব্লগার
3 notes
·
View notes
Text
বিবর্তনের প্রাথমিক পাঠ | পর্ব-০২ | ইতিহাস
ডারউইন প্রাণিজগতে ঘটে-চলা পরিবর্তনকে পর্যবেক্ষণ করে ভাবলেন—বংশ-পরম্পরায় হাজার হাজার বছরে এইসব ভ্যারিয়েশন সঞ্চয়ের মধ্যে দিয়েই হয়তো পুরোনো প্রজাতি থেকে নতুন প্রজাতি জন্ম নেয়। কিন্তু কোন প্রক্রিয়ার ফলে এমনটা হতে পারে তা তিনি খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন। ম্যালথাসের বইয়ে-থাকা মানব জনসংখ্যার বৃদ্ধি সম্পর্কিত ধারণা তাকে সেই প্রক্রিয়ার আভাস দেয়।

ম্যালথাসের ধারণা অনুযায়ী ডারউইন ভেবে চলেন—জীব জ্যামিতিক হারে বংশবৃদ্ধি করে। কিন্তু বেঁচে থাকার অবলম্বনগুলো সে হারে বাড়ে না। ফলে বেঁচে থাকার সরঞ্জাম জোগাতে ক্রমাগত লড়াই চলে জীবজগতে। এই লড়াইতে কোনো প্রজাতি অথবা প্রকরণ সুবিধে করতে পারলে তাদের বংশবৃদ্ধি অন্যদের চেয়ে বেশি হবে। ফলে তারা খাদ্য, বাসস্থান ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য বস্তুর উপর বেশি দখল নিতে পারবে। এর কারণে তাদের সংখ্যা আরও বাড়তে থাকবে; অপরদিকে যারা উপকরণ জোগাড় করতে পিছিয়ে পড়বে তাদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকবে। ফলে অস্তিত্বের লড়াইয়ে একদল টিকে যাবে, আরেকদল বিলীন হয়ে যাবে। তিনি কল্পনা করেছিলেন জেমিউল (gemmules) নামে কণার দ্বারা এইসব সুবিধাজনক বৈশিষ্ট্য বংশধরদের মাঝে আসে। এই ধারণাকে প্যানজেনেসিস বলা হতো।
ডারউইন ভাবেন, নিরন্তর এই সংগ্রামের ফলেই হয়তো পৃথিবীর বিপুল প্রাণবৈচিত্র্যের উদ্ভব হয়েছে; ডারউইন এর নাম দেন ‘পরিবর্তন-সহ উদ্ভব’ (Descent with modification)! বেঁচে-থাকা ও বংশবৃদ্ধির জন্য যারা চলনসই প্রকৃতি তাদের বেছে নেয়; অযোগ্যরা হারিয়ে যায় কালের ক্যানভাস থেকে। সেখানে পড়ে থাকে কিছু শুকনো কালি আর অনর্থক স্বপ্নের দাগ! ডারউইন ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন’-কে তুলনা করেছেন এলোমে��োভাবে-বয়ে-চলা বাতাসের সাথে। লক্ষ্যহীন, উদ্দেশ্যহীন যাযাবরের মতো ভবঘুরে-হয়ে-বয়ে-চলা মাতাল হাওয়া যেমন শুকনো পাতাকে গাছ থেকে উড়িয়ে বিরান জমিনে ফেলে দেয়, প্রাকৃতিক নির্বাচনও লক্ষ্যহীনভাবে (বরং বলা যায় অনেকটা নির্মমভাবে) দুর্বলকে মুছে ফেলে জীবনবৃক্ষ থেকে। এর পিছে নেই কোনো কারণ। নেই কোনো ছন্দ, আছে কেবল নির্দয় নির্লিপ্ততা! (Richard Dawkins, 1995:133)
১৮৫৮ সালে ডারউইনের হাতে একটি চিঠি এসে পৌঁছায়। চিঠিটি এসেছিল পঁয়ত্রিশ বছর বয়সী অখ্যাত এক ইংরেজ নিসর্গী রাসেল ওয়ালেস হতে; পত্রমাধ্যমে ডারউইনের সঙ্গে পরিচয় ছিল তার। পত্রপাঠে ডারউইন স্তম্ভিত ও হতবাক হয়ে পড়েন: এ-যে তারই প্রজাতি-চিন্তার সারসংক্ষেপ! দ্রুত এই ঘটনা পত্র মারফত লায়েলকে জানিয়ে দেন তিনি। হতবিহ্বল ডারউইন সব কাজ ফেলে উন্মত্ত হয়ে বই লিখতে লাগলেন। তার দীর্ঘ তেইশ বছরের সাধনার ফসল, তত্ত্ব-আবিষ্কারকের সম্মান আগেই অন্য কেউ ঘরে তুলবে এটা হয়তো কোনোভাবেই তিনি মানতে পারেননি। (Jonathan Howard, 2001:8-9)
ডারউই��ের বন্ধুপ্রতীমের পরামর্শ অনুযায়ী লন্ডনের লিনিয়ান সোসাইটির সমাবেশে ডারউইন ও ওয়ালেস দুজনেরই গবেষণাপত্র পাঠ করা হয়; তবে আগে পড়া হয় ডারউইনেরটা। ওয়ালেস তখন যাত্রাপথে ছিলেন, ডারউইনের বন্ধুদের কৌশল সম্পর্কে তিনি ছিলেন বেখবর। (Tim Lewens, 2006:33) শ্রোতাগণ দুটোর মাঝে বড় রকমের পার্থক্য খুঁজে পাননি; প্রায় একই জিনিস পুনরায় শোনার জন্য মনোযোগও দেননি হয়তো। ফলস্বরূপ নাম জুটে যায় ডারউইনের কপালে, ওয়ালেস হয়ে পড়েন প্রায় বিস্মৃত। মাধ্যমিক জীববিজ্ঞান বইয়ে বলা হয়েছে, ‘বিভিন্ন ঐতিহাসিক কারণে তাঁর চেয়ে ডারউইনের নামেই তত্ত্বটি অধিক প্রচলিত।’ কিন্তু কারণগুলো আর বলা হয়নি। (চলবে)
- ডা. রাফান আহমেদ - চিকিৎসক | পাঠক | ব্লগার
2 notes
·
View notes
Text
বিবর্তনের প্রাথমিক পাঠ | পর্ব-০১ | ইতিহাস
Ideas shape the course of history ~ J. M. Keynes
সময়টা তখন ভিক্টোরিয়ান ইউরোপের। শিল্পবিপ্লবের প্রস্ফুটনকাল। ইউরোপীয় আলোকায়নের প্রভাবে মানুষের মেজাজ জগতমুখী। ফ্রান্স-থেকে-ধেয়ে-আসা আলোকায়নের হাওয়ায় ইংল্যান্ডের প্রকৃতি আলোড়িত। চার্চ থেকে রাষ্ট্রকে আলাদা করার আমেজ আকা��ে-বাতাসে। বাইবেলের ব্যাখ্যা থেকে বেরিয়ে, জ্ঞানের নানা ক্ষেত্রে বস্তুগত ব্যাখ্যা প্রসারের চেষ্টা চলে আসছিল বেশ আগে থেকেই। উনবিংশ শতকের একদম শুরুতে ফরাসি প্রকৃতিবিদ ল্যামার্ক প্রাণের বিকাশের ব্যাখ্যায় একটি জাগতিক ব্যাখ্যা পেশ করেন।
এই পালে হাওয়া লাগিয়ে, ভূতত্ত্ববিদ চার্লস লায়েল কিছু ধারণা পেশ করে আলোচনায় উঠে এলেন। তিনি বাইবেলে বর্ণিত নূহ এর মহাপ্লাবন-জাতীয় ব্যাখ্যাকে তেমন একটা আমলে না নিয়ে সমুদ্রতরঙ্গ, ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির সক্রিয়তা ইত্যাদি প্রাকৃতিক ঘটনাবলিকে বেশি গুরুত্ব দিলেন। তিনি মত দিলেন এইসব জাগতিক নিয়ামকের প্রভাবে আদি অবস্থা থেকে বিবর্তিত (পরিবর্তিত) হয়ে ভূপৃষ্ঠ বর্তমান অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে।
আমরা স্বাভাবিকভাবেই দেখি জগতের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে গিয়ে উদ্ভিদ ও প্রাণিতে পরিবর্তন হয়। একেক অঞ্চলে একেক রকম প্রাণের দেখা মিলে। বিগল জাহাজে শিক্ষানবিস হিসেবে ভ্রমণকালে (১৮৩১-১৮৩৬) চিকিৎসকপুত্র চার্লস ডারউইন সেটাই পর্যবেক্ষণ করেন। এই পরিবর্তনকে ভ্যারিয়েশন বা পরিবৃত্তি বলা হতো। পাশাপাশি দেখতে পান টিকে থাকার জন্য প্রাণ ক্রমাগত সংগ্রামে লিপ্ত। এগুলো যদিও নতুন কিছু নয়, বহু আগে থেকেই মানুষ এসব বিষয়ে জ্ঞাত। যাই হোক, এই ভ্রমণের সময়ই তিনি খ্রিস্টান ভূতত্ত্ববিদ লায়েলের বই পড়ার সুযোগ পান।

লায়েলের প্রাকৃতিক ব্যাখ্যার ধারণা দ্বারা ব্যাপক প্রভাবিত হন তিনি। এমনকি ডারউইন এও বলেছিলেন—নিজের লেখা বইপত্রের অর্ধেকটা অংশের ধারণা তিনি লায়েলের মাথা থেকেই পেয়েছেন। ল্যামার্কের কাজের সাথেও পরিচিত ছিলেন ডারউইন। পাশাপাশি ডারউইনের দাদা একাত্মবাদি (ডিইস্ট) ইরেসমাস ডারউইন প্রাণ-বিকাশের জাগতিক ধারণা নিয়ে যে কবিতাগুলো লিখেছিলেন, সেগুলোও ডারইনের পড়া ছিল।
বিগল-যাত্রা থেকে ফিরে ধীরে ধীরে ডারউইন খ্রিস্টধর্মের প্রতি বিশ্বাস হারাতে থাকেন। বাইবেলকে খোদার বাণী হিসেবে মেনে নিতে পারছিলেন না তিনি, একই সাথে অলৌকিক ঘটনা ঘটার সম্ভাবনার উপরও আস্থা হারিয়ে ফেলেন। এর বদলে প্রকৃতির উপর তার অগাধ আস্থা বেড়েই চলে। বাবার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে উইলিয়াম ডারউইন রোমন্থন করেন—বাবার কাছে প্রাকৃতিক নিয়ম অনেকটা পূজনীয় স্থানে পৌঁছে গিয়েছিল! (John Durant, 1985:18) ডারউইনের নিজের জবানে দৃঢ়তা ফুটে ওঠে—প্রকৃতির সবকিছুই নির্দিষ্ট নিয়মের ফসল। কিন্তু নিয়ম কোথা থেকে আসলো! আস্তিক ডারউইন তখন এর উত্তরে স্রষ্টার কথাই ভাবতেন।
যাই হোক, ১৮৩৮ সালে খ্রিস্টান অর্থনীতিবিদ টমাস ম্যালথাস রচিত একটি পুস্তিকার সন্ধান পান ডারউইন। নেহাত কৌতূহলবশে পুস্তিকাটি কিনে এনে পড়তে থাকেন তিনি। আর সেখান থেকেই তিনি প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্বের একটি বড়ো সূত্র খুঁজে পান। (চলবে)
- ডা. রাফান আহমেদ - চিকিৎসক | পাঠক | ব্লগার
2 notes
·
View notes
Text
“মুহম্মদের (ﷺ) অন্দরমহল সম্পর্কে পশ্চিমা সমাজে আবেগতাড়িত ও অসুস্থ ধারণার ছড়াছড়ি লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু আরবে, যেখানে একবিবাহের তুলনায় বহুবিবাহের চল বেশি, সেখানের কথা আলাদা। খাদিজার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মুহম্মদও তো একপত্নীকই ছিলেন। তাছাড়া মুহম্মদের (পরবর্তী) বিবাহগুলো রোমান্স কিংবা যৌন-তাড়নার ফলশ্রুতি ছিলো না, বরং এর পিছে বাস্তবিক কারণ ছিলো। যেমন – সাওদাহ্ ছিলেন যৌবনের প্রথমভাগ অতিক্রান্ত একজন সংসারী নারী; কিন্তু মুহম্মদের গৃহস্থালী দায়দায়িত্ব সামাল দিতে পারবেন তিনি। তাছাড়া সাওদাকে বিবাহ করার মাধ্যমে তাঁর জ্ঞাতিভাই সুহায়েলের সাথেও সম্পর্কোন্নয়নের সম্ভাবনা ছিলো, যে তখনও ওহির ব্যাপারে দোদুল্যমান ছিল। আয়েশার সাথে বাগদানেও মুহম্মদের কোনও ভুল ছিলো না। সে সময় মৈত্রীর স্বার্থে অপরিণতবয়েসী পাত্রীর অনুপস্থিতিতে এমন বিবাহ অতিসাধারণ ব্যাপার ছিলো। এমনকি কোনও কোনও ক্ষেত্রে পাত্রীর বয়স আয়েশার চেয়েও কম হতো৷ ইউরোপে আধুনিক যুগের প্রথমভাগ পর্যন্ত এই রীতি ভালোমতই অনুসৃত হয়েছেI বয়ঃসন্ধি উত্তীর্ণ হবার আগপর্যন্ত এই ক্ষেত্রে বাসরযাপনের কোনো প্রশ্ন আসতো না। বয়:প্রাপ্ত হওয়ার পর আর দশটা সাধারণ মেয়ের মতো আয়েশাকেও বিয়ের পিড়িতে চড়তে হতো। ”
রেফারেনস: (নিধর্মী-সেক্যুলার গবেষক) ক্যারেন আর্মস্ট্রং, মুহম্মদ : দ্য প্রফেট ফর আওয়ার টাইম; পৃ. ৯২-৯৩ (টুকরো ভাষান্তর: রাফান আহমেদ; হারপার কলিন্স, ২০০৭)
2 notes
·
View notes
Quote
❝ [বিজ্ঞানের] যে-কোনো ভৌততত্ত্ব সব সময়ই সাময়িক। এক অর্থে—একটি অনুকল্প মাত্র। আপনি কখনোই একে প্রমাণ করতে পারবেন না। পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল যতবারই কোনো তত্ত্বের পক্ষে যাক-না কেন, পরের বার ফল যে বিরুদ্ধে যাবে না—এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। অপর দিকে, তত্ত্বের পূর্বাভাস-বিরোধী একটিমাত্র পর্যবেক্ষণও তত্ত্বটিকে ভুল প্রমাণ করতে পারে। ... নতুন পর্যবেক্ষণ তত্ত্বের বিপরীতে গেলে তত্ত্বটিকে হয় বাদ দিতে হবে অথবা বদলে দিতে হবে। ❞
Stephen Hawking (1988), A Brief History of Time (New York : Bantam Books) p. 10
4 notes
·
View notes
Quote
❝ বিজ্ঞান সম্পর্কে মনে করা হয় যে, জ্ঞানের এ শাখা যুক্তি ও প্রমাণ ভিত্তিক এবং এখানে বিনা বিচারে কোনো কিছুই গ্রহণ করা হয় না। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো ��ে, বিজ্ঞানের যৌক্তিক কাঠামাের মধ্যেও অন্তর্নিহিত রয়েছে অযৌক্তিক এবং অল্প-যৌক্তিক নানা দিক। যেমন বিশ্বাসের কথাই ধরা যাক। প্রচলিতভাবে এটা মনে করা হয় যে, বিশ্বাস হলো ধর্মের ভিত্তি, যা বিনা বিচারে গ্রহণ করা হয়। কিন্তু বিজ্ঞানের যৌক্তিক কাঠামাের মধ্যে যদি বিশ্বাসকেও লক্ষ্য করা যায় তাহলে বলব যে, বিজ্ঞানের এ কাঠামাের মধ্যে যুক্তি ও বিশ্বাসের দ্বান্দ্বিক সহাবস্থান রয়েছে। ❞
(সেক্যুলার দার্শনিক) ড. গালিব আহসান, বিজ্ঞানের দর্শন; মুখবন্ধ (ঢাকা: জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ, ২য় মুদ্রণ ২০১৫)
4 notes
·
View notes
Quote
[আ]সলে আমাদের (অর্থাৎ বিজ্ঞানীদের) সমস্ত তত্ত্ব ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা কতগুলো দর্শনগত অনুমানের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়। এই লুকানো সত্যটি অনেক গবেষকের কাছেই চরম লজ্জার ব্যাপার। তাই তারা প্রায়শ এই বিষয়গুলো স্বীকার করতে চান না।
নিউরো-সায়েনটিস্ট ড. সি. কক [ Christof Koch (2004), Thinking About the Conscious Mind. Science, Vol. 306, p. 979 ]
5 notes
·
View notes
Text

PC: Abid Hossain
4 notes
·
View notes
Quote
যিশুর শিক্ষার সাথে তুলনা করলে, প্রথমদিককার চার্চগুলো এবং সাধু পল যিশু সম্পর্কে যে বিশ্বাস পোষণ করতো—তা ছিল নতুন কিছু; মূলত এটি ছিল এক নতুন ধর্ম।
Johannes Weiss, Paul and Jesus; p. 130 (Translated By Rev. H. J. Chaytor; London: Herper & Brothers, 1909)
4 notes
·
View notes
Text
আমি কেন খ্রিস্টান নই
তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে পড়ার সময় বিশ্বের প্রধান ধর্মগুলো নিয়ে পড়ার চেষ্টা করেছিলাম। ইসলামের বিরুদ্ধে প্যাসিফিক ক্রুসেডের আদলে প্রাচ্যবিদ্যা খ্রিস্টানরাই শুরু করে। সেই প্রাচ্যবিদদের থেকে ব্যাখ্যা ধার করে ইসলামের বিরোধীতা মুক্তমনা অ্যাক্টিভিস্টদের অন্যতম কর্ম। যাই হোক, আমি প্রথমের খ্রিস্টানধর্মের মূল নিয়ে পড়ার চেষ্টা করেছিলাম, মূলের কথা বললে প্রথমেই আসে বাইবেল। এ সংক্রান্ত নানা বইপত্র ঘাঁটতে গিয়ে দেখি, বাইবেলের মূল পাণ্ডুলিপির কোনো হদিস নেই। হাইড পার্কের এক ডিবেটে নামকরা খ্রিস্টান পলেমিক জে স্মিথ-কেও অকপটে এই বাস্তবতা স্বীকার করতে দেখেছি।
এখন আসা যাক বিরাজমান পাণ্ডুলিপির কথায়। বাইবেলের নতুন নিয়ম, যেটাকে New Testament বলা হয়, এর মূল গ্রিক পাণ্ডুলিপির ভিন্ন পাঠের (variants) সংখ্যাই ৫৭০ এর ওপরে। সব ভাষার পাণ্ডুলিপি মিলিয়ে কারও কারও মতে ভ্যারিয়েন্টের সংখ্যা চার লক্ষ বা তারও বেশি! নতুন বাইবেলের মোট শব্দের সংখ্যার চেয়েও ভিন্নপাঠের পাণ্ডুলিপির সংখ্যা বেশি! [১] বাইবেলের এমন দুটি পাণ্ডুলিপিও খুঁজে পাওয়া যাবে না যা হুবহু এক। তা ছাড়া এদের মাঝে বড় রকমের পার্থক্যের সংখ্যাও কম নয়। [২]
বাইবেল যে বিকৃত হয়ে গেছে, তা জানার জন্য অন্য গবেষকের বক্তব্য কেউ মানতে না চাইলেও সমস্যা নেই। বাইবেলের Revised Standard Version (RSV) অথবা New Revised Standard Version (NRSV) খুলে ভূমিকাটা পড়লেই এই স্বীক���তি খুঁজে পাওয়া যাবে। যেমন, খ্রিষ্টান জগতে বহুল প্রচলিত, বাইবেলের RSV এর ভূমিকায় বলা হয়েছে :
মূল লিপিগুলো যুগে যুগে হস্তান্তরের ফলে যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, মাঝে মাঝেই সেটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে, তবে মূল লিপিগুলোর কোনো সংস্করণই অর্থের সন্তোষজনক পুনরুদ্ধার দেখাতে পারেনি। [ The Bible, Revised Standard Version; Preface, p. iv-v (2nd ed. 1971) ]
দ্য ক্যাথলিক এনসাইক্লোপিডিয়া জানায় :
প্রাচীন যুগের কোনো পুস্তক লেখকের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ঠিক সেরূপেই আমাদের নিকট আসেনি, সবগুলোই কোনো-না-কোনোভাবে বদলে গেছে । হাল আমলের পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই-বাচাইয়ের মানসিকতার তুলনায় আগের অবস্থা ছিল অনেক ভিন্ন। প্রিন্টিং আবিষ্কার হওয়ার আগে কোনো পাণ্ডুলিপির প্রসারে নানা জটিলতা, পাণ্ডুলিপির প্রতি অনুলিপিকারী, সংশোধনকারী ও ব্যাখ্যাকারীদের নগণ্য যত্ন; এসব নিয়ামকই একই পুস্তকের নানা পাণ্ডুলিপির মাঝে পাওয়া বিকৃতি ব্যাখ্যার জন্য যথেষ্ট। [ Alfred Durand, The New Testament article in: The Catholic Encyclopedia; Vol. 14. (New York: Robert Appleton Company, 1912. 4 Jun. 2018) ]
এসকল বিকৃতির পাশাপাশি সাধু পল কর্তৃক ব্যাখ্যামূলক বিকৃতি যিশুর প্রচারিত ধর্ম থেকে খ্রিষ্টধর্মকে বহু দূরে সরিয়ে নিয়ে গেছে। যেমন—ইতিহাস ঘাঁটলে এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যিশুর একেবারে প্রথমদিকের অনুসারী যেমন, যিশুর ভাই জেমস, শিষ্য পিটার যিশু সম্পর্কে যে বিশ্বাস পোষণ করতেন, অনেকটা তেমন বিশ্বাস পোষণ করতেন যিশুর অনুসারী ইবিওনাইটস (Ebionites) গোষ্ঠী। তারা কেউই যিশুকে খোদার অংশ বা তিনের এক মনে করা (Trinity) বা ইয়াহূদি আইন মানতে হবে না—এমন বিশ্বাস পোষণ করতেন না। তাঁরা যিশুকে খোদাপ্রেরিত একজন নবি ও মাসীহ হিসেবে বিবেচনা করতেন। [৩]
অনেক গবেষকের মতে উপরি-উক্ত বিশ্বাসই ছিল যিশুর একেবারে প্রথমদিককার অনুসারীদের বিশ্বাস। [৪] ৩য় শতক পর্যন্ত অধিকাংশ খ্রিস্টানই স্রষ্টাকে একক হিসেবে মনে করতেন, ত্রিত্ববাদি ধারণা তাদের ছিল না। [৫] ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়—যিশু তাঁর মূল ভূমি মধ্যপ্রাচ্যে জীবদ্দশায় ও পরবর্তী প্রায় দু শ বছর নবি হিসেবেই বিবেচিত হয়েছেন। [৬] সময়ের সাথে সাথে তাকে ঘিরে নানারকম বিশ্বাসের উদ্ভব হয়। তাদের কেউ যিশুকে ঈশ্বর দাবি করে বসে (Marcionites), কেউ আবার স্ব স্ব ব্যাখ্যা অনুযায়ী ভাবতে শুরু করে যিশুর মানুষ ও ঈশ্বর দুই গুণই আছে (Subordinationist, Separationists, Proto-Trinitarians)।
আজকের খ্রিষ্টানদের যে ত্রিত্ববাদে বিশ্বাস তা প্রথম তিন শতাব্দী পার হওয়ার পরও সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের বিশ্বাস ছিল না। এত রকমের বিশ্বাসের মাঝে কোনটি ঠিক, তা নির্ধারণ করার জন্য রোমান সম্রাট কনস্টানটিন ৩২৫ খ্রিষ্টাব্দে নাইসিয়াতে (বর্তমানে তুরস্কের ইজনিক-এ) এক সম্মেলনের আয়োজন করেন (Council of Nicaea)। বিশুদ্ধ আকিদা রক্ষার জন্য কোনো মাথাব্যথা কনস্টানটিনের ছিল না, তিনি রাজ্যের স্থিতিশীলতা রক্ষায় এই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। প্রটেস্টান্ট ঐতিহাসিক ফিলিপ স্কাফ স্বীকার করেছেন, সেই সম্মেলনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ ধর্মবিদই প্রাক-ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসী ছিলেন না। [৭]
তাদের একাংশ বিশ্বাস করতেন যিশু খোদার সমান নয়, উপাদানেও এক নয় বরং খোদা কর্তৃক সৃষ্ট, তবে ঐশ্বরিক গুণসম্পন্ন। এই গোষ্ঠীর নেতৃত্বে ছিলেন আরিয়াস। অন্য দলে ছিলেন এথেনাসিয়াস এর নেতৃত্বে প্রাক-ত্রিত্ববাদপন্থি গোষ্ঠী। আর বাদবাকি অধিকাংশই ছিলেন মধ্যম অবস্থানে। নাইসিয়ান সম্মেলন চলাকালে, মত এক পর্যায়ে প্রাক-ত্রিত্ববাদপন্থিদের দিকে ভিড়ে যায়। রাজা কনস্টানটিন নিজেও এথেনাসিয়াসের অবস্থানের পক্ষে মত দেন। তাই রাজার সাথে ঝামেলা না গিয়ে মধ্যম অবস্থানে থাকা ধর্মবিদদের অধিকাংশই এই মতেই ঝুঁকে যান। [৮] সম্মেলনের শেষে আকিদা বাক্য তৈরি করার পরও প্রায় আঠারো জন ধর্মগুরু তার বিরোধিতা করেন। সম্রাট কনস্টানটিন তাদের নির্বাসনে পাঠানোর হুমকি দেন। তারপরও আরিয়াস ও আরও দুজন ধর্মগুরু সাক্ষর করা থেকে বিরত থাকেন। তাদেরকে নির্বাসনে পাঠানো হয়, তাদের কিতাবাদি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। [৯]
নাইসিয়ার সম্মেলনের পর সকল খ্রিষ্টানদের প্রাক-ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসে বাধ্য করা হয়। যারা বিরোধিতা করে তাদের নির্বাসনে পাঠানো হয়, হত্যা করা হয়। সাধু জিরোমের বিবরণে জানা যায়, প্রাণের ভয়ে যেসব ধর্মগুরু নাইসিন ক্রিডে সাক্ষর করেছিলেন তাদের মাঝে নিকোমেডিয়া শহরের ইউসেবিয়াস, ক্যালসেডন শহরের ম্যারিস ও নাইসিয়ার থিওগনেস প্রবল অনুশোচনায় ভুগে পরে এক চিঠিতে কনস্টানটিনকে বলেছিলেন,
হে রাজপুত্র! আমরা এক অধার্মিকের কাজ করেছি । আপনার ভয়ে (যিশুকে স্রষ্টা বানানোর) এই ব্লাসফেমি মেনে নিয়েছি। [ Ian Wilson, Jesus The Evidence; p. 168 (New York: Harper and Row, 1984) ]
অথচ মজার ব্যাপার হলো প্রাক-ত্রিত্ববাদকে চাপিয়ে দেওয়া সম্রাট কনস্টানটিন মৃত্যুর আগে নিজেই ত্রিত্ববাদের বিশ্বাস থেকে সরে আসেন। নিকোমেডিয়া শহরের ইউসেবিয়াস তাকে আরিয়ানদের বিশ্বাসে তরিকাবন্দী করেন! [৯] অন্যতম দক্ষ বাইবেলবিদ ড. জোহানস ওয়েস Paul and Jesus গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা শেষে বলেন :
যিশুর শিক্ষার সাথে তুলনা করলে, প্রথমদিককার চার্চগুলো এবং সাধু পল যিশু সম্পর্কে যে বিশ্বাস পোষণ করতো—তা ছিল নতুন কিছু; মূলত এটি ছিল এক নতুন ধর্ম। [ Johannes Weiss, Paul and Jesus; p. 130 (Translated By Rev. H. J. Chaytor; London: Herper & Brothers, 1909) ]
অর্থাৎ, খ্রিস্টধর্মকে প্রত্যাখ্যান করার বেশকিছু কারণের মাঝে একটি হল – বাইবেলের শব্দগত ও অর্থগত বিকৃতি। সামনে সুযোগ পেলে আরো কারণ উল্লেখ করা যাবে ইন শা আল্লাহ্।
রেফারেন্স: ১। Bart Ehrman, MISQUOTING JESUS:The Story Behind Who Changed the Bible and Why; p. 89-90 (HarperCollins Publishers, 1st Edition, 2005) ২। Bart Ehrman, Lost Christianities: The Battles for Scripture and the Faiths We Never Knew; p. 78 (Oxford: Oxford University Press, 2005) ৩। Bart Ehrman, Jesus, Interrupted: Revealing the Hidden Contradictions in the Bible (and Why We Don’t Know About Them); p.191-193 (HarperCollins e-books, 2009) ৪। Bart Ehrman, The Orthodox Corruption of Scripture: The Effect of Early Christological Controversies on the Text of the NT; p. 48 (Oxford: Oxford University Press, 1993) ৫। Encyclopedia Britannica, Vol. 23, p. 963 (11th edition) ৬। James D.J. Dunn, The Evidence for Jesus; p. 96 (The Westminster Press, 1985); Albert Schweitzer, The Quest of the History Jesus; p. 28-29 (Translated by W. Montgomery; London, Adam and Charles Black, 2nd English edition 1911) ৭। Philip Schaff, The Christian Church from the 1st to the 20th Century; Vol. III, chapter 9, section 120 (Ebook Edition, Delmarva Publications Inc., March 24, 2015) ৮। Encyclopedia Britannica, vol. 16, p. 410-411 (14th ed.) ৯। Richard E. Rubenstein, When Jesus Became God: The Epic Fight over Christ’s Divinity in the Last Days of Rome; p. 83 (Harcourt Brace & Company, 1st Edition 1999); Abu Zakariya, Jesus: Man, Messenger, Messiah; p. 17 (London: iERA, 1st Edition 2017) ১০। Hans A. Pohlsander, The Emperor Constantine; p. 83 (Routledge, 2nd Edition, 2004)
7 notes
·
View notes