Tumgik
sd82sc · 4 years
Text
দিনু
পুরো নাম মনে নেই। ভোলাদের বাড়ির নীচে থাকত। আমরা তখন ভট্টাচার্য জেঠুর ‘পারুল ভবনে’ থাকতাম। বিকাল হলেই ওর বাড়িতে হাজির হতাম। আমাদের কাছে তখন ৩টা মানেই বিকাল। ওর বাবা ভীষণ রাগী ছিলেন, দিনুকে বেল্ট দিয়ে মারতেন শুনেছিলাম কিন্তু ওর মা খুব ভালো ছিলেন, ওদের বাড়ি গেলেই আমাকে কিছু না কিছু খাওয়াতেন। আমি ওদের বাড়িতেই সকাল-বিকাল আড্ডা মারতাম। পাশে জয়দের বাড়িতে খেলতাম, পেয়ারা খেতাম।
একবার মনে আছে- তখন বাপ্পাদাদের বাড়ি হয়নি, বাপ্পাদাদের জায়গায় আমরা ব্যাটমিন্টন খেলতাম। কোন এক শীতের শুরুতে আমরা মাঠ তৈরী করছি, কোদাল-কাটারী-শাবল নিয়ে। দিনু কোদাল নিয়ে মাটি সরাচ্ছিল, হটাৎ শুনলাম আমার ভাইয়ের মাথায় দিনু কোদাল দিয়ে মেরে দিয়েছে। ভাগ্যক্রমে বাড়াবাড়ি কিছু হয়নি। আমার ভাই এখন বহাল তবিয়েতেই বৌ-বাচ্চা নিয়ে টোকিওতে আছে।
Tumblr media
দিনুর কথায় ফিরে আসি। দিনু আমার ছায়া সঙ্গী ছিল কিম্বা উল্টোটা। আমরা একসাথে গোটা কাঁথি চসে বেড়াতাম একসময়। ভোলাদের বাড়ির নীচে অনেকদিন থাকার পর ওরা স্কুলবাজারে ওর বাবার চেম্বারের ঘরে চলে গেল। আমিও ওদের মালপত্র নিয়ে যেতে + নতুন জায়গায় গুছাতে মাতব্বরের মত ছিলাম। ওখানেই এক বছর ওর সাথে রথ তৈরী করেছিলাম। আগেও ওর সাথে রথ বানিয়ে ‘অক্ষয় ভবনের’ সামনে রথ প্রতিযোগিতায় নাম দিতাম, সান্তনা পুরষ্কার বাধা ছিল আমাদের জন্য। কাগজের কার্টন আর ময়দার চিট দিয়ে বানাতাম আর লাল পিঁপড়ার কামড় খেতাম। স্কুলবাজারে ওরা টেম্পুরারী ছিল, কিছুদিন পরে পাশেই অন্য একটা ভগ্নপ্রায় বাড়িতে চলে যায়। দোতলায় ওঠার সিঁড়িটা ভয়ঙ্কর ছিল, ওঠা-নামা করতে ভীষণ ভয় করত। তবু দিনুর বাড়িতে বিকাল হলেই পৌঁছে যেতাম। গ্রামের বাউন্ডুলে ছেলে হলে যা হয়, ঘরবন্দী রাখা মুস্কিল। ওদের রুমের পাশ দিয়ে কেবল লাইন গেছিল কিন্ত ওরা কানেকশন নেয়নি, একদিন চ্যানেল ঘোরাতে ঘোরাতে আবছা ছবি এসে গেল। তখন বুস্টারের নব ঘুরিয়ে ছবি ভালো করতে হত। কুম্ফু-ক্যারাটে নিয়ে কোন একটা প্রোগাম ওদের টিভিতে দেখার নেশা হয়ে গেছিল। ভাঙা বাড়ি হলে কি হবে পুরানো বলে বেশ বড়ই ছিল রুমটা। মনে আছে কাকিমা (দিনুর মা) মাথা ঠান্ডা রাখার নবরত্ন তেল মাখতেন, তেলের গন্ধটা দারুণ ছিল। নতুন পাড়ায় ওর নতুন বন্ধু হল, তাদের মধ্যে অনেকেই বয়সে বড়। আমি দিনুর বাড়ি গেলে তারা আমার পিছনে লাগত তাই আসতে আসতে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম। ওখানে শেষের দিকে দিনুর সাথে ঝুলন বানিয়েছিলাম। ওরা জুনপুট রাস্তায় শনি মন্দিরের কাছে বাড়ি বানিয়ে চলে গেছিল, ওদের বাড়িতে প্রথম দিকে কয়েকবার গিয়েছি কিন্তু অনেক দূরে বলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। এরপর খুব কম হলেও মাঝে মাঝে দেখা হলে হাসতাম। পরে দেখে, না দেখার ভান করে এড়িয়ে যেতাম কারণ এখন সেই দিনু আর নেই।
2 notes · View notes
sd82sc · 4 years
Audio
বুম্বার প্রথম স্যালারি পাওয়া। তখন ২০০৬ সাল
19 notes · View notes
sd82sc · 5 years
Text
ত্রিকোণ পতাকার দেশে 🇳🇵
ভোর ৫টা, বেশ ঠান্ডা৷ অনেক দূর যেতে হবে তাই সবাই মালপত্র নিয়ে বাসের সামনে হাজির। বাস ছাড়তে এখনও ঘন্টা খানেক বাকি, আসলে সবাই বাসের সামনের সিট ধরার আশায় অন্ধকার থাকতে থাকতেই হাজির। এমনিতেই দল বেঁধে গেলেই এই সমস্যাটা হয় তবে এবার নেপালের রাস্তার দুরবস্থা এই প্রতিযোগীতাকে অন্য মাত্রা দিয়েছে৷ এটা কাঁথি থেকে যাত্রা শুরু থেকে চলছে এবং শেষ অবদি চলবে, আর অবশ্যই আমিও এই প্রতিযোগীতা থেকে বাদ পড়িনি। ১৩০ কোটির দেশের নাগরিক আমরা লাইন তো পড়বেই।
নেপাল- একমাত্র দেশ যার জাতীয় পতাকা চর্তুভূজ নয়। পুরানো রাজাদের পতাকাই রয়ে গেছে, সদ্য ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্র দেশ হয়েছে, চারদিকে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ির নির্মাণ চলছে তাই গোটা নেপাল ধুলাময়, আমার কথায় ধুলার সমুদ্র। হ্যাঁ, নেপাল, অন্য দেশ তবে পাসপোর্ট ভিসার বালাই নেই কিন্তু সীমান্তে কাগজপত্র check হয় বইকি। অনেক সময় গেছে তার জন্য, এমনকি নাম-কা-বাস্তে মালপত্রও check হয় তবে ওই বাম হাতের সুড়সুড়ি মিটলেই ছেড়ে দেয়। এবার দুর্গাপূজার পর একাদশীতে নয়, যাত্রা শুরু হয়েছে দ্বাদশীর দিন।
১০ই অক্টোবর ২০১৯
ভোর ৫ঃ৩০-শে বাস ছাড়ার কথা ৫ঃ৪০-শে পৌঁছে দেখি আমরাই প্রথম, বাসের কোন পাত্তা নেই৷ ২-১ জন চেনা মুখ সাথে অনেক অচেনা মুখ৷ অনেক পরে আমাদের বর্ধিত ভ্রমণ পরিবার আশোকবাবুরা পৌঁছালেন। আসলে সেই দক্ষিণ ভারত ভ্রমণ থেকে ওনারা আমাদের সঙ্গী, এবার ওনার ডাক্তার ছোট ছেলেও যাচ্ছে। বাস ছাড়তে ছাড়তে ৭টা বাজল৷ এবার ট্রেন কোলকাতা (চিৎপুর) স্টেশন থেকে তাই বাস ধর্মতলায় নামিয়ে দিল বাকিটা ছোট গাড়িতে যেতে হল, ব্রিজ মেরামতি চলছে তাই। দুপুরে ট্রেন নামব বিহারের গোরক্ষপুরে৷ নেপালে ভারতের sim কাজ করবে না যদি না international roaming না করি, অনেকেই করছে দেখে আমিও করে নিলাম (voda Rs.295) এবারও গতবারের মত টেনশন ছিল RAC, টিকিট confirm হয়নি৷ বারবার PNR status দেখছি, না শেষরক্ষা হল না, এবারেও ২জনের ১টা সিট৷ বাবুদার (ট্রাভেল এজেন্ট) ওপর ভীষণ রাগ হল, তারপর ভাবলাম একটু risk না নিলে বেরোনই হত না, যাক গে! ট্রেনে ঘুমানো ছাড়া তেমন অসুবিধা হয়নি৷
১১ই অক্টোবর ২o১৯
আবার ভোর ৫ঃo৫ নামার সময় হয়ে গেছে, অবাক কান্ড ট্রেন right time-এ যাচ্ছে৷ ভেবেছিলাম ট্রেন লেট করবে ভোর ৫ঃo৫ এর বদলে সকাল ৭টার দিকে পৌঁছাবে তাই নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছিলাম (বসে বসে) সময়ে পৌঁছাতে আমার সুবিধাই হল কম কষ্ট হল, এবার হোটেলে একটু ভালো করে ঘুমিয়ে নেব। নাহ! সে সুখ আমার কপালে ছিল না- ১টা রুমে ৪-৫ জন fresh হওয়ার জন্য দিল মানে আমাদের সাথে অন্য family-ও থাকবে৷ ঘুম আর হল না স্নান করে কাছের গোরক্ষ আশ্রম দেখতে ছুটলাম। আমাদের সাথে অবশ্যই অশোক কাকুর family ছিল। আশ্রম ঘুরে এসে হোটেলে খাওয়া-দাওয়া সারলাম৷ ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে আসার এটাই সবচেয়ে বড় সুবিধা, থাকা-খাওয়া-যাতায়াত নিয়ে ভাবতে হয় না৷ ট্রেন থেকে নেমেই হোটেল ready, ঘুরে এসেই খাবার ready, বেরালেই বাস ready. তবে অন্ধকার দিকও আছে- সমান টাকা দিয়েও খারাপ হোটেল রুম সহ্য করতে হয়েছে, খাবারের জন্য লাইন দিতে হয়েছে, অন্যের জন্য ঘন্টা খানেক অপেক্ষা করতে হয়েছে ইত্যাদি৷ তবে নতুন লোকজনের সাথে পরিচয়ের আলাদা আনন্দ আছে, কিছুজন তো মনের খুব কাছাকাছি চলে আসে৷ যাই হোক খাওয়া-দাওয়া সেরে এবার বাসে চড়লাম, গন্তব্য লুম্বিনী, প্রায় ১২ ঘন্টার যাত্রা, অবশ্যই ভারত ছেড়ে নেপালে (পাতাল নয় নেপাল) প্রবেশ। লুম্বিনীর হোটেলে পৌঁছাতে রাত ১২-১টা বেজে গেল। আমি এত ক্লান্ত ছিলাম যে পৌঁছে স্নান করে একটু ঘুমাই বলে যে শুয়েছিলাম- যখন ঘুম ভাঙল তখন ভোর ৪টা৷ নাহ! রাতে খাওয়া হয়নি৷
১২ই অক্টোবর ২০১৯
আজ লুম্বিনী দর্শনের পালা৷ নিজেদেরই দল বেঁধে টোটো ধরে ঘুরতে হবে। সকাল সকাল স্নান সেরে হাল্কা টিফিন করে আশোকবাবুদের সাথে লুম্বিনী দর্শনে বেরিয়ে পড়লাম। টোটোই এক এক করে মন্দির দেখিয়ে নিয়ে চলল। যা বুঝলাম বিভিন্ন বৌদ্ধ দেশ বুদ্ধের জন্মস্থানে আলাদা আলাদা বৌদ্ধ-বিহার বানিয়েছে, কোনটা বার্মা, কোনটা মালয়, কোনটা ভারত৷ তবে আমার ব্যক্তিগতভাবে কম্বোডিয়ার মন্দির সবচেয়ে আকর্ষনীয় লেগেছে। সবশেষে বুদ্ধের জন্মস্থানে ছেড়ে টোটো বালা ভারতীয় ৫oo টাকা নিয়ে চলে গেল, টোটোটায় আমরা ৫জন ছিলাম। অশোকবাবু বুদ্ধের জন্মস্থান দেখার জন্য বারবার বলছিলেন। কিন্তু কিছু বুঝে উঠতে পার ছিলাম না- কোনটা কি? অবশেষে ভাবলাম দেখা শেষ, এবার হোটেলে ফিরতে হবে, তখন হঠাৎ টিকিট কাউন্টারে লাইন দেখে আবিষ্কার করলাম আসল জন্মস্থান দেখা হয়নি। ততক্ষণে দেরী হয়ে গেছে, হোটেলে ফিরে খাবার খেয়ে ১২ঃ৩০-এর মধ্যে বাসে উঠতে হবে। ফেরার পথে প্রাচীরের বাইর থেকে উঁকি-ঝুঁকি মেরে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটালাম৷ স্বভাবতই অশোকবাবুর মন খারাপ হয়েগেল- লুম্বিনীর প্রধান আকর্ষণটাই ভিতর থেকে দেখতে পেলেন না৷ :(
Tumblr media
১৩ই অক্টোবর ২০১৯
গতকাল দুপুরে বাসে চড়ে পোখরার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিলাম আমরা পৌঁছতে রাত হয়ে গেছিল৷ পাহাড়ী রাস্তায় ৯-১০ ঘন্টা পেরিয়ে সবাই ক্লান্ত৷ তবে এবার ঘুমাইনি, রাতের খাবার খেয়েছি। সকালে হোটেলের বারান্দায় বেরিয়ে গতকালের ধকল একলহমায় ভুলে গেলাম। চারদিক পাহাড়ে ঘেরা, তার মধ্যে কুয়াশা কিম্বা মেঘ খেলা করছে৷ জায়গাটা ঠান্ডা ঠান্ডা৷ সকালে টিফিন করে বাসে চড়ে পোখরা দর্শনে বেরোলাম। প্রথম যেখানে থামলাম, বাস থেকে নেমেই যেটা দেখে 'থ' মেরে গেলাম সেটা হল মাউন্ট অন্নপূর্ণা ৷ রাস্তার প্রান্তে আকাশে কিছুটা উপরে বরফ ঢাকা শৃঙ্গটা৷ নেমেছিলাম কোন একটা মন্দির দেখতে কিন্তু মাউন্ট অন্নপূর্ণা আমার সব আকর্ষণ ছিনিয়ে নিয়েছিল। মন্দিরটা একটা উঁচুতে, সেখান থেকে আরও লাস্যময়ী দেখাচ্ছিল মাউন্ট অন্নপূর্ণাকে। মনের সুখে ছবি তুললাম। আর মনে মনে ভাবলাম -পোখরাতেই এই বরফ ঢাকা শৃঙ্গ দেখা গেলে, হিমালয়ের আরও কাছে কাঠমান্ডু থেকে আরও কতনা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে৷ যাই হোক অন্নপূর্ণার মোহ কাটিয়ে বাকি পোখরা দেখলাম, সত্যি বলতে কি অন্নপূর্ণা দর্শনের পর বাকি জায়গাগুলো গেলাম কিন্তু ভিতরে ঢুকিনি, man made কিছুতেই প্রায় আমি আকর্ষণ খুঁজে পাই না, হ্যাঁ ঐতিহাসিক কিছু হলে চলবে৷ তবে একটা কোন গুহা ছিল অনেকটা বিশাখাপত্তনমের আরাকুর গুহার মত। বৌকে দেখানোর জন্যই তাতে ঢুকেছিলাম, ও এর আগে এমন গুহা দেখেনি তাই। দুপুর ২টো বেজে গেল হোটেলে ফিরতে ফিরতে। খাওয়া-দাওয়া সেরে বিশ্রাম, বিকালে লেকে নিয়ে যাবে নৌকাবিহার করাবে। যথা সময়ে বেরোলাম, বাকিরাও অনেকে বেরিয়েছে কিন্তু যে লেক ঘোরাবে তার দেখা মিলল না, কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আমরা হ্রদের রাস্তা জিজ্ঞাসা করতে করতে পৌঁছে গেলাম৷ অশোকবাবুরা নৌকাবিহার করবেন, আমার জলাতঙ্গ আছে- খুব বাধ্য না হলে গভীর জল আমি এড়িয়ে চলি৷ তনুকে (আমার স্ত্রী) বললাম অশোকবাবুদের সাথে চলে যেতে, উনি রাজি হলেন না। অগত্যা পাশের বেঞ্চে বসে হ্রদের সৌন্দর্য দুজনে উপভোগ করা শুরু করলাম। মাঝে মাঝেই ছোট-খাট পোষাক পরা সুন্দরীরা যাচ্ছে ইচ্ছে থাকলেও না দেখার ভান করে অন্য দিকে মুখ ঘোরাতে হচ্ছে। পাশে বৌ বসে, পাছে ... :D ইতিমধ্যে একটা ঘটনা ঘটল, আমার কাছে বেশ আকর্ষণীয় ঘটনা- আমরা যেখানে বসেছিলাম তার কাছেই এক ঝালমুড়িওয়ালা সাইকেলে ঝালমুড়ি বেচছিল, স্হানীয়রা ঝালমুড়ি খাচ্ছিল, আমার বৌও লোলুভ দৃষ্টিতে ওই দিকেই বারবার তাকাচ্ছিল, আমার ভয়ে উচ্চবাচ্চ করেনি, মোটির BP out of controle তাই আমাকেই শক্ত হাতে রাশ ধরতে হয়েছে। সব ঠিক চলছিল এমন সময় এক পাগলগোছের অল্প বয়সী এক বিদেশী ছোকরা (উচ্চতার বহর দেখে ইউরোপীয়ানই মনে হল) ঝালমুড়িওয়ালার কাছে এল, অনেকক্ষণ ধরে সব দেখল, তারপর তারও নতুন খাবার চাখার ইচ্ছে হল, একাই ছিল বিদেশী ছোকরা৷ ইসরায় ঝালমুড়ি চাইল। আমরা তখন বিদেশী ছোকরার থেকে ব্রেক নিয়ে হ্রদের দিকে নজর দিয়েছি। সেখানে আশোকবাবুদের খোঁজার চেষ্টা করলাম, পেলাম না। বরং আমাদের দলের অন্য কিছুজনকে নৌকা বিহার করতে দেখলাম, ওমা একি! ওরা হ্রদের মধ্যেই এক নৌকা থেকে ছোট অন্য নৌকায় উঠছে যে, তাও এতজন ঐটুকু নৌকায়৷ এইজন্য আমি জলযান এড়িয়ে চলি। ওনাদের সাথে পরিচয় নেই বলে জানা হয়নি-ঠিক কি ঘটেছিল, নৌকায় ফুটো জাতীয় কিছু হবে নিশ্চই। ওদের থেকে নজর ঘুরাতেই দেখি বিদেশী ছোকরা আমাদের পাশে বসে তারিয়ে তারিয়ে ঝালমুড়ির মজা নিচ্ছে। আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল মহাপুরুষের সাথে কথা বলার- বিদেশী বলে কথা, তার ওপর ইউরোপীয়ান (সম্ভবত)। ঠিক তখনই আমার ভিতরের বিবেক বলে উঠল- "থাক! অনেক হয়েছে, ইংরেজীতে তুমি অসম্ভব পটু, তোমার ইংরাজী শুনে উনি আবার ইরাজী বলতে গররাজী না হন।" অগত্যা ইচ্ছাটা গিলতে হল। এদিকে নেপালী লঙ্কার ঝাঁঝে বেচারা নাকের জলে চোখের জলে অবস্থা, বেশীক্ষণ লড়ায়ে টিকতে না পেরে বিদেশী দেশী ভবঘুরেকে বাকি ঝালমুড়ি ধরিয়ে রণক্ষেত্র ছাড়ল৷ না না ভবঘুরেটা আমি না, মানছি আমিও ঘুরতে ভালোবাসি কিন্তু এখনও ভবঘুরে হইনি। এরপর হাঁটতে হাঁটতে পোখরা ডিজনিল্যান্ড আবিষ্কার করলাম এবং অবশ্যই ছবি তুলনাম৷ সন্ধ্যায় হোটেলের দিকেই ছিলাম রাস্তায় মোমোর দোকান দেখে খাওয়ার জন্য ঘ‍্যানঘ্যান শুরু করতে ১০টা মোমোর জন্য ভারতের ৮০টাকা খসল৷ হোটেলমুখো হাঁটলেও ভরসন্ধ্যায় রুমে বন্দী থাকতে একদম ইচ্ছে করছিল না, তাই হ্রদের পাশের বাজারে ঘুরে বেড়ালাম দুজনে, ছোট হলেও মোটামুখি সাজানো-গোছানো বাজার, ভালোই লাগছিল আলোর সমুদ্রে ভেসে বেড়াতে। রুমে ফিরে অশোকবাবুর ছেলের কাছে শুনলাম, সবার নৌকাবিহারের জন্য ৫ooটাকা জনপ্রতি ধরা ছিল এবং এজেন্ট অনেক দেরীতে পৌঁচেছিল-শুনে রাগে দাঁত কিড়মিড় করছিল৷
১৪ই অক্টোবর ২০১৯
আজ আবার ভোরে আবার ৯-১০ঘন্টার বাস যন্ত্রণা শুরু হল, শুরুতেই বাসে ব্সা নিয়ে হালকা ঝগড়া-ঝাটি হল৷ বাস ছাড়তে দেরীও হল। গন্তব্য কাঠমান্ডু, নেপালের রাজধানী৷ মাঝে মনোকামনা দেবীর দর্শন৷ মন্দির এবং man made হলেও এটাই এই ভ্রমণের সেরা আকর্ষণ ছিল৷ পৌঁছেই সবার মুখ হাঁ, রোপ-ওয়ে। হ্যাঁ প্রায় সকলেই এর আগেও রোপ-ওয়ে চড়েছি কিন্তু এটা অনেক আলাদা৷ প্রথমতঃ অনেক উঁচু পাহাড়, দ্বিতীয়তঃ নদী পেরিয়ে যেতে হয়। কিন্তু বিশাল লাইন, অনেক ধৈর্য ধরে শেষ পর্যন্ত রোপ-ওয়েতে বসলাম, আমরা ৫জন একসাথে। ওঠা শুরু হল, তনু গতবারের মত আর ভয় পায়নি৷ পরপর উপরে উঠছি, নদী পেরোলাম, গাছগুলো ছোট ছোট লাগছে, একসময় পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছে গেলাম, ওমা! একি, এখনও শেষ হয়নি আবার আর একটা পাহাড়ে আরও উঁচুতে উঠলাম, শেষটা এত উঁচু ছিল যেটা আমাদের সত্যিই অবাক করেছিল৷ এই ভালোলাগাটা আমার পক্ষে লিখে বোঝানো সম্ভব নয়, নিজে অভিজ্ঞতা করলেই কেবলমাত্র অনুভব করা সম্ভব। ওপরে মনোকামনা দেবীর মন্দির৷, যাতে আমার বিন্দুমাত্র আকর্ষণ ছিল না, আমি পাহাড় থেকে নীচে ছবি তোলার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু বিফলে গেল সব চেষ্টা৷ ফেরার পথে ছবি না তুলে নিজের চোখে পাখির চোখে পাহাড় নদীর অপরূপ সৌন্দর্য তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করলাম। দুপুরে যখন নীচে ফিরলাম তখন ভীড় অনেক কমে গেছিল৷ রোপ-ওয়ের নীচে নদীর কাছে আমাদের দুপুরের খাওয়ার বন্দোবস্ত হল। রাত জেগে রান্না করেই এনেছিল তাই সবার খাওয়া-দাওয়া সারতে বেশী সময় লাগল না। নদীর তীরে বেশ জায়গাটা। খাওয়ার পর সবাই মিলে নদীতে নেমে হুল্লোড করলাম। বিকালে আবার বাস ছাড়ল। কাঠমান্ডু পৌঁছাতে রাত ৯টা বাজল৷ সবাই ক্লান্ত, তবু রাধুনীরা রান্না শুরু করে দিল- ওদের যেন ক্লান্তি থাকতে নেই। রাতে খেতে ১২টা বাজল।
১৫ই অক্টোবর ২০১৯
পরেরদিন সবাই নিজের দায়িত্বে কাঠমান্ডুর প্রধান আকর্ষণ পশুপতিনাথের (শিব) মন্দির দর্শন৷ আমরা অবশ্যই অশোকবাবুদের সাথে বেরোলাম, হোটেলের কাছেই তাই বেশী হাঁটতে হল না। এবং অবশ্যই আমি ভিতরে ঢুকলাম না, বাইর থেকে মন্দিরের চারপাশটা ক্যামেরাবন্দী করা শুরু করলাম। পুরো একপাক ঘুরে ওদের বেরোনোর আগেই গেটের কাছে পৌঁছে গেলাম। তারপর কিছু দোকানে ঘুরে দুপুরে হোটেলে ফিরলাম। ফিরে খাওয়া সেরে বিশ্রাম তবে বেশীক্ষণের নয়, দুপুরেই বাসে করে কাঠমান্ডুর বাকি দর্শনীয় দেখতে বেরোন হবে। যেমন কথা তেমন কাজ, বেরিয়ে পড়লাম রেডি হয়ে। কিন্তু বাঙালীর ব্যবস্থা আর মহাপুরুষ জর্জরিত বাঙালীর সময়জ্ঞান-তার নির্দশন আবার পেলাম৷ বেরিয়ে আধঘন্টা রাস্তায় দাঁড়াতে হল বাকিদের অপেক্ষায়, তারপর ৩০মিঃ রোদে হেঁটে বাস-স্ট্যান্ডে পৌঁছালাম। তারপরও বাস ছাড়ে না অগত্যা অপেক্ষা। আরও প্রায় ১ঘন্টা পর বাকিদের প্রায় কোলে তুলে আনতে বাস ছাড়ল- Great Indian Circus. পরে শুনেছিলাম যারা পরে এসেছিল তাদের জানানোই হয়নি, তারা অন্য হোটেলে ছিল। বলিহারি ব্যবস্থাপনা৷ যাই হোক আরও কিছু মন্দির দেখলাম, সবগুলো অবশ্য বোরিং ছিল না। নিয়ম করে ফিরেও এলাম, তবে আজকের ঘোরাটা... কি আর করা যাবে তৃতীয় বিশ্বের নাগরিক হয়ে মানিয়ে নেওয়া ছাড়া কি আর উপায় আছে? আছে! সবাই আমার মত নয়, দলের কিছুজন পরের দিনের ঘোরার ব্যাপারে কিছু change করার উদ্যোগ নিল। অনেক নাটকের পর সিংহভাগ সদস্যই রাজি হল৷
১৬ই অক্টোবর ২০১৯
ই হি হি হি ... এখন ভোর ৪টা ... বেশ ঠান্ডা! বরফ ঢাকা পাহাড়ের কোলে সূর্যোদয় দেখার লোভে সবাই ৪টাতেই বাসে চড়ে বসেছি, গন্তব্য নাগরকোট৷ ১ঘন্টার মধ্যে পৌঁছেও গোলাম, কাছের একটা টিলায় সবাইকে উঠে অপেক্ষা করতে বলল। কিন্তু অনেকের সন্দেহ হল এখান থেকে পাহাড় তো দেখা যাচ্ছে না, অগত্যা স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হল। তখন জানা গেল সামনে টিকিট কেটে কিছুটা যেতে হবে। সবাই তখন তাড়াহুড়ো করে টিকিট কেটে প্রায় দৌড় শুরু করলাম, যে কোন মুহুর্তে সূর্যোদয় হয়ে যাবে। কিছুক্ষণ হনহন করে হাঁটার পর পিছনে ফিরে তাকাতে আমাদের কাউকে দেখতে পেলাম না, এদিকে viewpoint-এরও কোন পাত্তা নেই তাই ভাবলাম ফিরে যাই। ঠিক তখনই আমাদের দলের একজনকে দেখতে পেয়ে আবার ছুট লাগালাম কিন্তু পথ আর শেষ হয় না, মাঝে আমাদের দলের এক মহিলাকে দেখলাম এক বাইকওয়ালাকে ম্যানেজ করে হাসতে হাসতে হুস করে বেরিয়ে গেল। আমিও হাল ছাড়লাম না, আমার পিছনে অন্যজনও হাল ছাড়েনি ঠিকই আসছেন৷ এইভাবে আর কতদূর? দূর ছাই ফিরে যাই গোছের দ্বন্দ করতে করতে পৌঁছালাম এবং মুগ্ধ হলাম৷ কুয়াশা/মেঘের সাথে লুকোচুরির মাঝেই প্রকৃতির নৈস্বর্গিক সৌন্দর্য দেখে হারিয়ে গেলাম। অবশ্য সূর্যোদয় পথেই দেখতে হল তবে একটা ব্যাপার অাবিষ্কার করলাম - ইন্টারনেট/পত্রিকায় যে sleeping buddha-র কথা পড়তাম সেই sleeping buddha এখান থেকে দেখা যাচ্ছে, এই অযাচিত আবিষ্কার আমার উৎসাহ আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দিল৷ এরপর একে একে অনেকেই পৌঁছালেন, এমনকি ৫ বছরের বাচ্চা, ৭০ বছরের বৃদ্ধ বৃদ্ধাও বাদ ছিল না। তবে আমার বৌ সহ অশোকবাবুরা আসেনি৷ বৌএর কথা মনে পড়তে আমি একাই হেঁটে ফেরার পথ ধরলাম। এরপর কিছু মন্দির দেখে হোটেলে যখন ফিরলাম দুপুর হয়ে গেছে। খেয়ে দেয়ে বিশ্রাম৷ বিকালে অশোকবাবুদের সাথে কাছের বাজারে ঘুরলাম, ওনারা কেনাকাটা করলেন আমরা শুধু ঘুরলাম। সন্ধ্যায় সবাই হোটেলে ফিরলাম, আমার রুমে বন্দী থাকার ইচ্ছে ছিল না তাই একাই আশপাশটা চরতে বেরালাম।
১৭ই অক্টোবর ২০১৯
সকাল সকাল বেরোতে হল এবার মালপত্র নিয়ে, ফেরার ঘন্টা বেজে গেছে তবে আপাতত গন্তব্য বিহারের রক্সোল৷ কিছুই নেই শুধু চলা আর চলা, দুপুরে একটা ফাঁকা হোটেল দেখে খাওয়া সারা হল৷ রক্সোল পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেল৷ রেলক্রসিং-এ ৪৫ মিনিট দাঁড়িয়ে অবশেষে হোটেলে পৌঁছালাম, হোটেল রুম দেখে মন খারাপ হয়ে গেল। আরও ভেঙে পড়লাম যখন শুনলাম অন্যদের রুম শুধু better নয় অনেক বেশী ভালো৷ মশার কামড় খেয়ে সারা রাত একদম ঘুম হয়নি, সালারা মশারির ব্যবস্থাও রাখেনি। একই পয়সা দিয়ে এই কষ্ট মোটেও পছন্দ হল না, রাগে ঘি পড়ল যখন ভালো রুম পাওয়া লোকজন জ্ঞান দিল ১টা তো মাত্র রাত এত নখরার কিছু নেই গোছের মন্তব্যে৷ এবার অবশ্যই ভাবব booking করার আগে। সবাই যাতে একই মানের সার্ভিস পায় সেটা ensure করাই ওদের কাজ, সেটা না পেলে আমি আর নেই। সেদিন রাতে খাসি মাংস হলেও আমার কিছুই ভালো লাগছিল না।
১৮ই অক্টোবর ২০১৯
আজ সকালেই ট্রেন, তাই তলপি-তলপা গুটিয়ে কাছেই স্টেশনে পৌঁছে গেলাম। বাকিটা রুটিন কাজ৷ এত মন খারাপের মাঝে একটা আনন্দ আছে ফেরার টিকিট RAC নয়, confirm টিকিট। বেশ আরামেই কাটল ফেরার ট্রেন যাত্রা৷ সকাল সকাল ভারী খেয়েই ট্রেনে চড়েছিলাম তাই দুপুরে খাওয়ার ঝামেলা ছিল না, রাত্রে কষ্ট করে খাওয়া সেরে নিশ্চিন্তে ঘুম৷
১৯শে অক্টোবর ২০১৯
ভোর ৫টা, এবারও ট্রেন on time আছে। অবাক কান্ড! ভারতে আছি তো? ট্রেন সময়ে দৌড়াচ্ছে কি করে৷ মালপত্র নিয়ে সবাই নামলাম, বাস আমাদের অপেক্ষায় ছিল, কাঁথি ফিরতে বেশী সময় লাগেনি। বাড়ি যখন পৌঁছালাম তখন সকাল ৮ঃ৩০ বাজে। যাক! বাসে বিদেশ যাত্রা ভালোয় ভালোয় মিটে গেল, ওনাকে অশেষ ধন্যবাদ!
13 notes · View notes
sd82sc · 5 years
Photo
Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media
1 note · View note
sd82sc · 5 years
Text
ভয়ঙ্কর সুন্দর
১৪ই আগষ্ট ২০১৯
রাত ৩ঃ৪৫ মিনিট, আমি বিশাল scorpio 4x4 চালাচ্ছি। নাহ! কোন স্বপ্ন নয়, রাত জাগা বাস্তব। পাশে গর্বিত মালিক রাজশ্রীদা বড় বড় চোখ করে শ্বাস রোধ করে একবার আমার দিকে আর একবার রাস্তার দিকে তাকাচ্ছে। সেই বিকাল ৪টায় সাঁতরাগাছি থেকে দুজনের যাত্রা শুরু হয়েছে। আমি অবশ্য বেলা ১১টায় বাসে চড়েছিলাম। ভোরে বৌকে তার বাপের বাড়ির জন্য বাসে তুলে দিয়ে আমি হাত-পা ঝাড়া হয়ে গেছি। অন্যদিকে রাজশ্রীদা অকৃতদার তাই হঠাৎ বেরিয়ে পড়তে দুজনের কারও বাধা রইল না। সেই ২০০৮-এ বুম্বার ডাকে দার্জিলিং ঘুরতে গিয়ে রাজশ্রীদাদের সাথে প্রথমবার আলাপ। দার্জিলিং প্রথমবার বলে নয়, পুরোটা গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার আনন্দ আমার মন বেশী জয় করেছিল। সাথে বোনাস ছিল রাজা, রাজশ্রীদা এবং অবশ্যই সুমিত্রদাদের সঙ্গ। আমি ভাগ্যবান ছিলাম যে ওরা আমাকে সহজে গ্রহণ করেছিল। এখন ২০১৯, অনেক পরিবর্তণ হয়েছে। সবচেয়ে খারাপ হয়েছে -আমরা বুম্বাকে চিরকালের জন্য হারিয়েছি, অন্যদিকে সুমিত্রদারা লন্ডন চলে গেছে, রাজা সিনেমার জগতে ব্যস্ত। তাই আমরা দুজনেই বেরিয়ে পড়লাম। বুম্বা আমেরিকা চলে যাওয়ার পর থেকে অনেকদিন রাজশ্রীদার সাথেও আমার যোগাযোগ ছিল না, মাসখানিক আগে। হোয়াটস্ অ্যাপ-এ হঠাৎ রাজশ্রীদাকে পেয়ে গেলাম। প্রথম থেকেই সঙ্গীর অভাবে আমার চার দেওয়ালে বন্দী দশার কথা শুনিয়ে রেখেছিলাম। আজ তাই তার দয়াতেই আমার বন্দীদশা ঘুঁচলো। আজকের গন্তব��য সিকিমের ইয়াকসম, বাহন রাজশ্রীদার ব্ল্যাক স্করপিও।
Tumblr media
১৫ই আগষ্ট ২০১৯
সারারাত ড্রাইভ করে ভোরেই শিলিগুড়ি পেরিয়ে গেলাম। রাতে রাজশ্রীদা আমাকে বারবার পিছনে ঘুমিয়ে পড়তে বলছিল কিন্তু আমি সারারাত রাজশ্রীদার পাশে জেগেই বসেছিলাম। আরে! রাস্তার টানেই তো আমি বেরোই, তো ঘুমিয়ে কাটাই কি করে। তবে মাঝে মধ্যেই বসে বসে ঢুলছিলাম। রাজশ্রীদা উত্তর-পূর্বের রাস্তায় এতবার এসেছে যে, প্রায় পাড়ার গলির মত রাস্তাঘাট চেনে। রাজশ্রীদা তাই প্রথম থেকেই বলছিল গতবার এই পথে কোন একটা ছোট ব্রিজ ভাঙা ছিল, তার জন্য গ্রামের ভিতর দিয়ে অনেকটা ঘুরতে হয়েছিল। তাই সেই ব্রিজের অবস্থা নিয়ে রাস্তার লোকজনকে বারবার জিজ্ঞাসা করছিল।  সকলেই বলল এখনও একটা সাইড দিয়ে গাড়ি চলাচল করছে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, ব্রিজের কাছে গিয়ে দেখলাম আজই রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। অগত্যা ঘুরপথেই এগোতে হল। শিলিগুড়ির পরেই পাহাড়ে ওঠা শুরু করলাম, পাশে তিস্তা বয়ে যাচ্ছে। বর্ষার জন্য এখন তিস্তার রুদ্র রূপ দেখে সত্যি বলতে কি আমি ভয়ই পেলাম। এই ফাঁকে বলে রাখি: এই বর্ষায় পাহাড় যাব-এটা ভেবে বেশ আতঙ্কেই ছিলাম কিন্তু রাজশ্রীদার সাথে আসল এডভেঞ্চারের প্রথম সুযোগ হাতছাড়া করতে রাজি ছিলাম না, তাছাড়া দুদু-ভাতি বেড়াতে বেড়াতে হতাস হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু পাহাড়ে ওঠা শুরু হতেই বর্ষার চোখ রাঙানি লক্ষ্য করতে আরম্ভ করলাম। সেবক পেরোনোর পরে পরেই সামনে গাড়ির লম্বা লাইন। একজনকে জিজ্ঞাসা করতে বলল- "রাস্তায় ধস নেমেছে, রাস্তা বন্ধ"। আমরা আবশ্য তাতে দমিনি, অন্য রাস্তা ধরে এগিয়ে চললাম। নতুন রাস্তাটায় ঘরবাড়ি বেশী। রাস্তা ফাঁকাই তবে বেশ সরু রাস্তা, মাঝে মাঝে উল্টোদিক থেকে গাড়ি চলে এলেই পথ দিতে বেগ পেতে হচ্ছিল। বেশী ঘুরতে হচ্ছিল বলে রাজশ্রীদা একটু বিষন্ন ছিল কিন্তু আমার বেশ লাগছিল, তার ২টো কারণ ছিল- প্রথম: নতুন রাস্তা, দ্বিতীয়: মেঘে ঢাকা, চা বাগানে সাজানো পুরো রাস্তা। রাজশ্রীদা বিরক্ত হবে জেনেও দাঁড়িয়ে ছবি তোলার লোভ সামলাতে পারলাম না। এরপর একসময় পুরানো রাস্তা ধরলাম, সিকিমে ঢুকলাম, জোরথাং পেরোলাম। শেষবার এই পথে জোরথাং এসেছিলাম, তাই দ্বিতীয়বার পৌঁছে পুরানো কথা মনে পড়ছিল। তবে রাস্তাঘাটের অবস্থা খুব সংঙ্গীন। বিশেষত জোরথাংয়েই নদীর ধারে রাস্তা প্রায় অর্ধেক ধসে গেছে, দেখে প্রমাদ গুনলাম- ফেরার দিন পর্যন্ত বাকি অংশ টিকে থাকবে তো! রাস্তায় একজনকে রাজশ্রীদা লিফট্ দিয়েছিল- তার মুখেই শুনলাম -সিকিমে পার্কিং, স্মোকিং, আর হর্ণ না দেওয়ার ব্যাপারে খুব স্ট্রিক্ট। রাজশ্রীদা অবশ্য জানত, তাই হর্ন না দিয়েই এগোচ্ছিল তবে হর্ন না দেওয়ার খেসারতও অনেকবার দিতে হয়েছে -বাঁকের কাছে বহুবার উল্টো দিকের গাড়ির সাথে মুখোমুখি হতে হতে রয়েছে, প্রত্যেকবারই রাজশ্রীদার পাকা হাত সামলে নিয়েছে। এইভাবে একদিকে খাত অন্যদিকে অস্থায়ী ঝর্ণায় ভরা পাহাড়ের ঢালের মাঝ দিয়ে আমরা চললাম। মাঝে গাড়িতে ডিজেল ভরার সময় দুজনেই প্রাতঃক্রিয়া সেরে নিয়েছিলাম। রাজশ্রীদা ছাতু খেয়ে আর আমি গজা খেয়ে চালিয়ে নিচ্ছিলাম। ��াই পথে বেশী থামতে হয়নি। দুপুর গড়িয়ে গেল ইয়াকসোম পৌঁছাতে পৌঁছাতে। হোটেল খুঁজতেও সময় লাগল। আসলে হোটেলটা ফরেস্ট অফিসের মধ্যে লুকানো। লম্বা লম্বা গাছের ছায়াতে দিনের বেলাতেও মায়াবী অন্ধকারে ঢাকা। হোটেলে পৌঁছাতে ৩টা বেজে গেল। রুমে ঢুকে ফ্রেস হয়ে খেতে নীচে নামলাম। একটু বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যার দিকে আসপাসটা ঘুরতে বেরোলাম। টিপটিপ করে বৃষ্টি হচ্ছে যখন তখন, তাই বেশী দূর যাইনি। ফিরে ঘুমিয়ে পড়লাম, অনেক ধকল গেছে। মাঝে রাতের খাবারের জন্য উঠেছিলাম।
১৬ই আগষ্ট ২০১৯
ঘুম ভাঙতে সকাল ৭টা বেজে গেল। আমি অবশ্য উঠেই হোটেলটা ভালো করে ঘুরে ছবি তুললাম। অতিথি বলতে আমরা দুজন। বর্ষায় কে আর পাহাড়ে আসবে। আমরা প্রায় পুরো হোটেল রাজত্ব করেছিলাম। হোটেলের সেরা রুমটাই আমাদের দিয়েছিল। বেশ বড়সড়, পরিষ্কার এবং গুছানো। দুটো দেওয়াল জুড়ে কাচের জানালা। বাইরে মেঘে ঢাকা পাহাড়ের ভীড়। রাজশ্রীদা সবে বার্থরুমে গেছে, আমি বিছানায় বসে মোবাইল ঘাটছি, হঠাৎ জানালার দিকে চোখ যেতে নিজেকে সামলাতে পারিনি, একটু জোরেই বলে উঠি -রামধনু! আসলে এত কাছ থেকে এত স্পষ্ট রামধনু আগে কখনও দেখিনি। রাজশ্রীদা ভেজা গায়েই তোয়ালে সামলাতে সামলাতে আতষ্কের সাথে বেরিয়ে এসেছিল। ততক্ষণে রামধনু হালকা হয়ে গেছিল, যদিও তার আগে আমি ক্যামেরাবন্দী করতে ভুলিনি। এরপর প্রাতঃরাস করে দুজনে বেরিয়ে পড়লাম, গন্তব্য ইয়াকসোম হ্রদ আর দুবদি মনাস্ট্রি। পায়ে হাঁটা পথ। হ্রদটা কাছেই এবং বেশ ছোট খাট। পাশেই একটা ছোট মনাস্ট্রি ছিল, সেটাও দেখে ফেললাম। তারপর দুবদির উদ্দেশ্যে পাহাড়ে ওঠা শুরু করলাম। রাস্তার পাশ দিয়ে বর্ষার জল প্রচন্ড আওয়াজ করে বয়ে যাচ্ছে। কিছুদূর ওঠার পর একটা ব্যাঙের ছাতার মত বিশ্রাম করার জায়গা দেখে ভাবলাম তবে আর বেশী দূরে নয় নিশ্চই। দুঃখের বিষয় এই ব্যাঙের ছাতা ৫-৬টা পেরোতে হল তারপর পৌঁছালাম, ততক্ষণে আমার জিভ বেরিয়ে পড়েছে। পৌঁছে অবশ্য মন জুড়িয়ে গেছিল। পাহাড়ের চূড়া থেকে চারপাশটা বেশ লাগছে, পুরানো মনান্ট্রি কিন্তু সযত্নে সংরক্ষিত, চারপাশে লনে ঢাকা। নির্জনে দুজনে শান্তিতে বেশ কিছুক্ষণ বসলাম। এর মাঝে ছবিও তুললাম। এরপর ফেরার সময় হাতে সময় ছিল বলে রাজশ্রীদা বলল মনাষ্ট্রি যাওয়ার উল্টো পথে একটু এগিয়ে দেখবে। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। দুজনে হেঁটে এগিয়ে গেলাম। প্রকৃতি যেন ঢেলে সাজানো, বর্ষা যেন তার রূপ আরও মেলে ধরেছে। সামনের বাঁকে একটি স্থানীয় ছেলে আমাদের দেখে হাসি মুখে হাত নাড়ল। আমরাও হাত নেড়ে উত্তর দিলাম। তাকেই জিজ্ঞাসা করলাম এদিকে দেখার মত কিছু আছে কিনা? ও বলল- কিছু দূরে এলিফ্যান্ট ফল্স আছে, ছেলেটি আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে গেল। পথে ওর সাথে অনেক কথা হল, অনেক কিছু শেখাল। বেশ প্রাণবন্ত ছেলেটি, অনেকটা বর্ষায় পাহাড়ী নদীর মত। ওর নাম হরিপ্রসাদ ছেত্রী, হ্যাঁ হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়ার মত ও বাঁশি বাজায়। ঝর্ণা দেখে ফেরার পথে হরি ছেত্রী ওর বাড়িতে চা খাওয়ার নেমন্ত্রন্ন করল। আমরা গেলাম, কিন্তু দেরী হচ্ছিল বলে গরম জল খেয়েই ফিরলাম। ফেরার পথে রাজশ্রীদার জুতো খুলে গেছিল তাই পথ চলতে অসুবিধা হচ্ছিল তাছাড়া খিদায় পেট জ্বলছিল। ভাগ্যক্রমে একজনকে অন��রোধ করতে গাড়িতে হোটেল পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছিল। সেদিন ওই হোটেলে খেলাম না, বাইরে অন্য হোটেলে খেলাম, খাওয়ার সময় ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হল, থামে আর না। আমি প্রমাদ গুনলাম। কাল ফেরার কথা, এত বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট ঠিক থাকলে হয়। ইতিমধ্যে রাজশ্রীদা স্থানীয় HIT-এর নেশায় নিজের লাভ-লাইন নিয়ে গোপন কথা বলতে শুরু করেছে। সত্যি বলতে কি এ ব্যাপারে অনেকদিন থেকেই মনে প্রশ্ন ছিল কিন্তু বিরক্ত করতে চাইতাম না বলে কখনও জিজ্ঞাসা করিনি কিন্তু এতো মেঘ না চাইতেই জল। তবে অ্যালকোহলকে আমার ভয়, গতবার জোরথাং-এ মনোজকে নিয়ে বিপদে পড়েছিলাম। 2 বোতল গলায় ঢেলে ব্যাটা উধাও, ঘন্টা খানিক দুঃশ্চিন্তায় মাথা ছিঁড়ে ওনার টিকির নাগাল পেয়েছিলাম। উফ! সে এক কাণ্ড। খাওয়া শেষ হলেও বৃষ্টি থামল না। আমার কাছে ছাতা থাকলেও রাজশ্রীদা বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে হোটেলে ফিরল, আমি ছাতার তলায় আসতে বলতেও শোনেনি। জ্বর হয় কিনা- সে দুঃশ্চিন্তা থাকলেও ভাবলাম ভিজলে নেশাটা যদি কাটে। হোটেলে ফিরে দুজনেই টানা ঘুম দিলাম, সারাদিন যা ধকল গেছে। উঠলাম যখন, চারদিক অন্ধকার। উঠে আমি মোবাইল ঘাটছিলাম, আসলে রাজশ্রীদার মোবাইলে আমার থেকে হাজার গুণ ভালো ছবি উঠছিল, তাই তার থেকে ছবি আমারটায় ট্রান্সফার করছিলাম। মাঝে জানালার দিকে তাকাতে দুরে বিন্দু বিন্দু আলো দেখতে পেয়ে খুশি হলাম, তাহলে মেঘ কেটেছে। ৯টায় খেয়ে দেয়ে আবার ঘুম।
১৭ই আগষ্ট ২০১৯
আজ ফেরার পালা, ব্যাগ গুছাচ্ছি এমন সময় রাজশ্রীদা বলল- আজ থেকে গেলে কেমন হয়? প্রথমে ভাবলাম বোধ হয় ইয়ার্কি করছে, তারপর যখন আমার সিক-লিভ না হওয়ার হিসাব দিল- যে রবিবার নিয়েও ৭দিন হচ্ছে না, তখন আমি রাজি হয়ে যাই। আসলে গতকাল বৃষ্টির জন্য ঘোরা বাকি থেকে গেছে, তাই আজ থাকলে সেটা পূর্ণ হবে। দুপুরের খাওয়ার ঠিক নেই বলে ভারী প্রাতঃরাস করে দুজনে বেরিয়ে পড়লাম। আজ হেঁটে নয়, রাজশ্রীদার পোষা কাঁকড়াবিছায় চড়ে। প্রথমে পৌঁছালাম -কাঞ্চনজঙ্ঘা জলপ্রপাত, রাস্তার ওপরই বলা যায়। তবে বেশ বড়সড়, বর্ষায় আরও বিশাল রূপ নিয়েছে। চারদিক ভিজে যাচ্ছে, সাথে জলের গর্জন। সেখানে একটু ভীড় ছিল, বেশ কিছু মেয়েও ছিল। তাই রাজশ্রীদা একটু বিরক্ত হয়ে বলল- চল, ফেরার পথে ভালো করে দেখব। শুনে আমি বললাম- ঠিক আছে, একটা ৩৬০°ছবি তুলে নিই, কারণ আমার অভিজ্ঞতা বলে সচরাচর ২য় সুযোগ মেলে না। এরপর গন্তব্য খেচিওপালরি লেক। এখানেও ভিড় ছিল এবং যখন হ্রদের কাছে পৌঁছালাম, ঠিক মনঃপুতঃ হলাম না, ছবি তোলার মত উঁচু জায়গা পাচ্ছিলাম না বলে। বিষন্ন মনে এদিক ওদিক দেখছি, তখনই রাজশ্রীদার চোখে একটা সাইনবোর্ড পড়ল- 'হ্রদের সেরা ভিউ এই পথে'। দুজনে চড়া শুরু করলাম। খাড়া চড়াই বলেই হয়তো কেউ এপথ মাড়ায়নি, যেটা আমাদের কাছে সুখের। কারণ আমরা দুজনেই ভীড় পছন্দ করি না। যাই হোক, সত্যি বেশ খাড়া পথ। অনেক হাঁপিয়ে অবশেষে চূড়ায় পৌঁছালাম এবং কিছুক্ষণ বাকরুদ্ধ হয়ে শুধু হাঁ করে তাকিয়ে থাকলাম। উপর থেকে লেকটা অনেক বেশী সুন্দর লাগছিল। রাজশ্রীদাই প্রথম লক্ষ্য করল- লেকের জলে একটাও পাতা পড়ে নেই, অথচ লেকের চারদিকেই জঙ্গল। উপর থেকে মনের সুখে ছবি তুললাম তারপর চুড়ার অন্য দিকে গেলাম, অন্যদিকে কিছু দেখার মত আছে কিনা। নাহ! এদিকটায় স্থানীয়দের বসবাসের ঘরবাড়ি, ছোট গ্রাম মত। ২-১টা ছবি তুলে নেমে এলাম। ফেরার পথে বোনাস হিসেবে একটা বড় মনাস্ট্রি দেখা হল। বেশ বড়সড় তবে বেশী পুরানো নয়, তবু আমার তো বেশ লাগল। সেখান থেকে ফিরে স্ট্যান্ডে খাবারের খোঁজ করলাম, কোথাও খাবার পেলাম না। অগত্যা বেরিয়ে পড়লাম, পথে কোথাও খাওয়া যাবে ক্ষণ। এদিক ওদিক করতে করতে পেলিং পৌঁছে গেলাম। সেখানেই খাওয়া হল, তখন ৩টা বেজে গেছে। এবার দুপুরের খাওয়াটা প্রতিবার ৩টার দিকেই হচ্ছিল। এখানে মটর-পনীরটা আমার অসাধারণ লেগেছিল। খাওয়া সেরে আমরা গেলাম Rabdentse Ruins. একটা পুরানো প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ। এটাই সেই জায়গা যেটা আমার সবচেয়ে বেশী মন ছুঁয়েছে, এখানে আমার পাঁচটা পছন্দের জিনিস একসাথে পেয়েছি - জঙ্গলের রাস্তা পেরিয়ে আসা, পাহাড়ের নৈশর্গিক দৃশ্য, প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য- দ্বি-রামধনু, ইতিহাসের ছোঁয়া এবং অবশ্যই নারীর সংসর্গ। উফ! এখনও নেশা কাটেনি। ওখান থেকে রাভাংলার বৌদ্ধ পার্ক দেখা যাচ্ছিল। সবকিছু দেখে আমি প্রায় পাগলের মত লাফাচ্ছিলাম আর রাজশ্রীদাকে বারবার ধন্যবাদ দিচ্ছিলাম। অথচ জায়টায় আমাদের আসার কোন প্ল্যান ছিল না, এমনকি পৌঁছেও না চিনতে পেরে ফিরে যাচ্ছিলাম। আসলে ঢোকার মুখটায় একটা পরিতক্ত পাখিরালয় আছে, তারপর জঙ্গলের অনেকটা পথ পেরিয়ে আসল গুপ্তধন। সময় শেষ হয়ে এলেও ছেড়ে আসতে ইচ্ছে করছিল না। তবু ফিরতেই হল, হোটেলে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেছিল।
১৮ই আগষ্ট ২০১৯
ঘুম থেকে উঠে রেডী হয়ে হোটেল ছাড়তে ছাড়তে বেলা ১১টা বেজে গেল। ফেরার পথে একটা রহস্যময় ব্যপার ঘটেছিল। রাস্তাটা কখনও চেনা লাগছিল, কখনও নতুন কোন রাস্তা মনে হচ্ছিল। নদীর ধার বরাবর নতুন রাস্তা তৈরী হচ্ছে, বেশ চওড়া রাস্তা। তবে জায়গায় জায়গায় ধস নেমেছে, কোন মতে গাড়ি যাওয়ার মত সামান্য পথ পরিষ্কার করা আছে। শিলিগুড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকেল গড়িয়ে গেল। বিকালের ভীড়ে রাজশ্রীদা বেশ বিরক্ত ছিল। মাঝে কোথাও তেমন থামা হয়নি, টানা চলছিলাম আমরা। আমার জ্বালানি হিসেবে গজা আমার খুব কাজে লেগেছিল। ফারাক্কা পেরিয়ে গাড়ির ট্যাঙ্ক ভর্তির সাথে আমরাও পেটপূজা করলাম, রাত তখন ১১টা। এরপর সারারাত গাড়ি চলল, মাঝে মুর্শিদাবাদে একটু সমস্যা হয়েছিল, আসার সময় এখানে বাইপাস ধরে গিয়েছিলাম, ফেরার পথেও তাই বাইপাস ধরলাম কিন্তু কিছুদূর গিয়ে দেখলাম রাস্তা বন্ধ। পরে শুনলাম শুনসান বাইপাসে ছিনতাই-এর অভিযোগে রাত্রে বাইপাস বন্ধ করে দিয়েছে। রেডবুল, মনস্টার এনার্জি ড্রিঙ্কস্ নিয়ে বাকি রাতও রাজশ্রীদা পুরোটা ড্রাইভ করল। রাস্তাতেই আবার সূর্যদয় দেখলাম। একটা ব্যাপার ফেরার পথে আমি কিন্তু কম ঢুলেছি।
১৯শে আগষ্ট ২০১৯
ফাঁকা ট্রেনে বসে আছি, সাতঁরাগাছি থেকেই ছাড়ছে তাই ফাঁকা, জানালার ধারেই বসেছি। পাঁসকুড়া অবদি প্রায় ফাঁকাই এলো ট্রেনটা তারপর অনেকে উঠল। আমার কাছের জায়গায় একটা পরিবার উঠল, কথাবার্তা শুনে মনে হল ঘুরতে যাচ্ছে। বাচ্চাগুলোকে দেখে, বিশেষ করে বাচ্চা মেয়েটাকে দেখে ভালো লাগল। ওদের কথাবার্তা শুয়ে বেশ সময় কাটছিল কিন্তু কিছুক্ষন পর মনে হল অনেকক্ষণ হয়ে গেল ট্রেনতো ছাড়ছে না। ওই পরিবারেরই একজন বলল, ইঞ্জিনের মুখ পাল্টাবে তাই দেরী হচ্ছে। আবার বাচ্চাগুলোর দিকে মন দিলাম। কিছুক্ষণ পর অনুভব করলাম পিঠের দিকে বেশ কুটকুট করছে, ভাবলাম ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে, গরমে হয়ত কুটকুট করেছ। তখন খেয়াল হল- ট্রেনের ইঞ্জিন পাল্টাতে এত সময় লাগে? ৪০মিঃ হতে যায়। তখন আবার কানে এল- অন্য ট্রেনকে লাইন ছাড়ছে অন্য ট্রেনটা বেরালে ইনি নড়বেন। এখন বুঝলাম ট্রেনটা এত ফাঁকা ফাঁকা কেন। আমরা সাঁতরাগাছি পৌঁচেছিলাম ভোর ৫টায়। ৬:১০শে দীঘা লোকাল। প্রথমে ভুল করে ট্যাক্সি বুকিং লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম, সন্দেহ হতে জিজ্ঞাসা করতে টিকিট ভেন্ডিং মেসিন দেখিয়ে দিল। সেখানেও উত্তেজনার শিকার, ভুল করে কাঁথির বদলে দীঘা পর্যন্ত টিকিট কেটে ফেললাম। ১৫ টাকা নষ্ট হল, মনটা খচখচ করতে লাগল। সাথে সারা পিঠও খচখচ করছে, ঢং! এখনও করছে কেন? ট্রেন তো চলছে, গরম লাগছে না। ওহ! ছারপোকা বাহিনীর আক্রমণ। নামা পর্যন্ত ওদের কামড় সহ্য করতেই হল। কাঁথিতে যখন নামলাম তখন বেলা ১১টা, পাঁশকুড়াতেই ঘণ্টাখানেক দাঁড়িয়েছিল। ইয়াকসোম, সিকিম যাত্রা শেষ হল। পাহাড়ে তাও এই ভরা বর্ষায়, যেমন পাথর চাপা পড়া বা রাস্তা বন্ধের ভয়, তেমনি বর্ষায় অপরুপ সৌন্দর্যের হাতছানি -দুয়ে মিলে সত্যিই ভয়ঙ্কর সুন্দর। কথায় আছে- দুজনে প্রেম ভালো, তিনজনে বন্ধুত্ব। আমারও প্রথমে দুজন বলে অস্বস্তি করছিল তবে ঘোরার শেষে মনে হল দুজন যাওয়ায় আমার সুবিধাই হয়েছে। সারাক্ষণ সামনের সিটে বসে, মন ভরে ছবি-ভিডিও তুলেছি। তাছাড়া তৃতীয় কেউ থাকলে সে আমাকে কেমন ভাবে নেবে সে দুঃশ্চিন্তা থেকেই যায়, তার ওপর রাজশ্রীদা একজনের যা বিবরণ দিল- তেমন সঙ্গী জুটলে ঘোরা মাথায় উঠবে। সবশেষে রাজশ্রীদাকে অনেক ধন্যবাদ, আমাকে বন্দীদশা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য। তবে লোভ ধরিয়ে দিলে, আরও ঘুরতে যাওয়ার আশায় থাকলাম।
0 notes
sd82sc · 5 years
Photo
Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media
0 notes
sd82sc · 6 years
Photo
Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media
3 notes · View notes
sd82sc · 6 years
Text
দর্শনাং আর্যভূমি
পারিবারিক কারণে এবার যাবার আগের দিন পর্যন্ত বাতিল করার কথা ভাবছিলাম। যাই হোক শেষ পর্যন্ত বাসে উঠলাম, যেমন প্রতিবার বাসে করে স্টেশন অবদি যাওয়া হয়। সব ঠিক চলছিল টিকিট পাওয়ার আগে পর্যন্ত, টিকিট হাতে নিয়ে দেখলাম সিট্ কন্ফার্ম হয়নি, RAC. চন্দন (ট্রাভেল এজেন্ট) TTC-কে ম্যানেজ করতে বলে পাত্তা ঝাড়ল। চেষ্টা করলাম ম্যানেজ করার কিন্তু ১২৫কোটির দেশ- হল না। অগত্যা ১টা বার্থে ২জন ২রাত কাটালাম। ভীষণ রাগ হচ্ছিল -কন্ফার্ম না, আগে জানলে যেতাম না। পরে রাগটা আরও বেড়েছিল যখন শুনেছিলাম অন্য কামরায় আমাদের ১টা বার্থ ফাঁকা এসেছে, অথচ আমাকে ২রাত বলল না, আমি এত কষ্ট করে এলাম। তবে হরিদ্বারে নেমে রাগটা উবে গেল। আসলে আমি ছোটবেলায় এই জায়গাগুলো ঘুরে গেছি তাই এখনের সাথে আগেরটা মেলানোর ইচ্ছেতেই আবার ঘুরতে আসা + তনুকে তাজমহল দেখান।
Tumblr media
৫ঘন্টা দেরি করে ট্রেন ঢুকল, তবে তাতে আমাদের সুবিধাই হল, না হলে ভোর ৪টায় ঠান্ডায় মরতে হত। স্টেশনে বাস আমাদের অপেক্ষায় ছিল। মালপত্র বাসে তুলতে কিছু সময় লাগল তারপর চললাম মুসৌরীর উদ্দেশে। কিন্তু পৌঁছতে পৌঁছতে বিকেল হয়ে যাবে তাই হরিদ্বার ছাড়িয়ে রাস্তার ধারে একটা 'ধাবায়' রান্না করে দুপুরের খাওয়া শেষ করে আবার বাসে উঠলাম। পাহাড়ী রাস্তা তাই দূরত্ব কম হলেও সময় অনেক লাগল, পৌঁছতে সন্ধ্যে হয়ে গেল। দারুন হোটেল, ঠিক যেন উল্টো বাড়ী সাথে বড় বড় জানালা দিয়ে বাইরের হিমালয় দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। পাহাড়ের ওপর তাই ৬টা বাজলেও হালকা আলো তখনও ছিল। ক্লান্ত হলেও আমরা ৩জন ঘর বন্দী না থেকে কাছের চকে ঘুরতে গেলাম। অন্ধকারে দোকান ছাড়া আর কিছুই দেখার নেই। জল ছাড়া কিছুই কিনলাম না, শুধু উইন্ডো শপিং করলাম। পরদিন ভোরে আমি একা চারদিকটা ঘুরে ছবি শিকারে বেরোলাম। বেরিয়ে দেখলাম আমি একা নই দলে দলে হবু সৈন্যরা প্যারেড করে যাচ্ছে। চারদিক ঘুরতে ঘুরতে সকাল হয়ে গেল, ততক্ষনে বাকিরাও রেডি, তাই আমি হোটেলে ফিরে সবার সাথে বাসে উঠলাম। কাছেই ছিল 'কেমটি ফলস' দেখতে গেলাম। প্রথম দেখে সবাই একটু বিরক্তই হল, তেমন দেখার মতো নয়। অনেকেই হাঁটবে না বলে বাসেই বসে রইল। এসেছি যখন- যেমনই হোক দেখতে আমি রাজি :D প্রথমে আমারও সাধারণ রুগ্ন ঝর্ণাই মনে হয়েছিল, তারপর ঝর্ণার পাশ দিয়ে একটা সিঁড়ি দেখে একটু উঠে দেখি বেশ মনোরম পরিবেশ, আসলে ঝর্ণার এই দিকটাই দেখার। আমার পিছনে পিছনে তখন বাকিরাও চলে এসেছে, শেষে সেখানেই সবাই অনেক্ষন কাটালাম। মুসৌরীতে আর কিছু তেমন দেখার ছিল না, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই এর আসল আকর্ষণ। হরিদ্বারে ঢোকার আগে ঋষিকেশ গেলাম। রামঝুলা দেখলাম, আমি ছোট বেলায় লক্ষ্মণঝুলায় গেছিলাম, এটাও একইরকম -তারের ঝুলন্ত সেতু। গঙ্গা পার হয়ে একটা আশ্রমে ঘুরলাম তারপর হরিদ্বার ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যে হয়ে গেল। হরিদ্বারে 'চিন্তামণি আশ্রম' আমাদের ২দিনের ঠিকানা হল। হোটেলে ঢুকেই কোনরকম ফ্রেশ হয়ে আমি আশপাশটা দেখতে বেরিয়ে পড়লাম, তবে এবার একা, কোন সঙ্গী পেলাম না। আন্দাজ করে 'হর-কি-পৌড়ী' পৌছালাম। clock tower-টা চিনে ঠিক পৌঁছে গেলাম। রাত হয়ে গিয়েছিল। ফাঁকা ফাঁকা, আবার নতুন জায়গা তাই একটু ভয়ই লাগছিল। গঙ্গায় একদম জল ছিল না, যেন হাড় কঙ্কাল বেরিয়ে পড়েছে, দেখে মন খারাপ হয়ে গেল, ছোটবেলায় দেখা গঙ্গায় কত জল ছিল। এরপর বাজারের দিকে পা বাড়ালাম, ছোটবেলায় খাওয়া 'দাদা-বৌদির' হোটেলের খোঁজে, নাহ! খুঁজে পেলাম না। তবে বাজারে পথ হারিয়ে ফেলেছিলাম প্রায়, শেষে ভাগ্যক্রমে হোটেল খুঁজে পেলাম, না হলে আবার উল্টো পথে এতটা ফিরতে হত। রাতে খাওয়া দাওয়ার পর ক্লান্তিতে তাড়াতাড়ি ঘুম চলে এল। পরদিন সকালেই পাহাড়ে রোপওয়ে করে মা মনসার মন্দির দেখতে গেলাম। স্বভাবতই আমি মন্দিরে প্রবেশ না করে চারপাশটা ঘুরে দেখলাম আর ছবি তুললাম। আসলে আমার কাছে ঘুরতে যাওয়ার একটাই মানে -ছবি তোলা। তনু প্রথমবার রোপওয়েতে উঠল, ওর একটা ভয় মেশান আনন্দ হচ্ছিল, সেসব ভিডিওতে বন্দী করছিলাম। ফিরে খাওয়া দাওয়া করে অটো করে সবাই একসাথে হরিদ্বারের মন্দির দর্শনে বেরলাম। দেখলাম, অবশ্যই বাইর থেকে। জুতা খুলে ভেতরে ঢোকা আমার কোনদিনই হল না। দেখতে দেখতে সন্ধ্যে হয়ে গেল, অটো আমাদের হরিদ্বারের প্রধান আকর্ষণ 'হর-কি-পৌড়ী'তে ছেড়ে দিল। সেখানে পোঁছাতে দেরী হয়ে গেছিলো তাই সন্ধ্যা আরতি আর দেখা হল না, মনের দুঃখে হোটেলে ফিরে খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরেরদিন সকালে তেমন কোন প্ল্যান ছিল না, তো কাল রাত্রে কিছুজন নিজেদের উদ্যোগে বাবা রামদেবের 'পতঞ্জলি' যাওয়ার কথা বলতে আমরাও ওদের সাথে যাওয়া ঠিক করলাম। ওরাই বারবার বলল একদম সকাল ৬টায় বেরবে, শুনে তনুর জন্য ভাবলাম -এত সকালে ঠান্ডায় ও যেতে রাজী হবে? যাই হোক কথা যখন দিয়েছি তো যেতেই হবে, সুযোগ যখন হয়েছে দেখেই আসি। আমরা অনেক কষ্টে ভোরে উঠে ৫টা ৪৫শে হোটেলের লবিতে বাকিদের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম ... ৬টা ৩৫মিঃ এখনও বাকিদের কারও পাত্তা নেই। তনু রেগে আবার হোটেল রুমে চলে গেল। আমারও বিরক্ত লাগছিল তবু সুযোগ যখন পেয়েছি তখন দেখেই ছাড়ব ... সকাল ৬টা ৫৫মিঃ এবার আমারও ধৈর্য্য জবাব দিল। কাল রাত্রেই আমার সন্দেহ হয়েছিল কাদের সাথে যাব বললাম, আদর্শ বাঙালী এরা, স্বভাবতই ওরা বাঙালীর ঐতিহ্য বজায় রাখল, আর আমি ভগ্ন হৃদয়ে পদব্রজে হোটেল ছাড়লাম, যেতে যেতে ঠিক করলাম পায়ে হেঁটে মা মনসার মন্দিরে উঠব। উঠলাম, ছবি তুললাম, আর নতুন ভাবে দেখলাম জায়গাটা। যেটা রোপওয়েতে এসে দেখতে পাইনি। ফিরে তনুর সাথে গঙ্গার ঘাটে গেলাম। ওকে বললাম স্নান করতে, রেডি হয়ে এল স্নান করবে বলে, কিন্তু গঙ্গায় নেমে পায়ে জল লাগতেই তিড়িং বিড়িং করে আবার ঘাটে উঠে এল, এরপর আর নামাতে পারিনি, শুধু বাবা-মায়ের জন্য এক বোতল গঙ্গা জল তুলে এনেছিল মাত্র। আঙুলে গঙ্গা জল মাথায় ছিটিয়ে কাক-স্নান সেরে হোটেলে ফিরলাম। আমি? নাহ ! নৈব নৈব চ... :D হোটেলে খাওয়া সেরে দুপুরে বাজারে গেলাম আমাদের সাথে আরো কিছুজন ছিল। সস্তার কিছু গরম পোশাক কিনে ছোটবেলার দাদা-বৌদির হোটেল খুঁজে মনের আনন্দে বিকেলে হোটেলে ফিরলাম। সন্ধ্যায় আবার 'হর-কি-পৌড়ী' গেলাম, এবার সময় থাকতে হাজির হয়েছিলাম তাই তনু সন্ধ্যা আরতি দেখতে পেল, গঙ্গায় প্রদীপ ভাসল, পূজাও দিল। একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম এখন সন্ধ্যা আরতির সময় গঙ্গার আর কালকের মত কঙ্কালসার অবস্থা নেই, খুব বেশি না হলেও জলে ভরে আছে গঙ্গা, দেখে ভালই লাগল। তনুও সবকিছু দেখে দারুণ খুশি ছিল। ফেরার পথে আবার বাজার হয়ে এলাম, তবে এবার কেনাকাটা করিনি, ওহ! হ্যাঁ ৪০টাকা দিয়ে একটা পিতলের ছোট্ট ধুপ দানি কিনেছিলাম বটে। আজ রাত্রেই দিল্লীর ট্রেন। রাত্রে তাড়াতাড়ি খেয়ে মালপত্র নিয়ে সদলবলে স্টেশনে গেলাম। ভারতীয় ঐতিহ্য মেনে ট্রেন অবধারিতভাবে লেট ছিল, তবে এক মাতাল আমাদের ভালই এন্টারটেন করেছিল। ট্রেন এল ১২টার দিকে, উঠেই শুয়ে পড়লাম, ঘুম ভাঙলেই দিল্লী পৌঁছে যাব, হলও তাই সকালে উঠেই দিল্লীতে নামলাম। স্টেশনে বাস অপেক্ষায় ছিল, বাসে উঠে সোজা হোটেল। হোটেল না পায়রা খোপ? ঘোর কাটতে কিছু সময় লাগল, ২টো রাত কোনরকম কাটাব, তাও বেশিরভাগ সময় বাইরেই থাকব, শুধু রাত্রে ঘুমান, তাই বেশি নাখরা করলাম না, তবে সত্যি বলতে কি হোটেল রুম এত ছোট আর নোংরা সাথে বাজে গন্ধ আর বিছানা দাগে ভর্তি যে গা ঘিনঘিন করছিল। :( পরদিন প্রথমে রাজঘাট দেখে বাকি সময় পুরোটা কাটল 'অক্ষরধাম' মন্দির দেখে। আমি যথারীতি ভিতরে ঢুকিনি বাইর থেকে ঘুরে ঘুরে ছবি তুললাম, তবে এতো বড় ক্যাম্পাস যে এত দূর থেকে ছবিতে প্রায় কিছুই আসেনি, যেটুকু এসেছে তাও ঝাপসা। যারা অক্ষরধাম দেখেছে ভিতরে ঢুকেছিল তারা জাস্ট ফিদা ! যেমন নিখুঁত কারুকার্য, তেমন মন কেড়েছে 'লাইট এন্ড সাউন্ড' শো। ওখান থেকে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গিয়েছিল। পরদিন সকালে উঠে বেরিয়ে পড়লাম বাকি মোঘলাই দিল্লী পরিদর্শনে -বিড়লা মন্দির দেখে শুরু করে পরপর ইন্দিরা মিউজিয়াম, রাষ্ট্রপতি ভবন, পার্লামেন্ট হাউস, ইন্ডিয়া গেট -এখানের পার্কে দুপুরের খাওয়া সেরে নিলাম সকলে, তারপর গেলাম কুতুব মিনার দেখতে, টিকিটের এতবড় লাইন দেখ অনেকে বলল কুতুব মিনার না দেখে লোটাস টেম্পল দেখতে যাবে, শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। ঐতিহাসিক স্থাপত্ব ছেড়ে ফাঁকা পদ্ম ফুলাকৃতির বাড়ি দেখবে। দলে যখন এসেছি ভোট যেদিকে বেশি সেটাই মেনে নিতে হবে। ভাগ্যক্রমে আমার মত কিছু ইতিহাস পাগল ঠিক করল -যত দেরী হোক কুতুব মিনার দেখবে, শুনে আমার ধড়ে প্রাণ এল, লাইনে দাঁড়িয়েই টিকিট কাটলাম, (অনেকে অনলাইন টিকিট কেটেছিল, তাতে কম খরচ হয়েছিল + সময়ও বেঁচেছিল) আর মন ভরে ছবি তুললাম। এরপর আর লোটাস টেম্প��� দেখা হয়নি, লালকেল্লা বন্ধ হয়ে যাবে তাই বাস ছুটল লাল কেল্লার দিকে। এখানেও ভয় ছিল -টিকিটের লাইনে দেরি হওয়া নিয়ে, ভাগ্যক্রমে তা হয়নি, সময়েই পেল্লাই কেল্লায় প্রবেশ করলাম। ছোটবেলায় দেখার সাথে মেলানোর চেষ্টা করলাম, আর ছবি তুললাম। একটু অন্ধকার হয়ে এসেছিল, তবে কাজ (ছবি তোলা) মোটামুটি হয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে ডাস্টবিনসম হোটেলে ফিরতেই হল, সত্যি বলতে কি -রুমের থেকে রাস্তা বেশী পরিষ্কার ছিল। ২রাত কেটে যেতে বেশ খুশিই হয়েছিলাম, পরদিন ভোরে মথুরার জন্য ট্রেন ধরলাম। চেয়ার-কারে বসার প্রথম অভিজ্ঞতা হল, সাথে আর কিছু অভিজ্ঞতা হল -মাত্র ২মিনিটে এত মানুষ (৬৩জন) সাথে তার মালপত্র এত ছোট ট্রেনের দরজা দিয়ে কিভাবে বেরোন যায়। আমি তো প্রথমে আপৎকালীন জানালা দিয়ে বেরোনোর কথা ভেবেছিলাম, যাই হোক কপাল জোরে কাউকে এবং কোন মালপত্র না খুইয়ে আমরা মথুরায় পদার্পন করলাম। ধর্মস্থান, তাই আমার উদ্যমটা অনেক কমে গিয়েছিল, তবে আগামী ২রাত্রের ঠিকানা দেখে (রঘুনাথাশ্রম, বৃন্দাবন) মনে আবার উদ্যম ফিরে এসেছিল। এত খোলামেলা, সাজানো, পরিষ্কার-পরিছন্ন, শান্ত থাকার জায়গা আগে দেখিনি, বিশেষ করে দিল্লীর ডাস্টবিন, মানে হোটেলের পর এখানে পৌঁছে স্বর্গে এলাম মনে হচ্ছিল। স্টেশন থেকে হোটেল / ধর্মশালা (বৃন্দাবন) পৌঁছানোর আগে আমরা মথুরার কিছু দর্শনীয় স্থান দেখেই বৃন্দাবন এলাম। ধর্মশালাটা একটু ফাঁকা জায়গায় তাই রাত্রে একাএকা বেরোনোর সাহস দেখলাম না। পরদিন সকালে কাছের কিছু মন্দির ঘুরে দেখলাম (এখানে বাঁদরের বাঁদরামি একটু বেশিই, অবশ্যই স্থানীয়দের আসকারা পেয়ে, তবে সবাই চশমা, টুপি এসব পরে রাস্তায় না বেরোতে সাবধান করে দিয়েছিল) দুপুরে খেয়ে অটোয় করে বাকি দূরের মন্দির দেখতে গেলাম, এর মধ্যে কৃপালু মহারাজের তৈরি 'প্রেম মন্দির' দেখে চোখ জুড়িয়ে গিয়েছিল, বিশেষ করে রাত্রে মন্দিরের রঙ্গীন আলোর মুহুর্মুহু পরিবর্তন জায়গাটাকে একটা আলাদা মাত্রা দিচ্ছিল। তার আগে দেখে আসা স্বেত পাথরে মোড়া ISKCON-এর মন্দিরও এর সামনে নস্যি মনে হচ্ছিল। 'প্রেম মন্দির' থেকে কেউ বেরোতেই চাইছিল না, প্রায় টেনে টেনেই সবাইকে বের করতে হল। তবে রাত্রে আলোর মেলা যেভাবে আমাদের আচ্ছন্ন করে রেখেছিল, দিনের আলোতে মনে হয় না এতটা মাধুর্য পেত। যাই হোক বৃন্দাবন দর্শন শেষ করে আমরা শেষবারের মতো রাঘুনাথাশ্রমে ফিরলাম, পরদিন বেরতে বেরতে বেলা ৯টা বেজে গেল, কথা ছিল ৭টায় আগ্রার উদ্দেশ্যে বাস ছাড়া হবে কিন্তু বাঙালীকে কে কবে সময়ের শৃঙ্খলে বাঁধতে পেরেছে? যাই হোক আগ্রা পৌঁছাতে প্রায় ১২টা বেজে গেল। এখানে কোন থাকার ব্যবস্থা নেই, তাই ঠিক হল বাস স্ট্যান্ডেই রান্না হবে আর আমরা ঘোরা শেষ করে সোজা স্টেশনে চলে যাব, সন্ধ্যা ৬টায় ট্রেন। প্রথমে গেলাম তাজ দেখতে। বাহ্ ! তাজ, এতটাই এক্সসাইটেড ছিলাম যে একটাও ভালো স্ন্যাপ ক্যাপচার করতে পারলাম না। এটা হয়ত তাদের দুঃখটা অভিশাপে পরিণত হয়েছিল যাদের ফটো তুলে দেওয়ার অনুরোধ তীব্র ক্ষিপ্রতার সাথে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম, আসলে আমাকে পছন্দের ফ্রেমের জন্য প্রচুর দৌড়াতে হয়, এত কম সময়ে কুলায় না, তারওপর এইসব অনুরোধের আসর, তাজের ব্যাপারে এটা জাস্ট নিতে পারিনি। তাজের সামনে তনুরও একটাও ভালো ছবি তোলা হলো না, এটা সবচেয়ে বড় দুঃখ রয়ে গেল। তাজের মায়া কাটিয়ে গেলাম আগ্রার লালাকেল্লায়, এটা দিল্লীর থেকে বেশি ভালো লাগল, অনেক বেশি দেখার ছিল আগ্রার লালকেল্লায়। এই ২এর বেশি কিছু দেখা হল না, ৫টার মধ্যে স্টেশনে পৌঁছাতে হল, লালকেল্লার পাশেই স্টেশন, বেশি সময় লাগল না। বাকি থাকল ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করা, ১ঘন্টা দেরিতে উনি এলেন এবং সব মিলিয়ে ৩ঘন্টা দেরিতে আমাদের শিয়ালদহতে পৌঁছে দিলেন। সেখানে আমাদের বাস অপেক্ষায় ছিল, বাসে ৪ঘন্টা চেপে বাড়ি পৌঁছাতে প্রায় ১২টা ৩০মিঃ বেজে গেল।
এটাই মনে হয় আপাতত শেষ টুর ছিল, কারণ বাবা-মায়ের বয়স হয়েছে + কাছে আমি ছাড়া কেউ দেখার নেই তাই দায়িত্ব আমারই তাছাড়া একটা 'টাইনি হাউস' বানানোর ইচ্ছা আছে তার জন্যও টাকা জমাতে হবে। একটা 'কুইড' কেনার ইচ্ছাও আছে সাথে 'মেডিকেল এমার্জেন্সি'র জন্য একটা ফান্ড তৈরির ইচ্ছা আছে -সব মিলিয়ে ট্যুরকেই কোতল করার সিদ্ধান্ত নিলাম, এবার থেকে ঘর বন্দিই থাকতে হবে। আমি সাহিত্য করতে এসব লিখি না, এটা ডিজিটাল ডায়রি, যেটা নিজের জন্য লিখি তবে কিছু কাছের মানুষ পড়ে, যারা আমাকে চেনে। বুম্বাতো অসময়ে চলে গেল। মিস ইউ ...
1 note · View note
sd82sc · 6 years
Text
শুঁড়ি বনাম ব্রাহ্মণ
Tumblr media
কাঁথিতে মামাবাড়ী, সেই সূত্রেই আমার বয়স যখন ৬ কি ৭ হবে তখন আমরা কাঁথিতে পাকাপাকিভাবে চলে আসি। বাবার মুখে অনেকবার শুনেছি -দিদার অসুস্থতার কারণে মায়ের অনুরোধে বাবা কলকাতায় ট্রান্সফারের অফার ছেড়ে কাঁথি আসা ঠিক করেন।প্রথমে খড়কীতে ভট্টাচার্য্য জেঠুর বাড়ীর একতলায় ভাড়া থাকতাম, তখন নার্সারীতে পড়ি। পাড়ার ছেলেদের সাথে মেশার সুযোগ কম ছিল। সঙ্গী বলতে জেঠুর মেয়ে মৌ-দি আর পাশের বাড়ীর টুকটুকি & Co. তাই বাড়ীতে আত্মীয়-স্বজনরা এলে খুব ভালো লাগত। তবে জেঠুদের বিশাল বাগান সেখানে গাছেদের সাথে ভালোই সময় কেটে যেত। আমি আর ভাই স্কুলের গাড়ী ধরব বলে প্রতিদিন ‘শক্তি দিদিমনি’দের বাড়ীর বারান্দায় দাঁড়াতাম। সেখানে পাপাই আর বুম্বাও স্কুলে যাবে বলে দাঁড়াত। তবে আলাদা স্কুল তাই বিশেষ কথা হতো না। একটু বড় হতে বুম্বাদের বাড়ির সামনের মাঠে বিকালে যেতাম, তবে খেলতাম না, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের খেলা দেখতাম, হয়তো ওরা নিতো না -ঠিক মনে নেই। তারপর কবে থেকে কিভাবে ওদের সাথে মিশে গেলাম সেটা মনে নেই। তবে পাপাই প্রায় বলে “একটা ছেলের সাহস দেখে আমি আর বুম্বা অবাক হয়ে গিয়েছিলাম, ছেলেটা গরু���ে ভয় পায় না, উল্টে  গরুর গায়ে হাত বোলায়, তাই ওর সাথে বন্ধুত্ব করি।” -সেই ছেলেটা আমি। আমি আসলে গ্রাম থেকে আমদানী ছিলাম, ছোট থেকেই গ্রামের বাড়িতে গরুর সাথে ওঠা বসা তাই …। তারপর বাকিদের সাথেও বন্ধুত্ব হয়। তবে আমি গ্রামের ছেলে, বুদ্ধিতে বাকিদের থেকে কাঁচা তাই ওদের সাথে পুরোপুরি ওদের মতো করে মিশতে পারতাম না। তবে পাপাইয়ের সাথে প্রথম থেকেই বন্ধুত্বটা বেশ গাড়ই ছিল। পাপাইদের বাড়িতেই সব বন্ধুরা ভিড় করতাম। ওদের দোতলার বারান্দায় খেলতাম। আমি আবার দুপুর বেলায় হামলা করতাম। গ্রামে থাকার সময় ওটাই ছিল আমার শিকারের সময় -আম জাম পেয়ারা। পাপাইয়ের সাথে আমার টানের একটা বড় কারণ ছিল 'চাচা চৌধুরী' কমিক্স। পাপাই, কাকিমার সাথে বাজার গেলেই একটা করে কিনে আনত আর আমি বিনাপয়সায় ওর থেকে পড়ে নিতাম। নার্সারী পেরিয়ে হরিসভায় ঢুকলাম। এবার আমরা এক স্কুলে সুতরাং আরও একসাথে সময় কাটা শুরু হল। এই সময় আমার আর পাপাইয়ের ‘কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞান’ পত্রিকা দেখে ইলেক্ট্রনিক্স-এর 'নিজে করো’ একপ্রকার নেশায় পরিণত হয়েছিল। তখন আমাদের একমাত্র প্রিয় গন্তব্য -কুমুদিনী আর বাপিদার দোকান। আমি অবশ্য কিছুই বুঝতাম না, পত্রিকার মালিক ছিলাম আমি আর পাপাই সব করত, আমি শুধু সঙ্গ দিতাম। তবে সফল হলে আমারও খুব আনন্দ হত। এই সময় টানা কিছু বছর দুপুরগুলো এই নেশাতেই কেটেছে। পাপাইয়ের সাথে একসাথে ঘুমিয়েছি, একসাথে খেয়েছি, ওদের ঘরেই সারাদিন কাটাতাম। ঘরে ফিরতে প্রায়দিন রাত ১১টা বেজে যেত। যখন প্রথম প্রথম ল্যান্ডলাইন ফোন এসেছিলো তখন প্রায় প্রতি ঘন্টায় আমরা একে অপরকে কল করতাম -"কিরে স্নান হলো? কিরে খাওয়া হলো? কি খেলি আজ? কি করছিলি? কখন মাঠে যাবি?" এখন কথা বেশি হয় না, তবে ওর কল এলে ভালো লাগে কারণ পাপাই কল করেছে মানে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করেছে। আমি যতবার ঘুরতে গেছি তার সিংহভাগ পাপাইয়ের সাথেই। এরপর ক্লাস এইটে আমরা কজন দল বেঁধে হরিসভা ছেড়ে হাই স্কুলে ভর্তি হলাম এবারও আমি, পাপাই একসাথেই ছিলাম। স্কুলের বাইরে আমরা জুটিতে থাকলেও, স্কুলে আমি-পাপাই জুটিতে থাকতাম না। হরিসভায় আমার জুটি ছিল আদিত্য, হাই স্কুলে ছিল দিব্যেন্দু, কৃষ্ণায়ণ। মনে আছে মাধ্যমিকে আমি আর পাপাই এক রিক্সায় পরীক্ষা দিতে যেতাম। মাধ্যমিক দিয়ে পাপাইয়ের সাথে প্রথম কলকাতা গেছিলাম। ওর দিদির বাড়িতে ছিলাম। পরে রাজুদার সাথে দমদম বিমান বন্দর দেখে কাঁথি ফিরেছিলাম। আরও মনে আছে -আমার জুতো ছোট হয়ে গেছিল বলে পা ব্যথা করছিল, রাজুদা তখন নিজের নতুন জুতো আমাকে পরতে দিল আর আমারটা নিজে পরল। আমি অনেকবার পাপাইদের বাড়ি গুছিয়ে দিয়েছি -এটা আমার একটা রোগ। এরপর কিশোর বয়সের দোষে মেয়েদের প্রতি আমার অতিউৎসাহ আমার সাথে পাপাইয়ের বন্ধুত্ব ক্রমে দুর্বল করে দিল। উচ্চ মাধ্যমিকের সময় আমরা প্রায় আলাদা সময় কাটাতাম। অনেকবার আমার সাথে পাপাইয়ের বিভিন্ন কারণে ঝগড়া হয়, অবশ্যই দোষটা বেশিরভাগ সময় আমারই থাকত। ঝগড়া হয়ে মুখ দেখাও বন্ধ হয়েছে বহুকাল। এরপর পাপাইয়ের বাবা অকালে মারা গেলেন। তখন পাপাইদের ভীষণ খারাপ সময় গেছে। পাপাই পড়া বন্ধ করে কম্পিউটার ব্যবসায় নামে। চাকরী পেতে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। চাকরি পেয়ে পাপাই CBZ কেনে, বলাবাহুল্য ওটা আমার পছন্দ ছিল। SONY HiFi কেনে, সেটাও আমার পছন্দ ছিল এরপর বাড়ী সাজায় সেটাও আমার ডিজাইনে। মানে, আমি আমার শখগুলো পাপাইয়ের ওপর দিয়ে পূরণ করে নিতাম -বুম্বা এই কথাই বলতো সবসময়। একটা কথা না বললেই নয় একবার এগরা রাস্তায় পাপাইয়ের বাইকে চলন্ত অবস্থায় ড্রাইভার চেঞ্জ করেছিলাম। ব্যাপারটা বেশ লেগেছিল। তখন প্রায়ই বাইকে দুজনে ঘুরতে যেতাম। পাপাইয়ের ছোট থেকেই ক্যামেরা ছিল। চাকরি পাওয়ার পর প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরা (kodak 10x Zoom) কেনে, আমিও সঙ্গে গেছিলাম। পাপাই যখন প্রেম করতো তখন একদিন সন্ধ্যায় আমরা দুজনে বৈশাখীর বাড়ির দেওয়ালে কুকুরের ছবি মাড়িয়ে দিয়ে এসেছিলাম। বেশ অ্যাডভেঞ্চার হয়েছিল, কারণ বৈশাখীর বাবা খুব রাগী ছিলেন। পাপাই-বৈশাখীর বিয়েতে আমি যাইনি, রাগ করে নয় এমনি, তবে ওদের হনিমুনে ছিলাম।
এমনিতে আমি ব্রাহ্মণদের এড়িয়ে চলি কিন্তু পাপাইয়ের ব্যাপারে এটা আমার কখনও মনে হয়নি। ও আমাকে খুব পছন্দ করে। তাই আমি হাজার খারাপ ব্যবহার করলেও, ওকে দুঃখ দিলেও, ও আমাকে ছাড়া কোনো কাজ করে না। এমনকি আমার খারাপ লাগবে বুঝে অনেক কিছুই refuse করেছে ৷ যেদিন আমার কষ্টে পাপাইয়ের চোখে জল দেখেছিলাম সেদিন আমার প্রতি ওর প্রকৃত বন্ধুত্বর কথা বুঝতে পেরেছিলাম। সত্যি আমি ভাগ্যবান পাপাইয়ের মতো বন্ধু পেয়েছি। আর একজন তো আমাদের ছেড়ে অকালে চলে গেল। বুম্বা আমাদের বন্ধন ছিল, ও চলে যেতে আমরাও কেমন ছন্নছাড়া হয়ে গেলাম। পাপাইয়ের অনেক কিছু আমার সহ্য হয় না বিশেষ করে ওর লাইফ স্টাইল -সময় জ্ঞান, রাত করে ঘুমানো, দেরি করে ওঠা, নেশা করা৷ অস্বীকার করবো না- ও অনেকবার চেষ্টা করেছে নিজেকে চেঞ্জ করার কিন্তু আজ পর্যন্ত সফল হয়নি। আমার ধারণা- ও এই লাইফ স্টাইলে আভিজাত্য খুঁজে পায়, তাই ... হয়তো আমি ভুল, ভুল হলেই ভালো। সরাসরি বলতে লজ্জা লাগে তাই এখানে লিখে মনের বোঝা হালকা করি। কেউ পড়ে না তাই নিশ্চিন্তে মনের কথা লিখতে পারি।  
7 notes · View notes
sd82sc · 6 years
Text
মোহময়ী মুরগুমা
বেলা ১০টা: এত বেলা হয়ে গেল তবু ঘরে বসে TV দেখতে হচ্ছে৷ ঠিক আছে কথা যখন ১১টায় বেরোনোতে হয়েছে অগত্তা ... বেলা ১১টা: অবশেষে ফোন এল - "কি খবর?" শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল৷ যেখানে যাত্রা শুরু হয়ে যাওয়ার কথা সেখানে এই প্রশ্ন৷ তারপর বলল "আমি রেডি, ১০ মিনিটে বেরোচ্ছি৷" আমি বাঙালীর ১০ মিনিটের অপেক্ষা শুরু করলাম৷ ৩০ মিনিট পর আবার ফোন -"তুই আসবি না আমি যাব?" আবার মেজাজ খারাপ হল। বিরক্ত বললাম : "এদিক দিয়ে যাবি তো আমি আবার রোদে রোদে উল্টো পথে তোদের বাড়ি যাব কেন?" তারপরেও আমার বাড়ি আসতে ৩০মিনিট লেগে গেল। (মেয়ে ছাড়া অন্য কারোর জন্য অপেক্ষা করা আমার পছন্দ নয়)। এত দেরি করছে দেখে একবার মনে হয়েছিল 'যাব না' বলে দিই। বেলা১২ টা: অবশেষে যাত্রা শুরু হল। প্রথমেই তেল ট্যাঙ্ক ভর্তি করে ফেললাম। শুরুতে ছবি তুলব প্ল্যান করেছিলাম কিন্তু দেরীর জন্য মেজাজ হারিয়ে সব বন্ধ করে ব্যাগে ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম৷ এরপর ন্যাশান্যাল হাইওয়েতে ওঠার আগে একটা গ্যারেজে চাকায় হাওয়া ভরা হল। তারপর হাইওয়েতে ওঠার মুখে আবার একটা দোকানে হালকা হলাম কারণ এবার ���র তেমন দাঁড়ানো হবে না। হলও তাই প্রায় ৩ ঘন্টা টানা bike ride করে সোজা শালবনী পৌঁছালাম৷ ততক্ষণে আমার রাগ কমেছে৷ selfie stand বের করে ছবি তোলা শুরু করলাম৷ বাড়ি থেকে টিফিন বক্সে বয়ে আনা মাংসগুলোর গতি করলাম দুজনে৷ যাদের ইচ্ছে ছিল কিন্তু আসতে পারেনি তাদের ফোন করে জ্বালালাম, এই করে ৩০ মিনিট কাটল৷ চন্দ্রকোণা রোড পৌঁছে আবার তেল ট্যাঙ্ক ভর্তি করা হল, মাইলেজ বোঝার জন্য। হিসাব করতে দেখা গেল ৪৪কিমি/লিঃ যাচ্ছে৷ ভাবাই যায় না, Royal Enfield 350 এত মাইলেজ পেয়ে দুজনেই অবাক হলাম। তবে বাইকের গতিবেগ কখনই ৮০কিমি/ঘন্টার বেশী ওঠায়নি। রোডে আমার wife-এর সাথে দেখা হল৷ ও আমাদের জন্য খাবার এনেছিল৷ এরপর হোটেল ম্যাডোনার কাছের rail crossing-এ আবার দাঁড়াল, রোড থেকে বেশী দূরে নয়। ওখানে ও cigarette break নিল। দেরী হচ্ছে বুঝে এরপর টানা বাইক চালিয়ে বাঁকুড়ার প্রান্তে দুর্গাপুর মোড়ে পৌঁছে বিশ্রাম নিলাম৷ কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর আবার চলা শুরু। রাস্তার যত প্রশংসা করা যায় তত কম৷ এতটা ভালো হবে আশা করিনি। কিন্তু অনেকক্ষণ বসে থাকার ফলে পশ্চাৎপ্রদেশের অবস্থা সঙ্গীন ছিল। পড়ন্ত বিকেল, মাঝ রাস্তায় সূর্যাস্ত দেখলাম৷ সন্ধ্যায় ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করতে একটু ভয় ভয় করছিল৷ ভাগ্যক্রমে একটু পরেই পুরুলিয়া শহরে ঢুকে পড়লাম। ট্রাফিক জ্যামে হোটেল পৌঁছাতে একটু সময় লাগল, তবে হোটেল খুঁজে পেতে g০ogle map অনেক সাহায্য করেছে আমাদের। রুমে যখন ঢুকলাম তখন সন্ধ্যা ৭টা ৪৫মি বেজে গেছে৷ fresh হয়ে বিশ্রাম নিয়ে বাইরে ঘুরতে বেরোলাম। অাশেপাশে খাবার সস্তা হোটেল (সস্তা: সৌজন্যে আমি) অনেক খুঁজে বাস স্ট্যান্ডের কাছে একটা ধাবাতে দুজনে রুটি তড়কা খেলাম৷ খাবার quality ভালোই তবে মাথাটা ধরে ছিল, তাই বেশী খেতে পারলাম না। হোটেলের non AC room-টা অন্যজনের প্রথম থেকেই পছন্দ ছিল না-যেটা আমার মাথা ব্যাথার কারণ। কিন্তু খেয়ে ফেরার পর room-টা আমারও ভালো লাগল না, যদিও চাইছিলাম রাস্তার ধারে nonAC room কিন্তু AC room-ই নিতে হল শেষ পর্যন্ত, ভাগ্যের কি পরিহাস, হোটেলে আমাদের ভরসা করতে পারেনি আমরা রুম ভাড়া দিতে পারব। শেষে advance-এ ৫০০-টাকা দিতে হল। ঠান্ডায় রাতটা ভালোই কাটল, কিন্তু সকালটা room বন্দী থেকে bore হলাম। স্নান সেরে হোটেল ছাড়তে বেলা ১২টা গড়াল। ঠিক হল হোটেল ছেড়ে দেব এখন, মুরগুমায় পাহাড়ের কাছাকাছি থাকার সুযোগ না হলে আবার ফিরে আসব। এবার বেশী দূর যেতে হল না, কিন্তু এতদূর এসেও পাহাড়ের দর্শন এখনও পাইনি বলে সবে আফসোস করেছি অমনি দূরে আবছা আবছা পাহাড়ের মাথা দেখতে পেয়ে আমাদের কি আনন্দ৷ এবার প্রথমেই খোঁজ শুরু হল থাকার ব্যবস্থার৷ ক্যাম্প ভর্তি, অগত্যা ওদেরই জিজ্ঞাসা করা হল, আশেপাশে আর কোন ব্যবস্থা করা যায় নাকি? ব্যবস্থা হল- homestay. বাহ! আমার অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল, TV-তে দেখতাম ট্রাভেলাররা স্থানীয়দের বাড়িতে ওদের মত করে রাত্রি যাপন করে৷ বাড়িঘর দেখে অযোধ্যা পাহাড় চসে বেড়াতে শুরু করলাম৷ নিজেদের bike তাই বাধাহীনভাবে যত খুশি ঘুরলাম৷ রুক্ষ কিন্তু রুক্ষ নয়, প্রকৃতির সেই সৌন্দর্য অবর্ণনীয়, সেটা সেখানে উপস্থিত থেকেই একমাত্র উপভোগ করা যায়। আমরা বেলা ১১-১২-টার দিকে পাহাড়ে ওঠা শুরু করেছিলাম। শুধু ওঠা নয়, জায়গাটা অনেকগুলো পাহাড়ের hub বলা যেতে পারে, উচ্চতা খুব বেশী নয়৷ রাস্তাটা উঠছে নামছে, দূরের দৃশ্য দেখে মালভূমিই মনে হবে, তবে গাছের সমাগমে এক অন্য মাত্রা এনে দিয়েছিল৷ কয়েকটা দৃশ্য আমার ইউরোপের ঘাসে মোড়া গালিচার মত লেগেছিল৷ আমরা বারবার থেমে প্রকৃতির মজা নিচ্ছিলাম, উড়তে না পারলেও আনন্দে ভাসছিলাম আমরা। একদিকে এতটা পথ দুজনে bike-এ আসার আনন্দ অন্যদিকে দুচোখ জোড়ানো প্রকৃতি, সাথে সহজ সরল কর্মঠ মানুষগুলো৷ দুপুর, তাই চারপাশ ফাঁকা, তবে গরম তেমন নেই৷ আসলে কালবৈশাখীর প্রভাবে মেঘ আর রোদের খেলা চলছে৷ আমরা মার্বেল লেকের খোঁজে একে তাকে জিজ্ঞাসা করে এগোচ্ছিলাম। আমি কিন্তু নতুন জায়গায় আসতে পেরেই যারপর নাই খুশি। পাহাড়, জঙ্গল দুটোই আমার প্রিয় তার ওপর নির্জনতা আর bike riding অতিরিক্ত মাত্রা এনে দিয়েছিল৷ ছবি তোলা আমার একটা নেশা তাই যত বেশী করে পারছি সবকিছু ক্যামেরা বন্দী করে রাখছি, তবে মোবাইল ক্যামেরা, আসলে বড় ক্যামেরায় চটজলদি ছবি তোলা দুষ্কর ব্যাপার। অনেকটা পথ পেরিয়ে মার্বেল লেক আবিষ্কার করলাম, signal-এর অভাবে g০ogle map কাজ করছিল না৷ অচেনা পথ শেষ হচ্ছে না দেখে বারবার মনে হচ্ছিল ভুল পথে যাচ্ছি৷ অনেক কষ্টে খুঁজে পাওয়ার আনন্দ সাথে প্রথমবার লেকটা উপর থেকে দেখে মোহিত হয়ে গেছিলাম৷ ওখানে পর্যটকের ভীড় ছিল। দূরে অযোধ্যা পাহাড়ের ড্যাম দেখা যাচ্ছিল৷ যাই হোক উপর থেকে মনের সুখ মিটিয়ে ছবি তুললাম। এরপর নীচে নেমে কাছ থেকে লেকটা দেখলাম৷ কিছুক্ষণ পর বেশ কালো করে মেঘ ধরতে বাকি পর্যটকরা সবাই চলে গেল কিন্তু আমরা নির্জনতায় লেকটা উপভোগ করলাম, কিন্তু তাতে বাধ সাধল দুটো একটা বৃষ্টির ফোঁটা। ক্যামেরা মোবাইল ভিজে নষ্ট হওয়ার ভয়ে আমরাও মুরগুমা ফেরা ঠিক করলাম৷ কিন্তু এত কাছে এসে অযোধ্যার বিখ্যাত ঝর্ণা না দেখে ফিরে যাব, মনটা খারাপ হয়ে গেল কারণ আগের বারে এসেও ঝর্না দেখা হয়নি, এবারেও হবে না। আমার বাংলার ৫-এর মত মুখ দেখে বোধ হয় অন্যজনের দয়া হল তাই ঠিক হল যা হয় হোক একবার দেখেই আসি। বেশী যেতে হল না, ঝর্নার কাছে পৌঁছে ঠিক হল আগে কিছু খাব, সারাদিন কিছু খাওয়া হয়নি৷ ২-৩টা চায়ের দোকান তারই একটায় ২-জনে ৪টা ডিম সিদ্ধ আর ২-ঠোঙ্গা মুড়ি খেলাম। এর মধ্যে আবহাওয়ার আরও অবনতি হয়েছে৷ ঝড়ো হাওয়া সাথে প্রচণ্ড আওয়াজের বাজ পড়া শুরু হয়েছে। আমি তাড়াহুড়ো করে ঝর্ণা দেখতে ছুটলাম কিন্তু ৩০০সিঁড়ি বেয়ে নামতে হবে৷ অন্যজন বাধা দিল, বৃষ্টি হলে কাদা হয়ে পাহাড়ী রাস্তা ভয়ঙ্কর হবে৷ অগত্যা ঝর্ণা দেখার মায়া ত্যাগ করে উল্টো পথ ধরে মুরগুমা ফেরা শুরু করলাম। অবাক কাণ্ড যত যাচ্ছি তত আকাশ পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে৷ ভাগ্যক্রমে আমাদের আর ভিজতে হয়নি। ফিরতে ফিরতে অন্যজন চাপ দেওয়া শুরু করল আজই বাড়ি ফেরার জন্য, max রাত ২টা বাজবে৷ আমার মন খারাপ হয়ে গেল- কত দিনের স্বপ্ন ছিল homestay করার, সুযোগ এসেও হাতছাড়া হবে৷ হালকা কথা কাটাকাটির পর আজ বাড়ি ফেরার plan drop করা হল৷ তাই হাতে অনেক সময় পেলাম। বিকাল বিকাল homestay-তে না ফিরে ড্যামের কাছে ছবি তুলে সময় কাটালাম। সন্ধ্যায় homestay-তে এলাম৷ ব্যবস্থা মোটেও মন্দ নয়৷ আমরা দোতলায় একটা রুমে গেলাম, সামনে বড় বারান্দা। আমরা ফ্রেস হয়ে একটু শুলাম৷ বারবার loadshadding হচ্ছিল, তবে নিম্নচাপের কারণে তেমন গরম লাগছিল না। একটু বিশ্রাম নেওয়ার পর হালকা টিকিন করে দুজনে ড্যামের দিকে হাঁটা দিলাম। চাঁদের আলোয় ফুরফুরে হাওয়াতে সাথে মোবাইলে হালকা রবীন্দ্রসঙ্গীত ... উফ! just হারিয়ে গেছিলাম৷ আরও ২-১ জন বন্ধু সঙ্গে থাকলে মজাটা double হয়ে যেত, উপায়ান্তে মোবাইলেই ওদের সাথে কথা হল। ৮টার দিকে ফিরে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম। সারাদিনের ক্লান্তিতে ঘুমটা ভালোই হল। আমার আবার তাড়াতাড়ি ওঠার বদঅভ্যাস, মালিককে বলে বাড়ির ছাদে উঠে চারপাশটা ভালো করে দেখে ছবিও তুললাম। এরপর প্রাতঃরাসে লুচি ডাল খেয়ে স্নান করে দুপুর ১টার দিকে মাছ ভাত খেয়ে বেরাতে বেরাতে ১:৩০ বাজল৷ পুরো journey-টা অন্যজনই চালিয়েছে। ফেরার সময় ক্লান্তিতে আর কিছু করার উৎসাহ ছিল না। চন্দ্রকোনা রোড-এ tea break দিতে সবে থেমেছি, সাথে সাথে কাল বৈশাখীর তাণ্ডব শুরু হল। আশা করেছিলাম ১ঘন্টার মধ্যে বৃষ্টি থেমে যাবে, কিন্তু তা হল না৷ এই দুর্যোগের অন্ধকারে বাকি ১৫০কিমি যাওয়ার বোকামী করলাম না৷ কাছেই শকুন্তলা হোটেলে রাতটা কাটালাম। পরের দিন extra ১টা CL নিতেই হল৷ পরের দিন বাড়ি ফিরতে ফিরতে বিকাল গড়িয়ে গেছিল৷ দুজনে bike-এ প্রায় ৭০০ কিমির journey সেরে অক্���ত ফিরতে পেরে নিজেদের ভাগ্যবান মনে করছিলাম ৷৷
1 note · View note
sd82sc · 7 years
Audio
5 notes · View notes
sd82sc · 7 years
Photo
Tumblr media
এলো, জয় করল, চলে গেল ...
অন্য বন্ধুদের তুলনায় একমাত্র বুম্বাই শত ব্যস্ততার মধ্যেও আমাকে সবচেয়ে বেশী সময় দিত তাছাড়া একমাত্র ওর সাথেই আমি সেই স্কুল লাইফের বন্ধুর মতোই মিশতে পারতাম তাই ওর সঙ্গ খুব উপভোগ করতাম। সেই বুম্বাই আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেল। 
3 notes · View notes
sd82sc · 7 years
Photo
Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media
রাজকীয় রাজস্থান
অনেক বাধা বিপত্তি পেরিয়ে অবশেষে কাঁথি থেকে রবিবারের পুরীর ট্রেন ধরে খড়্গপুর এলাম ওখান থেকেই রাত ১০টা ৫০শে চিত্তরগড়ের ট্রেন। পুরীর ট্রেনে ওঠার পর ঝামেলা হল। আমরা কয়েকজন জেনারেল কামরায় ভিড় দেখে স্লীপার কোচে উঠেছিলাম, ভেবেছিলাম খড়্গপুরের আগে টিটিই (ট্রাভেলিং টিকেট এক্সামিনার)  উঠবে না। কিন্তু কাঁথি ছাড়ার পরে পরেই ব্যাটা হাজির। অগত্যা ফাইনের ভয়ে যে যার তল্পিতল্পা গুটিয়ে জেনারেল কামরার দিকে প্রস্থান শুরু করলাম। এতে অনেকেই বাবুদার ওপর রেগে খাপ্পা- "KGP পর্যন্ত রিজার্ভ টিকিটই কাটতে পারত।" ইত্যাদি ইত্যাদি, যাই হোক কেউ কেউ ফাইন দিয়ে নিস্তার পেলেও আমরা জেনারেল কামরায় চলে গেছিলাম। যথাসময়ে চিত্তরের ট্রেনে বসলাম আমাদের সাথে গতবারের দুজন মাত্র সঙ্গী ছিল, বাকিরা অন্য কামরায়। ট্রেনে আমার পছন্দের সাইডবার্থ না পেলেও ভিড় কম থাকায় জানালার জন্য বিশেষ অভিযোগ ছিল না। 
দু-রাত ট্রেনে কাটিয়ে ভোরে সময়ের কিছু আগেই গন্তব্যে পৌঁছালাম। বাস আমাদের জন্য অপেক্ষায় ছিল। স্টেশন থেকে সোজা গেলাম হোটেলে, সেখানে সবাই ফ্রেস হয়ে তেলে ভাজা সহযোগে পেট পুজো করে অটোতে করে বেরোলাম চিত্তরগড় (হোটেল আসিয়ানা -৯৫০৯৫৮৯৭৭৭, ৯৬০২৭৪০৪৫৬) দুর্গ দেখতে। গোটা পাহাড় ঘিরে বিশাল দুর্গ। প্রধান প্রধান কিছু দ্রষ্টব্য দেখলাম। আমি সামান্য সময়ের গণ্ডিতেই দৌড়ে দৌড়ে নিজের মতো করে ফটো তুললাম, মোবাইলেই।  নাহঃ আগের বারের মতো আর ভুল করিনি- বড়ো ক্যামেরায় এত তাড়াহুড়োয় ছবি তোলা আমার পক্ষ্যে দুস্কর। পরিষ্কার আকাশ তাই বেশ উঠছিল ফটোগুলো। চিত্তোরগড়ে বিজয় স্তম্ভ, কুন্ড, মন্দির আর পাহাড় থেকে পুরো শহরটা দেখে দারুণ লাগল। সেখান থেকে হোটেলে ফিরে দুপুরের খাওয়া সারলাম। তারপর সব গুছিয়ে বাসে করে উদয়পুরের জন্য যাত্রা শুরু করতে করতে ২টা বাজল। বলা হয়নি আমরা কাঁথির লাহা ড্রেসেসের বাবুদের সাথে ৬০জনের গ্রূপে ঘুরতে এসেছি। এর মধ্যে হারুর নেতৃত্বে ৫জন শুধু রান্নার জন্য। হারুদের সাথে গতবারে দক্ষিণ ভারত বেড়াতে গিয়ে চেনা। পুজোর পর, তাই গরম ৩৮°C -এর কাছাকাছি ছিল, সহ্য করতে অসুবিধা হয়নি কিন্তু আদ্রতা ছিল ভয়ানক কম। যেটা আমারদের অসুবিধের কারণ হয়েছিল, বিশেষ করে বেশ কিছু বাচ্চা ছিল তাদের কষ্ট হচ্ছিলো। চিত্তোর থেকে বাসে উদয়পুর (সাগর প্যালেস -৯৪১৩৪৭৯৩০৪, ৯৪৬০০৮৪৪৮৭) পৌঁছতে পৌঁছতে বিকাল হয়ে গেল। হোটেলে পৌঁছতে আরও কিছু সময় গেল। এতো জনের মধ্যে রুম পেতে আরও কিছু সময় গেল। সেদিন আর বেরোলাম না। পরেরদিন সকালে বাসে করে ফতে সাগর লেক, গার্ডেন, মন্দির শেষে মিউজিয়াম বলে দোকানে ঢুকিয়ে দিল। ঘুরতে গিয়ে কেনাকাটা করা আমার দু চোখের বিষ, দোকানে আবার ফটো তোলাও নিষেধ অগত্যা বাসে ফিরে এলাম। দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে নিজেরাই অটো করে সিটি প্যালেস দেখতে গেলাম। প্যালেসের বিশালতায় যুগপথে অবাক এবং আনন্দিত উভয়ই হলাম। ৩৩০টাকা জন প্রতি দিতে হলেও প্যালেস দেখার পর যথার্থ মূল্য বলেই মনে হল। মনের সুখ মিটিয়ে ফটো তুললাম। প্যালেসের পিছন দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে যখন রাস্তা চিনতে পারবো বলে ফিরে ঢুকতে যাচ্ছি গার্ড আটকালো- টিকিট? উপস! সেট বৌয়ের কাছে, আমি তো ছবি তোলার নেশায় একই মোবাইল হাতে ঘুরছি। সঙ্গে সঙ্গে ফিরছিলাম বলে গার্ড চিনতে পেরে ছেড়ে দিলো। এতো ভালো লেগেছিলো প্যালেসটা সেখান থেকে তাড়িয়ে দিতে তবেই বেরোলাম। সন্ধ্যায় লাইট সাউন্ড শো হয় তার আলাদা টিকিট তাই তাড়িয়ে দিলো। ততক্ষনে দেখে, ছবি তুলে, লনে শুয়ে বসে বেশ এনজয় করেছি। সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরে বউ স্ট্রিট-ফুড খাবে বায়না ধরল, ঘুরতে এসে রুমে সময় কাটাতে কার ভালো লাগে তাই আমরা হোটেলে না ঢুকে কাছের বাজারে গেলাম। রাস্তায় টিফিন করে কিছু ফাস্ট ফুড কিনে রাত করে হোটেলে ফিরে ডিনার করে শুয়ে পড়লাম কারণ কাল ভোরে উঠে রেডি হতে হবে। নেক্সট গন্তব্য মাউন্ট আবু। মাউন্ট আবু যাওয়ার পথে হলদিঘাটিতে মহরানা প্রতাপের মিউজিয়াম দেখলাম। সেখানেই নির্মীয়মান একটা হোটেলে আমরা দুপুরের খাওয়া সারলাম। তারপর আরাবল্লীর পাহাড়ের সারি দেখে আমার মন যারপর ন্যায় খুশি হল। পাহাড় আমার সবসময়ের প্রিয়। সত্যি! পারলে বাকি জীবন জোড়া পাহাড় জড়িয়ে কাটিয়ে দেই। যাই হোক পাহাড় শুরু হতেই আবহাওয়াও ঠান্ডা ঠান্ডা হয়ে গেল। অনেকটা পথ। পাহাড়ে ওঠা শুরুর আগে বাস থামলো, সবাই নেমে হাত-পা ছাড়িয়ে নিল। আবুতে (হোটেল মুলজিস্ -৯৪১৪৩০১১৩৬, ২৯৭৪২৩৮৭৩৮) হোটেলে পৌঁছাতে বিকেল হয়ে গেল। সন্ধ্যায় আমরা আলাদা করে কাছের লেক দেখতে গেলাম। সূর্য্য ডোবার পর এখানে বেশ ঠান্ডা লাগছিল। লেকের চারপাশটা ঘুরে বাজার হয়ে ফিরছিলাম উইন্ডো শপিং করতে করতে হঠাৎ ডমিনো'স পিৎজা দেখে লোভ সামলাতে পারলাম না। তার ওপর সেদিন লক্ষ্মী পূজার জন্য রাত্রের খাবার লুচি হচ্ছিল, তেলে ভাজা আমার পছন্দ নয়, সেটা একটা কারণ + কোনদিন পিৎজা দেখিনি তাই ... হেঃ হেঃ ছোট সাইজের তার ওপর মাংস বাদ, তাতেই ২৫০টাকা পড়ে গেল। :o ফেরার পথে বউ একটা কানের দুল কিনল, আমাজানের থেকে কম দাম পড়ল। পরের দিন সকালে ৫টা জিপে করে আবু দর্শনে বেরোলাম। সিটের কাড়াকাড়িতে আমি ব্রত স্যারদের জিপে জায়গা পেলাম। কাঁথিতে এতদিন এক জায়গায় থাকি কিন্তু ইন্ট্রোভার্ট স্বভাবের জন্য স্যারেদের সাথে কথা হতো না, সেদিন প্রথম কথা বললাম, লজ্জা লাগেছিল। স্যারের বাচ্চাদের আমার খুব ভালো লাগত, সত্যি বলতে কি গ্রূপে ৪টা বাচ্চা মেয়ে বাদ দিলে বাকিগুলো চৌবাচ্চা, স্যারের ছোট মেয়ে এদের মধ্যে বেস্ট। পাহাড়ের ওপর প্রায় মন্দির, অনেক সিঁড়ি ভেঙ্গে উঠতে হচ্ছিল। এখানে বৌ রাজস্থানী পোশাক পরে ছবি তোলার বায়না করল, ৫০টাকা পড়ল! যাকগে একটা স্মৃতি থাকল। আমার শ্বাসের সমস্যা হয় মাঝে মাঝে, তো পাহাড়ে মন্দিরগুলো দেখতে যাওয়ার সময় আমি প্রায় দৌড়ে দৌড়ে ওপরে উঠছিলাম, প্রতিবার কিছুদূর যাওয়ার পর ভীষণ শ্বাস কষ্ট হচ্ছিলো, দম বন্ধ হয়ে আসছিল। এখন মনে হচ্ছে আমার লাফিয়ে লাফিয়ে সিঁড়ি ভেঙে ওঠা উচিত হয়নি। জিপে করে আবু ঘুরে আসতে দুপুর গড়িয়ে গেল। ফিরে দুপুরের খাওয়া সেরে একটু বিশ্রাম নিয়ে নিজেরা কাছের লেকে ঘুরতে গেলাম। তারপর জিপে করে sunset point গেলাম। সেখানে সূর্যাস্ত দেখে আবার লেকের ধারে সময় কাটালাম। ওহ হাঁ, প্রথমদিন রাত্রে লেক থেকে ফেরার সময় অন্ধকারে ভুল রাস্তায় চলে গেছিলাম তারপর আবার উল্টো পথে বাজার পর্যন্ত আসতে রাস্তা চিনতে পারলাম। আমরা দুজনে এক ছিলাম আবার হোটেলের কার্ড নিতে + নামটাও জানতে ভুলে গেছিলাম, তাই একটু ভয় পেয়েছিলাম। যাই হোক পরেরদিন সকাল সকাল যোধপুরের জন্য রওনা দিলাম। ৭টায় বলা থাকলেও বাঙালির ঐতিহ্য অনুযায়ী সেটা ৮টা হল, ড্রাইভার বেশ ক্ষুন্ন হয়েছিল। যোধপুরে (হোটেল অক্ষয় -৯৪১৪৪১৯৪০৫, ৯৯২৮০১৯৪০৫) ঢুকতে ঢুকতে দুপুর হয়ে গেছিল। রাস্তায় আমরা দুপুরের খাওয়া সেরে নিয়েছিলাম যেটা আবুতেই রান্না সারা ছিল। ট্রাফিক জ্যামে পড়ে মেহেরগড় দুর্গে পৌঁছাতে দেরি হয়ে গেল। সেখান থেকে উমেদ ভবন প্যালেস দেখতে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু দুর্গ দেখতে দেখতেই এতো দেরি হয়ে গেল যে সেদিন আর উমেদ ভবন দেখা হল না। এখানে আমি একা একা ফটো তুলতে গিয়ে আবার হারিয়ে গেছিলাম। তখন একটু ভয় লাগছিলো যে- গ্রূপের বাকিরা কথা শোনাবে আমার জন্য দেরি হলো বলে। যাই হোক সেটা হয়নি বরং বাকিরা বেরোনোর অনেক আগেই আমি বাসের কাছে পৌঁছে গেছিলাম। এখানে একটা মজার ঘটনা ঘটেছিল। আমরা দুজনে যখন মেহেরগড় দূর্গা থেকে বেরচ্ছি ঠিক তখনই প্রধান ফটকের নিচে একজন হঠাৎ বাংলায় আমাদের ডাকলো তাই আমরা গ্রূপের কেউ ভেবে ওনার দিকে ঘুরে অবাক, উনি তবলা জাতীয় কিছু নিয়ে বসে আছেন একজন রাজস্থানী। ভদ্রতার খাতিরে কাছে গেলাম যেতেই উনি ইশারায় তনুকে পাশে ��সতে বলে বাংলায় গান গাওয়া শুরু করলেন। বন্ধু তিন দিন ... দিয়ে শুরু করতে আমার মনটাও খুশিতে ভরে গেল। ফেরার সময় ৫০টাকা দিতে খুশি হলেন কিন্তু আমার মনে হয় তিনি খুশি হওয়ার অভিনয় করেছিলেন কারণ তিনি কাছের থালায় ১০০টাকার নোট show করিয়ে রেখেছিলেন। হয়তো বা কোনো বাঙালির কাছ থেকে ৫০টাকাও আশা করেননি তাই অবাক হয়ে খুশিই হয়েছিলেন। :D সেখান থেকে সোজা হোটেল গেলাম। একটা কথা বলতে ভুলে গেছি। মেহেরগড়ে আমার সাথে গ্রূপের সাথে মনোমালিন্য হয়েছিল। এখানে মাতব্বর মাস্টারদের ২০জনের গ্রূপ (আমাদের সাথেই ছিল) তারা কারও অনুমতি না নিয়েই নিজেরা সবার জন্য গাইড ঠিক করে ফেলল। যেটা আমার একেবারেই পছন্দ হয়নি। নিজেদের পছন্দ অপরের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া। আমার ঘুরতে বেরোনোর একমাত্র কারণ হচ্ছে ফোটোগ্রাফি, স্থানীয় গাইডের পক্ষপাদুষ্ট গালগল্প শোনাতে আমার কোনো রুচি নেই, নগদ পয়সা খরচ করেও না, ফ্রীতেও না। আমার ইতিহাস জানার ইচ্ছে হলে ইতিহাস বই পড়ে জানব। তাই সরাসরি বিরোধিতা না করে গাইডের শেয়ারটা খুচরো কয়েনে দিয়েছিলাম। কিন্তু বলে না- দশ চক্রে ভগবান ভুত ... ওদের সংখ্যা বেশি ছিল তাই বাসের মধ্যে আমরা হাসির পাত্র হলাম। :( পরেরদিন ভোর থেকেই রেডি হয়ে বাসে করে সবাই বেরিয়ে পড়লাম। উদ্দেশ্য জয়সলমীর (হোটেল সোহানদীপ -৯৮২৮২৫২৫২৭, ৯৪৬২৮৩৫৫৯২) মানে সোনার কেল্লার দেশে। জয়সলমীরে সোনার কেল্লার সামনেই হোটেলে ছিলাম। হোটেলে মালপত্র রেখেই আমি বাইর থেকে সোনার কেল্লার চারপাশটা দেখতে একই চলে গেছিলাম। ঘুরলাম, ছবি তুললাম। তারপর হোটেলে ফ্রেশ হয়ে রাত্রের আলোতে সোনার কেল্লা দেখতে আবার একাই মোবাইল হাতে চলে গেলাম। সুনসান বলে ভয় লাগছিল, সবাই বারণও করছিলো কিন্তু রাতের আলোতে সোনার কেল্লা দেখার লোভ সামলাতে পারিনি, তবে কোনো অসুবিধা হয়নি। পরেরদিন সবাই যে যার মতো করে কেল্লার ভিতর দেখতে গেলাম। আমরা দুজন সকাল সকাল গেলাম বেশি সময় ধরে দেখবো বলে। দেখলাম, এতক্ষন দেখা সব কেল্লার মধ্যে এটা সবচেয়ে নোংরা এবং অগোছালো কেল্লা। এর প্রধান কারণ এর কোন প্রবেশ মূল্য নেই, (ভেতরে ২-৩টা ভবন মানে মিউজিয়াম বাদ দিলে) সাথে এর মধ্যে সাধারণ লোকজন বসবাস করে, সম্ভবত রাজার আমলের বংশধরেরা। যাই হোক ভিতরে বেশিক্ষণ থাকিনি। বাইরে প্রধান ফটকের সামনে সময় নিয়ে মনের সুখে আমার পছন্দের ফটোস্ফেয়ার তুললাম। তারপর বৌয়ের বায়না রাখতে আইসক্রিম, সবেদা কিনে হোটেল ফিরলাম। সেদিন দুপুরে খাওয়া দাওয়া করেই বেরিয়ে পড়েছিলাম থর মরুভূমির স্যাম ডুনসের উদ্দেশ্যে।  সেখানে তাঁবুতে থাকা হবে আজ রাত। আর উটের পিঠে চাপার জন্য অতিরিক্ত ৪০০টাকা জন প্রতি নিল আমাদের ম্যানেজার। বিকালে যথাস্থানে পৌঁছে উটের পিঠে চড়লাম, তনু (বউ) তো উঠতেই চাইছিল না, আমি জোর করেই ওঠালাম। পড়ে যাওয়ার ভয়ে উঠেই নেমে যেতে চাইছিল। যাই হোক প্রায় ১০-১৫মিনিট  উটের পিঠে গেলাম। বালিয়াড়িতে পৌঁছে ছবি তুললাম, দুঃখের বিষয় উটের পিঠে আমাদের কোনো ছবি নেই। লজ্জায় কাউকে request করিনি। সেখানে সূর্যাস্ত দেখে তাঁবুতে গেলাম। দারুন আয়োজন, দেখে মন খুশিতে ভোরে গেল। আমরা ৩৩-নম্বর তাঁবুতে রাত কাটালাম। শুনতেই তাঁবু কিন্তু ভিতরে সব সুযোগ সুবিধা ছিল। মালপত্র রেখে স্টেজে নাচ গান শুনতে গেলাম সবাই। শেষে ট্যুরিস্টদেরও স্টেজে নামিয়ে নাচতে অনুরোধ করছিলো, আমরা দুজনে তাতে সাড়া দেইনি। রাত্রে রাজকীয় ছাগল মাংস খেয়ে বালির ওপর অনেকক্ষণ হাঁটা-চলা করলাম, আড্ডা মারলাম। মাঝ রাত্রে শেয়ালের ডাকে ঘুম ভেঙে গেছিল। আসলে তাঁবুর সব ধার ভাল করে floor অব্দি টাইট করে বাঁধা ছিল না তাই, আর উফ! কি মশা। সকালে আবার বাসে বিকানীরের জন্য যাত্রা শুরু, প্রায় ৪৫০কিমি। পৌঁছাতে প্রায় ১২ঘন্টা লাগলো। মাঝে করনি মাতার মন্দির দেখলাম, যদিও ক্লান্তিতে কারোর ইচ্ছা ছিল না কোনো মন্দির দেখার। সবাই চাইছিল হোটেলে বিশ্রাম নিতে। আসলে করনি মাতার মন্দির খুব বিখ্যাত ইঁদুরের জন্য, তাই ওটা বাদ দেওয়ার উপায় ছিল না। মাঝে একজন অসুস্থ হয়ে পড়েছিল, রাস্তাতেই ডাক্তার দেখানো হল। করনী মাতার মন্দির দেখে সোজা বিকানির (বাবু প্যালেস -৯৪১৪১৩৭৮৬৪, ১৫১২৫৩০৭৮৬) হোটেল। বেশ বড় হোটেল, এই হোটেলে ২টো ব্যাপার আমার দারুণ লেগেছিল -১) সামনেই বিশাল লন ছিল, ২) হোটেলটার কিছু রুম প্রায় স্টেশনের ভিতরে ঢুকে গেছিল। স্নান করে বয়ে আনা খাবার খেয়ে লনের ভিড়ের দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বসেছিলাম, কখন ফাঁকা হয়। বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা মেরে যখন সবাই যে যার রুমে চলে গেল তখন আমরা গিয়ে লনটা কব্জা করলাম। ঠিক মনে নেই তবে বেশ কয়েক ঘন্টা আমি খালি পায়ে লনের ওপর পায়চারি করলাম, বসলাম, শুতে ইচ্ছে করছিলো কিন্তু অন্ধকারে নোংরা থাকবে ভেবে risk নিলাম না। রাত্রে খেতে একটু দেরি হল। বিকানিরের জুনাগড় দুর্গে সকালে টিফিন করেই পৌঁছে গেলাম। সত্যি বলতে কি দুর্গ দেখে দেখে এবার একটু বোরিংই লাগতে শুরু করল। যাই হোক টিকিট কিনে ভিতরে ঢুকলাম। এখানে টিকিটের সাথেই গাইড ফ্রি কিন্তু আমি এক একই আবিষ্কার করে নিজের মতো হারিয়ে গেলাম। এতো সকালে পৌঁছে গেছি যে তখন দুর্গ খোলা চলছে। ফাঁকা তাই মনের সুখে সময় নিয়ে ছবি তুললাম। ভিতরটা পুরো ঘুরতে বেশি সময় লাগলো  না। তারপর বাইরে এসে দুর্গের পিছন দিকে গেলাম যেদিকে কেউ যায় না। যদি কেউ আটকে তাই একটু ভয়ে ভয়েই গেলাম, দেখলাম ফাঁকা আটকাবার কেউ নেই। তবু বেশি সময় নেয়নি, তাড়াতাড়ি করে কিছু ফটো তুলে সামনের রাস্তার দিকে বাইরে বেরিয়ে এসে দেখলাম সামনে ছোট একটা পার্ক মতো তাতে রাজার মূর্তি বসানো আছে। সেখানেই ছবি তুলে সবার আগেই বাসে ফিরে এলাম। এরপর আবার লম্বা যাত্রা জয়পুরের উদ্দেশ্যে।, প্রায় ৩৫০ কিমি। জয়পুর পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। রাস্তার ধারেই বিশাল হোটেল, তবে পুরানো বলেই মনে হল। এতটা বাসে আসার পর সবাই খুব ক্লান্ত তাই যে যার রুমে ঢুকে বিশ্রাম নিল। তবে কিছুজন এসেই বাজার বেরিয়ে গেল। :o  true shopaholic indeed ! আমি হোটেল থেকে না বেরোলেও হোটেলের ওপর নিচ ঘুরে ছবি তোলার সুইট স্পট খুঁজে রাস্তার সামনে মনের সুখে মেট্রো, বাস, লোকজন দেখে কাটালাম। হোটেলের সামনে দিয়েই মেট্রোর ফ্লাই ওভার গেছে। স্বভাবতই সেদিন রাত্রে কোথাও ঘোরার ব্যাপার ছিল না। পরদিন সকালে গাড়ি করে জয়পুর ঘুরে দেখলাম। জয়পুরের বিখ্যাত হাওয়া-মহল রাস্তার ধারেই বাস থেকেই দেখলাম। তারপর সিটি-প্যালেসে ঢুকলাম, এখানেও গাইড ফ্রি এবং যথারীতি আমি নিজের খেয়ালে ঘুরে ফটো তুললাম। তবে মুশকিল হয়েছিল গাইড সবার টিকেট নিয়ে নিয়েছিল। তাই মাঝে যখন বাকিদের খুঁজে পাচ্ছিলাম না, তখন ভয় ধরেছিল তাই পরে ওদের খুঁজে পেয়ে সাথে না চললেও চোখের আড়াল হতে দেয়নি। সিটি-প্যালেসের পর যন্তর-মন্তর দেখার পালা। আমার মন পরে হাওয়া-মহলে। বাবুদাকে জিজ্ঞাসা করে যখন জানলাম হাওয়া-মহল দেখার সময় হবে না, তখন যন্তর-মন্তর বাদ দিয়ে শুধু আমি আর তনু হাওয়া-মহলের দিকে নিজেরাই পা বাড়ালাম। কারণ আগেই বলেছি আমার ঘুরতে বেরোনোর একটাই কারণ ফটো তোলা, সুতরাং যেটা ফটোর জন্য আদর্শ সেটার গুরুত্ব আমার কাছে সবসময় বেশি। তনুর তাড়াতাড়ি হাঁটতে অসুবিধা হচ্ছিলো তবে আমার গুঁতোয় কষ্ট করে হেঁটেই নিলো। খুব দূরে ছিল না, সত্যি কাছ থেকে দেখে ভীষণ অভিভূত হলাম, হাওয়া-মহল দেখার পর যন্তর-মন্তর না দেখার আফসোস বিন্দুমাত্র ছিল না। তবে পাছে দেরি হয়ে যায়, তাও আবার হেঁটে ফিরতে হবে -তাই তাড়াহুড়োয় ফোটগুলো খুব ভালো আসেনি তাছাড়া হাওয়া-মহলে ছায়া পড়েগেছিল। ফিরে দেখলাম বাকিরা তখনও আসেনি। ড্রাইভার একা বসে, ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে তার সাথেই গল্প জুড়ে দিলাম। কিছুক্ষণ পর বাকিরা এসে গেল। বাস যখন হাওয়া-মহলের দিকে না গিয়ে অম্বর ফোর্টের দিকে এগিয়ে চলল তখন বাকিদের হাওয়া-মহল কাছ থেকে দেখতে না পাওয়ার আফসোস শুনে নিজের সিদ্ধান্তের জন্য গর্ব হল। :D তারপর অম্বর ফোর্টের কাছে নেমে জীপে করে পাহাড়ে উঠে অম্বর ফোর্ট ঘুরে দেখলাম। এতো গরমে আমার মোবাইল ঠিক মতো কাজ করছিলো না, বিশেষত ফটোস্ফেয়ার তুলতে গেলেই hang করে যাচ্ছিল, তাই মন খারাপ ছিল। অম্বর ফোর্ট দেখে ফেরার পথে লেকের মাঝে জলমহল দেখলাম।  সেখান থেকে পাথরের মূর্তি বানানোর কারখানায় গেলাম, সেখানে বাস থেকে নেমেই সামনে দেখি জাগুয়ার দাঁড়িয়ে আছে, চার পায়া নয় চার চাকা। এতো কাছ থেকে দেখার সুযোগ কে ছাড়ে, কিছু ছবিও তুললাম। সেখান থেকে বিকেলে ফিরে বাকিরা শপিং করতে গেলো আমি ভোরে বেরোতে হবে বলে বিশ্রাম করলাম। আমি গেলাম না বলে বউও বেরোলো না। সেদিন আর কিছু হয়নি, রাত্রে খাওয়ার ��ময় বাবুদা বললো কাল খুব ভোরে মানে ভোর ৫টায় বাস ছাড়বে সুতরাং তার আগে রেডি হয়ে থাকতে হবে। ৫টার জায়গায় বাঙালির সময়, ৬টা বাজল। জয়পুর থেকে সোজা পুস্কর, পথে আজমের শরীফ দরগা দেখার জন্য থামা হয়েছিল। বাস থেকে অটোতে করে আজমীর শরীফে যেতে হল। ধর্মস্থানে আমার কোন আকর্ষণ নেই যদিনা সেটি ফটোজেনিক হয়। তাই আমি আর তনু বাসেই বসে ৩ঘন্টা কাটালাম, আমি অবশ্য আজমীর শহরটা হেঁটে কিছুটা ঘুরলাম। ম্যাপে দেখলাম আজমীরে লেক আছে তাই সেটা দেখার জন্য অনেকটা হাঁটলাম, যখন বুঝলাম অনেকদূর এতো কম সময়ে হেঁটে হবে না তখন না দেখেই বাসে ফায়ার এলাম। সবাই ফিরে আসতে বাস চলল- এ যাত্রার শেষ গন্তব্যে পুস্কর। পুস্করে (মাধব নিবাস -৯৪১৪৩০০১৬০, ৭৭৩৭২৩২১২০) ঠিক হোটেল নয় ধর্মশালায় ছিলাম কিন্তু ব্যবস্থা হোটেলের মতোই। পুস্করে bus আমাদের শেষবারের মতো ছেড়ে চলে গেল। ড্রাইভারদের জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে ২০টাকা করে প্রায় ১০০০টাকা মতো তুলে ধন্যবাদ দেওয়া হল। ড্রাইভার & Co. তাতে খুশি হয়নি, তারা আরও বেশি আশা করেছিল। সেদিন দুপুরে পৌঁছেছিলাম বিকাল হতেই আমি ম্যাপ দেখে লেকটা কাছে জেনে একই হেঁটে দেখার জন্য বেরোলাম, বেরোতেই দেখি আরও কিছুজন বেরোচ্ছে, আমি তাদের সাথে ভিড়ে গেলাম। কিন্তু তারা লেক না গিয়ে অটো করে পাহাড়ের দিকে গেল। পরে আবিষ্কার করলাম সাবিত্রী পাহাড়ে যাচ্ছে, ভালোই হল পাহাড়ে আমার কোনোদিনই অরুচি ছিল না, সেখানে পৌঁছে দেখলাম রোপওয়ে আছে সবাই যখন টিকিটের দাম জিজ্ঞাসা করতে গেলো আমি বললাম -"আপনার রোপেওয়েতে যান আমি সিঁড়ি দিয়ে যাচ্ছি।" ওমা! সবাই তখন হাঁটতে রাজি। টিকিটের দাম ছিল ১০৫টাকা জন প্রতি। তনু কখনও রোপওয়ে চড়েনি ভাবলাম কাল দেখিয়ে নিয়ে যাবো। সাবিত্রী মন্দির পাহাড়ের চূড়ায়। উঠে দেখলাম প্রায় ৯০০ স্টেপস, দম বেরিয়ে গেলো সবার। তবে ওপরে পৌঁছে ওপর থেকে নীচের পুরো শহরটা দেখতে অপূর্ব লাগছিল। জুতো খোলার ভয়ে আমি মন্দিরে ঢুকিনি, বাইরে চারপাশটা ঘুরে দেখলাম। এখানে দেখলাম প্রচুর বিদেশী ঘুরে বেড়াচ্ছে, বাকি রাজস্থানে আর কোথাও এতো বিদেশী দেখিনি। পাহাড় থেকে ফিরতে অন্ধকার হয়ে গেলো, তারপর গেলাম ভারতের একমাত্র ব্রহ্মা মন্দির দেখতে। ইতিমধ্যে তনুও অন্য মহিলাদের সাথে বেরিয়েছে খবর দিল, শুনে খুশি হলাম। ব্রহ্মা মন্দিরে ওদের সাথে দেখা হল। এখানেও আমি মন্দিরে ঢুকিনি। বাইরে ফটো তুললাম আর জুতা পাহারা দিলাম। তারপর বাজার হয়ে লেক দেখে রাত্রে হোটেল তথা ধর্মশালায় ফিরলাম। পরের দিন অনেকে লেকে স্নান করতে গেল। আমিও গেলাম স্নান করতে নয়, দিনের আলোয় ফটো তুলতে। চারদিকে ছবি তোলা নিষেধ লেখা থাকলেও কেউ বাধা দিছিলো না। তবে জুতা পরে জলের কাছাকাছি গেলেই রে রে করে তেড়ে আসছিলো। তাদের এমনিতে দেখা যাচ্ছিলো না কিন্তু জুতা পরে গেলেই কোথা থেকে ব্যাটারা আবির্ভাব হচ্ছিলো কে জানে। সকালেই টিফিন করে আজমীরের স্টেশনেই জন্য ৩টা লোকাল মিনিবাসে উঠলাম সবাই। আজমীর ঢোকার আগে আগে পাহাড় থেকে নামার সময় ওপর থেকে আজমীরের না দেখা লেকটা (আনা সাগর লেক) দেখলাম। এই যাত্রায় দেখা সবচেয়ে সুন্দর লেক। চোখ ভোরে দেখলেও ফটো তুলতে পারিনি তাই একটু মন খারাপ করছিলো।
স্টেশনে পৌঁছে যথাস্থানে মালপাত্র রেখে ট্রেনেই জন্য অপেক্ষা করতে করতে সবাই আড্ডা দিলাম। একে অপরের facebook, whatsapp নম্বর শেয়ার করলাম। ট্রেন আসতে আমরা বাকিদের থেকে আলাদা হয়ে গেলাম, আমাদের কামরা আলাদা। বাকি ট্রেনে শুয়ে-বসে কাটল। ফেরার সময় আমি পছন্দের সাইড লোয়ার বার্থ পেয়েছিলাম। লার্জ স্ক্রিন টিভির মত জানালা দিয়ে বাইরটা দেখে দেখে কাটিয়ে দিলাম। মাঝে গ্রূপের লোক এসে দুপুরের আর রাত্রের খাবার দিয়ে গেছিল। পরেরদিনেরও দুপুরের খাবার ওরাই দিয়েছিলো। পরেরদিন বিকেল ৪টায় পৌঁছানোর কথা থাকলেও ৩ঘন্টা দেরিতে শিয়ালদা পৌছালাম। সেখানে বাস আমাদের অপেক্ষায় ছিল। তাই কোনো সমস্যা হয়নি। নির্ঝঞ্ঝাটে রাত ১০টা ১৫-২০ মিনিটে কাঁথি পৌঁছে গেলাম। মাঝে মেচেদায় ব্রেক নিয়েছিলাম। রাত্রে রান্না করার সময় নেই তাই ধাবাতেই রুটি তরকারি খেয়ে নিয়েছিলাম, ৪টা রুটি ৫০টাকা নিল। বাড়ি ফিরে স্নান করে লম্বা ঘুম, এক ঘুমে সকল ৭টা।  যাক ভালোই ভালোই রাজস্থান যাত্রা মিটল। এখনও সংশোধন বাকি। ধন্যবাদ!
4 notes · View notes
sd82sc · 7 years
Photo
Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media
Rajasthan 2017 by Moto g4+ (Google StreetView), from Contai, Laha Travels.
2 notes · View notes
sd82sc · 7 years
Text
লম্বা ছুটি ও আমি
লম্বা ছুটি আমার কাছে আতঙ্ক। আমার আবার স্কুলে চাকরী তাই বছরে ২-৩বার এই কারণে আতঙ্কিত হতেই হয়। ছোটবেলায় পরিবারের সাথে ২-৩বছরে একবার করে long tour-এ যেতাম। স্কুল-কলেজে পড়ার সময় বন্ধুদের সাথে প্রায়ই নিরুদ্দেশ যেতাম। চাকরী জীবনের শুরুতেও বারবার বেরিয়ে পড়তাম। কিন্তু এখন সময় খারাপ চলছে, প্রধানত same frequency-র সঙ্গীর অভাবে বেরিয়ে পড়া হচ্ছে না। এমনিতে আমার প্রাণের বন্ধুর সংখ্যা কম তার সিংহভাগই আবার স্বেচ্ছা কালাপানির শিকার (NRI) নতুন বেড়ানোর সঙ্গী খোঁজার চেষ্টাও করেছি তবে কেউই তেমন জমেনি। কারও হচ্ছে আছে তো শারীরিক সমস্যা, কারও আর্থিক, কারও সময়ের, কারও পছন্দের৷ আমার মত psycho-র সাথে অন্য কারও match হওয়া সত্যিই দুরহ ব্যাপার। বুম্বা, বুমবুমদার সঙ্গ আর ঝুটবে না, যাদের জন্য অর্থ + সময় যে ভাবে হোক manage করতে মন চাইত৷ সেই adventure গুলো ফিরে পেতে সুযোগ পেলেই ২-চাকায় যতদূর যাওয়া যায় ঘুরে আসি। kwid নিলে আর একটু দূরে যেতে পারতাম কিন্তু ওই, সঙ্গীর অভাবে ফালতু status maintain-এর জন্য invest করতে ইচ্ছে করল না।
আপাতত tour agent-এর দয়ায় বেড়ানোর চেষ্টা করি তাও প্রতিবছর হয়ে ওঠে না৷ একবারই মাত্র এভাবে গেছি, ওরা আবার ২-১টা ধরাবাঁধা জায়গায় বারবার যায়। ঘরের কাছাকাছি ২য় কোন পছন্দের (destinatian/mode of transpotation/etc) agency পাইনি। তার ওপর ১২৫ কোটির দেশে ট্রেনের টিকিট পাওয়াও লটারী জেতার সমান।
এর চেয়ে ছুটি না থাকলে বরং আমার fan club (school)-এ মজায় সময় কাটে। ৩০মিনিটের প্রতিদিনের বাসের journy-তে ঘাম আর ভিড়ে ঠাসাঠাসিতেই adventure খুঁজে নিই।
১৯৯১-বাবা মার সাথে-(উত্তর ভারত)-ট্রেন 
১৯৯৫-বাবা মার সাথে-(চেন্নাই)-ট্রেন 
১৯৯৮-বাবা মার সাথে-(বিশাখাপত্তনম)-ট্রেন 
২০০২-কলেজের সাথে-(বিশাখাপওনম)-ট্রেন 
২০০৬-শুভর সাথে-(শান্তিনিকেতন)-ট্রেন
          -স্কুলের সাথে-(মুকুটমণিপুর)-কার 
২oo৭-বুম্বার সাথে-(দার্জিলিং)*-কার 
         -কল্লোলদার সাথে-(পঞ্চলিঙ্গেশ্বর)-কার 
২০০৮-বুম্বার সাথে-(মুর্শিদাবাদ)-ট্রেন 
২০০৯-রাজার সাথে-(সুন্দরবন)*-নৌকা 
২০১০-পাপাইয়ের সাথে-(শান্তিনিকেতন)-কার 
২০১১-পাপাইয়ের সাথে-(পুরী)-কার 
২০১২-পাপাইয়ের সাথে-(ভিতরকনিকা)-কার 
২০১৩-পাপাইয়ের সাথে-(শিমলীপাল)-কার 
         -দিদির বাড়ি (গোয়া)- ট্রেন
         -মনোজের সাথে-(জোরথাং)-ট্রেন 
২০১৪-পাপাইয়ের সাথে-(বারিপাদা)-কার 
২০১৫-বাবুদার সাথে-(দক্ষিণ ভারত)-ট্রেন
২০১৬-তনুর সাথে-(অযোধ্যা পাহাড়)-কার
২০১৭-বাবুদার সাথে-(রাজস্থান)-ট্রেন
২০১৮-পাপাইয়ের সাথে-(মুরগুমা)-বাইক
২o১৯- ঝালিদা - সহকর্মীদের সাথে-ট্রেন সিকিম - রাজশ্রীদার সাথে- চারচাকা * এই Journey সবচেয়ে বেশী enjoy করেছি৷ 
 # আমার স্বপ্নের adventure হবে যদি আমি কোনদিন মোটরসাইকেলে (পুরোটা) সাথে চারচাকাও থাকবে, লাদাখ ঘুরে আসতে পারি৷
1 note · View note
sd82sc · 8 years
Photo
Tumblr media
ROCK STAR INDEED! বন্ধু সুমন আর মোনালিশার দ্বিতীয় সন্তান, রনি। 
3 notes · View notes
sd82sc · 8 years
Photo
Tumblr media
1 note · View note