Tumgik
#খো
bangladailynews · 9 months
Text
Kho Gaye Hum Kahan: X users find crossovers with Gehraiyaan, Dil Chahta Hai, Kabhi Khushi Kabhie Gham
অর্জুন ভারাইন সিংয়ের পরিচালনায় আত্মপ্রকাশ খো গেয়ে হাম কাহান, অনন্যা পান্ডে, সিদ্ধান্ত চতুর্বেদী এবং আদর্শ গৌরভ অভিনীত একটি ‘ডিজিটাল-যুগের আগমন’ মুভি মঙ্গলবার Netflix India-এ ড্রপ হয়েছে৷ এটি শুধুমাত্র সমালোচকদের কাছ থেকে নয়, X (আগের টুইটার) ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে ব্যাপকভাবে ইতিবাচক পর্যালোচনা পেয়েছে। (এছাড়াও পড়ুন: কল্কির সাথে কালেশ: আমরা কি জোয়া-রীমার গল্প করতে পারি যেখানে অভিনেতা কেবল…
Tumblr media
View On WordPress
1 note · View note
projapotimusichd · 2 months
Video
youtube
ঢুলির সাথে নাচে গানে ভরপুর বিনোদন দিলো ডিজে মুন্নি সরকার। আন্ধার রাতে খো...
0 notes
banglavisiononline · 4 months
Link
ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় রেমাল’র ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পায়
0 notes
sattokhoborlive · 1 year
Text
৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের আভাস
কুষ্টিয়া সহ ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের আভাস দেশের সব নদীবন্দরে সতর্কতা সংকেত তোলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোথাও দুই নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত, কোথাও এক নম্বর সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান জানান, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর ও কুমিল্লা অঞ্চলের ওপর দিয়ে পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০…
Tumblr media
View On WordPress
0 notes
natunsylhet24 · 2 years
Text
সাগরে ঘূর্ণিঝড় ‘মানদৌস’, সতর্ক সংকেত বাড়ল
সাগরে ঘূর্ণিঝড় ‘মানদৌস’, সতর্ক সংকেত বাড়ল
বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘মানদৌস’-এ পরিণত হয়েছে। দেশের চারটি সমুদ্রবন্দরে ১ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (ক্রমিক নম্বর ৪) এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন…
Tumblr media
View On WordPress
0 notes
dailyamaderajshahi · 2 years
Text
নিম্নচাপ দুর্বল হলেও সতর্ক সংকেত বহাল
নিম্নচাপ দুর্বল হলেও সতর্ক সংকেত বহাল
এফএনএস : বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপটি আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে উপকূলে ওঠে এসে ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে। তবে উপকূলে ঝড়ের শঙ্কা থাকায় সব সমুদ্র ও নৌ-বন্দরে সতর্ক সংকেত বহাল রাখা হয়েছে। আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি প্রথমে ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। এরপর এটি…
Tumblr media
View On WordPress
0 notes
khulnabazar · 2 years
Text
দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হতে পারে আজ
নিউজনাউ ডেস্ক: দেশের কোথাও হালকা, কোথাও ভারি বৃষ্টি হতে পারে আজ (মঙ্গলবার)। আবার কোনো কোনো স্থান থাকতে পারে বৃষ্টিহীন। মঙ্গলবার (২৮ জুন) আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়, ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে…
Tumblr media
View On WordPress
0 notes
ctgdailynews24 · 2 years
Text
অশনি'র কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ১১৭ কি.মি.
অশনি’র কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ১১৭ কি.মি.
প্রবল ঘূর্ণিঝড় অশনি’র কেন্দ্রে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ওঠে যাচ্ছে ১১৭ কিলোমিটার। বর্তমানে এটি ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার বেগে উপকূলের দিকে এগোচ্ছে। আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ (ASANI) উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি সোমবার (০৯ মে) সকাল…
Tumblr media
View On WordPress
0 notes
dainikkalyan · 2 years
Text
ছয় বিভাগে ঝড়-বৃষ্টির আভাস
কল্যাণ ডেস্ক: ঢাকাসহ দেশের ছয় বিভাগে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া খুলনা বিভাগসহ সাত জেলায় মৃদু তাপপ্রবাহ বইছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আজ শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) সকালে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এদিকে সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, কুমিল্লা অঞ্চলসহ রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও…
Tumblr media
View On WordPress
0 notes
rajit-dot-com · 3 years
Text
Tumblr media
আউট হাউসে খুন
রাজিত বন্দোপাধ্যায়।
* আবার জাহিদ গনাই
আমি ভেবেছিলাম আর বোধহয় জাহিদ গনাই এর বিষয় আমাকে উত্যক্ত করবে না । কাশ্মীর ছেড়ে এসেছি অনেক দিন হয়ে গিয়েছে । গুলফাম স্যার প্রায়ই ফোনে যোগাযোগ রেখে চলেছেন । তবে এখনও নাকি জাহিদ গনাই এর কোন খবর নেই । স্রেফ হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছে লোকটা । কিন্তু আমার মন বলছে হতে পারে না । জাহিদ গনাই একা নয় , তার পিছনে যে একটা বিরাট দল কাজ করছে , কাশ্মীর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সে সম্পর্কে আমাদের নিঃসংশয় করেছে । আশিকুর রহমান ও ডঃ নাজির আহমদের হত্যা আমাদের সামনে একটা বিরাট রহস্য জাল যেন টাঙ্গিয়ে দিয়েছে । গুলফাম স্যার আজও সেই জালের সন্ধানে কাজ করে চলেছেন। একবার তার নাগাল পেলে তিনি সেই দুই হত্যা রহস্যের কেন্দ্রে পৌঁছানোর আশা রাখেন ।
প্রায় ছয় মাস পরে আমি উপস্থিত হলাম ফের শ্রীনগরে । এপ্রিল শেষ হতে চলেছে। ঠান্ডা ততটা নয়। ফুলেরা যেন আরো ঝাঁপিয়ে পড়েছে কাশ্মীরের শিরায় উপশিরায় । ডাল লেক যেন নববধূর সাজে বিভোর ! সেই পরিচিত কফি হাউসে আমি জানালার ধারে এক মগ ধূমায়িত কফি ও পেপার যোগে বসে । কাঁচের জানালায় বুলেভার্ডের অপর পারে ডাল লেকে শিকারার ভিড় । ঝকঝকে দুপুর ! বসে বসে পেপারে চোখ বুলাতে বুলাতে গুলফাম স্যারের অপেক্ষা করছিলাম হঠাৎ যেন মাটি ভেদ করে আমার টেবিলের সামনে এসে উদয় হলেন গুঁফে ভদ্রলোক । সারা মুখে উত্তেজনা । দেখলাম দেরী হবার জন্য দুঃখ প্রকাশ না করে মাথার টুপি টেবিলে চটাস করে নামিয়ে রেখে , চেয়ার টেনে বসে পড়লেন দু পা ফাঁক করে । মুখে ঘন অন্ধকার !
ধূমায়িত কফি এল । উনি তাতে চুমুক পেড়ে হঠাৎ যেন সেটার স্বাদ জানানোর মত মুখ কুঁচকে বললেন ,
-- আজ ফির উসে পা কর ভী খো দিয়ে ।
আমি সপ্তম আশ্চর্য দেখার মত মুখ করে হাঁ করে শুধালুম ,
-- কিসকো গুলফাম স্যার ?
তিনি গম্ভীর স্বরে বললেন ,
-- জাহিদ গনাই কো !
আমি এত জোরে চমক খেলুম যে আমার হাঁটু লেগে কফি টেবিলটা থর থর করে কেঁপে উঠল । খানিক চমকে থমকে আমি ফের প্রশ্ন করলাম ,
-- কাঁহা ?
উনি কফি মগে আরেকটা লম্বা চুমুক পেড়ে বললেন ,
-- জোহাঙ্গি চক কে রমজান বিল্ডিং মে ।
এরপর তিনি তা বললেন , তা এই রকমঃ স্পেশাল ব্রাঞ্চ বহুদিন ধরে লেগেছিল এক সাইবার ক্রাইমের পিছনে । কে বা কারা এর অপারেটর তা জানবার জন্য স্পেশাল ব্রাঞ্চ রাত দিন এক করে লেগেছিল । কেবল ভারতেই নয় , জার্মানী , অস্ট্রেলিয়া এমন কি সুদূর প্যান আমেরিকান দেশের লোকদেরও ঠকিয়ে তাদের একাউন্টের ডিটেলস যোগাড় করে টাকা লুঠে চলেছিল তারা । তাদের সুতো যে শ্রীনগরেও রয়েছে সি বি আই ও অর্থ দপ্তরের মাধ্যমে পুলিশের কাছে আসে । শেষে তা স্পেশাল ব্রাঞ্চকে তুলে দেওয়া হয় । এবং তারা অনেক খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারে টাওয়ার বিশ্লেষণের মাধ্যমে যে , রমজান বিল্ডিংয়ে এদের ডেন । তারই রেইডে যেয়ে হঠাৎ দেখতে পাওয়া যায় গনাইকে ।
গুলফাম স্যার হঠাৎ লিফট থেকে দেখেন একজন মারা ও দাড়ি কামানো মানুষ , তার এক কানে হীরের রিঙ পরা ! অন্য একজনের সঙ্গে কথা বলতে বলতে এগিয়ে চলেছেন বিল্ডিংয়ের শেষ প্রান্তের লিফটের দিকে । গুলফাম স্যার তৎক্ষণাৎ পিছু নেন । লোকটাকে কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে । এবং একটু তাড়াতাড়ি পা ফেলে তাঁকে পেরিয়ে গিয়ে একটা রুমের দরজায় থেমে যেতেই একেবারে মুখোমুখি দেখলেন , জাহিদ গনাই ! তার মুখ এত মনের গভীরে রয়েছে যে , লাখো মানুষের মধ্যেও তাকে চিনতে ভুল হবে না গুলফাম স্যারের। বিমূঢ়তা কাটিয়ে তিনি চিৎকার করতেই তাঁর অফিসারেরা ছুটে এলেন । তাঁরা দ্রুত নীচের দিকে দৌড় দিলেন সিঁড়ি ধরে । কিন্তু ততক্ষণে লিফটে নামা জাহিদ গনাই সদর গেট দিয়ে রাস্তায় পা রেখেছে । গুলফাম স্যার জিজ্ঞাসা করায় লিফট ম্যান জানালেন , মাথা কামানো একজনই এ বিল্ডিংয়ে রয়েছেন , তিনি জুনেইদ মাট্টু । অফিসাররা সমস্বরে বলে উঠলেন ,
-- আরে এহী তো ১৪ নম্বর কেবিন কী বস হ্যায় স্যার !
গুলফাম স্যার সাইবার ক্রাইমের সঙ্গে আলগাবাদী ও সন্ত্রাসবাদীদের সংযোগে চমকে উঠলেন । এখন আবার নতুন ভাবে এই কেসের ভাবনা চিন্তা শুরু করতে হবে ।
* ই - মেলের আর্তি
পরের দিন যথারীতি আমরা এসে বসেছি বিকেলে কাফের রঙিন মহফিলে । সামনের কাঁচের জানালায় রঙীন ডাল লেক সহ বুলেভার্ড । ডাল ছাড়িয়ে ঘন সবুজ চিনারের প্রাচীর । আর তার ওপারে থাকা হালকা নীল হরিপর্বতের ল্যান্ড স্কেপ । যেন ছাপানো এক মস্ত চমৎকার রঙ বাহারি ক্যালেন্ডার । আমার সামনে ধূমায়িত কফি মগ হাতে গুলফাম স্যার । গোঁফের তল দিয়ে কফিতে চুমুক পাড়তে পাড়তে ফোনে আসা মেল খুলে পড়ছিলেন । পড়া শেষ করে ফোনটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিতে চমকালুম । নিয়ে দেখি তাতে যা ইংরেজীতে লেখা রয়েছে তার বাংলা করলে দাঁড়ায় এই রকমঃ
আপনাকে বহুবার ফোনে ধরতে চেষ্টা করেছি , কিন্তু পারিনি । প্রতিবার আপনার অফিস আমায় বলেছে যে আপনি নেই । আপনার পার্সোনাল নম্বর আমার কাছে নেই । আমার এক বান্ধবী অনেক কষ্টে আপনার ই - মেল আইডিটি যোগাড় করে দিয়েছেন । তাই লিখতে পারছি । পত্রিকায় নিশ্চই পড়েছেন , জীবন মৃত্যুর প্রশ্ন এখন আমার কাছে ঘটনাটা । আমি সশরীরে গিয়ে দেখা করতে পারছি না মায়ের জন্য । তাঁকে ছেড়ে যেতে পারছি না । প্লীজ এই মেল আইডিতে লিখুন অথবা টেলিফোন করুন এই নম্বরে ...
বিনোদ ডাকুয়ার কন্যা
অমৃতা ডাকুয়া।
গুলফাম স্যার জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন , গোঁফের তল দিয়ে এক চুমুক কফি পান করে। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম ,
-- শেপিয়ার পিনজুরা গ্রামের ঘটনা ।
গুলফাম স্যার কফিতে শেষ চুমুক দিয়ে মাথা নাড়লেন । তারপর গম্ভীর স্বরে আমায় জিজ্ঞাসা করলেন ,
-- আপ কা ক্যা খয়াল হ্যায় ব্যানার্জি ?
আমি নীরস কন্ঠে বললাম ,
-- আমার সঙ্গে শ্রীনগরে পৌঁছানোর রিপোর্ট করা সত্ত্বেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কেউ কোন যোগাযোগ যখন করেননি এখনো , তো হাতে কোন কাজ নেই । কাজে কাজেই যাওয়া যেতে পারে ।
হাতের কফি মগ টেবিলে নামিয়ে রেখে গুলফাম স্যার পকেট থেকে রুমাল বের করে গোঁফে লাগা কফি মুছে বললেন ,
-- হুম ! তব চলিয়ে ।
বলে উঠে পড়লেন । উঠলাম আমিও।
শোপিয়ার পিনজুরা গ্রামের আউট হাউসে পুড়ে জনৈক বিনোদ ডাকুয়ার রহস্যময় মৃত্যুর ব্যাপারটি আমার মনে খুব উৎসুকতা তৈরী করেছিল । নর্থবেঙ্গল ইউনিভার্সিটিতে যখন ক্রিমিনোলজি নিয়ে পড়াশুনা করছিলাম , হোস্টেলে আমার রুমমেট ছিল রমেন ডাকুয়া । ডাকুয���ারা উত্তরবঙ্গে বাস করা আদিম অধিবাসীদের একটি শাখা । ওদের সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য তখন আমি যোগাড় করেছিলুম মনে আছে । মেলে দেওয়া ফোন নম্বরে সঙ্গে সঙ্গে জানানো হল কাল সকালে আমরা আসছি পিনজুরা গ্রামে ।
গুলফাম স্যারের জিপসীতে হোটেলে ফিরেছিলুম কিছু গরম জামার প্রয়োজনে । হোটেল আদুসের গেট লাগোয়া ফুটপাতে থাকা একটা খবর কাগজের ভেন্ডর থেকে দু তিনটে সান্ধ্য খবর কাগজ ও দৈনিক খবরের কাগজ আমি কিনে নিলাম । তারপর এসে বসলাম আমার রুমে। খবর কাগজ ঘেঁটে ঘেঁটে যেটুকু তথ্য পেলুম তা মগজে বেশ গুছিয়ে ভরে রাখলুম । খবরের কাগজ গুলোতে যা প্রকাশ পেয়েছে সেই ঘটনাটা এই রকমঃ
শোপিয়া জেলা শহর থেকে প্রায় দশ মাইল দূরে পিনজুরা গ্রামে এক অভূতপূর্ব দুঃখজনক ঘটনায় এক মারাত্মক হত্যার খবর পাওয়া গিয়েছে । গতকাল সন্ধ্যায় এক নির্জন আউট হাউসে হঠাৎ আগুন লেগে জ্বলে উঠতে দেখা যায় । এবং এই আগুন লাগার ঘটনাটি একটি অভূতপূর্ব ঘটনা বলে জানা গিয়েছে । গ্রামবাসীদের তৎপরতায় কোন রকমে সেই আউট হাউসের আগুন নিভানো সম্ভব হয় কাল রাতে । আজ সকালে সেই আগুনে পোড়া ঘরটি পুলিশ এসে পরীক্ষা করার সময় হঠাৎই পাওয়া যায় বিনোদ ডাকুয়া নামে জনৈক ব্যক্তির জ্বলে যাওয়া শরীরটি। বিনোদ ডাকুয়া সেই আউট হাউসের অনতি দূরেই থাকতেন । তিনি কিছুদিন হল এই অঞ্চলে বাড়ি বানিয়ে বসবাস করতে শুরু করেছিলেন । তিনি কাল সন্ধ্যা থেকে নিখোঁজ । এই আউট হাউসে আগুন লাগার কিছু সময় আগে তাঁকে ঐ দিকেই যেতে দেখা গিয়েছিল বলে জানা গিয়েছে । আউট হাউস থেকে প্রাপ্ত লাশটির এতটাই জ্বলে গিয়েছে যে চিনবার উপায় নেই । তবে ভদ্রলোক আগুনে পুড়ে নয় , জানা যায় তাঁকে হত্যা করা হয়েছে । পুলিশের ডাক্তার দেখেছেন যে ভদ্রলোকের গলা বেশ গভীর ভাবে কাটা হয়েছে । কোন সন্দেহ নেই যে হত্যাকারী তাঁকে হত্যা করার পর সমস্ত প্রমাণ লোপাটের উদ্দেশ্যে আউট হাউস সমেত লাশটিকে পুড়িয়ে দেবার পরিকল্পনা করেছিল । পুলিশ সুদেশ বর্মন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে । এই ভদ্রলোক প্রায়শই মৃত বিনোদ ডাকুয়ার বাড়িতে আসতেন ।
আমার ভ্রূকুটি আরো গভীর হল । এই তথ্য থেকে কোন পথই খুঁজে পাওয়া মুশকিল , যতক্ষণ না স্পটে যেয়ে দেখে শুনে কথাবার্তা কওয়া যাচ্ছে । আমি উন্মুখ হলাম আগামী দিনের যাত্রা সম্পর্কে ।
* পিনজুরা গ্রামের সকাল
গুলফাম স্যারের জিপসী আমাদের দুজনকে নিয়ে শহর ছাড়ার আগেই আমি হোটেল আদুসের ফুটপাতের দোকান থেকে দু তিনটে দৈনিক কিনে নিলুম । সেটাই পড়তে শুরু করলুম শহর ছাড়িয়ে পথের পাশে গ্রাম আর চিনারের জঙ্গল শুরু হতেই । কিন্তু আর তেমন কোন নতুন খবর দিতে পারেনি সংবাদ পত্র গুলো । পাশে বসে ভীষণ গম্ভীর মুখে গুলফাম স্যার গভীর চিন্তায় মগ্ন ।
পর্দায় আড়াই ঘণ্টা চলবার পর আমরা একটা বেশ চকের মত জায়গায় পৌঁছে গেলাম । শোনা গেল এখান থেকে তিন কিমি উত্তরে মেটে রাস্তা ধরে গেলে পাওয়া যাবে পিনজুরা গ্রাম । অনেক খোঁজাখুঁজি করে এখানে একটা আউট পোস্ট পাওয়া গেল । সেখানের থানাদার একটা লম্বা স্যালুট মেরে বসল গুলফাম স্যারের পরিচয় পেয়ে । তিনিই শেষ পর্যন্ত একটা লোককে ধরে আনলেন পিনজুরা গ্রামের । এসেছিল বাজারে প্রয়োজনে । গ্রামে ফিরবার পথ ধরবে ধরবে করছিল । আমি তাকে পিছনে ডেকে বসালে গুলফাম স্যারের চোখে দুর্বোধ্যতর ছায়া দেখা গেল । তিনি কিছু না বলে সামনে ড্রাইভারের পাশে গিয়ে বসলেন । তাকে দেখে বোঝা গেল কানটা তিনি পিছনেই ফেলে রেখেছেন । তবে বুঝলুম , তিনি বুঝতে পেরেছেন যে এমন একজন গ্রামের তথ্য সরবরাহকারকের সাথে আমি কেন সহযাত্রী হতে এত বেশী ইচ্ছুক । তাই মুখ বন্ধ করে সামনের সীটে গিয়ে বসেছেন ।
খানিক যাবার পর আমি কথা পাড়লুম । লোকটি জানালে তিনি তেমন কিছু বোধহয় বলতে পারবেন না । তবে তিনি বুঝতে পারছেন যে বিনোদ ডাকুয়া , যিনি মারা গিয়েছেন তাঁর সম্পর্কে আপনি কিছু জানতে চাইছেন । আমি বললাম ,
-- না , আমি বলছিলাম যে , এই ভদ্রলোক তো কাশ্মীরী নন , তাই না ? আমার মনে হয় বাঙ্গালী , মানে নামে মনে হচ্ছে যে সে একজন বাঙালী আদিবাসী ।
সে মাথা নেড়ে চিন্তিত স্বরে বললেন ,
-- নহী স্যার । আমার মনে হয় বাঙ্গালী নয় , আসামের লোক । কেননা , কখনো কখনো সে অহমিয়া ভাষায় তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন শুনেছি । তাঁরা অরুণাচলের কোন জায়গা থেকে এসেছিলেন ।
আমি বললাম ,
-- হ্যাঁ , তা ঠিক বলেছেন । অরুণাচলে অনেক অসমীয়া ও বাঙ্গালীরা থাকেন ।
-- বিনোদ ডাকুয়া , বুঝতেই পারছেন , এখানে এক দু বছর হল রয়েছেন । তিনি ভালই হিন্দী বলতে পারেন । মিসেস ডাকুয়া , একজন খোঁড়া মহিলা --- মানে এখানে ঐ অবস্থাতেই এসেছিলেন । হুইল চেয়ারে চড়ে । অমৃতা ডাকুয়া , বিনোদ ডাকুয়ার ��কমাত্র মেয়ে । ভীষণ শোচনীয় অবস্থায় রয়েছেন এখন ।
আমি সায় দিয়ে বললাম ,
-- স্বাভাবিক , তিনি তাঁর পিতাকে হারিয়েছেন যখন এরকম এক মারাত্মক ঘটনার মধ্যে দিয়ে ।
-- হ্যাঁ স্যার , উসপর আউর ভী দুখকে বাত উনকে লিয়ে হ্যায় যহাঁ । এই যে সুদেশ বর্মন , যাকে পুলিশে গ্রেপ্তার করেছে , উনি কিছু দিন হল অমৃতা মেমসাহেবের কাছে আসছিলেন , তাঁর প্রেমে মজে ছিলেন জনাব । আর তাইতে মেমসাহেবের আরো কষ্ট হবে হয়তো ।
-- জরুর । আমায় বলতে পারেন , এমন কী ঘটলো যে পুলিশ সুদেশ বর্মনকে গ্রেপ্তার করল ?
লোকটি একটু গুছিয়ে বসে বললে ,
-- জরুর স্যার । যদিও আমি সরাসরি দেখিনি তবে শুনেছি যে গত পরশু বিকেলে বিনোদ ডাকুয়া ও সুদেশ বর্মনের মধ্যে হঠাৎ ঝগড়া বেঁধে যায় । বিকেল নাগাদ বিনোদ ডাকুয়া বেড়াতে বেরিয়ে ছিলেন । পিছন পিছন তাঁকে অনুসরণ করছিলেন সুদেশ বর্মন। দুজনেরই গতি ছিল সেই আউট হাউসের দিকে । মাঠে ভেড়া চরাতে যাওয়া আব্দুল তাদের পাশের চিনার গাছের একটা ছোট্ট জঙ্গল থেকে দেখছিল । সে চিনারের ছায়ায় বসে ওদের দেখছিল । সেই সময় তাদের ঝগড়া বেঁধে যায় । আব্দুল এত দূর থেকে তাদের কথা স্পষ্ট শুনতে পায়নি , কেবল শুনতে পেয়েছিল বিনোদ ডাকুয়া সুদেশকে বলেছেন সেখান থেকে চলে যেতে । তিনি একা থাকতে চান । এবং তা বেশ জোর দিয়ে পায়ে তাল ঠুকে নাকি বলেছিল । এরপর সুদেশ বর্মন সেখান থেকে চলে যায় । আমি মাঝ পথেই বলে উঠলাম ,
-- অরে রুকিয়ে , রুকিয়ে ভাই ; আপনি আমাদের বলেছেন যে , আব্দুল এইসব দেখেছিল ও শুনেছিল । আপনি তা কেমন করে জানতে পারলেন ?
গ্রামীণ জোর দিয়ে বললেন ,
-- আব্দুল আমায় বলেছিল জনাব । প্রতিটি শব্দ সে কাল আমায় বলেছিল । গাঁয়ের সবাই জানে যে ফরিদ মানে আমি আর আব্দুল ছোটবেলা থেকেই বন্ধু ছিলাম সাহাব ।
আমি মাথা নাড়লুম । এতক্ষণে গ্রামীণ ব্যক্তির নাম জানা হয়ে গেল । আমি অতঃপর তাকে কথা চালিয়ে যেতে উৎসাহ দিলাম । সে জানালে আসলে আব্দুল দু'বার এসব কথা বলেছে । একবার সকালে যখন লাশ পাওয়া গেল তখন ফরিদকে । আর তারপর শোপিয়াতে পুলিশের কাছে । তার কাছে পুলিশ জানতে পারে যে সে বিনোদ ডাকুয়ার কাছে কাজ করত না । সে কাজ করত আউট হাউসের মালিক কর্নেল রফিক ডার - এর কাছে । কর্নেলের কাছ থেকেই বিনোদ ডাকুয়া কিঞ্চিত জমি ও বাগান নিয়েছিলেন লীজে । আমি ফরিদকে প্রশ্ন করলাম ,
-- তুমি বললে যে , বিনোদ ডাকুয়া তাকে চলে যেতে বললে সুদেশ বর্মন চলে যায় । তারপর কী হল ?
সে বললে ,
-- সুদেশ বর্মন চলে তো গেলেন সেখান থেকে , কিন্তু একেবারে নয় । কেবল মাত্র বিনোদ ডাকুয়াকে এড়াতে অন্যদিকে সরে এলেন মাত্র । যে চিনার গাছ গুলো মাঠের ঠিক মধ্যিখানে এ��� মুঠি হয়ে অল্প জায়গা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে , তার আড়ালে । একেবারে আব্দুলের পাশে । তারপর গাছের আড়ালে আড়ালে তাঁকে লক্ষ্য রাখতে লাগলেন । দুজনে খানিক এগিয়ে গেলে দুজনেই তার চোখের আড়ালে চলে গেলেন । এরপর সে তাঁদের আর দেখতে পায়নি । সে তার ভেড়া সমেত ফিরে এসেছিল । রাত নামলে হঠাৎ সবাই দেখলে আউট হাউস জ্বলছে ! গ্রামবাসীরা তৎক্ষণাৎ জল টল নিয়ে গ্রাম থেকে দৌড়েছিল মাঠের দিকে । আমি শুধালুম ,
-- আউট হাউস পর কোই রহতা থা ?
ফরিদ জানালে ,
-- নহী স্যার , ওটা তো ভূত বাংলোর মত খালি পড়ে থাকতো । কিছু কিছু জায়গা ভেঙ্গে পড়েছিল । শোনা যায় , এক ব্যক্তি , কর্ণেলের এক আত্মীয় অনেক বছর আগে ওখানে আত্মহত্যা করেছিল । ভয়ে কেউ ঐ দিকে যেতো না । আমি প্রশ্ন করলাম ,
-- সুদেশ বর্মন কব লৌটে ?
ফরিদ জানালে সে কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে এসে অমৃতাকে জানিয়েছিলেন যে সে বিনোদ ডাকুয়াকে আউট হাউসের বাইরে রেখে ফিরে এসে ছিলেন । কিন্তু ঝগড়ার বিষয়ে কিছু নাকি জানান নি । কেবল বলেছিলেন আউট হাউস জ্বলছে । মনে হয় সে আগেই তা দেখেছিল । আমি বললাম ,
-- হত্যার ব্যাপারে সকালের আগে কিছুই শোনা যায়নি ?
ফরিদ মাথা নেড়ে বললে ,
-- নহী সাহাব । অমৃতা মেমসাব বহুত ডর গয়ী থী । উনকা পাপা নহী লৌটনে সে । পরের দিন যখন লোকে জ্বলে যাওয়া আউট হাউসটা দেখতে যায় , তখন ব্যাপারটা জানাজানি হয় লাশটা দেখতে পাওয়ায় ।
ফরিদের কাছ থেকে আরো জানা গেল যে , লাশটা ভয়ানক ভাবে জ্বলে গিয়েছিল । পুলিশ সঙ্গে ডাক্তার নিয়ে পৌঁছালে , ডাক্তার আবিষ্কার করে জ্বলা লাশের গলা কাটা হয়েছিল । তখন সবাই বিনোদ ডাকুয়ার নিখোঁজ হবার কথা তোলায় পুলিশ অনুমান করে লাশটা তাঁরই । এবং লাশ মর্গে পাঠানো হয় ।
গাঁয়ে ঢোকার মুখে ফরিদের কথায় আমি বা দিকে দূরে মাঠের উপর পুড়ে যাওয়া আউট হাউসটাকে ভুতুড়ে গপ্পের মত দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম । প্রায় আরো মাইলটাক যাবার পর ফরিদ হাত দিয়ে বিনোদ ডাকুয়ার বাড়িটা আমাদের দেখিয়ে দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে মেটে রাস্তা ধরে গ্রামের ভিতরের দিকে চলে গেল ।
* রেসটি
বিনোদ ডাকুয়ার বাংলো প্যাটার্নের বাড়িটা দেখতে সুন্দর । গাড়ি গ্রামের প্রধান সড়ক থেকে চলে যাওয়া প্রায় আধা কিমি পাথর বিছানো পথ পেরিয়ে আমরা বাড়িটার গেটে পৌঁছালাম । পাকা বাড়ি । গেটের দুপাশে মোটা চৌকা থাম । তাতে গাঁথা শ্বেত পাথরের ফলকে লেখা ' রেসটি '। বোধহয় রেস্ট হাউস থেকে সংক্ষিপ্ত করা নাম । বেশ আদরের নাম । মূল গ্রাম থেকে বেশ খানিকটা তফাতে বাড়িটা দাঁড়িয়ে রয়েছে একাকী । চারিদিকে সবুজ ঢেউ তোলা ফাঁকা জমি মাঝে মাঝে দু - দশটা চিনারের ভীড় একঠায় দাঁড়িয়ে । গেটের ভিতর একটা বাগানও আছে । তাতে ফুল গাছের ভীড় । সব রঙের ফুল জায়গাটাকে রঙ্গীন করে তুলেছে । আচমকা আমার নজর পড়ল সামনের দেয়ালে থাকা কাঁচ বসানো জানালায় একটা ভীত ত্রস্ত বিবর্ণ তরুণীর মুখের উপর । আমরা ড্রইং রুমে পৌঁছানোর আগেই দেখা দিলেন অমৃতা ডাকুয়া ।
ভীষণ ফরসা ও বেশ সুন্দরী তরুণীটি । যদিও এখন চোখে মুখে উদ্বেগ ও কান্নার কারণে চোখ লাল , ছল ছল করছে । যদিও সে চোখ বড় নয় অনেকটা চীনে তরুণীদের মত ক্ষুদে । লম্বা হালকা লালচে চুল । দেখেই চেনা যায় এর মিশ্রিত জাতি প্রভাব । সে প্রায় কেঁদে ফেলে বললে ,
-- ও হো মিস্টার হোসেন , ম্যায় বহুত খুশি হুঁ কী আপ আয়ে হ্যায় ।
তারপর সাথে আমায় দেখে থমকালেন , বোধহয় আমার বাঙ্গালী অবয়ব লক্ষ্য কোরে । গুলফাম স্যার আমার পরিচয় দিলেন । তারপর বললেন অমৃতা ,
-- আমি সেই কখন থেকে অপেক্ষা কোরে রয়েছি । আমার মা , বেচারীও এতক্ষণে সন্দেহ করতে লেগেছেন !
আমি শুধালুম ,
-- আপনি নিশ্চই তাঁকে বলেননি , তবে ?
আমার দিকে তাকিয়ে অমৃতা বললেন ,
-- না , বললে তাকেও হত্যাই করা হবে মিঃ ব্যানার্জি। আমার মনে হয় তক্ষুনি তিনি প্রাণ ত্যাগ করবেন । আমি তাকে কেবল বলেছি বাবা শোপিয়ায় যেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন । এখন যে কী করি ?
আমার মনে হল মেয়েটা ভেঙ্গে পড়েছে । গুলফাম স্যার সরাসরি তাঁকে বললেন ,
-- আপ অভী ব্যানার্জি সাহাব কো সবকুছ খুলকর কহিয়ে , যাই হোক উনি যা জানতে চান ঠিক ঠিক জানান । এই কেসে আমাদের যতদূর করা সম্ভব আমরা করবো । কিন্তু আপনি যদি ঠিক মত তথ্য না দিতে পারেন তো আমাদের পক্ষে বেশি কিছু করা সম্ভব হবে না মিস ডাকুয়া ।
-- মিঃ ব্যানার্জি , আপনি যদি ওকে জানতেন তবে নিশ্চই এ কথা জানতে চাইতেন না । সে আমার বাবাকে আঘাত করতে পারে না , হত্যা তো দূর । সে বাবার পিছু পিছু গিয়েছিল কারণ আমি অস্থির হয়ে পড়েছিলাম বলে । তা বলে সে কখনোই বাবাকে আঘাত করতে পারেনা । মিঃ ব্যানার্জি আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি , কক্ষনো না । বেচারী বাবা , এখন তো ...
-- সম্ভালে মিস ডাকুয়া । আউর ডরিয়ে মৎ । যদি মিঃ বর্মন নির্দোষ হন --- যা আপনি বলছেন , তো আমরা নিশ্চই কোন একটা উপায় বার করবো তাঁর নির্দোষ প্রমাণ করবার । ব্যাশ্ আপনি কেবল ব্যানার্জি সাহাব কে সহায়তা করুন । আমার মনে হয় তাঁর বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত কোন প্রমাণ নেই । এরকম ঘটনায় এইটুকু প্রমাণের জন্য পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে মাত্র ।
গুলফাম স্যারের কথায় অমৃতা কিঞ্চিৎ আশ্বস্ত হলে , আমি ফের শুধালুম ,
-- আপনি বলছিলেন যে আপনার বাবা বিকেলে বেরিয়ে ছিলেন , কেন ?
-- আমি ঠিকমত জানিনে মিঃ ব্যানার্জি । আমার মা তার বেরানোয় উৎকন্ঠিত ছিলেন । আসলে মা আমায় কিছু লুকোচ্ছিলো, তা আমায় বলেনি । আমার বাবা কদিন ধরেই বিকেলে বাইরে যাচ্ছিল বলে যে মায়ের উৎকণ্ঠা তা আমি বুঝতে পেরেছিলাম ।
-- আপনার মা তো চলাফেরা করতে পারেন না , তাঁর এমনি এমনি উদ্বেগ হওয়ার তো কারণ থাকতে পারে না । যদি তিনি সামলে উঠতে পেরেছেন তো তাঁকে আমি দু একটা প্রশ্ন করতে চাই , আপনি কি বলেন ?
কিন্তু অমৃতা এর বিরোধিতা করে বসলেন । তাঁর মা স্পাইনাল কর্ডের সমস্যাতে ভুগছেন , আমার প্রশ্নের ফলে হয়তো তা বৃদ্ধি পেতে পারে , সেই ভয় কোরছেন । তাছাড়া তিনি বাইরের লোকের সামনে বের হন না । কাজে কাজেই এটা এড়াতে পারলে ভাল হয় বললেন । আমি মাথা নেড়ে বললুম ,
-- ঠিক আছে মিস অমৃতা , আমি প্রথমে যাচ্ছি কিছু তদন্ত করতে । দেখা শোনা হলে আপনার মায়ের সহায়তা ছাড়াই কিছু কোরবার চেষ্টা করবো । তবে আপনি আমার আরো কিছু প্রশ্নের উত্তর দিলে সুবিধা হয় তদন্তে ।
অমৃতার সঙ্গে কথাবার্তায় জানতে পারলাম , লীজ নেবার পর বানানো এই ঘর যেটায় আমরা বসে আছি , যার নাম রেসটি , মাত্র দু বছর আগে তৈরী হয়েছিল । এর আগে তাঁরা শ্রীনগরে ছিলেন । তবে তারা শ্রীনগর থেকে সরাসরি এসে এখানে বসবাস করতে শুরু করেন নি । তার বাবা বিনোদ ডাকুয়ার ব্যাবসার কারণে তারা গুজরাত , মুম্বাই , কোলকাতা , চেন্নাই ঘুরেছিলেন । সেই সময় কোলকাতা থেকে চেন্নাই যাবার পথে সুদেশ বর্মনের সঙ্গে তাঁদের জানাশোনা হয় । সুদেশ বর্মনের চেন্নাইয়ে এক বন্ধু ছাড়া আর কেউ নেই ।
সুদেশ বর্মন সিএ - রং স্টুডেন্ট । বিনোদ ডাকুয়ার বাল্যকাল অরুণাচলের ইটানগরে কেটেছে । সেখানে তাঁর বাবাও একজন ব্যবসায়ী ছিলেন । তাঁর মাকে ছোটবেলা থেকে অসহায় ও পঙ্গু অবস্থায় দেখে আসছেন অমৃতা । সুদেশের সঙ্গে তাঁর বিয়ের কথাবার্তা পাকা হয়ে রয়েছে , এটা তাঁদের উভয় পক্ষের অনুমতিতেই হয়েছে । আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেল অমৃতার কাছ থেকে । তাঁর বাবার মধ্যে কয়েক মাস হল একটা পরিবর��তন সে লক্ষ্য করছে । এটা কী কারণে তা অমৃতা জানে না । তবে সে লক্ষ্য করেছে তাঁর বাবা মাঝে মাঝে নার্ভাস হয়ে পড়ছেন এবং খুব মুডি হয়ে আছেন । প্রায়ই তাঁকে অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে , এমন কি মাঝে মাঝে ক্ষেপেও উঠছেন । এরকম স্বভাব তাঁর বাবার মধ্যে অমৃতা আগে কখনই লক্ষ্য করেননি । এটা বোঝা যাচ্ছে অমৃতার কোন ধারণাই নেই সুদেশ বর্মনের সঙ্গে তাঁর বাবার কেন ঝগড়া হয়েছিল । আমার গভীর জেরায়ও আর বিশেষ কিছুই বেরুল না । তবে বিনোদ ডাকুয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আমি বের করতে সক্ষম হলাম । সেই তথ্য সাজালে দাঁড়ায়ঃ
আজ থেকে দিন দশেক আগে , বিনোদ ডাকুয়া বিকেলের ভ্রমণ থেকে ভীষণ উত্তেজিত হয়ে ফিরে এলেন । এবং সেই দিন থেকে প্রতিদিন বিকেল হলেই বেরিয়ে পড়তে শুরু করলেন । তিনি প্রতি বিকেলেই হাঁটতে হাঁটতে মাঠ পেরিয়ে ঐ আউট হাউসের দিকটাতে চলে যেতেন । গত বুধবার মুম্বাই থেকে তাদের সাথে দেখা করতে এসেছিলেন সুদেশ বর্মন । কিন্তু তাতেও কোন বাঁধা পড়েনি বিনোদ ডাকুয়ার বৈকালিক ভ্রমণে । সেই সময় মিসেস ডাকুয়ার উৎকণ্ঠা পুনরায় প্রকাশ পায় । এরকম উৎকণ্ঠা আগেও তাঁর মধ্যে দেখা গিয়েছে তাঁর স্বামীর আউট হাউসের দিকে যাবার সময় । কিন্তু এবার উৎকণ্ঠা এতটাই বেশী দেখা গেল যে অমৃতা সুদেশকে তাঁর বাবার সঙ্গী হতে বলেন । সুদেশ বর্মন অমৃতার কথা শুনেই বিনোদ ডাকুয়ার সঙ্গ নেন । কিছুক্ষণ পরে একা ফিরে এসে জানান যে তিনি বিনোদ ডাকুয়াকে হারিয়ে ফেলেন । তিনি নিশ্চই অন্য পথ দিয়ে বাড়ি ফিরেছেন । এবং এও সংবাদ দেন যে লোকে পথে আলোচনা করছে যে আউট হাউসে আগুন লেগেছে ! রাত্রি বাড়তে বিনোদ ডাকুয়া না ফিরে এলে সুদেশ বর্মন আবারও বেরিয়ে চারিদিকে খুঁজে আসেন । তবুও বিনোদ ডাকুয়া না ফিরে এলে মিসেস ডাকুয়াকে তাঁর শোবার ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হয় । সুদেশ বর্মন সারা রাত এখানে সেখানে খোঁজাখুঁজি চালিয়ে যান । সকালে ভয়ঙ্কর সংবাদটি আসে যে আউট হাউসের ভিতরে একজন মানুষের জ্বলন্ত লাশ পাওয়া গিয়েছে । দুপুর নাগাদ সুদেশ বর্মন গ্রেপ্তার হন ।
অমৃতা ডাকুয়া কথাবার্তার মাঝে নিজের মানসিক অবস্থা ধরে রাখতেও কথা চালিয়ে যান । কথা শেষ হলে আমি গুলফাম স্যারকে ইশারা করতেই তিনি অমৃতাকে বলেন ,
-- মিস ডাকুয়া আপনি শান্ত হোন। উত্তেজিত হবার কিছু নেই ।
আমি স্বান্ত্বনার সুরে বলি ,
-- আপনি আপনার সাধ্যমত মত তথ্য যুগিয়েছেন মিস ডাকুয়া । এখন আমরা গিয়ে সব কিছু পরীক্ষা করে দেখবো প্রাথমিক ভাবে । হয়ত তারপরেই আমরা আপনাকে কিছু ভাল সংবাদ দিতে পারবো বলে আমি বিশ্বাস করি । আপনি গিয়ে আপনার মায়ের পাশে থাকুন । মনে রাখবেন আপনাকে সবসময় সহায়তা করে যাওয়া হবে মিস অমৃতা ।
ফেরার সময় হল ঘরের এক কোণে রাখা জুতার সেলফের দিকে চোখ যাওয়ায় একই রকমের ছ জোড়া জুতা দেখে আমি থমকে দাঁড়ালাম । গুলফাম স্যারের চোখের তারায় দুর্বোধ্যতর দৃষ্টি ঝলক মারল । আমি আপনি মনেই নিম্ন স্বরে বললাম ,
-- মিঃ ডাকুয়া দেখছি একই রকম জুতা পছন্দ করেন ! আমার স্বগোক্তি কানে যাওয়ায় গুলফাম স্যারও সেই দিকে এক ঝলক দেখে নিয়ে বললেন ,
-- লিবারটি কা জুতে হ্যায় ব্যানার্জি ।
আমরা বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এলুম ।
* আউট হাউস
রেসটির বা হাতে থাকা মাঠের উপর দিয়ে একটা মেঠো পথ চলে গিয়েছে উঁচু নীচু সবুজ প্রান্তর ভেদ করে উত্তর দিকে । আমাদের গাড়ি চালক সেই দিকে জীপসি গাড়িটা চালিয়ে দিলে পাথুরে জমির উপর দিয়ে । পথের পাশের ঘাসের উপর অনেক পায়ের চাপ পড়েছে বোঝা যায় তীক্ষ্ণ ভাবে লক্ষ্য করলে । আমি গুলফাম স্যারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম সেই দিকে । খানিকটা এগোতেই দু - একটা চিনার বৃক্ষ দেখা দিল । ক্রমশ চিনারের ভিড় বেড়ে দাঁড়াল একটুকরো পাতলা ব - এর আকারের গাছের ভীড়ে । এখানেই যে আব্দুল চিনারের ছায়ায় বসে বিনোদ ডাকুয়া ও সুদেশ বর্মনকে লক্ষ্য করেছিল তা আর বলতে হয়না । গাছের ভীড়টা আউট হাউসের দিকে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে । আরো খানিকটা এগোলে চারিদিকে কেবলই খোলা মাঠের মধ্যে আমরা এসে পড়লাম । চারিদিকে উঁচু নীচু সবুজ মাঠের বিস্তার । চিনার বনের কোন থেকে দেখা গেল দুটো মেঠো পথ এগিয়ে গিয়েছে আউট হাউসের দিকে । ধীরে ধীরে পথ উপরের দিকে চড়তে চড়তে গিয়ে পৌঁছেছে আউট হাউসের গেটে ।
গেট বলতে কেবল দুটো ইটের থাম । চারিদিক খোলা । দুই থামের মধ্যবর্তী জায়গা দিয়ে ঘাসে ভরা জমির উপর দিয়ে একটা সরু পথ আউট হাউসের সামনের বারান্দায় সিঁড়িতে গিয়ে ঠেকেছে । এখন আউট হাউসের কড়ি বর্গা ও দেয়ালের কিছু অংশ কালো পুড়ে যাবার চিহ্ন মেখে সত্যি সত্যি এক ভুতুড়ে বাংলো হয়ে দাঁড়িয়েছে । যদিও বাড়িটার মূল কাঠামোটা টিকে রয়েছে । ছাতেরও তেমন ক্ষতি হয়নি । কালে দেখতে বাড়িটা সুন্দরী ছিল বোঝা যাচ্ছে । বাড়িটার ডান হাত দিয়ে আসা রাস্তাটার ধারে কিছু গ্রামীণ ঘর দুয়ারের চালা গুলো উঁকি দিচ্ছে । এই রাস্তাই শোপিয়ার দিকে গিয়েছে । আর আমরা এসেছি বা হাতের গ্রামীণ মেঠো পথে । আউট হাউসের ডান দিকে থাকা আর একটা ছোট গেটে একটা লোকের মূর্তি দেখা যাচ্ছে । সে মনে হয় একজন পুলিশ গার্ড ।
আমাদের জিপসীটা দেখে সে তড়বড়িয়ে এগিয়ে এল আমাদের সামনে । গুলফাম স্যারের উর্দি দেখে বুঝে গিয়েছে যে সে বড় পুলিশ অফিসার । তাই আমরা গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথে সেলাম করল । আমি গুলফাম স্যারের কানে নিম্ন স্বরে বললাম ,
-- ইসে কাটাইয়ে গুলফাম স্যার ।
আমার কথায় মৃদু হেসে তিনি হাঁক পাড়লেন ,
-- তুমহারা অফসর কাহা ম্যান ?
সেপাই উত্তর দিলে ,
-- গাঁও কী আউট পোস্ট মে স্যার ।
গুলফাম স্যার ভারিক্কী স্বরে বললেন ,
-- যাও জাকে বুলাকে লাও । আমরা শ্রীনগর থেকে এসেছি। আমরা পাহারা দিচ্ছি , তুমি যাও ।
মানুষটির ইতস্ততা দেখে গুলফাম স্যার জুড়ে দিলেন বাকী কথাটুকু । তাতে কাজ হল বলে মনে হল । সে একটা দ্বিধা ভরা সেলাম ঠুকে গাঁয়ের দিকে শোপিয়া থেকে আসা পীচ পথ ধরে উধাও হল ।
আমরা আউট হাউসে উঠে এলাম । আউট হাউসের বারান্দার উপরে থাকা দুটি দরজার একটিও নেই । আধ জ্বলা চৌকাঠ রয়েছে । জানালার পাল্লা ও চৌকাঠ সম্পূর্ণ জ্বলেছে । সম্পূর্ণ বাড়িটা পোড়া বাড়ির আকার ধারণ করেছে তাতে । আউট হাউসের ডান হাতের দরজার সামনে ছাইয়ের একটা আস্তরণ দেখা গেল । সেই ছাইয়ের বেশির ভাগটা কাঠের ও কাগজের । পোড়া ঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে থাকা ছাইয়ের কিছুটা কালো যা অদ্ভুত আকারে মেঝেতে পড়ে রয়েছে , যেন একটা মানুষ হাত পা ছড়িয়ে পড়ে আছে ! গুলফাম স্যার মন্তব্য করলেন ,
-- এহী পর লাশ গিরা হুয়া থা ব্যানার্জি। আপনি আগে দেখেননি বোধহয় ব্যানার্জি সাহাব?
আমি মাথা নাড়লাম , কেননা পুড়িয়ে ফেলা লাশ এর আগে দেখা হয়নি । আমি কাজে নেমে পড়লুম । ভাল করে পোড়া মানুষের দাগটা দেখতে দেখতে একটা জিনিস আমি কুড়িয়ে নিলাম পোড়া ছাইয়ের মানুষটার দাগটার পায়ের শেষ অংশ থেকে । আমি দাগটার চারপাশ ঘুরে ঘুরে সাবধানে দেখতে লাগলাম । হঠাৎ গুলফাম স্যারের চোখে চোখ পড়তে দেখলুম তাঁর চোখ দুর্বোধ্য থেকে দুর্বোধ্যতর হয়ে উঠেছে । ঘরটা টুকরো তার , পোড়া কাঠ আর ছাইয়ে ভরা । তারই মাঝে হঠাৎ ছাইয়ের ভিতর দেখলাম আধ পোড়া কাগজ আর কার্ডের অংশ । আর তার চারধারে বোতল , কাঠের হ্যান্ডেল , প্লাস্টিক , আধ পোড়া রঙের বাক্স ! আমি আধপোড়া কাঠের সঙ্গে লোহার ছড় পেয়ে সেটা দিয়ে ছাই হটিয়ে হটিয়ে দেখতে লাগলাম । হয়ত মিলিলেও মিলিতে পারে অমূল্য রতন !
একটা ছোট্ট শঙ্কর ধাতুর তৈরী বাক্স , তাতে আধপোড়া ব্রাস ও রঙের প্লাস্টিক বক্স ! গুলফাম স্যার বললেন ,
-- কালার বক্স , তাজ্জুব বাত !
আমি নীরস স্বরে বললাম ,
-- ঐ আধ জ্বলা কাগজ ও কার্ড টা দেখুন , হতে পারে স্কেচ বুক হবে ওটা ।
আর বিশেষ কিছু না পাওয়ায় আমরা বেরিয়ে এলাম । দ্বিতীয় ঘরটিতে পুরানো খাটটাট ছিল । আধজ্বলা অবস্থায় । ভিতরের বারান্দা , কীচেন ভষ্মীভূত । আমি ছাইয়ের ভিতর থেকে কুড়িয়ে পাওয়া মেটাল রিং ও বোতামটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছিলাম । হতে পারে পায়ের জুতাটাও আধা পুড়লে তা থেকে এগুলো আলগা হয়ে পড়ে গিয়েছে । আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল সদ্য দেখে আসা রেসটির হলঘরে থাকা জুতোর রেকটা । বিনোদ ডাকুয়ার আধা ডজন জুতোর কোনটাতে এ ধরনের কোন মেটাল রিং বা বোতাম লক্ষ্য করিনি ।
আমার স্বগোক্তি বোধহয় গুলফাম স্যারের কানে গিয়েছিল । ঘরটার আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন । তাঁর গোঁফের তল দিয়ে গম্ভীর চিন্তিত স্বর মেলে দিয়ে বললেন ,
-- ক্যা বোলে ব্যানার্জি সাহাব ?
-- মুঝে নহী লগতা হ্যায় কী , বিনোদ ডাকুয়ার হত্যা হয়েছে । আই মীন, সে মৃত নয় ।
আমার কথায় স্পষ্টতই চমকে উঠে উনি শুধালেন ,
-- ক্যা বোলতে হ্যায় আপ !
আমি বূঝতে পারছিলাম এটা মেনে নেওয়া গুলফাম স্যারের পক্ষে খুবই কষ্টকর । লাশ যেখানে আধজ্বলা অবস্থায় মজুদ সেখানে কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না । আমি বললুম ,
-- আমার এটা মনে হচ্ছে গুলফাম স্যার । দেখুন আমরা জানি যে লাশটি এতটাই জ্বলেছে , বিশেষ করে আপার পোরশন , যে লোকটির মুখ চেনা দুষ্কর । বিনোদ কুমার নিখোঁজ হওয়ায় গ্রামের লোকেদের মনে চেপে বসেছে যে এটা তাঁরই লাশ । তাছাড়া আমরা আরো জানি যে বিনোদ কুমারের প��িবারের কেউ গিয়েই সে লাশ এখনো সনাক্ত করেনি । তাই বলা যায় না এটা তাঁরই লাশ ।
গুলফাম স্যার তাঁর গোঁফের তল দিয়ে ঘোঁত ঘোঁত করে আওয়াজ করলেন প্রতিবাদের ভাষায় । বললেন ,
-- লেকিন উনকা এ বডি নহী হ্যায় তো ঔর কিসকা হ্যায় ব্যানার্জি ?
-- আপনে ঠিক কহা, এ কিসকা হ্যায় ?
তারপর আমি তাঁকে বোঝালাম যে গুলফাম স্যার এখানে যা দেখতে পেয়েছেন তাকে কাজে লাগিয়ে ভেবে দেখুন । এখনো পোড়া ছাইভস্মের মধ্যে পড়ে আছে একটা রঙ বাক্স , আঁকার আধ পোড়া তুলি আর পোড়া স্কেচ বুকের পাতা । কে এই রঙের বাক্স ও স্কেচ বুক নিয়ে এসেছিল এখানে ? বিনোদ কুমার যখন বেরান তখন হাত খালি ছিল । তাছাড়া তাঁর স্কেচ করার অভ্যাস সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি অমৃতা ডাকুয়ার কাছে থেকে । এমনকি আবদল্লার বর্ণনায়ও কালার বাক্স বা স্কেচ বুকের উল্লেখ নেই । তারপর এই আকা বাঁকা তার গুলো । এগুলো জুতার বোতামে জড়িয়ে থাকে । আমার মতে লাশের পায়ের জুতা পুড়ে যাবার ফলে তার জুতার বোতাম থেকে খসে পড়েছে । তাছাড়া বোতামের ধাতুর অংশ গুলো যা ওখানে পড়ে রয়েছে তার সংখ্যা এখান থেকে স্পষ্ট গোনা যায় । সে গুলোর মোট সংখ্যা ছয় আর ছয়ে বারোটি । অথচ বিনোদ কুমার লেস বাঁধা জুতা পড়তেন তার উদাহরণ আমরা তাঁর রেকে দেখে এসেছি । নয় কি ? গুলফাম স্যার স্পষ্টতই চমকে উঠলেন আমার বিশ্লেষণ শুনে । তিনি অবাক স্বরে শুধালেন ,
-- যদি বিনোদ কুমার কা মৌত নহী হুয়া হ্যায় তো ওহ কাহাঁ গয়ে ব্যানার্জি সাহাব ?
-- লাখ টাকার প্রশ্ন করেছেন স্যার আপনি । সে গেল কোথায় ? এর আগে আপনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে ওটা তবে কার লাশ ছিল ? খুন হওয়া ব্যক্তিটি তবে কে ? এখন বোধহয় আপনি বুঝে গিয়েছেন যে এ কেসের সম্ভাবনা গুলি কী কী স্যার ।
গুলফাম স্যার দু চোখ বুজে খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন । তারপর হঠাৎ তাঁর চোখ খুলে গেল । গোঁফের তল দিয়ে দেখা দিল এক টুকরো হাসি । আমি বুঝতে পারলাম উনি আস্তে আস্তে বুঝতে পারছেন যে এটাই হল একমাত্র সঠিক ব্যাখ্যা এই গোটা ঘটনাটার । এটাও বুঝতে পারছেন যে কেন হঠাৎ করে বিনোদ কুমারের সাম্প্রতিক কালে আব ভাব বদলে গিয়েছিল । কেন তিনি প্রতিদিন বৈকালিক ভ্রমণে বেরুচ্ছিলেন আর কেনই বা সুদেশ বর্মন তাঁর পিছু নিলে বিরক্ত হয়ে তাঁকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন । আর শেষ মেষ তাঁর নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারটা --- সব কিছু যেন যুক্তি যুক্ত হয়ে আসছিল ।
এই অদ্ভুত কেসটা আরো অদ্ভুতের দিকে মোড় নিয়েছিল আমাদের দুজনেরই মনে । রহস্যের কুয়াশা হটাতে যেয়ে আমরা জড়িয়ে পড়লাম আরো কুয়াশার গহীন আঁধারে ! তারপর আউট হাউসের সামনের আধা জঙ্গলা বাগানে দুজনে দুজনের দিকে অর্থবহ দৃষ্টি মেলে দাঁড়িয়ে রইলাম ।
* রহস্যের কুয়াশা
আমরা রেসিপি ছাড়বার আগে অমৃতা ডাকুয়াকে আশ্বস্ত করে এসেছিলাম তাঁর হবু বরকে নির্দোষ প্রমাণ করে ছাড়িয়ে আনবার ব্যবস্থা করব । কিন্তু পরিস্থিতি আশঙ্কার হয়ে উঠেছে বিনোদ ডাকুয়ার কোথাও নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার কারণে । আমাদের পরস্পরের দিকে চেয়ে দাঁড়িয়ে থাকার নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে গুলফাম স্যার স্বগোক্তি করে উঠলেন ,
-- বেচারী লড়কী ! আমার মনে হয় ব্যানার্জি তাঁর জন্যে এই কথা জানাই ভাল হবে যে তাঁর বাবার মৃত্যু হয়েছে ।
-- হ্যাঁ গুলফাম স্যার । এই মেয়ের জন্য এটাই বোধহয় ঠিক । তবে অনেক ভাল মানুষ বলবেন যে মেয়েটির জন্য এবং তাঁর মায়ের জন্যও কিছু করা উচিত । তাছাড়া সুদেশ বর্মনের জন্যেও কিছু করা দরকার গুলফাম স্যার । যাই নেমে আসুক বিচার অবশ্যই করা হবে , যেমন টা সাধারণতঃ হয়ে থাকে । নির্দোষ এবং দোষী উভয়ের জন্যই । আপনি বুঝতেই পারছেন যে আমার মাথায় একটা অন্য ধারণাও রয়েছে । কাজেই এখানে দাঁড়িয়ে থেকে পাহারা দিন , আর আমি চেষ্টায় নামি ।
বলেই আমি আউট হাউস ঘিরে যে খোলা জায়গা আছে তা পরীক্ষা করায় ব্যস্ত হয়ে পড়লাম । আমার মাথায় তখন হাজারো প্রশ্ন উঁকি ঝুঁকি দিতে শুরু করেছে । চারধার ভাল করে লক্ষ্য করতে করতে সেই সব প্রশ্নের সম্ভাব্য সমাধানের চিন্তায় বিভোর হয়ে গেলাম আমি । প্রায় ঘন্টাটাক পরে গুলফাম স্যারের ডাকে আমি চমকে উঠে বর্তমানে এলাম ।
-- ব্যানার্জি সাহাব , আ জাইয়ে । এ পুলিশ কা আদমী গিয়া কাঁহা ? শোপিয়া নহী গিয়া তো ?
-- হমে ক্যা উসকে লিয়ে ওয়েট করনা পড়েগা স্যার ?
-- হাঁ ব্যানার্জি সাহাব । যো ভী প্রমাণ ওহ তো ইস ঘরকে ফর্শ পর বিছা হুয়া হ্যায় । ছেড়ে যাই কী করে ? ঐ তো সে আসছে ।
স্থানীয় পুলিশের মোটা শরীর উদয় হল নীচের রাস্তায় । আমরা চিৎকার করে তাঁকে ডাকলাম জলদি আসবার জন্য । হেলতে দুলতে অবশেষে এই টিলার উপর উঠে এল সে । যখন তাঁর মূর্তি দেখা দিয়েছে এমন সময় একটা আওয়াজ শোনা গেল । কিছুক্ষণ পরে একটা অটো রিক্সার আওয়াজ পাকা রাস্তার দিক থেকে ভেসে আসতে লাগল । আমরা দেখলাম একটা অটো রিক্সা শোপিয়ার দিক থেকে গ্রামের দিকে এগিয়ে আসছে । আমরা এসে দাঁড়ালাম রাস্তার কাছে ।
দূর থেকেই অটোচালক প্রায় চিৎকার করে কিছু বললে । দূরে থাকায় আমরা ঠিক বুঝতে পারলাম না । ক্রমে অটো রিক্সা এসে পড়ল আমাদের কাছাকাছি । অটো থামার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে তা থেকে নামলেন লাল টকটকে রঙের স্লিম চেহারার একজন বয়স্ক মানুষ । আস পাশ দেখে নিয়ে তিনি আমাদের দিকেই উঠে আসতে লাগলেন । তাঁকে দেখে পুলিশটি প্রচন্ড চমকে উঠে পাশের একটা ডোবায় হুমড়ি খেয়ে পড়তে যাচ্ছিল । গুলফাম স্যার খপ করে ধরে ফেললেন । পুলিশটির বিস্ফারিত চোখে অন্তহীন বিস্ময় দেখা গেল ।
-- এ ... ই ... তো তি - নি !
গ্রামের অটোচালকটি বললেন ।
-- একদম ঠিকঠাক রয়েছেন ।
-- তোমার মুখ বন্ধ করে তো , বুদ্ধু কাঁহিকা। তুম তো মুঝে মজাক শোচা হ্যায় য়ার।
ড্রাইভার ততোধিক উত্তেজিত, উত্তেজিত স্বরে বললে ,
-- আপকো ? কভী নহী ! মুঝে পয়সা কা জরুরত নহী হ্যায় জনাব , ম্যায় আপকো বাস্ ঘর পৌঁছানে আয়া হুঁ গর্ব সে ঔর সম্মান কে সাথ । এহী ও হ্যায় সাহাব !
শেষ কটি শব্দ বোধহয় আমাদের জন্যে বললে ড্রাইভার ।
আমার মাথা তখন ঝিলিক দিয়ে উঠেছে । উত্তেজিত অটোচালক , বিস্মিত পুলিশটিও রাগান্বিত মানুষটি আমায় একযোগে বলে দিয়েছে আমিই একশো শতাংশ ঠিক । রাস্তার পাশের অনতিউচ্চ মাঠ থেকে লাফিয়ে নেমে আমি উঁচু গলায় বললুম ,
-- মিঃ বিনোদ ডাকুয়া , আমার যতদূর অনুমান ?
উনি ম্লান হেসে বললেন ,
-- হ্যাঁ স্যার , কিন্তু আপনাকে তো আমি চিনতে পারলাম না !
গুলফাম স্যার নেমে এসে দাঁড়ালেন পথের উপর । গোঁফের ফাঁক দিয়ে গম্ভীর স্বরে বললেন ,
-- য়হা বহুত কুছ হো গয়া হ্যায় মিঃ ডাকুয়া । আপনি নিখোঁজ হওয়ায় আপনার মেয়ে অমৃতা আমায় মেল করে ছিলেন । আমি শ্রীনগর থেকে এসেছি । আমি জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের মুখ্য আধিকারিক । আর ইনি হলেন মিঃ ব্যানার্জি , আমাদের পুলিশের একজন শুভচিন্তক সাথী , ক্রাইম রাইটার ও ক্রাইম ডিটেক্টর । আমায় সহায়তা করার জন্য আমার সঙ্গে এসেছেন । আপনার সঙ্গে আমার একান্তে কিছু আলাপ করার আছে জনাব ।
গুলফাম স্যার উনাকে নিয়ে খানিক তফাতে চলে গেলেন ।
অবশেষে আমরা এসে বসেছি বিনোদ ডাকুয়ার স্টাডিরুমে । মিসেস ডাকুয়াকে দেখে গিয়েছেন ডঃ আহমেদ শোপিয়া থেকে এসে । নার্সকে রেখে গিয়েছেন তাঁর পরিচর্যার জন্য । অমৃতা ডাকুয়া আমাদের কফি সার্ভ করে আর ফিরে যাননি বিনোদ ডাকুয়া তাঁকে বসতে বলায় । তবে ছাড়া পেয়ে সুদেশ বর্মন এখন আরো প্রাণবন্ত দেখাচ্ছেন । তিনি তাঁর অবস্থা তাঁর মা বাবাকে জানাতে রওণা হবেন কোলকাতার দিকে । বাইরে মনোরম সন্ধ্যা নেমে আসছে ।
বিনোদ ডাকুয়া আমার দিকে চেয়ে ঝরঝরে বাংলায় বললেন ,
-- জানিনা মিঃ ব্যানার্জি স্যার আমি কোথা থেকে শুরু করবো । আউট হাউসের খুনের ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা । আশা করি পুলিশ তা তদন্ত করে জানতে পারবে । কারণ আউট হাউসে ঢুকে খুনের লাশ দেখার চাইতেও আততায়ীর পলায়নপর মূর্তি আমায় বেশী আকর্ষণ করেছিল । আর আগুন তখনও ঠিকঠাক জ্বলে উঠতে পারেনি বলে আমার বিশ্বাস । কাল সারা রাত আমি ঘুমাতে পারিনি , তাই এখন ফিট লাগছে না । তবুও আপনাদের কাছে সবটা বলতে পারলে কিছুটা হালকা বোধ করব ।
গুলফাম স্যার বললেন যা আমরা অমৃতা ডাকুয়ার কাছ থেকে জানতে পেরেছি । শুনে বিনোদ ডাকুয়া বললেন ,
-- ওহো ! তাহলে অমু মনে করেছিলি যে আমি ভীষণ মেজাজী হয়ে উঠেছি মাস খানেক ধরে ! সত্যি তাই । অমৃতা মৃদু মাথা হেলাল বাবার প্রতি । উনি হেসে বললেন ,
-- আপনারা আশিকুর রহমানের কেস তদন্ত করেছেন আমি তা যদ্দুর সম্ভব নিউজ পেপার থেকে জানতে পারি ।
গুলফাম স্যার মাথা নেড়ে সমর্থন জানালেন । উনি বললেন ,
-- এ ছাড়াও মুম্বাইতেও একটা কেসে ঠিক অমনই ঘটেছিল । সব শেষে ডঃ নাজির আহমেদ চৌধুরী । আপনারা কি জানতে পেরেছিলেন সেই আততায়ীর নাম ?
গুলফাম স্যার বিস্তারিত নেত্রে বিনোদ ডাকুয়ার দিকে চেয়ে রইলেন । আমি গলা ঝেড়ে বললাম ,
-- এ পর্যন্ত তার দুটি নাম আমরা জানতে পেরেছি । জাহিদ গনাই ও জুনেইদ মাট্টু !
বিনোদ ডাকুয়া গলা ঝেড়ে বলে উঠলেন ,
-- না ও জাহিদ গনাই হ্যায় , ঔর না জুনেইদ মাট্টু । আজ থেকে বিশ সাল আগে আমি ওকে জানতাম আবু বকর জুনেজা নামে । ও বাংলাদেশে থাকা এক পাকিস্তানী লোক ছিল ।
* আবু বকর জুনেজা
এরপর উনি যা বললেন তা এই রকমঃ ব্যানার্জি স্যার আবু বকরের এ অসামাজিক জীবন অসামাজিক কার্যকলাপে ভরা । এবং তার কার্যকলাপে যদি কেউ দুর্ভোগ ভুগে থাকে তা নিঃসন্দেহে আমি । বিনোদ ডাকুয়ার মুখ হিংস্র হয়ে উঠতে শুরু করেছিল । তাঁর বৃদ্ধ সুলভ আচরণ উধাও হয়েছিল , চোখ দুটো ধ্বক্ ধ্বক্ করে জ্বলছিল ও নাক ফুলে উঠেছিল । তিনি এ ভাবে কিছুক্ষণ সোজা হয়ে বসে রইলেন । অমৃতা তাঁর অবাক নেত্র দুটি মেলে দেখছিলেন তাঁর পিতৃদেবকে । তারপর বিনোদ ডাকুয়া ধীরে ধীরে শান্ত ভাবে চেয়ারে এলিয়ে পড়লেন । তিনি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, তিনি বৃদ্ধ হয়ে পড়েছেন , হয়ত যতটা তেজ থাকা দরকার তা নেই , তবুও তিনি পথ ছাড়বার লোক নন ।
আবু বকর একজন পাকিস্তানী । অতীতে সে তালিবানদের সাথে যোগ দিয়েছিল । আমেরিকান এজেন্সী তাকে কুকুরের মত শুঁঘে শুঁঘে তার জীবন অতিষ্ঠ কোরে তোলায় সে পালিয়ে যায় বর্মার এক সীমান্ত প্রদেশে । যেটা সেই সময় ছিল নো ম্যানস ল্যান্ডের মত । না চায়নার না বর্মার আবার না ভিয়েতনামের । এখানের সরকারী লোকজনেরা ছিল অনেকটা স্বাধীন সরকারের মত । এবং তারা নিজেরাই গড়ে তুলেছিল এক অপরাধের কালো জগত । মূল কারবার ছিল এদের পপি চাষ ও আফিম ও তৎজাত নানা ড্রাগস তৈরী করা । এবং এটা জুড়ে ছিল গোল্ডেন ট্রাঙ্গেলের সাথে । আবু বকরের ছিল অপরাধিক মস্তিষ্ক । এবং তার মাথা ছিল ক্ষমতা অর্জনের জন্য ভীষণ সাফ ও তীক্ষ্ণ । যদিও সে রাজনৈতিক শক্তি হস্তগত করবার পক্ষে মোটেও উৎসাহী ছিল না । কেননা ঐ রকম অঞ্চলে তা কেবল মৃত্যুর দিকেই নিয়ে যেত । আবু বকর ছিল শেয়াল স্বভাবী লোক । সে কেবল এই রাজনৈতিক শক্তি বদলের ষড়যন্ত্রের মূল মস্তিষ্ক ও তার দ্বারা আয়ের পথ প্রশস্ত করার কারিগর । কাজে কাজেই সে হয়ে বসেছিল গুপ্ত উপদেষ্টা এই হাত বদলের ইতিহাসের ।
সেই সময় আমি ছিলাম এক জোয়ান ব্যক্তি । আমি আসামের সীমান্তে ব্যবসায় লিপ্ত ছিলাম । আমিও লাভের আশায় সেই সীমান্ত অঞ্চলে ব্যবসা শুরু করি । যদিও ওখানে ব্যবসা করা কিন্তু ছিল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ । কিন্তু লাভ বেশি থাকায় টিকে গিয়েছিলাম । দেখতে দেখতে আমি ধনী হয়ে উঠতে লাগলাম । ঐ সময় যদি সরকারী ক্ষমতার একজন শরিক না হলে তো সেখানে অন্তত একজনের সঙ্গে যুক্ত থাকা একান্ত প্রয়োজন ছিল । কাজেই আমি আবু বকরের মোরগা হিসেবে দেখা দিলাম । কেবল আমি নই , আমার স্ত্রী , যে আজ পঙ্গু হয়ে বিছানায় সেও জড়িয়ে পড়েছিল তার জালে ।
তাঁর গলা ধরে এসেছিল বলতে বলতে । গলা ঝেড়ে একটুক্ষণ দম নিয়ে ফের শুরু করলেন তাঁর অদ্ভুত কাহিনী বৃদ্ধ বিনোদ ডাকুয়া চেয়ারে হেলান দিয়ে । আমরা উৎসুক হয়ে তাঁর দিকে চেয়ে রইলাম। তিনি ধীরে পুনরায় শুরু করলেনঃ
এক কথায় আবু বকর তার শয়তানি বুদ্ধি লাগালে আমার পিছনে । কিন্তু যে পুলিশ অফিসারটিকে তিনি বেছে নিয়েছিলেন , তিনি আমার বহুদিনের পরিচিত হওয়ায় আগাম খবর পেয়ে গেলাম । আমাদের প্রস্তুত হয়ে মাঝ রাতে যুদ্ধে নেমে পড়তে হল । আমি আমার স্ত্রী ও তিন ছেলে মেয়েকে নিয়ে পালাবার জন্য এক জীপ নিয়ে চললাম পশ্চিম দিকে যেখানে ভারতের বর্ডার রয়েছে । কিন্তু কোন কাজে এল না । কোন রকমে আমি এসে উপস্থিত হলাম সীমান্ত লাগোয়া এক গ্রামে , যেখানে আমার এক বন্ধু থাকতেন । কিন্তু আবু বকর কুকুর নিয়ে আমাদের পিছনে ধাওয়া করেছিল । আবার জঙ্গলে পালাতে হল । বর্মার ঘোর অন্ধকার জঙ্গলে আমরা পথ হারালাম । অমৃতা তখন খুবই ছোট , সে ছিল তার মায়ের কোলে । সে তাকে পিঠে বেঁধে নিয়ে চলেছিল । আমার সঙ্গে ছিল আমার দুই ছেলে । তারা দুজনেই এক কালান্তক জ্বরে এক চোরাবালির জলাশয়ের ধারে আমার এই দুই হাতের মধ্যে মারা গিয়েছিল ব্যানার্জি স্যার ! এমন কি আমার দেহে এতটা শক্তি ছিলনা যে আমি তাদের কাঠ জ্বেলে না ��ারি , সমাধি দিয়ে আসি । সেই চোরাবালির জলাশয়ে একটু একটু করে আমাদের আদরের সোনাদের আমি তলিয়ে দিয়ে এসেছি ব্যানার্জি স্যার !
আমরা সবাই স্তব্ধ । রুমাল মুখে চাপা দিয়ে ফোঁপাচ্ছিলেন অমৃতা । সবার চোখও বুঝি ভরে উঠেছিল । তিনি এক গভীর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন ,
-- অবশেষে আমরা পেরেছিলাম --- হ্যাঁ আমরা পৌঁছাতে পেরেছিলাম সীমান্তে । সেদিন আমাদের যুদ্ধের পঞ্চম দিন ছিল । দূরে বি এস এফ - দের চৌকির উপর উড়তে থাকা ত্রিরঙা আমাদের দেহে নতুন শক্তি এনে দিয়েছিল ব্যানার্জি স্যার । হোসেন স্যার সে যে কী শান্তি তা বলে বোঝাতে পারবোনা । আমাদের তিনজনের মধ্যে সবচেয়ে কম ভোগান্তি হয়েছিল অমু মার । আমার স্ত্রী তাকে বুকে আগলে নিয়ে এসেছিল সারাক্ষণ । সে এত ছোট ছিল যে প্রায় কিছুই তার বোধগম্যের মধ্যে ছিল না । তাঁর মা তাকে রক্ষা করতে পেরেছিল --- কিন্তু আমি আমাদের ছেলে দুটোকে বাঁচাতে পারিনি ব্যানার্জি স্যার ! বাঁচাতে পারিনি !!
বেশ কিছুক্ষণ ভাবাবেগে আপ্লুত বিনোদ ডাকুয়া চুপচাপ বসে রইলেন । তারপর বললেন ,
-- আমায় মাফ করবেন জেন্টেলম্যানেরা, আমি আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েছিলাম । আমরা মাথা নাড়তে তিনি ফের ধরা গলায় বাকিটুকু বলতে শুরু করলেনঃ
-- আর বিশেষ কিছু বলবার নেই । এরপর ভিয়েতনাম ও মায়াম্মার সরকারের প্রচেষ্টায় সেই স্বয়ম্ভু সাম্রাজ্যের অবসান হয়েছিল । আবু বকর সে দেশ ছেড়ে চীনে পালিয়ে গিয়েছিল । যদিও এটা একটা গুজব ছিল যে আবু বকর অনেক দিন চীনে কাটিয়েছিল । যাই হোক , ভারতে আমার পরিবারের অনেক সদস্য ছিল উত্তরবঙ্গে । আমি তাদের সহায়তায় আবার ধীরে ধীরে ব্যবসা শুরু করি । আমার পয়সা কড়ি বাড়তে থাকে ও আমি স্বাভাবিক জীবন যাপন শুরু করি ।
* আবু বকরের পুনরাবির্ভাব
বাইরে স্বর্ণাভ গোধূলির রঙে কালি গুলে চলেছে প্রকৃতি । আমরা কটি প্রাণী রেস্টির ভিতরে বিনোদ ডাকুয়ার মুখে শুনে চলেছি এক অত্যাশ্চর্য আধুনিক রূপকথা । তিনি ফের শুরু করলেন ,
-- গত পরশু যখন আমি আবার আবু বকরকে দেখতে পাই ও তার পিছু নিই ।
গুলফাম স্যার প্রশ্ন করলেন ,
-- ঔর আউট হাউস মে জো আদমী কা খুন হুয়া হ্যায় ওহ কৌন হ্যায় ?
-- এ আবু বকর কা হাতো মে মারা গয়া হাজার হাজার লোগো মে সে কোই একজন হ্যায় হোসেন সাহাব। তবুও এই খুনটা একটু আলাদা বৈকি । আশিকুর ও ডঃ নাজিরের খুন আমাকে ভাবিয়ে ছিল । দুই খুনেই দেখি দম বন্ধ হয়ে মৃত্যু এবং এর চিকিৎসীয় প্রমাণ বলে এদের টার্নিকোয়েট দ্বারা হত্যা করা হয়েছিল । দ্বিতীয় হত্যায় তো মৃতের গলাতেই টার্নিকোয়েট ছেড়ে রেখে পালাতে হয়েছিল ।
আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম ,
-- হ্যাঁ , আমিই তা ঢিলে করে দিয়েছিলাম !
-- তাই নাকি !
বিনোদ ডাকুয়া বললেন ,
-- সেই সয়ম্ভু রাজ্যে আবু বকরের শত্রুরা হঠাৎ হঠাৎই গভীর রাতে মারা যেত দম বন্ধ হয়ে । এবং সব ক্ষেত্রেই অস্ত্র কিন্তু ছিল এক , টার্নিকোয়েট ! আমার মনে হয় এতে খুব দ্রুত , প্রভাবী ও নিঃশব্দে খুন করা যেত বলেই আবু বকর এতে হাত পাকিয়েছিল ।
-- আবু বকর কা শিকার কে মাথে পর ঐসা চিহ্ন ক্যা পহলে ভী দিখাই দেতা থা ?
গুলফাম স্যারের প্রশ্নে বিনোদ ডাকুয়া বললেন ,
-- হাঁ হোসেন সাহাব । ওখানে এরকম ডাইনি বিদ্যার খুব প্রচলন ছিল । এ ডাইনি বিদ্যা হয়ত এসেছিল বিদেশ থেকে । ওয়েস্ট ইন্ডিজে এ ধরনের বিদ্যাকে ভুডু বলা হয় ।
আমার মনে পড়ল পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের কথা । সেখানকার আদিবাসীদের মধ্যে এক মারণবিদ্যা প্রচলিত ছিল । যাকে তাদের ভাষায় বলা হত ভুডু । তারা যাকে মারতে হবে তার অজান্তে বা জ্ঞানতই একটি চিহ্ন দিয়ে দিত কপালে --- একটা লাল ত্রিকোণ ! এর সাথে নাকি , যাকে চিহ্নিত করা হত সে এসে যেত ভুডু চালানো ব্যক্তির বশে । সে যা চাইতো , তাই তাকে দিয়ে করাতে পারতো । মনে হয় আবু বকর তার শিকার কে এই মারণ বিদ্যার সাহায্যে বোবা করে নিতো মারবার আগে ! আমার আরো অনুমান , আবু বকর চীনে থাকা কালীন ঐ সীলের রঙটির ব্যবহার পদ্ধতি শেখে । এতে তার মারণ বিদ্যার হয়তো শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে ।
বিনোদ ডাকুয়া ফির শুরু করলেন বলতে ,
-- আমার মেয়ে অমৃতা আমার মধ্যে একটা পরিবর্তন লক্ষ্য কোরেছিল , এমন কি আমার স্ত্রীও । তার মধ্যে প্রতিক্রিয়াটা বেশি হয়েছিল , কেননা এর কারণটা তার জানা ছিল । ব্যানার্জি স্যার আমি একজন বয়স্ক ব্যক্তি , কিন্তু আমার রক্ত আপনাদের চেয়ে বেশি গরম জানবেন । আমার শারীরিক ক্ষমতা হয়ত কিছুটা হ্রাস হয়ে থাকবে । আমার মা ছিল একজন চৈনিক লড়াকু ট্রাইবাল জাতির । যারা যুদ্ধবাজ শ্রেণীর ছিল । চীন ও সংলগ্ন এলাকায় তাদের বীরত্বের গাঁথা আজও শোনা যায় । তাই আমার সহজাত প্রবৃত্তি আমার বর্বর পূর্বপুরুষদের মতই ভয়ঙ্কর আজও ! আপনারা আমায় কী ভাবছেন আমি তা জানিনা , তবে বলতে পারি এখনও ঠান্ডা মস্তিষ্কে যে , যে মানুষটি আমার সর্বনাশ করেছে , তাকে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করা আমার পবিত্র কর্তব্য । আর তার জন্য আমায় যে মূল্য দিতে হয় তা আমি অবশ্যই দিব ব্যানার্জি স্যার । মিঃ হোসেন সরকারী মানুষ , হয়ত তাঁর একথা অনৈতিক ও আইন বিরুদ্ধ মনে হতে পারে , তবে তাতে আমার ভিতরের সুপ্ত প্রবৃত্তিকে বাগ মানাতে পারবে না । গত সপ্তাহে আমি হঠাৎই দেখা পে��াম আমার স��ই চির আকাঙ্ক্ষিত মানুষটির । আগপাশতলা বদলে ফেলেছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে । কিন্তু আমার চোখকে সে ফাঁকি দিতে পারেনি পুরোপুরি । তবে মাঠের মধ্যে ঐ পোড়া আউট হাউসে তাকে দেখে আমি প্রথমটায় ধাঁধায় পড়ে গিয়েছিলাম ।
সন্ধ্যার আলোয় তাকে দেখলাম এক যুবকের সঙ্গে কথা বলতে । তারপর আমি সম্বিত ফিরবার আগেই তারা চিনারের বনে হারিয়ে গেল । কিছু পরে যুবকটিকে আমি দেখলাম একলা দাঁড়িয়ে আছে বনের বাইরের মাঠে । একদম যৌবনের দ্বারে তাঁর বয়স । হাতে স্কেচ বুক তাঁর রঙতুলি --- একজন আর্টিস্ট ! তারপর থেকে প্রতিদিন আমি বৈকালীন ভ্রমণ আউট হাউসের দিকেই সারতে শুরু করলাম । প্রায়ই দেখি আর্টিস্ট যুবকটিকে আউট হাউসে অপেক্ষা করতে । কিন্তু কেউই তাঁর সাথে দেখা করতে আসছিল না । সে বোধকরি পিছনের যে বস্তিটা আছে , তাতে থাকে । তাঁকে আমি সেই দিকে চলে যেতে দেখেছি ।
অবশেষে এলো সোমবারের গোধূলি বেলা । আবার আমার চোখে পড়ল আবু বকর । সুদেশ এখানে এসেছিল । যখন আমি বিকেলে বেরুলাম সে আমার পিছু নিয়েছিল । অনেক কষ্টে তাকে পিছু নেওয়া ছাড়ালাম । আউট হাউসের মাঠে আমি তার দৃষ্টি এড়াতে সক্ষম হলাম । দেখলাম আবু বকর আর সেই যুবককে আবার একসাথে । আমি তাদের চোখে চোখে রাখতে লাগলাম । কিন্তু সন্ধ্যে নেমে আসছিল । কাজেই সর্বক্ষণ তাদের নজর রাখা সম্ভব হচ্ছিল না । একসময় হঠাৎ লক্ষ্য করলাম আবু বকর দ্রুত আউট হাউস ছেড়ে শোপিয়া যাওয়ার রাস্তার দিকে চলেছে । আমি সঙ্গে সঙ্গে তার পিছু নিলাম । সেই সময় ক্রোধে নিজেকে বাস্তবিক উন্মত্ত মনে হচ্ছিল । মনে হচ্ছিল তাকে সেই মুহূর্তে সাবড়ে দিই । কিন্তু কৌতুহল হল , সে যাচ্ছে কোথায় ? বিড়ালের মত আমারও ইচ্ছে হল শিকার কে একটু দৌড় করানোর । গতকাল রাত্রে আমি ঘরে খবর দিতে পারিনি । আমি মোবাইল ফোন ব্যবহার করি না । এদিকে আবু বকর দেখলাম চলেছে শ্রীনগর । আমি কোন কিছু না ভেবে তার পিছু নিলাম । কিন্তু তবুও তাকে আমি হারিয়ে ফেললাম শ্রীনগরে লোকজনের ভীড়ে !
গুলফাম স্যার অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন ,
-- কেমন করে ?
বিনোদ ডাকুয়া অদ্ভুত চোখে তাঁর দিকে চেয়ে বললেন ,
-- বো���ার মত ! আমি তাকে একটা বাড়িতে ঢুকতে দেখলাম । অপেক্ষা করতে লাগলাম বাইরে । সে বেরুলে আমি আবার তাকে অনুসরণ করতে শুরু করলাম । ভাল লেকের কর্নারে কিছু লোকজন ভীড় করেছিল । তাদের কাটিয়ে চলবার সময় মাঝপথে হঠাৎ আমি আবিষ্কার করলাম , আমি যাকে অনুসরণ করে চলেছি সে আবু বকর নয় ! আমি শুধু শুধু গভীর রাত পর্যন্ত বুলেভার্ড ও শ্রীনগরের পথে পথে তাকে বৃথাই খুঁজে ফিরলাম । নিজেকে উন্মাদ মনে হচ্ছিল তখন । বাড়ি ফিরবার বাসও নেই তখন । তারপর ফিরে এলাম সেই বাড়িটির সামনে । কিন্তু কোথায় কী ! তারপর হোটেলে গিয়ে বাকী রাত কাটিয়ে ফিরে এলাম ।
আমি বিনোদ ডাকুয়ার জ্বলে ওঠা মুখের দিকে চেয়ে প্রশ্ন করলাম ,
-- যে বাড়িটাতে আবু বকর ঢুকেছিল আমায় তার ঠিকানাটা বলতে পারেন মিঃ ডাকুয়া ? আর যে জায়গাটিতে আপনি তাঁকে হারিয়ে ফেলেন , সেই রাস্তাটার নাম ? প্লীজ ।
বিনোদ ডাকুয়ার চোখে বন্য আলো ঝলসে উঠতে দেখলাম । তিনি চোখ বুজে বললেন ,
-- আমার মনে হয় আমি এখন তা বলতে অক্ষম । আমি আরো দুদিন দেখতে চাই । কারণ আবু বকর প্রথমে আমার আসামী , তারপর আপনাদের শিকার । আমি তার ঠিকানা আপনাদের অবশ্যই বলবো ব্যানার্জি স্যার ।
* হাতে রইল শূন্য
অবশেষে আমাদের মোহ ভঙ্গ হল । অনেক অনুরোধেও বিনোদ ডাকুয়া আমাদের শ্রীনগরের সেই ঠিকানা দুটি বললেন না । অতএব আমি আর গুলফাম স্যার উঠে পড়লাম । রেসটি থেকে বেরিয়ে আমরা চললাম শ্রীনগরের পানে । রাতে আমায় হোটেল আদুসে নামিয়ে দিয়ে গুলফাম স্যার চলে গেলেন ।
পরের দিন ডাল লেকের কিনারে কফি হাউসে বসতেই শুনলাম পেপার বিক্রেতাদের হাঁক ডাক । আউট হাউস রহস্যের যবনিকা ছেপে বের করেছে সব কাগজই। গত রাত্রে শোপিয়াতে পুলিশ অধীক্ষকের অফিসে প্রেস মিটে তিনি জানিয়েছেন হত্যা হওয়া মানুষটি বিখ্যাত ব্যবসায়ী মিঃ বিনোদ কুমার ডাকুয়া নন । একজন যুবা আর্টিস্ট আসলাম বেগ । কাজেই ছাড়া পেয়েছেন সুদেশ বর্মন । পুলিশ জেনেছে যে বিনোদ কুমার ডাকুয়া ঘরে ফিরে এসেছেন । তিনি হঠাৎ প্রয়োজনে শ্রীনগর চলে আসেন কাউকে সংবাদ না দিয়ে , তাতেই গ্রামবাসীদের ধারণা হয় তিনি মৃত ।
পুলিশ আরো জানিয়েছে যে , জাহিদ গনাই বা জুনেইদ মাট্টু অথবা আবু বকর যে নামেই ডাকা হোক না কেন একজন ভয়ানক খুনী । আউট হাউসে যে লাশটি পাওয়া গিয়েছে সেটি পরীক্ষা করে সার্জেন জানিয়েছেন যে গলাটি ক্ষুর দিয়ে কাটা হয়েছে । এবং আউট হাউসের পোড়া ভগ্ন স্তুপে ক্ষুরটি পুলিশ খুঁজে পেয়েছে । এছাড়া একটি পুরানো লন্ঠনের পোড়া ফ্রেমও আবিষ্কৃত হয়েছে আউট হাউসে । মনে হয় এটাই আগুনের উৎস ছিল । তবে সবচেয়ে যেটা চমকে দেওয়া তথ্য সেটা হল অর্ধদগ্ধ মানুষটির পুড়ে যাওয়া মুখের কপালে পাওয়া একটা আবছা লাল ত্রিকোণ দাগ ! রঙটি পুড়ে নিঃশেষে নষ্ট না হওয়ায় তা সার্জেন সনাক্ত করতে সক্ষম হন ।
নিউজ পেপার থেকে মুখ নামিয়ে রেখে গোঁফ থেকে কফি মুছে ফেলে গুলফাম স্যার মন্তব্য করলেন ,
-- য়হ এক বাত হী বিনোদ ডাকুয়া কা বয়ান কী সত্যারোপন কে লিয়ে কাফী নহী হ্যায় ব্যানার্জি ?
-- ওহ তো হ্যায় । কিন্তু আফসোস এই যে আমাদের হাতে না জাহিদ গনাই , না জুনেইদ মাট্টু আর না আবু বকর এলো !
-- লেকিন লাল ত্রিকোণ কা থিওরী তো সাফ হুয়া ক্যা নহী ব্যানার্জি সাহাব ?
গুলফাম স্যারের উজ্জ্বল চোখের দিকে চেয়ে আমি কেবল মৃদু হাসলুম ।
আমাদের সামনে আজ ডাল লেকের জল সকালের সোনালী রোদের রঙ লেগে ঝলমল করছে । তিনজন মেয়ে শিকারা চালিকা ফুলের সম্ভার নিয়ে আসছে ঘাটের দিকে , যেন নতুন দিনের রঙীন সম্ভাষণ !
সমাপ্ত।
0 notes
sristybarta · 3 years
Text
আগামী ৩ দিনে বৃষ্টির আভাস
আগামী ৩ দিনে বৃষ্টির আভাস
আগামী তিন দিনে বৃষ্টিপাতের আভাস দেখছে আবহাওয়া অফিস। এক্ষেত্রে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম, মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টিপাত হতে পারে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ অবস্থান করছে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে। আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, এই অবস্থায় শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে…
Tumblr media
View On WordPress
0 notes
dailypanjeree · 3 years
Text
৬ জেলায় বইছে শৈত্যপ্রবাহ, আরও বাড়বে শীত
৬ জেলায় বইছে শৈত্যপ্রবাহ, আরও বাড়বে শীত
জেঁকে বসছে শীত, ফের বইতে শুরু করেছে শৈত্যপ্রবাহ। মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) নীলফামারী, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, পাবনা, নওগাঁ ও চুয়াডাঙ্গা- এই ছয় জেলার উপর দিয়ে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। আগামী তিনদিনের মধ্যে তাপমাত্রা আরও কমে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ কোথাও কোথাও মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে রূপ নিতে পারে। একই সঙ্গে শৈত্যপ্রবাহ নতুন অঞ্চলে বিস্তৃতি লাভ করতে পারে বলেও জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান বলেন,…
Tumblr media
View On WordPress
0 notes
natunsylhet24 · 2 years
Text
দেশে ভারী বর্ষণের আভাস, সমুদ্রবন্দরে সতর্কতা সংকেত
দেশে ভারী বর্ষণের আভাস, সমুদ্রবন্দরে সতর্কতা সংকেত
দেশের সব বিভাগে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের আভাস রয়েছে। গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার কারণে উপকূলে ঝড় বয়ে যেতে পারে। তাই সমুদ্রবন্দরগুলোতে তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।  সোমবার (৩০ মে) রাতে এমন পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বিহার থেকে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল হয়ে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এছাড়া উত্তর…
Tumblr media
View On WordPress
0 notes
bdtodays · 4 years
Text
New Post on BDTodays.com
খেলাধুলা শুধু শারীরিক সুস্থতা নয়, মানসিক প্রশান্তিও দেয়: লায়ন মোস্তুফা কামাল
Tumblr media
মেহরাবুল ইসলাম সৌদিপ: মুজিব বর্ষ বিজয় দিবস খো খো টুর্নামেন্ট-২০২০ ফাইনালের পুরুষ্কার বিতরনী ও চ্যাম্পিয়ন এ্যাথলেটিকদের সংবর্ধনার আয়োজন করেন যশোর জেলা ক্রিয়া সংস্থা। উক্ত আনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল যশোর জেলার জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান, লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫ এ ১ এর দ্বিতীয় ভাই...
বিস্তারিত এখানেঃ https://bdtodays.net/%e0%a6%96%e0%a7%87%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a7%e0%a7%81%e0%a6%b2%e0%a6%be-%e0%a6%b6%e0%a7%81%e0%a6%a7%e0%a7%81-%e0%a6%b6%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%b8%e0%a7%81/
0 notes
greenjaydeep · 6 years
Photo
Tumblr media
মু খো মু খি (at Hasta Shilpa Mela, Eco Park) https://www.instagram.com/p/Bsm9xzqAKXc/?utm_source=ig_tumblr_share&igshid=ak2tugoydrvt
0 notes
khabarsamay · 7 years
Text
আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয়  খো খো-তে শেষ আটে উঠলো উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়
শিলিগুড়ি, ২৫ নভেম্বর : ছত্রিশগড়ের দুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়কে হারিয়ে মেয়েদের আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয়  খো খো-তে শেষ আটে উঠলো উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। ৩ পয়েন্টে তাঁরা জয়ী হয়। আজ কোয়ার্টার ফাইনালে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় মুখোমুখি হবে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের । (এনএ) Read the full article
0 notes