Tumgik
#আক্রমণ
banglakhobor · 1 year
Text
সরকারের টাকা তছনছ করে বই, ঘন ঘন বিমানযাত্রা! রাজ্যপালকে আক্রমণ কুণালের
কলকাতা: রাজভবন থেকে সমান্তরাল সরকার চালানোর চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ তুলেছেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে (CV Ananda Bose) তীব্র আক্রমণ করলেন তৃণমূলের (TMC) রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। রাজ্যপাল বিজেপি-র (BJP) ‘দালালি’ করছেন বলে দাবি করলেন তিনি। রাজ্যপালের আবারও দুর্নীতির অভিযোগ তুললেন কুণাল। (Kolkata News) রাজভবনে পিস কন্ট্রোল রুম খোলার পর, রাজ্যে…
View On WordPress
0 notes
khushboolakhmani · 3 months
Text
*শেখতকী কর্তৃক কবীর সাহেব-কে চক্র দিয়ে মারার প্রচেষ্টা*
শেখতকী বিবেচনা করলেন যে একটি চক্র তৈরি করে কবির সাহেবের মাথা কেটে ফেলা হবে । তারপরে একদিন শেখতকীর কাছ থেকে ইশারা পেয়ে চক্র চালক কবীর জীর উপর আক্রমণ করে, কিন্তু ওর নিজেরই মাথা কাটা যায়, তারপর কবীর সাহেব ওনাকেও জীবিত করে দেয় নিজের শক্তিতে, কারণ কবীর পরমাত্মা সমর্থ |
*शेखतकी द्वारा कबीर साहेब जी को चक्र से मारने का प्रयास*
शेखतकी ने विचार किया कि चक्र बनाकर कबीर साहेब के सिर को काट दिया जाये। फिर एक दिन शेखतकी का इशारा पाकर चक्र चालक ने वार किया लेकिन उसका ही सिर कट गया फिर कबीर साहेब ने उसे जिन्दा कर दिया अपनी शक्ति से क्योंकि कबीर परमात्मा समर्थ है।
Tumblr media
9 notes · View notes
tulsidasi912 · 3 months
Text
*শেখতকী দ্বারা ঘুমন্ত কবীর সাহেবের উপর আক্রমণ*
নিষ্ঠুর শেখতকী ঘুমন্ত কবীর জীর উপর প্রাণে মারার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করে, কিন্তু ওই অজ্ঞানী অবিনাশী পরমাত্মার কিছুই করতে পারেনি |
*शेखतकी द्वारा सोते हुए कबीर साहेब पर हमला*
जालिम शेखतकी ने सोते हुए कबीर जी पर जानलेवा
हमला करवाया लेकिन वह मूर्ख अविनाशी परमात्मा का कुछ नही बिगाड़ पाया ।
Tumblr media
2 notes · View notes
maroonpaper · 2 years
Text
মরক্কোর জাতীয়তাবাদি আন্দোলন ও সুলতান মুহাম্মাদ
Tumblr media
মরক্কো উত্তর আফ্রিকার একটি স্বাধীন ও আরব রাষ্ট্র। এর রাজধানী রাবাত। পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগরের তীরবর্তী অঞ্চল জুড়ে এবং উত্তরে ভূমধ্য সাগরের জিব্রাল্টার প্রনালী পর্যন্ত বিস্তৃত। মরক্কোর পূর্বে আলজেরিয়া, উত্তরে ভূমধ্যসাগর ও স্পেন এবং পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর অবস্থিত। এর দক্ষিণে পশ্চিম সাহারা অবস্থিত।
মরক্কো রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন
মরক্কোর গোড়াপত্তনের ইতিহাস বলে যে, কথা প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে হোমিনিডরা তথা বর্তমান মানুষদের পূর্বসূরীরা কমপক্ষে ৪০০,০০০ বছর আগে এই অঞ্চলে বাস করত। খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম ও ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যে মরোক্কোর উপকূলে ফিনিশীয় উপনিবেশ স্থাপনের আগে প্রায় দুই হাজার বছর ধরে এই অঞ্চলে স্থানীয় বার্বাররা বসবাস করত। এটাই মরক্কোর সভ্যতার প্রথম নথিভুক্ত ইতিহাস।
খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে নগর-রাষ্ট্র কার্থজের আওতায় মরক্কোর উপকূলীয় অঞ্চলও চলে আসে। তারা খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেছিল। এই সময়ে স্থানীয় শাসকরা উপকূল থেকে ভেতরের দিকের অঞ্চলে শাসন পরিচালনা করেছিলেন। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী থেকে চল্লিশ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত যখন এই অঞ্চল রোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল, স্থানীয় বার্বার রাজারাই এই অঞ্চল শাসন করেছিলেন। খ্রিস্টীয় ৫ম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এটি জার্মানীয় ভান্ডালদের দখলদারিত্বের শিকার হয়েছিল। কিন্তু বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য ষষ্ঠ শতাব্দীতে মরক্কোকে পুনরুদ্ধার করে।
খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দীর গোড়ার দিকে  এই অঞ্চলটি মুসলমানরা বিজয় করেছিল, তবে ৭৪০ সালের বার্বার বিদ্রোহের পরে উমাইয়া খিলাফত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়  । অর্ধ শতাব্দী পরেই ৭৮৮ খ্রিষ্টাব্দে ইদ্রিস রাজবংশই প্রথম মরোক্কো রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীকালে এটি একাধিক স্বাধীন রাজবংশ, আলমোরাভিড এবং আলমোহাদ রাজবংশের অধীনে মরক্কো মাগরেব এবং মুসলিম স্পেনে আধিপত্য বিস্তার করেছিল।
একাদশ  এবং দ্বাদশ শতাব্দীতে আঞ্চলিক শক্তি হিসাবে মরক্কো শীর্ষে পৌঁছেছিল। সাদি রাজবংশ ১৫৪৯ থেকে ১৬৫৯ সাল পর্যন্ত দেশ শাসন করেছিল, তারপরে  ১৬৬৭ সাল থেকে আলাওয়িরা মরক্কোর শাসক রাজবংশ ছিল।
জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ক্রমবিকাশ
নানা বাঁধা-বিপত্তি, রক্তক্ষয়য়ী সংগ্রামের বিনিময়ে ১৯৫৬ সালের ২ মার্চ মরক্কো ফ্রান্সের থেকে স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করে। এ স্বাধীনতা আন্দোলনে পঞ্চম মুহাম্মদ ও ইশতিকলাল দলের ভূমিকা অবিস্মরনী��়। বিশেষ আফ্রিকার স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মরক্কোর জাতীয়তাবাদী আন্দোলন এক বিশেষ স্থান অর্জন করেছে। মরক্কোর এই জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে বুঝতে হলে আগে আমাদেরকে মরক্কোতে উপনিবেশবাদের সাথে পরিচত হতে হবে।
ভৌগলিকভাবে ইউরোপের সাথে আফ্রিকার বিভাজন হয়েছে জিব্রাল্টার প্রণালীর মাধ্যমে। মাত্র কয়েক কিলোমিটার ব্যবধানে এই মহাদেশ দুটির অবস্থানের কারণে ১৭ শতক থেকেই আলমোরাভিড এবং আলমোহাদ রাজবংশের অধীনে মরোক্কোকে উত্তরে স্প্যানিশ আক্রমণ এবং পশ্চিমদিকে উসমানীয় সাম্রাজ্যের আগ্রাসনের সাথে মুখোমুখি হতে হয়েছে।
ইউরোপে শিল্পায়নের ছোয়া এলে তাদের লোলুপ দৃষ্টি প্রতিবেশিদের ওপর পড়তে শুরু করে। শিল্প বিপ্লবের সাথে সাথে ইউরোপ উত্তর-পশ্চিম আফ্রিয়ায় নিজেদের উপনিবেশ স্থাপনের পায়তারা শুরু করে। এদিক থেকে স্পেন ও ফ্রান্স দুটি দেশেরই ভৌগলিকভাবে নিকটতম প্রতিবেশি মরক্কো নজরে পড়ে। দুটি দেশেরই উপনিবেশ স্থাপনের এক সম্ভাবনাময় আদর্শ অঞ্চল হয়ে ওঠে মরক্কো।
উপনিবেশবাদের গোড়াপত্তন
সাদি রাজবংশের পতনের সময় রাজনৈতিক বিভাজন এবং সংঘাতের পরে আলাউই সুলতান আল-রশিদ, ১৬৬০ এর দশকের শেষের দিকে পুনরায় মরক্কোকে একত্রিত করেছিলেন। স্থানীয় উপজাতির বিরোধিতার বিরুদ্ধে ইসমাইল ইবনে শরীফ একটি একক রাষ্ট্র গঠন শুরু করেন। বিভিন্ন সময়ে স্প্যানিশ, ইংরেজদের অতর্কিত হামলা, দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তার রিফিয়ান আর্মি ইংরেজদের কাছ থেকে ট্যাঙ্গিয়ার দখল পুনরুদ্ধার করেছিল এবং ১৬৮৯  সালে স্প্যানিশদের লারাচে থেকে  তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। পর্তুগিজরাও ১৭৬৯ সালে মরোক্কোতে তাদের শেষ অঞ্চল মাজাগাও ত্যাগ করে। তবে এই প্রতিরোধ বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনি।মরক্কোর স্বাধীনতা বেহাত হয় স্প্যানিশদের  বিরুদ্ধে ‘মেলিলার অবরোধ’ ১৭৭৫ সালে পরাজয়ের মাধ্যমে।
এই সময়ে আটলান্টিক সাগরে আমেরিকান জাহাজগুলো হর-হামেশাই বার্বার জলদস্যুদের আক্রমণের শিকার হতো। মরক্কোর তৃতীয় সুলতান মোহাম্মাদ আমেরিকান জাহাজগুলোকে বার্বার দস্যুদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা প্রদান করেন। ১৭৮৬ সালেই আমেরিকা-মরক্কো বন্ধুত্ব চুক্তি সাক্ষরিত হয়। সেই থেকে আমেরিকা ও মরক্কো একে অপরের দিকে সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়।
মরক্কোর প্রতিবেশী আলজেরিয়ায় আগেই ফ্রান্স উপনিবেশ স্থাপন করেছিল। সেই সুবাদে তারা মরক্কোতে খুব কাছ থেকেই নজর রাখছিল। ১৮৩০ সালের শুরুর দিকে সর্ব প্রথম ফ্রান্স মরক্কো দখলের পায়তারা শুরু করে। একই সময়ে স্পেনের সাথে মরক্কোর দীর্ঘদিনের কোন্দল ধীরে ধীরে মাথাচাড়া দেয়া শুরু করে। ১৮৬০ সালে সেউতা ছিটমহল নিয়ে বিরোধের কারণে স্পেন মরক্কোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এই যুদ্ধে সেউতাসহ আরো একটি ছিটমহল দখল করে নেয় স্পেন। কার্যত ১৮৮৪ সালে মরক্কোর উপকূলীয় অঞ্চলে স্পেনই উপনিবেশ গড়ে তোলে। ফ্রান্সই সর্বপ্রথম উপনিবেশ করার পায়তারা করলেও, এক্ষেত্রে স্পেনই প্রথম সফল হয়।
১৯০৪ সাল থেকে ফ্রান্স ও স্পেন মরক্কোতে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার শুরু করে। হাজার হাজার ইউরোপীয় মরক্কোতে অনুপ্রবেশ করে জমাজমি কেনা শুরু করে। শিল্পোন্নয়ের নামে তারা বিভিন্ন দ্বীপ, খনিতে প্রভাব খাটানো শুরু করে। তাদের এহেন কাজকর্মে সুবিধার জন্য ফ্রান্সকে চাপ দেয়া শুরু করে মরক্কোকে বাগে আনতে। ফ্রান্স মরক্কোকে বাগে রাখতে ফ্রান্স-মরক্কো সহযোগিতামূলক কার্যক্রম শুরু করতে সক্ষম হয়। পরবর্তিতে তারা বিভিন্নভাবে মরক্কোর ওপর প্রভাব বিস্তার শুরু করে।
মরক্কোতে ফ্রান্সের এহেন প্রভাব বিস্তারে যুক্তরাজ্য সম্মতি ছিল। তবে মরক্কোর পুরনো মিত্র আমেরিকা এসময় মরক্কোকে কূটনৈতিক সহযোগিতা প্রদান করে।
১৯০৫ সালে পরাশক্তি গুলোর মাঝে একটি সংকট দেখা দেয়। ১৯১১ সালে ‘আপাদির সংকট’ ইউরোপীয় শক্তিগুলোর মাঝে উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে।
১৯১২ সালে মরক্কোর সুলতান আবদুল হাফিজের সঙ্গে ‘ফেজ চুক্তি’ স্বাক্ষর করে ফ্রান্স। এ চুক্তি অনুযায়ী মরক্কোকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। উত্তর উপকূলীয় অঞ্চল, দক্ষিণ- পশ্চিম অঞ্চল ও পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে স্পেনের দখল প্রতিষ্ঠিত হয় আর বাকি অংশ চলে যায় ফরাসীদের অধীনে। এ চুক্তির মধ্য দিয়েই মরক্কোকে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ফরাসি ‘আশ্রিত ভূখণ্ড’ বানানো হয়। এর পরের বছরগুলোতে ফ্রাস সেখানে উপনিবেশ স্থাপন করে বসে। স্পেনীয় অঞ্চলে একজন হাইকমিশনার এবং ফরাসি অঞ্চলে একজন আবাসিক জেনারেল শাসন করতেন।
জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও গাজী আব্দুল করিম
ফরাসীরা মরক্কোতে তাদের উপনিবেশ কায়েম করে তাদের আশ্রিত অঞ্চল হিসেবে শাসন কার্য পরিচালনা শুরু করে। ফলে জনগণ তাদের ওপর ধীরে ধীরে ক্ষুব্ধ হতে থাকে। ১৯১২ সালে মরক্কোর জাতীয়তাবাদী নেতা গাজী আব্দুল করিম উপজাতীদের সঙ্ঘবদ্ধ করে ফরাসী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ফেজ নগর পুনরুদ্ধার করে নেয়। ১৯২৬ সালে ফরাসীরা গাজী আব্দুল করিমকে পরাজিত করে এবং নির্বাসনে পাঠায়। ফরাসীরা মরক্কোর সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করলেও মরক্কোবাসী বিদেশী আধিপত্যকে কখনোই মেনে নিতে পারেনি।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকেই মরক্কোতে উপনিবেশবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। মরক্কোর জাতীয়তাবাদী নেতা আব্দুল করিমের নেতৃত্বে প্রগতিশীল জনগণ ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে আবার আন্দোলন শুরু করেন। এই আন্দোলনে স্পেনীর উপনিবেশের পতন ঘটে। আব্দুল করিম বিজয়ী হয়ে “বিজা প্রজাতন্ত্র” গঠন করেন। তবে ১৯২৭ সালে স্পেন ও ফ্রান্স জোটবদ্ধ হয়ে আব্দুল করিমকে পরাজিত করে। ফরাসীদের কঠোর দমননীতি মরক্কোবাসীদের ভেতরে পুনরায় জাতীয়তাবাদকে জাগিয়ে তোলে। ১৯৩০ সালে দাহিব নামক এক নির্যাতনমূলক আইন জারি করলে দেশের জনগণ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু করে।
১৯২০ সালে মরক্কোতে একটি বিদ্রোহ দমন করছে ফরাসী বাহিনী। ছবিঃ বিবিসি
সুলতান মুহাম্মাদ বিন ইউসুফ(পঞ্চম মুহাম্মদ) জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকারীদের সাথে একাত্মতা পোষণ করে ফরাসী উৎখাতের সংগ্রাম শুরু করেন। জাতীয়তাবাদী নেতারা দেশের স্বাধীনতার জন্য জোরেশোরেই সংগ্রাম শুরু করে। ১৯৩৪ সালে ফরাসী কর্তৃপক্ষের নিকট একটি সংস্কারমূলক প্রস্তাব পেশ করা হয়। ১৯৩৭ সালে এই প্রস্তাবের সাথে আরো কিছু দাবি যুক্ত করা হয়। এসব দাবীর মধ্যে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান, বিচার বিভাগের সংস্কার অন্যতম। স্বাধীনতাকামীরা প্রথমে ন্যাশনাল একশন কমিটি এবং পরবর্তীতে নিউ ইশতিকলাল দলের মাধ্যমে দাবি আদায়ের আন্দোলন শুরু করে। আব্দুল খালেক তোরণের ‘আল ইসলাহ’ এওবং মক্কা আল নাসিরের ‘মরক্কো ইউনিট” দল জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে শামিল হলে আন্দোলন আরো বেগবান হয়। এ সময় পঞ্চম মুহাম্মদের প্রচারণায় মরক্কোর স্বাধীনতা আন্দোলন চুড়ান্ত রূপ ধারণ করে।
ইশতিকলাল দল গঠন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মরক্কোর জাতীয়তাবাদী আন্দোলন এক নতুন মাত্রা বেগবান হয়। ১৯৪৩ সালে মরক্কর জাতীয়তাবাদী নেতারা প্রথমবারের মত ইশতিকলাল নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে। অনেকগুলো ছোট ছোট দলের সমন্বয়ে গঠিত এ দলটি খুব অল্প সময়ের মধ���যে মরক্কোবাসীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করে। সুলতান নিজেও এই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানান। ফলে নির্বিঘ্নে এ আন্দোলন চলতে থাকে। ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত দেশের ভেতরে ব্যাপক সমর্থন লাভ করে এবং কায়রো ও নিউইয়র্কে তাদের বিদেশ অফিস চালু করা হয়।
আরো পড়ুনঃ পশতুনিস্তান সমস্যা ও সমাধান
১৯৫২ সালের ডিসেম্বরে তিউনিশিয়ার শ্রমিক নেতা ফারহাত হাচেদের হত্যার প্রতিবাদে কাসাব্লাঙ্কায় ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়; এই ঘটনা মরোক্কোর রাজনৈতিক দল এবং ফরাসি কর্তৃপক্ষের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি পরিস্থিতি দাড় করায়। দাঙ্গার পরে, ফরাসী সরকার মরোক্কোর কমিউনিস্ট পার্টি ও ইস্তিকলাল পার্টিকে বে-আইনি ও নিষিদ্ধ  ঘোষণা করে এবং দলের বহু নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে।
সুলতান পঞ্চম মুহাম্মদের নির্বাসন ও ষষ্ঠ মুহাম্মদের ক্ষমতায় আরোহন
মরক্কোর জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে ফরাসীরা কঠোরভাবে দমন করার চেষ্টা করে। আর সুলতান পঞ্চম মুহাম্মদ জাতীয়তাবাদী নেতাদের প্রতি সমর্থণ ও সহানুভূতি জ্ঞাপন এবং বিশেষ ভূমিকার কারণে তিনি ফরাসী সরকারের বিরাগভাজন হন।
মরক্কোর স্বাধীনতা আন্দোলনে ভীত ফরাসি সরকার ১৯৫৩ সালের ২০ আগস্ট ঈদ উল আজহায় সুলতান পঞ্চম মোহাম্মদকে সপরিবারে কর্সিয়ায় নির্বাসনে পাঠায়। এসময় ফরাসিরা মোহাম্মদ বেন আরাফাকে কাঠের পুতুল হিসেবে ক্ষমতায় বসায়। সুলতান আরাফা মরক্কোতে ‘ফরাসি সুলতান নামে পরিচিতি পান। ১৯৫৪ সালের জানুয়ারীতে পঞ্চম মোহাম্মদকে মাদাগাস্কারে সরিয়ে নেয় ফরাসি সরকার। এই নির্বাসন ও পুতুল শাসক আরাফার  আগমন মরক্কোর জাতীয়তাবাদী ও ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। উভয় পক্ষই ফরাসীদের এই কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে।  সুলতান মুহাম্মদের ক্যারিশমাটিক নেতৃতে মুগ্ধ মরক্কোবাসী তাকে জাতীয় নেতা হিসেবে গ্রহণ করেন। মরক্কোর স্বাধীনতাকামী জনগণ সুলতান মুহাম্মদের দিকনির্দেশনায় আন্দোলন চালিয়ে যায় তার অনুপস্থিতেই।  
ফরাসীদের দমননীতি
ফরাসীরা পঞ্চম মুহাম্মদকে সরিয়ে ষষ্ঠ মুহাম্মদকে ক্ষমতায় বসালে প্রতিশোধ হিসাবে, মুহাম্মদ জারকতুনি সেই বছরের  ক্রিসমাসে ইউরোপীয় ভিলে নুভেলের কাসাব্লাঙ্কার মার্চে সেন্ট্রালে  বোমা  হামলা করেছিলেন। যাইহোক, ফরাসিদের মদদে ষষ্ঠ মুহাম্মদ ক্ষমতায় এসে এক নতুন শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। তার এ শাসন ব্যবস্থায় মরক্কোর স্বার্থবিরোধী কতগুলো সুযোগ-সুবিধা ফরাসীদের জন্য প্রণয়ন করা হয়। যেমনঃ
রাজা নিজের ইচ্ছায় দেশ পরিচালনা না করে মরক্কোকে আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত করবে।
ভবিষ্যতে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করে ফরাসী ও সুলতানি শাসন রক্ষা করবে।
বিচারকদের একই সাথে শাসন ও বিচারের ক্ষমতা প্রদান করা হবে।
শ্রমিকদের জন্য নতুন আইন প্রণয়ন করবে।
নাগরিক অধিকার প্রদান করা হবে যদিও তখন পর্যন্ত দেশে সামরিক শাসন জারি ছিল।
ফরাসীদের দমননীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম
মরক্কোর স্বাধীনতা সংগ্রামে জাতীয়তাবাদি নেতাদের সহায়তা করার জন্য ফরাসী কর্তৃপক্ষের অভ্যন্তরে বিরোধ দেখা দেয়। ফরাসীরা নতুন সুলতানের মাধ্যমে মরক্কোর নাগরিক অধিকার খর্ব করে। স্বাধীনতাকামী নেতারা কারাগারেই বিক্ষোভ শুরু করে। ফলে মরক্কোর বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এ সংঘর্ষ চরম আকার ধারণ করলে সুলতান ও ফরাসীরা কঠোর হস্তে আন্দোলন দমন করা শুরু করে। এতে বহুসংখ্যক নাগরিক মারা যায় আন্দোলনে সমর্থন করার দায়ে।
এর দুই বছর পরে, আন্দোলনকারীদের সমর্থন করার অভিযোগে পঞ্চম মুহাম্মদকে ক্ষমতাচ্যুত করার দ্বিতীয় বার্ষিকীতে সমগ্র দেশে বিক্ষোভ হয়। সুলতানের প্রত্যাবর্তনের জন্য মরোক্কোর ঐক্যবদ্ধ দাবি ওঠে এবং মরক্কোতে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার পাশাপাশি আলজেরিয়াতেও পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হয়। এছাড়াও পুনরায় ফরাসী কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি দেয়া হয়।
সুলতান মুহাম্মাদ নির্বাসন থেকে ফিরছেন। ছবিঃ মরক্কো ওয়ার্ল্ড নিউজ
ইসতিকলাল দল, ট্রেড ইউনিয়ন ও অন্যান্য জাতীয়তাবাদী দলগুলো পুনরায় পঞ্চম মুহাম্মদকে ক্ষমতায় বসানোর প্রচেষ্টা চালায়। মরক্কোর স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের আন্দোলন পার্শ্ববর্তি লিবিয়া, আলিজেরিয়া, মিশরের জনসাধারনেরও সমর্থণ পায়। তারা পঞ্চম মুহাম্মদের নামে মসজিদে মসজিদে খুৎবা পাঠ করতে শুরু করে। কিন্তু তিনি আশ্রিত সুলতান হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণে অস্বীকার করেন। পরিস্থিতি অনুধাবণ করে শেষ পর্যন্ত উভয় সংকটের মুখোমুখি হয়ে ফরাসি সরকার শর্ত প্রত্যাহার করে তাকে দেশে ফিরে আসার আহবান জানায় এবং পঞ্চম মোহাম্মদকে মরক্কোতে ফিরিয়ে আনে। অবশেষে ১৯৫৫ সালের ১৬ নভেম্বর সুলতান বিজয়ীর বেশে দেশে ফিরে আসেন। এবং পরের বছর উভয়পক্ষের মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু হয় যা মরক্কোর স্বাধীনতার দিকে ধাবিত হয়।
মরক্কোর স্বাধীনতা ঘোষণা
সুলতান পঞ্চম মুহাম্মদ ১৯৫৫ সালের শেষের দিকে ফরাসি-মরোক্কোর পারস্পরিক নির্ভরশীলতার কাঠামোর মধ্যে মরোক্কোর স্বাধীনতা ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধারের জন্য আলোচনা করতে সফল হন, যা রাজা এবং জনগণের বিপ্লব নামে পরিচিতি লাভ করে। সুলতান এমন পরিবর্তনগুলি বাস্তবায়নে সম্মতি দিয়েছিলেন যা মরক্কোকে একটি গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার সাথে একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে পরিণত করবে। ১৯৫৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে মরক্কোকে সীমিত পরিসরে স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয়েছিল।
১৯৫৬ সালের ২ মার্চ প্যারিসে স্বাক্ষরিত ফরাসি-মরোক্কো চুক্তি হয়। ১৯৫৬ সালের ৭ এপ্রিল, ফ্রান্স আনুষ্ঠানিকভাবে মরক্কোস্থত উপনিবেশ ত্যাগ করে। ১৯৫৬ সালের ২৯ শে অক্টোবর ট্যানজিয়ার প্রোটোকল স্বাক্ষরের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকীকৃত শহর ট্যানজিয়ার পুনরায় মরক্কোর সাথে সংযুক্ত হয়েছিল।
স্পেন কর্তৃক মরোক্কোর স্বাধীনতার স্বীকৃতি এবং স্প্যানিশ উপনিবেশ বিলুপ্তি পৃথকভাবে আলোচনা করা হয়েছিল এবং ১৯৫৬ সালের এপ্রিলের যৌথ ঘোষণায় চূড়ান্ত করা হয়েছিল। তবে, স্পেনের সাথে এই চুক্তি এবং ১৯৫৮ সালে পৃথক আরেকটি চুক্তির মাধ্যমে কিছু স্প্যানিশ-শাসিত অঞ্চলে মরক্কোর নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করা করা সম্ভব হলেও সামরিক পদক্ষেপের মাধ্যমে অন্যান্য স্প্যানিশ উপনিবেশগুলো দাবি করার প্রচেষ্টা  ততটা সফল হয়েছিল।
১৯৫৬ ও ১৯৫৮ সালে সাক্ষরিত ফরাসি-মরোক্কো ও স্প্যানিশ -মরোক্কো চুক্তিগুলোর মাধ্যমে স্পেন ও ফরাসী সৈন্যরা চলে যেতে শুরু করে। এবং শেষ পর্যন্ত স্পেনীয়  ও ফরাসীদের বিতাড়িত করার মাধ্যমে পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে মরক্কো।
সুলতান পঞ্চম মুহাম্মদের অবদান
মাত্র সতের বছর বয়সে মরক্কোর সিংহাসনে বসেন সুলতান পঞ্চম মুহাম্মদ। তার বলিষ্ঠ নেতৃতের কা��ণেরি মরক্কোবাসী স্পেন ও ফরাসীদের দখলদারীত্বের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে সক্ষম হয়েছিল। ফরাসীরা মুহাম্মদকে তাদের অনুগত ভৃত্য হিসেবে সিং হাসনে বসালেও তিনি তাদের আনুগত্য মেনে নেননি। যারফলে ফরাসীদ���র রোষানলে পড়েন এবং নির্যাতিত হন। বিদেশী শাসনে মরক্কোর জনগণ যখন নিষ্পেষিত এবং একজন জাতীয় নেতার অভাব অনুভব করছিল ঠিক তখনই পঞ্চম মুহাম্মদ ক্ষমতায় আসেন এবং দেশের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালান এবং স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারে সফল হন।
স্বাধীনতার কয়েক মাসের মধ্যেই পঞ্চম মোহাম্মদ একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের অধীনে একটি আধুনিক সরকারী কাঠামো তৈরি করতে অগ্রসর হন  যেখানে সুলতান একটি সক্রিয় রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করবেন। তিনি সতর্কভাবে ইস্তিকলালকে তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং একদলীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা থেকে বিরত রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।তিনি ১৯৫৭ সালের ১১ আগস্ট রাজতন্ত্র গ্রহণ করেন এবং সেই তারিখ থেকে দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে ‘মরক্কো কিংডম’ নামে পরিচিতি লাভ করে। মরক্কোর স্বধীনতা পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে সুলতান মোহাম্মদের অবদান, নিঃস্বার্থ ত্যাগ ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য মরক্কোবাসীর নিকট জাতীয় বীর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।
মরক্কোর স্বাধীনতা সংগ্রাম ছিল উত্তর আফ্রিকার ইতিহাসে এক অবিস্মরণিয় অধ্যায়। মরক্কোবাসীরা দীর্ঘ প্রত্যাশিত স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে মহুমুখী ত্যাগতিতিক্ষা ও লড়াইয়ের বিনিময়ে। এ অর্জনে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল সুলতাবন পঞ্চম মুহাম্মদের ত্যাগ, সংগ্রাম। ফরাসীদের মনোনীত শাসক হলেও দেশের গণমানুষের জন্য তিনি সব স্বার্থকে তুচ্ছ করে সংগ্রাম করেছেন ফরাসীদের বিরুদ্ধে। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কাছে ফরাসীরা পরাজিত হয় এবং ১৯৫৬ সালে মরক্কো স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়। মরক্কোর এই সংগ্রাম আফ্রিকার অন্যান্য দেশগুলোর জন্য এক অনুকরণিয় আদর্শ।
1 note · View note
ajkershatabdi · 2 days
Text
নিষিদ্ধ নখের আঁচড়
বৃদ্ধ বয়সেও যাকে সঙ্গ দেওয়ার কথা ছিলো, তাকেও হারিয়ে ফেলেছি ক্ষণকালের তফাতে। আলো ঝলমলে চাঁদটা তিমির মাঝে হারিয়ে গেলেও আমার তাতে কিচ্ছু যায় আসে না। বু্কের ক্ষতে কখনো ব্যথা জেগে উঠলেও হাসি মুখেই তখনো সমুদ্র স্নানে যাবো। ফাঁস নিয়ে মরে যাওয়া যুবতী নারীর অভিমানে বিদ্ধ হতে যাওয়া সঙ্কুচিত পুরুষ সত্ত্বার ফুসফুসে আক্রমণ করতে থাকবে কীটপতঙ্গের সংঘবদ্ধ দল। তবুও চোখের সামনে মধ্যবয়সী কামুক রমণী দেখেও ফিরে…
0 notes
swetey291 · 20 days
Video
youtube
পিঁপড়া রাজার আক্রমণ। Attack of the Ant King
0 notes
quransunnahdawah · 1 month
Text
Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media
যখন সকল কিছু বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠী একত্র হবে, নিজেরা নিজেদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হবে এবং মজলুম মুসলমানদের সাহায্যার্থে এগিয়ে যাবে, তখন ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী পরাশক্তি গুলোও ভয় পাবে। মজলুম, নির্যাতিত মুসলিমরা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। দখলদার ইজরাইলের হাত থেকে এবং সকল নিপীড়িত মুসলিম কলোনি স্বাধীন হবে। মুসলিমরা আবার নিজেদের শক্তি ফিরে পাবে। মুসলিম ঐক্যের দ্বারাই আবার মুসলিমদের শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য 
মুসলিম ঐক্য : বর্তমান মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির সমাধান
Muslim Unity: A solution to the current division of the Muslim Ummah
ঐক্য বলতে সাধারণত আমরা বুঝি একতা, ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্যপূর্ণ বন্ধন। আর মুসলিম ঐক্য বলতে বুঝায় দেশ-জাতি, ভাষা,বর্ণ ও অঞ্চল ভেদাভেদ থেকে মুক্ত হয়ে সকল মুসলিমরা নিজেদের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব একাত্মতা পোষণ করা। অর্থাৎ বিশ্বের সকল মুসলিম একটি দেহের ন্যায় আবদ্ধ হওয়া, যেখানে থাকবে না কোন ব্যক্তি স্বার্থ। সবাই ভৌগোলিকভাবে দূরে থাকলেও সম্পর্ক হবে এক ও অভিন্ন।
পবিত্র কুরআন মাজিদে মহান আল্লাহ তায়ালা তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমারা আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরো (ঐক্যবদ্ধ হও) এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (সূরা আল-ইমরান : আয়াত ১০৩)। এখানে রজ্জু দ্বারা দ্বীন-ইসলামকে বুঝানো হয়েছে। একে রজ্জু এজন্যই বলা হয়েছে যে, এক দিকে আল্লাহর সাথে ঈমানদার লোকদের সস্পর্ক স্থাপন হয় এবং অন্যদিকে সমস্ত মুসলিমরা পরস্পর ঐক্যবদ্ধ ও মিলিত হয়ে একটি দৃঢ় ও শক্তিশালী জাতিতে রূপান্তরিত হয়। এই রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করার অর্থ এই যে, এ দ্বীনকে আল্লাহর জমিনে প্রতিষ্ঠা করার জন্য চেষ্টা করা করা এবং এক মুসলমান অপর মুসলমানকে ব্যক্তি স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর কল্যাণে প্রতিটি মুসলমানের একাত্মতা ঘোষণা করা অবশ্যই কর্তব্য। সকল মুসলিম জনগোষ্ঠী ভাই-ভাই। এক মুসলমান ভাইয়ের কোন সমস্যা পরিলক্ষিত হলে বা এক মুসলমান নির্যাতিত হলে অপর মুসলমান ভাই তার সাহায্যে এগিয়ে যাবে। কুরআন মাজিদে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।’ (সূরা হুজরাত : আয়াত ১০)।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো সমগ্র মুসলিম বিশ্ব আজ এই দীক্ষা থেকে শত মাইল দূরে সরে গেছে। নিজেদের স্বার্থ হাসিলে আজ মুসলমান পরস্পর ভাইয়ের সম্পর্ক ভাইয়ের সেটা ভুলে গিয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে এ বিষয়টি প্রমাণিত যে, যদি কোন জনসমষ্টি, রাষ্ট্র বা গোত্র পরাশক্তির অধিকারী হতে চায়, তবে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ ও নিজেদের মধ্যে দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। এই বিষয়টির সঠিক জ্ঞান কাজে লাগিয়ে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী ও উপনিবেশবাদী দেশগুলো এবং ইহুদি ও খ্রিস্টানরা তাদের মধ্যকার ঐতিহাসিক শত্রুতাকে ভুলে নিজ স্বার্থ রক্ষার্থে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে একই প্লাটফর্মে সমবেত হয়েছে। আর অন্যদিকে আমাদের মুসলিম দেশগুলো ভৌগলিক, আঞ্চলিক, ভাষাগত, জাতিভিত্তিক ও রাজনৈতিক সীমার বিভাজনেই শুধু বিভক্ত নয় বরং তারা হাজার দলে বিভক্ত হয়ে নিজেদের সকল বীরত্বের ইতিহাস ভুলে যেতে বসেছে। বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে অনৈক্য ও অসংহতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় দুইশো কোটির বৃহৎ একটি মুসলিম জনশক্তি রয়েছে।
পৃথিবীর প্রায় এক-চতুর্থাংশ ভূমি মুসলমানদের দখলে রয়েছে। তবুও বিশ্বের অন্যান্য শক্তির কাছে তারা আজ নত। দেশে দেশে আজ মুসলিমরা লাঞ্ছিত ও নিষ্পেষিত হচ্ছে । মজলুম মানুষের কান্নায় আকাশ ভারী হচ্ছে। কখনো কী ভেবে দেখেছি যে, মুসলমানদের এই অবস্থা হলো কেন? আর এর উত্তরে একমাত্র যে কারণ তা হলো, মুসলিম উম্মাহর ভেতরে ঢুকে গেছে অনৈক্যের বীজ। মুসলিম বিশ্ব আজ শত দলে বিভক্ত। উম্মাহর এই অনৈক্য ও অসংহতি সৃষ্টি করছে মারাত্মক বিষক্রিয়ার। ফলে তারা কাটাচ্ছে মুমূর্ষু অবস্থা।
অনৈক্যের কারণে বর্তমান বিশ্বে মজলুম মুসলিমদের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। বর্তমানে বহির্বিশ্বে মুসলিমরা ক্রমাগত তাদের ন্যায্য অধিকার হারাচ্ছে। নিজ ভূ-খ-ে নিজেরাই দাসে পরিণত হচ্��ে। এমনকি নিজেরাই নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে জড়িয়ে যাচ্ছে, যেখানে নিজেরা এক মুসলিম সম্প্রদায় অন্য মুসলিম সম্প্রদায়কে বহিরাগত আক্রমণ থেকে রক্ষা করার কথা ছিলো। ক্রমাগত মজলুম মুসলমানদের নীরব কান্না বেড়েই চলছে। সাম্প্রতিক ফিলিস্তিনের গাজা এলাকায় ইসরাইলি দখলদার বাহিনী যে গণহত্যা তান্ডব চালাচ্ছে, যেখানে মুসলিম বিশ্ব নীরব। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সংগঠন ওআইসি, আরবলীগ থেকেও তাদের স্বাধীনতার জন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না।
পশ্চিমা দেশগুলো যেভাবে ইসরায়েলকে সাপোর্ট দিয়ে আসছে, তার কিয়দংশও যদি মুসলিম বিশ্ব বা ওআইসি, আরবলীগের মতো সংগঠন দিতো তাহলে আজকে এই দূরাবস্থায় পড়তে হতো না। শুধু ফিলিস্তিন নয়, সিরিয়া থেকে শুরু করে, ইরাক, চীন, ভারত, মিয়ানমারসহ বিশ্বের অনেক দেশেই এখন নির্যাতন-নিপীড়নের লক্ষ্যবস্তু হলো মুসলিম সম্প্রদায়। মুসলিম ঐক্য থাকলে আজ ইসরাইল ও পশ্চিমা দেশগুলো এমন সাহস পেত না। সুতরাং এখান থেকেও বুঝা যায় যে,মুসলিম ঐক্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। উম্মাহের এই ক্রান্তিলগ্নে ঐক্যর কোন বিকল্প নেই।
যখন সকল কিছু বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠী একত্র হবে, নিজেরা নিজেদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হবে এবং মজলুম মুসলমানদের সাহায্যার্থে এগিয়ে যাবে, তখন ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী পরাশক্তি গুলোও ভয় পাবে। মজলুম, নির্যাতিত মুসলিমরা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। দখলদার ইজরাইলের হাত থেকে এবং সকল নিপীড়িত মুসলিম কলোনি স্বাধীন হবে। মুসলিমরা আবার নিজেদের শক্তি ফিরে পাবে। মুসলিম ঐক্যের দ্বারাই আবার মুসলিমদের শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
বিশ্ব মুসলিমের ঐক্য : কুরআনের দাবি
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন; নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি ও পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হতে নিষেধ করেছেন এবং এই ঐক্যের বন্ধন হিসেবে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (সূরা আলে-ইমরান : ১০৩)। এ আয়াতাংশে আল্লাহ তায়ালা তিনটি নির্দেশ দিয়েছেন- ১. মুসলমানদের আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকতে হবে। বেশির ভাগ তাফসিরকারকের মতে, ‘আল্লাহর রজ্জু’ বলতে পবিত্র কুরআনকে বুঝানো হয়েছে। এই কুরআনই ইসলামের মূল ভিত্তি এবং কুরআনের বাস্তব নিদর্শন মহানবী সা:-এর সুন্নাহ। মুসলমানদের অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে পবিত্র কুরআন ও নবীর সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকা। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে অনুসরণ করা। ২. কুরআনের ভিত্তিতে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ অর্থাৎ একমাত্র ইসলামই বিশ্ব মুসলমানের ঐক্যের ভিত্তি ও বন্ধন। ইসলাম ভিন্ন অন্য কিছু- ভাষা, গোত্র, বর্ণ কিংবা আঞ্চলিকতা মুসলমানদের ঐক্যের মূল ভিত্তি হতে পারে না। এগুলো ইসলামের অধীনে ঐক্যের অতিরিক্ত উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে। ৩. নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা বা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হওয়া যাবে না। মুসলমানরা যদি নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে, দল-উপদলে বিভক্ত হয়, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয় এবং একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ করে তা হবে আল্লাহ তায়ালার এই নির্দেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
মুসলমানরা যেন একতাবদ্ধভাবে থাকে এবং নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত ও ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত না হয়, সে বিষয়ে কুরআনে আল্লাহ তায়ালার আরো নির্দেশ রয়েছে।
মুসলমানদের পরস্পরের সম্প্রীতি ও ভালোবাসা তথা ঐক্যকে আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি তাঁর ‘নিয়ামত’ বলে উল্লেখ করেছেন। মহানবী মুহাম্মদ সা:-এর সাহচর্যে এসে তাঁর আনীত দ্বীন গ্রহণ করে মক্কার মুহাজির ও মদিনার আনসার এবং মদিনার চিরবৈরী আউস ও খাজরাজ গোত্র পরস্পরের ভাই ভাই হয়ে গেল- আল্লাহ বলেন : ‘আর তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো, যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, অতঃপর তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন, ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে। তোমরা অগ্নিগর্তের দ্বারপ্রান্তে ছিলে, তিনি তোমাদের তা থেকে রক্ষা করেছেন’ (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-১০৩)।
আল্লাহ পাক বলেন : ‘তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শন আসার পরও বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-১০৫)।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন : ‘মুমিনরা পরস্পরের ভাই ভাই; কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপস মীমাংসা করে দাও। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও’ (সূরা হুজুরাত-১০)। এই আয়াত দুনিয়ার সব মুসলমানকে বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। প্রত্যেক মুসলিম অপর মুসলিমকে নিজের ভাইয়ের মতো আপন মনে করবে, এটি আল্লাহর আদেশ। অতএব একজন মুসলমান অপর মুসলমানকে কোনো শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া ঘৃণা করতে পারে না, তার কোনো অনিষ্ট চিন্তা করবে না, তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ-বিগ্রহ করতে পারে না। যারা এরূপ করবে তারা অবশ্যই কুরআনের এই আদেশ লঙ্ঘনকারী।
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন : ‘এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার ওপর জুলুম করবে না, তাকে সহযোগিতা করা পরিত্যাগ করবে না এবং তাকে লাঞ্ছ��ত ও হেয় করবে না। কোনো ব্যক্তির জন্য তার কোনো মুসলিম ভাইকে হেয় ও ক্ষুদ্র করার মতো অপকর্ম আর নেই’ (মুসনদে আহমাদ; ১৬/২৯৭, ৭৭৫৬)। তিনি আরো বলেছেন : ‘একজন মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার ওপর অত্যাচার করতে পারে না, তাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে না’ (বুখারি : ২৪৪২; মুসলিম ২৫৮০)।
পবিত্র কুরআন এবং হাদিসের এসব আদেশ ও নিষেধ বিশ্বের সব মুসলমানের ওপরই প্রযোজ্য। যিনি যে অবস্থায়ই আছেন, তার সে অবস্থাতেই এ সব আদেশ-নিষেধ পালন করা কর্তব্য। কুরআন হাদিসের আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কার্যক্রম পরিচালনা করলে মুসলমানের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে।
মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ থাকা কুরআনের নির্দেশ। বিশ্ব মুসলিমের ঐক্যের পক্ষে কাজ করা, কথা বলা কিংবা নিদেনপক্ষে এর আকাক্সক্ষা পোষণ করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অবশ্য কর্তব্য, এটি তার ঈমানের দাবি। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন মন্দ অবস্থা অবলোকন করে, তখন তার উচিত শক্তি প্রয়োগ করে তা ঠিক করে দেয়া; যদি তা সম্ভব না হয় তবে তার বিপক্ষে কথা বলে তা ঠিক করার চেষ্টা করা, যদি তাও সম্ভব না হয় তা দূর করার জন্য আকাক্সক্ষা প্রকাশ করা উচিত। এটি ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর’ (মুসলিম)
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য বিষয়ে আয়াত
ইসলামের পক্ষের সকল শক্তিকে আল্লাহতায়ালা ঐক্যবদ্ধ জীবনযাপনের জন্য তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই’। কখনও বলেছেন-‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে ধারণ করো, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’। তোমরা একত্রিত হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে (আল-কোরআন তথা আল্লাহর দ্বীনকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং দলাদলিতে লিপ্ত হয়ো না।( সুরা আলে-ইমরান:১০৩)  আবার বলেছেন, ‘মুহাম্মদ সা.-এর সাথীরা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পর রহমদিল’। নিজেদের ঐক্য নষ্ট করে যারা পরস্পর দলাদলি করে তাদেরকে কাফির আখ্যায়িত করে সূরা আল ইমরানের নিম্নোক্ত আয়াতে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। ‘তোমরা যেন তাদের মত হয়ে যেয়ো না, যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে এবং সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য হিদায়াত পাওয়ার পরও মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে। যারা এ নীতি অবলম্বন করেছে তারা সেদিন কঠিন শাস্তি পাবে। সেদিন কিছু লোকের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠবে এবং কিছু লোকের মুখ কালো হয়ে যাবে। যাদের চেহারা কালো হয়ে যাবে তাদেরকে বলা হবে, ঈমানের নিয়ামত লাভ করার পরও তোমরা কুফুরি নীতি অবলম্বন করলে? ঠিক আছে, তাহলে এখন এই নিয়ামত অস্বীকৃতির বিনিময়ে আজাবের স্বাদ গ্রহণ করো। আর যাদের চেহারা উজ্জ্বল হবে, তারা আল্লাহর রহমতের আশ্রয় লাভ করবে এবং চিরকাল তারা এই অবস্থায় থাকবে। এগুলো আল্লাহর বাণী, তোমাকে যথাযথভাবে শুনিয়ে যাচ্ছি। কারণ দুনিয়াবাসীদের প্রতি জুলুম করার কোন এরাদা আল্লাহর নেই।’ (সূরা আল ইমরান : ১০৫-১০৮) আল্লাহতায়ালা আরো বলেন- ‘এবং তোমাদের এ জাতি একই জাতি এবং আমিই তোমাদের প্রতিপালক; অতএব আমাকে ভয় কর। কিন্তু তারা নিজেদের মধ্যে তাদের দ্বীনকে বহুধা বিভক্ত করেছে, প্রত্যেক দলই তাদের নিকট যা আছে তা নিয়ে আনন্দিত।’ (সূরা মু’মিনুন : ৫২-৫৩) ‘যারা দ্বীন সম্বন্ধে নানা মতের সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে তাদের কোন দায়িত্ব তোমার নয়; তাদের বিষয় আল্লাহর ইখতিয়ারভুক্ত। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে অবহিত করবেন।’ (সূরা আন’আম : ১৫৯)
তোমরা একত্রিত হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে (আল-কোরআন তথা আল্লাহর দ্বীনকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং দলাদলিতে লিপ্ত হয়ো না।( সুরা আলে-ইমরান:১০৩) মুসলিম উম্মাহর ঐক্য জরুরী বিষয় ঐক্যের ভিত্তি হবে "হাবলুল্লাহ্''- ইসলাম আল্লাহর প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থা। একমাত্র ইসলামই মানুষের জন্যে নির্ভুল জীবন-দর্শন ও জীবনাদর্শ। আল্লাহ এই জীবনাদর্শ প্রেরণ করেছেন পৃথিবীর বুকে এটিকে প্রবর্তিত ও বিজয়ী করতে এবং বিজয়ী রাখতে। আর এই কাজের জন্যে মুসলিমদের সর্বদা সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ থাকা চাই।
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য 
youtube
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য
youtube
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য এবং দিকনির্দেশনা
youtube
মুসলিম উম্মার ঐক্য ও ঐক্যের দিক নির্দেশনা
youtube
মুসলিমদের ঐক্যের ব্যাপারে আমাদের করণীয় কি?
youtube
উম্মতের ঐক্য- Unity of Ummah
youtube
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য 
youtube
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য
youtube
মুসলিম ঐক্য : বর্তমান মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির সমাধান
Muslim Unity: A solution to the current division of the Muslim Ummah
0 notes
Text
Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media
যখন সকল কিছু বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠী একত্র হবে, নিজেরা নিজেদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হবে এবং মজলুম মুসলমানদের সাহায্যার্থে এগিয়ে যাবে, তখন ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী পরাশক্তি গুলোও ভয় পাবে। মজলুম, নির্যাতিত মুসলিমরা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। দখলদার ইজরাইলের হাত থেকে এবং সকল নিপীড়িত মুসলিম কলোনি স্বাধীন হবে। মুসলিমরা আবার নিজেদের শক্তি ফিরে পাবে। মুসলিম ঐক্যের দ্বারাই আবার মুসলিমদের শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য 
মুসলিম ঐক্য : বর্তমান মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির সমাধান
Muslim Unity: A solution to the current division of the Muslim Ummah
ঐক্য বলতে সাধারণত আমরা বুঝি একতা, ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্যপূর্ণ বন্ধন। আর মুসলিম ঐক্য বলতে বুঝায় দেশ-জাতি, ভাষা,বর্ণ ও অঞ্চল ভেদাভেদ থেকে মুক্ত হয়ে সকল মুসলিমরা নিজেদের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব একাত্মতা পোষণ করা। অর্থাৎ বিশ্বের সকল মুসলিম একটি দেহের ন্যায় আবদ্ধ হওয়া, যেখানে থাকবে না কোন ব্যক্তি স্বার্থ। সবাই ভৌগোলিকভাবে দূরে থাকলেও সম্পর্ক হবে এক ও অভিন্ন।
পবিত্র কুরআন মাজিদে মহান আল্লাহ তায়ালা তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমারা আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরো (ঐক্যবদ্ধ হও) এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (সূরা আল-ইমরান : আয়াত ১০৩)। এখানে রজ্জু দ্বারা দ্বীন-ইসলামকে বুঝানো হয়েছে। একে রজ্জু এজন্যই বলা হয়েছে যে, এক দিকে আল্লাহর সাথে ঈমানদার লোকদের সস্পর্ক স্থাপন হয় এবং অন্যদিকে সমস্ত মুসলিমরা পরস্পর ঐক্যবদ্ধ ও মিলিত হয়ে একটি দৃঢ় ও শক্তিশালী জাতিতে রূপান্তরিত হয়। এই রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করার অর্থ এই যে, এ দ্বীনকে আল্লাহর জমিনে প্রতিষ্ঠা করার জন্য চেষ্টা করা করা এবং এক মুসলমান অপর মুসলমানকে ব্যক্তি স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর কল্যাণে প্রতিটি মুসলমানের একাত্মতা ঘোষণা করা অবশ্যই কর্তব্য। সকল মুসলিম জনগোষ্ঠী ভাই-ভাই। এক মুসলমান ভাইয়ের কোন সমস্যা পরিলক্ষিত হলে বা এক মুসলমান নির্যাতিত হলে অপর মুসলমান ভাই তার সাহায্যে এগিয়ে যাবে। কুরআন মাজিদে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।’ (সূরা হুজরাত : আয়াত ১০)।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো সমগ্র মুসলিম বিশ্ব আজ এই দীক্ষা থেকে শত মাইল দূরে সরে গেছে। নিজেদের স্বার্থ হাসিলে আজ মুসলমান পরস্পর ভাইয়ের সম্পর্ক ভাইয়ের সেটা ভুলে গিয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে এ বিষয়টি প্রমাণিত যে, যদি কোন জনসমষ্টি, রাষ্ট্র বা গোত্র পরাশক্তির অধিকারী হতে চায়, তবে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ ও নিজেদের মধ্যে দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। এই বিষয়টির সঠিক জ্ঞান কাজে লাগিয়ে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী ও উপনিবেশবাদী দেশগুলো এবং ইহুদি ও খ্রিস্টানরা তাদের মধ্যকার ঐতিহাসিক শত্রুতাকে ভুলে নিজ স্বার্থ রক্ষার্থে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে একই প্লাটফর্মে সমবেত হয়েছে। আর অন্যদিকে আমাদের মুসলিম দেশগুলো ভৌগলিক, আঞ্চলিক, ভাষাগত, জাতিভিত্তিক ও রাজনৈতিক সীমার বিভাজনেই শুধু বিভক্ত নয় বরং তারা হাজার দলে বিভক্ত হয়ে নিজেদের সকল বীরত্বের ইতিহাস ভুলে যেতে বসেছে। বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে অনৈক্য ও অসংহতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় দুইশো কোটির বৃহৎ একটি মুসলিম জনশক্তি রয়েছে।
পৃথিবীর প্রায় এক-চতুর্থাংশ ভূমি মুসলমানদের দখলে রয়েছে। তবুও বিশ্বের অন্যান্য শক্তির কাছে তারা আজ নত। দেশে দেশে আজ মুসলিমরা লাঞ্ছিত ও নিষ্পেষিত হচ্ছে । মজলুম মানুষের কান্নায় আকাশ ভারী হচ্ছে। কখনো কী ভেবে দেখেছি যে, মুসলমানদের এই অবস্থা হলো কেন? আর এর উত্তরে একমাত্র যে কারণ তা হলো, মুসলিম উম্মাহর ভেতরে ঢুকে গেছে অনৈক্যের বীজ। মুসলিম বিশ্ব আজ শত দলে বিভক্ত। উম্মাহর এই অনৈক্য ও অসংহতি সৃষ্টি করছে মারাত্মক বিষক্রিয়ার। ফলে তারা কাটাচ্ছে মুমূর্ষু অবস্থা।
অনৈক্যের কারণে বর্তমান বিশ্বে মজলুম মুসলিমদের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। বর্তমানে বহির্বিশ্বে মুসলিমরা ক্রমাগত তাদের ন্যায্য অধিকার হারাচ্ছে। নিজ ভূ-খ-ে নিজেরাই দাসে পরিণত হচ্ছে। এমনকি নিজেরাই নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে জড়িয়ে যাচ্ছে, যেখানে নিজেরা এক মুসলিম সম্প্রদায় অন্য মুসলিম সম্প্রদায়কে বহিরাগত আক্রমণ থেকে রক্ষা করার কথা ছিলো। ক্রমাগত মজলুম মুসলমানদের নীর�� কান্না বেড়েই চলছে। সাম্প্রতিক ফিলিস্তিনের গাজা এলাকায় ইসরাইলি দখলদার বাহিনী যে গণহত্যা তান্ডব চালাচ্ছে, যেখানে মুসলিম বিশ্ব নীরব। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সংগঠন ওআইসি, আরবলীগ থেকেও তাদের স্বাধীনতার জন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না।
পশ্চিমা দেশগুলো যেভাবে ইসরায়েলকে সাপোর্ট দিয়ে আসছে, তার কিয়দংশও যদি মুসলিম বিশ্ব বা ওআইসি, আরবলীগের মতো সংগঠন দিতো তাহলে আজকে এই দূরাবস্থায় পড়তে হতো না। শুধু ফিলিস্তিন নয়, সিরিয়া থেকে শুরু করে, ইরাক, চীন, ভারত, মিয়ানমারসহ বিশ্বের অনেক দেশেই এখন নির্যাতন-নিপীড়নের লক্ষ্যবস্তু হলো মুসলিম সম্প্রদায়। মুসলিম ঐক্য থাকলে আজ ইসরাইল ও পশ্চিমা দেশগুলো এমন সাহস পেত না। সুতরাং এখান থেকেও বুঝা যায় যে,মুসলিম ঐক্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। উম্মাহের এই ক্রান্তিলগ্নে ঐক্যর কোন বিকল্প নেই।
যখন সকল কিছু বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠী একত্র হবে, নিজেরা নিজেদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হবে এবং মজলুম মুসলমানদের সাহায্যার্থে এগিয়ে যাবে, তখন ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী পরাশক্তি গুলোও ভয় পাবে। মজলুম, নির্যাতিত মুসলিমরা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। দখলদার ইজরাইলের হাত থেকে এবং সকল নিপীড়িত মুসলিম কলোনি স্বাধীন হবে। মুসলিমরা আবার নিজেদের শক্তি ফিরে পাবে। মুসলিম ঐক্যের দ্বারাই আবার মুসলিমদের শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
বিশ্ব মুসলিমের ঐক্য : কুরআনের দাবি
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন; নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি ও পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হতে নিষেধ করেছেন এবং এই ঐক্যের বন্ধন হিসেবে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (সূরা আলে-ইমরান : ১০৩)। এ আয়াতাংশে আল্লাহ তায়ালা তিনটি নির্দেশ দিয়েছেন- ১. মুসলমানদের আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকতে হবে। বেশির ভাগ তাফসিরকারকের মতে, ‘আল্লাহর রজ্জু’ বলতে পবিত্র কুরআনকে বুঝানো হয়েছে। এই কুরআনই ইসলামের মূল ভিত্তি এবং কুরআনের বাস্তব নিদর্শন মহানবী সা:-এর সুন্নাহ। মুসলমানদের অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে পবিত্র কুরআন ও নবীর সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকা। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে অনুসরণ করা। ২. কুরআনের ভিত্তিতে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ অর্থাৎ একমাত্র ইসলামই বিশ্ব মুসলমানের ঐক্যের ভিত্তি ও বন্ধন। ইসলাম ভিন্ন অন্য কিছু- ভাষা, গোত্র, বর্ণ কিংবা আঞ্চলিকতা মুসলমানদের ঐক্যের মূল ভিত্তি হতে পারে না। এগুলো ইসলামের অধীনে ঐক্যের অতিরিক্ত উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে। ৩. নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা বা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হওয়া যাবে না। মুসলমানরা যদি নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে, দল-উপদলে বিভক্ত হয়, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয় এবং একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ করে তা হবে আল্লাহ তায়ালার এই নির্দেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
মুসলমানরা যেন একতাবদ্ধভাবে থাকে এবং নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত ও ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত না হয়, সে বিষয়ে কুরআনে আল্লাহ তায়ালার আরো নির্দেশ রয়েছে।
মুসলমানদের পরস্পরের সম্প্রীতি ও ভালোবাসা তথা ঐক্যকে আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি তাঁর ‘নিয়ামত’ বলে উল্লেখ করেছেন। মহানবী মুহাম্মদ সা:-এর সাহচর্যে এসে তাঁর আনীত দ্বীন গ্রহণ করে মক্কার মুহাজির ও মদিনার আনসার এবং মদিনার চিরবৈরী আউস ও খাজরাজ গোত্র পরস্পরের ভাই ভাই হয়ে গেল- আল্লাহ বলেন : ‘আর তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো, যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, অতঃপর তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন, ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে। তোমরা অগ্নিগর্তের দ্বারপ্রান্তে ছিলে, তিনি তোমাদের তা থেকে রক্ষা করেছেন’ (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-১০৩)।
আল্লাহ পাক বলেন : ‘তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শন আসার পরও বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-১০৫)।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন : ‘মুমিনরা পরস্পরের ভাই ভাই; কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপস মীমাংসা করে দাও। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও’ (সূরা হুজুরাত-১০)। এই আয়াত দুনিয়ার সব মুসলমানকে বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। প্রত্যেক মুসলিম অপর মুসলিমকে নিজের ভাইয়ের মতো আপন মনে করবে, এটি আল্লাহর আদেশ। অতএব একজন মুসলমান অপর মুসলমানকে কোনো শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া ঘৃণা করতে পারে না, তার কোনো অনিষ্ট চিন্তা করবে না, তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ-বিগ্রহ করতে পারে না। যারা এরূপ করবে তারা অবশ্যই কুরআনের এই আদেশ লঙ্ঘনকারী।
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন : ‘এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার ওপর জুলুম করবে না, তাকে সহযোগিতা করা পরিত্যাগ করবে না এবং তাকে লাঞ্ছিত ও হেয় করবে না। কোনো ব্যক্তির জন্য তার কোনো মুসলিম ভাইকে হেয় ও ক্ষুদ্র করার মতো অপকর্ম আর নেই’ (মুসনদে আহমাদ; ১৬/২৯৭, ৭৭৫৬)। তিনি আরো বলেছেন : ‘একজন মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার ওপর অত্যাচার করতে পারে না, তাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে না’ (বুখারি : ২৪৪২; মুসলিম ২৫৮০)।
পবিত্র কুরআন এবং হাদিসের এসব আদেশ ও নিষেধ বিশ্বের সব মুসলমানের ওপরই প্রযোজ্য। যিনি যে অবস্থায়ই আছেন, তার সে অবস্থাতেই এ সব আদেশ-নিষেধ পালন করা কর্তব্য। কুরআন হাদিসের আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কার্যক্রম পরিচালনা করলে মুসলমানের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে।
মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ থাকা কুরআনের নির্দেশ। বিশ্ব মুসলিমের ঐক্যের পক্ষে কাজ করা, কথা বলা কিংবা নিদেনপক্ষে এর আকাক্সক্ষা পোষণ করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অবশ্য কর্তব্য, এটি তার ঈমানের দাবি। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন মন্দ অবস্থা অবলোকন করে, তখন তার উচিত শক্তি প্রয়োগ করে তা ঠিক করে দেয়া; যদি তা সম্ভব না হয় তবে তার বিপক্ষে কথা বলে তা ঠিক করার চেষ্টা করা, যদি তাও সম্ভব না হয় তা দূর করার জন্য আকাক্সক্ষা প্রকাশ করা উচিত। এটি ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর’ (মুসলিম)
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য বিষয়ে আয়াত
ইসলামের পক্ষের সকল শক্তিকে আল্লাহতায়ালা ঐক্যবদ্ধ জীবনযাপনের জন্য তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই’। কখনও বলেছেন-‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে ধারণ করো, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’। তোমরা একত্রিত হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে (আল-কোরআন তথা আল্লাহর দ্বীনকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং দলাদলিতে লিপ্ত হয়ো না।( সুরা আলে-ইমরান:১০৩)  আবার বলেছেন, ‘মুহাম্মদ সা.-এর সাথীরা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পর রহমদিল’। নিজেদের ঐক্য নষ্ট করে যারা পরস্পর দলাদলি করে তাদেরকে কাফির আখ্যায়িত করে সূরা আল ইমরানের নিম্নোক্ত আয়াতে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। ‘তোমরা যেন তাদের মত হয়ে যেয়ো না, যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে এবং সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য হিদায়াত পাওয়ার পরও মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে। যারা এ নীতি অবলম্বন করেছে তারা সেদিন কঠিন শাস্তি পাবে। সেদিন কিছু লোকের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠবে এবং কিছু লোকের মুখ কালো হয়ে যাবে। যাদের চেহারা কালো হয়ে যাবে তাদেরকে বলা হবে, ঈমানের নিয়ামত লাভ করার পরও তোমরা কুফুরি নীতি অবলম্বন করলে? ঠিক আছে, তাহলে এখন এই নিয়ামত অস্বীকৃতির বিনিময়ে আজাবের স্বাদ গ্রহণ করো। আর যাদের চেহারা উজ্জ্বল হবে, তারা আল্লাহর রহমতের আশ্রয় লাভ করবে এবং চিরকাল তারা এই অবস্থায় থাকবে। এগুলো আল্লাহর বাণী, তোমাকে যথাযথভাবে শুনিয়ে যাচ্ছি। কারণ দুনিয়াবাসীদের প্রতি জুলুম করার কোন এরাদা আল্লাহর নেই।’ (সূরা আল ইমরান : ১০৫-১০৮) আল্লাহতায়ালা আরো বলেন- ‘এবং তোমাদের এ জাতি একই জাতি এবং আমিই তোমাদের প্রতিপালক; অতএব আমাকে ভয় কর। কিন্তু তারা নিজেদের মধ্যে তাদের দ্বীনকে বহুধা বিভক্ত করেছে, প্রত্যেক দলই তাদের নিকট যা আছে তা নিয়ে আনন্দিত।’ (সূরা মু’মিনুন : ৫২-৫৩) ‘যারা দ্বীন সম্বন্ধে নানা মতের সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে তাদের কোন দায়িত্ব তোমার নয়; তাদের বিষয় আল্লাহর ইখতিয়ারভুক্ত। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে অবহিত করবেন।’ (সূরা আন’আম : ১৫৯)
তোমরা একত্রিত হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে (আল-কোরআন তথা আল্লাহর দ্বীনকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং দলাদলিতে লিপ্ত হয়ো না।( সুরা আলে-ইমরান:১০৩) মুসলিম উম্মাহর ঐক্য জরুরী বিষয় ঐক্যের ভিত্তি হবে "হাবলুল্লাহ্''- ইসলাম আল্লাহর প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থা। একমাত্র ইসলামই মানুষের জন্যে নির্ভুল জীবন-দর্শন ও জীবনাদর্শ। আল্লাহ এই জীবনাদর্শ প্রেরণ করেছেন পৃথিবীর বুকে এটিকে প্রবর্তিত ও বিজয়ী করতে এবং বিজয়ী রাখতে। আর এই কাজের জন্যে মুসলিমদের সর্বদা সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ থাকা চাই।
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য 
youtube
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য
youtube
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য এবং দিকনির্দেশনা
youtube
মুসলিম উম্মার ঐক্য ও ঐক্যের দিক নির্দেশনা
youtube
মুসলিমদের ঐক্যের ব্যাপারে আমাদের করণীয় কি?
youtube
উম্মতের ঐক্য- Unity of Ummah
youtube
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য 
youtube
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য
youtube
মুসলিম ঐক্য : বর্তমান মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির সমাধান
Muslim Unity: A solution to the current division of the Muslim Ummah
0 notes
ilyforallahswt · 1 month
Text
Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media
যখন সকল কিছু বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠী একত্র হবে, নিজেরা নিজেদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হবে এবং মজলুম মুসলমানদের সাহায্যার্থে এগিয়ে যাবে, তখন ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী পরাশক্তি গুলোও ভয় পাবে। মজলুম, নির্যাতিত মুসলিমরা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। দখলদার ইজরাইলের হাত থেকে এবং সকল নিপীড়িত মুসলিম কলোনি স্বাধীন হবে। মুসলিমরা আবার নিজেদের শক্তি ফিরে পাবে। মুসলিম ঐক্যের দ্বারাই আবার মুসলিমদের শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য 
মুসলিম ঐক্য : বর্তমান মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির সমাধান
Muslim Unity: A solution to the current division of the Muslim Ummah
ঐক্য বলতে সাধারণত আমরা বুঝি একতা, ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্যপ��র্ণ বন্ধন। আর মুসলিম ঐক্য বলতে বুঝায় দেশ-জাতি, ভাষা,বর্ণ ও অঞ্চল ভেদাভেদ থেকে মুক্ত হয়ে সকল মুসলিমরা নিজেদের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব একাত্মতা পোষণ করা। অর্থাৎ বিশ্বের সকল মুসলিম একটি দেহের ন্যায় আবদ্ধ হওয়া, যেখানে থাকবে না কোন ব্যক্তি স্বার্থ। সবাই ভৌগোলিকভাবে দূরে থাকলেও সম্পর্ক হবে এক ও অভিন্ন।
পবিত্র কুরআন মাজিদে মহান আল্লাহ তায়ালা তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমারা আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরো (ঐক্যবদ্ধ হও) এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (সূরা আল-ইমরান : আয়াত ১০৩)। এখানে রজ্জু দ্বারা দ্বীন-ইসলামকে বুঝানো হয়েছে। একে রজ্জু এজন্যই বলা হয়েছে যে, এক দিকে আল্লাহর সাথে ঈমানদার লোকদের সস্পর্ক স্থাপন হয় এবং অন্যদিকে সমস্ত মুসলিমরা পরস্পর ঐক্যবদ্ধ ও মিলিত হয়ে একটি দৃঢ় ও শক্তিশালী জাতিতে রূপান্তরিত হয়। এই রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করার অর্থ এই যে, এ দ্বীনকে আল্লাহর জমিনে প্রতিষ্ঠা করার জন্য চেষ্টা করা করা এবং এক মুসলমান অপর মুসলমানকে ব্যক্তি স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর কল্যাণে প্রতিটি মুসলমানের একাত্মতা ঘোষণা করা অবশ্যই কর্তব্য। সকল মুসলিম জনগোষ্ঠী ভাই-ভাই। এক মুসলমান ভাইয়ের কোন সমস্যা পরিলক্ষিত হলে বা এক মুসলমান নির্যাতিত হলে অপর মুসলমান ভাই তার সাহায্যে এগিয়ে যাবে। কুরআন মাজিদে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।’ (সূরা হুজরাত : আয়াত ১০)।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো সমগ্র মুসলিম বিশ্ব আজ এই দীক্ষা থেকে শত মাইল দূরে সরে গেছে। নিজেদের স্বার্থ হাসিলে আজ মুসলমান পরস্পর ভাইয়ের সম্পর্ক ভাইয়ের সেটা ভুলে গিয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে এ বিষয়টি প্রমাণিত যে, যদি কোন জনসমষ্টি, রাষ্ট্র বা গোত্র পরাশক্তির অধিকারী হতে চায়, তবে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ ও নিজেদের মধ্যে দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। এই বিষয়টির সঠিক জ্ঞান কাজে লাগিয়ে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী ও উপনিবেশবাদী দেশগুলো এবং ইহুদি ও খ্রিস্টানরা তাদের মধ্যকার ঐতিহাসিক শত্রুতাকে ভুলে নিজ স্বার্থ রক্ষার্থে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে একই প্লাটফর্মে সমবেত হয়েছে। আর অন্যদিকে আমাদের মুসলিম দেশগুলো ভৌগলিক, আঞ্চলিক, ভাষাগত, জাতিভিত্তিক ও রাজনৈতিক সীমার বিভাজনেই শুধু বিভক্ত নয় বরং তারা হাজার দলে বিভক্ত হয়ে নিজেদের সকল বীরত্বের ইতিহাস ভুলে যেতে বসেছে। বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে অনৈক্য ও অসংহতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় দুইশো কোটির বৃহৎ একটি মুসলিম জনশক্তি রয়েছে।
পৃথিবীর প্রায় এক-চতুর্থাংশ ভূমি মুসলমানদের দখলে রয়েছে। তবুও বিশ্বের অন্যান্য শক্তির কাছে তারা আজ নত। দেশে দেশে আজ মুসলিমরা লাঞ্ছিত ও নিষ্পেষিত হচ্ছে । মজলুম মানুষের কান্নায় আকাশ ভারী হচ্ছে। কখনো কী ভেবে দেখেছি যে, মুসলমানদের এই অবস্থা হলো কেন? আর এর উত্তরে একমাত্র যে কারণ তা হলো, মুসলিম উম্মাহর ভেতরে ঢুকে গেছে অনৈক্যের বীজ। মুসলিম বিশ্ব আজ শত দলে বিভক্ত। উম্মাহর এই অনৈক্য ও অসংহতি সৃষ্টি করছে মারাত্মক বিষক্রিয়ার। ফলে তারা কাটাচ্ছে মুমূর্ষু অবস্থা।
অনৈক্যের কারণে বর্তমান বিশ্বে মজলুম মুসলিমদের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। বর্তমানে বহির্বিশ্বে মুসলিমরা ক্রমাগত তাদের ন্যায্য অধিকার হারাচ্ছে। নিজ ভূ-খ-ে নিজেরাই দাসে পরিণত হচ্ছে। এমনকি নিজেরাই নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে জড়িয়ে যাচ্ছে, যেখানে নিজেরা এক মুসলিম সম্প্রদায় অন্য মুসলিম সম্প্রদায়কে বহিরাগত আক্রমণ থেকে রক্ষা করার কথা ছিলো। ক্রমাগত মজলুম মুসলমানদের নীরব কান্না বেড়েই চলছে। সাম্প্রতিক ফিলিস্তিনের গাজা এলাকায় ইসরাইলি দখলদার বাহিনী যে গণহত্যা তান্ডব চালাচ্ছে, যেখানে মুসলিম বিশ্ব নীরব। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সংগঠন ওআইসি, আরবলীগ থেকেও তাদের স্বাধীনতার জন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না।
পশ্চিমা দেশগুলো যেভাবে ইসরায়েলকে সাপোর্ট দিয়ে আসছে, তার কিয়দংশও যদি মুসলিম বিশ্ব বা ওআইসি, আরবলীগের মতো সংগঠন দিতো তাহলে আজকে এই দূরাবস্থায় পড়তে হতো না। শুধু ফিলিস্তিন নয়, সিরিয়া থেকে শুরু করে, ইরাক, চীন, ভারত, মিয়ানমারসহ বিশ্বের অনেক দেশেই এখন নির্যাতন-নিপীড়নের লক্ষ্যবস্তু হলো মুসলিম সম্প্রদায়। মুসলিম ঐক্য থাকলে আজ ইসরাইল ও পশ্চিমা দেশগুলো এমন সাহস পেত না। সুতরাং এখান থেকেও বুঝা যায় যে,মুসলিম ঐক্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। উম্মাহের এই ক্রান্তিলগ্নে ঐক্যর কোন বিকল্প নেই।
যখন সকল কিছু বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠী একত্র হবে, নিজেরা নিজেদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হবে এবং মজলুম মুসলমানদের সাহায্যার্থে এগিয়ে যাবে, তখন ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী পরাশক্তি গুলোও ভয় পাবে। মজলুম, নির্যাতিত মুসলিমরা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। দখলদার ইজরাইলের হাত থেকে এবং সকল নিপীড়িত মুসলিম কলোনি স্বাধীন হবে। মুসলিমরা আবার নিজেদের শক্তি ফিরে পাবে। মুসলিম ঐক্যের দ্বারাই আবার মুসলিমদের শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
বিশ্ব মুসলিমের ঐক্য : কুরআনের দাবি
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন; নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি ও পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হতে নিষেধ করেছেন এবং এই ঐক্যের বন্ধন হিসেবে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (সূরা আলে-ইমরান : ১০৩)। এ আয়াতাংশে আল্লাহ তায়ালা তিনটি নির্দেশ দিয়েছেন- ১. মুসলমানদের আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকতে হবে। বেশির ভাগ তাফসিরকারকের মতে, ‘আল্লাহর রজ্জু’ বলতে পবিত্র কুরআনকে বুঝানো হয়েছে। এই কুরআনই ইসলামের মূল ভিত্তি এবং কুরআনের বাস্তব নিদর্শন মহানবী সা:-এর সুন্নাহ। মুসলমানদের অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে পবিত্র কুরআন ও নবীর সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকা। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে অনুসরণ করা। ২. কুরআনের ভিত্তিতে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ অর্থাৎ একমাত্র ইসলামই বিশ্ব মুসলমানের ঐক্যের ভিত্তি ও বন্ধন। ইসলাম ভিন্ন অন্য কিছু- ভাষা, গোত্র, বর্ণ কিংবা আঞ্চলিকতা মুসলমানদের ঐক্যের মূল ভিত্তি হতে পারে না। এগুলো ইসলামের অধীনে ঐক্যের অতিরিক্ত উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে। ৩. নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা বা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হওয়া যাবে না। মুসলমানরা যদি নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে, দল-উপদলে বিভক্ত হয়, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয় এবং একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ করে তা হবে আল্লাহ তায়ালার এই নির্দেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
মুসলমানরা যেন একতাবদ্ধভাবে থাকে এবং নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত ও ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত না হয়, সে বিষয়ে কুরআনে আল্লাহ তায়ালার আরো নির্দেশ রয়েছে।
মুসলমানদের পরস্পরের সম্প্রীতি ও ভালোবাসা তথা ঐক্যকে আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি তাঁর ‘নিয়ামত’ বলে উল্লেখ করেছেন। মহানবী মুহাম্মদ সা:-এর সাহচর্যে এসে তাঁর আনীত দ্বীন গ্রহণ করে মক্কার মুহাজির ও মদিনার আনসার এবং মদিনার চিরবৈরী আউস ও খাজরাজ গোত্র পরস্পরের ভাই ভাই হয়ে গেল- আল্লাহ বলেন : ‘আর তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো, যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, অতঃপর তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন, ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে। তোমরা অগ্নিগর্তের দ্বারপ্রান্তে ছিলে, তিনি তোমাদের তা থেকে রক্ষা করেছেন’ (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-১০৩)।
আল্লাহ পাক বলেন : ‘তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শন আসার পরও বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-১০৫)।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন : ‘মুমিনরা পরস্পরের ভাই ভাই; কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপস মীমাংসা করে দাও। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও’ (সূরা হুজুরাত-১০)। এই আয়াত দুনিয়ার সব মুসলমানকে বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। প্রত্যেক মুসলিম অপর মুসলিমকে নিজের ভাইয়ের মতো আপন মনে করবে, এটি আল্লাহর আদেশ। অতএব একজন মুসলমান অপর মুসলমানকে কোনো শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া ঘৃণা করতে পারে না, তার কোনো অনিষ্ট চিন্তা করবে না, তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ-বিগ্রহ করতে পারে না। যারা এরূপ করবে তারা অবশ্যই কুরআনের এই আদেশ লঙ্ঘনকারী।
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন : ‘এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার ওপর জুলুম করবে না, তাকে সহযোগিতা করা পরিত্যাগ করবে না এবং তাকে লাঞ্ছিত ও হেয় করবে না। কোনো ব্যক্তির জন্য তার কোনো মুসলিম ভাইকে হেয় ও ক্ষুদ্র করার মতো অপকর্ম আর নেই’ (মুসনদে আহমাদ; ১৬/২৯৭, ৭৭৫৬)। তিনি আরো বলেছেন : ‘একজন মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার ওপর অত্যাচার করতে পারে না, তাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে না’ (বুখারি : ২৪৪২; মুসলিম ২৫৮০)।
পবিত্র কুরআন এবং হাদিসের এসব আদেশ ও নিষেধ বিশ্বের সব মুসলমানের ওপরই প্রযোজ্য। যিনি যে অবস্থায়ই আছেন, তার সে অবস্থাতেই এ সব আদেশ-নিষেধ পালন করা কর্তব্য। কুরআন হাদিসের আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কার্যক্রম পরিচালনা করলে মুসলমানের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে।
মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ থাকা কুরআনের নির্দেশ। বিশ্ব মুসলিমের ঐক্যের পক্ষে কাজ করা, কথা বলা কিংবা নিদেনপক্ষে এর আকাক্সক্ষা পোষণ করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অবশ্য কর্তব্য, এটি তার ঈমানের দাবি। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন মন্দ অবস্থা অবলোকন করে, তখন তার উচিত শক্তি প্রয়োগ করে তা ঠিক করে দেয়া; যদি তা সম্ভব না হয় তবে তার বিপক্ষে কথা বলে তা ঠিক করার চেষ্টা করা, যদি তাও সম্ভব না হয় তা দূর করার জন্য আকাক্সক্ষা প্রকাশ করা উচিত। এটি ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর’ (মুসলিম)
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য বিষয়ে আয়াত
ইসলামের পক্ষের সকল শক্তিকে আল্লাহতায়ালা ঐক্যবদ্ধ জীবনযাপনের জন্য তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই’। কখনও বলেছেন-‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে ধারণ করো, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’। তোমরা একত্রিত হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে (আল-কোরআন তথা আল্লাহর দ্বীনকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং দলাদলিতে লিপ্ত হয়ো না।( সুরা আলে-ইমরান:১০৩)  আবার বলেছেন, ‘মুহাম্মদ সা.-এর সাথীরা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পর রহমদিল’। নিজেদের ঐক্য নষ্ট করে যারা পরস্পর দলাদলি করে তাদেরকে কাফির আখ্যায়িত করে সূরা আল ইমরানের নিম্নোক্ত আয়াতে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। ‘তোমরা যেন তাদের মত হয়ে যেয়ো না, যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে এবং সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য হিদায়াত পাওয়ার পরও মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে। যারা এ নীতি অবলম্বন করেছে তারা সেদিন কঠিন শাস্তি পাবে। সেদিন কিছু লোকের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠবে এবং কিছু লোকের মুখ কালো হয়ে যাবে। যাদের চেহারা কালো হয়ে যাবে তাদেরকে বলা হবে, ঈমানের নিয়ামত লাভ করার পরও তোমরা কুফুরি নীতি অবলম্বন করলে? ঠিক আছে, তাহলে এখন এই নিয়ামত অস্বীকৃতির বিনিময়ে আজাবের স্বাদ গ্রহণ করো। আর যাদের চেহারা উজ্জ্বল হবে, তারা আল্লাহর রহমতের আশ্রয় লাভ করবে এবং চিরকাল তারা এই অবস্থায় থাক��ে। এগুলো আল্লাহর বাণী, তোমাকে যথাযথভাবে শুনিয়ে যাচ্ছি। কারণ দুনিয়াবাসীদের প্রতি জুলুম করার কোন এরাদা আল্লাহর নেই।’ (সূরা আল ইমরান : ১০৫-১০৮) আল্লাহতায়ালা আরো বলেন- ‘এবং তোমাদের এ জাতি একই জাতি এবং আমিই তোমাদের প্রতিপালক; অতএব আমাকে ভয় কর। কিন্তু তারা নিজেদের মধ্যে তাদের দ্বীনকে বহুধা বিভক্ত করেছে, প্রত্যেক দলই তাদের নিকট যা আছে তা নিয়ে আনন্দিত।’ (সূরা মু’মিনুন : ৫২-৫৩) ‘যারা দ্বীন সম্বন্ধে নানা মতের সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে তাদের কোন দায়িত্ব তোমার নয়; তাদের বিষয় আল্লাহর ইখতিয়ারভুক্ত। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে অবহিত করবেন।’ (সূরা আন’আম : ১৫৯)
তোমরা একত্রিত হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে (আল-কোরআন তথা আল্লাহর দ্বীনকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং দলাদলিতে লিপ্ত হয়ো না।( সুরা আলে-ইমরান:১০৩) মুসলিম উম্মাহর ঐক্য জরুরী বিষয় ঐক্যের ভিত্তি হবে "হাবলুল্লাহ্''- ইসলাম আল্লাহর প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থা। একমাত্র ইসলামই মানুষের জন্যে নির্ভুল জীবন-দর্শন ও জীবনাদর্শ। আল্লাহ এই জীবনাদর্শ প্রেরণ করেছেন পৃথিবীর বুকে এটিকে প্রবর্তিত ও বিজয়ী করতে এবং বিজয়ী রাখতে। আর এই কাজের জন্যে মুসলিমদের সর্বদা সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ থাকা চাই।
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য 
youtube
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য
youtube
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য এবং দিকনির্দেশনা
youtube
মুসলিম উম্মার ঐক্য ও ঐক্যের দিক নির্দেশনা
youtube
মুসলিমদের ঐক্যের ব্যাপারে আমাদের করণীয় কি?
youtube
উম্মতের ঐক্য- Unity of Ummah
youtube
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য 
youtube
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য
youtube
মুসলিম ঐক্য : বর্তমান মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির সমাধান
Muslim Unity: A solution to the current division of the Muslim Ummah
0 notes
myreligionislam · 1 month
Text
Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media
যখন সকল কিছু বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠী একত্র হবে, নিজেরা নিজেদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হবে এবং মজলুম মুসলমানদের সাহায্যার্থে এগিয়ে যাবে, তখন ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী পরাশক্তি গুলোও ভয় পাবে। মজলুম, নির্যাতিত মুসলিমরা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। দখলদার ইজরাইলের হাত থেকে এবং সকল নিপীড়িত মুসলিম কলোনি স্বাধীন হবে। মুসলিমরা আবার নিজেদের শক্তি ফিরে পাবে। মুসলিম ঐক্যের দ্বারাই আবার মুসলিমদের শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য 
মুসলিম ঐক্য : বর্তমান মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির সমাধান
Muslim Unity: A solution to the current division of the Muslim Ummah
ঐক্য বলতে সাধারণত আমরা বুঝি একতা, ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্যপূর্ণ বন্ধন। আর মুসলিম ঐক্য বলতে বুঝায় দেশ-জাতি, ভাষা,বর্ণ ও অঞ্চল ভেদাভেদ থেকে মুক্ত হয়ে সকল মুসলিমরা নিজেদের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব একাত্মতা পোষণ করা। অর্থাৎ বিশ্বের সকল মুসলিম একটি দেহের ন্যায় আবদ্ধ হওয়া, যেখানে থাকবে না কোন ব্যক্তি স্বার্থ। সবাই ভৌগোলিকভাবে দূরে থাকলেও সম্পর্ক হবে এক ও অভিন্ন।
পবিত্র কুরআন মাজিদে মহান আল্লাহ তায়ালা তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমারা আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরো (ঐক্যবদ্ধ হও) এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (সূরা আল-ইমরান : আয়াত ১০৩)। এখানে রজ্জু দ্বারা দ্বীন-ইসলামকে বুঝানো হয়েছে। একে রজ্জু এজন্যই বলা হয়েছে যে, এক দিকে আল্লাহর সাথে ঈমানদার লোকদের সস্পর্ক স্থাপন হয় এবং অন্যদিকে সমস্ত মুসলিমরা পরস্পর ঐক্যবদ্ধ ও মিলিত হয়ে একটি দৃঢ় ও শক্তিশালী জাতিতে রূপান্তরিত হয়। এই রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করার অর্থ এই যে, এ দ্বীনকে আল্লাহর জমিনে প্রতিষ্ঠা করার জন্য চেষ্টা করা করা এবং এক মুসলমান অপর মুসলমানকে ব্যক্তি স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর কল্যাণে প্রতিটি মুসলমানের একাত্মতা ঘোষণা করা অবশ্যই কর্তব্য। সকল মুসলিম জনগোষ্ঠী ভাই-ভাই। এক মুসলমান ভাইয়ের কোন সমস্যা পরিলক্ষিত হলে বা এক মুসলমান নির্যাতিত হলে অপর মুসলমান ভাই তার সাহায্যে এগিয়ে যাবে। কুরআন মাজিদে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।’ (সূরা হুজরাত : আয়াত ১০)।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো সমগ্র মুসলিম বিশ্ব আজ এই দীক্ষা থেকে শত মাইল দূরে সরে গেছে। নিজেদের স্বার্থ হাসিলে আজ মুসলমান পরস্পর ভাইয়ের সম্পর্ক ভাইয়ের সেটা ভুলে গিয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে এ বিষয়টি প্রমাণিত যে, যদি কোন জনসমষ্টি, রাষ্ট্র বা গোত্র পরাশক্তির অধিকারী হতে চায়, তবে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ ও নিজেদের মধ্যে দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। এই বিষয়টির সঠিক জ্ঞান কাজে লাগিয়ে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী ও উপনিবেশবাদী দেশগুলো এবং ইহুদি ও খ্রিস্টানরা তাদের মধ্যকার ঐতিহাসিক শত্রুতাকে ভুলে নিজ স্বার্থ রক্ষার্থে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে একই প্লাটফর্মে সমবেত হয়েছে। আর অন্যদিকে আমাদের মুসলিম দেশগুলো ভৌগলিক, আঞ্চলিক, ভাষাগত, জাতিভিত্তিক ও রাজনৈতিক সীমার বিভাজনেই শুধু বিভক্ত নয় বরং তারা হাজার দলে বিভক্ত হয়ে নিজেদের সকল বীরত্বের ইতিহাস ভুলে যেতে বসেছে। বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে অনৈক্য ও অসংহতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় দুইশো কোটির বৃহৎ একটি মুসলিম জনশক্তি রয়েছে।
পৃথিবীর প্রায় এক-চতুর্থাংশ ভূমি মুসলমানদের দখলে রয়েছে। তবুও বিশ্বের অন্যান্য শক্তির কাছে তারা আজ নত। দেশে দেশে আজ মুসলিমরা লাঞ্ছিত ও নিষ্পেষিত হচ্ছে । মজলুম মানুষের কান্নায় আকাশ ভারী হচ্ছে। কখনো কী ভেবে দেখেছি যে, মুসলমানদের এই অবস্থা হলো কেন? আর এর উত্তরে একমাত্র যে কারণ তা হলো, মুসলিম উম্মাহর ভেতরে ঢুকে গেছে অনৈক্যের বীজ। মুসলিম বিশ্ব আজ শত দলে বিভক্ত। উম্মাহর এই অনৈক্য ও অসংহতি সৃষ্টি করছে মারাত্মক বিষক্রিয়ার। ফলে তারা কাটাচ্ছে মুমূর্ষু অবস্থা।
অনৈক্যের কারণে বর্তমান বিশ্বে মজলুম মুসলিমদের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। বর্তমানে বহির্বিশ্বে মুসলিমরা ক্রমাগত তাদের ন্যায্য অধিকার হারাচ্ছে। নিজ ভূ-খ-ে নিজেরাই দাসে পরিণত হচ্ছে। এমনকি নিজেরাই নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে জড়িয়ে যাচ্ছে, যেখানে নিজেরা এক মুসলিম সম্প্রদায় অন্য মুসলিম সম্প্রদায়কে বহিরাগত আক্রমণ থেকে রক্ষা করার কথা ছিলো। ক্রমাগত মজলুম মুসলমানদের নীরব কান্না বেড়েই চলছে। সাম্প্রতিক ফিলিস্তিনের গাজা এলাকায় ইসরাইলি দখলদার বাহিনী যে গণহত্যা তান্ডব চালাচ্ছে, যেখানে মুসলিম বিশ্ব নীরব। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সংগঠন ওআইসি, আরবলীগ থেকেও তাদের স্বাধীনতার জন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না।
পশ্চিমা দেশগুলো যেভাবে ইসরায়েলকে সাপোর্ট দিয়ে আসছে, তার কিয়দংশও যদি মুসলিম বিশ্ব বা ওআইসি, আরবলীগের মতো সংগঠন দিতো তাহলে আজকে এই দূরাবস্থায় পড়তে হতো না। শুধু ফিলিস্তিন নয়, সিরিয়া থেকে শুরু করে, ইরাক, চীন, ভারত, মিয়ানমারসহ বিশ্বের অনেক দেশেই এখন নির্যাতন-নিপীড়নের লক্ষ্যবস্তু হলো মুসলিম সম্প্রদায়। মুসলিম ঐক্য থাকলে আজ ইসরাইল ও পশ্চিমা দেশগুলো এমন সাহস পেত না। সুতরাং এখান থেকেও বুঝা যায় যে,মুসলিম ঐক্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। উম্মাহের এই ক্রান্তিলগ্নে ঐক্যর কোন বিকল্প নেই।
যখন সকল কিছু বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠী একত্র হবে, নিজেরা নিজেদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হবে এবং মজলুম মুসলমানদের সাহায্যার্থে এগিয়ে যাবে, তখন ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী পরাশক্তি গুলোও ভয় পাবে। মজলুম, নির্যাতিত মুসলিমরা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। দখলদার ইজরাইলের হাত থেকে এবং সকল নিপীড়িত মুসলিম কলোনি স্বাধীন হবে। মুসলিমরা আবার নিজেদের শক্তি ফিরে পাবে। মুসলিম ঐক্যের দ্বারাই আবার মুসলিমদের শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
বিশ্ব মুসলিমের ঐক্য : কুরআনের দাবি
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন; নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি ও পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হতে নিষেধ করেছেন এবং এই ঐক্যের বন্ধন হিসেবে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (সূরা আলে-ইমরান : ১০৩)। এ আয়াতাংশে আল্লাহ তায়ালা তিনটি নির্দেশ দিয়েছেন- ১. মুসলমানদের আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকতে হবে। বেশির ভাগ তাফসিরকারকের মতে, ‘আল্লাহর রজ্জু’ বলতে পবিত্র কুরআনকে বুঝানো হয়েছে। এই কুরআনই ইসলামের মূল ভিত্তি এবং কুরআনের বাস্তব নিদর্শন মহানবী সা:-এর সুন্নাহ। মুসলমানদের অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে পবিত্র কুরআন ও নবীর সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকা। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে অনুসরণ করা। ২. কুরআনের ভিত্তিতে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ অর্থাৎ একমাত্র ইসলামই বিশ্ব মুসলমানের ঐক্যের ভিত্তি ও বন্ধন। ইসলাম ভিন্ন অন্য কিছু- ভাষা, গোত্র, বর্ণ কিংবা আঞ্চলিকতা মুসলমানদের ঐক্যের মূল ভিত্তি হতে পারে না। এগুলো ইসলামের অধীনে ঐক্যের অতিরিক্ত উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে। ৩. নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা বা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হওয়া যাবে না। মুসলমানরা যদি নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে, দল-উপদলে বিভক্ত হয়, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয় এবং একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ করে তা হবে আল্লাহ তায়ালার এই নির্দেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
মুসলমানরা যেন একতাবদ্ধভাবে থাকে এবং নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত ও ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত না হয়, সে বিষয়ে কুরআনে আল্লাহ তায়ালার আরো নির্দেশ রয়েছে।
মুসলমানদের পরস্পরের সম্প্রীতি ও ভালোবাসা তথা ঐক্যকে আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি তাঁর ‘নিয়ামত’ বলে উল্লেখ করেছেন। মহানবী মুহাম্মদ সা:-এর সাহচর্যে এসে তাঁর আনীত দ্বীন গ্রহণ করে মক্কার মুহাজির ও মদিনার আনসার এবং মদিনার চিরবৈরী আউস ও খাজরাজ গোত্র পরস্পরের ভাই ভাই হয়ে গেল- আল্লাহ বলেন : ‘আর তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো, যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, অতঃপর তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন, ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে। তোমরা অগ্নিগর্তের দ্বারপ্রান্তে ছিলে, তিনি তোমাদের তা থেকে রক্ষা করেছেন’ (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-১০৩)।
আল্লাহ পাক বলেন : ‘তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শন আসার পরও বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-১০৫)।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন : ‘মুমিনরা পরস্পরের ভাই ভাই; কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপস মীমাংসা করে দাও। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও’ (সূরা হুজুরাত-১০)। এই আয়াত দুনিয়ার সব মুসলমানকে বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। প্রত্যেক মুসলিম অপর মুসলিমকে নিজের ভাইয়ের মতো আপন মনে করবে, এটি আল্লাহর আদেশ। অতএব একজন মুসলমান অপর মুসলমানকে কোনো শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া ঘৃণা করতে পারে না, তার কোনো অনিষ্ট চিন্তা করবে না, তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ-বিগ্রহ করতে পারে না। যারা এরূপ করবে তারা অবশ্যই কুরআনের এই আদেশ লঙ্ঘনকারী।
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন : ‘এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার ওপর জুলুম করবে না, তাকে সহযোগিতা করা পরিত্যাগ করবে না এবং তাকে লাঞ্ছিত ও হেয় করবে না। কোনো ব্যক্তির জন্য তার কোনো মুসলিম ভাইকে হেয় ও ক্ষুদ্র করার মতো অপকর্ম আর নেই’ (মুসনদে আহমাদ; ১৬/২৯৭, ৭৭৫৬)। তিনি আরো বলেছেন : ‘একজন মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার ওপর অত্যাচার করতে পারে না, তাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে না’ (বুখারি : ২৪৪২; মুসলিম ২৫৮০)।
পবিত্র কুরআন এবং হাদিসের এসব আদেশ ও নিষেধ বিশ্বের সব মুসলমানের ওপরই প্রযোজ্য। যিনি যে অবস্থায়ই আছেন, তার সে অবস্থাতেই এ সব আদেশ-নিষেধ পালন করা কর্তব্য। কুরআন হাদিসের আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কার্যক্রম পরিচালনা করলে মুসলমানের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে।
মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ থাকা কুরআনের নির্দেশ। বিশ্ব মুসলিমের ঐক্যের পক্ষে কাজ করা, কথা বলা কিংবা নিদেনপক্ষে এর আকাক্সক্ষা পোষণ করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অবশ্য কর্তব্য, এটি তার ঈমানের দাবি। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন মন্দ অবস্থা অবলোকন করে, তখন তার উচিত শক্তি প্রয়োগ করে তা ঠিক করে দেয়া; যদি তা সম্ভব না হয় তবে তার বিপক্ষে কথা বলে তা ঠিক করার চেষ্টা করা, যদি তাও সম্ভব না হয় তা দূর করার জন্য আকাক্সক্ষা প্রকাশ করা উচিত। এটি ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর’ (মুসলিম)
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য বিষয়ে আয়াত
ইসলামের পক্ষের সকল শক্তিকে আল্লাহতায়ালা ঐক্যবদ্ধ জীবনযাপনের জন্য তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই’। কখনও বলেছেন-‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে ধারণ করো, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’। তোমরা একত্রিত হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে (আল-কোরআন তথা আল্লাহর দ্বীনকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং দলাদলিতে লিপ্ত হয়ো না।( সুরা আলে-ইমরান:১০৩)  আবার বলেছেন, ‘মুহাম্মদ সা.-এর সাথীরা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পর রহমদিল’। নিজেদের ঐক্য নষ্ট করে যারা পরস্পর দলাদলি করে তাদেরকে কাফির আখ্যায়িত করে সূরা আল ইমরানের নিম্নোক্ত আয়াতে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। ‘তোমরা যেন তাদের মত হয়ে যেয়ো না, যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে এবং সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য হিদায়াত পাওয়ার পরও মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে। যারা এ নীতি অবলম্বন করেছে তারা সেদিন কঠিন শাস্তি পাবে। সেদিন কিছু লোকের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠবে এবং কিছু লোকের মুখ কালো হয়ে যাবে। যাদের চেহারা কালো হয়ে যাবে তাদেরকে বলা হবে, ঈমানের নিয়ামত লাভ করার পরও তোমরা কুফুরি নীতি অবলম্বন করলে? ঠিক আছে, তাহলে এখন এই নিয়ামত অস্বীকৃতির বিনিময়ে আজাবের স্বাদ গ্রহণ করো। আর যাদের চেহারা উজ্জ্বল হবে, তারা আল্লাহর রহমতের আশ্রয় লাভ করবে এবং চিরকাল তারা এই অবস্থায় থাকবে। এগুলো আল্লাহর বাণী, তোমাকে যথাযথভাবে শুনিয়ে যাচ্ছি। কারণ দুনিয়াবাসীদের প্রতি জুলুম করার কোন এরাদা আল্লাহর নেই।’ (সূরা আল ইমরান : ১০৫-১০৮) আল্লাহতায়ালা আরো বলেন- ‘এবং তোমাদের এ জাতি একই জাতি এবং আমিই তোমাদের প্রতিপালক; অতএব আমাকে ভয় কর। কিন্তু তারা নিজেদের মধ্যে তাদের দ্বীনকে বহুধা বিভক্ত করেছে, প্রত্যেক দলই তাদের নিকট যা আছে তা নিয়ে আনন্দিত।’ (সূরা মু’মিনুন : ৫২-৫৩) ‘যারা দ্বীন সম্বন্ধে নানা মতের সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে তাদের কোন দায়িত্ব তোমার নয়; তাদের বিষয় আল্লাহর ইখতিয়ারভুক্ত। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে অবহিত করবেন।’ (সূরা আন’আম : ১৫৯)
তোমরা একত্রিত হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে (আল-কোরআন তথা আল্লাহর দ্বীনকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং দলাদলিতে লিপ্ত হয়ো না।( সুরা আলে-ইমরান:১০৩) মুসলিম উম্মাহর ঐক্য জরুরী বিষয় ঐক্যের ভিত্তি হবে "হাবলুল্লাহ্''- ইসলাম আল্লাহর প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থা। একমাত্র ইসলামই মানুষের জন্যে নির্ভুল জীবন-দর্শন ও জীবনাদর্শ। আল্লাহ এই জীবনাদর্শ প্রেরণ করেছেন পৃথিবীর বুকে এটিকে প্রবর্তিত ও বিজয়ী করতে এবং বিজয়ী রাখতে। আর এই কাজের জন্যে মুসলিমদের সর্বদা সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ থাকা চাই।
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য 
youtube
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য
youtube
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য এবং দিকনির্দেশনা
youtube
মুসলিম উম্মার ঐক্য ও ঐক্যের দিক নির্দেশনা
youtube
মুসলিমদের ঐক্যের ব্যাপারে আমাদের করণীয় কি?
youtube
উম্মতের ঐক্য- Unity of Ummah
youtube
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য 
youtube
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য
youtube
মুসলিম ঐক্য : বর্তমান মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির সমাধান
Muslim Unity: A solution to the current division of the Muslim Ummah
0 notes
allahisourrabb · 1 month
Text
Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media
যখন সকল কিছু বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠী একত্র হবে, নিজেরা নিজেদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হবে এবং মজলুম মুসলমানদের সাহায্যার্থে এগিয়ে যাবে, তখন ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী পরাশক্তি গুলোও ভয় পাবে। মজলুম, নির্যাতিত মুসলিমরা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। দখলদার ইজরাইলের হাত থেকে এবং সকল নিপীড়িত মুসলিম কলোনি স্বাধীন হবে। মুসলিমরা আবার নিজেদের শক্তি ফিরে পাবে। মুসলিম ঐক্যের দ্বারাই আবার মুসলিমদের শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য 
মুসলিম ঐক্য : বর্তমান মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির সমাধান
Muslim Unity: A solution to the current division of the Muslim Ummah
ঐক্য বলতে সাধারণত আমরা বুঝি একতা, ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্যপূর্ণ বন্ধন। আর মুসলিম ঐক্য বলতে বুঝায় দেশ-জাতি, ভাষা,বর্ণ ও অঞ্চল ভেদাভেদ থেকে মুক্ত হয়ে সকল মুসলিমরা নিজেদের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব একাত্মতা পোষণ করা। অর্থাৎ বিশ্বের সকল মুসলিম একটি দেহের ন্যায় আবদ্ধ হওয়া, যেখানে থাকবে না কোন ব্যক্তি স্বার্থ। সবাই ভৌগোলিকভাবে দূরে থাকলেও সম্পর্ক হবে এক ও অভিন্ন।
পবিত্র কুরআন মাজিদে মহান আল্লাহ তায়ালা তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমারা আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরো (ঐক্যবদ্ধ হও) এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (সূরা আল-ইমরান : আয়াত ১০৩)। এখানে রজ্জু দ্বারা দ্বীন-ইসলামকে বুঝানো হয়েছে। একে রজ্জু এজন্যই বলা হয়েছে যে, এক দিকে আল্লাহর সাথে ঈমানদার লোকদের সস্পর্ক স্থাপন হয় এবং অন্যদিকে সমস্ত মুসলিমরা পরস্পর ঐক্যবদ্ধ ও মিলিত হয়ে একটি দৃঢ় ও শক্তিশালী জাতিতে রূপান্তরিত হয়। এই রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করার অর্থ এই যে, এ দ্বীনকে আল্লাহর জমিনে প্রতিষ্ঠা করার জন্য চেষ্টা করা করা এবং এক মুসলমান অপর মুসলমানকে ব্যক্তি স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর কল্যাণে প্রতিটি মুসলমানের একাত্মতা ঘোষণা করা অবশ্যই কর্তব্য। সকল মুসলিম জনগোষ্ঠী ভাই-ভাই। এক মুসলমান ভাইয়ের কোন সমস্যা পরিলক্ষিত হলে বা এক মুসলমান নির্যাতিত হলে অপর মুসলমান ভাই তার সাহায্যে এগিয়ে যাবে। কুরআন মাজিদে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।’ (সূরা হুজরাত : আয়াত ১০)।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো সমগ্র মুসলিম বিশ্ব আজ এই দী���্ষা থেকে শত মাইল দূরে সরে গেছে। নিজেদের স্বার্থ হাসিলে আজ মুসলমান পরস্পর ভাইয়ের সম্পর্ক ভাইয়ের সেটা ভুলে গিয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে এ বিষয়টি প্রমাণিত যে, যদি কোন জনসমষ্টি, রাষ্ট্র বা গোত্র পরাশক্তির অধিকারী হতে চায়, তবে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ ও নিজেদের মধ্যে দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। এই বিষয়টির সঠিক জ্ঞান কাজে লাগিয়ে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী ও উপনিবেশবাদী দেশগুলো এবং ইহুদি ও খ্রিস্টানরা তাদের মধ্যকার ঐতিহাসিক শত্রুতাকে ভুলে নিজ স্বার্থ রক্ষার্থে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে একই প্লাটফর্মে সমবেত হয়েছে। আর অন্যদিকে আমাদের মুসলিম দেশগুলো ভৌগলিক, আঞ্চলিক, ভাষাগত, জাতিভিত্তিক ও রাজনৈতিক সীমার বিভাজনেই শুধু বিভক্ত নয় বরং তারা ��াজার দলে বিভক্ত হয়ে নিজেদের সকল বীরত্বের ইতিহাস ভুলে যেতে বসেছে। বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে অনৈক্য ও অসংহতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় দুইশো কোটির বৃহৎ একটি মুসলিম জনশক্তি রয়েছে।
পৃথিবীর প্রায় এক-চতুর্থাংশ ভূমি মুসলমানদের দখলে রয়েছে। তবুও বিশ্বের অন্যান্য শক্তির কাছে তারা আজ নত। দেশে দেশে আজ মুসলিমরা লাঞ্ছিত ও নিষ্পেষিত হচ্ছে । মজলুম মানুষের কান্নায় আকাশ ভারী হচ্ছে। কখনো কী ভেবে দেখেছি যে, মুসলমানদের এই অবস্থা হলো কেন? আর এর উত্তরে একমাত্র যে কারণ তা হলো, মুসলিম উম্মাহর ভেতরে ঢুকে গেছে অনৈক্যের বীজ। মুসলিম বিশ্ব আজ শত দলে বিভক্ত। উম্মাহর এই অনৈক্য ও অসংহতি সৃষ্টি করছে মারাত্মক বিষক্রিয়ার। ফলে তারা কাটাচ্ছে মুমূর্ষু অবস্থা।
অনৈক্যের কারণে বর্তমান বিশ্বে মজলুম মুসলিমদের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। বর্তমানে বহির্বিশ্বে মুসলিমরা ক্রমাগত তাদের ন্যায্য অধিকার হারাচ্ছে। নিজ ভূ-খ-ে নিজেরাই দাসে পরিণত হচ্ছে। এমনকি নিজেরাই নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে জড়িয়ে যাচ্ছে, যেখানে নিজেরা এক মুসলিম সম্প্রদায় অন্য মুসলিম সম্প্রদায়কে বহিরাগত আক্রমণ থেকে রক্ষা করার কথা ছিলো। ক্রমাগত মজলুম মুসলমানদের নীরব কান্না বেড়েই চলছে। সাম্প্রতিক ফিলিস্তিনের গাজা এলাকায় ইসরাইলি দখলদার বাহিনী যে গণহত্যা তান্ডব চালাচ্ছে, যেখানে মুসলিম বিশ্ব নীরব। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সংগঠন ওআইসি, আরবলীগ থেকেও তাদের স্বাধীনতার জন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না।
পশ্চিমা দেশগুলো যেভাবে ইসরায়েলকে সাপোর্ট দিয়ে আসছে, তার কিয়দংশও যদি মুসলিম বিশ্ব বা ওআইসি, আরবলীগের মতো সংগঠন দিতো তাহলে আজকে এই দূরাবস্থায় পড়তে হতো না। শুধু ফিলিস্তিন নয়, সিরিয়া থেকে শুরু করে, ইরাক, চীন, ভারত, মিয়ানমারসহ বিশ্বের অনেক দেশেই এখন নির্যাতন-নিপীড়নের লক্ষ্যবস্তু হলো মুসলিম সম্প্রদায়। মুসলিম ঐক্য থাকলে আজ ইসরাইল ও পশ্চিমা দেশগুলো এমন সাহস পেত না। সুতরাং এখান থেকেও বুঝা যায় যে,মুসলিম ঐক্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। উম্মাহের এই ক্রান্তিলগ্নে ঐক্যর কোন বিকল্প নেই।
যখন সকল কিছু বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠী একত্র হবে, নিজেরা নিজেদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হবে এবং মজলুম মুসলমানদের সাহায্যার্থে এগিয়ে যাবে, তখন ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী পরাশক্তি গুলোও ভয় পাবে। মজলুম, নির্যাতিত মুসলিমরা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। দখলদার ইজরাইলের হাত থেকে এবং সকল নিপীড়িত মুসলিম কলোনি স্বাধীন হবে। মুসলিমরা আবার নিজেদের শক্তি ফিরে পাবে। মুসলিম ঐক্যের দ্বারাই আবার মুসলিমদের শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
বিশ্ব মুসলিমের ঐক্য : কুরআনের দাবি
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন; নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি ও পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হতে নিষেধ করেছেন এবং এই ঐক্যের বন্ধন হিসেবে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (সূরা আলে-ইমরান : ১০৩)। এ আয়াতাংশে আল্লাহ তায়ালা তিনটি নির্দেশ দিয়েছেন- ১. মুসলমানদের আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকতে হবে। বেশির ভাগ তাফসিরকারকের মতে, ‘আল্লাহর রজ্জু’ বলতে পবিত্র কুরআনকে বুঝানো হয়েছে। এই কুরআনই ইসলামের মূল ভিত্তি এবং কুরআনের বাস্তব নিদর্শন মহানবী সা:-এর সুন্নাহ। মুসলমানদের অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে পবিত্র কুরআন ও নবীর সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকা। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে অনুসরণ করা। ২. কুরআনের ভিত্তিতে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ অর্থাৎ একমাত্র ইসলামই বিশ্ব মুসলমানের ঐক্যের ভিত্তি ও বন্ধন। ইসলাম ভিন্ন অন্য কিছু- ভাষা, গোত্র, বর্ণ কিংবা আঞ্চলিকতা মুসলমানদের ঐক্যের মূল ভিত্তি হতে পারে না। এগুলো ইসলামের অধীনে ঐক্যের অতিরিক্ত উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে। ৩. নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা বা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হওয়া যাবে না। মুসলমানরা যদি নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে, দল-উপদলে বিভক্ত হয়, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয় এবং একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ করে তা হবে আল্লাহ তায়ালার এই নির্দেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
মুসলমানরা যেন একতাবদ্ধভাবে থাকে এবং নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত ও ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত না হয়, সে বিষয়ে কুরআনে আল্লাহ তায়ালার আরো নির্দেশ রয়েছে।
মুসলমানদের পরস্পরের সম্প্রীতি ও ভালোবাসা তথা ঐক্যকে আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি তাঁর ‘নিয়ামত’ বলে উল্লেখ করেছেন। মহানবী মুহাম্মদ সা:-এর সাহচর্যে এসে তাঁর আনীত দ্বীন গ্রহণ করে মক্কার মুহাজির ��� মদিনার আনসার এবং মদিনার চিরবৈরী আউস ও খাজরাজ গোত্র পরস্পরের ভাই ভাই হয়ে গেল- আল্লাহ বলেন : ‘আর তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো, যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, অতঃপর তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন, ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে। তোমরা অগ্নিগর্তের দ্বারপ্রান্তে ছিলে, তিনি তোমাদের তা থেকে রক্ষা করেছেন’ (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-১০৩)।
আল্লাহ পাক বলেন : ‘তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শন আসার পরও বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-১০৫)।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন : ‘মুমিনরা পরস্পরের ভাই ভাই; কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপস মীমাংসা করে দাও। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও’ (সূরা হুজুরাত-১০)। এই আয়াত দুনিয়ার সব মুসলমানকে বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। প্রত্যেক মুসলিম অপর মুসলিমকে নিজের ভাইয়ের মতো আপন মনে করবে, এটি আল্লাহর আদেশ। অতএব একজন মুসলমান অপর মুসলমানকে কোনো শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া ঘৃণা করতে পারে না, তার কোনো অনিষ্ট চিন্তা করবে না, তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ-বিগ্রহ করতে পারে না। যারা এরূপ করবে তারা অবশ্যই কুরআনের এই আদেশ লঙ্ঘনকারী।
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন : ‘এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার ওপর জুলুম করবে না, তাকে সহযোগিতা করা পরিত্যাগ করবে না এবং তাকে লাঞ্ছিত ও হেয় করবে না। কোনো ব্যক্তির জন্য তার কোনো মুসলিম ভাইকে হেয় ও ক্ষুদ্র করার মতো অপকর্ম আর নেই’ (মুসনদে আহমাদ; ১৬/২৯৭, ৭৭৫৬)। তিনি আরো বলেছেন : ‘একজন মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার ওপর অত্যাচার করতে পারে না, তাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে না’ (বুখারি : ২৪৪২; মুসলিম ২৫৮০)।
পবিত্র কুরআন এবং হাদিসের এসব আদেশ ও নিষেধ বিশ্বের সব মুসলমানের ওপরই প্রযোজ্য। যিনি যে অবস্থায়ই আছেন, তার সে অবস্থাতেই এ সব আদেশ-নিষেধ পালন করা কর্তব্য। কুরআন হাদিসের আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কার্যক্রম পরিচালনা করলে মুসলমানের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে।
মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ থাকা কুরআনের নির্দেশ। বিশ্ব মুসলিমের ঐক্যের পক্ষে কাজ করা, কথা বলা কিংবা নিদেনপক্ষে এর আকাক্সক্ষা পোষণ করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অবশ্য কর্তব্য, এটি তার ঈমানের দাবি। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন মন্দ অবস্থা অবলোকন করে, তখন তার উচিত শক্তি প্রয়োগ করে তা ঠিক করে দেয়া; যদি তা সম্ভব না হয় তবে তার বিপক্ষে কথা বলে তা ঠিক করার চেষ্টা করা, যদি তাও সম্ভব না হয় তা দূর করার জন্য আকাক্সক্ষা প্রকাশ করা উচিত। এটি ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর’ (মুসলিম)
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য বিষয়ে আয়াত
ইসলামের পক্ষের সকল শক্তিকে আল্লাহতায়ালা ঐক্যবদ্ধ জীবনযাপনের জন্য তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই’। কখনও বলেছেন-‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে ধারণ করো, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’। তোমরা একত্রিত হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে (আল-কোরআন তথা আল্লাহর দ্বীনকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং দলাদলিতে লিপ্ত হয়ো না।( সুরা আলে-ইমরান:১০৩)  আবার বলেছেন, ‘মুহাম্মদ সা.-এর সাথীরা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পর রহমদিল’। নিজেদের ঐক্য নষ্ট করে যারা পরস্পর দলাদলি করে তাদেরকে কাফির আখ্যায়িত করে সূরা আল ইমরানের নিম্নোক্ত আয়াতে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। ‘তোমরা যেন তাদের মত হয়ে যেয়ো না, যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে এবং সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য হিদায়াত পাওয়ার পরও মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে। যারা এ নীতি অবলম্বন করেছে তারা সেদিন কঠিন শাস্তি পাবে। সেদিন কিছু লোকের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠবে এবং কিছু লোকের মুখ কালো হয়ে যাবে। যাদের চেহারা কালো হয়ে যাবে তাদেরকে বলা হবে, ঈমানের নিয়ামত লাভ করার পরও তোমরা কুফুরি নীতি অবলম্বন করলে? ঠিক আছে, তাহলে এখন এই নিয়ামত অস্বীকৃতির বিনিময়ে আজাবের স্বাদ গ্রহণ করো। আর যাদের চেহারা উজ্জ্বল হবে, তারা আল্লাহর রহমতের আশ্রয় লাভ করবে এবং চিরকাল তারা এই অবস্থায় থাকবে। এগুলো আল্লাহর বাণী, তোমাকে যথাযথভাবে শুনিয়ে যাচ্ছি। কারণ দুনিয়াবাসীদের প্রতি জুলুম করার কোন এরাদা আল্লাহর নেই।’ (সূরা আল ইমরান : ১০৫-১০৮) আল্লাহতায়ালা আরো বলেন- ‘এবং তোমাদের এ জাতি একই জাতি এবং আমিই তোমাদের প্রতিপালক; অতএব আমাকে ভয় কর। কিন্তু তারা নিজেদের মধ্যে তাদের দ্বীনকে বহুধা বিভক্ত করেছে, প্রত্যেক দলই তাদের নিকট যা আছে তা নিয়ে আনন্দিত।’ (সূরা মু’মিনুন : ৫২-৫৩) ‘যারা দ্বীন সম্বন্ধে নানা মতের সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে তাদের কোন দায়িত্ব তোমার নয়; তাদের বিষয় আল্লাহর ইখতিয়ারভুক্ত। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে অবহিত করবেন।’ (সূরা আন’আম : ১৫৯)
তোমরা একত্রিত হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে (আল-কোরআন তথা আল্লাহর দ্বীনকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং দলাদলিতে লিপ্ত হয়ো না।( সুরা আলে-ইমরান:১০৩) মুসলিম উম্মাহর ঐক্য জরুরী বিষয় ঐক্যের ভিত্তি হবে "হাবলুল্লাহ্''- ইসলাম আল্লাহর প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থা। একমাত্র ইসলামই মানুষের জন্যে নির্ভুল জীবন-দর্শন ও জীবনাদর্শ। আল্লাহ এই জীবনাদর্শ প্রেরণ করেছেন পৃথিবীর বুকে এটিকে প্রবর্তিত ও বিজয়ী করতে এবং বিজয়ী রাখতে। আর এই কাজের জন্যে মুসলিমদের সর্বদা সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ থাকা চাই।
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য 
youtube
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য
youtube
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য এবং দিকনির্দেশনা
youtube
মুসলিম উম্মার ঐক্য ও ঐক্যের দিক নির্দেশনা
youtube
মুসলিমদের ঐক্যের ব্যাপারে আমাদের করণীয় কি?
youtube
উম্মতের ঐক্য- Unity of Ummah
youtube
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য 
youtube
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য
youtube
মুসলিম ঐক্য : বর্তমান মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির সমাধান
Muslim Unity: A solution to the current division of the Muslim Ummah
0 notes
mylordisallah · 1 month
Text
Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media
যখন সকল কিছু বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠী একত্র হবে, নিজেরা নিজেদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হবে এবং মজলুম মুসলমানদের সাহায্যার্থে এগিয়ে যাবে, তখন ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী পরাশক্তি গুলোও ভয় পাবে। মজলুম, নির্যাতিত মুসলিমরা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। দখলদার ইজরাইলের হাত থেকে এবং সকল নিপীড়িত মুসলিম কলোনি স্বাধীন হবে। মুসলিমরা আবার নিজেদের শক্তি ফিরে পাবে। মুসলিম ঐক্যের দ্বারাই আবার মুসলিমদের শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য 
মুসলিম ঐক্য : বর্তমান মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির সমাধান
Muslim Unity: A solution to the current division of the Muslim Ummah
ঐক্য বলতে সাধারণত আমরা বুঝি একতা, ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্যপূর্ণ বন্ধন। আর মুসলিম ঐক্য বলতে বুঝায় দেশ-জাতি, ভাষা,বর্ণ ও অঞ্চল ভেদাভেদ থেকে মুক্ত হয়ে সকল মুসলিমরা নিজেদের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব একাত্মতা পোষণ করা। অর্থাৎ বিশ্বের সকল মুসলিম একটি দেহের ন্যায় আবদ্ধ হওয়া, যেখানে থাকবে না কোন ব্যক্তি স্বার্থ। সবাই ভৌগোলিকভাবে দূরে থাকলেও সম্পর্ক হবে এক ও অভিন্ন।
পবিত্র কুরআন মাজিদে মহান আল্লাহ তায়ালা তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমারা আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরো (ঐক্যবদ্ধ হও) এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (সূরা আল-ইমরান : আয়াত ১০৩)। এখানে রজ্জু দ্বারা দ্বীন-ইসলামকে বুঝানো হয়েছে। একে রজ্জু এজন্যই বলা হয়েছে যে, এক দিকে আল্লাহর সাথে ঈমানদার লোকদের সস্পর্ক স্থাপন হয় এবং অন্যদিকে সমস্ত মুসলিমরা পরস্পর ঐক্যবদ্ধ ও মিলিত হয়ে একটি দৃঢ় ও শক্তিশালী জাতিতে রূপান্তরিত হয়। এই রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করার অর্থ এই যে, এ দ্বীনকে আল্লাহর জমিনে প্রতিষ্ঠা করার জন্য চেষ্টা করা করা এবং এক মুসলমান অপর মুসলমানকে ব্যক্তি স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর কল্যাণে প্রতিটি মুসলমানের একাত্মতা ঘোষণা করা অবশ্যই কর্তব্য। সকল মুসলিম জনগোষ্ঠী ভাই-ভাই। এক মুসলমান ভাইয়ের কোন সমস্যা পরিলক্ষিত হলে বা এক মুসলমান নির্যাতিত হলে অপর মুসলমান ভাই তার সাহায্যে এগিয়ে যাবে। কুরআন মাজিদে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।’ (সূরা হুজরাত : আয়াত ১০)।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো সমগ্র মুসলিম বিশ্ব আজ এই দীক্ষা থেকে শত মাইল দূরে সরে গেছে। নিজেদের স্বার্থ হাসিলে আজ মুসলমান পরস্পর ভাইয়ের সম্পর্ক ভাইয়ের সেটা ভুলে গিয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে এ বিষয়টি প্রমাণিত যে, যদি কোন জনসমষ্টি, রাষ্ট্র বা গোত্র পরাশক্তির অধিকারী হতে চায়, তবে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ ও নিজেদের মধ্যে দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। এই বিষয়টির সঠিক জ্ঞান কাজে লাগিয়ে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী ও উপনিবেশবাদী দেশগুলো এবং ইহুদি ও খ্রিস্টানরা তাদের মধ্যকার ঐতিহাসিক শত্রুতাকে ভুলে নিজ স্বার্থ রক্ষার্থে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে একই প্লাটফর্মে সমবেত হয়েছে। আর অন্যদিকে আমাদের মুসলিম দেশগুলো ভৌগলিক, আঞ্চলিক, ভাষাগত, জাতিভিত্তিক ও রাজনৈতিক সীমার বিভাজনেই শুধু বিভক্ত নয় বরং তারা হাজার দলে বিভক্ত হয়ে নিজেদের সকল বীরত্বের ইতিহাস ভুলে যেতে বসেছে। বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে অনৈক্য ও অসংহতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ��র্তমান পৃথিবীতে প্রায় দুইশো কোটির বৃহৎ একটি মুসলিম জনশক্তি রয়েছে।
পৃথিবীর প্রায় এক-চতুর্থাংশ ভূমি মুসলমানদের দখলে রয়েছে। তবুও বিশ্বের অন্যান্য শক্তির কাছে তারা আজ নত। দেশে দেশে আজ মুসলিমরা লাঞ্ছিত ও নিষ্পেষিত হচ্ছে । মজলুম মানুষের কান্নায় আকাশ ভারী হচ্ছে। কখনো কী ভেবে দেখেছি যে, মুসলমানদের এই অবস্থা হলো কেন? আর এর উত্তরে একমাত্র যে কারণ তা হলো, মুসলিম উম্মাহর ভেতরে ঢুকে গেছে অনৈক্যের বীজ। মুসলিম বিশ্ব আজ শত দলে বিভক্ত। উম্মাহর এই অনৈক্য ও অসংহতি সৃষ্টি করছে মারাত্মক বিষক্রিয়ার। ফলে তারা কাটাচ্ছে মুমূর্ষু অবস্থা।
অনৈক্যের কারণে বর্তমান বিশ্বে মজলুম মুসলিমদের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। বর্তমানে বহির্বিশ্বে মুসলিমরা ক্রমাগত তাদের ন্যায্য অধিকার হারাচ্ছে। নিজ ভূ-খ-ে নিজেরাই দাসে পরিণত হচ্ছে। এমনকি নিজেরাই নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে জড়িয়ে যাচ্ছে, যেখানে নিজেরা এক মুসলিম সম্প্রদায় অন্য মুসলিম সম্প্রদায়কে বহিরাগত আক্রমণ থেকে রক্ষা করার কথা ছিলো। ক্রমাগত মজলুম মুসলমানদের নীরব কান্না বেড়েই চলছে। সাম্প্রতিক ফিলিস্তিনের গাজা এলাকায় ইসরাইলি দখলদার বাহিনী যে গণহত্যা তান্ডব চালাচ্ছে, যেখানে মুসলিম বিশ্ব নীরব। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সংগঠন ওআইসি, আরবলীগ থেকেও তাদের স্বাধীনতার জন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না।
পশ্চিমা দেশগুলো যেভাবে ইসরায়েলকে সাপোর্ট দিয়ে আসছে, তার কিয়দংশও যদি মুসলিম বিশ্ব বা ওআইসি, আরবলীগের মতো সংগঠন দিতো তাহলে আজকে এই দূরাবস্থায় পড়তে হতো না। শুধু ফিলিস্তিন নয়, সিরিয়া থেকে শুরু করে, ইরাক, চীন, ভারত, মিয়ানমারসহ বিশ্বের অনেক দেশেই এখন নির্যাতন-নিপীড়নের লক্ষ্যবস্তু হলো মুসলিম সম্প্রদায়। মুসলিম ঐক্য থাকলে আজ ইসরাইল ও পশ্চিমা দেশগুলো এমন সাহস পেত না। সুতরাং এখান থেকেও বুঝা যায় যে,মুসলিম ঐক্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। উম্মাহের এই ক্রান্তিলগ্নে ঐক্যর কোন বিকল্প নেই।
যখন সকল কিছু বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠী একত্র হবে, নিজেরা নিজেদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হবে এবং মজলুম মুসলমানদের সাহায্যার্থে এগিয়ে যাবে, তখন ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী পরাশক্তি গুলোও ভয় পাবে। মজলুম, নির্যাতিত মুসলিমরা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। দখলদার ইজরাইলের হাত থেকে এবং সকল নিপীড়িত মুসলিম কলোনি স্বাধীন হবে। মুসলিমরা আবার নিজেদের শক্তি ফিরে পাবে। মুসলিম ঐক্যের দ্বারাই আবার মুসলিমদের শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
বিশ্ব মুসলিমের ঐক্য : কুরআনের দাবি
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন; নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি ও পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হতে নিষেধ করেছেন এবং এই ঐক্যের বন্ধন হিসেবে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (সূরা আলে-ইমরান : ১০৩)। এ আয়াতাংশে আল্লাহ তায়ালা তিনটি নির্দেশ দিয়েছেন- ১. মুসলমানদের আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকতে হবে। বেশির ভাগ তাফসিরকারকের মতে, ‘আল্লাহর রজ্জু’ বলতে পবিত্র কুরআনকে বুঝানো হয়েছে। এই কুরআনই ইসলামের মূল ভিত্তি এবং কুরআনের বাস্তব নিদর্শন মহানবী সা:-এর সুন্নাহ। মুসলমানদের অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে পবিত্র কুরআন ও নবীর সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকা। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে অনুসরণ করা। ২. কুরআনের ভিত্তিতে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ অর্থাৎ একমাত্র ইসলামই বিশ্ব মুসলমানের ঐক্যের ভিত্তি ও বন্ধন। ইসলাম ভিন্ন অন্য কিছু- ভাষা, গোত্র, বর্ণ কিংবা আঞ্চলিকতা মুসলমানদের ঐক্যের মূল ভিত্তি হতে পারে না। এগুলো ইসলামের অধীনে ঐক্যের অতিরিক্ত উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে। ৩. নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা বা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হওয়া যাবে না। মুসলমানরা যদি নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে, দল-উপদলে বিভক্ত হয়, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয় এবং একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ করে তা হবে আল্লাহ তায়ালার এই নির্দেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
মুসলমানরা যেন একতাবদ্ধভাবে থাকে এবং নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত ও ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত না হয়, সে বিষয়ে কুরআনে আল্লাহ তায়ালার আরো নির্দেশ রয়েছে।
মুসলমানদের পরস্পরের সম্প্রীতি ও ভালোবাসা তথা ঐক্যকে আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি তাঁর ‘নিয়ামত’ বলে উল্লেখ করেছেন। মহানবী মুহাম্মদ সা:-এর সাহচর্যে এসে তাঁর আনীত দ্বীন গ্রহণ করে মক্কার মুহাজির ও মদিনার আনসার এবং মদিনার চিরবৈরী আউস ও খাজরাজ গোত্র পরস্পরের ভাই ভাই হয়ে গেল- আল্লাহ বলেন : ‘আর তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো, যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, অতঃপর তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন, ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে। তোমরা অগ্নিগর্তের দ্বারপ্রান্তে ছিলে, তিনি তোমাদের তা থেকে রক্ষা করেছেন’ (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-১০৩)।
আল্ল���হ পাক বলেন : ‘তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শন আসার পরও বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-১০৫)।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন : ‘মুমিনরা পরস্পরের ভাই ভাই; কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপস মীমাংসা করে দাও। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও’ (সূরা হুজুরাত-১০)। এই আয়াত দুনিয়ার সব মুসলমানকে বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। প্রত্যেক মুসলিম অপর মুসলিমকে নিজের ভাইয়ের মতো আপন মনে করবে, এটি আল্লাহর আদেশ। অতএব একজন মুসলমান অপর মুসলমানকে কোনো শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া ঘৃণা করতে পারে না, তার কোনো অনিষ্ট চিন্তা করবে না, তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ-বিগ্রহ করতে পারে না। যারা এরূপ করবে তারা অবশ্যই কুরআনের এই আদেশ লঙ্ঘনকারী।
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন : ‘এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার ওপর জুলুম করবে না, তাকে সহযোগিতা করা পরিত্যাগ করবে না এবং তাকে লাঞ্ছিত ও হেয় করবে না। কোনো ব্যক্তির জন্য তার কোনো মুসলিম ভাইকে হেয় ও ক্ষুদ্র করার মতো অপকর্ম আর নেই’ (মুসনদে আহমাদ; ১৬/২৯৭, ৭৭৫৬)। তিনি আরো বলেছেন : ‘একজন মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার ওপর অত্যাচার করতে পারে না, তাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে না’ (বুখারি : ২৪৪২; মুসলিম ২৫৮০)।
পবিত্র কুরআন এবং হাদিসের এসব আদেশ ও নিষেধ বিশ্বের সব মুসলমানের ওপরই প্রযোজ্য। যিনি যে অবস্থায়ই আছেন, তার সে অবস্থাতেই এ সব আদেশ-নিষেধ পালন করা কর্তব্য। কুরআন হাদিসের আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কার্যক্রম পরিচালনা করলে মুসলমানের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে।
মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ থাকা কুরআনের নির্দেশ। বিশ্ব মুসলিমের ঐক্যের পক্ষে কাজ করা, কথা বলা কিংবা নিদেনপক্ষে এর আকাক্সক্ষা পোষণ করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অবশ্য কর্তব্য, এটি তার ঈমানের দাবি। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন মন্দ অবস্থা অবলোকন করে, তখন তার উচিত শক্তি প্রয়োগ করে তা ঠিক করে দেয়া; যদি তা সম্ভব না হয় তবে তার বিপক্ষে কথা বলে তা ঠিক করার চেষ্টা করা, যদি তাও সম্ভব না হয় তা দূর করার জন্য আকাক্সক্ষা প্রকাশ করা উচিত। এটি ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর’ (মুসলিম)
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য বিষয়ে আয়াত
ইসলামের পক্ষের সকল শক্তিকে আল্লাহতায়ালা ঐক্যবদ্ধ জীবনযাপনের জন্য তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই’। কখনও বলেছেন-‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে ধারণ করো, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’। তোমরা একত্রিত হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে (আল-কোরআন তথা আল্লাহর দ্বীনকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং দলাদলিতে লিপ্ত হয়ো না।( সুরা আলে-ইমরান:১০৩)  আবার বলেছেন, ‘মুহাম্মদ সা.-এর সাথীরা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পর রহমদিল’। নিজেদের ঐক্য নষ্ট করে যারা পরস্পর দলাদলি করে তাদেরকে কাফির আখ্যায়িত করে সূরা আল ইমরানের নিম্নোক্ত আয়াতে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। ‘তোমরা যেন তাদের মত হয়ে যেয়ো না, যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে এবং সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য হিদায়াত পাওয়ার পরও মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে। যারা এ নীতি অবলম্বন করেছে তারা সেদিন কঠিন শাস্তি পাবে। সেদিন কিছু লোকের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠবে এবং কিছু লোকের মুখ কালো হয়ে যাবে। যাদের চেহারা কালো হয়ে যাবে তাদেরকে বলা হবে, ঈমানের নিয়ামত লাভ করার পরও তোমরা কুফুরি নীতি অবলম্বন করলে? ঠিক আছে, তাহলে এখন এই নিয়ামত অস্বীকৃতির বিনিময়ে আজাবের স্বাদ গ্রহণ করো। আর যাদের চেহারা উজ্জ্বল হবে, তারা আল্লাহর রহমতের আশ্রয় লাভ করবে এবং চিরকাল তারা এই অবস্থায় থাকবে। এগুলো আল্লাহর বাণী, তোমাকে যথাযথভাবে শুনিয়ে যাচ্ছি। কারণ দুনিয়াবাসীদের প্রতি জুলুম করার কোন এরাদা আল্লাহর নেই।’ (সূরা আল ইমরান : ১০৫-১০৮) আল্লাহতায়ালা আরো বলেন- ‘এবং তোমাদের এ জাতি একই জাতি এবং আমিই তোমাদের প্রতিপালক; অতএব আমাকে ভয় কর। কিন্তু তারা নিজেদের মধ্যে তাদের দ্বীনকে বহুধা বিভক্ত করেছে, প্রত্যেক দলই তাদের নিকট যা আছে তা নিয়ে আনন্দিত।’ (সূরা মু’মিনুন : ৫২-৫৩) ‘যারা দ্বীন সম্বন্ধে নানা মতের সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে তাদের কোন দায়িত্ব তোমার নয়; তাদের বিষয় আল্লাহর ইখতিয়ারভুক্ত। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে অবহিত করবেন।’ (সূরা আন’আম : ১৫৯)
তোমরা একত্রিত হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে (আল-কোরআন তথা আল্লাহর দ্বীনকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং দলাদলিতে লিপ্ত হয়ো না।( সুরা আলে-ইমরান:১০৩) মুসলিম উম্মাহর ঐক্য জরুরী বিষয় ঐক্যের ভিত্তি হবে "হাবলুল্লাহ্''- ইসলাম আল্লাহর প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থা। একমাত্র ইসলামই মানুষের জন্যে নির্ভুল জীবন-দর্শন ও জীবনাদর্শ। আল্���াহ এই জীবনাদর্শ প্রেরণ করেছেন পৃথিবীর বুকে এটিকে প্রবর্তিত ও বিজয়ী করতে এবং বিজয়ী রাখতে। আর এই কাজের জন্যে মুসলিমদের সর্বদা সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ থাকা চাই।
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য 
youtube
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য
youtube
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য এবং দিকনির্দেশনা
youtube
মুসলিম উম্মার ঐক্য ও ঐক্যের দিক নির্দেশনা
youtube
মুসলিমদের ঐক্যের ব্যাপারে আমাদের করণীয় কি?
youtube
উম্মতের ঐক্য- Unity of Ummah
youtube
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য 
youtube
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য
youtube
মুসলিম ঐক্য : বর্তমান মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির সমাধান
Muslim Unity: A solution to the current division of the Muslim Ummah
0 notes
techtunes · 1 month
Text
Tumblr media
আবার মিস করেন নি তো?: ব্রুট-ফোর্স আক্রমণ কী? এবং আপনার একাউন্ট গুলোকে Brute-Force Attack থেকে কীভাবে রক্ষা করবেন? https://www.techtunes.io/cyber-security/tune-id/986119
0 notes
teresabinteislam · 1 month
Text
সূর্যের আঁধি থেকে রক্ষা পান সিয়েন সান স্প্রে দিয়ে!
সূর্যের আঁধি থেকে রক্ষা পান সিয়েন সান স্প্রে দিয়ে!
সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে আপনার ত্বককে রক্ষা করুন
গ্রীষ্মকাল এসে গেছে, আর এর সাথে সাথেই আসছে তীব্র রোদের প্রবল আক্রমণ। এই সময় ত্বকের যত্ন নেয়া অত্যন্ত জরুরী। কারণ সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ত্বকের ক্ষতি করে, বার্ধক্যের ছাপ ফেলে এবং এমনকি ত্বক ক্যান্সারেরও ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনার প্রয়োজন একটি ভালো সানস্ক্রিনের।
সিয়েন সান স্প্রে - আপনার ত্বকের সেরা বন্ধু
সিয়েন সান স্প্রে আপনার ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর UVA এবং UVB রশ্মি থেকে সুরক্ষা দেয়। এর হালকা এবং অ্যালকোহল মুক্ত ফর্মুলা ত্বককে শীতল করে এবং সারাদিনের জন্য ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে।
সিয়েন সান স্প্রের বৈশিষ্ট্য:
UVA এবং UVB রশ্মি থেকে সুরক্ষা
হালকা এবং অ্যালকোহল মুক্ত
ত্বককে শীতল করে
সারাদিনের জন্য ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে
ব্যবহারে সহজ স্প্রে ফর্ম্যাট
কিভাবে ব্যবহার করবেন:
সূর্যস্নান করার অন্তত ২০ মিনিট আগে সারা শরীরে সমানভাবে স্প্রে করুন। স্প্রে করার পর ভালোভাবে ঘষে নিন। সাঁতার কাটা বা ঘামার পর পুনরায় প্রয়োগ করুন।
সতর্কতা:
সরাসরি সূর্যের আলোতে অতিরিক্ত সময় কাটাবেন না।
শিশুদের জন্য ছায়ায় থাকা ভালো।
ত্বকে লালচে ভাব বা জ্বালাপোড়া হলে ব্যবহার বন্ধ করুন।
সিয়েন সান স্প্রে দিয়ে এই গ্রীষ্মে আপনার ত্বককে রক্ষা করুন এবং সুন্দর রাখুন।
cien sun spray
0 notes
news2024news · 2 months
Text
Tumblr media
অরাজকতা ও সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ বন্ধ করতে হবে: সম্পাদক পরিষদ http://dlvr.it/TBZHT9
0 notes
egerhvfdsf · 2 months
Text
Tumblr media
আপনার আমার সরাসরি গাজাবাসিদের শারীরিকভাবে সহায়তা করা সম্ভব হবে না তাই ইসরায়েলের উৎপাদিত পণ্য এবং সংস্থাগুলি অবশ্যই বয়কট করতে পারবো। এই বয়কটে ইসরায়েলিকে #গাজা উপত্যকায় তার রাজস্ব কমিয়ে তাদের নৃশংস আক্রমণ বন্ধ করতে বাধ্য করতে পারে
1 note · View note