বেলি
চারপাশ আলোয় মুখরিত, বিয়ের সানাই এ ভরপুর করছে পুরো এলাকা। বাসর ঘরে মাথায় ঘোমটা নিয়ে হাত শক্ত করে চেপে অপেক্ষা করছে নিধি। অনেকক্ষণ হয়ে গিয়েছে সায়েম এখনো নেই। এদিকে বিনা মেঘে শুরু হয়েছে প্রচন্ড বৃষ্টি। মেঘের শব্দে ভয় পাওয়া নিধি আরো কুচকিয়ে পড়লো। এরই মাঝে নিভে গেল ঘরের সব আলো নিধি চিল্লিয়ে উঠলো, পরে গেলো তার মাথার ঘোমটা! ঠিক এমন সময় দরজায় ঠকঠক করে হাতে এক ট্রে মোমবাতি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করল সায়েম।
- ভয় পাবেন না, বৃষ্টির সময় লোডশেডিং তো স্বাভাবিক ব্যাপার। কিছুক্ষণের মধ্যেই আলো চলে আসবে।
বলতে বলতে সায়েম পুরো ঘরে মোমবাতি সাজাচ্ছিলো।
নিধি সায়েমের কন্ঠ এই প্রথম শুনলো, যেন চিরচেনা কোন সুর। সায়েমের পেছন পাশটা দেখতে পাচ্ছে সে। তার চেহারাটা দেখার আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারছে না নিধি। সায়েম নিধির দিকে ঘুরতেই নিধি নিজের দৃষ্টি নামিয়ে ফেললো। সায়েম নিধির পাশে এগিয়ে এলো।
- আপনার কি একটি মোমবাতি লাগবে? চাইলে পাশে রাখতে পারেন বোধহয় আপনি ভয় পাচ্ছেন।
নিধি মাথা নাড়িয়ে জবাব দিলো তার চাইনা। এরই মাঝে সায়েম বুঝলো নিধির ঘোমটা খুলে গিয়েছে। পেছন থেকে সে দেখতে পাচ্ছে নিধির ঘন লম্বা কেশ তাতে মোড়ানো গোলাপের বদলে বেলি ফুলের মালা। নিধির চেহারা দেখতে ইচ্ছে করলো সায়েমের। তবে কেউই সাহস করে উঠতে পারলো না।
নিধি ঘুমাচ্ছে, সায়েম উঠে পড়েছে। ফ্রেশ হয়ে এসে নিধির পাশের ড্রয়ারটা থেকে ঘড়ি নিতে এসে তার দৃষ্টি পরলো নিধির উপর। জানালা দিয়ে মিষ্টি রোদ আভা ছড়াচ্ছে তার মুখে, কি অপরূপ লাগছে তাকে দেখতে সায়েম কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে রইল!
মা সায়েম বলে ডাকাতেই ঘোর ভাঙলো সায়েমের, চাপা পায়ে দৌড় দিলো ঘর থেকে!
নিধির মাথায় বেলিফুল। পায়েস বানাতে ব্যস্ত সে। সায়েম তাকে দেখতে পেয়ে আলতো করে তার পিছু গিয়ে দাঁড়াল আর বলল,
- আপনার কি বেলিফুল খুব পছন্দ?
নিধি হঠাৎ করেই শব্দটা শুনে পিছু ফিরে তাকালো। সায়েম একদম ঠিক তার মুখোমুখি! সায়েম বুঝতে পেরে জলদি করে মাথায় ঘোমটা দিতে লাগলো নিধি।
- আপনি চাইলে আমার সামনে ঘোমটা না দিলেও পারেন।
নিধি লজ্জা পেয়ে মাথা নাড়ালো।
- আমার উত্তরটা কিন্তু পেলাম না।
নিধি চোখ তুলে সায়েমের দিকে তাকালো! লজ্জা ভরা কন্ঠে বলে উঠলো,
- শুনেছিলাম আপনার বেলি ফুল পছন্দ!
সায়েম ধিমি হেসে বললো,
- লজ্জা পেলে আপনাকে দেখতে আরো সুন্দর লাগে!
- ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৩
- মোনালিসা মিতু
0 notes
সবার গল্পগুলো একই রকম হয় না। ভিন্নতা থাকে। ব্যতিক্রমতা থাকে। এটাই ধরণির চিরাচরিত নিয়ম। এটাই প্রতিটি যুগের ইতিহাস। প্রতিটি কালের চিত্র। তাই অন্যদের চেয়ে তোমার গল্পটাও ভিন্ন হতে পারে। গল্পটা অত সুন্দর, অত সাজানো-গোছানো নাও হতে পারো। হয়তো এলাকার মধ্যে ততটা ব্রিলিয়ান্ট হিসেবে পরিচিত নও তুমি। নামিদামি ব্রান্ডের পোশাক নেই তোমার পরনে। তোমার কলিগের ফ্ল্যাট আছে গুলশান কিংবা ধানমণ্ডিতে। কিন্তু তুমি এখনও ভাড়া বাড়িতে আছ। ছোট্ট একটা ফ্ল্যাটে কুচকাচ করে বাস করছ পরিবার-পরিজন নিয়ে। নূন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যায় তোমার। আচ্ছা, এসব চিন্তা করে কি কষ্ট পাও তুমি? মন খারাপ হয় তোমার? এগুলো নিয়ে কেন মন খারাপ করবে, আমাকে একটু বোঝাও তো! পৃথিবীর মধ্য��� শুধু তুমিই কষ্টে আছ, ব্যাপারটা তো এমন নয়। কষ্টে আছে আরও অনেকেই। আরও অনেকেই তোমার চেয়ে জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় দিন যাপন করছে। . ফুটপাতের জরিনা আক্তার দিনের-পর-দিন অভুক্ত থাকে ছোটো ছোটো বাচ্চা নিয়ে। মাথা গোজার মতো একচালা একটা ছনের ঘরও জোটে না ওদের কপালে। কনকনে শীতের রাতে উষ্ণতা নেওয়ার মতন গরম কাপড় থাকে না ওদের পরনে। চটের বস্তা আর রাস্তার ধুলোই ওদের উষ্ণ রাখে কনকনে শীতে। মানুষের দুয়ারে ভিক্ষে করে বেড়ায় যে ভিক্ষুক, সে তো তার মৌলিক প্রয়োজনটুকুও পুরো করতে পারে না। তাই তো একান্ত বাধ্য হয়েই চার বছরের সন্তানের হাতে স্লেট পেন্সিলের বদলে ভিক্ষের থাল ধরিয়ে দেয় প্যারালাইজড গফুর মিয়া। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত যমুনাপাড়ের দিনমজুর বেলালের ছোট্ট ছেলেটা চিকিৎসার অভাবে ধুকে-ধুকে মারা যায় ওর সামনেই। সন্তান-হারা স্ত্রীর আহাজারি সইতে না পেরে বেলাল গামছায় মুখ লুকিয়ে কাঁদে ধানক্ষেতের কিনারায় বসে। স্বামী-সন্তান-হারা ভোলার বৃদ্ধা নসিমন বিবি দুমুঠো ভাতের আশায় লাঠি হাতে ঠকঠক করে ঘুরে বেড়ায় এ দুয়োর থেকে ও দুয়োরে। প্রতি রাতেই একবুক ক্ষুধার যন্ত্রণা নিয়ে ঘুমোতে যায় সে। নসিমন জানেও না, পরদিন তার কপালে আদৌ ভাত জুটবে কি না। ওই-যে গেইটের দারোয়ান হামিদ চাচা। ওর সামান্য মাইনে দিয়ে ৭ জনের সংসার চলে৷ কোনো ঈদেই সন্তানকে নতুন জামা কিনে দিতে পারে না বলে বুকচাপা কান্না আসে ওর। যে কয়-টাকা মাইনে পায়, তাতে তো নূন আনতে পান্তা ফুরোয়। কোনোমতে স্ত্রী, সন্তানাদি, আর অন্ধ বাবাকে নিয়ে গাদাগাদি করে বসবাস করে গেইটের পাশের জরাজীর্ণ কক্ষটিতে। . তুমি কি এদের চেয়ে ভালো নেই? হ্যাঁ, আমি ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ! #alhamdulillah #subhanAllah #allahuakbar #muslim #beingmuslim #charity #oneummah #islamicreminders #invitetoislam #makkah #kaaba #salah #sunnah #quotes #reminders #namaz #thetruth #beautyofisla (at Riyadh, Saudi Arabia) https://www.instagram.com/p/CjV9exLLijg/?igshid=NGJjMDIxMWI=
0 notes
madhyamik: সব ঠিকঠাক থাকলে অগস্টে HS-এর রেজাল্ট, মাধ্যমিকের কবে? জানালেন শিক্ষামন্ত্রী – west bengal madhyamik result 2020: wb madhyamik 2020 result to be declared soon, says state education minister partha chatterjee এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: করোনাভাইরাস মহামারির জেরে মাঝপথে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল রাজ্যের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। বাকি পরীক্ষাগুলি কবে হবে, সেই তারিখ ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ২৯ জুন, ২ ও ৬ জুলাই উচ্চমাধ্যমিকের বাকি পরীক্ষা হওয়ার কথা। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় উম্পুন এসে সব লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। তবে সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে পূর্ব নির্ধারিত ঘোষণা অনুসারে ৬ জুলাই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করতে পারলে এক মাসের মধ্যে ফল প্রকাশে বদ্ধপরিকর রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার এমনই আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
0 notes
উপরে থাকতে এমন শব্দ একদম শুনি নি। ঠকঠক শব্দ। এমনটাই হয়তো শোনায় কফিনের ভেতর থেকে। চারপাশে নিস্তব্ধতা। সকলেই আছে কিন্ত কোথাও কেউ নেই। আমার সর্বাঙ্গে ঘুণ পোকার কামড়। ট্রেনোতলে পড়া বা-পাটি এমনভাবে কেটেছিল, তা আর জোড়া লাগানোর চেষ্টা করে নি ডাক্তার। আমি কি মৃত? নাকি আমাকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলা হচ্ছে?
পুনশ্চঃ ট্রেনোতলে আমার বানানো শব্দ, সখ করে। সখের দাম এক টাকা, এক টাকার দাম লাখ টাকা।
0 notes
হাড়কাঁপানো শীত জেঁকে বসে আছে গাইবান্ধা জেলায়। তবে শীতের কাঁপনেও সেখানকার গ্রামাঞ্চলের কৃষকেরা বসে নেই। তীব্র শীতকে উপেক্ষা করে হাঁটুকাদায় নেমে পড়েছেন তাঁরা। ঠকঠক করে কাঁপলেও এই কাদামাটিতেই রোপন শুরু করেছেন ইরি ধানের চারা। এই চারা বুনে গত মৌসুমের চেয়েও এবার আরও বেশি পরিমাণে ধান উৎপাদনের স্বপ্ন দেখছেন দেশের উত্তরের এই জেলার কৃষকেরা।
বুধবার (১২ জানুয়ারি) গাইবান্ধার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলের মাঠে দেখা যায়
কৃষক-শ্রমিকের ব্যস্ততা। এসময় ধানের চারা রোপনের আগে কেউ কেউ প্রস্তুত করছিলেন তাঁদের জমি। কেউবা তুলছিলেন ইরি-বোরো
0 notes
বিসিবি পরিচালনা পরিষদ নির্বাচন-২০২১: যা জানতে হবে আপনাকে
বিসিবি পরিচালনা পরিষদ নির্বাচন-২০২১: যা জানতে হবে আপনাকে
মিরপুরের ক্রিকেট হোম এখন ব্যাটে ঠকঠক শব্দে বাজছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালনা পর্ষদ আগামী চার বছরের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেটের দায়িত্ব কে নেবে তা নির্ধারণের জন্য October অক্টোবর নির্বাচন করা হবে। বিসিবি নির্বাচন এতটা প্রাণবন্ত, সুষম এবং উৎসবমুখর পরিবেশে কখনো অনুষ্ঠিত হয়নি; এটাই সংশ্লিষ্ট বোর্ডের দাবি। আরেকটি বড় কারণ এই নির্বাচনে কোনো প্যানেল নেই। যে কেউ মনোনয়নপত্র কিনতে পারেন; যা…
View On WordPress
0 notes
টিকার চাহিদা পূরণে ব্যর্থ সেরাম প্রধান ভারত ছেড়ে পালালেন
টিকার চাহিদা পূরণে ব্যর্থ সেরাম প্রধান ভারত ছেড়ে পালালেন
করোনা ভাইরাসের টিকা পেতে তাকে চাপ দিচ্ছিলেন বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে কর্পোরেট কর্তারা। তার জের���ই নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার আগেই ভারত ছেড়ে ব্রিটেনে পাড়ি জমিয়েছেন টিকা প্রস্তুতকারক সংস্থা সেরামের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার (সিইও) আদার পুনাওয়ালা।
আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়, গোটা দেশ যখন করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে, ঠিক সেই সময়েই এমন চাঞ্চল্যকর খবর প্রকাশ করেছে…
View On WordPress
0 notes
টিকার চাহিদা পূরণে ব্যর্থ সেরাম প্রধান ভারত ছেড়ে পালালেন
টিকার চাহিদা পূরণে ব্যর্থ সেরাম প্রধান ভারত ছেড়ে পালালেন
করোনা ভাইরাসের টিকা পেতে তাকে চাপ দিচ্ছিলেন বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে কর্পোরেট কর্তারা। তার জেরেই নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার আগেই ভারত ছেড়ে ব্রিটেনে পাড়ি জমিয়েছেন টিকা প্রস্তুতকারক সংস্থা সেরামের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার (সিইও) আদার পুনাওয়ালা।
আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়, গোটা দেশ যখন করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে, ঠিক সেই সময়েই এমন চাঞ্চল্যকর খবর প্রকাশ করেছে…
View On WordPress
0 notes
সেবার অনুবাদ!!! কোন এক ভরা আসরে, কিসের একটা প্রতিযোগিতায় চিকন একটা বই এসেছিল হাতে। জুল ভারনের ক্যাপ্টেন হেটেরাস। সাগর প্রেমের সূচনা সেখানে, সাথে অনুবাদের কাঁধে চেপে বিশ্বসাহিত্যের দুয়ারে প্রথম ঠকঠক। সেবা তিন গোয়েন্দাকে আনবার আগে অনুবাদের ঝুলি এনে ভরিয়ে দিয়েছিল আঙিনা। তাই সাগর ভ্রমণের পর গেলাম জো, মেগ, এমি, বেথ এর বাড়ি। ভ্রমণের নেশা বড় মারাত্মক। তাই আর থামাথামি নেই। আমি আমার ঘরের কোণে নীরব দুপুরে বসে বসেই কখনো রাশিয়া, কখনো ভিক্টোরিয়ান লন্ডন, কখনো ফ্রান্সের রাজপথ, কখনো বা সাউথ পোলে ঘুরেছি প্রজাপতি-সেবা প্রকাশনীর বাঘা বাঘা সমস্ত অনুবাদকের কোটের হাতা চেপে ধরে। আমার সামর্থ থাকলে এই প্রকাশনীকে বিশেষ পুরস্কার দেবার ব্যবস্থা করতাম। সাবলীল ভাষা ও ভাবানুবাদ এর মাহাত্ম্য সেবার মতো করে আর কে কবে বুঝাতে পেরেছে। চোখের আরাম এর পাশাপাশি বই পড়া যে মনের জন্য আরামদায়ক হতে হয় তা সেবার সেবাময় অনুবাদ না হলে কে বুঝতো। সবথেকে বড় কথা ক্লাসিক এর খটমটে ভাষাব্যাঞ্জনের শিকল ছিড়েও যে তাকে আপন করে নেওয়া যায়, তার জন্য সেবা প্রকাশনীকে একটা বিশাল ধন্যবাদ দিতে হবে বৈ কি। সুতরাং, এই পোস্টটা সেবা প্রকাশনী এবং তার সকল পাঞ্জেরি অনুবাদকদের জন্য। শ্রদ্ধা এবং ভালবাসা! আপনারা না থাকলে বিশ্ব দেখা হতো না! . . . . . . . #seba #childhood #childhoodbooks #bibliotherapy #ireadeverywhere #translation #bangladeshibloggers #bookstafeatures #bdphotography #bookstagrambd🇧🇩 #bangladesh #discoverunder3k #bookstagrammers #bookflatlay #calmversation #writersofinstagram #banglaylikhi #booksconnectus #bookstagrambd #dhakabloggers #readerslife #reminiscing #vscoday #likeforlikeback #booksbooksandmorebooks #banglaboi #desiblogger (at Dhaka, Bangladesh) https://www.instagram.com/p/CNdTjnTLNY8/?igshid=u86l39f37riv
0 notes
লকডাউনে লালমোহনবাবু - (দ্বিতীয় পর্ব)
ভয়ে শরীরটা হিম হয়ে গেছে, হাত পা ঠকঠক করে কাঁপছে। সেই ঘর, সেই রঙিন কাঁচ লাগানো জানলা, জাফ্রির কাজ করা পেতলের বাতি শেড, আর সামনে সাদা গদির ওপর তাকিয়ায় ঠেস দেওয়া আসমুদ্রহিমাচল পরিচিত সেই ব্যক্তি - আটটা ঝলমলে পাথর বসানো আঙ্গুলগুলো ন��স্কারের ভঙ্গীতে জড়ো করে হাড়কাঁপানো খসখসে দানাদার গলায় বললেন
বোসেন হালুয়ামোহনবাবু, গদিতে বোসেন, চেয়ার ভি আছে, যাতে খুশি বোসেন।
সবচেয়ে কাছের চেয়ারটাতেই ধপাস করে বসে পড়লেন লালমোহনবাবু। করোনার ওপর প্লট খুঁজতে বেরিয়ে সরাসরি যে এনার খপ্পরে পড়তে হবে তা কে জানতো!ফেলুবাবু অবশ্য পইপই করে বারণ করেছিলেন। শোনেননি, এখন তাই হাত কামড়াতে ইচ্ছে করছে।
ওয়েল হালুয়ামোহনবাবু - স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন মগনলাল - ই সোময়ে আপনি বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেন ?
হাঁটুতে হাঁটু লেগে খটখট করে আওয়াজ হচ্ছিল ! কোনোক্রমে সেটা থামিয়ে জটায়ু চাপা মিহি গলায় বললেন, পপ-প্লটের চি-হি-হিন্তা করতে গিয়ে !!!
তাই বলে ই সোময়ে আপনি বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়াবেন ? মিস্টার মিত্তির আপনাকে বলেননি কি ই কোই আর্ডিনারি ভাইরাস নাহি, এক্সট্রা - আর্ডিনারি ভাইরাস আছে !
ইতিমধ্যে বাঁ দিকের দরজা দিয়ে একটা লোক ট্রেতে করে বড় একটা কাঁচের গ্লাস নিয়ে ঢুকলো - লালমোহনবাবুর সামনে সেটা রেখে দিয়ে ওনার দিকে একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো। ততক্ষনে জটায়ুর গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে বলেই বোধহয় গ্লাসটা তুলে নিয়ে এক নিঃশ্বাসে প্রায় অর্ধেক খালি করে ফেললেন।
কি হালুয়ামোহনবাবু, উতে ভিষ আছে কিনা দেখলেন না !
না মানে - সরোবর - ইয়ে বড়সর - মানে শরবত - খুব ভালো - ফার্স্টক্লাস!
হে, হে, হে, হে, উ শরবত না আছে আঙ্কেল! উ তো আপনাদের বড়বাজার কে লস্যি আছে!বিশুবাবু যা সুমনাথবাবুকে খিলাইয়েছিলেন জন অরণ্যতে। তো যা বলছিলাম, এর আগে যেদিন মিস্টার মিত্তিরকে ভেট করতে গেছিলাম সেদিন ভি আপনি বাইরে ছিলেন। একি আপনি বনারস ট্রিপ পেয়েছেন ! মিস্টার মিত্তির এও বললেন কি আপনি ওনার বারণ ভি শুনছেন না !
জটায়ুর গলা দিয়ে প্রথমে 'স্যাঁ' গোছের একটা আওয়াজ বেরোল।আসলে 'অ্যা' আর 'সেকি' একসঙ্গে বলতে গিয়ে ওটা বলে ফেলেছিলেন। কিন্তু মগনলাল ফেলুবাবুর বাড়ীতে - একি সব্বোনেশে কথা! সাহসের শেষবিন্দুটুকু সংগ্রহ করে কোনোমতে বললেন, আপনি মিস্টার মিত্তিরের বাড়ীতে!
কেন হালুয়ামোহনবাবু ? হামার যাওয়া কি মানা আছে! লাস্ট ফ্রাইডে ওনার সঙ্গে ভেট করতে গেলাম।পুরানা দিনের কথা হল, মাকাইবাড়ি কা চায়ে পিলালেন, আপনার জন্য ওয়েট করছিলাম, শেষে বহত দের হয়ে যাচ্ছে দেখে চলে এলাম। আসার আগে ওনার হাতে তিন হাজার দিয়ে ভি এলাম।
আর উনি আপনার কাছ থেকে তিন হাজার টাকা নিলেন !!!
ই আপনি কেমন কথা বলছেন হালুয়ামোহনবাবু !!! উনাকে রুপিয়া অফার করলে উনি হামাকে ফির একবার উনার সার্কাস দেখিয়ে দিতেন না ! দিয়ে এলাম তিন হাজার বোতল স্যানিটাইজার - মিস্টার মিত্তিরই টেলিফোনে আমার কাছে চেয়েছিলেন - উনার দোস্তের হসপিটালে দিতে হবে। হামি ভি উনাকে বুলে দিয়ে এসেছি, যে কোনও বেপারে হামাকে উনার পাশে পাবেন। এই সময়ে হামাদের একসাথে কাজ করা জরুরী আছে।আরে আঙ্কল, কি হল, সেন্সলেস হয়ে যাচ্ছেন নাকি ! কোই হ্যায়, জলদি গরম দুধ ঔর ব্র্যান্ডি লে আও আঙ্কল কে লিয়ে��…
মিস্টার গাঙ্গুলী, লালমোহনবাবু, ও মশাই!!!!
মাঝরাত্রে লালমোহনবাবুর ঘর থেকে একটা বিকট গোঁ গোঁ আওয়াজ আসায় বাবা, আমি, ফেলুদা সবাই ওনার ঘরের সামনে জড়ো হয়ে যে যেরকমভাবে পারি ডাকছি। ভদ্রলোক কি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ? অবশেষে একটা বিকট হুড়মুড় গোছের আওয়াজের সাথে গোঙানীটা থামল। একটু পরে ঘরে আলো জ্বললো আর দরজা খুলে গেল। ওনাকে দেখে আমি আঁতকে উঠলাম! মুখটা ফ্যাকাশে, চোখদুটো কেমন যেন ঘোর লাগা, টাকের চুলগুলো সব খাড়া হয়ে গেছে। আমাদের মধ্যে ফেলুদার মাথাই সবচেয়ে ঠান্ডা। ওই ভদ্রলোককে নিয়ে গিয়ে খাটে বসিয়ে দিয়ে জলের গ্লাসটা এগিয়ে দিল।তারপর নাড়িটা দেখল। বাবা প্রশ্ন করলেন, কি ব্যাপার মশাই, কোনও দুঃস্বপ্ন দেখছিলেন?
ভদ্রলোক কোনোমতে ঘাড়টা হেলালেন - বোঝা গেল মাসলগুলো ঠিকমতো কাজ করছে না। তারপর বাবার দিকে তাকিয়ে ক্ষীণকণ্ঠে বললেন, দেখুন দেখি রাত্রিবেলায় আপনাদের কি ঝামেলায় ফেললাম !
না না সে সব ঠিক আছে, আপনি এখন বিশ্রাম নিন - ফেলু, তোরা ওনার সঙ্গে থাকে - এই বলে বাবা ঘর থেকে চলে গেলেন।
কার স্বপ্ন দেখে ওরকম আঁতকে উঠেছিলেন মশাই, এতক্ষনে ফেলুদা মুখ খুললো।
আর বলবেন না, দুর্ধর্ষ দুশমন, লাইফটাকে একেবারে হেল করে ছেড়ে দিল।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, কাল স্যানিটাইজার দিয়ে আমার মাথাটা একবার ভালো করে স্যানিটাইজ করে দেবে তপেশ ভাই !
0 notes
ফুল
চারপাশ আলোয় মুখরিত, বিয়ের সানাই এ ভরপুর করছে পুরো এলাকা। বাসর ঘরে মাথায় ঘোমটা নিয়ে হাত শক্ত করে চেপে অপেক্ষা করছে নিধি। অনেকক্ষণ হয়ে গিয়েছে সায়েম এখনো নেই। এদিকে বিনা মেঘে শুরু হয়েছে প্রচন্ড বৃষ্টি। মেঘের শব্দে ভয় পাওয়া নিধি আরো কুচকিয়ে পড়লো। এরই মাঝে নিভে গেল ঘরের সব আলো নিধি চিল্লিয়ে উঠলো, পরে গেলো তার মাথার ঘোমটা! ঠিক এমন সময় দরজায় ঠকঠক করে হাতে এক ট্রে মোমবাতি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করল সায়েম।
- ভয় পাবেন না, বৃষ্টির সময় লোডশেডিং তো স্বাভাবিক ব্যাপার। কিছুক্ষণের মধ্যেই আলো চলে আসবে।
বলতে বলতে সায়েম পুরো ঘরে মোমবাতি সাজাচ্ছিলো।
নিধি সায়েমের কন্ঠ এই প্রথম শুনলো, যেন চিরচেনা কোন সুর। সায়েমের পেছন পাশটা দেখতে পাচ্ছে সে। তার চেহারাটা দেখার আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারছে না নিধি। সায়েম নিধির দিকে ঘুরতেই নিধি নিজের দৃষ্টি নামিয়ে ফেললো। সায়েম নিধির পাশে এগিয়ে এলো।
- আপনার কি একটি মোমবাতি লাগবে? চাইলে পাশে রাখতে পারেন বোধহয় আপনি ভয় পাচ্ছেন।
নিধি মাথা নাড়িয়ে জবাব দিলো তার চাইনা। এরই মাঝে সায়েম বুঝলো নিধির ঘোমটা খুলে গিয়েছে। পেছন থেকে সে দেখতে পাচ্ছে নিধির ঘন লম্বা কেশ তাতে মোড়ানো গোলাপের বদলে বেলি ফুলের মালা। নিধির চেহারা দেখতে ইচ্ছে করলো সায়েমের। তবে কেউই সাহস করে উঠতে পারলো না।
নিধি ঘুমাচ্ছে, সায়েম উঠে পড়েছে। ফ্রেশ হয়ে এসে নিধির পাশের ড্রয়ারটা থেকে ঘড়ি নিতে এসে তার দৃষ্টি পরলো নিধির উপর। জানালা দিয়ে মিষ্টি রোদ আভা ছড়াচ্ছে তার মুখে, কি অপরূপ লাগছে তাকে দেখতে সায়েম কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে রইল!
মা সায়েম বলে ডাকাতেই ঘোর ভাঙলো সায়েমের, চাপা পায়ে দৌড় দি���ো ঘর থেকে!
নিধির মাথায় বেলিফুল। পায়েস বানাতে ব্যস্ত সে। সায়েম তাকে দেখতে পেয়ে আলতো করে তার পিছু গিয়ে দাঁড়াল আর বলল,
- আপনার কি বেলিফুল খুব পছন্দ?
নিধি হঠাৎ করেই শব্দটা শুনে পিছু ফিরে তাকালো। সায়েম একদম ঠিক তার মুখোমুখি! সায়েম বুঝতে পেরে জলদি করে মাথায় ঘোমটা দিতে লাগলো নিধি।
- আপনি চাইলে আমার সামনে ঘোমটা না দিলেও পারেন।
নিধি লজ্জা পেয়ে মাথা নাড়ালো।
- আমার উত্তরটা কিন্তু পেলাম না।
নিধি চোখ তুলে সায়েমের দিকে তাকালো! লজ্জা ভরা কন্ঠে বলে উঠলো,
- শুনেছিলাম আপনার বেলি ফুল পছন্দ!
সায়েম ধিমি হেসে বললো,
- লজ্জা পেলে আপনাকে দেখতে আরো সুন্দর লাগে!
- ১৮ আগস্ট, ২০২৩
- মোনালিসা মিতু।
0 notes
কর্ণ : শুভ্রা বেজ
অনেক দিন আগের ঘটনা। চক্রধরপুরে রেলের জমাদার ছিল বুধিয়া। তখন পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে সবাই ঐ চাকরি করত। বুধিয়ার স্বামী ছিল স্টেশনের ঝাড়ুদার। নিঃসন্তান এই উড়িয়া দম্পতির মহল্লায় বেশ সুনাম। হাসিখুশি, পরোপকারি বুধিয়া আর নকুল বাচ্চাদের খুব ভালবাসত।
তখন তো ভোর পাঁচটায় বেরোতে হত। বুধিয়ার হাতে বেলচা আর বালতি। নকুলের ঝাড়ু স্টেশনেই থাকত। জমাদার বা চলতি কথায় মেথরপাড়ার লোকজন কেবল প্রতিবেশি। প্রয়োজনে ডাক পড়ত বাবুদের বাড়িতে। রেল কেন্দ্রিক শহর। নানা ভাষা, নানা জাতি।
এক শীতের সকালে দেরি হয়ে গেছে। কোনক্রমে গরম চা গলায় ঢেলেই বুধিয়া বেরিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পরে নর্দমায় বেলচার খোঁচায় যেন একটা আওয়াজ শুনতে পেল। বেড়াল বা শূয়োরের বাচ্চা মনে করে আবার খোঁচাল। স্পষ্ট মানুষের বাচ্চার কান্না। বুধিয়া উত্তেজনা ও ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপতে লাগল। নোংরা আর পাঁকে ভর্তি নর্দমা থেকে টেনে বের করল ঐ বাচ্চাটাকে। পরণের জামাকাপড় ভিজে, নাকে মুখে নোংরা। ভোরে বুধিয়ার আর্ত চীৎকারে ঘুম ভাঙল কলোনির।
একজন তাড়াতাড়ি করে গরম জল দিল। ভালো করে পরিস্কার করে নিজের চাদর দিয়ে ভাল করে মুড়ে দিল। কোয়ার্টার থেকে একটু গরম দুধ পাওয়া গেল। কুঁতকুঁতে ফর্সা, দেবদূতের মত চেহারা, ঐ ছোট্ট শিশু নিশ্চয়ই কারোর পাপের ফল। ফেলে দিয়ে গেছে যাতে মরে যায়। আ হা। এরকম মা হয়! মা তো নয় ডাইনি। কথা হল বেওয়ারিশ বাচ্চার দায়িত্ব নেবে কে? পুলিশকে জানাতে হবে। বুধিয়া কেঁদেকেটে, হাতজোড় করে পুলিশের কাছে বাচ্চাটাকে ভিক্ষে চাইল। বেলচার খোঁচায় অনেক জায়গা ছড়ে গেছে। খুব বেশি হলে বয়স হয়তো দুদিন।
পুলিশ ঝামেলা এড়াতে থানায় ডেকে কিছু কাগজ পত্রে সই করিয়ে বাচ্চাটাকে বুধিয়ার কাছে ফিরিয়ে দিল। নকুলের কাছেও খবর গেছিল। নিঃসন্তান দম্পতি খুশি।
নিশ্চয়ই কোন বড়ঘরের ছেলে। ওরা নাম রাখল "কর্ণ"। করণ
Read the full article
0 notes
মেজাজে ফিরছে মহানগর! ঠিকঠাক চলছে বাস-অটো? ভাড়া কত? জেনে নিন এক নজরে
মেজাজে ফিরছে মহানগর! ঠিকঠাক চলছে বাস-অটো? ভাড়া কত? জেনে নিন এক নজরে
নিজস্ব প্রতিবেদন: পুরনো মেজাজে ফিরছে মহানগর। জনতার ভিড়, বাসের হর্ন, কনডাক্টরের হাঁকডাক সঙ্গে অটোর দৌরাত্ম। এখনও এই রণমূর্ত চেহারা না নিলেও, সকাল থেকে গোলপার্ক টু গড়িয়া, বেলঘরিয়া টু ধর্মতলা ঘুরে দেখা গেল কার্যত তেমনই ছেঁড়া চিত্র। কোথাও ঘনঘন বাস মিলছে, কোথাও ঘণ্টার পর ঘণ্টার অপেক্ষা করে বাসের দেখা নেই এমনও ছবি ফুটে উঠলো। তেমনই, অটোয় বেশি ভাড়া নেওয়া, সোশ্যাল ডিসটেন্স না মানার অভিযোগও শোনা গেল।
View On WordPress
0 notes
বরফকলের রাস্তায় ভূতের খপ্পরে
New Post has been published on https://sentoornetwork.com/horror-story-on-an-unknown-lady/
বরফকলের রাস্তায় ভূতের খপ্পরে
সব্যসাচী সরকার
ঘটনাটা অনেকদিন আগের। অন্যের মুখ থেকে শোনা, তাই সত্যি বা মিথ্যের দায় আমি নেব না। তবে সেই রাত্রে অতিরিক্ত পয়সা দিতে চাইলেও যেতে চায়নি সেই অবাঙালি ট্যাক্সি ড্রাইভারটি। পরিবর্তে শুনিয়েছিল এমন এক ঘটনার কথা যা শুনে আমার হাতের লোমও খাড়া হয়ে উঠেছিল।
সেদিন যখন বিগার্ডেন বাসস্ট্যান্ডের কাছে পৌঁছলাম, রাত তখন প্রায় এগারোটা বাজে। বিগার্ডেন বাসস্ট্যান্ড থেকে একটি রাস্তা ডানদিকে ঘুরে কোলে বাজার ধরেছে আরেকটি রাস্তা বিগার্ডেনের উঁচু পাঁচিলের পাশ দিয়ে সোজা গিয়ে একটি সরকারি আবাসনের সঙ্গে মিশেছে। ওই রাস্তা ধরে কিছুটা এগোলে ডান হাতে একটা বরফকল পড়ে যা থেকে লোকমুখে ওই পথটি বরফকলের রাস্তা নামেই পরিচিত হয়েছে। অন্যসময় যাতায়াতের পথে ওই কোল্ড স্টোরেজটি বহুবার দেখেছি। কাছাকাছি আসলেই একটা বিশ্রি গন্ধ নাকে আসে। তা যাইহোক, ওই সরকারি আবাসনে আমার এক নিকট আত্মীয় থাকেন। তাঁর সেই রাত্রেই হঠাৎ একটা বড় অঙ্কের টাকার প্রয়োজন হওয়াতেই, তাঁকে টাকাটা দিতে ওখানে যাওয়া। অফিসের পর অনেক কষ্টে টাকা জোগাড় করতেই রাত হয়ে গেল। সঙ্গে বেশ ভাল পরিমাণ টাকা তাই বাসে না চেপে ট্যাক্সিই নিয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু জিটি রোডের ভয়ংকর ট্র্যাফিক কাটিয়ে বিগার্ডেন বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছতে পৌঁছতেই প্রায় এগারোটা। দেরি দেখে পথে যেতে যেতেই মনস্থির করে নিয়েছিলাম যে, রাতটা ওখানে কাটিয়ে পরের দিন ওঁদের বাড়ি থেকেই অফিস চলে যাব। বিগার্ডেন বাসস্ট্যান্ডের কাছে পৌঁছে ড্রাইভার ভদ্রলোককে বরফকলের রাস্তা দিয়ে সরকারি আবাসনের দিকে যাওয়ার নির্দেশ দিলে সে জানায় যে, বিগার্ডেন বাসস্ট্যান্ডেই তাঁকে ছেড়ে দিতে হবে। সঙ্গে টাকার ব্যাগ তাই অগত্যা কিছু বেশি টাকা দেওয়ার প্রস্তাবও তাঁকে দিলাম। কিন্তু কোনও মূল্যেই তাঁর গাড়ির চাকা ঘুরবে না। উল্টে সে আমায় জানাল যে, কিছুদিন আগেই খালি ট্যাক্সি নিয়ে এই বরফকলের রাস্তা দিয়েই ফিরেছিল সে আর সেই সময়ই ঘটেছিল এক ভয়ংকর ঘটনা। তারপর থেকেই সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে যে-কোনও মূল্যেই সে রাত্রিবেলা ওই রাস্তা দিয়ে ট্যাক্সি চালিয়ে যাবে না। কৌতূহল প্রকাশ করাতে সে জানাল সেই ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা। সেদিনের মতোই জনৈক যাত্রীকে সরকারি আবাসনে ছেড়ে বরফকলের রাস্তা দিয়ে ফিরছিলেন ড্রাইভার ভদ্রলোক (অনেকক্ষণ কথাবার্তা হলেও গল্পে মশগুল থাকায় ওঁর নামটা জেনে নেওয়া হয়নি)। রাত তখন প্রায় সাড়ে এগারোটা। টিম টিম করে জ্বলছে ল্যাম্পপোস্টের আলো। সরকারি আবাসন পেরিয়ে বরফকলের রাস্তা ধরে কিছুটা এগোতেই ড্রাইভার ভদ্রলোক দেখতে পেলেন রাস্তার বাঁদিকে আবছামতো সাদা রঙের কিছু একটা দাঁড়িয়ে আছে। বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আরেকটু এগোতেই এবার ডানদিকে! সাদা শাড়ি পরা কেউ যেন দাঁড়িয়ে। গাড়ির হেড লাইটের আলোয় ক্রমশ পরিষ্কার হয়ে উঠছে সাদা শাড়ি পরিহিতা একটি মেয়ের চেহারা। হাত নেড়ে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছে যেন মেয়েটি। আমি ওঁকে থামিয়ে দিয়েই বললাম যে, মেয়েটি সম্ভবত বিপদে পড়ে সাহায্য চাইছিলেন। উত্তরে ড্রাইভার ভদ্রলোক জানালেন যে, প্রথমটায় সেও তাই ভেবেছিল। মেয়েটির কাছাকাছি এসে গাড়ি থামাতে গিয়ে আচমকা তাঁর চোখে পড়ে, যে হাত নেড়ে তাঁকে ইশারা করা হচ্ছিল সে হাতে কোন মাংস নেই। একেবারে কঙ্কালের হাত যেন হাওয়ায় মৃদু মৃদু দুলছে। ওই হাতের দিকে তাকিয়েই সিটে বসে ঠকঠক করে কাঁপতে থাকেন ড্রাইভার ভদ্রলোক। তারপর কোনওক্রমে গাড়ির গতি বাড়িয়ে বরফকলের রাস্তা পেরিয়ে বিগার্ডেন বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি হনুমান মন্দিরের সামনে এসে শ্বাস ছাড়েন তিনি। বাড়ি পৌঁছনোর পর দু’দিন আতঙ্কে তিনি ট্যাক্সি বার করতে পারেননি। চোখ বন্ধ করলেই চোখের সামনে ভেসে উঠেছে সেই কঙ্কালের হাত। এখন বিগার্ডেনের ভেতরের গঙ্গার ঘাট রেলিং দিয়ে ঘেরা। কিছু বছর আগে তা ছিল না। শোনা যায়, অনেকেই বিগার্ডেনের গঙ্গার ধারে এসে, ঘাটের পাশের বটগাছ থেকে গঙ্গার জলে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এই মেয়েটি কি তাহলে তাদেরই একজন। অপঘাতে মৃত্যুর পর মুক্তি না পেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তাঁর বিদেহী আত্মা আর সেই কারণেই ইশারায় ডেকে সে জানাতে চায় তাঁর মনের বেদনা।
এই ঘটনা শোনার পর আমি আর ওঁকে জোর করতে পারিনি। অগত্যা একটা রিকশা নিয়ে কোলে মার্কেটের ভিতর দিয়েই আত্মীয়ের বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।
ছবি: গুগল
আরও পড়ুন: সলমন বললেন, জো ডর গয়া ও বঁচ গয়া
0 notes
সত্যি কথা ১৯ অক্টোবর, ২০১৮
আমি স্বাভাবিক থাকার অভিনয় করি,
মুখোশ পরি আরও দশটাপাঁচটা স্বাভাবিক মানুষের
যদিও অন্তরটা কীসে যেন ফালাফালা করে ছিঁড়ে রেখেছে
রোজ রাতে আতঙ্ক তাড়া করে
আরও ভয় পাই
কারণ, জানিনা সকালে কেমন থাকবে মনমেজাজ
ভীষণ চেষ্টা করি যাতে এই বিভীষিকা মগজের চালকাসনে না বসে
কোনওকোনও দিন আচমকা মস্তিষ্ক দখলদারিত্ব হারায়
আর ধীরেধীরে আমি সর্বস্ব হারাই।
বোবায় ধরার ভীতির মতো নিশ্চল হই
মৃগীরোগীর মত ঠকঠক কাঁপি
এই বুঝি রঙীন মলাট ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে আমার দৈন্যদশা!
পরশ্রীকাতরতা,ঈর্ষা, ঘৃণা, অহঙ্কার, আত্মপ্রেম, লালসা
আর কাঁচের মতো ঠুনকো ইগো।
যুক্তিবুদ্ধি ধুয়ে যায়,
বিশ্বাস করতে থাকি মগজে ভর করা
কোনও অতীন্দ্রিয় দানবের অস্তিত্বে।
সরে যা শয়তান, ইবলিস!
ডাকতে থাকি মৃত্যুদূত আজরাইলকে।
কিন্ত সাড়া মেলে না
বেরিয়ে আসে বিষ
আমার চারপাশ জুড়ে জমতে থাকে নগ্নতা, ক্লেদ, গ্লানি
অন্ধকার হয়ে আসে আলোর পথের মানবিক যাত্রা।
ক্রমে হারাই বন্ধুত্ব
বিশ্বাসের সীমানা মুছে যায় অদৃশ্য রক্তক্ষরণে
লতার মত জড়িয়ে থাকা ভালবাসা, অনুকম্পা
সব হারিয়ে যায় খন্নাসের তান্ডবলীলায়।
সাহেবী নাম বাইপোলার
0 notes
আসছে সোহেল তাজ! যে প্রান্তেই থাকেন না কেন আপনার দরজায় টোকা পড়তে পারে
আসছে সোহেল তাজ! যে প্রান্তেই থাকেন না কেন আপনার দরজায় টোকা পড়তে পারে
এরপর লোগো লাগানো একটি হাইএস গাড়িতে করে বেরিয়ে পড়েন৷ তারপর একটি বাড়ির সামনে গিয়ে নেমে পড়েন৷ সেই বাড়ির মূল ফটক খুলে ঢুকে পড়েন তাজউদ্দিনপুত্র৷ তারপর ভবনের মূল দরজায় এসে ঠকঠক করে নক করেন৷
এরপর লেখা ভেসে উঠে, ‘‘সোহেল তাজ আসছে আপনার দরজায়, আপনি রেডি তো?”৷
এখানেই শেষ ভিডিওটি৷ এটি মুহূর্তের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। প্রকাশের পর একদিনেই দেড়লাখের বেশিবার দেখা হয় ভিডিওটি। অনেকের মাঝেই…
View On WordPress
0 notes